উদ্যোগ অভিনব
initiative is fancy

আইনের শাসনের জায়গা নেয় যখন শাসকদের আইন, সবার জন্য গণতন্ত্রের দখল নেয় যখন সংখ্যাগুরুবাদ, সকলের জন্য রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা নিশ্চিত করার বদলে যখন ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ ‘দেশদ্রোহী’ দাগিয়ে দিয়ে রাষ্ট্রীয় হেফাজতে হত্যা, ভূয়ো সংঘর্ষের নামে হত্যা, ঔপনিবেশিক আমলের কুখ্যাত সব দমন আইনে বিনা বিচারে ফেলে রেখে, এমনকি ঠিকমতো খেতে না দিয়ে চিকিৎসা না করিয়ে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হত্যাই পরিণাম হয়ে দাঁড়ায়; তখন প্রতিবাদে প্রতিরোধে ন্যায়কামী নাগরিক চেতনায় অভিনব সব উদ্যোগ সক্রিয় ও সংগঠিত হতে শুরু করে। যেমন উঠে এসেছে আজীবন আদিবাসীদের জন্য কাজ করে আসা ফাদার স্ট্যান স্বামীর পরিণতি ও তার প্রতিক্রিয়ার কথা। স্বার্থবুদ্ধির চিন্তা পুরোপুরি বিসর্জন দিয়ে যে আদিবাসী প্রাজ্ঞ মানুষটি নিজেকে উজার করে দিয়েছিলেন পরার্থে, পরিব্রাজক হয়েছিলেন শিক্ষার মাধ্যমে আদিবাসী জনসমুদয়কে তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করতে, তিনি রাষ্ট্রের চূড়ান্ত রোষের শিকার হলেন, কিন্তু কোনও আপস করেননি। ক্ষমতাধর কঠোর রাষ্ট্রবাদী বর্বরপন্থীরা আর অপেক্ষায় থাকলো না, সাজানো এক মামলায় জড়িয়ে অশীতিপর অগ্রজ বৃদ্ধকে গারদে পুরে মেরে ছাড়লো। প্রতিক্রিয়ায় ধিক্কার উঠেছে সারা দেশ থেকে। আদিবাসী সমাজের আধুনিক শিক্ষিত অগ্রণী অংশও দাবি তুলছে প্রতিকার চাই। গড়ে উঠছে বহুবিধ গণউদ্যোগ, মঞ্চ, কণ্ঠ। যার এক অভিনব রূপ প্রত্যক্ষ হল কলকাতার বুকে, এক সংখ্যালঘু ফোরাম গঠনের মধ্যে। খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের বিভিন্ন অংশের মানুষেরা মিলে তৈরি করলেন এক সংখ্যালঘু ফোরাম। বেঙ্গল ক্রিশ্চিয়ান কাউন্সিল সংক্ষেপে ‘বিসিসি’ নামধারী এই মঞ্চ তার ঘোষণাপত্রে বলেছে, এতে ধর্মীয় পরিচালকদের অংশগ্রহণে বাধা নেই, তাঁরা থাকলেও এটা কোনও ধর্মীয় বিষয়াদি চর্চার জায়গা নয় বা সেই উদ্দেশ্যে এর গঠন হয়নি। এই মঞ্চের লক্ষ্য হল সম্প্রদায় নির্বিশেষে আদিবাসী, প্রান্তবাসী, জনজাতি, নিপীড়িতদের অধিকার সচেতন করতে শিক্ষিত করা, অধিকারের জন্য লড়াইয়ে সংগঠিত করা। যে লড়াই লড়তে লড়তে আত্মত্যাগ করলেন ফাদার স্ট্যান। ফাদার আদিবাসীদের অধিকারের বিষয়টিকে দাঁড় করিয়েছিলেন সম্মুখসমরে। সেই লড়াই চালিয়ে যাওয়ার হাতিয়ার হিসাবেই কাজ করতে চায় উপরোক্ত ফোরাম। এর প্রাথমিক উদ্যোগী খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের চালকরা হলেও আয়োজিত সভায় এসেছিলেন সংখ্যালঘু মুসলিম, জৈন ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিবর্গ; আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে শিখ ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদেরও। এই মঞ্চ গ্রাম ও শহরে ওয়ার্কশপ, সেমিনার, কনভেনশন সংগঠিত করে চলবে। লাগাতার কর্মসূচি নেওয়া এবং ব্যাপকতর সমাবেশ সংগঠিত করা মূল কর্তব্য। সংখ্যালঘুদের সাংবিধানিক হক নিয়ে সরকারপক্ষের সাথে ফয়সালা করাই লক্ষ্য। চলার পথে এই মঞ্চ কীভাবে কি করে তা অবশ্যই পর্যবেক্ষণের বিষয়। কিন্তু এপর্যন্ত যে উদ্যোগ জানান দিচ্ছে তা ইতিবাচক এবং স্বাগত জানানোর। ধর্মাবলম্বীদের সম্প্রদায়গত অধিকার মঞ্চ গঠনকে তুচ্ছ মনে করার কোনো কারণ নেই। লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, অধিকার সম্মত সামাজিক ন্যায়, সমতা, সবকিছু অর্জন করতে লড়াই করার সংকল্প নিচ্ছে কীনা। আমরা জানি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে সন্ন্যাস বিদ্রোহের কথা, ভিয়েতনামের মুক্তিসংগ্রামের সময়ে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধবাজদের তৈরি বন্দীশিবিরের কাঁটাতারের দেওয়াল ছিঁড়ে ফেলেছিলেন বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা। তার জন্য আত্মত্যাগও করেছিলেন। তাই বিচার করার আসল বিষয় হল স্বাধীনতা, মুক্তি, গণতন্ত্র, অধিকার, স্বায়ত্ততার জন্য লড়াই করার ইচ্ছাশক্তি জাগছে কীনা।

স্বাধীনতার ৭৫ উদযাপনের প্রাক সপ্তাহে জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলি আজও হয়ে রয়েছে দুর্বলতর অংশ, বলাবাহুল্য সংখ্যাগুরু সম্প্রদায় অর্থাৎ হিন্দু সমুদয় রয়েছে আধিপত্যকামী প্রবণতায়। হিন্দুত্ব’র সন্ত্রাস, দাপাদাপি রোজকার ঘটনা ও প্রবণতা। সংবিধানের ৪৬ ধারা স্বীকৃত সুরক্ষা, নিরাপত্তা, সম অধিকার কার্যকরি না হলে অসমতা, বৈষম্য, অন্যায়, অবিচার চলতেই থাকবে। রাষ্ট্রকে দায়বদ্ধ থাকতেই হবে যাতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলির শিক্ষাগত ও অর্থনৈতিক দুর্বলতর দুরবস্থা দূর হওয়া নিশ্চিত হতে পারে, আর সমস্ত রকমের শোষণ-উৎপীড়ন থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়, আর সামাজিক ন্যায় সুনিশ্চিত হয়। আমাদের তুলতেই হবে এই ধ্বনি-প্রতিধ্বনি।

 

স্বাধীনতার ৭৪তম বার্ষিকীতে অঙ্গীকার

  • ভারতের স্বাধীনতার ৭৪তম বার্ষিকীতে আমরা ভারতের জনগণ অঙ্গীকার করছি
  • অসংখ্য শহীদ ও বিপুল আত্মত্যাগের মধ্যে দিয়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা, সংবিধান ও গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে আমরা সদা সতর্ক থাকব
  • ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয়, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক চরিত্র ও সমাজতান্ত্রিক অভিমুখ বজায় রাখতে সদা সক্রিয় থাকব
  • বিরুদ্ধ মতো ও প্রতিবাদের অধিকার খর্ব করার প্রতিটি পদক্ষেপ প্রতিরোধ করব
  • সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে হিংসা ও বিদ্বেষ ছড়ানোর সমস্ত অপচেষ্টা প্রত্যাখ্যান করে রুখে দাঁড়াব
  • দলিত, বহুজন, আদিবাসী, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও মহিলাদের স্বাধীনতা, মর্যাদা ও অধিকারকে সবরকম হামলা থেকে রক্ষা করব
  • রাজদ্রোহ, ইউএপিএ, আফস্পা সহ ঔপনিবেশিক কোম্পানিরাজ ধারার আইনগুলি বাতিল করার জন্য অভিযান চালাব
  • শ্রমিক, কৃষক, স্কিম ওয়ার্কার, দলিত, আদিবাসী ও মহিলাদের আন্দোলন সহ সমস্ত গণ আন্দোলনকে সক্রিয় সমর্থন করব
  • জনবিরোধী কৃষি আইন বাতিল করার চলমান আন্দোলনের পাশে সক্রিয় সংহতিতে দাঁড়াব
  • সমস্ত প্রাকৃতিক সম্পদ, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি, ভূমি, অরণ্য ও নদনদী কর্পোরেটদের হাতে তুলে দেওয়ার বিরুদ্ধে সংগ্রামকে তীব্র করে তুলব।

ইনকিলাব জিন্দাবাদ
বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক
স্বাধীনতা সংগ্রামের শহীদদের সেলাম

খণ্ড-28
সংখ্যা-30