আজকের দেশব্রতী : ০৯ ডিসেম্বর ২০২১ (অনলাইন সংখ্যা)
9 december deshabrati

Cancel AFSPA

নাগাল্যান্ডে খনি শ্রমিকদের হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী সেনা আধিকারিকদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করা ও আফস্পা বাতিল করার দাবি জানিয়েছে সিপিআই(এমএল) লিবারেশন।

নাগাল্যান্ডের মোন জেলার ওটিং গ্রামে আধা সেনাবাহিনী ১৩ জন শ্রমিক ও গ্রামবাসীকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। আরও ১১ জন গুরুতর আহত।

পার্টির ত্রিপুরা রাজ‍্য সম্পাদক পার্থ কর্মকারের জারি করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সিপিআই(এমএল) মনে করে যে, এই মর্মান্তিক হত্যাকান্ড মোদী সরকারের বহুল প্রচারিত নাগাল্যান্ড শান্তি চুক্তির অন্তঃসারশূণ্যতাকে উন্মোচিত করেছে। এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী সেনা আধিকারিকদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করার এবং জনবিরোধী “সেনা বাহিনী বিশেষ ক্ষমতা আইন (আফস্পা)” বাতিল করার দাবি করছে। এই ঘটনায় মৃতদের ও আহতদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি করছে সিপিআই(এমএল)।

***

Against the militaryAgainst the military_0

নাগাল‍্যান্ড পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল টি জন লঙ্কুমের (আইপিএস) এবং নাগাল‍্যাণ্ডের কমিশনার রবিলাটুয়া মোর (আইএএস) যৌথভাবে একটি বিবৃতি জারি করে ঘটনাক্রমের বিবরণ দিয়েছেন, যে ঘটনাক্রমে নাগাল‍্যান্ডের পূর্ব ভাগের মোন জেলার ১৪ জন নাগরিকের প্রাণ গেল।

তাঁদের ইংরেজিতে প্রকাশ করা বিবরণীর হুবহু বাংলা অনুবাদ নীচে দেওয়া হল। (শিরোনাম আমাদের)

৪ ডিসেম্বর বিকেল ৪টা ১০ মিনিট নাগাদ টিরু কয়লাখনি থেকে কাজ সেরে ৮ জন গ্রামবাসী যখন একটি পিক-আপ ট্রাকে ফিরছিলেন তখন নিরাপত্তা বাহিনী (খবর অনুযায়ী, আসামস্থিত প‍্যারা স্পেশ‍্যাল ফোর্স) তাঁদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় ও এলোপাথাড়ি হত‍্যা করে, স্পষ্টতই পরিচিতি যাচাইয়ের কোনোরকম চেষ্টা না করে।

তাঁরা সকলেই ছিলেন নিরস্ত্র নাগরিক, টিরু উপত‍্যকার খনিতে কর্মরত। তাঁদের কাছে কোনোরকম অস্ত্র ছিল না। এবং তাঁরা প্রকাশ‍্যে দিনের বেলা থাকতে একটি খোলা মাহিন্দ্রা পিক-আপ ট্রাকে চড়ে আসছিলেন। কিন্তু তাঁদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়া হয় এবং ছয় জনকে সেখানেই হত‍্যা করা হয়, দুজনকে মারাত্মকভাবে ঘায়েল করা হয়। ওটিং গ্রামের কয়েক কিলোমিটারের মধ‍্যেই এই ঘটনা ঘটে।

গুলির শব্দ শুনে এবং গাঁয়ের লোকেরা কাজ থেকে বাড়ি ফিরে না আসায় সন্দীহান হয়ে গ্রামবাসীরা অকুস্থলে যান। ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাঁরা পিক-আপ ট্রাকটি দেখতে পান, দেখেন স্পেশাল ফোর্সের জওয়ানরা গ্রামবাসীদের ছয়টি মৃতদেহ লুকানোর চেষ্টা করছে, মৃতদেহগুলিকে মুড়ে অন‍্য একটি পিক-আপ ট্রাকে (টাটা মোবাইল) তুলছে, স্পষ্টতই বাহিনীর বেস ক‍্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ‍্যে।

টাটা মোবাইলে একটি ত্রিপলের নিচে মৃতদেহগুলি দেখতে পাওয়ার পর গ্রামবাসী ও নিরাপত্তা রক্ষীদের মধ‍্য সংঘর্ষ বেধে যায়। ফলস্বরূপ ক্রুদ্ধ গ্রামবাসীরা স্পেশ্যাল ফোর্সের জওয়ানদের তিনটি গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়।

এই হাতাহাতির মাঝে নিরাপত্তারক্ষীরা আবার গ্রামবাসীদের ওপর গুলি চালায় যার ফলে আরও ৭ জন গ্রামবাসীর মৃত‍্যু হয়, এবং নিজের চোখে দেখা ব‍্যক্তিরা নিশ্চিত সাক্ষ্যে জানিয়েছেন নিরাপত্তারক্ষীরা ঘটনাস্থল থেকে আসামের দিকে পালানোর সময় নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে, এমনকি যেতে যেতে খনি শ্রমিকদের বসতির কুঁড়েঘরগুলির দিকে তাক করেও গুলি চালিয়েছে। অপরাধ সংঘটিত হওয়ার জায়গায় মোট ৫ (পাঁচ)টি বাহন রয়েছে, যেগুলি হল —

(১) যে গাড়ির নাগরিকদের ওপর হামলা চালানো হয় সেই মাহিন্দ্রা পিক-আপ; (২) একটি পুড়ে যাওয়া স্কর্পিও; (৩) পুড়ে যাওয়া বোলেরো; (৪) পুড়ে যাওয়া টাটা উইঙ্গার; (৫) টাটা মোবাইল (পুড়ে যাওয়া নয়, ভাঙচুর হওয়া)।

সব মিলিয়ে সেদিন ১৩ জন নাগরিককে হত‍্যা করা হয়েছে এবং ১৪ (চৌদ্দ) জন নাগরিককে মারাত্মক জখম করা হয়েছে এবং ৮ (আট) জন নাগরিককে অল্প মাত্রায় জখম করা হয়েছে। মারাত্মকভাবে ঘায়েল করা ব‍্যক্তিদের মধ‍্যে দুই জনকে নিরাপত্তারক্ষীরা নিজেরাই আসামের দিকে নিয়ে চলে গেছিল এবং তাঁদের ডিব্রুগড় মেডিক‍্যাল হাসপাতালের আইসিইউ-তে ভর্তি করা হয়েছে।

corporation elections

বিস্তর বাধা টপকে, বেশ কয়েকবছর বাদে আবার কলকাতা পৌর সভার নির্বাচন হতে চলেছে। কোভিড অতিমারী গোটা দেশ জুড়ে যে সমস্ত মারাত্মক ফাঁক ফোকরগুলোকে দেখালো, তা মেরামত করার সময় এসেছে। ঝাঁ চকচকে নার্সিংহোম ও কর্পোরেট হাসপাতাল, বহু বিজ্ঞাপিত সরকারি মাল্টি স্পেশালিটি হাসপাতাল মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা সত্ত্বেও পর্যাপ্ত অক্সিজেন,অ্যাম্বুলেন্স, বেডের অভাবে কলকাতার জীর্ণ স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর কঙ্কালসার চেহারাটা ফুটে উঠল। কল্লোলিনী তিলোত্তমা হতে কলকাতাকে এখনও যে যেতে হবে বহু ক্রোশ দূর তা প্রমাণিত হল আরও একবার। বোঝা গেল, ওয়ার্ড ভিত্তিক ২৪ ঘন্টা স্বাস্থ্য পরিকাঠামো না থাকায় কী বিরাট মাশুল দিতে হল নগরবাসীকে। কোভিডের ছোবলে রেহাই পাননি অ-কোভিড রোগীরা। আর, তীব্র এই সংকটে কীভাবে বে-সরকারি হাসপাতালগুলো মুনাফা লোটার জন্য নিজেদের আস্তিন গুটিয়েছিল পৌরসভা ও রাজ্য সরকারের ঔদাসিন্যের সুযোগ নিয়ে, কোভিড অতিমারী তাও চোখে আঙুল তুলে দেখায়। আজ পর্যন্ত কলকাতা পুরসভা কোভিডে মৃত নাগরিকদের কোনো তালিকা তৈরি করতে পারলো না। বা সঠিক ভাবে বলতে গেলে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টাকে নিজেদের ধর্তব্যের মধ্যেই আনেনি। কোভিড অতিমারী, নির্দয় লকডাউন কত সংখ্যক কর্মরত নাগরিকদের রুটি-রুজি কেড়েছে, তার হিসাবও নেই। কোভিড বিরাটভাবে ছিনিয়ে নিয়েছে শহুরে গরিব মেহনতীদের রুজি রুটি। আরও বেশি আঘাত হেনেছে শ্রমজীবী মহিলাদের উপর। কাজ হারা বিপুল এই আক্রান্তদের সাহাযার্থে মনরেগার মত প্রকল্পকে শহরের বুকে চালু করার যে পরামর্শ অনেক অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, সে ব্যাপারে কোন হেলদোল দেখা গেল না অধুনা পৌর প্রশাসকদের। মধ্যবিত্ত নগরবাসীকে লকডাউন পর্যায়ে পৌর কর ছাড় দেওয়া, বিদ্যুৎ বিল-এ ছাড় দিতে সিইএসসি-কে বাধ্য করা গেল না কেন?

দুয়ারে সরকারের বাদ্যি বাজলেও আজও পৌঁছালো না দুয়ারে পানীয় জল। ঝড় বা তুমুল বৃষ্টিতে তড়িৎ বাহিত ছিঁড়ে পড়া তারে বেঘোরে এখনও প্রাণ দিতে হয় নাগরিকদের। আয়লার তীব্র ঝাপটায় কলকাতা মহানগর যে কত অসহায়, পৌর প্রশাসকেরা যে কতটা অকর্মন্য তা নগরবাসীরা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন। বর্ষায় জমা জল আজও সঙ্গী। শীতের এই মরশুমেও হাতে ছেঁকা দেওয়া আনাজের দামে নাগরিকরা যখন কাহিল, রাজ্য সরকার বা পুরসভা তখনও নির্বিকার। পুরসভার বাজার বা ‘সুফল বাংলা’ কোনো ধরনের স্বস্তি দিতে পারছে না অগ্নিমূল্যের বাজারে। শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে যে গভীর সংকট এতদিন সযত্নে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল, তাও এবার বেআব্রু হল কোভিড পরবর্তীতে শিক্ষায়তন খোলার পর। কোভিড কালীন পরিস্থিতিতে যখন দরকার ছিল সামাজিক সংঘবদ্ধতা, সহমর্মিতা, তখন কোথাও দেখা যায়নি পৌর প্রশাসক পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন কোভিডে বিধ্বস্ত, বিপর্যস্ত নাগরিকদের পাশে। বিপরীতে, কোভিড ভলান্টিয়ার্সরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আক্রান্ত নাগরিকদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, লকডাউনে সংগঠিত করেন ত্রাণ।

কলকাতার সাধারণ মানুষেরা, প্রজা নন, তাঁরা নাগরিক। তাঁদের করের টাকায় চলে নাগরিক পরিষেবা, উন্নয়ন। অথচ, এই উন্নয়নে নাগরিকদের কোনো ভূমিকা স্বীকার করা হয় না। একেকটা ওয়ার্ডে উন্নয়নের জন্য ওয়ার্ড কমিটির গঠন খাতায় কলমে বাধ্যতামূলক থাকলেও, নাগরিকেরা আজ পর্যন্ত তার টিকিও খুঁজে পেলেন না। নাগরিকদের মতামত, তদারকিই যে কোনো উন্নয়নের ভিত্তি, কিন্তু এই মৌলিক বিষয়টা নিদারুণ ভাবে অবহেলিত, উপেক্ষিত। একটা ওয়ার্ডের জন্য পুর বাজেটে কত টাকা বরাদ্দ হয়েছে, কী খাতেই বা হয়েছে খরচ, তা জানার অধিকার রয়েছে ওয়ার্ডের নাগরিকদের। কিন্তু, তা থেকে গেছে সকলের অগোচরে। মহানগর কলকাতার উপর নাগরিকদের অধিকার বলিষ্ঠভাবে কায়েম করতে হবে। কোনো বিশ্ব ব্যাঙ্ক-এডিবি’র নীল নকশায় এই শহরের উন্নয়ন হবে না। এই মহানগরের ভাগ্যনিয়ন্তা নাগরিকেরাই। এই প্রিয় কলকাতাকে ফিরিয়ে আনতে হবে নাগরিকদের মুঠোর মধ্যে। আম-নাগরিকদের সম্মিলিত প্রজ্ঞা-পরামর্শের ভিত্তিতে, সকলের গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণের মাধ্যমেই ফিরিয়ে আনতে হবে কলকাতার হারানো গৌরবকে। শহরের পরিবেশ, শিক্ষা-সংস্কৃতি-হৃত ঐতিহ্য-স্বাস্থ্য পরিষেবার উপর কায়েম করতে হবে নগরবাসীর অধিকার — এখানে চলবে না নবান্ন বা দিল্লীর খবরদারি।

কল্লোলিনী কলকাতা – আম-নাগরিকের কলকাতা। এই লক্ষ্যেই আসন্ন পৌর নির্বাচনে বামপন্থীরা সোচ্চার হয়ে ঘাসফুল ও পদ্মের বিরুদ্ধে উন্নয়েনের বিকল্প পথমানচিত্র তৈরি করুক।

- অতনু চক্রবর্তী

What's going on

মমতা সরকার ঘোষণা করেছে ‘পাড়ায় সমাধান’ কর্মসূচি। তৃতীয়বার ক্ষমতায় ফেরার ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে ভোটকুশলীবিদ প্রশান্ত কিশোরের পরামর্শে প্রথমে ‘দিদিকে বলো’ চ্যানেল নামানো দিয়ে শুরু, তারপর থেকে সেই ধাঁচেই সরাসরি সুবিধাপ্রকল্প বন্টণে নামানো হয়েছে ‘দুয়ারে সরকার’, ‘দুয়ারে রেশন’। এর নবতর সংযোজন হিসেবে কর্মসূচি নামানো হয়েছে ‘পাড়ায় সমাধান’। এই ধ্বনি তোলার মাধ্যমে মানুষকে আকর্ষণ করার এক অভিনব রূপ থাকতে পারে, কিন্তু প্রকল্পসুবিধা কার্যত কতটা নেমেছে, মানুষ তার কেমন হদিশ পাচ্ছে, তাতে উপকৃত হচ্ছে, আর কী পরিমাণ ছলনা-বঞ্চনা চলছে, সবকিছু মেপে পর্যালোচনা চালিয়ে যাওয়া দরকার। ‘দিদিকে বলো’, ‘দুয়ারে সরকার’ সুযোগ থেকে উপশম পাওয়া-না পাওয়া জনিত মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। তবে সরকার তৃতীয়বার ক্ষমতায় ফেরার পরে ‘দিদিকে বলো’ গুটিয়ে নেওয়া হয়েছে, ‘দুয়ারে সরকার’কে একরকম ঝিমিয়ে রাখা হয়েছে। ‘দুয়ারে রেশন’ এখনও টুকটাক চালু হয়েছে মাত্র, তার পরিকাঠামো থেকে শুরু করে পরিচালন ব্যবস্থায় বলতে গেলে কোনও গতিই তৈরি করা হয়নি। ‘পাড়ায় সমাধান’ প্রকল্প নিয়ে সরকারের মতিগতি কী, পরিস্কার নয়। প্রকল্পটি প্রণয়নের পেছনে দুর্নীতির কারণে ভালোরকম চাপে পড়ার পরিঘটনা ভুলিয়ে দেওয়া যাবে না। বিশেষ করে আমপান ক্ষতিপূরণের টাকা দেদার আত্মসাৎ করেছিল শাসকদলের পঞ্চায়েতের ‘দাদা-কাকা-মামা’রা। গোড়ায় তা মুখ্যমন্ত্রী স্বীকার করতে চাননি, চেয়েছিলেন ভেতরে ভেতরে ম্যানেজ করে দুর্নীতি চাপা দিতে। পরে বঞ্চিত মানুষের গণক্ষোভ নাছোড় হয়ে পঞ্চায়েত মোড়লদের বাড়ি বাড়ি ঘেরাও করলে সরকার ও শাসকদলের টনক নড়ে। তখন মুখ বাঁচাতে ক্ষতিপূরণের টাকা দিতে ফতোয়া দেওয়া হয়, ঘুঘুরাও অর্থ ফেরত দিতে বাধ্য হন। তবে সব টাকা যে উদ্ধার হয়েছে তা সরকার হলফ করে বলতে পারেনি, সমস্ত হিসাব-কিতাব করে তেমন কোনো শ্বেতপত্র প্রকাশ করেনি। দুর্নীতির অভিযোগের তাড়া খাওয়া থেকে সরকার ও তৃণমূল কখনই নিস্কৃতি পায়নি। ভাবমূর্তিতে লেপা কালি তুলতে অগত্যা ধূর্ত কৌশলের আশ্রয় নিতে মুখ্যমন্ত্রী শুনিয়েছিলেন আবার এক চমকের ভিন্ন সুর। বলেছিলেন সুবিধাপ্রকল্প বণ্টন পঞ্চায়েতের মাধ্যমে না করে সরাসরি ব্লক প্রশাসনের মাধ্যমে করার কথা। উপর্যূপরি কী সব স্ববিরোধী অবস্থান গ্রহণের প্রহসন! ২০১৮-র নির্বাচনে ব্যাপক সন্ত্রাস চাালিয়ে যে পঞ্চায়েতরাজের দখল হাসিল করেছিল তৃণমূল, সেই পঞ্চায়েতের এক বিধ্বংসী প্রাকৃতিক দূর্যোগের পরিস্থিতিতে পুনরায় উন্মোচিত হয় ন্যক্কারজনক দুর্নীতিগ্রস্ত চেহারা। তার বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠা জনপ্রতিক্রিয়ার চাপ সামাল দিতে ঘোষণা করতে হয়েছিল সুবিধাপ্রকল্প বণ্টনের পরিচালন-ক্ষমতা থেকে পঞ্চায়েতকে বিরত রাখা, পরিবর্তে সেই কাজ কেবলমাত্র ব্লক প্রশাসন দিয়ে সারার কথা। গৃহীত এই কৌশলের মধ্যে আসলে উদ্দেশ্য ছিল পঞ্চায়েতকে তথাকথিত নিয়ন্ত্রণে রাখার বহিরঙ্গ দেখিয়ে অন্যদিকে সরকার বহির্ভূত কোনরকম গণতদারকি অনুমোদন না করা। এখন আবার ‘পাড়ায় সমাধান’ প্রকল্প নামানোর বেলায় পঞ্চায়েতকে সামনে আনা হচ্ছে। বলা হচ্ছে পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদ খুব ভালো কাজ করছে! এত চটজলদি ভালো কাজের প্রশংসায় ভরিয়ে দেওয়ার কারণ কি! আসলে ভাবাচ্ছে অন্য কারণ অন্য উদ্দেশ্য। পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের কয়েক কোটি করে টাকা আসবে পঞ্চায়েতে। আর, পরবর্তী পঞ্চায়েত নির্বাচন হওয়ার কথা দুু'বছর বাদে।

প্রশ্ন হল, ‘পাড়ায় সমাধান’ হবে কোন পথে? প্রশাসন-পঞ্চায়েতের আমলাতান্ত্রিক ছড়ি ঘোড়ানো ছকে দেওয়া পথে? যাতে উপরন্তু থাকে শাসকদলের উপদ্রব। এর বিপরীতে প্রকৃত সমাধানের একমাত্র চাবিকাঠি হল গণতান্ত্রিক পথ ও প্রক্রিয়া। যার ভিত্তি হল বহুমতের অধিকার, পঞ্চায়েত-প্রশাসন ও শাসকদলের মাতব্বরির বাইরে বিভিন্ন দলের-মতের ও সামাজিক শক্তিসমূহের প্রত্যক্ষ মত প্রকাশের অধিকার। বিশেষ করে গরিব মানুষদের অধিকার, ন্যায়সঙ্গত যুক্তিপূর্ণ হস্তক্ষেপের অধিকার। দুর্নীতি-দলতন্ত্রে নিমজ্জিতরা তাদের আখের গোছানোর জমি ছাড়বে না। তাই ‘পাড়ায় সমাধান’ নির্ধারিত হওয়ার বিষয়টি পাল্টা হস্তক্ষেপ সংগঠিত করার দাবি রাখে। শাসকপক্ষের স্বজনপোষণ চোখরাঙানো খবরদারি গাজোয়ারির বিরুদ্ধে, জনগণের সপক্ষে, গণতান্ত্রিক স্বার্থে।

seeds of hope

কৃষকবিরোধী আইন তিনটি প্রণয়নের সময় যেমন অসৎ ও অগণতান্ত্রিক কায়দা নিয়েছিল মোদী সরকার, প্রত‍্যাহারও করল ততটাই অসৎ অগণতান্ত্রিকভাবে। আলোচনার দাবি অগ্রাহ‍্য করে সংসদে ধ্বনি ভোটে পাস করা হয়েছিল আইন তিনটি, প্রত‍্যাহারের সময়ও কোনও রকম আলোচনা করতে দেওয়া হল না। এই স্বৈরাচারী কায়দা মোদী সরকারের ট্রেডমার্ক হয়ে গেছে।

আইন প্রত‍্যাহার করতে হল কেন তার কারণ হাজির করতে গিয়ে মোদী সরকারকে অবশ‍্য বেশ সৃজনশীলতার পরিচয় দিতে হয়েছে। সরকার একই কথা আওড়ে চলেছে। বলছে যে, আইনগুলিতে কোনও দোষ ছিল না, আর কৃষকদের একটি ক্ষুদ্র অংশই সরকারের কথা বুঝতে ও আইনগুলি সমর্থন করতে অস্বীকার করেছে। সরকার দাবি করছে যে আইনগুলি খুব ভালো হওয়া সত্ত্বেও প্রত‍্যাহার করে নিতে হচ্ছে মূলত তিনটি কারণে: কারণ সুপ্রিম কোর্ট স্থগিতাদেশ দিয়েছে; কারণ কোভিড১৯ সংকটকালে কৃষকেরা প্রচণ্ড পরিশ্রম করে প্রচুর ফসল ফলিয়েছে; এবং, কারণ হল ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তীতে — আজাদী কা অমৃত মহোৎসবে — মহানুভবতার সাথে সকলকে সঙ্গে নিয়ে চলা সরকারের অবশ‍্যকর্তব‍্য।

তিনটি কারণই মিথ‍্যাচার মনে হতে বাধ‍্য। সুপ্রিম কোর্ট ২০২১-এর জানুয়ারি মাসেই স্থগিতাদেশ দিয়েছিল। তখনই কেন মোদীঐ সরকার আইনগুলি প্রত‍্যাহার করেনি? করলে তো কৃষকদের এই চরম হয়রানি হত না, ৭০০ কৃষকের প্রাণ বাঁচত। যে সরকার বছরভর কৃষকদের শাস্তি দিতে আর বদনাম করতে ব‍্যস্ত ছিল সেই সরকারই এখন কৃষকদের পরিশ্রমের কথা বলে পিঠ চাপড়ে পুরস্কার দেওয়ার ভণিতা করছে! আর শেষত, কাকে বোকা বানানোর খোয়াব দেখছে সরকার? ভারতের একটা শিশুও তো জানে যে ৭৫ বছরের স্বাধীনতা উপলক্ষে মহানুভবতা দেখাতে নয়, দাম্ভিক মোদীকে আইনগুলি প্রত‍্যাহার করতে হয়েছে ইউপি ও অন‍্য দুই রাজ‍্যে আসন্ন নির্বাচনে কৃষকের হাতে নিশ্চিত পরাজয় আটকানোর মরিয়া প্রচেষ্টা হিসেবে। বরাবরের মতো মোদীর এই পদক্ষেপও ক্ষমতার লোভ থেকেই, কৃষকের ভালো করার আকাঙ্খা থেকে নয়।

আমাদের একথাও স্মরণে রাখতে হবে যে কৃষকেরা প্রথম থেকেই যার বিরোধ করছিল সেই ক্ষতিকর আইনগুলি সরকার প্রত‍্যাহার করে নিয়েছে ঠিকই, কিন্তু উৎপাদন খরচের ওপর ৫০% লাভের ন‍্যূনতম সহায়ক মূল‍্য নিশ্চিত করার আইন প্রণয়নের যে দাবি কৃষকেরা লাগাতার তুলে এসেছে তাকে সরকার এখনও স্বীকারই করেনি। সরকার কৃষকদের কাছ থেকে ন‍্যূনতম সহায়ক মূল‍্যে ফসল কিনে নিয়ন্ত্রিত মূল‍্যের রেশন দোকানে দেশের জনগণের জন‍্য সরবরাহ করুক।

কৃষকদের ন‍্যূনতম সহায়ক মূল‍্য থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে, আর অন‍্যদিকে ভোক্তাদের তা কিনতে হচ্ছে চরম মূল‍্য দিয়ে বাজার থেকে। খাদ‍্যসামগ্রীর দাম হুহু করে বেড়ে চলেছে; এই সরকারেরই বিমুদ্রাকরণ, লকডাউন ও কর্মনাশের ফলে ইতিমধ‍্যে ধুঁকতে থাকা গরিব জনতা এই মূল‍্যবৃদ্ধির ধাক্কায় চরম বিধ্বস্ত। খাদ‍্যসামগ্রীর উৎপাদক ও ভোক্তা উভয়েই খাদ‍্যসামগ্রীর ওপর কর্পোরেট থাবার বিরুদ্ধে লড়ছে

সারা দেশের কাছ থেকে উষ্ণ অভিনন্দন প্রাপ‍্য কৃষকদের — শুধুমাত্র খাদ‍্য উৎপাদনের জন‍্য নয় বরং আমাদের গণতন্ত্রের মাটিতে আর দেশের জনতার অন্তরে নতুন আশার যে বীজ তাঁরা বপন করলেন তার জন‍্য। কৃষক আন্দোলন ভারতের উপনিবেশ-বিরোধী আন্দোলনের প্রকৃত অন্তরাত্মাকে এমনভাবে জাগ্রত করেছে যা বিজেপির সংগঠিত “আজাদী কা অমৃত মহোৎসব”-এর পক্ষে করা সম্ভব নয়, কারণ ব্রিটিশ কোম্পানিরাজের সেবা আর স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল যারা তাদেরই মতাদর্শগত আনুগত‍্যে চলে বিজেপি এবং সেই একই ধারায় ওরা দেশের কৃষক ও খাদ‍্য উৎপাদন সহ সমস্ত কিছুকে বর্তমানকালের কোম্পানিরাজের হাতে তুলে দিচ্ছে।

(এম-এল আপডেট সম্পাদকীয়, ৩০ নভেম্বর সংখ‍্যা)

Sixth State Conference of rya

৬ ও ৭ ডিসেম্বর নদীয়ায় যুব সম্মেলন ছিল প্রাণবন্ত ও প্রতিশ্রুতিময়। দীর্ঘ লকডাউনের পর ধুবুলিয়া মুক্তমঞ্চ প্রাঙ্গনে সম্মেলনস্থলে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা প্রায় দুই শত যুব প্রতিনিধি, পর্যবেক্ষক ও অতিথি দুদিন ধরে খোলামেলা আলাপ আলোচনা ও পারস্পরিক আদানপ্রদানে মিলিত হন। বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণীঝড় জনিত প্রতিকুল আবহাওয়ার বাধাবিপত্তি মোকাবিলা করেই নির্ধারিত সময়ে সকলে এসে পৌঁছান। ঝিরঝিরে বৃষ্টির মধ‍্যেই এক উদ্দীপ্ত মিছিলে ধুবুলিয়া বাজার এলাকা পরিক্রমা করে এসে শহিদ স্মরণ কর্মসূচি দিয়ে শুরু হয় সম্মেলনের কাজ।

৬ ডিসেম্বর একই সাথে ডক্টর আম্বেদকরের প্রয়াণ দিবস ও বাবরি মসজিদ ধ্বংসের কুখ‍্যাত দিন। সমগ্র সম্মেলন জুড়ে ভারতীয় গণতন্ত্রে হিন্দুত্ববাদী বিপর্যয়ের ভয়ানক বাস্তবতা ও তার বিরুদ্ধে আম্বেদকরের সতর্কীকরণ ও শিক্ষার প্রসঙ্গ বিভিন্নভাবে উঠে আসে। মুক্তমঞ্চে প্রকাশ‍্য অধিবেশনে সিপিআই(এমএল)'র রাজ‍্য সম্পাদক অভিজিৎ মজুমদার আরএসএস-এর সংকীর্ণ ও সম্প্রদায়-বিদ্বেষী ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দিয়ে স্বাধীনতার এই ৭৫ বছরে নতুন শক্তি নিয়ে তাকে প্রতিরোধ গড়ার ডাক দেন। অ‍্যাসোসিয়েশনের সর্বভারতীয় সভাপতি তথা বিহার বিধানসভার তরুণ বিধায়ক মনোজ মঞ্জিল দেশজুড়ে গড়ে ওঠা যুব আন্দোলন, বিশেষত কর্মসংস্থানের প্রশ্নে রাজ‍্যে রাজ‍্যে গড়ে ওঠা আন্দোলনের খবর দিয়ে পশ্চিমবাংলার পরিস্থিতির দিকে আঙুল তোলেন। তিনি চাকরির প্রশ্নে রাজ‍্য সরকারের আচরণ তথা নিয়োগ দুর্নীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেন এবং শহুরে বাহ‍্যিক চাকচিক‍্যর আড়ালে চিকিৎসা ব‍্যবস্থার সামগ্রিক দুর্দশার দিকে নজর টানেন। এসএসসি যুবছাত্র অধিকার মঞ্চের দীর্ঘদিনের লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা তথা রাজ‍্যে শিক্ষক নিয়োগে বহুস্তরীয় ও গভীর দুর্নীতির এক সুস্পষ্ট ও ক্রোধ উদ্রেককারী বর্ণনা দেন মঞ্চের অন‍্যতম নেতা শেখ সিরাজ।

সভাকক্ষে ১৬৬ জন প্রতিনিধি ও আরও বেশ কিছু সংখ‍্যক পর্যবেক্ষক ও অতিথিদের উপস্থিতিতে দু’দিনের অধিবেশনে মোট পাঁচ ঘন্টা নিবিড় সময়ের আলোচনায় ৩১ জন প্রতিনিধি বক্তব‍্য রাখেন। বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফ দ্বারা জীবনের অবমাননার অভিজ্ঞতা ও আক্রোশ; পাড়া প্রতিবেশি বা আত্মীয়স্বজনের চিকিৎসা করাতে গিয়ে স্বাস্থ‍্যব‍্যবস্থা সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠা; ঋণ ও ঋণমুক্তি আন্দোলনের আশা নিরাশার বাস্তবতা; রেশনকার্ডে আধার লিঙ্কে আঙুলের ছাপ মেলার বাধ‍্যবাধকতার ফলে গ্রামাঞ্চলে ডিজিটাল ডামাডোল, ওটিপি পেতে ফোন আর ফোনে মাসিক ৯৯ টাকা বাধ‍্যতামূলক রিচার্জের কর্পোরেট লুন্ঠন; বহুধরণের এককালীন তাৎক্ষণিক নিয়োগের গিগ এমপ্লয়মেন্টে নতুন সুযোগ ও নবতর শোষণ মোকাবিলার চ‍্যালেঞ্জ; দেশজুড়ে যুব আন্দোলনের ভেতর থেকে উঠে আসা নতুন উপাদানগুলি, বিশেষত দলিত ও আদিবাসী সমাজের প্রশ্ন সংগঠনে আত্মস্থ করা; একদিকে বিজেপি-আরএসএসের হিন্দুত্ববাদী প্রচার ও অন‍্যদিকে টিএমসির দিক থেকে সামান‍্য কিছু সরকারি অনুদান দিয়ে যুবসমাজের চেতনাকে বন্ধক নিয়ে নেওয়া প্রচেষ্টা — এই দুই দিককে মোকাবিলা করে মর্যাদাপূর্ণ জীবন ও রোজগারের অধিকার ঊর্ধ্বে তুলে ধরা; বামপন্থার নামে সরকারপন্থী অবক্ষয় সম্পর্কে শিক্ষিত সচেতন থাকা; সংগঠনের লক্ষ‍্য উদ্দেশ‍্য ও লড়াইএর বার্তা জোরালোভাবে যুবসমাজের মাঝে প্রচারে নিয়ে যাওয়া; সমাজের সবার লড়াইই যুবদের লড়াই; সমাজ বদলের লড়াইএর মধ‍্যেই আছে নব প্রজন্মের উজ্জ্বল ভবিষ‍্যতের ঠিকানা; – এই সমস্ত বিষয় ও দিক থেকে সমৃদ্ধ আলোচনা, পরামর্শ ও প্রস্তাব উঠে আসে। শ্রমিক তথা যুব আন্দোলনের কর্মী রাজা ওরফে শেখ সাবিরের গাওয়া গানগুলি সম্মেলনের গভীরে আত্মবিশ্বাস ও অঙ্গীকার সঞ্চারিত করে দেয়। সম্মেলন ৩৯ জনের রাজ‍্য পরিষদ নির্বাচিত করে। নবনির্বাচিত পরিষদ ১৭ জনের কার্যনির্বাহী পরিষদ ও ৭ জনের সম্পাদকমণ্ডলী গঠন করে এবং রণজয় সেনগুপ্তকে সম্পাদক ও সজল দে’কে সভাপতির দায়িত্ব প্রদান করে। দ্রুত বিকাশমান নতুন পরিস্থিতিতে রাজ‍্যে সম্ভাবনাময় যুব আন্দোলনে সংগঠনকে ব্যাপক গণভিত্তির মাঝে নিয়ে যাওয়ার শপথ নিয়ে ষষ্ঠ সম্মেলন সম্পন্ন হয়।

transport industry

পশ্চিমবাংলায় গত বিধানসভা ভোটের আগে ভোট পাওয়ার জন্য শাসক দলের পক্ষ থেকে পরিবহন সংস্থাগুলিতে প্রচার করা হয়েছিল —

(১) যে সকল পরিবহন কর্মী ডব্লিউবিটিসি-র অধীনে বিভিন্ন সংস্থায় (সিটিসি, সিএসটিসি, ডব্লিউবিএসটিসি) এবং এনবিএসটিসি, এসবিএসটিসি সংস্থাগুলিতে সরাসরি দীর্ঘদিন ধরে সরাসরি কন্ট্রাক্ট কর্মী হিসাবে কাজ করে এসেছেন এবার তাঁদের স্থায়ীকরণ করা হবে।

(২) যে সকল কর্মীরা অস্থায়ী বা এজেন্সির মাধ্যমে কাজ করে আসছেন তাঁদের কোম্পানির অধীনে সরাসরি কন্ট্রাক্ট কর্মী করা হবে এবং পরবর্তীকালে তাঁদেরকেও ধাপে ধাপে পার্মানেন্ট করে নেওয়া হবে।

(৩) মৃত কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের চাকরি দেওয়া হবে।

(৪) কর্মীরা দলের হয়ে কাজ করলে এবং দলকে ভোট দিলে বাড়ির কাছের ডিপোতে ডিউটি দেওয়া হবে। ভালো রুট, ভালো গাড়ি দেওয়া হবে।

(৫) স্থায়ী কর্মীদের বেতন, ওভার টাইম, ইনসেন্টিভের পয়সা বাড়িয়ে দেওয়া হবে। কাজের বোঝা কমিয়ে দেওয়া হবে। ইত্যাদি ইত্যাদি।

স্বাভাবিকভাবেই কর্মীরা তখন সামনে পিছনে কোনো কিছুই ভাবতে চাননি। বামফ্রন্ট আমলে ১৫-২০ বছর ধরে ক্যাজুয়াল থাকার পর এআইসিসিটিইউ-র নেতৃত্বে ২০০৮-২০০৯ সালে বীরত্বপূর্ণ লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে ১০২৫ জন কর্মীর পার্মানেন্ট হওয়ার ইতিহাস মনে রাখেননি। সেই আমলে ‘চেকিং’এর নামে ড্রাইভার-কন্ডাক্টরদের রাজপথে, চলন্ত বাসে উলঙ্গ করে মর্যাদাহানী করার জঘন্য কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দিতে পারা-কর্মীদের হিম্মতের ইতিহাস ভুলে গেলেন।

তৃণমূল আমলে দু’বার ডিপোগুলোকে স্তব্ধ করে, পরিবহন ভবন অভিযান চালিয়ে ম্যানেজমেন্টকে প্রতিটি কর্মীর ২০০০ টাকা বেতন বৃদ্ধি করতে এবং এজেন্সি কর্মীদেরও বোনাসের অনুদান হিসাবে সেই প্রথমবার ১৬০০ টাকা চালু করতে বাধ্য করার নজীরও ভুলে গেলেন। বিশ্বাস করলেন এবার বুঝি নরক যন্ত্রণা থেকে তাঁরা মুক্তি পাবেন।

দীর্ঘ ৮ মাস হয়ে গেল ভোট হয়ে গেছে। কোনো প্রতিশ্রুতিই কার্যকরি করা হয়নি। উপরন্তু, শুরু হয়েছে কর্মীদের বিভিন্ন অজুহাতে কাজ থেকে বেআইনিভাবে ছাঁটাই অভিযান। ইতিমধ্যে ডব্লিউবিটিসি তার সবকটি সংস্থায় ব্যাপক মাত্রায় কর্মী ছাঁটাই শুরু করেছে। যদিও বেশ কয়েক বছর ধরেই বিভিন্ন সংস্থায় বিভিন্ন অজুহাতে ছাঁটাই চলে আসছে। এমনকি রাজ্য শ্রম দপ্তর কর্তৃক ম্যানেজমেন্টের বেআইনি ছাঁটাই বিরোধী ত্রিপাক্ষিক চুক্তিও (সিটিসি-র ১৪ জন কর্মীকে ফিরিয়ে নেওয়া) ডব্লিউবিটিসি ম্যানেজমেন্ট অমান্য করছে।

ভয়ঙ্কর এক আক্রমণের মুখে আজ শত শত পরিবহন কর্মী। এসবিএসটিসি থেকে ৮৯ জন কর্মীকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। সিটিসি, সিএসটিসি, ভুতল সংস্থাগুলি থেকে ইতিমধ্যেই শতাধিক কর্মীকে ছাঁটাই করা হয়েছে। শোনা যাচ্ছে সংখ্যাটা দ্রুতই প্রায় চার শতাধিকে পৌঁছাতে পারে। বেশ কিছু বছর আগে থেকেই ৮০, ৮১, ৬০, ৬১-র লট (ব্যাচ্ নাম্বার) সহ সহস্রাধিক কর্মীকে নিয়োগ করা হয়েছে। এই শিল্পে সহস্রাধিক স্থায়ীপদ শূন্য থাকা সত্ত্বেও এইসব কর্মীদের কন্ট্রাক্ট, অস্থায়ী বা এজেন্সি কর্মী হিসাবে নিয়োগ করে বছরের পর বছর স্থায়ী শ্রমিকদের মতো সমকাজ করালেও সম মজুরি দেওয়া হচ্ছে না। যা শ্রম আইন বিরুদ্ধ। আর যেসব এজেন্সি রাতারাতি গজিয়ে উঠেছে তাদের মালিকরা শাসকদলের কোন না কোনো নেতা বা প্রশাসনিক আমলার আত্মীয়স্বজন। এমনকি পরিবহন সংস্থাগুলির সাথে এদের চুক্তির বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। আবার অপরদিকে এটা প্রমান করা কঠিন হলেও কান পাতলেই শোনা যায় (প্রাক্তন পরিবহনমন্ত্রীর আমলে) — এইসব নিয়োগের ক্ষেত্রে বেকার যুবকদের কাছ থেকে শাসকদলের এবং ম্যানেজমেন্টের এক অংশের নেতা কর্মকর্তারা সরকারি চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নামে ১০ হাজার টাকা থেকে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আদায় করেছে। ঐ সকল কর্মীদের অনেকেই পূর্ব মেদিনীপুর জেলার গরিব ঘরের। আরো অমানবিক বিষয় হল, করোনা মহামারীর সময়কালে যেসব শত শত কর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিবারকে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রেখে পরিবহন পরিষেবাকে সচল রেখেছিলেন আজ তাঁদের এক লহমায় অস্বীকার করে ডিপোর গেটের বাইরে বের করে দেওয়া হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় সরকারের মতো রাজ্য সরকারও পরিবহন শিল্পকে আজ বেসরকারিকরণ করার পথেই হাঁটছে। এই পন্থা এই রাজ্যে প্রথম শুরু হয়েছিল বামফ্রন্ট আমল থেকেই (রুট, বাস ফ্রানঞ্চাইজের মাধ্যমে)। আজ তা আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে — কন্ট্রাক্ট, এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ, শহরের প্রাইম এলাকার শত শত একর সরকারি জমি, বাস রুট তথাকথিত লিজের নামে ব্যক্তি বা কর্পোরেট সংস্থার কাছে জলের দরে (এ ক্ষেত্রেও চরম আর্থিক দুর্নীতির বিষয়টা শোনা যায়) বেচে দেওয়া হচ্ছে। লিজ বা বেচে দেওয়া সম্পদের কয়েকশো কোটি টাকা পরিবহন শিল্পের পুনরুজ্জীবনের জন্য খরচ করা হয়নি, সে টাকা কোথায় তার হদিস ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে। শ্রমিক সমবায়ের কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি নিয়ে ধূমায়িত হচ্ছে গণক্ষোভ। চর্চা চলছে পুকুর না সাগর চুরি!

ইতিমধ্যেই ছাঁটাই কর্মী ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা পরিবহন দপ্তরের গেটে বেআইনি ছাঁটাই ও নিয়মিত সঙ্গত পেনশনের দাবিতে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে পরিবহন শিল্পের সমস্ত ধরনের কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হতেই হবে। সরকারের ষড়যন্ত্রমূলক পরিকল্পনা এবং স্বৈরাচারী, অসৎ, দুর্নীতিগ্রস্ত ম্যানেজমেন্টের কর্মকাণ্ড আজ রাজ্য পরিবহন শিল্পকে ধ্বংসের মুখে এনে দাঁড় করিয়েছে। “এখন ওদেরকে ছাঁটাই করছে, আমাকে বা আমাদেরকে তো করছে না” — এই মনোভাব পরিবহন কর্মীদের ত্যাগ করতে হবে। আগামীদিনে কেউই সুরক্ষিত থাকবেন না। তাই, শিল্প এবং শ্রমিক স্বার্থে দলমত নির্বিশেষে এই শিল্পের সকল কর্মী এবং ইউনিয়নগুলিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এর মোকাবিলা করতে হবে। সতর্ক থাকতে হবে ইউনিয়নগুলির মধ্যে সংঘর্ষ, গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব এবং শ্রমিকে শ্রমিকে বিভেদের সমস্ত ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে — যা পরিণামে শ্রমিক বিরোধী ম্যানেজমেন্টের হাতকেই শক্তিশালী করবে।

তাই, আওয়াজ তুলতে হবে —

(১) করোনা মহামারী সময়কালে যে সকল কর্মী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাজ্যের পরিবহন শিল্পকে সচল রেখেছিলেন তাঁদের ছাঁটাই করা চলবে না। ছাঁটাই প্রত্যাহার করে অবিলম্বে কাজে ফিরিয়ে নিতে হবে। (২) রাজ্য শ্রম দপ্তর কর্তৃক ম্যানেজমেন্টের বেআইনি ছাঁটাই বিরোধী ত্রিপাক্ষিক চুক্তিকে কার্যকরি করে অবিলম্বে ১৪ জনকে কাজে ফিরিয়ে নিতে হবে এবং বকেয়া বেতন দিতে হবে। (৩) পরিবহন শিল্পের শূন্য পদে সকল কন্ট্রাক্ট, অস্থায়ী ও এজেন্সি কর্মীদের স্থায়ী করতে হবে। (৪) শ্রমিক কো-অপারেটিভে গচ্ছিত লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করা চলবে না। অবিলম্বে শ্রমিকদের টাকা ফেরত দিতে হবে। (৫) মৃত কর্মীর পরিবারের একজন সদস্যকে অবিলম্বে চাকরিতে নিয়োগ করতে হবে। (৬) বেআইনি ট্রান্সফার বন্ধ করতে হবে। বাড়ীর কাছের ডিপোতে কাজ দিতে হবে। (৭) সরকারি নির্দেশ মতো কর্মীদের ৪৫০০ টাকা বোনাস দিতে হবে। (৮) সম কাজে সম মজুরি দিতে হবে। (৯) পরিবহন শিল্পকে বাঁচাতে স্বৈরাচারী, অসৎ ও দুর্নীতিগ্রস্ত ম্যানেজমেন্টকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। (১০) সরকারি পরিবহন শিল্পকে বেসরকারিকরণ করা চলবে না। (১১) স্থায়ী পদ শূন্য থাকতে কন্ট্রাক্ট, অস্থায়ী ও এজেন্সির মাধ্যমে নিয়োগ বন্ধ করে সরাসরি স্থায়ী পদে নিয়োগ করতে হবে। সকল কন্ট্রাক্ট, অস্থায়ী ও এজেন্সি কর্মীদের স্থায়ীকরণ করতে হবে।

এআইসিসিটিইউ অন্তর্ভুক্ত সিটিসি-বিডিকেএস, সিএসটিসি-এসএসকেইউ, এডব্লিউবিএসটিসি-এসএসকেইউ ইউনিয়নগুলির পক্ষ থেকে সরকারের বেসরকারিকরণের পরিকল্পনা এবং কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বেআইনি ছাঁটাইয়ের তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। আগামীদিনে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলতে ডিপোয় ডিপোয় লিফলেটিং, পোস্টারিং শুরু হয়েছে। এআইসিসিটিইউ মনে করে কর্মীদের এবং ইউনিয়নগুলির ব্যাপক ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনই পারে রাজ্যের পরিবহন শিল্পকে বাঁচাতে এবং শ্রমিক কর্মচারীদের উপর নেমে আসা আক্রমনকে প্রতিহত করতে।

- দিবাকর ভট্টাচার্য

market of fertilizers

হুগলী-বর্ধমানের বিস্তীর্ণ গ্রামাঞ্চলে চাষীরা যখন পূর্ণ উদ্যমে আলু চাষে নেমে পড়েছেন তখন সারের অপ্রতুল সরবরাহ ও সারের কালোবাজারী তাঁদের সমূহ বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। সমবায় সমিতির কর্তারা বলছেন, সারের সরবরাহ নেই। সার ব্যবসায়ীরা যদি বা সার বিক্রি করছেন, দাম নিচ্ছেন ঘোষিত বা মুদ্রিত দামের থেকে অনেক বেশি। যেমন এনপিকে সারের ক্ষেত্রে, (ইফকোর এনপিকে ১০:২৬:২৬) ৫০ কেজি সারের যেখানে সর্বাধিক খুচরো দাম (এমআরপি) ১১৭৫ টাকা, কোনো কোনো ব্যবসায়ী সেখানে দর হাঁকছেন ১৯৫০ টাকা। নিরুপায় হয়ে চাষি এই ‘'গলাকাটা'’ দামেই রাজি হলে কী হয়, তাঁর যা প্রয়োজন তার অর্ধেক পরিমাণও তিনি পাচ্ছেন না। ব্যবসাদার সাফাই গাইছেন৷ “সারের সাপ্লাই কম। খদ্দের তো একজন নয়। সে কারণে যেটুকু স্টক আছে তা থেকে সকলকেই কিছু কিছু করে দিচ্ছি।” আর এক শ্রেণীর ব্যবসাদার দাম তো বেশি নিচ্ছেনই তার ওপর সুযোগ বুঝে চাষির ইচ্ছার বিরুদ্ধে অন্য কিছু মালও গছিয়ে দিচ্ছেন। যেমন গ্রোমোর কোম্পানির ‘এনপিকে ১০:২৬:২৬’ [নাইট্রোজেন, ফসফেট ও পটাশ; আলু চাষে এই সারের চাহিদা সর্বাধিক] সারের ৫০ কেজি বস্তার দাম ১৪৯০ টাকা। সেই সার চড়া দামে বিকোচ্ছে ১৮২০ টাকায়। সঙ্গে গছিয়ে দেওয়া হচ্ছে ২২০ টাকার ভিটামিন — যেটা প্রকৃতপক্ষে কোনো কাজে লাগে না।সোজা কথায়৷ ১৪৯০ টাকার সারে চাষিকে গ্যাঁট গচ্চা দিতে হচ্ছে আরও সাড়ে পাঁচশো টাকা। এমন এক ডামাডোলের বাজারে, কৃষকদের স্বার্থে পান্ডুয়া ব্লকের সহ কৃষি অধিকর্তার নিকট গত ৩ ডিসেম্বর সারের পর্যাপ্ত জোগান ও কালোবাজারি রোধের দাবিতে সারা ভারত কিষাণ মহাসভার তরফে এক ডেপুটেশন প্রদান করা হয়। দাবি জানানো হয়, (ক) প্রধানত, এনপিকে সারের পর্যাপ্ত জোগানের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সমবায় সমিতিগুলিকে চাহিদামতো সার সরবরাহের উদ্যোগ নিতে হবে। (খ) সারের কৃত্রিম অভাব সৃষ্টির সমস্ত অপচেষ্টা রোধ করতে হবে। (গ) সার বিক্রির ক্ষেত্রে এমআরপি’র অতিরিক্ত দাম নেওয়া রোধ করতে হবে এবং কৃষকের ইচ্ছার বিরুদ্ধে অন্য কোনো কৃষি-সামগ্রী কিনতে বাধ্য করা চলবে না। এ প্রশ্নে প্রশাসনিক নজরদারি বাড়াতে হবে এবং দোষী ব্যবসায়ী বা বিক্রেতার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

সহ কৃষি-অধিকর্তা (এডিএ) দাবিগুলির ন্যায্যতা স্বীকার করেন এবং মন্তব্য করেন, “সারের ‘এক প্রকার সংকটের পরিস্থিতি’ দেখা দিয়েছে।” যদিও তিনি সাফাই দেন: সত্তর শতাংশ চাষি সার সংগ্রহ করতে পেরেছে। প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে বলা হয়, এটা সত্যি যে যাদের পুঁজি যথেষ্ট এমন সম্পন্ন চাষিরা আগে ভাগে সার তুলে নিয়েছে। কিন্তু সমস্যায় পড়েছে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিরা। এদের সমস্যা সমাধানে সরকার কী করছে জানতে চাওয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে এডিএ সারের জোগানের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যার উল্লেখ করেন যেমন এনপিকে সারের বৃহত্তম জোগানদার ইফকোর একটা কারখানা বন্ধ রয়েছে ও বেনফেড এখনও পর্যন্ত সমবায়গুলিকে সার সরবরাহে তেমন উদ্যোগী হয়নি। তিনি মৃদু স্বরে তৃতীয় কারণ হিসেবে বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকার বিরোধী দল শাসিত রাজ্যগুলিকে সার সরবরাহে কার্পণ্য করছে।” দ্বিতীয় কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ে নালিশ জানানো হয়েছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সারের জোগান অনেকটা বৃদ্ধি পাবে।”

বর্তমান সংকট দূর করার জন্য তিনি কৃষকদের বিশেষ একটি সার (এনপিকে) প্রয়োগের প্রবণতা ত্যাগ করতে বলেন। বিদেশ দেকে পটাশ আমদানির জটিলতা না কাটা অবধি তিনি আপাতত নাইট্রোজেন ও ফসফেট আছে এমন সার জমিতে প্রয়োগ করে পরে পটাশিয়াম নাইট্রেট স্প্রে করার পরামর্শ দেন। তাঁর পরামর্শ শোনার পরেও প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে পরবর্তীতে কৃষক স্বার্থে আরও বড় কর্মসূচী নেওয়ার আভাষ দেওয়া হয়। কৃষকদের স্বার্থে এআইকেএম এগিয়ে আসার জন্য এডিএ সংগঠনকে সাধুবাদ জানান।এআইকেএমের প্রতিনিধিদলে নিরঞ্জন বাগ, মহঃ সিরাজুদ্দিন ও সেখ ইদ্রিশ প্রমুখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

- মুকুল কুমার

murder in Prayagraj

সিপিআই(এমএল)-এর ছয় সদস্য বিশিষ্ট একটি টীম প্রয়াগরাজের ফাফামৌতে তদন্তের জন্য যায় যেখানে এক দলিত মহিলাকে ধর্ষণ ও তার পরিবারের লোকদের হত্যা করা হয়। এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে পার্টি ২ ডিসেম্বর সারা রাজ্যে প্রতিবাদ দিবস পালন করে এবং উচ্চ পর্যায়ের বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি জানায়। পার্টির উত্তরপ্রদেশ রাজ্য সম্পাদক সুধাকর যাদব অভিযোগ করেন পুলিশ এই ঘটনাকে আড়াল করছে। পুলিশের বক্তব্য হল এক দলিত যুবক, যে মৃত মহিলাকে বারংবার তার মোবাইলে মেসেজ পাঠিয়েছিল সে-ই ঐ চার জনকে খুন করেছে। কিন্তু সত্য ঘটনা হল — ঐ গ্রামের প্রভাবশালী পরিবাররা জমির জন্য বিবাদের জেরে এই হত্যাকান্ড ঘটায়। সম্প্রতি ঐ প্রভাবশালী পরিবাররা মৃত ব্যক্তিদের আক্রমণ করে এবং এর জন্য একটি কেস তাদের বিরুদ্ধে থানায় দায়ের হয়। কিন্তু পুলিশ কোনও সুরক্ষা ঐ দলিত পরিবারকে দেয়নি, উল্টে অভিযুক্তদের রক্ষা কর্তা বনে যায় এবং এর প্রমাণও মেলে। হত্যাকারীদের যেখানে নির্লজ্জভাবে পুলিশী সুরক্ষার বন্দোবস্ত করা হয় সেখানে একমাত্র বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে বিচারই আশা ভরসা।

উত্তরপ্রদেশে আইন শৃঙ্খলা যে ভেঙ্গে পড়েছে তার স্পষ্ট প্রমাণ হল ফাফামৌ গ্রামের ধর্ষণ ও গণহত্যা এবং মথুরায় একজন পরীক্ষার্থী ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনা। যোগীর রাজত্বে মহিলা ও দলিতরা সবথেকে কম সুরক্ষিত।

সিপিআই (এম-এল)-এর রাজ্য সম্পাদক তদন্তের রিপোর্টে বলেছেন ঐ দলিত পরিবারের চার সদস্যকে পাশবিকভাবে কুড়ুল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী দলিত মহিলাকে নিশ্চিতভাবে ধর্ষণ করা হয়েছে। প্রভাবশালী সামন্ত প্রভুরা ঘটনার আগে ঐ দলিত পরিবারের জমি দখলের চেষ্টা চালায়, পরে তাদের নির্মমভাবে হত্যা করে। সন্ত্রাসের মাত্রা এত তীব্র যে সামন্ত জমিদারদের ভয়ে গ্রামবাসীরা ঘটনা নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ।

গ্রামবাসীদের থেকে টিম জানতে পারে যে, আগে বহুবার উচ্চবর্ণের গোষ্ঠীরা ঐ দলিত পরিবারকে আক্রমণ করে এবং পুলিশ জাত-বিদ্বেষের জন্য কোন পদক্ষেপ করেনি। গ্রামবাসীরা বলেন, পুলিশ যদি সঠিক পদক্ষেপ করত তাহলে এই নির্মম গণহত্যা হয়ত এড়ানো যেত।

বিগত চার বছরে প্রয়াগরাজে কমপক্ষে এক ডজন এই ধরনের গণহত্যা হয়েছে। বিজেপি সরকার যখন গর্ব করে বলে যে উত্তরপ্রদেশ এখন উত্তম প্রদেশ হয়েছে ঠিক তখন এই ঘটনা ঘটছে। রাজ্যে খুন, ধর্ষণ, গণহত্যা এখন প্রায়শই ঘটছে। ক্ষমতা-মাফিয়া-অপরাধীদের দুষ্টচক্রের অংশীদার প্রভাবশালী শ্রেণীর এই লোকেরা ফাফামৌর গণহত্যার জন্য দায়ী। সরকার-প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতায় এই ধরণের মর্মঘাতী উদ্ভট অপরাধমূলক কার্যকলাপ চলছে। সিপিআই(এমএল)-এর দাবি, অবিলম্বে প্রধান অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করতে হবে, পীড়িতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান, একটি সরকারি চাকরি এবং তাদের নিরাপত্তা দিতে হবে। এই ঘটনার দায়িত্ব নিয়ে বিজেপি সরকারকে ক্ষমতার কুর্সি ছাড়তে হবে।

গ্রামবাসীদের কথায় জানা গেল যে গণহত্যার দুদিন পর একজন ফেরিওয়ালা ঐ বাড়িতে গেলে তিনি রক্তে ভেজা মাটি দেখে সকলকে ঘটনার ব্যাপারে জানান।

Stand with Papia

সবং কলেজের অধ‍্যাপিকা পাপিয়া মাণ্ডি জাতিবিদ্বেষী হেনস্থার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। সুবিচারের দাবিতে লড়ে চলেছেন। সমস্ত ব্রাহ্মণ‍্যবাদী প্রতিহিংসাকে মোকাবিলা করে তিনি থানায় এফআইআর করেছেন। এসসি-এসটি নিপীড়ন নিবারণ আইনের বিবিধ ধারায় কলেজের অধ‍্যাপক নির্মল বেরা ও অধ‍্যক্ষ তপন দত্ত অভিযুক্ত। কিন্তু দেড় মাস হয়ে গেল এখনও তারা গ্রেপ্তার হননি। বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে আন্দোলন শুরু হওয়ার পর জুডিশিয়াল ম্যাজি স্ট্রেটের পক্ষ থেকে পাপিয়া মাণ্ডির জবানবন্দি রেকর্ড করাতে বাধ‍্য হয়। গত ৬ ডিসেম্বর দিশম আদিবাসী গাঁওতা, আদিবাসী অধিকার ও বিকাশ মঞ্চ, সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতি, আদিবাসী সেঙ্গেল অভিযান, এপিডিআর (মেদিনীপুর), মেদিনীপুর জেলা সাঁওতালি সাহিত‍্য একাডেমি ও অল ইণ্ডিয়া স্টুডেন্টস অ‍্যাসোসিয়েশন সহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে যৌথ প্রতিনিধি ডেপুটেশনে যাওয়া হয়েছিল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাশাসকের দপ্তরে। সেখানে সমগ্র বিষয় তুলে ধরা হয় এবং অবিলম্বে পোয়া আইন মোতাবেক অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা ও কলেজ থেকে সাসপেণ্ড করার দাবি জানান হয়। আগামী ১৩ ডিসেম্বর ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহল সবং কলেজের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে। পাপিয়ার লড়াইয়ের পাশে দাঁড়ান, জাতিবিদ্বেষ রুখে দাঁড়ান।

trends

সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম দিনে এক তৃণমূল সাংসদ কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের কাছে জানতে চান, গত পাঁচ বছরে পেট্রল-ডিজেলে শুল্ক-সেস বাবদ কেন্দ্রীয় সরকার মোট কত টাকা আদায় করেছে এবং ওই রাজস্ব থেকে কতটা অংশ রাজ্যগুলিকে ভাগ দিয়েছে?

প্রথম প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধরি জানান, ২০১৬ সালের এপ্রিল মাস থেকে এ বছর মে মাস অবধি পেট্রল ও ডিজেল শুল্ক ও সেস মিলিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার প্রায় ১১.৭৪ লক্ষ কোটি টাকা আদায় করেছে। দ্বিতীয় প্রশ্নের সোজাসুজি জবাব এড়িয়ে গিয়ে বলেন, অর্থ কমিশনের কেন্দ্র-রাজ্য কর বণ্টনের ফর্মুলা মেনে প্রতি মাসে কেন্দ্রীয় রাজস্ব তহবিল থেকে রাজ্যগুলিকে প্রাপ্য মেটানো হয়। পণ্য ভিত্তিক কর বণ্টনের কোনও তথ্য আলাদা করে রাখা হয় না।

তৃণমূলের আরেক সাংসদ এদিন কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের কাছে জানতে চান, প্রতি লিটার পেট্রল ও ডিজেলে বর্তমানে কী পরিমাণ কেন্দ্রীয় শুল্ক নেওয়া হয় ও তার উপাদান-ভিত্তিক (যেমন, বুনিয়াদি উৎপাদন শুল্ক, সড়ক ও পরিকাঠামো উন্নয়ন সেস, কৃষি সেস প্রভৃতি) বিস্তৃত বিবরণ এবং এই কেন্দ্রীয় শুল্কের কতটা রাজ্যগুলির সঙ্গে ভাগ করা হয়? উত্তরে কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী জানান, বর্তমানে (৯ নভেম্বর থেকে পেট্রল-ডিজেলে উৎপাদন শুল্ক কমানোর পর) ব্র্যান্ডেড নয় এমন পেট্রলের প্রতি লিটারে ২৭.৯০ টাকা এবং ডিজেলে ২১.৮০ টাকা করে কেন্দ্রীয় শুল্ক নেওয়া হয়। এই কেন্দ্রীয় শুল্কের মধ্যে বুনিয়াদি (বেসিক) উৎপাদন শুল্ক হল, পেট্রলের জন্য লিটার প্রতি ১.৪০ টাকা এবং ডিজেলে ১.৮০ টাকা। মোট কেন্দ্রীয় শুল্কের মধ্যে মাত্র এইটুকুই কেন্দ্র-রাজ্যের মধ্যে ভাগাভাগি হয় অর্থ কমিশনের ফর্মুলা মেনে। ওই ফর্মুলা অনুযায়ী, রাজ্যগুলি পায় ৪১ শতাংশ এবং কেন্দ্র পায় ৫৯ শতাংশ। লিটার পিছু পেট্রল ও ডিজেল বিক্রি থেকে অবশিষ্ট যথাক্রমে ২৬.৫০ টাকা এবং ২০ টাকা শুধুমাত্র কেন্দ্র পায় এবং রাজ্যগুলির সঙ্গে ওই টাকার কোনও ভাগাভাগি হয় না।

- এই সময়

Events and trends-1

গত পাঁচবছরে বেশিরভাগ রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে শিশু এবং মহিলাদের মধ্যে রক্তাল্পতার প্রকোপ বেড়েছে। ‘ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে’র সাম্প্রতিক ফলাফল অনুসারে, ২০১৬ সালে ৫৮.৬ শতাংশের বিপরীতে ২০২১ সালে ৬-৫৯ মাস বয়সী শিশুদের মধ্যে রক্তশূন্যতার (অ্যানেমিক) হার বেড়ে হয়েছে ৬৭.১ শতাংশ।

বুধবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের দ্বারা প্রকাশিত সমীক্ষা অনুসারে, ২৮টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে রক্তশূন্য শিশুদের সংখ্যা বেড়েছে। জাতীয় রাজধানী দিল্লীতে ৬৯.২ শতাংশ শিশু এবং ৪৯.৪ শতাংশ মহিলা রক্তাল্পতায় ভুগছেন। রাজ্যগুলির মধ্যে প্রথমে রয়েছে গুজরাট। সমীক্ষা অনুসারে, গুজরাটে অ্যানেমিক শিশুদের সংখ্যা ৭৯.৭ শতাংশ।

অসমে অ্যানেমিক শিশুদের সংখ্যা ২০১৬ সালের ৩৫.৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২১ সালে ৬৮.৪ শতাংশ হয়েছে।

স্বাস্থ্য আধিকারিকদের মতে, দীর্ঘ শীতকালে তাজা শাকসব্জি এবং ফলের স্বল্প সরবরাহের কারণে, লাদাখে ৯২.৫ শতাংশ অ্যানিমিক শিশু রয়েছে। এছাড়া, দাদারা এবং নগর হাভেলি এবং দমন ও দিউ (৭৫.৮ শতাংশ), মধ্যপ্রদেশ (৭২.৭ শতাংশ), জম্মু ও কাশ্মীর (৭২.৭ শতাংশ), রাজস্থান (৭১.৫ শতাংশ), পাঞ্জাব (৭১.১ শতাংশ), হরিয়ানা (৭০.৪ শতাংশ), তেলেঙ্গানা (৭০.০ শতাংশ), বিহার (৬৯.৪ শতাংশ), আসাম (৬৮.৪ শতাংশ) পশ্চিমবঙ্গ (৬৯.০ শতাংশ), মহারাষ্ট্র (৬৮.৯ শতাংশ) এবং উত্তরপ্রদেশ (৬৬.৪ শতাংশ)। সব মিলিয়ে, ১৪টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে তাদের দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি শিশু রক্তাল্পতায় আক্রান্ত।

মহিলাদের মধ্যে প্রায় ৫৭ শতাংশ রক্তাল্পতা দেখা গেছে, যা ২০১৬ সালে ৫৩.১ শতাংশ থেকে ৩.৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৬ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ২৩টি রাজ্যে মহিলাদের রক্তাল্পতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে মহিলাদের মধ্যে রক্তাল্পতায় প্রথম সারিতে হল পশ্চিমবঙ্গ (৭১.৪ শতাংশ), ত্রিপুরা (৬৭.২ শতাংশ), অসম (৬৫.৯ শতাংশ), জম্মু ও কাশ্মীর (৬৫.৯ শতাংশ), ঝাড়খণ্ড (৬৫.৩ শতাংশ), গুজরাট (৬৫.০ শতাংশ), ওড়িশা (৬৪.৩ শতাংশ) এবং বিহার (৬৩.৫ শতাংশ)।

যেসব রাজ্যে রক্তাল্পতাজনিত শিশু ও মহিলাদের সংখ্যায় বিপরীত প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে সেগুলো হল আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, চণ্ডীগড়, দাদরা ও নগর হাভেলি এবং দমন ও দিউ, হরিয়ানা, লক্ষদ্বীপ এবং মেঘালয়।

শিশু ও মহিলাদের মধ্যে রক্তশূন্যতার হার কম রয়েছে এমন রাজ্যগুলি হল কেরালা, মণিপুর, মিজোরাম এবং নাগাল্যান্ড।

- নিউজ ক্লিক, ২৬ নভেম্বর ২০২১

RSS is increasing

সাম্প্রতিক কালে কর্ণাটকের ধারওয়াদে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের সাংগঠনিক বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গে সংগঠনকে ব্যাপক ভাবে বিস্তৃত করার প্রস্তাব গৃহীত হয়। আরএসএস প্রধান মোহন ভগওয়াতের পশ্চিমবঙ্গ সফর প্রমাণ করছে তাদের পশ্চিমবঙ্গের প্রতি বিশেষ নজর।

আরএসএস জানিয়েছে তাদের ১৯০০ শাখা পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে কার্যরত। আরো ৭০০ শাখা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত তারা গ্রহণ করেছে। আরএসএস-এর একজন দক্ষিণবঙ্গের কর্মী জানিয়েছে তারা তাদের শাখা প্রতিটি পঞ্চায়েত এবং ওয়ার্ডে নিয়ে যেতে চায়। এখন পশ্চিমবঙ্গে মাত্র ৩০ শতাংশ পঞ্চায়েত ওয়ার্ডেই তাদের উপস্থিতি আছে। তারা ২০২৪ নির্বাচনের আগে তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে চায়।

পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির ভোটে ভরাডুবির পর এবং সংগঠনের মধ্যে আভ্যন্তরীণ কলহ সৃষ্টি হওয়ায়, আরএসএস তাদের হিন্দুত্ববাদী এজেণ্ডাকে আরও গভীরে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করছে। সংগঠনকে বদলে ফেলার পরিকল্পনা নিয়েছে। প্রতিটি পঞ্চায়েত এবং ওয়ার্ডে ঢুকে পড়তে চায় তারা।

স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়ে আরএসএস ব্রিটিশদের অনুগত থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বিরোধ করেছিল। তাদের বিশ্বাসঘাতকতার সেই ইতিহাসকে আড়াল করার জন‍্য তারা ব‍্যাপক প্রচার চালানোর কৌশল নিয়েছে। তারা বিস্মৃত স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নিয়ে প্রচার চালাবে এবং এই প্রচার দেশের সমস্ত গ্রামে গ্রামে পৌঁছে দেবে।

আরএসএস-এর এই পরিকল্পনা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের গৌরবময় ইতিহাসকে ব্যবহার করে তারা তাদের সংগঠনের বিস্তৃতি বাড়াবে। তাদের চিরাচরিত ইতিহাস বিকৃতির পন্থা যে তারা পুরোদমে পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে প্রয়োগ করবে সে নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে ইতিহাস এবং বাংলার সমাজের ওপর এই আক্রমণকে রুখে দেওয়ার জন্য জোরালো উদ‍্যোগ দরকার। স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস, স্থানীয় মানুষের আত্মত্যাগ ও লড়াইয়ের কাহিনী এবং যে গণতান্ত্রিক, ঐক‍্যবদ্ধ ও বৈষম‍্যহীন ভারতীয় সমাজের জন‍্য তাঁরা লড়েছিলেন তা মানুষের মাঝে তুলে ধরতে হবে। বাংলায় সাংস্কৃতিক স্তরে সুদৃঢ় এবং দীর্ঘমেয়াদী কাজ শুরু করতে হবে এবং সেই উদ্দেশ্যে প্রচার অভিযান সংগঠিত করতে হবে। বিশ্বাসঘাতক আরএসএস-এর দ্বারা আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলন ও সম্প্রীতির ইতিহাস জবরদখল করার অপচেষ্টাকে রুখে দেওয়া এবং সম্প্রীতিকে আরো জোরালো করা আজকের সময়ের দায়িত্ব। বাংলার বাম আন্দোলনের নব জাগরণের পথেই তা সম্ভব হবে।

- প্রত‍্যুষ নন্দী

human rights is under attack

(১০ ডিসেম্বর হল আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস। সারা ভারতের জনগণ যখন ২০২১’র আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস পালন করবেন, তখন তাঁরা মানবাধিকার ও নাগরিক অধিকারের ওপর মোদী সরকারের নামানো সরাসরি যুদ্ধর দিকেই আঙুল তুলবেন। এই যুদ্ধক্ষেত্রের সাম্প্রতিক অবস্থার দিকে দৃষ্টিপাত করছে লিবারেশন।)

অক্টোবর মাসে পেরিয়ে গেল জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতিষ্ঠা দিবস। প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপনের দিন অনুষ্ঠানের এক মঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রী মোদী একেবারে নিজস্ব ধারায় আক্রমণ হানলেন মানবাধিকার আন্দোলনের কর্মীদের ওপর। তিনি তাদের এই অভিযোগে অভিযুক্ত করলেন যে তারা ‘বেছে বেছে’ মানবাধিকারের ইস্যুগুলোকে তোলে আর তার উদ্দেশ্য হল “দেশের ভাবমূর্তিকে কালিমালিপ্ত করা”। মাত্রাহীন মানবাধিকার লঙ্ঘনই বিজেপি’র চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হলেও মোদীর মোসাহেবরা তাদের প্রভুর মতোই মানবাধিকারের ধারণার নতুন রূপ দিতে চাইছে। সিদ্ধার্থ ভরদরাজন যেমন বলেছেন, “সরকারের কাজ যখন সাংবিধানিক শাসনধারা মেনে হবে না তখন আপনি কি করবেন? আপনি তখন নতুন তত্ত্ব বানাবেন।”

ডোভাল তত্ত্ব

কাজে নতুন যোগ দেওয়া পুলিশ অফিসারদের সামনে কিছু কথা বলতে গিয়ে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল বললেন যে, “যুদ্ধের নতুন সীমানা হল নাগরিক সমাজ, যাদের ওপর প্রভাব খাটিয়ে জাতির স্বার্থে আঘাত ঘটানো যায়।” মোদী জমানায় চালু হয়েছিল ‘শহুরে নকশাল’ কথাটা, যেটাকে বানিয়েছিল মোদী অনুগত সংবাদ মাধ্যমের লোকজন। নতুন পুলিশ অফিসারদের সামনে বলা কথাগুলো দিয়ে ডোভাল এই অভিধার ব্যঞ্জনাকেই তীব্রতর করে তুললেন। এর অর্থ হল: কেউ মোদী জমানাকে মানবাধিকার নীতির প্রতি দায়বদ্ধ করতে চাইলে তিনিই দেশের স্বার্থর প্রতি বিপদ বলে প্রতিপন্ন হবেন। যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে তারাই হল একমাত্র মানুষ যাদের জীবনের মূল্য আছে, আর তারা যাদের ওপর নিপীড়ন চালায় বা যাদের হত্যা করে তারা হল ‘সন্ত্রাসবাদী’ যাদের কোনো মানবাধিকার থাকতে পারেনা। মানবাধিকারের রক্ষকরা অতএব সেই সমস্ত মানুষদের অধিকারকেই লঙ্ঘন করছে যাদেরই একমাত্র অধিকারের হক আছে। মানবাধিকারের লঙ্ঘন যারা করছে তারা তাই হয়ে পড়ছে ‘নাগরিক সমাজের’ বলি; মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার মানুষজন হল সন্ত্রাসবাদী, এবং যারা মানবাধিকারের লঙ্ঘন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে ও আপত্তি জানাচ্ছে তারা অতএব হচ্ছে ‘শহুরে সন্ত্রাসবাদী’।

অধিকারের নতুন সংজ্ঞা দিলেন রাওয়াত

প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াতই বা পিছিয়ে থাকবেন কেন, মোদী জমানার স্তুতি করে থাকে এমন একটা চ্যানেল টাইমস নাও’এর সঞ্চালক রাহুল শিবশঙ্করকে তিনি বললেন, “কাশ্মীরের মানুষজন বলছে যে তাঁরা সন্ত্রাসবাদীদের গণপিটুনি দিয়ে মেরে ফেলবেন, তাঁরা এমন ব্যবস্থা করবেন বলছেন যার মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদীরা গণপ্রহারের শিকার হয়। এটা একটা ইতিবাচক লক্ষণ। সন্ত্রাসবাদীকে হত্যা করলে সেটা মানবাধিকারের লঙ্ঘন হবে কেমন করে? আপনার এলাকায় কোনো সন্ত্রাসবাদী সক্রিয় হলে তাকে আপনি হত্যা করতে পারবেন না কেন?” গণপিটুনি অনেকদিন ধরেই হিন্দু আধিপত্যবাদীদের দেশপ্রেমের প্রমাণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে (দাদরির গণপিটুনির ঘটনায় যুক্ত একজনের দেহ যখন তেরঙা পতাকায় মুড়ে দেওয়া হয়েছিল)। প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রধান এখন ‘পরিকল্পিত’ গণপিটুনির কথা বলছেন, যেখানে গণপিটুনির শিকারদেরই সন্ত্রাসবাদী বলে দেগে দেওয়া হচ্ছে!

কাশ্মীরে অসামরিক নাগরিক হত্যাকে চালানো হচ্ছে ‘সংঘর্ষ হত্যা’ বলে

রাওয়াত যখন বলছেন যে কাশ্মীরের স্থানীয় জনগণ গণপিটুনির ‘পরিকল্পনা’ করে, তখন সেটা কি এটাই বোঝাচ্ছে যে বাস্তবে গণপিটুনিগুলো পুলিশ অথবা সেনারাই চালায়? আসল ঘটনা হল, তথাকথিত ‘সংঘর্ষ হত্যা’য় নিহত স্বজনদের দেহ তাদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানানোর জন্য সশস্ত্র বাহিনীগুলো স্থানীয় কাশ্মীরী জনগণের ওপর হামলা চালায়। পুলিশ দাবি করেছিল, হায়দারপোরায় তারা “দুজন জঙ্গি এবং দুজন জঙ্গি-সহযোগীকে হত্যা করেছে”। এই দাবির বিরুদ্ধে গ্ৰামবাসীরা প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছে যে, নিহতদের মধ্যে অন্তত তিনজনের একজন হল স্থানীয় এক ব্যবসায়ী, দাঁতের এক ডাক্তার এবং এক পিওন যাদের হত্যা করার পর ‘সংঘর্ষ হত্যা’ বলে চালানো হয় এবং নিহতদের ‘জঙ্গী’ ও ‘সহযোগী’ বলে অভিহিত করা হয়! হায়দারপোরার ঘটনা ডোভাল-রাওয়াত তত্ত্বের বাস্তবায়নের সাম্প্রতিকতম নিদর্শন মাত্র। অসামরিক নাগরিকদের হত্যা করা হয়, পুলিশ ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠলে নিহতদের ‘জঙ্গী’ এবং নাগরিক সমাজের ‘জঙ্গী সহযোগী’ বলে ছাপ মেরে তার উত্তর দেওয়া হয়! এই হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সংগঠিত হলে জম্মু ও কাশ্মীর প্রশাসন ‘সংঘর্ষ হত্যা’র ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দেয় এবং ব্যবসায়ী ও দাঁতের ডাক্তারের দেহ নিকটজনের হাতে তুলে দেয়। অবশ্য, হাথরাসে ধর্ষিতার দেহকে মাঝরাতে পোড়ানো/সমাধিস্থ করার মত ঘটনা কাশ্মীরে যে খুবই সাধারণ ব্যাপার সেটা মনে পড়িয়ে দিয়ে এই ঘটনাতেও পরিবারের সদস্যদের প্রিয়জনদের দেহ রাতের অন্ধকারেই সমাধিস্থ করতে বাধ্য করা হয়।

আবারও ‘সংঘর্ষ হত্যা’

হায়দারপোরার ঘটনা ঘটেছিল ১৫ নভেম্বর। এর দশদিনেরও কম সময়ে, ২৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় হায়দারপোরা থেকে মাত্র দু’কিমি দূরে শ্রীনগরের রামবাগ সেতুর কাছে পুলিশের গুলিতে নিহত হল তিন কাশ্মীরী যুবক। কাশ্মীরের ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ বিজয় কুমার জানিয়েছেন, “শ্রীনগরের সংঘর্ষে নিহত তিন জঙ্গির মধ্যে একজন হল মেহরান (মেহরান ইয়াসিন সালা), টিআরএফ’এর (দ্য রেজিস্টান্স ফ্রন্ট) শীর্ষ কমাণ্ডার যে এই শহরের দুই শিক্ষক ও অন্যান্য নাগরিকদের হত্যায় জড়িত ছিল।” নিহত অন্য দু’জন হল মনজুর আহমেদ মীর ও আরাফত আহমেদ শেখ, পুলওয়ামার বাসিন্দা। পুলিশের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, তারা একটা গাড়িকে থামতে বলে। কিন্তু গাড়ি না থামিয়ে “জঙ্গিরা গাড়ির ভিতর থেকে নির্বিচারে গুলি ছুঁড়তে শুরু করে আর ছুঁড়তে-ছুঁড়তে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। গুলির পাল্টা জবাব দেওয়া হয় যা বন্দুকের লড়াইয়ে পরিণতি লাভ করে।” পুলিশ এটাকে ‘সংঘর্ষ হত্যা’ বললেও প্রত্যক্ষদর্শীরা এটাকে একতরফা গুলিচালনার মধ্যে দিয়ে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড বলে বর্ণনা করেছেন। কেউ-কেউ জানিয়েছেন, তিনজনের কাছে কোনো অস্ত্র ছিল না এবং গাড়ি থেকে টেনে নামিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় তাদের হত্যা করা হয়। এক মহিলা প্রত্যক্ষদর্শী ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে বলেছেন, “পুলিশরা এল এবং তিনজনের ওপর যথেচ্ছ গুলি চালাতে শুরু করল। আমরা প্রথমে বুঝতে পারছিলাম না যে কি ঘটছে, কিন্তু পুলিশরা তিনজনের ওপর নির্বিচারে গুলি চালাতে শুরু করল, ওরা একটা গলির দিকে ছুটল, কিন্তু পুলিশরা ওদের পিছনে ছুটে আহত অবস্থায় ওদের রাস্তায় নিয়ে এল এবং যতক্ষণ না মারা যায় ততক্ষণ রাস্তাতেই ফেলে রাখল, তারপর দেহগুলোকে নিয়ে চলে গেল।” এই হত্যাকাণ্ডর বিরুদ্ধে দু’দিন, ২৪ ও ২৫ নভেম্বর শ্রীনগরে প্রতিবাদ সংগঠিত হয় এবং বিক্ষোভ প্রশমনে কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়া এবং ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। স্থানীয় জনগণের এই প্রতিবাদ পুলিশ ও প্রশাসনের এই দাবিকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে যে, পুলিশের গুলিতে নিহত ‘জঙ্গিদের’ পিছনে জনগণের কোনো সমর্থন নেই।

(সূত্র: লিবারেশন, ডিসেম্বর ২০২১)

হেফাজতে হত্যা ও তাকে ধামাচাপা দেওয়া

উত্তরপ্রদেশের কাশগঞ্জে এক মুসলিম যুবক আলতাফ এক হিন্দু অপ্রাপ্তবয়স্কাকে অপহরণ করেছে বলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল। পরদিন সকালে কাশগঞ্জ পুলিশ দাবি করল, যে আলতাফ (প্রায় ছ-ফুট লম্বা) থানার বাথরুমের দু’ফুট উঁচু কল থেকে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে, এবং তা করতে গিয়ে কাজে লাগিয়েছে ‘ওর জ্যাকেটের টুপির দড়িকে’, যদিও তা ছিল বিশ্বাসের অযোগ্য। পরে এটাও জানা গেল যে ঘটনায় যুক্ত মেয়েটা ১৬ বছরের অপ্রাপ্তবয়স্কা ছিলনা, সে ছিল প্রাপ্তবয়স্কা। ভারতে নাবালিকা ও নারীদের ‘অপহরণ’ এবং ‘ধর্ষণের’ যত ঘটনা নথিবদ্ধ হয় তার ৪০ শতাংশ যথার্থ অর্থেই হল পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে ভিন্ন জাত বা ধর্মের ছেলে-মেয়েদের পলায়ন, যেটাকে নাবালিকা বা প্রাপ্তবয়স্কার বাবা-মা ধর্ষণের অপরাধ করে তোলে। এই সব ঘটনায় উত্তরপ্রদেশের পুলিশ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টান্তে অনুপ্রাণিত হয় যিনি ভিন্ন ধর্মের নারী-পুরুষের মধ্যে সমস্ত প্রেমের ঘটনাকেই ‘লাভ জিহাদ’ বলে থাকেন এবং ‘সংঘটকদের’ হত্যার আহ্বান জানান।

সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা জানানোর জন্য ইউএপিএ প্রয়োগ

ত্রিপুরায় মুসলিম-বিরোধী অনেক ঘটনাই ঘটল, যারমধ্যে মসজিদে আগুন লাগানোর ঘটনাও ছিল। সাংবাদিক এবং অন্যান্য যাঁরা ঐ সমস্ত ঘটনার বিবরণ দিয়ে টুইট করলেন, ত্রিপুরা পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ইউএপিএ’র ধারায় অভিযোগ দায়ের করল, ঐ ধরনের টুইট বা পোস্টের জন্য বিশেষভাবে নিশানা বানানো হল মুসলিমদের। আরও ভয়ংকর ব্যাপার হল, ত্রিপুরা পুলিশ নিজেদের রাজ্য থেকে আসামে গিয়ে দুই মহিলা সাংবাদিককে গ্ৰেপ্তার করল, তাদের অপরাধ ছিল এই যে, মুসলিমদের মসজিদ ও সম্পত্তির ওপর ধ্বংসোন্মাদনা চালানো ও অগ্নি সংযোগের ঘটনার রিপোর্ট তারা করেছিল।

Guarantee of MSP

মাত্র দিন তিনেক আগের কথা। মহারাষ্ট্রের শোলাপুরের চাষি বাপ্পু কাভাডে ২৪ বস্তায় ১১২৩ কেজি পিঁয়াজ বিক্রির জন্য পাঠালেন কমিশন এজেন্ট রুদ্রেশ পাটিলের কাছে। পিঁয়াজ বিক্রি হল, বিক্রির রসিদও কাটা হল এবং তাতে মোট দাম দেখানো হল ১৬৬৫ টাকা ৫০ পয়সা। হিসেব কষে দেখা গেল চাষি পিঁয়াজের দাম পেয়েছেন কেজি প্রতি ১ টাকা ৪৮ পয়সা দরে। বাপ্পু কাভাডের নিজের জায়গা থেকে কমিশন এজেন্টের দোকানে পিঁয়াজ পাঠাতে খরচ হয়েছিল ১৬৫১ টাকা ৯৮ পয়সা (পরিবহণ, পিঁয়াজ গাড়িতে ওঠানো-নামানো এবং ওজন মাপার মোট খরচ)। অর্থাৎ, বিক্রির জন্য পাওয়া টাকা থেকে পিঁয়াজ পাঠানোর খরচ বাদ দিয়ে চাষি কাভাডে পেলেন মাত্র ১৩ টাকা ৫২ পয়সা। ১৬৫১ টাকা ৯৮ পয়সা খরচের যে হিসেব আমরা দেখলাম, তার বাইরে রয়ে গেল পিঁয়াজ উৎপাদনের খরচ — জমি তৈরি, বীজ-সার-কীটনাশক কেনা ও ফসল তোলার জন্য মোট ব্যয়। পিঁয়াজ চাষ করতে গিয়ে চাষি বাপ্পু কাভাডের অতএব অনেক ক্ষতিই হল। কমিশন এজেন্ট রুদ্রেশ পাটিল জানিয়েছেন — অসময়ের বৃষ্টিতে ভিজে পিঁয়াজ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, গুণমান ভালো ছিল না, তাই দাম অত কম হয়েছে। চাষি কাভাডে পিঁয়াজ কোনো মাণ্ডিতে বিক্রি করতে পারলেন না, যেখানে সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বা এমএসপি-তে চাষি উৎপাদিত শস্য বিক্রি করতে পারেন। পিঁয়াজের এমএসপি থাকলে কি চাষি কাভাডেকে এত ক্ষতি স্বীকার করতে হত? বৃষ্টিতে পিঁয়াজের গুণমান কতটা খারাপ হয়েছিল তা জানা যায়নি, কিন্তু প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতির মুখোমুখি হওয়া চাষির জন্য ভর্তুকির মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ কি একেবারেই অভাবনীয় বিবেচনা? চাষকে লাভজনক জীবিকা করে তুলতে চাষিরা যে এখন এমএসপি-র গ্যারান্টি দেওয়া আইন তৈরির দাবি তুলছেন, চাষি বাপ্পু কাভাডের লোকসানের নিদর্শন কি তার যাথার্থ্যকেই জোরালো করছে না?

কৃষক স্বার্থ বিরোধী তিন কৃষি আইন বাতিল হওয়ার পরও কৃষকরা ছ-দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন যার মধ্যে অন্যতম প্রধান দাবি হল ফসল বিক্রির জন্য কৃষকের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বা এমএসপি লাভ সুনিশ্চিত করতে সরকারকে আইন তৈরি করতে হবে। নরেন্দ্র মোদীও এক সময় কৃষকদের উৎপন্ন ফসলের জন্য এমএসপি-র দাবি তুলেছিলেন। কৃষক নেতা রাকেশ টিকায়েত সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, “শুধু আমরাই নয়, গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় নরেন্দ্র মোদী একটা আর্থিক কমিটির প্রধান ছিলেন যাতে অন্যান্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরাও ছিলেন। সে সময় তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-এর কাছে একটা রিপোর্ট পাঠিয়ে বলেছিলেন, ‘কৃষকরা যে এমএসপি পায় না তা কেন করা হবে না। এমএসপি নিয়ে একটা আইন সরকারকে করতে হবে।’ হয় আগেকার সেই রিপোর্টটায় মিথ্যা বলা হয়েছিল, আর না হয় মোদী আজ নিজের সিদ্ধান্তকেই রূপায়িত করতে চান না।” এ কথা ঠিকই যে, মোদী কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের এবং কৃষকদের প্রতিনিধি, কৃষি বিজ্ঞানী ও কৃষি অর্থনীতিবিদদের নিয়ে একটা কমিটি গঠনের কথা বলেছেন যার লক্ষ্য হবে “এমএসপি ব্যবস্থাকে আরো কার্যকরী করা।” কিন্তু মোদী কি আন্তরিকভাবেই এমএসপি-র পক্ষে? এমএসপি-কে তুলে দেওয়ার লক্ষ্যেই কি তাঁর সরকার কৃষি আইন বানায়নি? তিনটে কৃষি আইনের যেটা কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়ন সম্পর্কিত ছিল, যেটাতে মাণ্ডির বাইরেও ফসল বিক্রির “স্বাধীনতা” কৃষকদের দেওয়া হয়েছিল, সেই আইনটা এপিএমসি (মাণ্ডি পরিচালক) বাইপাস আইন" নামেও সুবিদিত ছিল। সরকারপন্থী অর্থনীতিবিদ ও ভাষ্যকাররা আজ এমএসপি-র আইনসিদ্ধতার বিরুদ্ধে যুক্তি দিতে গিয়ে বলছেন যে, এমএসপি পাওয়াকে সুনিশ্চিত করাটা বাজেটের সাধ্যে কুলোবে না। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত সাহও বলছেন যে, এমএসপি-তে ফসল কিনতে গেলে সরকারের ১৭ লক্ষ কোটি টাকা লেগে যাবে যে পরিমাণটা কেন্দ্রীয় বাজেটের অর্ধেক। তিনটে কৃষি আইন অধ্যয়ন করে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্ট যে কমিটি বানিয়েছিল তার অন্যতম সদস্য ছিলেন অনিল ঘানওয়াত। তিনি বাতিল হওয়া কৃষি আইনগুলোর সমর্থক ছিলেন বলেই আমরা জানি। এই ঘানওয়াতও বলছেন, “সমস্ত রাজস্বই এই দিকে (এমএসপি-তে ফসল কিনতে) চালিত করতে হবে এবং রাস্তা, সেতু, ইত্যাদি অত্যাবশ্যকীয় জিনিসের নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোনো অর্থ আর সরকারের থাকবে না। …” এমএসপি বিরোধীদের আরও যুক্তি হল, এমএসপি-র আইনি বাধ্যবাধকতা থাকলে বেসরকারি ক্ষেত্রের ব্যবসাদারদেরও এমএসপি-তে ফসল কিনতে হবে যা শুধু বাজারের ওপর অনভিপ্রেত হস্তক্ষেপই হবে না, তা শস্যের মূল্যস্ফীতিও ঘটাবে। কষ্ট স্বীকারই কি তবে উপভোক্তাদের অনিবার্য নিয়তি হবে? এই প্রসঙ্গে কৃষক নেতা যোগেন্দ্র যাদব কি বলছেন শোনা যাক — “খাদ্য দ্রব্যের দাম বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে বলা যায়, একে নিয়ন্ত্রণ করার পথ হল দরিদ্রের ভর্তুকিতে খাদ্য সরবরাহ করা, উৎপাদকদের ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত করা নয়। বাস্তব ঘটনা হল, সমাজ-সংক্রান্ত সামগ্ৰিক লক্ষ্যের পূরণে সারা বিশ্বেই “মুক্ত বাজার”কে নিয়ন্ত্রিত করা হয় এবং তা অবশ্যই করতে হবে। গোটা দুনিয়াতেই কৃষকদের ভর্তুকি ও মূল্য সহায়তা দেওয়া হয়ে থাকে।”

Guarantee of MSP_0

বৃহত্তর পরিপ্রেক্ষিতে দেখলে, তিন কৃষি আইনের বিরূদ্ধে কৃষকদের লড়াইটা ছিল সরকার অনুসৃত কৃষি নীতিমালার বিরুদ্ধেই লড়াই। এই নীতিমালার অনুসরণেই কৃষিক্ষেত্রে কর্পোরেটদের প্রাধান্য বিস্তারের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছিল, আর কৃষকদের উৎপন্ন ফসলের দাম হয়ে উঠছিল অলাভজনক। শস্য উৎপাদনের জন্য কৃষকরা যে বীজ, সার, কীটনাশক, যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেন তা কর্পোরেটদের ভুরি-ভুরি লাভ এনে দিচ্ছিল, কিন্তু ফসলের লাভজনক দাম অধরাই থেকে যাচ্ছিল। নীতি আয়োগের চালানো এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২০১১-১২ থেকে ২০১৫-১৬-র মধ্যে চাষবাস থেকে প্রতিবছর আয়ের বৃদ্ধি সীমিত থেকেছে ০.৫ শতাংশের মধ্যে, অর্থাৎ, আয় বলতে গেলে বাড়েনি এবং এমনকি হ্রাসও পেয়েছে। এমএসপি-র আইনসিদ্ধ হওয়ার দাবি তাই কৃষিকে রক্ষা করার, চাষবাসকে মর্যাদাপূর্ণ ও গর্বের জীবিকা করে তোলার দৃষ্টিতেই দেখতে হবে। সরকার ২৩টা ফসলের এমএসপি ঘোষণা করলেও সব ফসল কৃষকদের কাছ থেকে এমএসপি-তে কেনেনা। এমএসপি আইনসিদ্ধ হওয়ার পর শস্যগুলো এমএসপি-তে কিনতে বাধ্য হওয়ার জন্য যারা ১৭ লক্ষ কোটি টাকা ব্যয় হওয়ার আতঙ্ককে ফেরি করছেন তার মধ্যে অতিশয়োক্তি ও গূঢ় অভিসন্ধি আছে বলেই মনে হয়। আর একবার যোগেন্দ্র যাদবের অভিমত অনুসরণ করা যাক : “এমএসপি-কে যদি স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশ করা স্তরেও তোলা যায়, সেক্ষেত্রেও ব্যয় হবে ২.২৮ লক্ষ কোটি টাকা (বাজেটের প্রায় ৭.৮% এবং জিডিপির ১.২%)। ভারত তার জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশর কল্যাণের জন্য কি এই ঝুঁকিটা নিতে পারবে না? বাস্তব এই প্রশ্নটার মুখোমুখি দেশকে হতে হবে।”

আমরা সবাই জানি, মূলত কর্পোরেটদের দেওয়া ঋণ আদায় করতে না পেরে লক্ষ-লক্ষ কোটি টাকা ব্যাংকগুলোর খাতা থেকে মুছে দেওয়া হয়। ২০১০ সাল থেকে ২০২০ সালের মধ্যে বকেয়া ঋণ আদায় করতে না পেরে ব্যাংকগুলো তাদের খাতা থেকে মুছে দিয়েছিল ৮৮৩১৬৮ কোটি টাকার অনাদায়ী ঋণ, যার মধ্যে মোদী জমানায় শুধু ২০১৯-২০ অর্থবর্ষেই মোছা হয়েছিল ২৩৭২০৬ কোটি টাকা, এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রের ব্যাংকগুলোর অংশ ছিলো ৭৫ শতাংশেরও বেশি। এমএসপি আইনসিদ্ধ হওয়ার মধ্যে যাঁরা অর্থনীতির বিপর্যয়ের কথা ভেবে আতঙ্কিত হচ্ছেন, ব্যাংকগুলোর এই বিপুল ক্ষতির জন্য কর্পোরেট শঠতার বিরূদ্ধে কোনো প্রশ্ন তাঁরা কি কখনো তুলেছেন?

কৃষিকে কর্পোরেটদের হাতে তুলে দেওয়ার মধ্যে, কৃষির বাজারমুখী সংস্কারের মধ্যে যাঁরা কৃষির পরিত্রাণ দেখতে পাচ্ছেন, তাঁরা কি বিশ্বের অন্যত্র এর পরিণাম সম্পর্কে অবহিত আছেন? বিশ্বের অন্যান্য স্থানে, বিশেষভাবে উন্নত যে দেশ গুলোতে কৃষির বাজারমুখী জোরালো সংস্কার হয়েছিল, কৃষির কর্পোরেট চালনা প্রাধান্য পেয়েছিল, সেখানেও কি কৃষি ও কৃষকদের মঙ্গল হয়েছিল? কৃষি বিশেষজ্ঞ দাবিন্দার শর্মার বক্তব্য এক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য — “আমেরিকা, কানাডা, ইউরোপ ও চীনে কৃষির বেসরকারিকরণ ব্যর্থ হয়েছে। ভারতও এর ব্যতিক্রম নয়; আর তাই কৃষকদের খরচ ও লাভের পরিমাণের বাস্তবতাকে কৃষি নীতির অঙ্গ না করলে কৃষি ক্ষেত্রের সমৃদ্ধি ঘটবে না।”

তাছাড়া, এমএসপি আইনসিদ্ধ হলে কৃষকদের অভাবি বিক্রিও ভালোমাত্রায় হ্রাস পাবে। এমএসপি-র আইনসিদ্ধতা জনিত সরকারের ব্যয়কে শুধুই খরচ হিসেবে দেখলে চলবে না। শিল্পক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের ভাঁটা চলছে; বিশেষভাবে নোট বাতিল এবং করোনা কারণে লকডাউনের পর এই ক্ষেত্রের অবস্থা আরো শোচনীয় হয়েই উঠেছে। এই ক্ষেত্র কৃষিক্ষেত্র থেকে উৎখাত হওয়া মানুষদের টেনে নিতে পারছে না। কৃষিক্ষেত্রে সরকারের বেশি বিনিয়োগ মানে এই ক্ষেত্রে বেশি কর্মসংস্থান, কৃষকদের আয় বৃদ্ধি এবং অর্থনীতিরও শ্রীবৃদ্ধি। বছরের পর বছর নিজেদের ক্ষতি স্বীকার করে যাঁরা আমাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করে বাঁচিয়ে রেখেছেন, তাঁদের জন্য এমএসপি-র ভার নেওয়াটা সরকারের পক্ষে এক আবশ্যকীয় দায়িত্বের পালনই হবে। মোদী যে “এমএসপি ব্যবস্থাকে আরো কার্যকরি করা”র কথা বলছেন, এমএসপি-র আইনসিদ্ধতা হবে সেই লক্ষ্যে সবচেয়ে ফলদায়ক পদক্ষেপ।

- জয়দীপ মিত্র

Cryptocurrency_0

(ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রচলন এক নতুন ব্যাপার, আর এনিয়ে নতুন আলোচনাও উঠছে। এসম্পর্কে এখনই ঠিক-বেঠিক, ভালো-মন্দ ইত্যাদি অবস্থান না নিয়ে এখানে চর্চার এক প্রাথমিক প্রতিবেদন পরিবেশন করা হল। লিখেছেন অনিন্দ্য ভট্টাচার্য)

কতকটা নিঃশব্দে কিন্তু ত্বড়িত গতিতে ‘ক্রিপ্টোকারেন্সি’ বা ‘ডিজিটাল মুদ্রা’র অবাধ ব্যবহার বেড়ে চলেছে। বহুজনের এখনও এবিষয়ে ধারণা অস্পষ্ট। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রকে এনিয়ে বিস্তারিত আলোচনাও হয়েছে। সরকার ভাবছে কড়া নিয়ন্ত্রণের কথা। বাস্তবতা হল, ‘ডিজিটাল মুদ্রা’ আধুনিক রাজনৈতিক-অর্থনীতির খোলনলচেই বদলে দেওয়ার পথে। যখন বলছি খোলনলচে বদলে দেওয়ার পথে, তখন এর সুদূরপ্রসারী তাৎপর্যকে অনুধাবন করতে হবে।

কী এই ‘ক্রিপ্টোকারেন্সি’? অল্প কথায়, এ হল এক ‘ডিজিটাল মুদ্রা’ যার মাধ্যমে সমাজ-সংসারের যাবতীয় বিনিময়যোগ্য কাজ সারা যায়। অর্থাৎ, কেনাবেচা থেকে শেয়ার বাজারে লিস্টিং, সম্পদ থেকে ওয়ালেট — সর্বত্রই এই ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহারযোগ্য। একে বস্তুরপে দেখা যায় না (যেমনটা চালু মুদ্রা দ্রষ্টব্য), হাত দিয়ে স্পর্শ করা যায়না, পকেটে করে বাজারে নিয়ে যাওয়া যায় না, কিন্তু টাকাপয়সার মতোই একটি সম্পূর্ণ সত্তা। উপরন্তু, এর কোনও কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা নেই। যেমন, টাকাপয়সার মুদ্রণ ও উৎপাদনের ক্ষেত্রে আমাদের দেশে টাঁকশাল আছে, সেগুলোর নীতি নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য কর্তৃত্বকারী সংস্থা আছে (রিজার্ভ ব্যাঙ্ক), ক্রিপ্টোকারেন্সির ক্ষেত্রে এমন কোনও বিধিব্যবস্থা বা নিয়ন্ত্রক সংস্থা নেই। এর যা কিছু উৎপাদন ও যাবতীয় গতিবিধি তা সবই কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ব্যবস্থার মধ্যেই। এ এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতি।

এই ডিজিটাল মুদ্রা কীভাবে কাজ করে? প্রথমে বলে নেওয়া যাক, বহুশ্রুত ‘বিটকয়েন’ কিন্তু ক্রিপ্টোকারেন্সির একমাত্র মুদ্রা নয়, অন্যতম তো বটেই। ‘লাইটকয়েন’, ‘রিপল’ ইত্যাদি বহু ধরনের আরও ক্রিপ্টোকারেন্সি আছে যা বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন মাত্রায় জনপ্রিয়। ২০০৯ সালে জাপানের এক সাইবার বিশেষজ্ঞ সাতোশি নাকামোতো এই মুদ্রার আবিষ্কারক ও তার চলনবলনের কারিগর। মতান্তরে কথিত, সাতোশি নাকামোতো কোনও ব্যক্তি বিশেষ কেউ নন, একটি গোষ্ঠী অথবা কিছু ব্যক্তির সমষ্টি যারা একযোগে এমন একটি ব্যবস্থার প্রবর্তন করেছে। ক্রিপ্টোকারেন্সি আসলে একটি সফটওয়্যার যা ব্লকচেন প্রযুক্তির অধীনে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনায় বিবিধ আদানপ্রদানকারীদের মধ্যে পরস্পরের আস্থার ভিত্তিতে চলমান একটি লেনদেন ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থায় যখন স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে যুক্ত হয়ে মানুষ ক্রিপ্টোকারেন্সি মারফত নানারকম লেনদেনে লিপ্ত হচ্ছেন তখন কিছুটা পরিসরে তার সমাজ-গ্রাহ্যতা তৈরি হয়ে যাচ্ছে। ধরা যাক, চার বন্ধু মিলে ঠিক করল যে তারা পরস্পরের মধ্যে কড়ি দিয়ে লেনদেন করবে। সেই মোতাবেক, তারা নির্দিষ্ট পরিমাণ কড়ির বিনিময়ে পরস্পরের মধ্যে কেনাবেচা শুরু করল। ফলে, ওই চারজনের পরিসরে কিন্তু কড়ি-ব্যবস্থা একটা মান্যতা পেল। যদি এমত অভিমত আরও সম্প্রসারিত হয়, তাহলে এই পরিসরটা আরও বৃহৎ হবে এবং তার একটা সমাজ-গ্রাহ্যতা তৈরি হবে। এবার এই সম্প্রসারণ যদি আরও ব্যাপক হয়, তাহলে এমনটা হতেই পারে যে কড়ির সঙ্গে টাকাপয়সার একটা লেনদেনের ব্যবস্থাও তৈরি হয়ে যাবে। ক্রিপ্টোকারেন্সির ক্ষেত্রে ঠিক এটাই হয়েছে। অর্থাৎ, আপনি যে পরিমাণ ক্রিপ্টোকারেন্সির অধিকারী, তার সঙ্গে টাকাপয়সা বা ডলারের একটা বিনিময় মূল্যও তৈরি হয়ে গেছে। এ এক অভিনব অবস্থা। বলা যায়, রাজনৈতিক অর্থনীতির এক পালাবদলের ইঙ্গিত।

এখন প্রশ্ন হল, ক্রিপ্টোকারেন্সি কি পুঁজিবাদের গর্ভগৃহে আঘাত হানছে? নাকি, পুঁজিবাদের এক নতুন অবয়ব নির্মাণ করছে! এই প্রশ্নের উপযুক্ত উত্তর পেতে হলে আরও কিছুকাল আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু নিঃসন্দেহে অন্তত এ কথাটুকু বলা যেতে পারে — চিরায়ত পুঁজিবাদ থেকে এ অন্যতর এক বাঁক বদল। এনিয়ে বহু বিতর্ক আছে, বিভ্রান্তি আছে, সংশয়ও দেখা দিয়েছে, কিন্তু এটা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার, পুঁজিবাদী অর্থনীতির অন্যতম এক জীবনরেখা যে মুদ্রা ব্যবস্থা, তা যদি কেন্দ্রীয় কোনও নিয়ামক সংস্থার অধীনে আর না থাকে, মুদ্রানীতির ওপর রাষ্ট্রের যদি আর কোনও নিয়ন্ত্রণ না থাকে, তাহলে তা অবশ্যই এক আমূল পরিবর্তনের স্মারক। এতে করে পুঁজিবাদী ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে কিনা, তা অবশ্যই হলফ করে বলার সময় এখনও আসেনি। কিন্তু পুঁজিবাদের যে নতুন এক ঘরানা গড়ে উঠবে, তা কতকটা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। আর তা অন্যান্য আনুষঙ্গিক পরিবর্তনগুলির মধ্য দিয়েও বেশ স্পষ্টত বোঝা যাচ্ছে।

এনিয়ে তো কোনও সংশয় নেই যে আমরা পুরনো ভূ-রাজনৈতিক-সামরিক রাষ্ট্রিক অবয়ব থেকে ক্রমশ প্রবেশ করছি এক ভার্চুয়াল-তথ্যভিত্তিক-প্রযুক্তিআবদ্ধ দুনিয়ার দিকে! সাবেক রাষ্ট্রের সঙ্গে নব-উত্থিত ভার্চুয়াল দুনিয়ার (ফেসবুক, গুগল, মাইক্রোসফট, অ্যাপেল সহ আরও বহু) দ্বন্দ্ব-সংঘাতও বেশ প্রকট। মাঝে মধ্যেই ভার্চুয়াল দুনিয়ার মহারথীদের সংসদে অথবা নানাবিধ নিয়ন্ত্রক সংস্থার দফতরে ডেকে কড়কে দেওয়ার রীতিও সমানে চলেছে। অ্যালগরিদম’এর প্রকৌশলে নৈতিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক নানারকম ঝঞ্ঝা সৃষ্টি করে সমাজকে সরগরম করে তোলা, ‘পেগাসাস’ ধরনের কারুকৌশলে নিভৃতে, গোপনে ব্যক্তিগত তথ্যকে অপহরণ করা, মায় কোনও দেশে রাজনীতির গতিপথকে বদলে দেওয়া — সব ধরনের কাজেই ভার্চুয়াল দুনিয়া এখন এতটাই পারঙ্গম যে সাবেক রাষ্ট্রকে তাদের সামনে অনেক সময়েই বড় অসহায় দেখায়। তদুপরি, প্রযুক্তির বাহুবলে রাষ্ট্র নিজেদের পারদর্শী করতে এইসব ভার্চুয়াল দুনিয়ার সর্বশেষ প্রযুক্তিকে আবাহন করে (যেমন আমাদের দেশে ‘পেগাসাস’এর ব্যবহার), আর এইভাবে তারাও প্রকারান্তরে বেশি বেশি করে নির্ভরশীল হয়ে পড়ে ওইসব ভার্চুয়াল কারবারীদের ওপর। দিনে দিনে এই প্রবণতা রাষ্ট্রের অসহায় আত্মসমর্পণের নামান্তর হয়ে ওঠা সময়ের অপেক্ষা মাত্র।

এই প্রেক্ষাপটে ক্রিপ্টোকারেন্সির ক্রম-জনপ্রিয়তা রাজনৈতিক অর্থনীতির এক নতুন আঙ্গিকের দিকে আমাদের নিয়ে চলেছে। ইতিমধ্যে ‘দ্য গ্রেট রেজিগনেশন’এর নব-প্রবণতা (শুধু আমেরিকায় নয়, ভারত সহ বহু দেশে) এক নতুন ধরনের শ্রমবাহিনীর উত্থানের জমিকে উর্বর করে তুলছে। স্থায়ী চাকরির জমানার অবসান হতে চলেছে, সে জায়গায় গিগ কর্মের উদয়ের সঙ্গে সঙ্গে কাজের বহুমাত্রিকতা জন্ম নিচ্ছে, যেখানে কর্মত্যাগ ও কর্মপ্রাপ্তি বহুজনের পক্ষেই আয়াসসাধ্য হয়ে উঠছে। এক অর্থে, কেউ কেউ বলছেন, এর ফলে শ্রমবাহিনীর দর কষাকষির সক্ষমতাও বাড়ছে। যদিও তা সত্যি কিনা, তা খতিয়ে দেখার আছে; কিন্তু প্রখর এই বাস্তবটাকে কেউ অস্বীকার করতে পারছেন না যে — কাজ আছে চাকরি নেই। এমতাবস্থায় ক্রিপ্টোকারেন্সি যদি আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বিনিময়ের এক অন্যতম মুদ্রা হয়ে ওঠে, তাহলে মানুষে মানুষে অর্থনৈতিক লেনদেনের এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে। কারণ, যেহেতু এই ডিজিটাল মুদ্রার কোনও নিয়ন্ত্রক কর্তা নেই, আদানপ্রদানকারীর পরস্পর আস্থার ওপরেই এর চলাচল, অতএব, তা রাজনৈতিক অর্থনীতির এক নতুন বয়ান নির্মাণ করবে। কেমন হতে পারে সে নতুন দুনিয়া, তা অবশ্য আরও গভীর আলোচনার বিষয়।

Travel passenger group

— রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

সেই ১৯৫০ সাল, যেদিন আমার দাদু গোয়াল ভরা গরু, গোলা ভরা ধান, দীঘি ভরা মাছ, সবজি ভরা ক্ষেত, জোনাকি ভরা বাঁশ ঝাড়, উঠান ভরা পূর্ণিমা, আর — আর তাঁর প্রিয়তম গোবিন্দ, শুধু এই গোবিন্দ মাত্র বুকে বেঁধে নিয়ে চিরদিনের মতো তার চৌদ্দ পুরুষের অস্তিত্ব বিসর্জন দিয়ে “হিন্দুস্তান” নামক ভূ-খন্ডে উদ্বাস্তু হয়েছিলেন তখন তার টানটান শিরদাঁড়া কি হাঁটুতে নেমে গিয়েছিল? তিনি গোবিন্দ প্রাণ মানুষ। তিনি রোদনের লোক নন। কিন্তু আমার বুকে আজও রোদন সমুদ্রের ঢেউ। আমার কলিজার কান্না শতাব্দী ছুঁই ছুঁই। এখন আর রোদন নয়, জ্বলন।

অমিত শাহ বলছেন, এই তো, এই জন্যেই তো আমরা ‘সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন আনছি’ যাতে আর কারো জীবনে এরকম না ঘটে।

আমাদের এমনধারা বংশানুক্রমিক সর্বনাশ হল কোন মহামারিতে? সে এক বিষাক্ত বীজ আর এস এস। হিন্দু মহাসভা, শ্যামাপ্রসাদ — এদের প্রসাদ উদ্বাস্তুরা মহা আশ্বাসে খেল। আর ভারত, ভারতবর্ষ রইল না। হল হিন্দুস্তান। ধর্মান্তরি হওয়ার চাইতে দেশান্তরী হওয়া বেছে নিয়ে আমাদের পূর্বজরা কি পেলেন আর কি দিলেন দেখি। ধর্মাবেগের এই বিবেচনাহীন কাজের পরিণামে আমরা আমাদের প্রজন্মকেও অশেষ দুর্গতির মধ্যে টেনে নামাচ্ছি। চূড়ান্ত অনিশ্চয়তায় আমাদের তরুণ যুবকেরা তাড়িত হচ্ছে। স্বচ্ছ জীবন যাপন করতে পারছে।

বারো তেরো সদস্যের ভার নিয়ে আমার দাদু কোথায় কার কাঁধে ভর দিলেন? শ্যামাপ্রসাদের বাড়ীতে? ভর দিলেন লোকে গিজগিজ করা রিফিউজি ক্যাম্পের গহ্বরে। ভারত আর পাকিস্তানের সমস্ত বর্ডার এরিয়া জানে কী নারকীয় দিন তারা কাটিয়েছে। আর মাত্র একটি ছবি দেবো।

শিলচরে বারো ঘর এক উঠোনের একটা ঘরে মাস কয়েক বাস করার সুবাদে এক উদ্বাস্তু মহিলার কাহিনী শুনেছিলাম, সে কাহিনী যেমন মর্মান্তিক তেমনি বলা এত বছর বাদেও কঠিন। অথচ অমিত শাহরা বাধ্য করছেন আমার শোনা এক মর্মগাথা আবার শোনাতে। সে যেমন মর্মান্তিক, তেমনই করুণ। আমাদের জীবনে আর কোনো গোপন কথা রইল না। এই সরকার আমাদের একেবারে উলঙ্গ করে মুখটি চেপে দিতে চাইছে। দিলীপ ঘোষ বলছেন যাদের জন্মের ঠিক নেই তারাই কাগজ দেখাতে চাইছে না।

শিলচরের সেই বারো ঘরের একটি ঘরে একটি ন’মাসের বাচ্চা রাতভর কেঁদেই চললছে। মায়ের বুকে একফোঁটা দুধ নেই। দুধ না থাকা মায়ের বুকে বিশ্বের ক্ষুধা। হা করা মুখে ঢোক গিলবার রসটুকুও নেই। কোনো প্রতিবেশী একটুখানি বার্লি যোগাড় করে এনে দিয়েছেন বাচ্চার কান্নায় অতিষ্ঠ হয়ে। ছ্যাঁচড়াতে ছ্যাঁচড়াতে উঠে সন্তানটিকে খাওয়াবেন — মহিলার জবানীতে “জানো গো মা, সেই বার্লি খাওয়াতে বাটিটা মেয়েটার মুখে ধরেছি তো বাটি আমার মুখে উঠে এলো, এক চুমুকে সেটা আমি নিঃশেষ করে দিলাম”।

কী অমিত শাহ, দিলীপ ঘোষ এই তো আপনাদের হিন্দুস্তান না?

সে মায়েরই আরও এক ন'বছরের বালিকা ছিল। রিলিফ ক্যাম্প থেকে ঘরের কেউ কেউ দেওর সেজে সে-ঘরে আসতেন। উদ্বাস্তুকে সাহায্য করা হিন্দুস্তানের নৈতিক কর্তব্য কিনা। প্রতি সন্ধ্যায় একবার করে এসে বৌদিকে ভালোমন্দ শুধান, মেয়েটাকেও একটু আদরটাদর করেন। বাচ্চা তো। মহিলার জবানীতে — “রান্না করতে করতে আমি দেখি নীতুকে চাদরে ঢেকে কোলে তুলে নেয়। চাদর নড়াচড়া করে। মাথায় আমার আগুন জ্বলে। কিন্তু চুপ করে যাই, নইলে যে আবার বাচ্চার বার্লি খেয়ে নেব।”

কত হাততালি পেয়েছেন অমিত শাহ বাবা? এক কোটি ত্রিশ? ন'বছরের মেয়ে এখন বুড়ি। ডেকে এনে সাক্ষী দেওয়াবো? তদন্ত কমিটি গড়বেন? সে অনেক হ্যাপা, তার চেয়ে গুলি চালানো নিরাপদ। জনসংখ্যাও কমে। গৌরী লঙ্কেশ।

আমার শিলচরের সেই মা বেঁচে নেই। আমি তাঁর বস্ত্র হরণ করলাম। তাঁকে উলঙ্গ করে দিলাম। আমার পাপের সীমা নেই। ক্ষমাও হয় না। সেই তিনিই শেখালেন —

রাজা তোর কাপড় কোথায়?

- প্রতিমা ভট্টাচার্য
(লেখিকা দীর্ঘজীবন কাটিয়েছেন আসামে, অধুনা অবসরপ্রাপ্ত, শেয়ার করতে চেয়েছেন নিজের অনুভব, উপলব্ধি)

president of Honduras

হন্ডুরাসের জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মদতপ্রাপ্ত রক্ষণশীল ও নয়া-উদারবাদী শক্তিকে পরাজিত করে বামপন্থী লিবার্টি এবং রিফাউন্ডেশন (লিব্রে) পার্টির প্রথম মহিলা রাষ্ট্রপতি হিসাবে জায়োমারা কাস্ত্রোকে নির্বাচিত করেন। লিব্রে পার্টির কাস্ত্রো ৫৩ শতাংশ ভোট পেয়েছেন যেখানে বিপক্ষ পার্টি ২০ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছে।

ল্যাটিন আমেরিকায় যুক্তরাষ্ট্রীয় সাম্রাজ্যবাদী প্রচেষ্টার ওপর এটা একটা প্রবল ধাক্কা। কাস্ত্রোর স্বামী ম্যানুয়েল জেলায়া প্রেসিডেন্ট পদে বহাল থাকাকালীন তাঁকে ২০০৯ সালে মার্কিন মদতপুষ্ট একটি অভ্যুুত্থানে (ক্যু-দেতা) ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ২০০৯ সালের ২৮ জুন হন্ডুরাসের বিশেষ ফোর্স তাঁকে তাঁর বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে কোস্টারিকায় নির্বাসিত করে। এরপর দক্ষিণপন্থী পার্টির নেতাকে সুরক্ষিতভাবে রাষ্ট্রপতি পদে তারা এক প্রহসনমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে বসিয়ে দেয়।

২০১৭ সালের নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হওয়ায় জনতা প্রবল প্রতিবাদের মাধ্যমে পুনর্নির্বাচন দাবি করে। দক্ষিণপন্থী "হন্ডুরাসের জাতীয় পার্টি"-র জুয়ান অরল্যান্ডো হার্নান্ডেজ কার্ফু জারি করে এবং প্রতিবাদীদের ওপর প্রবল হিংসা প্রয়োগ করে ৩০ জনকে হত্যা করে। তৎসত্বেও অরল্যান্ডো দ্বিতীয়বার ক্ষমতাসীন হয়।

লিব্রে পার্টি ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়, ন্যাশনাল পপুলার রেসিস্ট্যান্স ফ্রন্ট নামক একটি বামপন্থী যৌথ সংগঠনের (এফএনআরসি) যুক্তমঞ্চ দ্বারা।

লিব্রে পার্টির কাস্ত্রো এমন একটি সময় নির্বাচিত হলেন যখন হন্ডুরাস নয়া-উদারবাদী কর্মসূচীর জন্য দশ বছর ধরে “নয়া-উদারবাদী নরক”-এ পরিণত হয়েছে। ল্যাটিন আমেরিকার এই দেশে ঊর্ধমুখী মূল্যবৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি এবং অবাধ খুনখারাপি, ধর্ষণ ইত্যাদি ঘটিয়ে চলেছে — মার্কিন মদতপুষ্ট সেনাবাহিনী ও পুলিশ তথা হন্ডুরান সিকিউরিটি ফোর্স।

== সমাপ্ত ==

খণ্ড-28
সংখ্যা-43