আন্তর্জাতিক নারী দিবসে রাজ্যে রাজ্যে
International Women's Day

রাজ্যে রাজ্যে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হয়েছে সমতা, মুক্তি এবং জীবন জীবিকার সংগ্রামকে জোরদার করার লক্ষ্যে — ঘৃণা, নিপীড়ন, ধর্মান্ধতা, সংকীর্ণতা এবং পিতৃতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে, ভালোবাসা ও সহোদরাবোধ জাগ্রত করার লক্ষ্যে এবং ইউএস-ন্যাটোর আগ্রাসী ষড়যন্ত্র ও ইউক্রেনে যুদ্ধের বিরুদ্ধে শান্তির জন্য।

বিহার, ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ, ছত্তিসগড়, অন্ধ্রপ্রদেশ, পাঞ্জাব, কর্ণাটক, আসাম, কার্বি আংলং, পুদুচেরি, তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লী এবং অন্যান্য প্রদেশে মহিলাদের কনভেনশন, প্রতিবাদ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মিছিল সংগঠিত হয়েছে। দিল্লী এবং ঝাড়খন্ডে আশা প্রকল্পের কর্মীরা তাঁদের শ্রমিক হিসাবে স্বীকৃতি ও স্থায়ীকরণের দাবিতে মিছিল করেন। সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতি তাঁদের নিম্নলিখিত বিবৃতি প্রদান করেন।

৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস আমাদের স্মরণ করায় নাগরিক অধিকার অর্জন করার বিপ্লবী ঐতিহ্য এবং সাহস জোগায় আমাদের সমস্যার গভীরে মূল কারণগুলি অনুসন্ধানের জন্য। এই দিনটি মহিলাদের অর্থনৈতিক অধিকার, সামাজিক মর্যাদা এবং রাজনৈতিক ন্যায়বিচারের সংগ্রামী প্রতীক চিহ্নের মতো। শ্রমজীবী মহিলাদের সংগ্রামের থেকে শক্তি সঞ্চয় করে এই দিনে মহিলারা বিশ্বের দেশে দেশে সংগঠিত আন্দোলন করেছেন সাম্রাজ্যবাদ এবং যুদ্ধের বিরুদ্ধে শান্তির জন্য, জীবন-জীবিকার জন্য এবং অনেক বিজয় অর্জনও করেছেন।

কিন্তু বর্তমানে নারী বিরোধী শাসনে আমাদের দীর্ঘ সংগ্রামের ফলে অর্জিত অধিকার আজ বিপদের মুখে, তাই এই লুঠেরাদের বিরুদ্ধে সারা বিশ্বে মহিলারা আন্দোলন করছেন তাঁদের অধিকারকে রক্ষা করার জন্য। পুঁজিবাদ-ধর্মীয়-সামন্ততান্ত্রিক কুচক্রীরা মিলিতভাবে তাদের সর্বশক্তি দিয়ে আক্রমণ করছে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের চেতনা এবং মর্মবস্তুকে ধ্বংসের লক্ষ্যে। আমাদের দেশে শ্রমবিরোধী, নারী বিরোধী যে শ্রম আইন সরকার পাশ করেছে শ্রমজীবী মহিলারা লড়াই করছেন তার বিরুদ্ধে। অঙ্গনওয়াড়ি প্রকল্পের কর্মীরা আন্দোলন করছেন সরকারি কর্মী হিসাবে স্বীকৃতি ও ন্যূনতম মজুরির জন্য। স্বনির্ভর গ্রুপ এবং ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থা থেকে ঋণ নেওয়া মহিলারা তাঁদের ঋণ মকুব এবং সুদের হার কমানো, জীবিকার ট্রেনিং এবং বাজার ও অন্যান্য সুবিধার জন্য দাবি নিয়ে আন্দোলন করছেন।

আজ যখন দেশে মহিলারা চাকরি বা অন্যান্য অধিকার দাবি করছেন, নিজের ইচ্ছামতো জীবন যাপন করতে চাইছেন তখন এই সংকীর্ণমনা শাসকরা যারা মহিলাদের মাতৃসমা বলে পূজা করার ভাণ করেন, দলিত নিপীড়ন করেন, মহিলাদের ওপর হিংসা এবং দমন-পীড়ন চালান তারাই আবার সংস্কৃতির দোহাই দিয়ে এই সমস্ত কার্যকলাপের বৈধতা দেন। স্কুল, কলেজে, অফিসে, কারখানায়, অন্যান্য কাজের জায়গায় ভেদাভেদ, যৌন নির্যাতন এবং মহিলাদের প্রাতিষ্ঠানিক হত্যা করা হয় এবং অনেক ছলচাতুরি, কৌশল ব্যবহার করে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার মহিলাদের কণ্ঠরোধ করেন। আজ উৎপীড়ক ও অপরাধীদের সুরক্ষা দেওয়া হয় যা প্রমাণ করে মহিলাদের মধ্যে সংগ্রামী চেতনার যে বিকাশ হচ্ছে তাকে স্তব্ধ করে দেওয়া।

International Women's Day in india

সরকার কত নির্লজ্জভাবে মহিলা উৎপীড়কদের সুরক্ষা দেন তার সাম্প্রতিক উদাহরণ হল ধর্ষক-খুনি ‘বাবা’ রাম রহিমের জেলমুক্তি এবং তাকে জেডপ্লাস সুরক্ষা দিয়ে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি’র ভোট নিশ্চিত করার।

সম্প্রতি কর্ণাটকে স্কুল এবং কলেজে মহিলাদের হিজাব পরা নিষিদ্ধ করা হয়। কিছু সংকীর্ণমনস্ক ছাত্র হিজাব পরিহিতা এক ছাত্রীকে ঘিরে ধরে এবং গেরুয়া শাল উড়িয়ে জয় শ্রীরাম ধ্বনি দিয়ে হয়রান করে। এই ধৃষ্টতা অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক কাজ। হিন্দু ছাত্রছাত্রীরা যদি চুলের বিনুনি বা খোঁপা বাঁধতে পারে, মহিলারা যদি বিন্দি, সিঁদুর, বালা বা শিখ ছাত্ররা যদি পাগড়ি পরতে পারে তাহলে হিজাব পরলে ধর্ম নিরপেক্ষতা কিভাবে লঙ্ঘিত হবে? বাস্তবে এটাই হল মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক অপরাধ। শুধু কর্ণাটকের মন্ত্রী বিধায়করাই নন, দেশের বিভিন্ন জায়গার বিজেপি-আরএসএস নেতারা এই ঘটনায় উস্কানি দিয়েছেন। কিন্তু দেশের সাধারণ মানুষ, মহিলারা একে সমর্থন করেননি এবং তাঁরা বুঝেছেন হিজাব ইস্যু আসলে মনুবাদী পিতৃতান্ত্রিকদের একটি মুসলিম বিরোধী সাম্প্রদায়িক চক্রান্ত যার মাধ্যমে মুসলিমদের পৃথকীকরণ করা যায় অনেকটা অস্পৃশ্যতা বা বর্ণবৈষম্যতার মতো।

আজ দেশে মুদ্রাস্ফীতি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, গ্যাসের দাম আকাশছোঁয়া, যার আঁচ কৃষক, শ্রমিক, মহিলা, গৃহবধূ প্রত্যেকেই অনুভব করছেন, বেকারত্বের হার বৃদ্ধি, অপরাধ, দুর্নীতি যখন বেড়েই চলেছে তখন সরকার চিন্তিত হয়ে পড়ছে জনগণ প্রশ্ন করবেন এবং উত্তরও দাবি করবেন। তাই তারা ক্রমাগত চেষ্টা করছে কীভাবে জনগণকে মুসলিম বিরোধিতায় ফাঁসিয়ে দেওয়া যায়। জনগণের দুর্দশার বিনিময়ে সরকার খোলাখুলি আম্বানি, আদানির মতো মুষ্টিমেয় পুঁজিপতিদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে। তাই এই ঘৃণা, বিদ্বেষ, সংকীর্ণতার বিরুদ্ধে ভালোবাসা, সহোদরাবোধ, মুক্তির জন্য স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের এই বিচ্ছিন্নতাবাদী বিভেদজনক রাজনীতিকে পরাস্ত করুন।

সম্প্রতি ইউক্রেনকে রাশিয়া আক্রমণ করে সেখানকার জনগণকে যুদ্ধের মুখে ঠেলে দিয়েছে। অবিলম্বে রাশিয়া আক্রমণ বন্ধ করুক এবং যুদ্ধের সমাপ্তি হোক এই আমাদের দাবি। আমেরিকা ও ন্যাটোর কাছে আমাদের দাবি তারা তাদের অপ্রত্যক্ষ সম্প্রসারণবাদী ষড়যন্ত্র বন্ধ করুক, কারণ যুদ্ধের ফলে ধ্বংস এবং সাধারণ মানুষের দুর্দশা ছাড়া কিছুই লাভ হয় না।

সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতি ৮ মার্চ ২০২২ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে সারা ভারতে মিছিল, মিটিং-এর মাধ্যমে ঘৃণা, বিদ্বেষ, হিংসার বিরুদ্ধে দাবি করেছেন কাজ, জীবন জীবিকা, সমতা, ভালোবাসা, সহোদরাবোধ ও মর্যাদার।

খণ্ড-29
সংখ্যা-11