সম্প্রতি ‘নদী বাঁচাও জীবন বাঁচাও আন্দোলন’এর পক্ষ থেকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দু’টি চিঠিতে দক্ষিণ দিনাজপুরের ঐতিহাসিক তপন দীঘিকে পুনরুদ্ধার করা ও আত্রেয়ি নদীর অবিরল জলধারা রক্ষা করার আবেদন জানানো হয়েছে।
ঐতিহ্যশালী তপন দীঘি সংস্কার ও উন্নয়নের নামে ইট-কংক্রিটের পাঁচিল ও ঘরবাড়ি তৈরি হচ্ছে। এরফলে দীঘির জলধারণ অঞ্চল চিরজীবনের জন্য সংকুচিত হচ্ছে। যেকোনো কংক্রিট জলজ জীব বৈচিত্রের জন্য ক্ষতিকারক এবিষয়ে মহামান্য আদালত এবং পরিবেশ বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ জনসমক্ষে বর্তমান। সহস্র বছরের প্রাচীন তপন দীঘি পার্শ্ববর্তী অধিবাসী ও আদিবাসী মানুষের সংস্কৃতির যোগাযোগ এই জলাশয়ের সঙ্গে। উন্নয়নের অজুহাতে দীঘির সঙ্গে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের মানুষদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা সমর্থন যোগ্য নয়। আবার দীর্ঘদিন ধরে দীঘি সংলগ্ন আদিবাসী অধ্যুষিত কাজিভাগ ও দ্বিনগর গ্রামের আদিবাসী কৃষকেরা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সেচদপ্তর পরিচালিত পাম্পের মাধ্যমে এই দীঘি থেকে কৃষির জল পেয়ে থাকে। পাঁচিল দিয়ে দীঘি ঘিরে দেওয়ার ফলে বিগত তিনবছর ধরে সেই বৃষ্টির জলসেচের সুবন্দোবস্ত থেকে তাঁরা বঞ্চিত হচ্ছেন যা ভারতীয় সংবিধানের ৪৬ নম্বর ধারা লংঘন করছে। এই বিষয়ে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়ার মাধ্যমে বাস্তুতান্ত্রিক পুনরুদ্ধারের সুবন্দোবস্ত ও প্রকৃতিকেন্দ্রিক সামগ্রিক উন্নয়নের ব্যবস্থা করতে হবে। অবিলম্বে পাঁচিল দেওয়ার কাজ বন্ধ করতে হবে। এই বিষয়ে স্থানীয় অধিবাসীবৃন্দ এবং স্থানীয় সংগঠন ‘তপন দীঘি ও পরিবেশ সুরক্ষা সমিতি’র পক্ষ থেকে সরকারের কাছে ইতিপূর্বেই একটি আবেদনপত্র জমা দিয়েছে বলে জানান ‘নদী বাঁচাও জীবন বাঁচাও আন্দোলন’এর কর্মী তাপস দাস।
আত্রেয়ী নদীকে বাঁচানোর দাবিসম্বলিত চিঠিতে বলা হয়, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় আত্রেয়ী নদীর উপর দুই মিটার উঁচু একটি চেক-ড্যাম করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। এটি একটি শুধুমাত্র অর্থ এবং শ্রমের অপচয়কারী পরিকল্পনা হবে। কারণ এই কথা বোঝা দরকার আত্রেয়ী কোনো সাধারণ ছোট নদী নয় যে অল্প কিছু জল কিছু সময়ের জন্য বয়ে নিয়ে চলে, আত্রেয়ী একটি অত্যন্ত জীবন্ত জীব বৈচিত্র্যেপূর্ণ পলি ও জল প্রবাহী নদী। এই নাতিদীর্ঘ বাঁধ নির্মাণের অতি অল্প সময়ের মধ্যেই বাঁধের উজানের অংশ পলিতে ভরে যাবে। ফলে বাঁধ অকেজো হবে। ফলত নদীর জলধারণের ক্ষমতা আরও হ্রাস পাবে। উত্তরবঙ্গে অল্প বৃষ্টিতেই বন্যার প্রবণতা আরও বেড়ে যাবে এবং ইতিমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত আত্রেয়ী নদীর স্বাভাবিক গতি ও জীববৈচিত্র্য এবং নদী নির্ভর জনজীবনকে ভবিষ্যতে অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। সেই কারণে নদী বাঁচিয়ে জীবন বাঁচানোর তাগিদে অবিলম্বে এই পরিকল্পনা বাতিল হোক।
‘নদী বাঁচাও জীবন বাঁচাও’ আন্দোলনের পক্ষ থেকে সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়েছে, বর্তমান সময়ে সাধারণের বা সর্বজনীন প্রাকৃতিক সম্পত্তিকে সাধারণ জ্ঞান দিয়ে অনুধাবন করার সময় এসেছে। জীবনের সমস্ত কিছুকে অর্থ আর উন্নয়নের গতি দিয়ে বিচার করলে “আমাদের প্রিয় বসুন্ধরার জন্য, আমাদের জন্য, জীব বৈচিত্র্যের জন্য বিপদ ডেকে আনা হবে”। এই বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রসংঘ ঘোষণা করেছে যে আগামী একদশক বাস্তুতন্ত্রের পুনরুদ্ধারের দশক। পুকুর, জঙ্গল, মরুভূমি, পাহাড়, নদী-খাল, ইত্যাদি সবই এক একটি বাস্তুতন্ত্র। এগুলোকে পুনরুদ্ধার করা বিশ্ব জুড়ে একান্ত জরুরি।