করোনাভাইরাসের অভিঘাত এড়াতে গত বছর লকডাউন ঘোষণা হওয়ার পর দেশে নানা প্রান্তে দেখা গিয়েছিল একই ছবি। রাস্তায় হাজার হাজার পরিযায়ী শ্রমিক। পুরুষদের পাশাপাশি সেই দলে রয়েছেন বিপুল সংখ্যক মহিলাও। কর্মক্ষেত্র ছেড়ে তাঁরা হেঁটে চলেছেন বাড়ির পথে।
সেই ছবি যে জাতীয় অর্থনীতিতে কী ভয়াবহ প্রভাব ফেলেছে, তার আঁচ এবার পাওয়া গেল বেকারত্বের হিসেবে। কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, লকডাউন ঘোষণার পরে এপ্রিল থেকে জুন মাসে মহিলাদের শ্রম-অংশীদারিত্ব ১৫.৫ শতাংশে নেমে এসেছিল। যা ভারতের ইতিহাসে সর্বনিম্ন। প্রতিবেশি বাংলাদেশে এই হার ৩০.৫ শতাংশ। শ্রীলঙ্কায় ৩৩.৭ শতাংশ।
বিশ্বব্যাঙ্কের দেওয়া অন্য একটি হিসেব অবশ্য বলছে, নরেন্দ্র মোদীর প্রধানমন্ত্রিত্বে মহিলা শ্রমিকদের কাজ হারানোর ঘটনা ক্রমশ বেড়েছে। ২০০৫ সালে মনমোহন সিংহ সরকারের জমানায় মহিলা শ্রমিক ছিলেন ২৬ শতাংশেরও বেশি। কিন্তু কোভিড পরিস্থিতির আগেই ২০১৯ সালে তা নেমে আসে ২০.৩ শতাংশে।
গত বছর আনলক পরিস্থিতিতেও মহিলা শ্রমিকদের হালের তেমন বদল হয়নি। কেন্দ্রের দেওয়া তথ্য জানাচ্ছে, গত বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে করোনার কারণে কাজ হারিয়েছেন বহু মহিলা শ্রমিক। ফলে মহিলা শ্রমিকদের অংশীদারিত্ব নেমে এসেছে ১৬.১ শতাংশে। ওই সময় কাজ হারিয়েছেন প্রায় ১৫.৮ শতাংশ মহিলা শ্রমিক। পুরুষ শ্রমিকদের মধ্যে কাজ হারানোর হার ছিল ১২.৬ শতাংশ।
- এই সময়, ৩ আগস্ট ২০২১
পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর প্রশ্নে শীর্ষস্থানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের রাজ্য গুজরাত।
জাতীয় ক্রাইম রেকর্ড বুরোর ২০২০ সালের রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, গত এক বছরে দেশে পুলিশ হেফাজতে ৭৬ জন মারা গিয়েছেন। মৃত্যুর তালিকায় রাজ্যগুলির মধ্যে শীর্ষে রয়েছে গুজরাত। ওই রাজ্যে গত এক বছরে ১৫ জন ব্যক্তি পুলিশ হেফাজতে মারা গিয়েছে। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ (৮ জন)। সেখানে পশ্চিমবঙ্গে ২০২০ সালে পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর সংখ্যা হল ২। রিপোর্ট বলছে, গুজরাতে পুলিশ হেফাজতে যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ৬ জন আত্মহত্যা করেছেন। আরও ছ’জন মারা গিয়েছেন অসুস্থতার কারণে বা চিকিৎসা চলাকালীন। বাকি তিন জনের মধ্যে দু’জনের মৃত্যুর কারণ গ্রেফতারির আগে পাওয়া আঘাত ও এক জনের মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি। যদিও অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের বক্তব্য, যাঁদের মৃত্যু আত্মহত্যা বলে চালানো হচ্ছে তাঁদের অনেকের মৃত্যু সন্দেহজনক। যা গুজরাত পুলিশই নয়, দেশের সব রাজ্যের পুলিশের জন্য প্রযোজ্য। পশ্চিমবঙ্গে যে দু’জন মারা গিয়েছেন, তাঁদের এক জন পুলিশ হেফাজতে ও অন্যজন গ্রেফতারির পরে চিকিৎসা চলাকালীন মারা গিয়েছেন।
রিপোর্ট অনুযায়ী, গত এক বছরে পুলিশের গুলি, লাঠিচার্জে দেশে ৪৭ জন সাধারণ নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। যা তার আগের বছরের চেয়ে ৩১ জন কম। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি নাগরিকের মৃত্যু জম্মু-কাশ্মীরে (২৩ জন)। যাঁদের মধ্যে কুড়ি জন মারা গিয়েছেন পুলিশের গুলিতে। লাঠিচার্জে দেশে মারা গিয়েছেন ১৪ জন। অথচ গতবছর লাঠিচার্জে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৫।
- আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১
নিরাপদতম মেট্রো শহর হিসেবে কলকাতার মুকুটে নব্য-পালক গুঁজে দিলেও গোটা রাজ্যের নিরিখে ভ্রুকুটি টেনেই রাখছে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো (এনসিআরবি)। কলকাতা নিরাপদ শহর। তবে ওই কেন্দ্রীয় সংস্থার দাবি, গত একবছরে রাজ্যে মেয়েদের উপর হিংসাত্মক ঘটনা বেড়েছে।
এনসিআরবি’র রিপোর্ট বলছে, গত একবছরে দেশজুড়ে মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের হার প্রায় ৮.৩ শতাংশ কমে গেলেও দেশের পূর্বাঞ্চলীয় দুই রাজ্য, পশ্চিমবঙ্গ এবং ওড়িশায় গত একবছরে তা বেড়ে গিয়েছে বেশ কিছুটা। এনসিআরবি’র রিপোর্ট বলছে, ২০১৯ সালে এরাজ্যে মহিলাদের উপরে হিংসাত্মক ঘটনার পুলিশে লিপিবদ্ধ সংখ্যা ছিল ২৮,৬৫৯ যা ২০২০ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৩৬,৪৩৯। ওড়িশায় ২০১৯ এবং ২০২০ মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের পরিসংখ্যান যথাক্রমে ২৩,১৮৩ এবং ২৫,৪৮৯। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে — দেশে ২০১৯ সালে মহিলাদের উপরে আক্রমণের সংখ্যা যেখানে ছিল ৪,০৫,৩২৬, গতবছর অর্থাৎ ২০২০ সালে তা নেমে এসেছে ৩,৭১,৫০৩এ। এনসিআরবি’র রিপোর্ট ‘ক্রাইম ইন ইন্ডিয়া’ বলছে — প্রতি একলক্ষে শহর কলকাতায় অপরাধের হার ১২৯.৫। যার শীর্ষে যথারীতি রয়েছে দিল্লী। কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রানাধীন পুলিশ পরিকাঠামোর ঘেরাটোপে থাকা দিল্লীতে ওই অপরাধের হার প্রতি একলক্ষে ১৬০৮.৬। আমদাবাদে ১৩০০.৫, লখনউ ৬৬৬.৬, চেন্নাই ১৯৩৭.১, হায়দরাবাদ ২৩৩.০, মুম্বই ৩১৮.৬, বেঙ্গালুরু ৪০১.৯।
- আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১