সংযুক্ত কিষান মোর্চার ডাকা ২৭ সেপ্টেম্বরের ভারত বনধ কর্মসূচিতে দেশজুড়ে বিরাট সাড়া মিলেছে। দেশব্যাপী সংগ্রামী কৃষক ঐক্যের জাগরণ সংগঠিত হতে দেখা গেল। পশ্চিমবঙ্গেও সর্বস্তরের মানুষের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণে উজ্জীবিত হয়ে ওঠা বনধ পালিত হল । রাজ্য জুড়ে কৃষক, কৃষি শ্রমিক, শ্রমিক, অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক ও কর্মচারী, ছাত্র, যুব, ব্যবসায়ী, মহিলা সংগঠন, এবং বিভিন্ন গণতান্ত্রিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ব্যাপক ও অভূতপূর্ব সাড়া পাওয়া গেছে। বেসরকারি বাস ও যানবাহন একরকম বন্ধই ছিল। দোকান, বাজার, ব্যাংক, বিদ্যালয় এবং মহাবিদ্যালয়গুলি বন্ধ ছিল। অন্তত রাজ্যের ২৪টা জায়গায় জাতীয় সড়ক অবরুদ্ধ ছিল।
বাংলার সব জেলার সব ব্লক এবং প্রধান শহরগুলির জায়গায় জায়গায় ব্যাপক সমাবেশ, প্রতিবাদ সভা, মিছিল, রাস্তা অবরোধ এবং রেল অবরোধ হয়েছে।
রাজধানী কলকাতায়, অখিল ভারতীয় কিষাণ সংঘর্ষ সমন্বয় সমিতির ব্যানারে কৃষক সংগঠনগুলি একত্রিত হয়ে বিভিন্ন স্থানে পথসভা করে এবং অখিল ভারতীয় কিষাণ সংঘর্ষ সমন্বয় সমিতির প্রধান ও দীর্ঘ মিছিলটি মৌলালী মোড় থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত যাত্রা করে ডোরিনা ক্রসিং অবরোধ করে। সেখানে বিভিন্ন কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, যুব, মহিলা, ব্যাঙ্ক কর্মচারী এবং অন্যান্য গণ সংগঠনের নেতৃত্ব মোদী সরকারের নীতির সমালোচনা ও বিরোধিতা করে বক্তব্য রাখেন। কৃষি ও কৃষক স্বার্থ বিরোধী তিনটি আইন অবিলম্বে প্রত্যাহার করা, কৃষিতে কোম্পনীরাজ কায়েম না করা, ফসলের উৎপাদন ব্যয়ের দেড়গুন সহায়ক মূল্য দেওয়া ইত্যাদি দাবিতে মিছিলে শ্লোগান ওঠে, বক্তারা সোচ্চার হন। এছাড়া দাবি তোলা হয়, মানিটাইজেশনের নামে পাইপলাইন প্রজেক্ট বাতিল করতে হবে।
প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী পাঞ্জিপাড়া, রায়গঞ্জ, করণদিঘি (উওর দিনাজপুর), কুলতলি, ভাঙড় (দক্ষিণ ২৪ পরগণা), ভান্ডারটিকুরি, শিরীষতলা, জাহান নগর, নিমো, বর্ধমান শহর, কালনা, আসানসোল, ধুবুলিয়া, কৃষ্ণনগর, বাঁকুড়া শহর সহ পাঁচাল, পুরুলিয়া শহর, ঝাড়গ্রাম, শিলিগুড়ি, নকশালবাড়ি সহ আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, বীরভূম জেলার শতাধিক জায়গায় ব্যাপক বিক্ষোভ, সমাবেশ এবং তীব্র প্রতিবাদী কর্মসূচি সংঘটিত হয়েছে।
বিভিন্ন কৃষক নেতারা সমাবেশে বক্তব্য রাখেন এবং জোর দিয়ে বলেন যে কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক অবৈধভাবে পাস করা ৩টি কালা আইন প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত এবং যতক্ষণ পর্যন্ত সমস্ত কৃষকের সব ফসলের জন্য এমএসপি নিশ্চিত করার জন্য একটি নতুন আইন কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা পাস না করা হবে, ততদিন কৃষকদের বিক্ষোভ এবং সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। বক্তারা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ও প্রক্রিয়াগুলিকে ধ্বংস করার, গণতান্ত্রিক অধিকারকে পদদলিত করার, বিরোধী কণ্ঠস্বরকে দাবিয়ে দেওয়ার, জাতীয় সম্পদকে বিক্রি করার এবং দেশের যুক্ত রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে অস্থিতিশীল করার কেন্দ্রীয় সরকারের প্রচেষ্টার বিরোধিতা ও নিন্দা করেন। “কর্পোরেট ভাগাও, দেশ বাঁচাও” শ্লোগান বারবার উত্থাপিত হয়। মোদী সরকারের কর্পোরেটপন্থী, কৃষকবিরোধী এবং শ্রমিকবিরোধী মনোভাবের তীব্র নিন্দা করা হয়।
দৃঢ়ভাবে দেশের কৃষকদের পাশে দাঁড়াবার জন্য এবং তাদের সংগ্রামী মনোভাবকে উৎসাহী সমর্থনের জন্য বাংলার জনগণকে ধন্যবাদ জানাচ্ছে ও কেন্দ্রীয় সরকার কৃষকদের ন্যায়সঙ্গত ও যুক্তিসঙ্গত দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত কৃষকদের এই সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে, এই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা।