কামারহাটি পুরসভায় ওয়ার্ড সংখ্যা ৩৫, সিপিআই(এমএল) একমাত্র ২৭নং ওয়ার্ডে প্রার্থী দিয়েছ। দেওয়াল লিখন, পোষ্টারিং, স্কোয়াড মিছিল, সভা এবং বাড়ি বাড়ি প্রচার চলছে। কামারহাটি পৌরসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে সন্ত্রাসের আবহাওয়া তৈরি হয়েছে। সবার মুখে একটাই প্রশ্ন ‘ভোট দেওয়া’ যাবে? ভোটের নামে প্রহসন হওয়ার সম্ভাবনাই থাকছে। তৃণমূলের অনেকেই নির্দল প্রার্থী হয়েছেন। কয়েকজন নাম প্রত্যাহার করেছে, আবার অনেকের নাম থেকে গেছে।
শিখা গুহ রায় কামারহাটি পৌরসভার ২৭নং ওয়ার্ডে সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের প্রার্থী হিসাবে উদীয়মান সূর্য চিহ্ন নিয়ে প্রতদ্বন্দ্বিতা করছেন। শিখা গুহ রায় এআইসিসিটিইউ পরিচালিত ‘পশ্চিমবঙ্গ সংগ্রামী রন্ধনকর্মী (মিড-ডে-মিল) ইউনিয়ন’এর প্রতিষ্ঠিত নেত্রী। তিনি রন্ধনকর্মীদের কাজের স্বীকৃতি, মজুরি বৃদ্ধি, সামাজিক সুরক্ষা, বোনাস সহ অন্যান্য দাবি নিয়ে রন্ধনকর্মীদের সংগঠিত করে, শিক্ষামন্ত্রী, জেলা শাসক, মহকুমা শাসক ও পৌরসভার চেয়ারম্যানের কাছে ডেপুটেশন ও বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন। তিনি ‘সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতি’র অন্যতম নেত্রী। মহিলাদের অধিকারের জন্য ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে তিনি সবসময়ই সরব। শিখা পার্টির লোকাল কমিটির সদস্যা। পার্টি, গণসংগঠন ও যৌথ কর্মসূচিতে সামনেই থাকেন।
বাংলার মানুষ বিধানসভা নির্বাচনে বিভেদকামী, বিভাজন সৃষ্টিকারী ফ্যাসিবাদী বিজেপি’কে পরাস্ত করেছে। নির্বাচনে টিএমসি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পর গণতান্ত্রিক পরিসর ক্রমশ সঙ্কুচিত হয়ে চলেছে। ওয়ার্ড অফিসগুলো দলীয় কার্যালয়ে পরিণত হয়েছে। রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন বেড়ে চলেছে। দাদাগিরি, প্রমোটারদের দাপট লাগাম ছাড়া। এলাকার বৃহৎ, মাঝারি, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পগুলো ধুঁকছে বা বন্ধ হয়েছে। করোনাকালে সাধারণ মানুষের আর্থিক অবস্থা খুবই শোচনীয় হয়েছে। বিগত দিনের পুর কর্তৃপক্ষ অর্থাভাবে জর্জরিত মানুষ, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বা দোকানদারদের আর্থিক অনুদান দেয়নি। বিপরীতে জমি বাড়ির ট্যাক্স বাড়িয়েছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ট্রেড লাইসেন্স ফি ১০-১২ গুণ বৃদ্ধি করেছে। ১০০ দিনের কাজে কর্মরতদের বসিয়ে দিয়ে নতুন লোক নিয়োগ করেছে। এই প্রশ্নে স্বজন-পোষণের অভিযোগ উঠছে। এই ওয়ার্ডটি মধ্যবিত্ত, সংগঠিত-অসংগঠি শ্রমিক এবং আর্থিকভাবে দুর্বল ব্যাক্তিবর্গের বাস। ওয়ার্ডের পুকুর, পার্কের দীর্ঘদিন কোনও সংস্কার হয়নি। রাস্তা বহুলাংশে ভাঙাচোরা, কয়েকটি পাড়ায় পানীয় জলের তীব্র সঙ্কট আছে। এমন কি অন্য ওয়ার্ডগুলোতে যে ‘প্রসাধনী প্রলেপ’ দেখা যায়, এখানে তাও হয়নি। এই সব নিয়ে মানুষের ক্ষোভ আছে।
পার্টির প্রচার
পার্টির পক্ষ থেকে ২৮নং ওয়ার্ডের ভাগাড় সংস্কার ও আধুনিকীকরণের জন্যে স্থানীয় মানুষের স্বাক্ষর সংগ্রহ করে চেয়ারম্যানকে ডেপুটেশন দেওয়া হয়। চেয়ারম্যানের ঔদ্ধত্যপূর্ণ প্রতিক্রিয়া “আপনাদের ভাবতে হবে না, আমরা আছি”। ২০২০-তে যখন কোভিড ছড়িয়ে পড়েছে, মানুষ আতঙ্কিত, আমাদের ছাত্র সংগঠন আইসা গড়ে তুললো ‘কোভিড ভলান্টিয়ার্স’। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা সংক্রমিতদের কাছে পৌঁছে গেছে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া, রোগীর বাড়ি সংক্রমণ মুক্ত করা, খাবার, অক্সিজেন, ওষুধ পৌঁছে দেওয়া ইত্যাদি কাজগুলো করতে থাকে। ব্যয়বহুল শিক্ষাব্যবস্থা এবং অনলাইন শিক্ষা অনেকেরই হাতের বাইরে চলে গেছে। তখন সোনার বাংলায় ‘আলাপ’ টেক্সট বুক লাইব্রেরী ছাত্ররা গড়ে তুলেছে। করোনাকালে রক্তের সঙ্কটে ছাত্র-যুবরা প্রতিবছর স্বেচ্ছায় রক্তদান করে, মানুষকে সচেতন করে চলেছে। পার্টির পক্ষ থেকে লকডাউনের সময় আর্থিকভাবে দুর্বল পরিবারগুলিকে খাদ্যসামগ্রী দেওয়ার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছে। এই কাজগুলো সম্পর্কে স্থানীয় মানুষ ওয়াকিবহাল।
বামপন্থী কর্মীদের কাছে আবেদন করা হয় ৫-৭ বছর ধরে সিপিএম এবং সিপিআই(এমএল) লিবারেশন কেন্দ্র বিরোধী ও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বিভন্ন সময় যৌথ কর্মসূচি পালন করেছে। যেমন ভারত বনধ্ / বাংলা বনধ্, রেল রোকো, রাস্তা অবরোধ, সাগর দত্ত হাসপাতালে শুধুমাত্র কোভিড নয়, অন্যান্য চিকিৎসা চালু রাখার দাবিতে আন্দোলন ইত্যাদি ছোট-বড় বহু ইস্যুতেই। এরপর বিধানসভা নির্বাচনে ‘বিজেমূল’ তত্ত্ব নিয়ে সিপিএমের সাথে রাজনৈতিক মতবিরোধ শুরু হয়, তা সত্ত্বেও কামারহাটি বিধানসভা কেন্দ্রে সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বামফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থীর সমর্থনে প্রকাশ্য সভা করেন। ভোটের ফলাফল নিয়ে বিচার করার সময় এটা নয়, আপনাদের কমিটেড ভোট কোথায় গেল তার মূল্যায়ন আপনারাই করবেন। পুরসভা নির্বাচনে সিপিএম নেতৃত্ব চরম রাজনৈতিক সঙ্কীর্ণতার পরিচয় দিয়েছেন। পুরসভা নির্বাচনে বিজেপি ফ্যাসিবাদ ও রাজ্যের স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে বামপন্থীদের ঐক্য গড়ে তোলা বা আসন সঝোতার প্রশ্নে সম্পূর্ণ নীরব থেকেছেন। সিপিএমের ভূমিকা বামপন্থীদের ঐক্য ও গণআন্দোলনকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। কেন্দ্রের ফ্যাসিবাদী সরকারের নানা উৎপীড়ন এবং রাজ্যে স্বৈরাচার, দুর্নীতি বিরুদ্ধে এবং সিপিএম নেতৃত্বের চরম রাজনৈতিক সঙ্কীর্ণতার বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার আবেদন করা হয়েছে।
প্রচার চলছে, ভোটের দিন বোঝা যাবে বাংলায় গণতন্ত্র কতটা সুরক্ষিত।