শিক্ষা থেকে বাণিজ্য — করোনাকালে করুণ-গাথা দেশের প্রায় সব ক্ষেত্রেই। তবে লকডাউন-পর্ব তো বটেই, সমগ্র কোভিডকালে সারা দেশে সামগ্রিক অপরাধ কিছুটা কমেছে। কিন্তু কারাগারের অন্তরালের অবস্থাটা ঠিক কেমন? অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো জেলখানার অন্দরের অবস্থা কোভিডকালে আরও ভয়াবহই হয়েছে। বন্দিদের বিচার-প্রাপ্তি থেকে স্বাস্থ্য পরিষেবার সুযোগ উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। বন্দিদের আদালতে হাজিরা অনিয়মিত হওয়ায় দেশের সব প্রান্তেই জেলখানা উপচে পড়ছে। ভিডিয়ো কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে শুনানির ব্যবস্থা নেই বেশিরভাগ সংশোধনাগারেই। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকাশিত ‘প্রিজন স্ট্যাটিস্টিকস ইন্ডিয়া (পিএসআই) ২০২০’ রিপোর্টে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।
গত কয়েক বছর ধরে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো সারা দেশের জেলখানাগুলির হালহকিকত রিপোর্ট আকারে প্রকাশ করে। সর্বশেষ পিএসআই প্রকাশিত হয়েছে ডিসেম্বরে। সেই রিপোর্টে ২০২০’র জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের তথ্য রয়েছে। ২০২০’র মার্চেই ঘোষিত হয়েছিল লকডাউন। ফলে বছরের প্রথম তিনমাস বাদ দিলে তথ্যের প্রায় পুরোটাই করোনাকালের। সেই সময়ে জেলগুলিতে বন্দির সংখ্যা বেড়েছে দেড় শতাংশ। যাঁদের সিংহভাগই বিচারাধীন। তাঁদের অধিকাংশ আদালতে পৌঁছতেই পারেননি। রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২০তে বন্দিদের আদালতে আসা কমেছে ৬৫ শতাংশ। স্বাস্থকেন্দ্রে যাওয়ার হার কমেছে ২৪ শতাংশ।
‘ইন্ডিয়া জাস্টিস রিপোর্ট’ (আইজেআর) নামে এক অ-সরকারি সংস্থা কারাগার এবং বন্দিদের তথ্য নিয়ে কাজ করে। সর্বশেষ প্রকাশিত পিএসআই রিপোর্টের সঙ্গে গত বছরগুলির তথ্য-পরিসংখ্যানের তুলনা করে এই সংস্থা দেখিয়েছে, ২০১৯-এর থেকে ২০২০-তে পরিস্থিতি খারাপই হয়েছে। ২০১৯-এর তুলনায় ২০২০ সালে বন্দিদের আদালতে হাজিরা এক-তৃতীয়াংশ কমেছে। ২০১৯ সালে সাড়ে ৪৪ লক্ষ বন্দি আদালতে গিয়ে বিচার প্রার্থনা করেছিলেন। পরের বছর সেই সংখ্যা সাড়ে ১৫ লক্ষে নেমে আসে। স্বাস্থ্য পরিষেবাতেও ছবিটা উদ্বেগের। ২০১৯ সালে যেখানে ৪ লক্ষ ৭৭ হাজার বন্দি স্বাস্থ্য পরিষেবা পেয়েছিলেন, বন্দির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পরেও, পরের বছর সেই সংখ্যা ৩ লক্ষ ৬৩ হাজারে নেমে এসেছে। এই সময়ে চিকিৎসা কর্মীদের কারাগারে পরিদর্শনও কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। ২০১৯ সালে সারা দেশে ২৫ হাজার ৫২৪ জন স্বাস্থ্যকর্মী জেলে গিয়ে পরিষেবা দিয়েছিলেন। পরের বছর সেই সংখ্যা ছিল ২০ হাজারের কিছু বেশি। ২০১৯এ প্রায় ১৬ হাজার আইনজীবী এবং স্বেচ্ছাসেবী জেলে গিয়ে বন্দিদের সঙ্গে আইনি সহায়তা নিয়ে কথা বলেছিলেন। পরের বছর সেই সংখ্যা অর্ধেক হয়েছে। ‘ইন্ডিয়া জাস্টিস রিপোর্ট’এর সম্পাদক মাজা দারুওয়ালার মন্তব্য, “অতিমারীর সময়ে কারাগারগুলির অবস্থা আরও ভয়াবহ হয়েছে। অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও বন্দিদের সামগ্রিক অবস্থার উন্নতি হয়নি”।
- এই সময়, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২