হুগলী-বর্ধমানের বিস্তীর্ণ গ্রামাঞ্চলে চাষীরা যখন পূর্ণ উদ্যমে আলু চাষে নেমে পড়েছেন তখন সারের অপ্রতুল সরবরাহ ও সারের কালোবাজারী তাঁদের সমূহ বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। সমবায় সমিতির কর্তারা বলছেন, সারের সরবরাহ নেই। সার ব্যবসায়ীরা যদি বা সার বিক্রি করছেন, দাম নিচ্ছেন ঘোষিত বা মুদ্রিত দামের থেকে অনেক বেশি। যেমন এনপিকে সারের ক্ষেত্রে, (ইফকোর এনপিকে ১০:২৬:২৬) ৫০ কেজি সারের যেখানে সর্বাধিক খুচরো দাম (এমআরপি) ১১৭৫ টাকা, কোনো কোনো ব্যবসায়ী সেখানে দর হাঁকছেন ১৯৫০ টাকা। নিরুপায় হয়ে চাষি এই ‘'গলাকাটা'’ দামেই রাজি হলে কী হয়, তাঁর যা প্রয়োজন তার অর্ধেক পরিমাণও তিনি পাচ্ছেন না। ব্যবসাদার সাফাই গাইছেন৷ “সারের সাপ্লাই কম। খদ্দের তো একজন নয়। সে কারণে যেটুকু স্টক আছে তা থেকে সকলকেই কিছু কিছু করে দিচ্ছি।” আর এক শ্রেণীর ব্যবসাদার দাম তো বেশি নিচ্ছেনই তার ওপর সুযোগ বুঝে চাষির ইচ্ছার বিরুদ্ধে অন্য কিছু মালও গছিয়ে দিচ্ছেন। যেমন গ্রোমোর কোম্পানির ‘এনপিকে ১০:২৬:২৬’ [নাইট্রোজেন, ফসফেট ও পটাশ; আলু চাষে এই সারের চাহিদা সর্বাধিক] সারের ৫০ কেজি বস্তার দাম ১৪৯০ টাকা। সেই সার চড়া দামে বিকোচ্ছে ১৮২০ টাকায়। সঙ্গে গছিয়ে দেওয়া হচ্ছে ২২০ টাকার ভিটামিন — যেটা প্রকৃতপক্ষে কোনো কাজে লাগে না।সোজা কথায়৷ ১৪৯০ টাকার সারে চাষিকে গ্যাঁট গচ্চা দিতে হচ্ছে আরও সাড়ে পাঁচশো টাকা। এমন এক ডামাডোলের বাজারে, কৃষকদের স্বার্থে পান্ডুয়া ব্লকের সহ কৃষি অধিকর্তার নিকট গত ৩ ডিসেম্বর সারের পর্যাপ্ত জোগান ও কালোবাজারি রোধের দাবিতে সারা ভারত কিষাণ মহাসভার তরফে এক ডেপুটেশন প্রদান করা হয়। দাবি জানানো হয়, (ক) প্রধানত, এনপিকে সারের পর্যাপ্ত জোগানের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সমবায় সমিতিগুলিকে চাহিদামতো সার সরবরাহের উদ্যোগ নিতে হবে। (খ) সারের কৃত্রিম অভাব সৃষ্টির সমস্ত অপচেষ্টা রোধ করতে হবে। (গ) সার বিক্রির ক্ষেত্রে এমআরপি’র অতিরিক্ত দাম নেওয়া রোধ করতে হবে এবং কৃষকের ইচ্ছার বিরুদ্ধে অন্য কোনো কৃষি-সামগ্রী কিনতে বাধ্য করা চলবে না। এ প্রশ্নে প্রশাসনিক নজরদারি বাড়াতে হবে এবং দোষী ব্যবসায়ী বা বিক্রেতার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
সহ কৃষি-অধিকর্তা (এডিএ) দাবিগুলির ন্যায্যতা স্বীকার করেন এবং মন্তব্য করেন, “সারের ‘এক প্রকার সংকটের পরিস্থিতি’ দেখা দিয়েছে।” যদিও তিনি সাফাই দেন: সত্তর শতাংশ চাষি সার সংগ্রহ করতে পেরেছে। প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে বলা হয়, এটা সত্যি যে যাদের পুঁজি যথেষ্ট এমন সম্পন্ন চাষিরা আগে ভাগে সার তুলে নিয়েছে। কিন্তু সমস্যায় পড়েছে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিরা। এদের সমস্যা সমাধানে সরকার কী করছে জানতে চাওয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে এডিএ সারের জোগানের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যার উল্লেখ করেন যেমন এনপিকে সারের বৃহত্তম জোগানদার ইফকোর একটা কারখানা বন্ধ রয়েছে ও বেনফেড এখনও পর্যন্ত সমবায়গুলিকে সার সরবরাহে তেমন উদ্যোগী হয়নি। তিনি মৃদু স্বরে তৃতীয় কারণ হিসেবে বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকার বিরোধী দল শাসিত রাজ্যগুলিকে সার সরবরাহে কার্পণ্য করছে।” দ্বিতীয় কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ে নালিশ জানানো হয়েছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সারের জোগান অনেকটা বৃদ্ধি পাবে।”
বর্তমান সংকট দূর করার জন্য তিনি কৃষকদের বিশেষ একটি সার (এনপিকে) প্রয়োগের প্রবণতা ত্যাগ করতে বলেন। বিদেশ দেকে পটাশ আমদানির জটিলতা না কাটা অবধি তিনি আপাতত নাইট্রোজেন ও ফসফেট আছে এমন সার জমিতে প্রয়োগ করে পরে পটাশিয়াম নাইট্রেট স্প্রে করার পরামর্শ দেন। তাঁর পরামর্শ শোনার পরেও প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে পরবর্তীতে কৃষক স্বার্থে আরও বড় কর্মসূচী নেওয়ার আভাষ দেওয়া হয়। কৃষকদের স্বার্থে এআইকেএম এগিয়ে আসার জন্য এডিএ সংগঠনকে সাধুবাদ জানান।এআইকেএমের প্রতিনিধিদলে নিরঞ্জন বাগ, মহঃ সিরাজুদ্দিন ও সেখ ইদ্রিশ প্রমুখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
- মুকুল কুমার