১৬ জানুয়ারি ঝাড়খণ্ডে জনসংকল্প দিবস পালন করা হয় কমরেড মহেন্দ্র সিং-এর ১৭তম শহীদ দিবস স্মরণে। গিরিডি জেলায় জনসংকল্প দিবসে উপস্থিত ছিলেন সিপিআই(এমএল) সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য, পলিটব্যুরো সদস্য কার্তিক পাল, ঝাড়খণ্ড রাজ্য সম্পাদক মনোজ ভক্ত, বিধায়ক বিনোদ সিং, গিরিডি জেলা সম্পাদক পূরণ মাহতো সহ গজেন্দ্র মাহতো, সরিতা মাহতো, মুস্তাক আনসারি, সরিতা সাও এবং অন্যান্যরা। স্থানীয় গোলামবর বাসস্ট্যান্ডে মহেন্দ্র সিং-এর নব উন্মোচিত মূর্তিতে মাল্যদান করে সভা শুরু হয়।
সভা থেকে যে সংকল্পগুলি গৃহীত হয় তা হল –
১) সিপিআই(এমএল) লিবারেশন উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব, উত্তরাখন্ড, গোয়া এবং মণিপুরের জনগণের কাছে আবেদন করছে, কর্পোরেট-সঙ্ঘী-ফ্যাসিস্ট ষড়যন্ত্রকারীরা যারা দেশকে ধ্বংস করতে চায় তারা যেন একটিও আসনে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে জিততে না পারে।
২) মোদী সরকারের জনবিরোধী, শ্রমিকবিরোধী এবং দেশবিরোধী কর্মসূচির বিরুদ্ধে ২৩-২৪ ফেব্রুয়ারি ঘোষিত ধর্মঘটে আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে এবং আমরা ধর্মঘটের সমর্থনে রাস্তাতেও নামব।
৩) কৃষিতে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের আন্দোলনের পাশে থাকা, শ্রমিক-বিরোধী শ্রমকোড আইন, সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন, মানবাধিকার কর্মীদের এবং রাজনৈতিক প্রতিবাদীদের ইউএপিএ সহ রাষ্ট্রদ্রোহীতা ও অন্যান্য মামলায় কারাবন্দী করে রাখা ইত্যাদির বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে আমরা অঙ্গীকার করছি। আমরা ঝাড়খন্ড রাজ্যে পুলিশী অত্যাচার ও গণপিটুনিতে হত্যার বিরোধিতা করছি এবং দাবি করছি হেমন্ত সরকার কড়া হাতে এসব দমন করুন।
৪) আমাদের দাবি - ঝাড়খন্ডে শূন্যপদে লোক নিয়োগ এবং চাকরিতে বহাল করার জন্য নির্দেশ দেওয়ার লক্ষ্যে সরকার সক্রিয় হোক।
৫) ‘সরকার আপনার দরজায়’ কর্মসূচিতে জমা পড়া আবেদনপত্র জনসমক্ষে আনা হোক এবং সেগুলির সমাধান করুক সরকার। রেশন ব্যবস্থায় ব্যাপক দূর্নীতি ও খাদ্যশস্য লুঠের তীব্র বিরোধিতা করছি আমরা। জেলাস্তরেও আমরা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আরও তীব্র করব। ‘খাতা’ হোল্ডারদের জমির জন্য অনলাইন জমার রসিদ দুর্নীতিমুক্তভাবে বিলি করুক সরকার। ‘গইরমাজরুয়া’ জমির জন্য জমার রসিদ দেওয়া শুরু করুক সরকার।
৬) মোদী সরকারের মুদ্রাকরণের নামে রাষ্ট্রায়ত্ব শিল্প, পরিষেবা এবং পরিকাঠামো শিল্পকে বেচে দেওয়ার তীব্র বিরোধী আমরা।
আমাদের দাবি — ঝাড়খণ্ডের জনগণের স্বার্থে ঝাড়খণ্ড সরকারের উচিত কেন্দ্রের এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করা। এই কর্মসূচির বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন আরও জোরদার করব।
৭) প্যারা-টিচার সহ সমস্ত চুক্তি-শ্রমিকদের নিয়মিতকরণ ও উপযুক্ত বেতনের দাবি আমরা সমর্থন করি। সরকারি স্কুলে কর্মরত রাঁধুনি (রসোইয়া)-দের আন্দোলনকে আমরা সমর্থন জানাচ্ছি। স্বাস্থ্যকর্মী এবং অন্যান্য কর্মী (সহিয়া)-দের দাবিগুলি আমরা সঠিক বলে মনে করি।
আমাদের দাবি - সরকার চুক্তি-শ্রমিকদের দাবিগুলি মেনে নিয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ করুক নতুবা আমরা এই ইস্যুতে আমাদের সংগ্রাম আরও জোরদার করব।
৮) আমরা আদিবাসীদের জল-জঙ্গল-জমির অধিকারের দাবির আন্দোলনকে সমর্থন করি এবং কর্পোরেট মদতপুষ্ট সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের স্বার্থের জন্য এই অধিকারের ওপর আক্রমণের বিরোধিতা করি। আমরা ড্রোন (যান্ত্রিক উড়ন্ত ক্যামেরা)-এর সাহায্যে খুন্তি সহ সমস্ত জেলার জমি জরিপের কাজের বিরোধিতা করছি এবং সম্পত্তি কার্ড প্রকল্পের প্রত্যাহার দাবি করছি। এর বিরুদ্ধে আন্দোলন আমরা তীব্র করব।
৯) ঝাড়খণ্ডে শ্রমিকদের নিরাপত্তাহীনতা ও তাদের ওপর আক্রমণ বেড়েই চলেছে। এই ঘটনায় সরকারের উদাসীনতার বিরোধী আমরা। গিরিডির মুন্ধ্রা রাইস মিল, কোডার্মার কেটিপিএস এবং বাঘমারা ও চিরকুন্ডার লোডিং শ্রমিকদের আন্দোলনের নেতাদের নামে মিথ্যা মামলা তুলে নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি আমরা। শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষার জন্য আমরা তাদের আন্দোলনকে আরও জোরদার করব।
১০) কেন্দ্রীয় সরকারের নয়া শিক্ষানীতি প্রত্যাহার করা উচিত। কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার মিলিতভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার উদ্যোগ নিক। পালা করে ৫০ শতাংশ ছাত্র নিয়ে ক্লাস চালু করুক সরকার।