বিপর্যয়কর কয়লাখনি প্রকল্পের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত গ্রামবাসীদের সমর্থনে রাজ্যজুড়ে গ্রামে, শহরে, ব্লকে, জেলায় সংহতি ও প্রতিরোধ প্রদর্শন বিভিন্ন গণসংগঠন, নাগরিক সংগঠন, পরিবেশ আন্দোলন, কালেক্টিভ, মঞ্চ, ব্যক্তিবর্গ ও উদ্বিগ্ন পাখিকুলের যৌথ উদ্যোগে।
বীরভূম জেলার দেউচা-পাঁচামীতে খোলামুখ কয়লাখনি করার সরকারী সিদ্ধান্ত এলাকার গ্রামবাসীদের প্রতিরোধের মুখে পড়েছে। ইতিমধ্যে দুইদফায় পুলিশের মামলা ও হামলা নেমেছে। গ্রামবাসীদের প্রতিরোধ আরও তীব্র হয়েছে। আসুন তাঁদের পাশে সংহতিতে দাঁড়াই।
আমরা এই কয়লাখনি প্রকল্পকে সর্বঅর্থে বিপর্যয়কর বলে মনে করি। ১২ বর্গ কিলোমিটারের বেশি ক্ষেত্র জুড়ে এক কিলোমিটার (খনির চূড়ান্ত গভীরতা দাঁড়াবে ১,২০০ মিটার) গভীরতার খোলা খাদান হবে! কয়লার ওপরে আছে ২৪৫ মিটার পুরু অত্যন্ত শক্ত ব্যাসল্ট পাথরের আস্তরণ। অবিশ্বাস্য এক প্রকল্প! এই খোলা খাদান চরম ক্ষতিগ্রস্ত করবে প্রকল্প এলাকা সহ চারপাশের বিস্তীর্ণ এলাকার মাটি, মানুষ, সমাজ, নদী, কৃষি, জলস্তর ও পরিবেশকে। এখানে কয়লা খুবই নিম্ন মানের, এরদ্বারা বায়ু দূষণের মাত্রাও বেশি। আর, এই ধরণের খনিতে অত্যন্ত কম কর্মসংস্থান হয়। বস্তুত অন্যান্য খোলামুখ খনি অঞ্চলের অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায় যে, প্রস্তাবিত দেউচা-পাঁচামী এলাকায় কৃষিকাজ ও পাথর শিল্পে বর্তমানে যত মানুষের জীবিকা নির্বাহ হয় তার দশভাগের একভাগও হবে না কয়লাখনিতে। অন্যদিকে, এত বিপুল পরিমাণ কয়লা পোড়ালে তীব্র কার্বন নিঃসরণের ফলে ত্বরান্বিত হবে বিশ্ব উষ্ণায়ন, বাড়বে বঙ্গোপসাগরের জলস্তর, তীব্রতর হবে জলবায়ু সংকট, বিপন্ন হবে সুন্দরবন ও কলকাতা সহ সমস্ত উপকূলবর্তী গ্রাম ও নগর।
গ্রামবাসীরা একত্রিত হয়ে ‘বীরভূম জমি জীবন জীবিকা ও প্রকৃতি বাঁচাও মহাসভা’ গঠন করে প্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছেন। রাজ্যস্তরে বিভিন্ন সংগ্রামী সংগঠন ও ব্যক্তি ঐক্যবদ্ধ হয়ে ‘দেউচা-পাঁচামী কয়লাখনি প্রকল্প বিরোধী উদ্যোগ’ চালাচ্ছে। গ্রামবাসীদের প্রতিরোধের সংহতিতে এবং এই বিপর্যয়কর প্রকল্প বাতিলের দাবিতে আগামি ২৫ মার্চ রাজ্য জুড়ে ‘দেউচা সংহতি দিবস’ সংগঠিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এই উদ্যোগের পক্ষ থেকে।
২৫ মার্চ বিশ্বব্যাপী ‘ক্লাইমেট একশান ডে’ সংগঠিত করেন বহু দেশের বহু উদ্বিগ্ন মানুষ। দেউচা-পাঁচামীর এই কয়লাখনির প্রশ্নটি জলবায়ু সংকটের সাথে প্রত্যক্ষ সম্পর্কিত। গ্রামবাসীদের প্রতিরোধের পাশে দাঁড়াতে, আমাদের আগামি প্রজন্মগুলোর ভবিষ্যতের পাশে দাঁড়াতে আসুন বাংলা জুড়ে ২৫ মার্চ ‘দেউচা সংহতি দিবস’ সংগঠিত করি আমরা। যত বেশি সম্ভব গণসংগঠন, সামাজিক সংগঠন বা ব্যক্তিবর্গকে সামিল করে এইদিন বিভিন্নভাবে সংহতি ও প্রতিরোধ প্রদর্শন করে সমাজে ও সরকারের কাছে বার্তা দিই আমরা।