সিপিআই(এমএল)-এর ছয় সদস্য বিশিষ্ট একটি টীম প্রয়াগরাজের ফাফামৌতে তদন্তের জন্য যায় যেখানে এক দলিত মহিলাকে ধর্ষণ ও তার পরিবারের লোকদের হত্যা করা হয়। এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে পার্টি ২ ডিসেম্বর সারা রাজ্যে প্রতিবাদ দিবস পালন করে এবং উচ্চ পর্যায়ের বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি জানায়। পার্টির উত্তরপ্রদেশ রাজ্য সম্পাদক সুধাকর যাদব অভিযোগ করেন পুলিশ এই ঘটনাকে আড়াল করছে। পুলিশের বক্তব্য হল এক দলিত যুবক, যে মৃত মহিলাকে বারংবার তার মোবাইলে মেসেজ পাঠিয়েছিল সে-ই ঐ চার জনকে খুন করেছে। কিন্তু সত্য ঘটনা হল — ঐ গ্রামের প্রভাবশালী পরিবাররা জমির জন্য বিবাদের জেরে এই হত্যাকান্ড ঘটায়। সম্প্রতি ঐ প্রভাবশালী পরিবাররা মৃত ব্যক্তিদের আক্রমণ করে এবং এর জন্য একটি কেস তাদের বিরুদ্ধে থানায় দায়ের হয়। কিন্তু পুলিশ কোনও সুরক্ষা ঐ দলিত পরিবারকে দেয়নি, উল্টে অভিযুক্তদের রক্ষা কর্তা বনে যায় এবং এর প্রমাণও মেলে। হত্যাকারীদের যেখানে নির্লজ্জভাবে পুলিশী সুরক্ষার বন্দোবস্ত করা হয় সেখানে একমাত্র বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে বিচারই আশা ভরসা।
উত্তরপ্রদেশে আইন শৃঙ্খলা যে ভেঙ্গে পড়েছে তার স্পষ্ট প্রমাণ হল ফাফামৌ গ্রামের ধর্ষণ ও গণহত্যা এবং মথুরায় একজন পরীক্ষার্থী ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনা। যোগীর রাজত্বে মহিলা ও দলিতরা সবথেকে কম সুরক্ষিত।
সিপিআই (এম-এল)-এর রাজ্য সম্পাদক তদন্তের রিপোর্টে বলেছেন ঐ দলিত পরিবারের চার সদস্যকে পাশবিকভাবে কুড়ুল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী দলিত মহিলাকে নিশ্চিতভাবে ধর্ষণ করা হয়েছে। প্রভাবশালী সামন্ত প্রভুরা ঘটনার আগে ঐ দলিত পরিবারের জমি দখলের চেষ্টা চালায়, পরে তাদের নির্মমভাবে হত্যা করে। সন্ত্রাসের মাত্রা এত তীব্র যে সামন্ত জমিদারদের ভয়ে গ্রামবাসীরা ঘটনা নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ।
গ্রামবাসীদের থেকে টিম জানতে পারে যে, আগে বহুবার উচ্চবর্ণের গোষ্ঠীরা ঐ দলিত পরিবারকে আক্রমণ করে এবং পুলিশ জাত-বিদ্বেষের জন্য কোন পদক্ষেপ করেনি। গ্রামবাসীরা বলেন, পুলিশ যদি সঠিক পদক্ষেপ করত তাহলে এই নির্মম গণহত্যা হয়ত এড়ানো যেত।
বিগত চার বছরে প্রয়াগরাজে কমপক্ষে এক ডজন এই ধরনের গণহত্যা হয়েছে। বিজেপি সরকার যখন গর্ব করে বলে যে উত্তরপ্রদেশ এখন উত্তম প্রদেশ হয়েছে ঠিক তখন এই ঘটনা ঘটছে। রাজ্যে খুন, ধর্ষণ, গণহত্যা এখন প্রায়শই ঘটছে। ক্ষমতা-মাফিয়া-অপরাধীদের দুষ্টচক্রের অংশীদার প্রভাবশালী শ্রেণীর এই লোকেরা ফাফামৌর গণহত্যার জন্য দায়ী। সরকার-প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতায় এই ধরণের মর্মঘাতী উদ্ভট অপরাধমূলক কার্যকলাপ চলছে। সিপিআই(এমএল)-এর দাবি, অবিলম্বে প্রধান অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করতে হবে, পীড়িতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান, একটি সরকারি চাকরি এবং তাদের নিরাপত্তা দিতে হবে। এই ঘটনার দায়িত্ব নিয়ে বিজেপি সরকারকে ক্ষমতার কুর্সি ছাড়তে হবে।
গ্রামবাসীদের কথায় জানা গেল যে গণহত্যার দুদিন পর একজন ফেরিওয়ালা ঐ বাড়িতে গেলে তিনি রক্তে ভেজা মাটি দেখে সকলকে ঘটনার ব্যাপারে জানান।