২০২১ সালে প্রণীত ‘ত্রিপুরা কৃষিজমি ভাড়া আইন’ আসলে কেন্দ্রীয় জনবিরোধী তিন কৃষি আইনের মতো বেসরকারি কোম্পানি পথে কৃষির বিকাশকে উৎসাহিত করবে। এরফলে কৃষকের সর্বনাশ হবে এবং কৃষক জমি থেকে উচ্ছেদ হবে। তাই, এই ‘ত্রিপুরা কৃষিজমি ভাড়া আইন’ বাতিল করতে হবে।
গত শীতকালীন বিধানসভার অধিবেশনে ত্রিপুরা সরকার ‘দি ত্রিপুরা এগ্রিকালচারাল ল্যান্ড লিজিং বিল’ এনেছে এবং বিরোধীদের অনুপস্থিতিতে বিনা বাধায় তাকে আইনে পরিণত করেছে। এই আইনে সর্বোচ্চ ৯ বছর ১১ মাস মেয়াদ পর্যন্ত নাল, টিলা ও সব ধরনের কৃষিভূমি এক আইনী চুক্তিপত্রের মাধ্যমে লিজ বা ভাড়া দেওয়ার বন্দোবস্ত করার কথা বলা হয়েছে। গত তিনদশক ধরে কৃষিতে চলমান সংকটে জর্জরিত-ঋণগ্রস্ত কৃষকেরা ও অনাবাদী ক্ষুদ্র জোতের মালিকেরা যাতে সহজে জমি লিজে দিতে পারে তার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। এই আইনে সরকার জমির ভাড়া ঠিক করে দেবে এমন বিধান রয়েছে। যাতে জমি ভাড়ার পরিমাণ ন্যূনতম ঐ জমিতে উৎপাদিত ফসলের বাজার মূল্যের চার ভাগের এক ভাগ হবে। তার কম হবেনা। এই আইন কৃষক স্বার্থবিরোধী কেন্দ্রীয় তিন কৃষি আইনের আদলে তৈরী করা হয়েছে। যাতে কৃষিকে বেসরকারি কোম্পানি পথে ঠেলে দেওয়া যায়।
সরকার এখানে সংকটের দায়ভার কৃষকদের ঘাড়েই চাপাতে ব্যস্ত। কৃষিতে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি ও ফসলের দাম কম হওয়ার ফলে কৃষি এখন সংকটগ্রস্ত ও অলাভজনক। এখানে এই সংকট নিরসনে সরকারি ন্যায্য দামে কৃষি উপকরণ সরবরাহ করা, উৎপাদন করা, ফসলের নূন্যতম সহায়ক মূল্য নির্ধারণ করার প্রশ্নে সমস্ত দায়বদ্ধতা প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। সরকার কৃষকদের কাছ থেকে বাজারের থেকে বেশি দাম দিয়ে ১৯.৪০ টাকা কেজি দরে ধান কিনছে ঠিকই। কিন্তু এইক্ষেত্রে উৎপাদন খরচের দেড়গুন দাম প্রায় ২৮ টাকা কেজি দরে দেওয়া হচ্ছেনা। সার, বীজ, কীটনাশক সবকিছুই বেসরকারি কোম্পানির হাতে তুলে দিচ্ছে। ফলে কৃষি উপকরণের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটছে। রাজ্যে কৃষকদের আয় দ্বিগুন করার প্রতিশ্রুতি এক প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। ডাবল ইঞ্জিন সরকারের সময়ে কৃষকেরা আরো বেশি সংকটাপন্ন ও দুর্দশাগ্রস্ত হয়েছে। তাই রাজ্যে গরিব ও প্রান্তিক কৃষক, নিম্ন মধ্য কৃষক ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনাবাদী জোতের মালিক বাধ্য হয়ে জমি ভাড়া দেবে, কিন্তু আর ফেরত নিতে পারবে না। শেষ পর্যন্ত জমি হাতছাড়া হবে। জমি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হবে। ত্রিপুরা ভূমি রাজস্ব ও ভৃমি সংস্কার আইনের ১২তম সংশোধনী, ২০২১ আইনে দুর্ভাগ্যজনকভাবে বর্গাদারদের কৃষক হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। তাদের সার, বীজ কীটনাশক ও সরকারি সুযোগ-সুবিধা, ফসলহানিতে ক্ষতিপূরণ ও সহায়তা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি। তাই এই ‘কৃষিজমি ভাড়া আইন ২০২১’ ও ১২তম সংশোধনী আইন বাতিল করার দাবিতে এবং ত্রিপুরার কৃষিকে বাঁচাতে গণআন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে রাজ্যে কৃষকদের কছে আহ্বান জানাচ্ছে সিপিআই(এমএল) লিবারেশন ত্রিপুরা রাজ্য কমিটি এবং এআইকেএম ত্রিপুরা রাজ্য পরিষদ।