খবরা-খবর
‘বিশ্বাসঘাতকতা দিবসে’ নতুন করে সংগ্রামের অঙ্গীকার
Promise to fight anew

উদ্ধত মোদী সরকারকে হঠিয়ে দিয়ে ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলন অসামান্য জয় ছিনিয়ে এনেছে। কর্পোরেট স্বার্থবাহী তিন কৃষি আইন প্রত্যাহার করতে সরকার বাধ্য হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে চলা এই কৃষক আন্দোলন এবং তার অভূতপূর্ব জয় দেশের ব্যাপক মানুষের মধ্যে সঞ্চার করেছে নতুন আশা উদ্দীপনা। কিন্তু আন্দোলনকে দেওয়া লিখিত প্রতিশ্রুতিগুলিকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে কেন্দ্রীয় শাসকেরা সেই জয়কে উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত করছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে অর্জিত বৃহত্তর সংগ্রামী ঐক্য ও প্রত্যয়কে ঊর্ধ্বে তুলে ধরে মোদী সরকারের প্রতারণার বিরুদ্ধে সমস্ত কৃষক সংগঠন সোচ্চার হয়ে উঠেছে। সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার ডাকে এআইকেএসসিসি’র পক্ষ থেকে গত ৩১ জানুয়ারি সারা দেশ জুড়ে সংগঠিত হয়েছে বিশ্বাসঘাতকতা দিবস। প্রায় দু’মাস হতে চললো দিল্লীর বুকে কৃষক আন্দোলন স্থগিত রাখার সময় ঘোষণা করা হয়েছিল সরকারের নীতি বদলের জন্য আন্দোলন জারি থাকবে। সেই বার্তা তুলে ধরে এই দিন রাজ্যের বিভিন্ন জেলার ব্লকে ব্লকে অনুষ্ঠিত হল বিক্ষোভসভা ও মোদীর কুশপুতুল দাহ কর্মসূচি।

“যতক্ষণ না কৃষকের দাবি পূরণ হচ্ছে আমাদের আন্দোলন লাগাতার চলবে। মোদী সরকারকে আমরা এক ইঞ্চি জমি ছাড়বো না। আগামী ২৮-২৯ মার্চ দেশব্যাপী সাধারণ ধর্মঘটকে আমরা রাস্তায় নেমে সফল করে তুলবো। এভাবে এগিয়ে যাবে শ্রমিক কৃষকের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন। এরাজ্যেও কৃষকের ফসলের ন্যায্য দাম গ্যারান্টি আইন প্রণয়ন করতে হবে।” কলকাতার ধর্মতলায় ওয়াই চ্যানেলে আয়োজিত এক বিক্ষোভসভায় একথা বলেন এআইকেএসসিসি রাজ্য সচিব ও এআইকেএম’এর নেতা কার্তিক পাল। সারা ভারত কৃষি শ্রমিক ইউনিয়নের তুষার ঘোষ বলেন, সরকারের নীতির কারণে কৃষিক্ষেত্র চরম অবহেলিত, সেখানে লাগাতার সরকারি বিনিয়োগ কমছে। কৃষকের হতাশাকে ব্যবহার করে কৃষিজমি কর্পোরেটদের হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত করেছিলো মোদী সরকার। একে কৃষকরা ঠান্ডাঘরে পাঠাতে বাধ্য করেছে। অক্সফ্যামের রিপোর্ট বলছে আমাদের দেশে দারিদ্র সবচেয়ে বেশি। আজ কর্পোরেট লুঠের স্বরূপ একেবারে সামনে চলে এসেছে। মোদীকে হুশিয়ারী জানিয়ে আজ দেশের প্রায় ৫০০ জেলায় আন্দোলন চলছে। পশ্চিমবাংলার বুকে চাষিরা ফসলের সরকারী দাম পাচ্ছে না। শাসকেরা দেশের খাদ্য বন্টন চক্রটাকে ভেঙে দিয়ে দুর্ভিক্ষের দিনগুলি ডেকে আনতে চাইছে। এর বিরুদ্ধে গড়ে উঠবেই জনগণের প্রতিরোধ। জয় কিষাণ আন্দোলনের অভীক সাহা বলেন, মোদী সরকার যদি মনে করে থাকে আন্দোলন শেষ হয়ে গিয়েছে, কৃষকদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করলেও চলবে, তা হলে তারা মূর্খের স্বর্গে বাস করছে! আন্দোলনকারী কৃষকদের উপর থেকে মামলা প্রত্যাহার, মৃতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ, ন্যায্য মূল্যের আইন তৈরির জন্য প্রতিশ্রুত কমিটি গঠন, লখিমপুর খেরি-কাণ্ডে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্র টেনিকে বরখাস্ত-সহ বকেয়া দাবির কথা তিনি তুলে ধরে বলেন, ৩ ফেব্রুয়ারি আন্দোলনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ঘোষিত হবে। মীরজাফরদের উচিত শিক্ষা দিয়ে ওদের হারাতে হবে। আজ সারা দেশের প্রায় ৫ হাজার স্পটে সভা চলছে, শুরু হয়েছে আন্দোলনের দ্বিতীয় অধ্যায়। এআইকেএম’এর জয়তু দেশমুখ বলেন, ফ্যাসিস্ট শাসকদের ধর্মীয় মেরুকরণের চক্রান্তকে নাকচ করে কৃষকের সাধারণ স্বার্থে বৃহত্তর সংগ্রামী ঐক্য গড়ে উঠেছে। এই শিক্ষা পাথেয় করে আন্দোলন আগামীদিনে এগিয়ে যাবে। এরাজ্যে একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে কৃষকরা চরম সংকটের মধ্যে রয়েছে। কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার কোনও ক্ষতিপূরণ দেয়নি। এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। রাজ্য সরকার নানা রকম তথ্য পরিসংখ্যান তুলে ধরে ধানের সরকারী সংগ্রহের কৃতিত্ব জাহির করছে, যা এক সম্পূর্ণ মিথ্যাচার। বাস্তবে ব্যাপক দুর্নীতির কারসাজি করে ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছে। প্রকৃত চাষিরা বিশেষত লিজ বা চুক্তি চাষিরা সরকারী দরে ফসল বিক্রি করতে পারছে না।

Promise to fight anew on Betrayal Day_kolkata

এছাড়াও সভায় বক্তব্য রাখেন সারা ভারত কৃষক সভার বিপ্লব মজুমদার, সারা ভারত অগ্রগামী কিষাণ সভার হরিপদ বিশ্বাস, সারা ভারত কৃষক খেতমজুর সংগঠনের গোপাল বিশ্বাস, পশ্চিমবঙ্গ কৃষক খেতমজুর সংহতি সমিতির সমীর পুততুন্ডু, এআইকেএমএস’এর সুশান্ত ঝা, এআইকেএস (বৌবাজার)-এর অজিত মুখার্জি, সারা ভারত ক্রান্তিকারী কৃষকসভার শংকর দাস, জয় কিষাণ আন্দোলনের প্রবীর মিশ্র, কল্যাণ সেনগুপ্ত, রত্না পাল, মহিলা স্বরাজের সুফিয়া খাতুন প্রমুখ।

কৃষক আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে সভায় বক্তব্য রাখেন শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। সিআইটিইউ’এর অনাদি সাহু বলেন, কৃষকের আয় দ্বিগুন করা, ঋণ মকুবের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসে মোদী সরকার জনগণের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। বেকার যুবকদের সামনে কর্মসংস্থানের কোনও আশা নেই, বন্ধ রুগ্ন কলকারখানা খোলার কোনও ভাবনাই সরকারের নেই। বিভিন্ন রেল স্টেশন বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এই ভয়ংকর আক্রমনের মোকাবিলায় আগামী ধর্মঘট আন্দোলনকে সর্বাত্মক করে তুলতে হবে। এআইসিসিটিইউ’র বাসুদেব বসু বলেন, কেন্দ্রের সরকার মূক ও বধির। কৃষক আন্দোলন দেশের শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে এক অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করেছে, সরকারকে মাথা নীচু করতে বাধ্য করেছে। আসন্ন ধর্মঘট দেশ বিক্রির বিরুদ্ধে। এরাজ্যেও সরকারি সম্পদ বিক্রি করা হচ্ছে৷ এই সামগ্রিক নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন আইএনটিইউসি’র কামারুজ্জামান কামার, আইএফটিইউ’র আশীষ দাশগুপ্ত প্রমুখ। বিভিন্ন মহিলা সংগঠনের নেত্রীরা কৃষক আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বক্তব্য রাখেন। মহিলা কৃষকদের সংকটের দিকগুলি, তাদের স্বীকৃতি ও সমকাজে সমমর্যাদা সহ বিভিন্ন প্রশ্ন তুলে ধরে তাঁরা বলেন, ব্যাপক সংখ্যক মহিলারা কৃষক আন্দোলনের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত রয়েছে। বক্তব্য রাখেন প্রগতিশীল মহিলা সমিতির ইন্দ্রাণী দত্ত, গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির কনীনিকা ঘোষ, মহিলা সাংস্কৃতিক সংগঠনের কল্পনা দত্ত, বিপ্লবী মহিলা সংগঠনের শিখা সেন রায় প্রমুখ। পরিশেষে ধর্মতলায় বিশ্বাসঘাতক মোদীর কুশপুতুল দাহ করা হয়।

খণ্ড-29
সংখ্যা-5