এআইএসএ (আইসা)-র পক্ষ থেকে গত ৩ জানুয়ারি ২০২২ প্রচারিত প্রেস বিবৃতি
অবিলম্বে ছাত্র ও সংশ্লিষ্ট সব মহলের সঙ্গে আলোচনায় বসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিকল্প মডেল তৈরি করতে হবে সরকারকে। শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেটের ব্যয়ভার সরকারকে নিতে হবে।
রাজ্যে কোভিড সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউয়ের চোখ রাঙানি যেমন আছে; তাকে অজুহাত করে প্রথম কোপ পড়ল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর। সরকার আবার স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে আদেশ দিয়েছে। আমরা দেখেছি যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার দরুণ কত শিক্ষার্থী আর পড়াশোনার মধ্যে ফেরেনি, পরিসংখ্যান বলছে এই হার বেড়েছে। সংক্রমন রোধে দেড়-দু বছরেও এখনও পর্যন্ত সরকার কেন কোনো সদর্থক ভূমিকা গ্রহণ করতে পারেনি, এর কোনো উত্তর নেই। আর উত্তর নেই বলেই আজ আবার বিধিনিষেধ ঘোষণার নামে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ আরো অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে। সমস্যার সমাধান হিসাবে দিয়েছে অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থা, যারফলে অর্থনৈতিক এবং সামাজিকভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবার থেকে আসা শিক্ষার্থীদের কাছে পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়া ছাড়া কোনো গতি নেই, ফলে খুব স্বভাবতই তারা বিভিন্ন ধরণের শ্রমিকে পরিণত হয়েছে। এই শিক্ষার্থীরা যখন মাঝে কিছুদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলার পর আবার স্বাভাবিক পড়াশোনার মধ্যে ফিরতে পারতো, তাদেরকে আবার পড়াশোনার মধ্যে ফিরিয়ে আনতে উৎসাহিত করার পরিকল্পনাও সরকার নেয়নি, যে দায়িত্ব একান্তই এই সরকারের ছিল। অথচ আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করার ফলে কেন্দ্রীয় সরকার যে নয়া শিক্ষানীতি ২০২০, এনেছে তার পথ আরো সুগম করছে এই সরকার। ওই নীতিতে ‘অনলাইন’ এই শব্দ একাধিকবার ব্যবহৃত হয়েছে। দেখা যায় যে অনলাইন ব্যবস্থা একটা আনুষঙ্গিক ব্যাপারমাত্র পড়াশুনা করতে, জ্ঞান আরোহণের ক্ষেত্রে! অথচ একে শুধু কর্পোরেটদের সুবিধে করতে শিক্ষাকে পণ্য হিসাবে বিক্রি করার এক মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ‘টাকা যার, শিক্ষা তার’, অতিমারির অজুহাতে এই নীতিই বলবৎ করছে সরকার।
আমরা, ‘অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন’ মনে করি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সরকার একদমই চিন্তিত নয়, তারা কোভিড’এর মতো বিশালাকায় সমস্যাকে কাজে লাগিয়ে মুনাফার চাটুকারিতা করছে। শিক্ষার্থীদের সবার ঐচ্ছিক টিকাকরণের ব্যবস্থা করানো, অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা যাতে কোভিড সংক্রমণ ঠেকিয়ে রাখা যায়। আমাদের দাবি হল এই পর্যায়ে হস্টেল ও লাইব্রেরি খোলা রাখতে হবে এবং ক্লাসরুমে শিক্ষার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা সরকারকে করতে হবে, ক্যাম্পাসে সর্বদা একটা মেডিকেল টিম জরুরি ভিত্তিতে নিযুক্ত করে রাখতে হবে, নিয়মিত স্যানিটাইজেশানের ব্যবস্থা করতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেটের ব্যয়ভার সরকারকে নিতে হবে। দ্রুত ছাত্র সংগঠন, শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-অধ্যাপক সংগঠনগুলো ও শিক্ষাবিদদের নিয়ে আলোচনায় বসুক সরকার। কিভাবে দ্রুত স্বাভাবিকভাবে শিক্ষার্থীরা শিক্ষাক্ষেত্রে ফিরতে পারে, তার দিশা নির্ধারণ করুক সরকার, অন্যথায় আন্দোলনই একমাত্র রাস্তা।