খবরা-খবর
বিশ্ব উষ্ণায়ন ও জলবায়ু সংকট
Global warming and climate

ভূপৃষ্ঠ লাগোয়া আবহমণ্ডলের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার পরিঘটনাকে বিশ্ব উষ্ণায়ন বলে। জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান কারণ বিশ্ব উষ্ণায়ন। গত শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে বিজ্ঞানীরা জলবায়ু পরিবর্তনের নানা দিক সম্পর্কে বিশদ তথ্য সংগ্রহ শুরু করেন। তাঁরা বার বার সতর্ক করার পর সংযুক্ত জাতিরাষ্ট্র ১৯৮৮ সালে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্তঃসরকারী প্যানেল (আইপিসিসি) গঠন করে।

২০১৮ সালে আইপিসিসি একটি বিশেষ প্রতিবেদনে জানায় যে শিল্প বিপ্লবের আগের তুলনায় বর্তমানে ভূমণ্ডলের গড় উষ্ণতা বৃদ্ধির পরিমাণ ০.৮ থেকে ১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। এবং এই বৃদ্ধির হার সবচেয়ে তীব্র হয়েছে গত চার-পাঁচ দশকে। বর্তমানে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং এই গড় প্রতি মুহূর্তে বেড়ে যাচ্ছে। বিশ্বের বিজ্ঞানী মহলে এবিষয়ে আজ আর কোনও বিতর্কের অবকাশ নেই যে গত ৫০ বছর ধরে বিশ্ব উষ্ণায়নের মনুষ্যসৃষ্ট মূল দুটি কারণ হল, জীবাশ্ম জ্বালানি নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইড এবং অরণ্যের বিনাশ। জীবাশ্ম জ্বালানিগুলির মধ্যে তুলনামূলক বিচারে সবচেয়ে বেশি মাত্রায় কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ হয় কয়লা দহনে, আর সবচেয়ে কম প্রাকৃতিক গ্যাস দহনে।

যেসমস্ত গ্যাস সূর্যরশ্মিকে পৃথিবীতে আসতে দেয় কিন্তু পৃথিবীপৃষ্ঠের তাপকে মহাশূন্যে বেরিয়ে যেতে দেয় না সেগুলোকে ‘গ্রিন হাউস গ্যাস’ বলে। বায়ুমন্ডলে এই গ্যাসগুলি থাকার কারণে পৃথিবীপৃষ্ঠে বাসযোগ্য উষ্ণতা আছে। কিন্তু বাতাসে এই গ্যাসগুলির ঘনত্ব বেড়ে গেলে গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। এই বৃদ্ধি যদি খুব দ্রুত হয় তাহলে বাস্তুতন্ত্রের বিদ্যমান ভারসাম্য অস্থির হয়ে যায়। কার্বন ডাই-অক্সাইড হল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গ্রিন হাউস গ্যাস। বর্তমান উৎপাদন ব্যবস্থায় অত্যন্ত কম সময়ের মধ্যে ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইডের ঘনত্ব অনেকটা বেড়ে গেছে। ফলত তীব্র হারে বিশ্ব উষ্ণায়ন শুরু হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনে এই উষ্ণায়নের প্রভাব বহুমাত্রিক।

বিগত ২০০ বছরে ২.৩ লক্ষ কোটি টন কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ ঘটেছে, যার অর্ধেকটাই নির্গত হয়েছে গত ৩০-৩৫ বছরের নয়া উদার অর্থনীতির জমানায়। এই ব্যবস্থায় এখন বছরে ৭০০ কোটি টন নিঃসরণ ঘটছে। কিন্তু প্রকৃতিতে কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষিত হওয়ার সর্বোচ্চ ক্ষমতা বছরে ২০০-৩০০ কোটি টন। আইপিসিসি জানাচ্ছে যে বর্তমানের ক্রবর্ধমান হারে নিঃসরণ হতে থাকলে এই শতাব্দীর শেষে গিয়ে বিশ্ব উষ্ণায়নের মাত্রা দাঁড়াবে ৩.৩ থেকে ৫.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মাঝামাঝি কিছু।

বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে সমগ্র ভূমণ্ডল জুড়েই হঠাৎ হঠাৎ অস্বাভাবিক আবহাওয়া পরিলক্ষিত হচ্ছে, কৃষিকার্যে যার প্রভাব মারাত্মক। ঘূর্ণীঝড়ের তীব্রতা ও প্লাবন বেড়ে গেছে। মেরুদেশের বরফ দ্রুত গলে যাচ্ছে। সুন্দরবন ব-দ্বীপে বঙ্গোপসাগরের উচ্চতাবৃদ্ধির বাৎসরিক হার ৮ মিলিমিটার যা বৈশ্বিক হারের (৩.৪ মিলিমিটার প্রতিবছর) তুলনায় অনেকটাই বেশি। পৃথিবীর পুরনো নগরগুলির অধিকাংশই সমুদ্র উপকূলে অবস্থিত। বিশ্বে বর্তমানে ২৩ কোটি মানুষ সমুদ্রপৃষ্ঠের সর্বোচ্চ জোয়ারের তল থেকে ১ মিটার নীচের তলে বসবাস করেন। ১৪০ কোটি ভারতবাসীর মধ্যে ১৭ কোটি মানুষ সমুদ্র উপকূলের গ্রাম বা শহরগুলিতে বসবাস করেন।

খণ্ড-29
সংখ্যা-10