একদিকে কেন্দ্রের ‘স্বচ্ছ ভারত’ তো অন্য দিকে রাজ্যের ‘নির্মল বাংলা’র সরকারি শ্লোগান – তবু সাফাইকর্মীরা পড়ে রয়েছেন তিমিরে। রাজ্য সরকার গত ৩০ জুন শ্রম দপ্তর কর্তৃক নির্দেশ দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি পৌরসভাতে কর্মের দক্ষতা অনুযায়ী তিন ধরনের ক্যাটাগরিতে শ্রমিকদের দৈনিক ন্যূনতম মজুরি কত হবে। বাঁকুড়া জেলার সমস্ত পৌরসভাগুলিকে দুটি নির্দিষ্ট জোনে ভাগ করা হয়েছে। এতকিছুর পর বিষ্ণুপুর পৌরসভার সাফাই ও অন্যান্য জরুরি বিভাগের কর্মীরা গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে আন্দোলনে নামেন দৈনিক ৩৪২ টাকা মজুরি চালু করতে হবে এবং সরকারী নির্দেশ মোতাবেক ৪,৫০০ টাকা পুজোর অনুদান দিতে হবে দাবিতে। পৌরকর্তৃপক্ষের কাছে কেবল ফাঁকা আশ্বাস ছাড়া ন্যূনতম সম্মান পর্যন্ত পাননি শ্রমিকদের নেতৃত্ব। এবারের দুর্গাপূজার কয়েকদিন আগে হটাৎ খবর হয় পুজোর অনুদান দেওয়া হবে মাত্র ১,২০০ টাকা। শ্রমিকদের অসন্তোষ বেড়ে হরতালের রূপ নেয়। লাগাতার তিনদিন আন্দোলন চলার পর পুলিশের উপস্থিতিতে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে বেতন বৃদ্ধি ও বকেয়া অনুদানের টাকা মেটানোর আশ্বাস শোনা যায় পুনরায়। পুজোর মুখে শহরবাসীর কথা মাথায় রেখে আন্দোলন সাময়িকভাবে স্থগিত করেন এআইসিসিটিইউ অনুমোদিত বিষ্ণুপুর পৌরসভা সংগ্রামী শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন।
পুজোর ঠিক পরেপরেই বাঁকুড়া পৌরসভার (এআইটিইউসি অনুমোদিত) এক ইউনিয়নের সাথে বৈঠক করে ‘বাঁকুড়া বিষ্ণুপুর সোনামুখী পৌরসভা শ্রমিক কর্মচারী অধিকার মঞ্চ’ গঠন করা হয়। এই মঞ্চে যুক্ত হয় সিআইটিইউ অনুমোদিত অন্য একটি ইউনিয়ন। সোনামুখীর সাফাই কর্মীরাও এই মঞ্চকে স্বাগত জানায়। মঞ্চের তরফ থেকে পোষ্টার ও দেওয়াল লিখন করে ২৯ অক্টোবর ডিএম ডেপুটেশনের ঘোষণা করা হয়। এই যৌথ আন্দোলনের মেজাজ ছিল শাসক গোষ্ঠীর কাছে যেন এক অশনিসংকেত। ২৯ তারিখ বাঁকুড়া শহরে হিন্দু স্কুলের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয় চারশো শ্রমিককে একত্রিত করে। সেখানে মহিলাদের উপস্থিতি ছিল কম করে তিন ভাগের এক ভাগ। বিষ্ণুপুর থেকেই দেড়শত অধিক শ্রমিক যোগ দেন ঐ মিছিলে। মিছিল শেষে মাচানতলা মোড় আংশিকভাবে অবরুদ্ধ করে চলে সভা। গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন সাথী সাগর দা। বক্তব্য রাখেন বাবলু ব্যানার্জী সহ অন্যান্য বক্তারা। ডেপুটেশনে প্রতিনিধিত্ব করেন সর্বানী সিনহা, ফারহান খান ও জিতেন। মঞ্চ থেকে ঘোষণা করা হয়, জেলা প্রশাসন আশ্বাস দিলেও যতক্ষণ না সরকার নির্ধারিত মজুরি চালু করা হচ্ছে এবং বিষ্ণুপুর পৌরসভার সাফাই ও অন্যান্য অস্থায়ী কর্মীদের বকেয়া অনুদান মেটানো হচ্ছে, ততদিন এই আন্দোলন আরো তীব্র করা হবে। আগামীতে প্রয়োজনে একসাথে সবকটি পৌরসভাতে হরতাল করবে শ্রমিকরা জানান ফারহান।