দিন কয়েক আগে স্বয়ং কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান জানিয়েছিলেন, গত সাতবছরে শুধু আইআইটি, এনআইটি’র মতো কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১২২ জন পড়ুয়া আত্মহত্যা করেছেন। সংসদে বিরোধীদের প্রশ্ন ছিল, হাতে গোনা কয়েকটি শীর্ষ প্রতিষ্ঠানে ছবিটা যদি এই হয়, তা হলে দেশের পুরো ছবিটা কতটা ভয়াবহ! সেই উত্তর মিলছে কেন্দ্রেরই আর এক সংস্থা ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো বা এনসিআরবি’র তথ্যে। ২০১৬ থেকে ২০২০ — এই পাঁচবছরে লাফিয়ে বেড়েছে দেশে পড়ুয়াদের আত্মহত্যা।
প্রত্যাশার চাপ বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে পড়ুয়াদের উপরে। প্রত্যাশা পূরণ না হতেই ‘থ্রি-ইডিয়েটস’ সিনেমার জয় লোবোর সেই লাইন — “আই কুইট” — ফিরে ফিরে আসছে পড়ুয়াদের জীবনে। এনসিআরবি’র তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬-এ সারাদেশে পড়ুয়া আত্মহত্যার সংখ্যা ছিল ৯,৪৭৮, যেটা ২০২০-তে তা পৌঁছেছে ১২,৫২৬-এ। ধাপে ধাপে এই প্রবণতা বেড়ে চলেছে। ইঁদুর দৌড়ে ছাত্রছাত্রীদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়ছে। তারসঙ্গে সারাদেশে ক্যাম্পাসে কর্তৃপক্ষের কর্তৃত্ববাদও বেড়েছে।
অন্যদিকে ২০১৬-তে বাংলায় ১,১৪৭ জন পড়ুয়া আত্মহত্যা করলেও ২০২০-তে তা নেমে এসেছে ৩২৩-এ। যদিও রাজ্যের বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দেওয়া তথ্যে গলদ রয়েছে।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের বক্তব্য, “প্রত্যাশার চাপ, ব্যর্থতাকে মেনে নিতে না পারার সমস্যা আছেই। কিন্তু বাংলার ক্যাম্পাসগুলি অনেক বর্ণময়। যেসব ক্যাম্পাসে কর্তৃত্বের বেড়াজাল আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখে, সেখানে সমস্যা বেশি।” দেবশঙ্কর হালদারের বক্তব্য, “এখন কেবল প্রমাণ করলেই হবেনা, প্রত্যেককেই বিশেষ কেউ হতে হবে বলে দৌড় চলছে। এই গোলকধাঁধায় মানিয়ে উঠতে না পেরেই আত্মহত্যার রাস্তা নিচ্ছে অনেকে।” তাঁর সংযোজন, “নাটক, রাজনীতি, ক্রিকেট বা ফুটবলের মতো পড়াশোনাও কিন্তু সঙ্ঘবদ্ধ কাজ। বাংলার পরিবেশে সেই সঙ্ঘবদ্ধতা এখনও রয়েছে। ফলে চাপ সত্ত্বেও পড়ুয়াদের একটা অন্য জীবন রয়েছে।”
এনসিআরবি’র তথ্যেও এই নিরিখে আত্মহত্যার সূচক ঊর্ধ্বমুখীই। মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, কর্নাটক, গুজরাট ও দিল্লী’র মতো রাজ্য রয়েছে এই পরিসংখ্যানে উপরের দিকে। তবে আইআইইএসটি, শিবপুরের প্রাক্তন রেজিস্ট্রার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বষ্ট বক্তব্য, “ক্যাম্পাসে সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক পরিবেশ ছিনিয়ে নিয়ে ছাত্রদের কেরিয়ারসর্বস্ব করার ব্যবস্থায়, প্রকল্প আর মনোবিদে কিন্তু আত্মবহত্যার প্রবণতা কমবে না।”
- এই সময়, ৩১ ডিসেম্বর ২০২১