খবরা-খবর
ক্ষতিপূরণ ও চাষিদের থেকে সরাসরি ধান কেনার দাবিতে গণডেপুটেশন
Block mass deputation in Basirhat

নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও গত প্রায় দু’বছর যাবত করোনা অতিমারির কারণে গ্রামীণ শ্রমজীবী মানুষ কাজ হারিয়ে সাংঘাতিক অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত। এরমধ্যে নিম্নচাপের কারণে অসময়ের বৃষ্টিতে রাজ্যের কয়েকটি জেলার বেশ কিছু ব্লকের সাথে উত্তর ২৪ পরগণা জেলার বসিরহাট ১নং ব্লকের ৭টি পঞ্চায়েত এলাকায়ও আমন ধান ও রবিশস্যের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় কৃষকরা চরম আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়েছে, তারমধ্যে অনেকেই ঋণগ্রস্ত। কৃষকদের অধিকাংশই ক্ষুদ্র, ভাগ ও লিজ চাষি। সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে কৃষকের সবচেয়ে বেশি ফসলের ক্ষতি হওয়া সত্ত্বেও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রশ্নে এখনও পর্যন্ত সরকার নীরব।

এই সময়ে সরকারের কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনার প্রশ্নেও দেখা যায়, ভাগ ও লিজ সহ প্রকৃত যারা চাষ করেছেন, সেই কৃষকরা ধান বিক্রি করতে পারছেন না, ফড়ে-দালালরা ধান বিক্রি করছে। কৃষকরা সরকারের কাছে ধান বিক্রির সুযোগ না পেয়ে বাধ্য হচ্ছেন ফড়ে-দালালদের কাছে কুইন্টাল প্রতি ১,২০০/১,৩০০ টাকায় বিক্রি করতে এবং ফড়ে-দালালরা সেই ধান সরকারের কাছে বিক্রি করছে সরকারি দর ১,৯৬০ টাকায়। সরকার নির্ধারিত মূল্য পাওয়ার প্রশ্নে কৃষকদের সর্বনাশ, ফড়েদের পৌষমাস! এই ‘খেলা চলছে’ শাসকদল তৃণমূলের কলকাঠিতে।

এমতাবস্থায়, গত ২২ ডিসেম্বর বসিরহাট ১নং ব্লকের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিকের কাছে গণডেপুটেশন দেওয়া হয় সারা ভারত কিষাণ মহাসভা ও সারা ভারত কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সমিতির বসিরহাট আঞ্চলিক কমিটির পক্ষ থেকে। ঐদিন বসিরহাট টাউন হলের মাঠ থেকে কৃষক-ক্ষেতমজুররা লাঙ্গল-কোদাল-মই সহ মিছিল করে ইটিন্ডা রোড ধরে বসিরহাট ১নং ব্লক অফিস চত্বরে পৌঁছান। সেখানে কৃষক, ক্ষেতমজুর সহ গ্রামীণ মানুষের দাবির সমর্থনে সভা হয়। বক্তব্য রাখেন সারা ভারত কিষাণ মহাসভার রাজ্যনেতা দিলীপ পাল ও সারা ভারত কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সমিতির পক্ষে নির্মল ঘোষ। সভা পরিচালনা ও গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন পশ্চিমবঙ্গ গণসংস্কৃতি পরিষদের বাবুনি মজুমদার।

সভা চলাকালীন সময়ে মোঃ রবিউল মোল্লা, নূর ইসলাম মোল্লা ও দেবব্রত বিশ্বাস এই তিনজনের প্রতিনিধি দল দাবিগুলি নিয়ে সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক’এর সাথে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করেন। সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক সদর্থক ভূমিকা রাখার আশ্বাস দেন।

দাবিপত্রে উল্লেখ করা হয়,
১) ভাগচাষি ও লিজচাষি সহ সমস্ত ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের আলু চাষে বিঘাপিছু ২০ হাজার টাকা এবং ধান ও অন্য রবিশস্যের জন্য বিঘাপিছু ১০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
২) গ্রামে গ্রামে সরকারকে ক্যাম্প করে ভাগচাষি ও লিজচাষি সহ সমস্ত কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনতে হবে।
৩) রাসায়নিক সার, বীজ ও কীটনাশক সরকারকে ভাগচাষি ও লিজচাষি সহ সমস্ত কৃষককে বিনামূল্যে ও সঠিক সময়ে সরবরাহ এবং কালোবাজারি বন্ধ করতে হবে।
৪) গরিব, ভাগচাষি ও লিজচাষিদের সমস্ত সরকারি প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৫) সমস্ত কৃষিজীবীদের কিষাণ কেডিট কার্ড দিতে হবে।
৬) ১০০ দিনের কাজ অবিলম্বে ব্লকজুড়ে শুরু করতে হবে এবং মজুরি ৭ দিনের মধ্যে দিতে হবে।
৭) মহাত্মা গান্ধী জাতীয় কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা আইনে ২০০ দিন কাজ ও ৬০০ টাকা মজুরি দিতে হবে।
৮) বার্ধক্যভাতা ও বিধবাভাতা কমপক্ষে ৩,০০০ হাজার টাকা করতে হবে।

খণ্ড-28
সংখ্যা-46