হিংসা নয়, জীবিকা চাই!
বৈষম্য নয়, সমতা চাই!
যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই!
হিংসা, নিপীড়ন ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে দাঁড়ান!
স্বাধীনতা, ভালোবাসা, মিতালী, সমতা ও সম্মানের দাবিকে শক্তিশালী করুন!
রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধ করো, ন্যাটো সম্প্রসারণবাদের ষড়যন্ত্র বন্ধ করো!
বোনেরা,
৮ মার্চ, আন্তর্জাতিক নারী দিবস আমাদের নাগরিক অধিকার সুরক্ষিত করার বিপ্লবী উত্তরাধিকারের কথা মনে করিয়ে দেয় এবং আমাদের জীবনের সমস্যাগুলির মৌলিক কারণগুলি অনুসন্ধান করার শক্তি ও সাহস দেয়। এই দিনটি নারীর অর্থনৈতিক অধিকার, সামাজিক মর্যাদা এবং রাজনৈতিক ন্যায়বিচারের জন্য সংগ্রামের প্রতীক। শ্রমজীবী নারীদের সংগ্রাম থেকে শক্তি নিয়ে এই দিনে বিশ্বজুড়ে নারীরা শান্তি, সমৃদ্ধি ও জীবিকার জন্য সাম্রাজ্যবাদ ও যুদ্ধের বিরুদ্ধে সংগঠিত আন্দোলন করেছে এবং বহু বিজয় অর্জন করেছে।
কিন্তু, আজকের নারীবিরোধী লুটতরাজে, দীর্ঘ সংগ্রামের মাধ্যমে আমরা যে অধিকার পেয়েছি তা সংকটের মুখে দাঁড়িয়ে। তাই সারা বিশ্বের নারীরা তাদের অধিকার রক্ষার জন্য লড়াই করছে। পুঁজি-ধর্ম-ক্ষমতা-সামন্তবাদের যোগসাজশ সর্বশক্তি দিয়ে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের মৌলিক চেতনাকে ধ্বংস করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। আমাদের দেশের কথা বললে, কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক বলপূর্বক পাশ করা শ্রমিক ও নারী বিরোধী শ্রম আইনের বিরুদ্ধে লড়ছেন শ্রমজীবী নারীরা। অঙ্গনওয়াড়ি প্রকল্পের কর্মীরা সরকারি কর্মচারির মর্যাদা এবং ন্যূনতম মজুরির জন্য লড়াই করছেন। স্বনির্ভর গোষ্ঠী এবং ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থাগুলি থেকে ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহণকারী মহিলারা ঋণ মকুব, সুদের হার হ্রাস, জীবিকার প্রশিক্ষণ এবং ব্যবসার সুযোগের পাশাপাশি অন্যান্য ত্রাণ দাবি করছেন।
কিন্তু আজ যখন দেশের নারীরা জীবিকা বা অন্যান্য অধিকার চায়, যখন তারা তাদের নিজস্ব ইচ্ছানুযায়ী জীবন যাপন করতে চায়, তখন ধর্মান্ধ শাসক শক্তি, যারা নারীকে মা বলে পূজা করার ভান করে তারা সংস্কৃতির নামে নারীর উপর জাতিগত নিপীড়ন, হিংসা ও বৈষম্যকে বৈধ করে তুলতে চায়। স্কুল, কলেজ, অফিস, কলকারখানা বা কর্মক্ষেত্রে নারীদের বৈষম্য, যৌন হয়রানি এবং প্রাতিষ্ঠানিক হত্যার বিরুদ্ধে নারীর কণ্ঠস্বরকে দমন করার জন্য নানা চাতুরি ও কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে। আজ নিপীড়ক ও অপরাধীদের যে সুরক্ষা দেওয়া হচ্ছে তাতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে কীভাবে নারীদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সংগ্রামী চেতনাকে প্রতিনিয়ত দমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
এই সরকার কত নির্লজ্জভাবে নারী নির্যাতনকারীদের সুরক্ষা দিচ্ছে তার সাম্প্রতিক উদাহরণস্বরূপ আমরা দেখলাম কীভাবে ধর্ষক-খুনী ‘বাবা’ রাম রহিমকে জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হল। উপরন্তু জেড প্লাস নিরাপত্তা দিয়ে এক ধর্ষক-খুনীর নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হল যাতে সে উত্তরপ্রেদেশের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি’র হয়ে ভোট কুড়াতে পারে।
সম্প্রতি কর্ণাটক রাজ্যের স্কুল-কলেজে মেয়েদের হিজাব পরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। হিজাব পরা এক ছাত্রীকে কলেজে ঢুকতে বাধা দেওয়ার উদ্দেশ্যে গেরুয়া চাদর জড়িয়ে কিছু গোঁড়া ছাত্র ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান দিতে দিতে মেয়েটিকে ঘিরে ধরে হয়রানি করে। এই বর্বরতা গণতন্ত্র ও সংবিধান বিরোধী। আমাদের দেশের হিন্দু ছাত্ররা মাথায় টিকি বেঁধে, তিলক কেটে, তাগা পরে বা হিন্দু মেয়েরা বিন্দি, সিঁদুর, চুড়ি পরে, বা শিখ ছাত্ররা পাগড়ি পরে-অর্থাৎ নিজেদের ধর্মীয় পরিচয় নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারে। তাহলে শুধুমাত্র মুসলিম ছাত্রীরা হিজাব (মাথা ঢেকে) পরে গেলেই ধর্মনিরপেক্ষতার বিপদ তৈরি হয় কীভাবে? বরং হিজাব পরতে বাধা দেওয়া আসলে মুসলমানদের বিরুদ্ধে বৈষম্য এবং ঘৃণামূলক অপরাধ। কর্ণাটক সরকারের মন্ত্রী ও বিধায়করাই শুধু নয়, দেশের অনেক জায়গায় বিজেপি-আরএসএস নেতারাও এই ঘৃণামূলক অপরাধের আগুনে ঘি দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তারা মেয়েদের ও সাধারণ মানুষদের সমর্থন পায়নি। কারণ আজ মানুষ বুঝতে শুরু করেছেন যে, সাম্প্রদায়িক মনুবাদী পিতৃতান্ত্রিক শক্তিগুলি অস্পৃশ্যতা ও পৃথকীকরণের ধারায় মুসলিম নারীদের ‘অপর’ করে রাখার জন্য হিজাবকে শুধুমাত্র একটি নতুন অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছে।
বোন, আজ সবাই মূদ্রাস্ফীতি ও মূল্যবৃদ্ধিতে ভুগছে, সে কৃষক হোক, শ্রমিক হোক, নারী হোক বা গৃহিণী হোক। গ্যাস সিলিন্ডারের দাম দিন দিন বাড়ছে। বেকারত্ব চরমে। অপরাধ ও দুর্নীতি সর্বত্র বিরাজ করছে। সাধারণ জনগণ ক্ষুব্ধ এবং সরকার ভীত এই ভেবে যে তাদের জনগণের প্রশ্নের মুখে দাঁড়াতে হবে। তাই মুসলমান মানুষদের শত্রু হিসাবে খাড়া করে জীবন-জীবিকার সংকট থেকে নজর ঘোরানোর চেষ্টা চলছে। সাধারণ মানুষের দুর্দশার বিনিময়ে মোদী সরকার প্রকাশ্যে আম্বানি এবং আদানির মতো মুষ্টিমেয় ধনী পুঁজিপতিদের স্বার্থ রক্ষা ও দালালি করছে। অতএব, বোনেরা, আসুন আমরা ঘৃণা, হিংসা এবং ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই, ভালবাসা, মিতালী, সম্মান এবং স্বাধীনতার জন্য ফ্যাসিবাদী সরকারের বৈষম্য ও বিভেদকামী রাজনীতিকে পরাস্ত করি।
বর্তমানে রাশিয়া ইউক্রেনের উপর হামলা চালিয়ে ইউক্রেনের জনগণকে যুদ্ধে ঠেলে দিয়েছে। আসুন আমরা দাবি করি যে রাশিয়া ইউক্রেনের উপর অবিলম্বে যুদ্ধ ও হামলা বন্ধ করুক। আমরা এটাও দাবি করি যে আমেরিকা অবিলম্বে ন্যাটোর সম্প্রসারণবাদের ষড়যন্ত্র বন্ধ করুক। কারণ যুদ্ধের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের ধ্বংস ব্যতীত কিছুই অর্জিত হয় না। ভারত সরকার ইউক্রেনে আটকে পড়া ভারতীয় ছাত্রদের যথাসময়ে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে অপরাধমূলক অবহেলা করেছে। যার ফলস্বরূপ, রুশ হামলায় একজন ভারতীয় ছাত্র নিহত হয়েছে এবং অনেক ছাত্র নিখোঁজ রয়েছে বলে জানা গেছে। আমরা দাবি করছি যে, ভারত সরকার যেন প্রতিটি ভারতীয় নাগরিককে দ্রুত নিরাপদে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করে।