‘পাড়ায় পাড়ায় শিক্ষালয়’ প্রকল্প চালু করতে গতকাল শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিক বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন। যত প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন, তার থেকে বেশি প্রশ্নের জন্ম দিয়েছেন। যতবার তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, ২ বছরের বেশি সময় ধরে স্কুল বন্ধ, কবে খুলবে? ততবার শিক্ষামন্ত্রী এদিক ওদিক তাকিয়ে বলছেন, “সব দিক বিবেচনা” করে মুখ্যমন্ত্রী দিন ঘোষণা করবেন। প্রথম জিজ্ঞাসা, মুখ্যমন্ত্রী কোন কোন দিক বিবেচনা করছেন? তিনি কি একাই বিবেচনা করছেন, নাকি কোনো বিশেষজ্ঞ টিমের সঙ্গে কথা বলছেন, পরামর্শ করছেন? ঐ বিশেষজ্ঞ টিমে কারা কারা আছেন? দ্বিতীয় জিজ্ঞাসা, শিক্ষক ও ছাত্র সংগঠনগুলির সাথে পরামর্শ ও মত বিনিময়ের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কি? অভিভাবক ও তাদের সংগঠনের সাথে কথা বলার কোনো প্রয়োজন তাঁরা বোধ করেছেন কি? শুধু শিক্ষা প্রশ্নে নয়, জনগণের মতামত গ্রহণের কোনো উদ্যোগ কোনো প্রশ্নেই দেখা যায় না। কারখানা বন্ধ হলে শ্রমিক কর্মচারীরা কী করবে, তা নিয়ে শ্রমিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে শ্রমমন্ত্রী ও তার দপ্তরের কথা বলার কোনো হেলদোল থাকে না। প্রিভেনটিভ মেডিসিন নিয়ে স্বাস্থ্য সংগঠনগুলোর সঙ্গে কথা হয় না। কথা না বলার রোগ সর্বস্তরে। যে কথা হচ্ছিল, শিক্ষামন্ত্রী ও তার দপ্তর কি সমীক্ষা চালিয়েছেন যে এই দু’বছরে কত ছাত্র ছাত্রী প্রাথমিক শিক্ষা জগতের বাইরে চলে গেছে। সাধারণ সময়ে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণীতে পৌঁছতে যে ভয়াবহ ‘স্কুল ছুট’ (ড্রপ আউট) দেখা যায়, এই বিতর্কিত অতিমারীতে তা কোথায় পৌঁছেছে, তার কোনো খোঁজ খবর শিক্ষা দপ্তরে জমা হয়েছে কি? শিক্ষামন্ত্রীর কাছে পরের জিজ্ঞাসা, মিড-ডে-মিল কি সব ছাত্র ছাত্রীরা পেয়েছে? কোথাও ডিমের বরাদ্দ কাটছাঁট, কোথাও এমনকি চাল পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। একাডেমি পুরস্কার প্রাপ্ত নাট্যকার শিক্ষামন্ত্রী নিশ্চয় ঐ কথাটা ভুলে যাননি, “Something is rotten in Denmark”। আর যারা শিশুদের রান্না করে খাওয়াতো, তাঁরা সবাই ভালো আছেন তো? শিক্ষামন্ত্রী জানেন কি, কারখানা বন্ধ হলে শেড চুরি হয়ে যায়, রাতের বেলা মেশিনপত্র হাঁটতে শুরু করে, তেমনি স্কুল বন্ধ হবার পর ঐ জায়গাগুলো অপরাধীদের আশ্রয়স্থল হয়েছে? এত ঝড়বৃষ্টি গেল, স্কুলগুলি সব আস্ত আছে তো? যে জিজ্ঞাসাটা সকলেই করছেন, আপনি দমদমের যে রাস্তার শেষের দিকে নিরিবিলিতে থাকেন, তার প্রবেশমুখে এতো পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকে কেন? তা কি ঐ হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী যাদের আন্দোলনের চাপে মুখ্যমন্ত্রী পর্যন্ত কথা দিয়েছিলেন, তাদের দ্রুত নিয়োগ করা হবে, তাদের বিক্ষোভ থেকে বাঁচতে? এভাবে কি নিরিবিলিতে বাঁচা যায় নাট্যকার? ম্যাকবেথের ঐ অশরীরী আত্মাগুলো তো আপনাকে খুঁজে ফিরবেই! আসলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানেন না ১০-১২ বছরের শিশুদের কেন ভ্যাকসিন দেওয়া হয়নি, শিশুদের এই ভাইরাস থেকে মুক্ত রাখার রাস্তা কি, শিক্ষামন্ত্রীও জানেন না শিশুদের শিক্ষা দিতে কত শিক্ষক দরকার। “সবই তিনি বলবেন”! শিক্ষামন্ত্রী নিশ্চয়ই অবগত বিদ্যালয় আসলে বন্ধুত্ব শেখায়, সমাজ চিনতে শেখায়। রবি ঠাকুরের সেই কবিতাটি মনে পড়ে? আমরা চাষ করি আনন্দে। চাষির ছেলের সাথে অধ্যাপকের মেয়ের বন্ধুত্ব হতে কোনো প্রাচীর মাঝে দাঁড়ায় না। এই হারিয়ে যাওয়া বন্ধুত্ব মুখ্যমন্ত্রী ফেরত দেবেন কিভাবে?
আপনাদের হাতে আমাদের শিশুদের দায়িত্ব আমরা ছেড়ে দিয়েছি। ঐ কুঁড়ে ঘরে থাকা গ্রামগঞ্জের মানুষগুলোর আর কোনো পথ নেই — বেটি অন্তত দু’চার পাতা শিখে আসুক। এত উন্নাসিকতা নিয়ে শিক্ষা দপ্তর চালানো যায়? কথা বলুন, সকলের সাথে বলুন। মানুষ পথ দেখায়, আলো দেখায়।
- পার্থ ঘোষ