ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলনের চাপে ফ্যাসিস্ট নরেন্দ্র মোদী সরকার কর্পোরেট স্বার্থ রক্ষাকারী তিন কৃষি আইন বাতিল করতে বাধ্য হয়। কৃষক আন্দোলনের অন্যান্য দাবিসমুহ সমাধান করার জন্য লিখিত প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর কৃষক নেতারা আন্দোলন তুলে নেন। তারপর প্রায় দু’মাস হতে চলল। এখনও ন্যূনতম সহায়ক মূল্য আইন প্রণয়নের জন্য কমিটি গঠনের কোনও পদক্ষেপ করার উদ্যোগই নিচ্ছেনা। আন্দোলনে শহীদ ৭০০’র বেশি কৃষকদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যপারে কেন্দ্রের কোনও সার্কুলার নেই। আন্দোলনকারীদের উপর থেকে সমস্ত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করার নির্দেশ রাজ্যগুলোকে দেওয়া হল না। বিদ্যুৎ বিল ২০২০ বাতিলের কোনও ব্যবস্থাই নেই। উত্তর প্রদেশের লখিমপুর-খেরীতে গাড়ি চাপা দিয়ে কৃষক হত্যাকারী কুখ্যাত খুনীর বাবা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্র টেনিকে বরখাস্ত করা হল না। তাই এই সমস্ত দাবি আদায়ের জন্য সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা দেশজুড়েই আন্দোলন শক্তিশালী করার জন্য ৩১ জানুয়ারি বিশ্বাসঘাতকতা দিবস পালন করার ডাক দেয়।
উত্তর চব্বিশ পরগণা
সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা এবং সারা ভারত কিষাণ সংঘর্ষ সমন্বয় সমিতির আহবানে সাড়া দিয়ে বারাসাত স্টেশন চত্বরে এআইপিএফ, আইসা, গণপ্রতিবাদি মঞ্চ এবং বন্দী মুক্তি কমিটির সম্মিলিত উদ্যোগে সভা অনুষ্ঠিত হয়। ৭১৮ জন কৃষকের আত্মদান, এক বছরের অধিককাল দিল্লীর সীমানায় ঐক্যবদ্ধ ভাবে অবস্থান করে অন্নদাতারা এক ইতিহাস রচনা করেছে। মোদী সরকার তিন কালা কৃষি কানুন প্রত্যাহার করলেও নির্লজ্জভাবে কিছুতেই তা কার্যকরী করছে না। কেন্দ্রীয় সরকারের এই বিশ্বাসভঙ্গের বিরুদ্ধে তীব্র ধিক্কার জানালো এই সভা। সভায় বক্তব্য রাখেন রূপা ঘোষ, নোটন কর, সাহেরুল ইসলাম, নির্মল ঘোষ, অনিমেষ চক্রবর্তী প্রমুখ। গণগায়ক অনুপ মজুমদারের গান এবং শোভনা নাথের আবৃত্তি সভাকে প্রাণবন্ত করেছে। সভা পরিচালনা করেন দুলাল চ্যাটার্জী।
বাঁকুড়া
৩১ জানুয়ারি বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর শহরে ‘বিশ্বাসঘাতকতা দিবস’এ প্রতিবাদসভা করা হয় সত্যপীরতলা মোড়ে সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের পক্ষ থেকে। বক্তব্য রাখেন বিল্টু ক্ষেত্রপাল, ফারহান হোসেন খান, এআইএসএ’র সুশান্ত ধীবর, সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির তিতাস গুপ্ত, আরওয়াইএ’র প্রান্তিক, সিপিআই(এম)-এর বিষ্ণুপুর এরিয়া কমিটির সম্পাদক অসিত ঘোষ এবং গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির নেত্রী অতসী মাদ্রাজি।
কুচবিহার
সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার আহ্বানে দেশব্যাপী বিশ্বাসঘাতকতা দিবসে কুচবিহার শহরের দেশবন্ধু বাজার মোড়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়। পরিশেষে মোদীর কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়। রাজু গোস্বামী, প্রজাপতি দাস এই কর্মসূচির নেতৃত্ব দেন।
পশ্চিম মেদিনীপুর
মেদিনীপুর শহরে বিশ্বাসঘাতকতা দিবস পালন উপলক্ষে মিছিল ও পথসভা করা হয়। শহরের পার্টি কর্মীদের পাশাপাশি ভালো সংখ্যক পৌরসভার মজদুররা মিছিলে অংশ নেয়। পথসভায় বক্তব্য রাখেন পাটির রাজ্য কমিটি সদস্য তপন মুখার্জি ও বাবলু ব্যানার্জি। ছিলেন রাজ্য কমিটি সদস্য শৈলেন মাইতি, মেদিনীপুর শহর কমিটি সদস্য বানীকান্ত বারিক, রাজু দাস প্রমুখ।
জলপাইগুড়ি
জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ি ট্র্যাফিক মোড়ে বামপন্থী কৃষক ও কৃষিমজুর সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে যুক্তভাবে অবস্থান বিক্ষোভ হয়। এআইকেএম’এর প্রদীপ দেবগুপ্ত, আয়ারলা’র মুকুল চক্রবর্তী বক্তব্য রাখেন।
দার্জিলিং
দার্জিলিং জেলার ফাঁসিদেওয়া ব্লকের রানিডাঙ্গা কালারাম সব্জি বাজারে সারা ভারত কিষাণ মহাসভা এবং সারা ভারত কৃষকসভার প্রতিবাদ কর্মসূচির অঙ্গ হিসাবে বাজারে মিছিল পরিক্রমা করে। বক্তব্য রাখেন এআইকেএম’এর পবিত্র মোহন সিংহ। উপস্থিত ছিলেন আয়ারলার জেলা সম্পাদক শরৎ সিংহ, আরওয়াইএ’র জেলা নেতা কৃষ্ণপদ সিংহ প্রমুখ। মিছিলে কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন উল্লেখযোগ্য সংখ্যায়।
হুগলী
হুগলীর বলাগড় ব্লকের সায়রা গ্রামে সারা ভারত কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সমিতি এবং সারা বাংলা আদিবাসী অধিকার ও বিকাশ মঞ্চের আহ্বানে বিশ্বাসঘাতকতা দিবস পালন করা হয়। পান্ডুয়া রেল স্টেশনের বুকিং কাউন্টারের পাশে বিক্ষোভসভায় এআইকেএম’এর পক্ষে বক্তব্য রাখেন মুকুল কুমার ও বিনোদ আহির। আয়ারলা’র তরফে বক্তব্য রাখেন নিরঞ্জন বাগ ও আব্দুল কাশেম। বহু মানুষ সভার বক্তব্য শোনেন।
নদীয়া
নদীয়া জেলার গাছা বাজারে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভসভা স্থানীয় কৃষক ও ব্যাপক সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। কেন্দ্রীয় দাবিগুলির পাশাপাশি চাষিদের ধান কেনায় দুর্নীতি, গ্রামীণ রাস্তা নিয়ে পঞ্চায়েতের ইচ্ছাকৃত টালবাহানায় ভূক্তভোগী মানুষ নেতৃবৃন্দের বক্তব্যে সহমর্মিতা জানায়। বক্তব্য রাখেন কৃষ্ণপদ প্রামানিক, সন্তু ভট্টাচার্য, আসারুদ্দিন সেখ, হবিবুর রহমান প্রমূখ। ধুবুলিয়া বাজারে এক যৌথ মিছিল এলাকা পরিক্রমা করে। তারপর নেতাজী পার্কে বিক্ষোভসভা হয়। বক্তব্য রাখেন আনসারুল হক, জীবন কবিরাজ প্রমুখ। চাপড়া বাজারে আয়োজিত যুক্ত সভায় বক্তব্য রাখেন এআইকেএম’এর ধনঞ্জয় গাঙ্গুলী।
পূর্ব বর্ধমান
পুর্ব বর্ধমান জেলার পুর্বস্থলী ২নং ব্লকের ফলেয়া স্টেশন সংলগ্ন সব্জির বাজারে যৌথভাবে সভা করা হয়। সভায় বক্তব্য রাখেন আয়ারলার জেলা সম্পাদক আনসারুল আমান মন্ডল ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। বিশ্বাসঘাতক নরেন্দ্র মোদীর কুশপুতুল দাহ করা হয়।
বর্ধমান শহরের নবাব হাট বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন মোড়ে যৌথ সভার আয়োজন করা হয়েছে। বক্তব্য রাখেন আয়ারলা’র জেলা কমিটির সদস্য শ্রীকান্ত রানা, এআইসিসিটিইউ’র পক্ষ থেকে প্রাণ বল্লভ সরকার ও অন্যান্য সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। সভার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কুশপুতুল দাহ করা হয়।
গলসী থানার গলসী বাজারে যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের রাজ্য কমিটি সদস্য মোজাম্মেল হক ও অন্যান্য সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। নরেন্দ্র মোদীর কুশপুতুল দাহ করার মধ্যে দিয়ে সভা সমাপ্ত হয়।
ভাতার থানার ভাতার বাজারে যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। বক্তব্য রাখেন এআইকেএম’এর পক্ষ থেকে সত্যনারায়ন বিশ্বাস ও অন্যান্য গণসংগঠনের নেতৃবৃন্দ। সভার শেষে নরেন্দ্র মোদীর কুশপুতুল দাহ করা হয়।
কালনা ২নং ব্লকের অকালপৌষ গ্রাম পঞ্চায়েতের আগ্রাদহ বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন রাস্তার উপর এআইকেএম, আয়ারলা, আদিবাসী অধিকার ও বিকাশ মঞ্চ, সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতি ও আরওয়াইএ’র পক্ষ থেকে বিশ্বাসঘাতকতা দিবসে প্রতিবাদ বিক্ষোভ জানিয়ে ফ্যাসিবাদের নায়ক নরেন্দ্র মোদীর কুশপুতুল দাহ করা হয়।
প্রতিটি সভায় বক্তারা পশ্চিমবঙ্গে ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য কার্যকরি করা, বছরে ২০০ দিনের কাজ ও দৈনিক মজুরি ৬০০ টাকা করার দাবি ও অন্যান্য স্থানীয় দাবি তুলে ধরেন।