৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে কলকাতা সহ বিভিন্ন জেলায় সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির উদ্যোগে কর্মসূচি পালিত হয়। নারীদের মর্যাদা, স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং গণতান্ত্রিক অধিকারের দাবিতে এবং হিংসা-বিদ্বেষের বিরুদ্ধে ঐক্য-ভগ্নীত্ব ও মৈত্রীর সপক্ষে নারীকণ্ঠ সোচ্চার হয়। একই সাথে মহিলারা আওয়াজ তোলেন যুদ্ধের বিরুদ্ধে ও শান্তির সপক্ষে।
কলকাতায় বিভিন্ন নারী সংগঠন, লিঙ্গ বৈষম্য বিরোধী ফোরাম-কালেকটিভ, ট্রান্স-জেন্ডার ও প্রান্তিক যৌনতার নারীদের সংগঠন যৌথ ভাবে আন্তর্জাতিক নারীদিবস পালন করে। মৌলালী থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত এক বর্ণাঢ্য — ব্যানার-প্ল্যাকার্ড, পোস্টারে সুসজ্জিত মিছিল পথ হাঁটে। প্রায় সাতশো মহিলা তেজোদীপ্ত এই মিছিলে পায়ে পা মেলান। বেখুপ আজাদীর স্লোগান থেকে শুরু করে মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে, শ্রম কোড বাতিলের দাবিতে, শিক্ষা-স্বাস্থ্যের বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িক বিভেদ, সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে, নারীর উপর হিংসার বিরুদ্ধে, গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার দাবিতে এবং ইউক্রেনে রুশ হানার বিরুদ্ধে ও ন্যাটোর সম্প্রসারণবাদী অপচেষ্টার বিরুদ্ধে শ্লোগানে নারীরা কলকাতার রাজপথে মুখরিত হন।
একইসাথে দেউচা পাচামি কয়লা খনি প্রকল্পের বিরুদ্ধে, আনিস খানের হত্যার ন্যায় বিচারের দাবিতে এবং এরাজ্যে পুলিশের ও শাসকের গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধের বিরুদ্ধে আওয়াজ ওঠে। হাত ধরাধরি করে করে হাঁটলেন বহু শ্রমজীবী নারী এবং কুইয়ার মানুষ। মিছিলে অংশগ্রহণ করে এআইপিডব্লিউএ, এআইআরডব্লিউও, শ্রমজীবী নারী মঞ্চ, দুর্বার, ক্ষেতমজুর সমিতি, দশ থেকে দশ হাজার নেট ওয়ার্ক এবং মৈত্রী নেটওয়ার্ক।
মিছিল শেষে ধর্মতলায় করপোরেশনের অফিসের পাশে এক সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নারীদিবস পালনকে আরও তাৎপর্যময় ও সামগ্রিকভাবে তুলে ধরে। বক্তব্য রাখেন আইপোয়ার পক্ষ থেকে ইন্দ্রাণী দত্ত, দশ থেকে দশ হাজারের পক্ষ থেকে মৈত্রেয়ী, শ্রমজীবী নারী মঞ্চ থেকে মুনমুন, সমভাবনা থেকে ট্রান্স আন্দোলন কর্মী রায়না, এআইআরডব্লিউও থেকে দীপা সেন রায়, ক্যুইয়ার ও ট্রান্স ফাউন্ডেশন থেকে উদীপ্ত রায়, ভাঙ্গরের অসংগঠিত শ্রমিক জাহানারা, ফেমিনিস্ট ইন রেজিস্ট্যান্স থেকে স্বপ্না, দুর্বার থেকে মিনতি শ্রমজীবী নারী সংঘের ইন্দ্রাণী ও সাথী, ঝুম্পা করোতোয়ার একক সঙ্গীত, যাদবপুরের পড়ুয়া বর্ষা বড়াল ও তার বন্ধুদের, গণ বিষাণের সঙ্গীত সভাকে আরো উৎসাহিত ও আকর্ষণীয় করে। আর্কড, ও তুষনির নাচ অতিরিক্ত মাত্রা যোগ করে।
উত্তর ২৪ পরগণার অশোকনগরে শাখা সমিতির শাখা দুদিনব্যাপী প্রচার কর্মসূচি নেয়। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে নারী দিবসের দাবি সম্বলিত পোস্টার লাগানো হয়। এক ঘরোয়া আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সভায় বিভিন্ন পেশার ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মহিলারা অংশ নেন। সভা থেকে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্দেশ্যে কয়েক দফা দাবি সম্বলিত গণস্বাক্ষর সহ ডেপুটেশনের কর্মসূচি নেওয়া হয়। হাওড়া জেলায় কামারডাঙ্গা, আমতা ও বাগনান এই তিনটি অঞ্চলে নারী দিবসের কর্মসূচি পালন করা হয় কৃষকদের সমিতির নিজস্ব উদ্যোগে। হুগলি জেলার হিন্দমোটর, গুপ্তিপাড়া ও বলাগড়ে নারিদিবসের কর্মসূচি পালন করেন সমিতির সাথীরা। বরুনান পাড়ায় ৬ মার্চ উৎসাহ সহকারে প্রায় ৫৫ জন মহিলাদের উপস্থিতিতে নারী দিবসের আলোচনা ও কর্মসূচি পালন হয়। আদিবাসী, সংখ্যালঘু ও শ্রমজীবী মহিলারা নিজেদের কথাবার্তা তুলে ধরেন। হিজাব নিয়ে বলেন সাবিরা খাতুন। কবিতা, বক্তব্য ও আদিবাসী নৃত্য কর্মসূচিকে করে তোলে আকর্ষনীয়। বেথুয়াডহরি শাখার উদ্যোগে মহিলারা জমায়েত হন এবং নারী দিবসের তাৎপর্য আলোচনা করেন। নবদ্বীপ শহরে সমিতির কর্মীসভা অনুষ্ঠিত হয়। অংশ পুরসভার ভোটের দুই প্রার্থী পূজা ও কৃষ্ণা কর্মকার এবং এলাকার অন্য মহিলারা। উত্তরবঙ্গে শিলিগুড়ির হাসমিচকে ও শক্তিগড়ে শ্লোগান, বক্তৃতা, আবৃত্তি ও আলোচনার মধ্য দিয়ে দিবসের তাৎপর্য উপলব্ধি করা হয়। পরিচালনায় ছিলেন মহিলা সমিতির জেলা নেত্রীবৃন্দ।