চড়িয়াল খাল : সংযোজিত অংশ বুজিয়ে দেওয়া বনাম সংস্কার প্রসঙ্গে কিছু কথা
Chariyal Khal

এই বছরের জুলাই শেষ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত প্রবল বর্ষণে কলকাতা এবং শহরতলীর বেহাল হয়ে যাওয়া, সাধারণ মানুষের হয়রানি, ডেঙ্গির উত্তোরত্তর বৃদ্ধি, জমা জলে তড়িতাহত হয়ে মানুষের মৃত্যু — এসব মন খারাপ করে দেওয়ার খবর।

এসব কিছু মাথায় রেখে গত ১২ সেপ্টেম্বর চড়িয়াল খাল, যা বজবজ থেকে শুরু করে, কলকাতার বেহালা, ঠাকুরপুকুর সহ বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের মধ্যে দিয়ে এক বিস্তীর্ণ অঞ্চলের জলনিকাশী ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে, তার সংযোজিত অংশকে বুজিয়ে ফেলার বিরুদ্ধে বজবজ থেকে বেহালা অবধি এক সাইকেল যাত্রার আয়োজন করা হয় এবং ঠাকুরপুকুর ও বেহালা কুমোরপাড়ায় এক ছোট প্রচারসভা সংগঠিত হয়। লোক সমাগম খুব বেশি না হলেও বিষয়টি সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণের উদ্দেশ্যে সংগঠিত এই উদ্যোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিককালে বৃষ্টিতে কলকাতার বিভিন্ন জায়গা সহ গ্রাম মফস্বলের বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়া অবস্থা জলনিকাশী ব্যবস্থার অবনতি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।

চড়িয়াল খালের মূল অংশটি বজবজের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে প্রবহমান। টালী নালা অর্থাৎ আদিগঙ্গার কিছু দূরে সিরিটির কাছাকাছি কোন এক স্থান (বীরেন রায় রোড) থেকে শুরু হয়ে বড়িষা, সখেরবাজার, শীলপাড়া, ঠাকুরপুকুর, জোকা হয়ে মহাত্মাগান্ধী রোড, ডায়মন্ড হারবার রোড, বাকরাহাট রোড ও নুঙ্গী-বজবজ রোড পার হয়ে মেটাপুকুরে দু’ভাগ হয়ে পূজালী ও চড়িয়ালে গিয়ে মিশেছে হুগলী নদীর সঙ্গে। চড়িয়াল খালের সংযোজিত অংশ অর্থাৎ বেহালা, ঠাকুরপুকুর ইত্যাদি অংশে খালটি খুবই অপ্রশস্ত হলেও কলুয়া মৌজা থেকে যথেষ্ট চওড়া হয়ে এগিয়ে গিয়েছে। ৫৫ ফুট থেকে ১২০ ফুট পর্যন্ত চওড়া এই খাল। কিন্তু সময় যত এগিয়েছে একদিকে পলি মাটি, কচুরিপানার দরুন খালের গভীরতা কমেছে, অন্যদিকে প্রান্তিক মানুষ জীবন জীবিকার তাগিদে খালের পাশে ঝুপড়ি বানিয়ে থাকা শুরু করেছে। কিছু দোকানপাটও গড়ে উঠেছে। ফলে দু’দিক দিয়ে খাল বুজে আসছে। আর যথেচ্ছভাবে নোংরা ফেলার জন্য খালের জল মারাত্মকভাবে দূষিত হয়ে উঠেছে। কোথাও মানুষের মল-মূত্রও খালের জলে হচ্ছে। চড়িয়াল খালের সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় মিশেছে ছোট, বড়ো বিভিন্ন খাল এবং বেশ কিছু অঞ্চলের খোলা এবং ভূগর্ভস্থ নর্দমা। অন্যান্য খালের মধ্যে কালীঘাট ফলতা রেলওয়ে খাল, ম্যানেজমেন্ট খাল, কেওড়াপুকুর খাল ইত্যাদি। কোন কারণে কোন এলাকায় স্থানীয় জলবহ খাল বন্ধ হয়ে গেলে সেখানকার প্রধান খাল ‘চড়িয়াল’ পর্যন্ত যেতেই পারেনা। নগরায়ণের স্বাভাবিক পরিণতির দরুন কিছু জায়গায় রাস্তা তৈরির দরুন খাল যেমন বুজেছে, তেমনি বেশ কিছু জায়গায় পরিবেশ দপ্তরকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে জলা বুজিয়ে এক শ্রেণীর প্রোমোটার এবং স্বার্থান্বেষী মানুষের মদতে বাড়ি, ঘরবাড়ি তৈরি হয়েছে। জোকা, ডায়মন্ড পার্ক সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকা সহ, কলকাতার আরো বেশ কিছু এলাকা সাম্প্রতিককালের বর্ষণে জলমগ্ন হয়ে পড়ার বিভিন্ন কারণের মধ্যে উপরোক্ত কারণগুলি উল্লেখযোগ্য। নগরায়ণ করতে গিয়ে বাকি সমস্ত বিষয় যদি উপেক্ষিত হয়, তাহলে তা অপরিকল্পিত উন্নয়নের মধ্যে পড়ে। বেঙ্গালুরু, মুম্বাই, গুরুগ্রাম ইত্যাদি শিল্পোন্নত শহরগুলিতে বৃষ্টিতে জলে ভেসে যাওয়া অপরিকল্পিত উন্নয়নের ছবি সামনে নিয়ে আসে, কলকাতাও কোনো ব্যতিক্রম নয়। এই সমস্যার সুরাহা হতে পারত, যদি খালগুলির নিয়মিত সংস্কার করা হত, খাল পাড়গুলি বাঁধিয়ে চার পাশে গাছপালা লাগিয়ে সৌন্দর্যায়ন করা হত, দূষণ প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা করা যেত, বেআইনিভাবে ঘরবাড়ি নির্মাণ আটকানো যেত, আর পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখে উন্নয়নের রূপরেখা তৈরি করা যেত। বিভিন্ন পর্বে সরকার কিছু পরিকল্পনা করলেও তা হয় সেই অবস্থায় রয়ে গেছে বা সামান্য রূপায়িত হয়েছে। এটা তথ্য দিয়ে যাচাই করে নেওয়া যাক।

কেইআইপি (কলকাতা এনভায়রনমেণ্ট ইম্প্রুভমেন্ট প্রোগ্রাম) বস্তুত কলকাতা কর্পোরেশন এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের যৌথ উদ্যোগে রূপায়িত কর্মসূচি, যা পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০০২ সালে শুরু হয়ে ২০০৭ সালে শেষ হওয়ার কথা, কিন্তু বিভিন্ন কারণে তা বিলম্বিত হয়।

এই প্রকল্প রুপায়ণের প্রয়োজনীয় অর্থের বেশিরভাগের সূত্র ছিল এডিবি (এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক) প্রদত্ত ঋণ। প্রকল্পের ঘোষিত উদ্দেশ্য ছিল পরিবেশের অবনতি রোধ করা, কলকাতা শহরতলীর জলনিকাশী ব্যবস্থার উন্নয়ন, খালগুলির সংস্কার, বস্তিগুলিতে নাগরিক পরিষেবার ব্যবস্থা করা এবং কঠিন বর্জ্য পদার্থ গুলির যথাযথ ব্যবস্থাপনা করা। সবকটিই নাগরিক সমাজের ও পরিবেশের নিরিখে অতীব গুর‍ুত্বপূর্ণ বিষয়।

প্রকল্পের পরিকল্পনা মতো ৫টি খালের পাশে বসবাসকারী প্রায় ৩,৬০০ মানুষের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। পুনর্বাসনের দাবি আদায় এবং খালপাড়ের ঝুপড়িবাসীদের বলপূর্বক উচ্ছেদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের দরুন পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদের বিষয়টিকে কিছুটা হলেও রুখে দেওয়া গিয়েছিল। আসলে নগরায়ন, শহরের সৌন্দর্যায়নের আড়ালে প্রান্তিক মানুষদের কথা ভুলে যাওয়া হয়। ফলে পরিবেশ বাঁচানোর পাশাপাশি শ্রমজীবী মানুষের লড়াই গড়ে তোলাটা জরুরী। কলকাতা কর্পোরেশন এবং রাজ্য সেচ ও জলপথ বিভাগ, যারা এই প্রকল্পের রূপায়ক ছিল, তাদের উদ্যোগে এই পুনর্বাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়, তবে বেশ কিছু লোক এই পুনর্বাসন প্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়েছিল। পাঁচটি খালকে সংস্কার করার কথা ভাবা হয়েছিল — চড়িয়াল খাল, মানিখালি খাল, বেগোর খাল, কেওড়াপুকুর খাল ও তার শাখাপ্রশাখা, টালিগঞ্জ পঞ্চান্নগ্রাম খাল ও তার শাখাপ্রশাখা।

context of redevelopment

 

কলকাতা এবং তার পার্শবর্তী এলাকার জলনিকাশী ব্যবস্থায় এই খালগুলি, পুকুরগুলির পাশাপাশি অতীব গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। পুকুরে বৃষ্টির জল জমা হয় আর অতিরিক্ত জল খাল দিয়ে বয়ে নদীতে গিয়ে মেশে। এই খালগুলি খনন করা হয়েছিল ব্রিটিশ আমলে, তারা তাদের নিজেদের স্বার্থে এই খালগুলি ব্যবহার শুরু করেছিল। ১৯৭৮ সালে প্রবল বন্যার পর, ১৯৮০ সালে চড়িয়াল সহ অন্য খালগুলির সংস্কার সাধন করা হয়, কিন্তু তারপর দীর্ঘ সময় ধরে খালগুলির সংস্কার করা হয়নি।

যাই হোক, প্রকল্পের পরিকল্পনা মতো উচ্ছেদ হওয়া কিছু লোকের পুনর্বাসনের পর খাল সংস্কারের কাজ শুরু হয়। ঠিক কত শতাংশ কাজ সমাপ্ত হয়েছিল তা সবার জানা নেই, তবে কাজের ছিল শম্বুক গতি। উদাহরণ স্বরূপ পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনটি পাম্পিং স্টেশন বসানোর কাজ শুরু হয়। এই পাম্পিং স্টেশনগুলি পয়ঃনিষ্কাশন লাইন এবং নর্দমার জল পাম্প করে জল শোধনাগারের মধ্যে দিয়ে খালে মিশবে, যেখান থেকে জল চলে যাবে নদীতে। চড়িয়াল খালের ক্ষেত্রে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা শুরু হয়েছিল। বেহালা অঞ্চলের ১২২নং ওয়ার্ডে পুকুর খনন এবং সংস্কার করে জল শোধনাগার (এসটিপি) বানানোর কাজ শুরু হয়েছিল। যতদূর জানা আছে নিষ্কাশন লাইন থেকে পাম্প করে জল শোধনাগারে নিয়ে যাওয়ার প্রকল্প অন্তত ১২২, ১১৫নং ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে বাস্তবায়িত হয়নি। বিলম্বের একটি কারণ উছেদ হওয়া মানুষদের পুনর্বাসনে দেরী হওয়া, অন্য একটি কারণ হল যে এজেন্সিকে কাজের বরাত দেওয়া হয়েছিল তাদের অযোগ্যতা। ফলে সময় ও অর্থ দুয়ের পরিমাণ বাড়তে থাকে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দুর্ভোগের শেষ থাকেনা। ২০১৯ সালের ১৮ অগাস্টের টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে দেখা যায় যে ভারী বর্ষণে ঠাকুরপুকুর, বেহালা, সখের বাজার, পূর্বপাড়া ইত্যাদি এলাকাগুলি ব্যাপকভাবে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে এবং জল নামতে সময় লাগছে। বাসিন্দাদের মত অনুযায়ী সংলগ্ন চড়িয়াল খালের উপচে পড়া ছিল অন্যতম কারণ।

আইআইএম জোকার অধ্যাপক ডঃ তড়িৎ কুমার দত্ত’র একটি গুরুত্বপূর্ণ লেখা অনুসরণ করলে দেখা যায় “দি ওয়েস্ট বেঙ্গল ইনল্যাণ্ড ফিশারিজ (অ্যামেণ্ডমেন্ট) এ্যাক্ট” ১৯৯৩ আইনের ১৭এ ধারায় (২) উপধারা অনুযায়ী সরকার বে-আইনিভাবে ভরাট হওয়া পুকুর ও জলাভূমির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে সেগুলিকে মালিকের সম্পূর্ণ খরচে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনতে বাধ্য করতে পারে অথবা ২৫ বছরের জন্য এই ধরণের পুকুর বা জলাশয় অধিগ্রহণ করবে। এছাড়া, শাস্তিস্বরূপ দু’বছরের জেল ও দু’লক্ষ টাকা জরিমানা হতে পারে আইন ভঙ্গকারীর। দু’একটি ক্ষেত্রে এই আইন প্রয়োগ করা হলে পুকুর বা জলাভূমি বোজানোর হিড়িক থেমে যাবে।” জলনিকাশী ব্যবস্থা উত্তোরত্তর খারাপ হওয়ার এটি একটি কারণ যা জোকা, নিউটাউন সহ বিভিন্ন অঞ্চলের পরিকাঠামো দেখলেই বোঝা যায়। লেখাটিতে আরো বলা হয়েছে, “চড়িয়াল জলাভূমি ও স্থানীয় পুকুর, জলাশয়গুলিকে বাঁচানোর দাবিতে দীর্ঘদিন যাবৎ সরব জোকা পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন সংস্থা (জোকা ওপেড)। এই সংস্থার পক্ষ থেকে স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে জেলা পরিষদ, মহকুমাশাসক থেকে শুরু করে জেলাশাসক, মৎস্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রী পর্যন্ত অসংখ্যবার দরবার করা হয়েছে। এমনকি, আলিপুর কোর্টে মামলা রুজু করা হয়েছে। কিন্তু জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে কোন এক অজানা কারণে বিশেষ কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। শেষমেশ মুখ্যমন্ত্রী এব্যাপারে নিজে হস্তক্ষেপ করেন। কিন্তু তা সত্বেও পুকুর বা জলাভূমি বোজানো বন্ধ হয়নি।” এই পরিস্থিতিতে নিয়ে আসা হল কেইআইপি দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্প। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হল জলনিকাশী ব্যবস্থার উন্নয়ন, সেই অনুযায়ী চড়িয়াল খাল-সংযোজিত অংশ সহ বেশ কিছু পাম্পিং স্টেশন নির্মাণ, জলনিকাশী লাইন সম্প্রসারণ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য এবং এসব নিয়ে আপত্তির কিছু নেই। কিন্তু যেটা সমস্যাজনক তা হল চড়িয়াল খালের সংযোজিত অংশকে বুজিয়ে রাস্তা বানিয়ে ভূগর্ভস্থ পাইপলাইন বসিয়ে নিকাশী ব্যবস্থার সম্প্রসারণ করা। আজকাল ভূগর্ভস্থ ড্রেন অনেক জায়গায় করা হচ্ছে, এবং বৈজ্ঞানিক দিক থেকে তা ঠিকই আছে। কিন্তু খাল, জলাশয়, পুকুর ইত্যাদির ভূমিকা অপরিসীম। বর্ষার জল সংলগ্ন জলাশয়গুলিতে জমা হয় সরাসরি বা নর্দমা মারফত। আর চড়িয়াল খালের সংযোজিত অংশ যে পরিমাণ জল বহন করতে পারে তা ভূগর্ভস্থ ড্রেন পারবেনা।

এটা ঠিকই, নিয়মিত সংস্কার এবং দূষণ প্রতিরোধে ব্যবস্থা না নেওয়ার ফলে খালটি দূষিত এবং সংযোজিত অংশের স্থানীয় বাসিন্দাদের তা সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে, কিন্তু এই যুক্তিতে তো সব খালই বুজিয়ে দেওয়ার কথা উঠতে পারে, আর গঙ্গানদীও তো দূষণের শিকার। আসলে খাল সংস্কার এবং দূষণ মুক্ত রাখার প্রকল্প একটা ধারাবাহিক কার্যক্রমের মধ্যে দিয়ে যাওয়া উচিত। এরজন্য একটি নির্দিষ্ট দপ্তর রেখে ২-৩ মাস অন্তর খালগুলির সংস্কার এবং দূষণ মুক্ত করার ব্যবস্থা করলে চাপ কমে। জৈবিক পদ্ধতিতে মাইক্রো-অরগ্যানিসমের মাধ্যমে দূষণ মুক্ত করা ও কলকাতা কর্পোরেশনের রাডারে জল শোধনাগার বানানোর জায়গা পাওয়া অতো সোজা নয়। তবে এই সব ইচ্ছেকে রূপ দেবার জন্য যা প্রয়োজন, তা হল একদম স্থানীয় তৃণমূল স্তর থেকে মানূষের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখার মধ্যে দিয়ে সমস্যার যথার্থ অনুধাবন এবং ধারাবাহিক কার্যক্রম গ্রহণ করা। নগরায়ণ, মেট্রো রেল মারফত পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি আমরা কোনটার বিরুদ্ধে নই, কিন্তু পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখা দরকার।

এই সমস্ত বিষয় নিয়ে বেশ কিছূ পরিবেশবাদী সংগঠন ও ব্যক্তি সোচ্চার। গত ১২ সেপ্টেম্বর ‘নদী বাঁচাও, জীবন বাঁচাও’, ‘জলঙ্গী নদী সমাজ’, ‘মন্থন’ পত্রিকা, দক্ষিণ কলকাতা এপিডিআর সহ বেশ কিছু সংগঠনের উদ্যোগে সাইকেল মিছিল ও সভার আয়োজন করা হয়। লক্ষনীয় যে, বজবজে পুলিশ এই মিছিলে বাধা দেয় এবং তার আগের রাতে সংগঠকদের প্রতি হুমকিও দেওয়া হয়। সেদিন সর্বভারতীয় মেডিকাল প্রবেশিকা পরীক্ষা থাকলেও, সংগঠকদের প্রস্তাব ছিল, যে স্কুলে সিট পড়েছে, তারপর থেকে মিছিল শুরু হবে। কিন্তু পুলিশ তাতেও রাজী হয়নি। এই পুলিশী বাড়াবাড়ির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানালেও আসল লক্ষ্য চড়িয়াল খাল ও সামগ্রিক জলনিকাশী ও পরিবেশগত বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। পত্রিকা মারফত জানা গেল যাদবপুর বিশবিদ্যালয়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নিকাশী ব্যবস্থা নিয়ে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য। যদি তাদের সাথে আলাপ আলোচনা করে চড়িয়াল সম্পর্কিত বিষয়টি নিয়ে অবহিত করা যায় খুব ভালো হয়। আর প্রশাসনের কাছে দাবি একটু নমনীয় হওয়ার। যখন এটা যথার্থভাবে বলা হয় ‘পরিবেশ রক্ষা সবার দায়িত্ব’, তখন পরিবেশ সচেতন এবং বিশেষতঃ এই বিষয়ে গবেষণা করা মানুষদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার জায়গা খোলা রাখা উচিত।

কলকাতা সহ সারা পশ্চিমবঙ্গের জল নিকাশী ব্যবস্থা উন্নয়নের দাবিতে আন্দোলন কিন্তু চালিয়ে যেতে হবে।

- সৌরবিজয় সরকার

খণ্ড-28
সংখ্যা-35