নরেন্দ্রপুরের ঘটনায় বারুইপুরে এসপি-র কাছে ডেপুটেশনের বয়ান
Statement of deputation to the SP

বারুইপুর ডিস্ট্রিক্ট পুলিশের সদরে এস পি'র কাছে ১৬ ফেব্রুয়ারি সিপিআই(এমএল) লিবারেশন, সিপিআই(এমএল) এনডি, সিপিআই(এমএল) রেডস্টার, পিসিসিপিআই(এমএল), এমকেপি, ইয়ং বেঙ্গল ও স্বরাজ ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে যৌথ ভাবে ডেপুটেশন দেওয়া হয়। ডেপুটেশনে৷ উল্লেখ করা হয়, “গত ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ নরেন্দ্রপুর থানার সামনে এবং থানার ভেতরে পুলিশ কয়েকজন ছাত্রী, ছাত্র এবং মহিলা ও পুরুষ রাজনৈতিক কর্মীকে নৃশংসভাবে মারে, ছাত্রী ও মহিলাদের যৌন হেনস্থা করে এবং সকলের বিরুদ্ধে মিথ‍্যা মামলা সাজায়। পুলিশ সম্পূর্ণ বেআইনি ও অপরাধমূলক কাজ করেছে। সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসারদের শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।

পুলিশ যা করেছে তা সংক্ষেপে নীচে তুলে ধরা হল

১। থানা হেফাজতে নিয়ে তিনজন মেয়েকে পুলিশ যৌন হেনস্থা করে। চন্দ্রাস্মিতা চৌধুরি, সৌমি জানা ও বর্ষা বড়ালকে অত‍্যন্ত কদর্য নারীবিদ্বেষী গালি দিতে দিতে কয়েকজন পুরুষ পুলিশ মেঝেতে ফেলে বুকে ও তলপেটে বারবার লাথি মারে এবং “খানকি” বলে সম্বোধন করে “তোদের দেখাচ্ছি” বলে হুমকি দেয়। হুমকি দেওয়ার সময় পুরুষ পুলিশেরা নিজেদের জামা তুলে ধর্ষণের ইঙ্গিত করছিল। (চন্দ্রাস্মিতা চৌধুরি ও সৌমি জানার বয়ান এই স্মারকলিপির সাথে সংযুক্ত করা হল)।

২। ঋতুস্রাবের জন‍্য স‍্যানিটারি ন‍্যাপকিন দিতে অস্বীকার করে পুলিশ। প্রথমবার গ্রেপ্তার হওয়ার পর চন্দ্রাস্মিতা চৌধুরির ঋতুস্রাব শুরু হয়েছিল। তিনি মহিলা পুলিশের কাছে স‍্যানিটারি প‍্যাড চাইলেও তা দিতে অস্বীকার করে পুলিশ। রাত্রি সাড়ে নটা নাগাদ মুক্তি পেয়ে বাইরে বেরনোর সাথে সাথে পুলিশ আবার মারতে মারতে থানার ভেতর নিয়ে যায়। এই সময় তাঁর রক্তস্রাব বেড়ে যায়, কিন্তু তিনি প‍্যাড চেয়েও পাননি। রক্তক্ষরণের কথা বলে পুলিশের কাছে আকুতি জানানোর পরও পুলিশ তাঁকে গালিগালাজ সহ লাথি মারতে থাকে।

৩। থানার বাইরে মারার সময়ও মেয়েদের যৌন হেনস্থা করে পুলিশ। উপরুক্ত তিন মহিলাকে লাথি মারার সময় বারবার যৌন হেনস্থামূলক গালি ও ভেতরে নিয়ে ‘দেখিয়ে দেওয়া’র হুমকি দিচ্ছিল পুলিশ। আরেকজন ছাত্রী সায়নি সাহাকে মারার সময় একজন পুরুষ পুলিশ নির্দেশ দিচ্ছিল ছাত্রীটির নিম্নাঙ্গে লাঠি চালোনোর। পুলিশ সায়নির নিম্নাঙ্গে লাঠি চালায়। (সায়নির মেডিক‍্যাল রিপোর্ট সংযুক্ত করা হল)।

৪। থানার বাইরে এবং থানায় হেফাজতে নিয়ে মহিলা ও পুরুষদের নৃশংসভাবে মারে পুলিশ। (কয়েকজনের প্রাথমিক মেডিক‍্যাল রিপোর্ট সংযুক্ত করা হল)।

৫। “মেডিক‍্যাল ফিটনেস”-এর জাল সার্টিফিকেট বানায় পুলিশ। চন্দ্রাস্মিতা চৌধুরি ও মলয় তেওয়ারিকে গভীর রাতে সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় কিন্তু কোনরকম পরীক্ষা না করে আগে থেকে লেখা মেডিক‍্যাল ফিট সার্টিফিকেটে নাম বসিয়ে পুলিশকে দিয়ে দেওয়া হয়। আহত ব‍্যক্তি এর প্রতিবাদ করায় ওখানেই তাঁদের মেরে দেওয়ার হুমকি দেয় পুলিশ। এই দুজনকে ভোর রাতে পিআর বন্ডে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। বাকিদের কারও মেডিক‍্যাল টেস্ট করায়নি পুলিশ। সৌমি জানার ইউরিনারি ট্র‍্যাক ইনফেকশন হয়। বারবার সেকথা বলায় তাঁকে পুলিশ হেনস্থা করে এবং শেষে হাসপাতালে নিয়ে জোর করে কোভিড ওয়ার্ডে ঢুকিয়ে দেয়।

৬। সকলের স্মার্ট ফোনের সমস্ত ভিডিও ও ছবি জোর করে মুছে দেয় পুলিশ।পাসওয়ার্ড দিতে অস্বীকার করায় একজন মেয়ের বুকে লাথি মারে পুলিশ।

৭। আটক প্রতিবাদীদের কোমরে দড়ি বেঁধে আদালতে নিয়ে যায় পুলিশ। আরেকবার স্পষ্ট বোঝা যায় যে প্রতিবাদীদের নানাভাবে লাঞ্ছিত অবমানিত ও হেনস্থা করাটাই ছিল পুলিশের প্রকৃত মনোভাব।

নরেন্দ্রপুর থানার পুলিশ যা করেছে তা আপনার জেলার পুলিশ ব‍্যবস্থার অত‍্যন্ত উদ্বেগজনক চেহারা তুলে ধরেছে। প্রতিবাদসভা, মিছিল বা বিক্ষোভ প্রদর্শন যে কোনও গণতান্ত্রিক ব‍্যবস্থার অবিচ্ছেদ‍্য অঙ্গ। এইসব গণতান্ত্রিক কার্যকলাপ যাতে স্বাভাবিকভাবে সম্পন্ন হতে পারে তা নিশ্চিত করা পুলিশ প্রশাসনের অন‍্যতম কর্তব‍্য। অথচ এক্ষেত্রে পুলিশ কদর্য অপরাধী দলের মতো আচরণ করল। প্রথমবার কামালগাজি ব্রিজের নিচ থেকে প্রতিবাদীদের গ্রেপ্তার করার সময়ও পুলিশ কোনরকম বাদানুবাদ ছাড়াই মেরে আটক করে। পরে যখন আটক ব‍্যক্তিরা ছাড়া পাচ্ছেন তখন ছাত্রছাত্রীরা তাদের মুক্তি পাওয়া সাথীদের অভিনন্দন জানিয়ে শ্লোগান দিতেই মুহূর্তে ঝাঁপিয়ে পড়ে পুলিশ। মুক্ত সাথীদের নিয়ে ছাত্রছাত্রীরা চলে যাচ্ছিল। কিন্তু পুলিশ কোনোরকম কথাবার্তারও সুযোগ না দিয়ে মারতে শুরু করে। থানার ভেতরে ও বাইরে মারার সময় পুলিশের পোশাক পরা ব‍্যক্তিদের সাথে সাধারণ পোশাকের ব‍্যক্তিরাও ছিল। সব মিলিয়ে একটা অপরাধী দলের মত আচরণ করল তারা। সকলকে মারল ও মেয়েদের ধর্ষণের হুমকি সহ যৌন হেনস্থা করল। তারপর আবার ছাত্রছাত্রীদের নামেই মারাত্মক ধারা সম্বলিত মিথ‍্যা মামলা সাজিয়েছে পুলিশ।

আমরা আপনার কাছে আবেদন জানাচ্ছি অবিলম্বে নরেন্দ্রপুর থানার ভারপ্রাপ্ত ইনস্পেক্টর ও সেকেন্ড অফিসারকে বরখাস্ত করে সমগ্র বিষয়টির তদন্ত করুন এবং ছাত্রছাত্রীদের ওপর চাপানো মিথ‍্যা মামলা প্রত‍্যাহার করুন।”

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, উপরোক্ত নিগৃহীত ছাত্রছাত্রী ও মহিলারা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া সহ অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস এ্যাসোসিয়েশন ও সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির সদস্য।

খণ্ড-29
সংখ্যা-7