সমীক্ষায় দাবি : দেশে জন্মহারে এগিয়ে শিশুকন্যা
Survey claims

আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ বিল আনার পক্ষপাতী নরেন্দ্র মোদী সরকার। এর মূল লক্ষ্য জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমানো। সরকারের এই পরিকল্পনাকে ভোটের ময়দানে মেরুকরণের কাজে লাগানোর কথা ভাবছেন বিজেপি নেতৃত্ব।

১১টি রাজ্য এবং তিনটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের উপরে করা জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা প্রকাশিত হয়েছে। তাতে উল্লেখ, গত চারবছরে দেশে ক্রমশ কমে এসেছে জন্মহার। ২০১৫-১৬ সালে জাতীয় জন্মহার ছিল ২.২। কিন্তু দুই পর্বে নেওয়া সাম্প্রতিকতম সমীক্ষা (২০১৯-২১) জানিয়েছে, সেই হার বর্তমানে নেমে এসেছে ২.০-তে। জন্মহার কমলেও, শিশুপুত্রের পরিবর্তে অনেকটাই বেড়েছে শিশুকন্যার জন্মও। দ্বিতীয় পর্বের সমীক্ষায় যে ১৪টি রাজ্য ছিল তাতে অবশ্য পশ্চিমবঙ্গ ছিলনা। সমীক্ষাটি করা হয়েছে দেশের ৭০৭টি জেলায়।

আজ সমীক্ষার যে দ্বিতীয় পর্ব প্রকাশিত হয়েছে তাতে বলা হয়েছে, ভারতের অধিকাংশ রাজ্যেই জন্মহার ২.০ বা তার নীচে। মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, বিহারের মতো রাজ্যগুলি ছাড়া জন্মহার বেশি হল মণিপুর ও মেঘালয়ে। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের ব্যাখ্যা, ভারত হল প্রথম দেশ যারা বিশ্বে প্রথম পরিবার পরিকল্পনার উপরে জোর দিয়েছিল। দীর্ঘ সময় পরে জন্ম নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কাঙ্খিত ফল পাওয়া গিয়েছে। এখন এই সংখ্যাকেই আগামী দিনে ধরে রাখতে হবে। সমীক্ষা জানিয়েছে, গত চারবছরে আধুনিক জন্মনিয়ন্ত্রকের ব্যবহার ৫৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬৭ শতাংশ হয়েছে।

birth rate in the country

আদমশুমারি ২০১১’র সময়ে দেশে প্রতি হাজার শিশুপুত্র জন্মানোর নিরিখে শিশুকন্যা জন্মানোর সংখ্যা কমে প্রায় সাড়ে ন’শোর নীচে চলে এসেছিল। ২০১৫-১৬ সার্ভেতে এই সংখ্যাটা ছিল ১,০০০ জন শিশুপুত্র পিছু শিশুকন্যা জন্মানোর সংখ্যা ৯৯১ জন।  কিন্তু এবারের সমীক্ষা জানিয়েছে, গত চারবছরে শিশুকন্যা জন্মানোর সংখ্যাতেও উল্লেখজনক বৃদ্ধি হয়েছে। নতুন সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রতি হাজার জন শিশুপুত্রের অনুপাতে ১,০২০ জন শিশুকন্যা জন্মাচ্ছে এদেশে। এছাড়া পরবর্তী সময়ে কম বয়সে বিয়ে ও ১৫-১৯ বছরের মধ্যে মেয়েদের মা হয়ে যাওয়ার যে প্রবণতা ছিল, কিছুটা হলেও ছেদ পড়েছে তাতেও। কমেছে ঘরে জন্মানো শিশুর সংখ্যা। তুলনায় স্বাস্থ্যকেন্দ্র-হাসপাতালের মতো প্রতিষ্ঠানে গিয়ে প্রসবের সংখ্যা প্রায় আট শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৮৮.৬ শতাংশে। দেশের ৭৮ শতাংশ মায়েরা সন্তানের জন্ম দেওয়ার পর স্বাস্থ্যকর্মীদের থেকে ‘কেয়ার’ পান। আগে এই হার ছিল ৬৫ শতাংশের কম। তবে রক্তল্পতা আজও সমস্যা হিসেবে রয়েই গিয়েছে। একেবারে জন্মের সময় থেকে। সমীক্ষা বলছে, ৫ থেকে ৫৯ মাস শিশুদের ক্ষেত্রে আগে যেখানে ৫৮ শতাংশ শিশু রক্তাল্পতায় ভুগত, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৭ শতাংশ। যা তাদের পরবর্তী জীবনকে প্রভাবিত করেছে। ১৫-৪৯ বছর বয়সি নারীদের ক্ষেত্রে রক্তল্পতার সমস্যা ৫৩ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৭ শতাংশে।

- আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৫ নভেম্বর ২০২১

খণ্ড-28
সংখ্যা-44