খবরা-খবর
গণমুখী পৌর উন্নয়ন ও শ্রমজীবী মানুষের দাবিতে নবদ্বীপে নির্বাচনে লড়ছে পার্টি

 

The party is contesting elections in Navadwip

মুখ্যমন্ত্রী বলছেন শহরগুলিকে “চকচকে-ঝকঝকে” করে দেওয়া হবে এবং সেটাই নাকি উন্নয়ন! কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে পৌর পরিষেবার প্রায় সমস্ত মৌলিক ক্ষেত্রগুলির বেহাল দশা, সংখ্যাগরিষ্ঠ নিম্নমধ্যবিত্ত গরীব মানুষের জীবন জীবিকা চরম বিপর্যস্ত, উন্নয়নের নামে চলছে ঠিকাদাররাজ! পৌরসভার কাজে নাগরিকদের কোন অধিকার নেই। ভিন্ন মতপ্রকাশের কোন পরিসর নেই, নিরাপত্তা নেই। অন্তঃসারশূন্য উন্নয়নের এই মডেলের বিরুদ্ধে গণআন্দোলনকে শক্তিশালী করার স্বার্থে নবদ্বীপে পৌর নির্বাচনে লড়ছে সিপিআই(এমএল) লিবারেশন। মোট ২৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৪টি ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা হবে।

৩নং ওয়ার্ডে দেবাশীষ সিংহ, ৭নং ওয়ার্ডে পূজা মল্লিক দেবনাথ, ১০নং ওয়ার্ডে কৃষ্ণা কর্মকার, ১৯নং ওয়ার্ডে পরীক্ষিৎ পাল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই চারটি আসনে বামদলগুলির মধ্যে আসন বোঝাপড়া হয়েছে। বাকি আসনগুলিতে বামপন্থী প্রার্থীদের সমর্থন করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নির্বাচনী কর্মকান্ডের প্রক্রিয়ায় এলাকায় বামপন্থী শক্তির সাথে একটা স্তরে পারস্পরিক বোঝাপড়া গড়ে উঠছে। স্বাধীনভাবে নির্বাচনী প্রচারকাজ শুরু হয়েছে।

বাড়ি বাড়ি প্রচারে প্রধান যে বিষয়গুলি তুলে ধরা হয়েছে তা হল, নবদ্বীপকে হেরিটেজ সিটি ঘোষণা করা হলেও সেই ক্ষেত্রে উপযুক্ত কোনও তৎপরতা নেই, বিপরীতে উন্নয়নের নামে চলছে সীমাহীন দুর্নীতি-স্বজনপোষন। বিভিন্ন ওয়ার্ডগুলিতে উন্নয়ন,পরিষেবা ও প্রশাসনিক কাজে কোনও স্বচ্ছতা নেই, নাগরিকদের কোনও তদারকি বা অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হয় না। প্রচারে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, পরিশ্রুত পানীয় জল সরবরাহ করা সরকার ও পুরসভার দায়িত্ব, তার জন্য কেন টাকা নেওয়া হবে? গঙ্গার পরিশোধিত পানীয় জল সরবরাহে রাজ্যের কোনও পৌরসভা টাকা নিতে পারে না, অথচ নবদ্বীপে নেওয়া হল কেন? নবদ্বীপ হাসপাতালে রোগী নিয়ে গেলে কেন সর্বদাই “রেফার” করে দেওয়া হবে? কেন ২৪ ঘন্টা ডাক্তার, ওষুধ, অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হবে না? সেখানে সাধারণ একটা ইসিজি করার মতো ব্যবস্থা নেই কেন? নবদ্বীপে হেরিটেজ বা ঐতিহ্য ছিল তাঁত শিল্প, কাঁসা শিল্প, মৃৎশিল্প — এইসমস্ত ক্ষুদ্র কুটির শিল্প সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। শ্রমজীবী মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ শেষ। সেগুলির পূনরুজ্জীবনে সরকারের উপযুক্ত কোনও পরিকল্পনা নেই। পাওয়ার লুমের উন্নয়নের নামে ঘোষণা করা হয়েছে অবাস্তব পরিকল্পনা, যাতে মেহনতী তাঁত শ্রমিকরা কোন সুবিধাই পাবে না। কাজহারা ও বেকারদের জন্য শহরে ১০০ দিনের কাজ চালু করার সুযোগ রয়েছে, কিন্তু পৌরসভা তার কোনও ব্যবস্থা করেনি।

সিপিআই(এমএল) প্রার্থীদের জন্য সমর্থন চেয়ে ১০ দফা নাগরিক ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হয়েছে। তার কয়েকটি হল —

পানীয় জল সরবরাহের জন্য কোনোরকম কর নেওয়া চলবে না। ছোট ব্যবসায়ী ও উৎপাদকদের বর্ধিত ট্রেড লাইসেন্স ফী, নাগরিকদের বর্ধিত পৌর কর প্রত্যাহার করতে হবে। জলনিকাশী ব্যবস্থা সম্পর্কে সার্বিক পরিকল্পনা নিতে হবে এবং তা কার্যকরি করতে হবে। শহরে ওয়ার্ড ভিত্তিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে। সেগুলির পরিকাঠামো উন্নয়ন, ২৪ ঘন্টা ডাক্তার, ওষুধ, অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে হবে। নবদ্বীপ হাসপাতালকে বিশেষ মানে উন্নীত করতে ন্যূনতম ২৫০ শয্যার ব্যবস্থা করতে হবে। বিভেদ-বিদ্বেষের রাজনীতির বিরুদ্ধে, সম্প্রীতি ও জনগণের ঐক্য সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে নবদ্বীপের যে প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রয়েছে তাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নিতে হবে। সুস্থ সংস্কৃতির বাতাবরণ গড়ে তুলতে ও যুক্তিবাদী ভাবনাগুলির প্রচার প্রসারে নবীন প্রজন্মকে উৎসাহিত করতে হবে। সমস্ত সাংস্কৃতিক সংস্থাগুলির স্বার্থে শহরের রবীন্দ্র সাংস্কৃতিক মঞ্চে অস্বাভাবিক বর্ধিত হারে চার্জ নেওয়া চলবে না। বিবেকানন্দ মুক্তমঞ্চের সংস্কার করা ও তার ছাউনির ব্যবস্থা করতে হবে প্রভৃতি।

কেন্দ্রের বিজেপি সরকার দেশের সম্পদ বিক্রি, বেকারী, মূল্যবৃদ্ধি সৃষ্টিকারী নীতি গ্রহণ করেছে। রেল, ব্যাংক, বীমা সহ সমস্ত সরকারি ক্ষেত্র কর্পোরেট-পুঁজিপতিদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। ওদের মুনাফা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। আম জনতার ঘাড়ে চাপানো হচ্ছে করের বোঝা। ব্যাপক মানুষ ক্রমশ নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। বিভাজন ও বিদ্বেষ ছাড়া বিজেপির আর কোনও রাজনীতি নেই।

রাজ্যের তৃণমূল সরকার কয়েকটি প্রকল্পে ছিটে ফোটা সুবিধার কথা বলছে, বাস্তবে গরিব মানুষের কাজ খাদ্য স্বাস্থ্য শিক্ষার অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। চলছে বঞ্চনা প্রতারণা। জনগণের প্রাপ্য অধিকারগুলিকে সরকারি দান বা অনুগ্রহ বলে তুলে ধরা হচ্ছে। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, মতপ্রকাশের অধিকার হরণ করা হচ্ছে। চলছে সরকারি ও শাসকদলের সন্ত্রাস।

এই অবস্থায় বামপন্থী পরিসরকে পুনরুজ্জীবিত করে নতুন নতুন এলাকায় ও শক্তির মধ্যে যাওয়ার প্রচেষ্টা চলছে। পৌরসভায় নাগরিকদের কন্ঠস্বরকে তুলে ধরতে প্রচার চলছে।

- জয়তু দেশমুখ

খণ্ড-29
সংখ্যা-7