সাম্প্রতিক কালে কর্ণাটকের ধারওয়াদে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের সাংগঠনিক বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গে সংগঠনকে ব্যাপক ভাবে বিস্তৃত করার প্রস্তাব গৃহীত হয়। আরএসএস প্রধান মোহন ভগওয়াতের পশ্চিমবঙ্গ সফর প্রমাণ করছে তাদের পশ্চিমবঙ্গের প্রতি বিশেষ নজর।
আরএসএস জানিয়েছে তাদের ১৯০০ শাখা পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে কার্যরত। আরো ৭০০ শাখা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত তারা গ্রহণ করেছে। আরএসএস-এর একজন দক্ষিণবঙ্গের কর্মী জানিয়েছে তারা তাদের শাখা প্রতিটি পঞ্চায়েত এবং ওয়ার্ডে নিয়ে যেতে চায়। এখন পশ্চিমবঙ্গে মাত্র ৩০ শতাংশ পঞ্চায়েত ওয়ার্ডেই তাদের উপস্থিতি আছে। তারা ২০২৪ নির্বাচনের আগে তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে চায়।
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির ভোটে ভরাডুবির পর এবং সংগঠনের মধ্যে আভ্যন্তরীণ কলহ সৃষ্টি হওয়ায়, আরএসএস তাদের হিন্দুত্ববাদী এজেণ্ডাকে আরও গভীরে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করছে। সংগঠনকে বদলে ফেলার পরিকল্পনা নিয়েছে। প্রতিটি পঞ্চায়েত এবং ওয়ার্ডে ঢুকে পড়তে চায় তারা।
স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়ে আরএসএস ব্রিটিশদের অনুগত থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বিরোধ করেছিল। তাদের বিশ্বাসঘাতকতার সেই ইতিহাসকে আড়াল করার জন্য তারা ব্যাপক প্রচার চালানোর কৌশল নিয়েছে। তারা বিস্মৃত স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নিয়ে প্রচার চালাবে এবং এই প্রচার দেশের সমস্ত গ্রামে গ্রামে পৌঁছে দেবে।
আরএসএস-এর এই পরিকল্পনা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের গৌরবময় ইতিহাসকে ব্যবহার করে তারা তাদের সংগঠনের বিস্তৃতি বাড়াবে। তাদের চিরাচরিত ইতিহাস বিকৃতির পন্থা যে তারা পুরোদমে পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে প্রয়োগ করবে সে নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে ইতিহাস এবং বাংলার সমাজের ওপর এই আক্রমণকে রুখে দেওয়ার জন্য জোরালো উদ্যোগ দরকার। স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস, স্থানীয় মানুষের আত্মত্যাগ ও লড়াইয়ের কাহিনী এবং যে গণতান্ত্রিক, ঐক্যবদ্ধ ও বৈষম্যহীন ভারতীয় সমাজের জন্য তাঁরা লড়েছিলেন তা মানুষের মাঝে তুলে ধরতে হবে। বাংলায় সাংস্কৃতিক স্তরে সুদৃঢ় এবং দীর্ঘমেয়াদী কাজ শুরু করতে হবে এবং সেই উদ্দেশ্যে প্রচার অভিযান সংগঠিত করতে হবে। বিশ্বাসঘাতক আরএসএস-এর দ্বারা আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলন ও সম্প্রীতির ইতিহাস জবরদখল করার অপচেষ্টাকে রুখে দেওয়া এবং সম্প্রীতিকে আরো জোরালো করা আজকের সময়ের দায়িত্ব। বাংলার বাম আন্দোলনের নব জাগরণের পথেই তা সম্ভব হবে।
- প্রত্যুষ নন্দী