বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে লড়াইটা এক সামাজিক ও রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা হওয়া উচিত
Against Privatisation

[ গত ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ অল ইণ্ডিয়া ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন (এআইবিইএ)-এর পশ্চিমবঙ্গ ইউনিট আয়োজিত বেসরকারিকরণ বিরোধী এক ওয়েবিনারে আমন্ত্রিত বক্তা কমরেড দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের ভাষণ ]

অল ইণ্ডিয়া ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের জন্ম ভারতবর্ষের স্বাধীনতার ঠিক এক বছর আগে। অল ইন্ডিয়া ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস ১৯২০ সালেই তৈরি হয়ে গিয়েছিল। ভারত যখন ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তির জন্য সংগ্রাম করছিল, ভারতীয় শ্রমিক শ্রেণীর বিভিন্ন অংশ নিজেদের অধিকারের লড়াইকে দেশের স্বাধীনতাকামী এবং ভারতের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ও ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক সম্পদের জাতীয়করণের লড়াইয়ের সঙ্গে সংযুক্ত করেছিল। ১৯৪৭এ জাতীয় স্বাধীনতার পরে ভারতের মূল অর্থনৈতিক ক্ষেত্রগুলোর ধারাবাহিক জাতীয়করণের জন্য মঞ্চ তৈরি হয়ে গেল। ১৯৫৬ সালে জীবন বীমার জাতীয়করণ হয়। আর তার পর পর ১৯৬৯ সালে ব্যাঙ্ক এবং ১৯৭৩ সালে কয়লাখনি জাতীয়করণ হয়। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন এই অভিমুখই নির্দিষ্ট করে দিয়েছিল। আজ এই অভিমুখকে মারাত্মক বিপজ্জনক গতিতে একেবারে উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। রাজনীতিতে জাতীয়তাবাদের উচ্চকিত আবাহণ আসলে ভারতীয় অর্থনীতির মূল ক্ষেত্রগুলির আগ্রাসী বি-জাতীয়করণ বা বেসরকারিকরণের রণহুঙ্কার।

পুঁজি গড়ে তোলায় ব্যাঙ্ক একটা মুখ্য ভূমিকা পালন করে। তারা সাধারণ মানুষকে সঞ্চয় ব্যাঙ্কে রাখতে আকৃষ্ট করে তা থেকে ঋণ পুঁজি তৈরি করে। ব্যাঙ্ক জাতীয়করণের মাধ্যমে ব্যাঙ্কগুলি স্থায়িত্ব ও নিরাপত্তা পেয়েছে এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক ও সম্পর্কিত গ্রামীণ ও সমবায় ব্যাঙ্কের অজস্র শাখা বিস্তারের মাধ্যমে ব্যাঙ্কশিল্প বিপুল প্রসার লাভ করেছে। যদি ব্যাঙ্কঋণ কৃষি এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পগুলিকে সহায়তার উদ্দেশ্যে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ক্ষেত্রগুলিতে চালিত হত তাহলে সুষম অর্থনৈতিক উন্নয়নে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি আরও বড় ভূমিকা রাখতে পারতো। প্রকৃতপক্ষে সেটা কখনোই ঘটেনি। বেসরকারি বড় বড় বাণিজ্যিক সংস্থা ব্যাঙ্কঋণের বেশিরভাগটা ছিনিয়ে নিয়েছে। ক্রোনি পুঁজির উত্থানের পর থেকে, কোম্পানিগুলির নেওয়া ঋণ ক্রমশ বেশি বেশি করে ‘খেলাপী’ ঋণে রূপান্তরিত হচ্ছে, সুললিত ভাষায় যাকে ‘নন-পারফর্মিং অ্যাসেট’ বা এনপিএ বলা হয়। আর পরের পর সরকারগুলো এইসব ঋণের বেশির ভাগটাই ‘রাইট অফ’ করার (ব্যাঙ্কের হিসেবের খাতার বাইরে রাখার) পথেই হেঁটেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যাঙ্কের সংকটের এটাই মূল কারণ। আর মোদী সরকার এই সংকটকেই, ব্যাঙ্কগুলিকে ধারাবাহিকভাবে বি-জাতীয়করণ বা বেসরকারিকরণের পথে ঠেলে দিতে কাজে লাগিয়ে চলেছে।

অন্যভাবে বললে, ক্রোনি পুঁজি ব্যাঙ্কিং নীতিকে পথভ্রষ্ট ও বিকৃত করার জন্য যে সংকট তৈরি হয়েছে, তাকে গোটা ব্যাঙ্কিং পরিষেবা ক্ষেত্রটিকে দুর্বল ও ধ্বংস করা এবং এটিকে আরও সরাসরি কর্পোরেট নিয়ন্ত্রণে আনার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। শোধ না করা ঋণের পাহাড়ের ওপর বসে থাকা বাণিজ্য সংস্থাগুলো, যাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ সদস্য সরকারের মদতে এমনকি দেশ ছেড়ে পালাচ্ছেন, এখন তাদের হাতে ব্যাঙ্কিং শিল্পের লাগাম তুলে দেওয়া হচ্ছে। এতদিন ঋণ দখল করেছে, এখন তারা নিজেরাই ঋণ কারখানা নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করবে। ব্যাঙ্কিং-সংকটের সমাধানের নামে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার আসল তাৎপর্য এটাই! সংযুক্তিকরণ (বড় ব্যাঙ্কের সঙ্গে ছোটগুলোকে মিশিয়ে দেওয়া) এবং গোটা ব্যাঙ্ক ব্যবসাকে সংহত করে এক সুতোয় গেঁথে ফেলা, ‘রাইট অফ’ করা ও খেলাপি ঋণ কিনে নেওয়া থেকে শুরু করে প্রাইভেট ব্যাঙ্কগুলোর জন্যে সুযোগ সম্প্রসারিত করা ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলোর সরাসরি বেসরকারিকরণ — ব্যাঙ্ক ব্যবস্থার সংস্কারের এইসব পদক্ষেপের নিশানা হচ্ছে, যাকে আমরা এককথায় বলতে পারি, ব্যাঙ্ক শিল্পের বেসরকারিকরণ। ব্যাঙ্ক ব্যবস্থার পাশাপাশি বীমা ক্ষেত্রটিরও বেসরকারিকরণ চলছে।

আর্থিক ক্ষেত্রের বেসরকারিকরণ মোদী সরকারের ধ্বংসাত্মক বৃহত্তর বেসরকারিকরণ উদ্যোগের অপরিহার্য অংশ। স্বাস্থ্য শিক্ষা পরিবহন থেকে পরিকাঠামো নির্মাণ ও সংরক্ষণ — সবক্ষেত্রেই সরকার অত্যন্ত দ্রুতগতিতে নিজের দায় ঝেড়ে ফেলছে এবং অর্থনীতিটাকে বেসরকারি খেলুড়েদের হাতে তুলে দিচ্ছে। যেহেতু নয়া উদারবাদী নীতিগুলি এক বিরাট সংকটে পড়েছে এবং বেসরকারিকরণের অবস্থান ক্রমশ উন্মোচিত ও একটি খারাপ ধারণা হিসেবে নিন্দিত হচ্ছে, পর পর সরকারগুলো সরকার-বেসরকারি অংশীদারিত্ব বা পিপিপি ধরণ, বিলগ্নীকরণ, আউটসোর্সিং-এর মত বাঁকা পথ নিয়েছে। আর এক্ষেত্রে নবতম সংযোজন মোদী সরকারের সাম্প্রতিকতম ‘অ্যাসেট মানিটাইজেশন’ নীতি। গুপ্ত বেসরকারিকরণের এইসব পদক্ষেপে, রাষ্ট্রীয় মালিকানা অক্ষুণ্ণ থাকার এক মিথ্যা গল্প জিইয়ে রেখে সরকার মানুষকে বিভ্রান্ত করছে আর তলে তলে কার্যকরী নিয়ন্ত্রণ আর স্থায়ী রাজস্ব বেসরকারি হাতে তুলে দিচ্ছে।

সম্প্রতি প্রকাশ্যে আসা ‘ন্যাশনাল মানিটাইজেশন পাইপলাইন’ প্রকল্পটিকে একটু নিবিষ্ট চোখে খুঁটিয়ে দেখা যাক। এই প্রকল্পের অভীষ্ট লক্ষ্য হল, গড়ে ন্যূনতম চল্লিশ বছরের জন্য ব্যক্তিগত লাভের উদ্দেশ্যে সরকারি বা জাতীয় সম্পদ ভাড়া দেওয়া। ঐ লিজ-এর মেয়াদ ৪০ বছরে পর পর দুটি ভারতীয় প্রজন্ম ভোটাধিকার প্রাপ্তির উপযুক্ত হয়ে উঠবে! লিজের জন্য তালিকাভুক্ত সম্পদগুলি হল — সড়ক ও রেল পরিবহন, জাহাজ বন্দর ও বিমান বন্দর, পাওয়ার ট্রান্সমিশনের নেটওয়ার্ক, টেলিকম্যুনিকেশন এবং ইন্টারনেট পরিষেবা সংযোগের মত ১৩টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। বেসরকারি কর্পোরেশনগুলোর, এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সম্পদগুলির বিপুল সম্ভার শোষণের একচেটিয়া নিরঙ্কুশ অধিকার পাওয়া আসলে খুব বিরাট মাপের সম্পদ লুঠের প্রকাশ্য কর্মসূচি ছাড়া আর কিছু নয়! এই তথাকথিত ‘অ্যাসেট মানিটাইজেশন’এর মাধ্যমে আগামী চার বছরে সরকারি কোষাগারে যে অর্থ জমা পড়বে বলে দেখানো হচ্ছে, তা ভারতের দুটি শীর্ষস্থানীয় কর্পোরেট সংস্থা ঐ সময়ে, তাদের সম্পদ অর্জনের বর্তমান হারে যা আয় করবে তার দশভাগের মাত্র একভাগ, নতুন করে দখল নেওয়া সম্পদ থেকে অর্জিত অতিরিক্ত আয়কে হিসেবের বাইরে রেখেই বলা যায়। সরকারি কোষাগার যখন ধুঁকবে, বিজেপি’র বেনামে কর্পোরেট ক্যাশ সংগ্রহ করা ইলেক্টোরাল বন্ডগুলো তখন ফুলে ফেঁপে উঠবে, যেহেতু মোদী সরকার তার ঘনিষ্ঠতম কর্পোরেট বন্ধুদের দেশের মূল্যবান সম্পদ উপহার দিয়ে দিচ্ছে।

বেসরকারিকরণ চাকরির বাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং শ্রমিকদের অধিকারকে ক্ষয় করবে। সম্পদের হস্তান্তরের সঙ্গে সঙ্গে ইউনিয়নের ও যৌথ দরকষাকষির অধিকার সহ নিরাপদ চাকরির সুযোগ ক্রমশ অদৃশ্য হয়ে যাবে। সরকারি চাকরির সুযোগ সংকুচিত হয়ে যাওয়া মানে, সংরক্ষণের মাধ্যমে নিপীড়িত শ্রেণীর মানুষদের এমনকি সীমিত পরিমাণে যেটুকু সামাজিক গতিশীলতা ও ন্যায়বিচার পাওয়ার সুযোগ আছে সেক্ষেত্রেও বিপর্যয়কর পরিবর্তন ঘটতে থাকবে। আর এই সংকটজনক পরিবর্তন ছাড়াও অসংগঠিত ক্ষেত্রে আসবে আরও বড় আঘাত। লক্ষ লক্ষ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, রাস্তার ফেরিওয়ালা, দিনমজুরি উপার্জন করেন যারা, সকলের জীবিকায় নেমে আসবে এক বিপর্যয় যেহেতু তাদের নতুন ভাবে কর্পোরেট অধিকৃত সম্পদের পরিসর থেকে উৎখাত হতে হবে। বেসরকারিকরণের প্রভাবে এইভাবে একদিকে যেমন কর্পোরেটদের সম্পদ ফুলে ফেঁপে উঠবে, আরেক দিকে জনসাধারণের দুর্দশা আরও বাড়িয়ে তুলবে। বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে সংগ্রামে এই বৃহত্তর আর্থ-সামাজিক মাত্রাটিকে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। যদি আমরা মোদী সরকারের বেসরকারিকরণ হামলাকে রুখতে ও তার অভিমুখ পাল্টে দিতে ইচ্ছুক থাকি, এটা নিশ্চয়ই সম্ভব এবং একান্তই দরকার।

কর্পোরেট ক্ষমতার সম্প্রসারণ ও তাকে সংহত তথা সুদৃঢ় করার স্বার্থেই বেসরকারিকরণ। বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে লড়াই তাই কর্পোরেট শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই। আর এই সংগ্রামে, ব্যাঙ্ক কর্মচারী ও শ্রমজীবী শ্রেণীর ব্যাপকতর অংশ চলমান কৃষক আন্দোলনে দৃঢ় মৈত্রীবদ্ধ সহযোগী হয়ে উঠেছে। গত প্রায় একবছর ধরে, ভারতের কৃষকরা আদানি-আম্বানি কোম্পানিরাজের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ঐক্য ও দৃঢ় সংকল্পের সঙ্গে এক ঐতিহাসিক প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন। এই যুদ্ধ মোদীরাজের কৃষক বিরোধী ও কর্পোরেট-মুখী চরিত্রকে একেবারে নগ্ন করে দিয়েছে। নরেন্দ্র মোদী বলেই চলেছেন, তার সরকারের কোনও ব্যবসায়ে থাকার মতলব নেই। দেশবাসী এখন খুব ভালোই বুঝেছেন মোদী সরকার এখন কোন্ ব্যবসায়িক লেনদেনের মধ্যে আছে। সরকারটা সারাক্ষণ গালভরে ‘আত্মনির্ভর ভারতের’ শ্লোগান আউড়ে, তার আড়ালে আসলে কর্পোরেটদের স্থায়ী সমর্থন কেনার জন্যে জাতীয় সম্পদ বেচায় ব্যস্ত। আরও বেশি বেশি করে মানুষ এই খেলার গূঢ় অর্থ অনুধাবন করছেন ও দেশবাসীর টাকায় দশকের পর দশক ধরে গড়ে ওঠা জাতীয় সম্পদের এই মর্মপীড়াদায়ী কলঙ্কজনক বিক্রির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত ব্যাঙ্ক কর্মচারীদের, জাতীয় সম্পদ বেচা, এই বিদেশি ও ভারতীয় কর্পোরেট লুঠেরাদের কাছে ভারতকে নিলামে তোলা বন্ধের জন্য বৃহত্তর জনগণের প্রচারাভিযানে সামিল হতে হবে।

কৃষকদের আন্দোলন থেকে আমাদের সকলের একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শেখার আছে। এটি শুরু হয়েছিল মোদী সরকারের কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে। কিন্তু যখন সরকার কৃষকদের কথা শুনতে অস্বীকার করল এবং কৃষক আন্দোলনকে কৃষক বিরোধী প্রচার ও দমনপীড়ন দিয়ে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করল, কৃষকরা খুব দ্রুতই বুঝে নিয়েছিলেন যে আইন বাতিলের জন্য এই সরকারটাকে ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করতে হবে। আজ কৃষক আন্দোলন মোদী সরকারের বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী প্রতিস্পর্ধা হয়ে উঠেছে এবং রাস্তায় থেকে সরকারের উদ্দেশে প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছে। ব্যাঙ্ক কর্মচারীদের আন্দোলন গত তিন দশক ধরে শ্রমিক শ্রেণীর প্রতিরোধের পুরোভাগে আছে এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি যদি এখনও ব্যাঙ্কিং পরিষেবাক্ষেত্রে আধিপত্যকারী অবস্থানে থাকে, ব্যাঙ্কগুলিকে বাঁচিয়ে রাখার কৃতিত্ব নিশ্চিতপক্ষে ব্যাঙ্ক কর্মচারীদের ঐক্যবদ্ধ ও দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ লড়াইয়ের। কিন্তু এখন সরকারের সর্বাত্মক হামলার মুখে প্রতিরোধকেও হতে হবে সর্বাত্মক। কৃষক আন্দোলনের মতো, শ্রমিকশ্রেণীর আন্দোলনকেও হয়ে উঠতে হবে এই সরকারের শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ।

বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রাম শুধু চালু ব্যবস্থাকে রক্ষা করার জন্য রক্ষণাত্মক সংগ্রাম নয়। এটি কর্পোরেটদের সেবা নয়, জনগণকে পরিষেবা দেওয়ার উদ্দেশ্যে ব্যাঙ্কিং পরিষেবাক্ষেত্রের নীতি ও অগ্রাধিকারে পরিবর্তন আনারও এক সংগ্রাম। এটি সেই ঋণদান রীতি বা আদর্শ পরিবর্তনের সংগ্রাম যে রীতি ঋণগ্রস্ত কৃষককে আত্মহত্যার পথে ঠেলে দেয়, মাইক্রোফিনান্স প্রকল্পগুলিকে অত্যাচারী চক্রে পরিণত করে, যার নিশানা গরিব মহিলারা যারা জীবিকার প্রয়োজনে ঋণ নিয়েছেন। এই নীতির সৌজন্যে, ভর্তুকিযুক্ত ঋণ নিয়ে ক্রোনি পুঁজিপতিরা পালাচ্ছেন এবং মেগা ঋণখেলাপীদের পর্যায়ক্রমিক বেলআউট প্যাকেজে পুরস্কৃত করা হচ্ছে। ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে লড়াই কর্পোরেট শক্তির এবং লাগামছাড়া এই শক্তির সমর্থনে বেড়ে ওঠা ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ব্যাপকতর লড়াইয়ের এক অপরিহার্য অংশ। আমরা চাই এই সংগ্রামে এআইবিইএ এবং ব্যাঙ্ক কর্মচারীদের ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ে বিজয়। এই লক্ষ্যে আমাদের পূর্ণ সংহতির অঙ্গীকার থাকলো।

খণ্ড-28
সংখ্যা-36