দেশে অনাহারে মৃত্যু নিয়ে কেন্দ্রের কাছে সাম্প্রতিক তথ্য চাইল সুপ্রিম কোর্ট। সেইসঙ্গে ক্ষুধার সমস্যার মোকাবিলা করতে একটি মডেল প্রকল্প তৈরি করতে বলেছে শীর্ষ আদালত। প্রধান বিচারপতি এন ভি রমণার বেঞ্চের বক্তব্য, ‘‘এখন ভোটের সময়। কেন্দ্র নীতি তৈরি করে বাড়তি খাদ্যশস্য জোগালে রাজ্যগুলিও রান্না করা খাবার জোগাতে উৎসাহী হবে।’’
একটি মামলায় এদিন প্রধান বিচারপতি এন ভি রমণার বেঞ্চে অনাহারে মৃত্যু সম্পর্কে ২০১৫-১৬ সালের তথ্য পেশ করে কেন্দ্র। বিচারপতিরা বলেন, ‘‘আপনারা বলতে চান দেশে কেবল একজন অনাহারে মারা গিয়েছেন? এই বক্তব্য কি গ্রহণযোগ্য?’’ বিচারপতিদের বক্তব্য, ‘‘রাজ্য সরকারগুলি অনাহারে মৃত্যুর কথা জানাচ্ছে না। কিন্তু তা হলেই কি মেনে নিতে হবে যে অনাহারে মৃত্যু হচ্ছেনা? কেন্দ্রের অফিসারকে আমাদের অনাহারে মৃত্যু নিয়ে সাম্প্রতিকতম তথ্য দিতে হবে।’’
বিচারপতিরা বলেন, ‘‘এখন ভোটের সময়। আপনারা ক্ষুধা মেটানোর জন্য জাতীয় স্তরে নীতি তৈরি করে অতিরিক্ত খাদ্যশস্য সরবরাহ করলে রাজ্যগুলিও রান্না করা খাবার জোগাতে উৎসাহী হবে।’’ এরপরে সব রাজ্য ও সংশ্লিষ্ট অন্যপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয়স্তরে কমিউনিটি কিচেনের একটি মডেল প্রকল্প তৈরি করতে বলে বেঞ্চ। বিচারপতিরা বলেন, ‘‘আমরা অপুষ্টির বৃহত্তর সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি না। ক্ষুধা মেটাতে হবে। সকলেই মেনে নিচ্ছেন একটা সমস্যা আছে। আপনাদের অফিসারদের সঠিকভাবে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করতে বলুন।’’ প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘আমরা বলছিনা যে আপনারা ক্ষুধা বা অনাহারে মৃত্যু রুখতে কিছু করছেন না। কিন্তু জাতীয়স্তরে মডেল প্রকল্প তৈরির কথা বিবেচনা করুন। প্রকল্পের খসড়া তৈরি করুন, তা চূড়ান্ত করুন ও বাকিটা রাজ্যগুলির উপরে ছেড়ে দিন।’’
অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল জানান, কেন্দ্র আদালতের বক্তব্য বিবেচনা করবে। তিনি বলেন, ‘‘আমরা একটা প্রকল্প তৈরি করতে পারি। রাজ্যগুলিকে ২ শতাংশ বাড়তি খাদ্যশস্য সরবরাহ করা হবে। রাজ্যগুলি হলফনামা দিয়ে জানাক, এই প্রকল্পের জন্য বাড়তি ২ শতাংশ খাদ্যশস্য দেওয়ার প্রস্তাব তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য।’’
এই মামলার শুনানি দু’সপ্তাহের জন্য স্থগিত রেখেছে শীর্ষ আদালত। এই সময়ের মধ্যে রাজ্যগুলি অপুষ্টি, ক্ষুধা ও অন্য সমস্যা নিয়ে অতিরিক্ত হলফনামা পেশ করতে পারে।
- আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৯ জানুয়ারি ২০২২
গতবছর জুন মাসে পড়ুয়াদের জন্য শিক্ষাঋণ প্রকল্প, স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড চালু করেছে রাজ্য। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, বহু ব্যাঙ্ক তা দিচ্ছেনা। কারণ তারা এখনও প্রকল্পে শামিলই হয়নি। রাজ্য সরকারের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গে কৃষি-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁদের সমস্ত প্রকল্প সম্পর্কে ব্যাঙ্ক এবং ঋণদাতা অন্যান্য আর্থিক সংস্থাগুলিকে সচেতন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এব্যাপারে সচেতন করা দরকার রাজ্যবাসীকেও।
রাজ্য সমবায় ব্যাঙ্ক, তাদের অনুমোদিত কেন্দ্রীয় এবং জেলা সমবায় ব্যাঙ্ক, রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড মারফত ছাত্র-ছাত্রীদের ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত শিক্ষাঋণ দেওয়ার কথা। এজন্য বন্ধক রাখতে হবে না। গ্যারান্টরের দায়িত্ব পালন করবে সরকার। পড়াশোনার জন্য সহজে টাকার বন্দোবস্ত করাই প্রকল্পটির লক্ষ্য। কিন্তু সেই লক্ষ্য পূরণে অসহযোগিতার অভিযোগ বহু।
আগামী অর্থবর্ষে (২০২২-২৩) শিক্ষাখাতে নাবার্ডকেও ঋণদানের অঙ্ক বাড়াতে বলা হয়েছে। নাবার্ড জানিয়েছে, আগামী অর্থবর্ষে কৃষি এবং সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে এরাজ্যে ২.৪৭ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ দানের লক্ষ্য তাদের। যা আগের বছরের থেকে ১২% বেশি। অর্থবর্ষের শুরু থেকে যাতে ঋণদান শুরু করা যায় সেজন্য গোটা প্রক্রিয়ায় নজরদারি করতে নাবার্ডের শাখা সংস্থা নাবার্ড কনসালট্যান্সি সার্ভিসেসকে (ন্যাবকন) নিয়োগ করা হয়েছে।
স্টেট ব্যাঙ্কের দাবি, তাঁরা ইতিমধ্যেই এই খাতে ৪৬৬ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর করেছে। গত অর্থবর্ষে বাংলায় সামগ্রিকভাবে ঋণ দানের যে লক্ষ্য ছিল তার ৭৮% পূরণ হয়েছে।
- আনন্দবাজার পত্রিকা, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২