সংযুক্ত জাতিরাষ্ট্রের রিপোর্ট — “জলবায়ু পরিবর্তন ২০২২: প্রভাব, অভিযোজন ও দুর্বলতা” — বিপদঘন্টি বাজিয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তন এক বড় বিপদ হয়ে উঠছে। বহু বিপজ্জনক লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। উপকূলবর্তী শহরগুলির বিপদ অনেক বেশি। বিপন্ন নগরীর তলিকায় প্রথম দিকেই আছে কলকাতা। জলবায়ু পরিবর্তন ও তার প্রভাব সংক্রান্ত সর্বশেষ রিপোর্টে ১১ বার কলকাতার কথা উল্লিখিত হয়েছে সতর্কতা জ্ঞাপন করে। সেগুলোর কয়েকটি হল
• কলকাতার সবুজ গাছপালার বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়ে গেল আম্ফানের ঝড়ে। ভারতের সাম্প্রতিক অরণ্য সমীক্ষা রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতের প্রধান সাতটি নগরীর মধ্যে কলকাতাতেই গাছপালা ঘেরা জায়গা সবচেয়ে কম। এই পরিস্থিতিতে যে পরিকল্পনা নেওয়া দরকার তার কিছুই করা হয়নি বলে জানাচ্ছে ইউনাইটেড নেশনের প্রতিবেদন।
• বিভিন্ন বিপর্যয়কালে মৃত্যু ঘটার সম্ভাবনার মাপকাঠিতে বানানো তালিকার প্রথমে থাকা বিশ্বের ৮টি মেগাসিটির মধ্যে ৭টি এশিয়া মহাদেশের এবং কলকাতা নগরী তার অন্যতম।
• ৩ লক্ষের ওপর মানুষ বসবাস করেন এরকম নগরগুলোর মধ্যে ৩৩০টি নগরী খরা কবলিত হয়ে পড়তে পারে। সব মিলিয়ে নগরগুলির মোট ৪১ কোটি ১০ লক্ষ মানুষ এর প্রকোপে পড়বে। এরকম নগরের মধ্যে তিনটে হল কলকাতা, দিল্লী ও করাচি।
• ২০৫০ সালের মধ্যে সমুদ্র উপকূলে অবস্থিত বৃহত্তম যে ২০টি নগরী বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে হিসেব পাওয়া যাচ্ছে তার মধ্যে ১৩টি এশিয় নগরী এবং এদের মধ্যে কলকাতা সহ ৯টি নগর জলমগ্ন হয়ে যেতে পারে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়া ও বন্যার কারণে। ঝড়ের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা বিপুল পরিমাণে বাড়তে থাকবে যে নগরগুলির তারমধ্যেও কলকাতা অন্যতম।
বিশ্বের ৯৪৫ জন বিজ্ঞানী সংযুক্ত জাতিরাষ্ট্রের ইন্টার গভর্ণমেন্টাল প্যানেল ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি)-র পক্ষ থেকে সম্মিলিতভাবে এই রিপোর্ট তৈরি করেছেন যা গত ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হয়েছে। শহর বসতি ও পরিকাঠামো সংক্রান্ত চ্যাপ্টারের রচয়িতা বিজ্ঞানী দলের প্রধান অঞ্জল প্রকাশ বলেছেন, “ভারতে নগরগুলি চরম বিপদের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে, বিশেষত মুম্বাই, চেন্নাই, কলকাতা ও ভুবনেশ্বরের মত উপকূলবর্তী নগরগুলি”। তিনি আরও জানিয়েছেন যে আগামী বছরগুলোতে গরমের জ্বালা ‘লক্ষ্যণীয় মাত্রা’ নেবে এবং “ঘুর্ণীঝড় আরও ব্যাপক প্রভাব ফেলবে মহানগরগুলিতে, কলকাতার ক্ষেত্রে দুদিক থেকেই বিপদ”।
বঙ্গোপসাগরের জলের উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ায় বঙ্গ উপকূল জুড়ে ঘূর্ণীঝড়ের প্রকোপ বাড়ছে যা কলকাতাকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করবে, জানিয়েছেন আবহাওয়া বিজ্ঞানী তথা আইপিসিসি রিপোর্টের অন্যতম লেখক ম্যাথু রক্সি কোল।
বিজ্ঞানীরা অবশ্য বলেছেন যে দ্রুত যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এই বিপজ্জনক প্রবণতাকে মোকাবিলা করা সম্ভব। “সবুজ ও নীল পরিকাঠামো সুরক্ষিত রাখা ও শক্তিশালী করাটা জরুরি। জলবায়ু বিকৃতি সহ্য করতে শহরে সবুজ পরিকাঠামো আরও সবুজায়ন ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ফোকাস নিশ্চিত করবে এবং নীল পরিকাঠামো, যা জলা ও নদীকে ঘেরা ও সুরক্ষিত করা বোঝায়, জলবায়ু সহনশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ”, জানিয়েছেন প্রকাশ।
কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, “আমার অগ্রাধিকার হল পরিবেশ, বিশেষত জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব”। পরিবেশবিদেরা বলেন ওনার নিজের বলা কথা অনুযায়ী চলা উচিত।
রিপোর্টটির অন্যতম লেখক ও জল বিশেষজ্ঞ বলেন, “কলকাতা নগরকে বাঁচিয়ে রাখতে চাইলে আমাদের অবশ্যই হুগলি নদী ও জলাগুলিকে সুরক্ষিত করতে যা যা করণীয় সবকিছু করা দরকার”।
- (দ্য টেলিগ্রাফ, ৫ মার্চ ২০২২ প্রকাশিত জয়ন্ত বসুর প্রতিবেদনের ইষৎ সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর)