এআইএসএ-আরওয়াইএ মিলিতভাবে রেলের পরীক্ষায় দুর্নীতি এবং যুব-ছাত্রদের ওপর পাশবিক লাঠি চার্জের প্রতিবাদে ২৮ জানুয়ারি বিহার বনধে্র ডাক দেয়। সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের পলিটব্যুরো সদস্য ও বিহার রাজ্য সম্পাদক কুণাল ছাত্র-যুবদের এই আন্দোলনকে সর্বতোভাবে সমর্থন করে বলেন, মোদী সরকার প্রত্যক্ষ ও অপ্রত্যক্ষভাবে রেলওয়েকে ব্যক্তিমালিকানার হাতে তুলে দেওয়ার জন্য ও রেলের চাকরি খতম করার যে প্রচেষ্টায় রত তার বিরুদ্ধে ছাত্র-যুবদের এই প্রতিবাদ খুবই যুক্তিযুক্ত।
আন্দোলনের প্রেক্ষাপট : ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের আগে ২১টি রেলওয়ে বোর্ডের ৭টি পোস্টের জন্য স্নাতক স্তরের ৩৫,২৭৭টি শূন্যপদে নিয়োগের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। ৭টি পোস্টের মধ্যে স্টেশন মাস্টার, গার্ড এবং টিকিট পরীক্ষকের পোস্ট ছিল। একবছর পরে ২৮/১২/২০২০ প্রথম পরীক্ষা হয়, কোভিডের জন্য বাকি পরীক্ষাগুলি স্থগিত হয় ৩১/০৭/২০২১ পর্যন্ত। অবশেষে ১৪ জানুয়ারি ২০২২এ রেলওয়ে বোর্ড পারফরম্যান্স টেস্টের ফলাফল ঘোষণা করে।
এই ফলাফল ছিল রেলমন্ত্রক দ্বারা ২০১৯ সালে ঘোষিত স্নাতক স্তরের ৩৫,২৭৭ পোস্ট ও গ্রুপ ডি’র ১.৩৭ লক্ষ পোস্টের জন্য নেওয়া পরীক্ষার। ঘোষণা অনুযায়ী স্নাতক স্তরের শূন্যপদের ২০ গুণ সংখ্যক অর্থাৎ ৭ লক্ষ পদপ্রার্থীর নাম বিবেচনা করা উচিত ছিল। রেলওয়ে বোর্ড ৭ লক্ষের নাম ঘোষণা করলেও এরমধ্যে ৪ লক্ষ প্রার্থী ২টি বা তার বেশি এমনকি ৭টি পোস্টের জন্য আবেদন করেছিলেন ও পরীক্ষায় সফল হয়েছিলেন। তাই বাস্তবে মাত্র ২.৭৬ লক্ষ সফল পদপ্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। পদপ্রার্থীদের দাবি তাই সঠিক ছিল — প্রতিটি পোস্টের জন্য ১ জনেরই নাম ঘোষণা করতে হবে। রেলওয়ে বোর্ড ঘোষিত সমস্ত পদের জন্য লোক নিয়োগ করতে ইচ্ছুক নয় এটা পরিষ্কার বোঝা গেল। সরকারের এই ধোঁকা পদপ্রার্থীরা ধরে ফেলে।
গ্রুপ ডি’র জন্য ঘোষিত ১.৩৭ লক্ষ পদের জন্য প্রায় ১ কোটি প্রার্থী আবেদন করেন। বেরোজগারির কি নিদারুণ অবস্থা তা এই ঘটনা প্রমাণ করে। বোর্ড প্রথমে ঘোষণা করেছিল পারফরম্যান্স টেস্ট একবারই নেওয়া হবে, কিন্তু ফলাফলের সময় বলা হল ২য় পরীক্ষা নেওয়া হবে।
ছাত্র-যুবরা প্রতিবাদে, বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। পাটনা, প্রয়াগরাজ, নালন্দা সহ বহু শহরে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। গ্রুপ ডি প্রার্থীদের নিয়ে পরীক্ষক বোর্ডের এই ধোঁকাবাজির বিরুদ্ধে ছাত্র-যুবদের মূল দাবি — আরআরবি-এনটিপিসি’র ফলাফলের সংশোধন। পুলিশের যথেচ্ছ লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস, প্রতিবাদীদের গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে সিপিআই(এমএল) তীব্র প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানায়। রেলওয়ে রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের নন-টেকনিক্যাল পপুলার ক্যাটেগরির পরীক্ষার ফলাফলের দুর্নীতি, প্রতিবাদীদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো, মোদী সরকারের রেলে চাকরির সুযোগ বন্ধ করার চক্রান্ত ও বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে গত ২৮ জানুয়ারি বিহারে বনধ্ করার ডাক দেয় এআইএসএ-আরওয়াইএ।
প্রচন্ড ঠান্ডায় ছাত্র-যুবরা পাটনা ও আরাতে ১০ ঘন্টার জন্য রাত্রিবেলায় রেল অবরোধ করেন, রাজধানী এক্সপ্রেস সহ ৩০ ট্রেনের চলাচল ব্যাহত হয়।
মোদী সরকারের প্রতিশ্রুতি ছিল বছরে ২ কোটি কর্মসংস্থান এবং নীতীশ সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল ১৯ লক্ষ চাকরি — ছাত্র-যুবদের কাছে তাঁদের জবাব দিতে হবে কোথায় গেল সেই প্রতিশ্রুতি? কর্মসংস্থান তো হয়নি বরং বিদ্যমান চাকরির পদ ছেঁটে দিয়ে, রাষ্ট্রায়ত্ব ক্ষেত্রকে বেসরকারি করে, বেচে দিয়ে যুব ছাত্রদের অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। মোদী সরকারের ৭ বছরে চাকরির পদ অর্ধেক হয়েছে। পরীক্ষায় সফল প্রার্থীদের নিয়োগপত্র না দেওয়ায় বছরের পর বছর তারা অপেক্ষারত। ইউপিএসসি’র পদ পর্যন্ত অর্ধেক ছাঁটা হয়েছে এবং বাইরে থেকে নিয়োগ করা হচ্ছে।
সিপিআই(এমএল) লিবারেশন ছাত্র যুবদের এই আন্দোলনকে পূর্ণ সমর্থন করছে।