১ - ৯ আগস্ট দেশব্যাপী প্রচার অভিযান
৯ আগস্ট ভারত ছাড়ো দিবসের দিনে দেশব্যাপী প্রতিবাদ বিক্ষোভ
প্রিয় সাথী
বিপর্যয় ও ধ্বংস আজ মোদী-২ জমানার বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠেছে। কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ’র সময় সরকারের অপরাধসম অবহেলার কারণে গোটা দেশ বিরাট বিপর্যয়ের মুখে পড়ে, লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়। ভুক্তভোগীদের জন্য মোদী সরকার এক কানাকড়ি ক্ষতিপূরণও দিল না। শ্রমজীবী মানুষদের জীবন-জীবিকা ছারখার হয়ে গেছে। ব্যাপক মাত্রায় অনাহার, ক্রমশ মাথা তুলে দাঁড়ানো দারিদ্র ও বৈষম্য, আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শ্রমিকদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, চারটি শ্রমকোডের মাধ্যমে তাঁদের নিক্ষিপ্ত করা হচ্ছে দাসত্বে। চাষিদের কাছ থেকে পরিকল্পিত ভাবে ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে জমি, তিনটি কৃষি আইনের মাধ্যমে ভারতের কৃষিকে বরবাদ করে দেওয়া হচ্ছে। প্রতি ইঞ্চি জমি, দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রগুলোকে বেচে দেওয়া হচ্ছে কর্পোরেটদের কাছে। ভিন্ন স্বর ও প্রতিটি প্রতিবাদী কণ্ঠকে রুদ্ধ করা হচ্ছে রাষ্ট্রদ্রোহ, ইউএপিএ’র মতো দানবীয় আইন জারি করে। ঘৃণার রাজনীতি ও সাম্প্রদায়িকতার বিষ দিয়ে আরএসএস বাহিনী দেশজুড়ে আগুন লাগিয়েছে। আর এসবই হল মোদী-২ জমানার বৈশিষ্ট্য। বিপর্যয়ের দিক থেকে মোদী-২ এবং কোভিড-২ আজ সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রমাণিত হয়েছে, কোভিড-২ হল মোদী-২ পরিচালিত গণহত্যা। যখন ভারতীয় জনতা অক্সিজেনের অভাবে মারা যাচ্ছে, যখন নদীর জলে ভেসে বেড়াচ্ছে সার সার মৃতদেহ, ঠিক তখন মোদী সরকার বাংলা দখল করতে, কুম্ভ মেলা সংগঠিত করতে কোমর বেঁধে মাঠে নেমে পড়ে। আর, দু’কান কাটা বেহায়া এই সরকার নির্লজ্জতার সমস্ত সীমা পরিসীমা অতিক্রম করে সংসদে ঘোষণা করল অক্সিজেনের অভাবে একজনও মারা যায়নি। বিভিন্ন সমীক্ষা দেখাচ্ছে, কোভিডে মৃতের সংখ্যা ৪০ লক্ষেরও বেশি, যা সরকারের ৫ লাখের মিথ্যা ঘোষণাকে বে-আব্রু করে দেয়। কোভিডকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যে পদক্ষেপ এখন সবচেয়ে বেশি জরুরি তা হল টিকাকরণ। কিন্তু, সেটাও চলছে শম্বুকগতিতে (এখন পর্যন্ত জনসংখ্যার মাত্র ৮ শতাংশকে টিকা দেওয়া গেছে)। আর এটাই মোদীর টিকা উৎসবের প্রহসনকে উদঘাটিত করে। অতিমারীর ছোবল যখন আরও মজবুত ও নিঃশুল্ক সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থার দাবি সামনে হাজির করছে তখন সরকার অতিরিক্ত মুনাফার স্বার্থে টিকাকরণকে তুলে দিচ্ছে কর্পোরেটদের হাতে।
গোটা দেশ যখন অতিমারির প্রকোপে বিধ্বস্ত, তখন মোদী কর্পোরেটদের জন্য ‘সুযোগকে সুবিধায় পরিণত করতে’ ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে। কর্পোরেট স্বার্থবাহী শ্রমকোড ও কৃষি আইনকে মোদী লাগু করেন, জরুরি পরিষেবা সহ সরকারি সংস্থা ও রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রের বেসরকারিকরণ করে। প্রতিবাদ ও ধর্মঘটের অধিকারকে দমন করতে প্রতিরক্ষা শিল্প ক্ষেত্রের জন্য অর্ডন্যান্স জারি করা হয়। এটা শুধু এই ক্ষেত্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, আগামী দিনে তা রাষ্ট্রায়ত্ত ও সরকারি ক্ষেত্রের কর্মীদের বিরুদ্ধেও পরিচালিত হবে।
গরিব-দুঃস্থ, পরিযায়ী শ্রমিক, যারা অনাহার দারিদ্রে আজ নিক্ষিপ্ত, তাঁদের জন্য আর্থিক অনুদান, লকডাউন মজুরি ভীষণভাবে প্রয়োজন। গোটা অতিমারির পর্যায়ে বিনামূল্যে রেশন ও অত্যন্ত দরকারি। কিন্তু অর্থবহ কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার বদলে নির্মম মোদী সরকার পেট্রোপণ্যের উপর মাশুল বৃদ্ধি ঘটিয়ে সার্বিক সর্বনাশ নামিয়ে আনল। এরফলে খাদ্যসামগ্রি সহ সমস্ত নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্রের দাম আকাশছোঁয়া হয়ে পড়ল, সাধারণ মানুষের প্রাত্যহিক জীবনে নেমে এলো ঘোর অন্ধকার। নোটবন্দীর মধ্য দিয়ে আম জনতার জীবন জীবিকাকে ধ্বংস করার যে যাত্রা শুরু হয়, কোভিড-২ ও তার অনুসারি নির্দয়, অবিবেচনা প্রসূত লকডাউন ও ধ্বংসাত্মক নীতি চরম পর্যায়ে গেছে, কর্মহীনতা সমস্ত রেকর্ড ভেঙেছে। প্রথম লকডাউনের সময় বেশির ভাগ সংস্থা বন্ধ ছিল, এবার তা চালু থাকলেও স্তব্ধ রয়েছে গণপরিবহন ব্যবস্থা। শ্রমজীবী মানুষেরা পড়েছে নিদারুণ সমস্যায়, খোয়া গেছে কোটি কোটি কাজ। যারা যারা কোনো মতে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে নিজ নিজ কর্মস্থলে পৌঁছাতে পেরেছেন, তাঁদের নিজের গ্যাটের থেকে খরচ করতে হয়েছে ফি মাসে ৩,০০০-৫,০০০ টাকা। আর, এরফলে সংকুচিত হয়েছে তাঁদের প্রাপ্য মজুরি। ছাঁটাই, মজুরি সংকোচন, কোনো রকম বেঁচে বর্তে থাকার মতো মজুরি, ১২ ঘন্টা কর্ম দিবস, অনিয়মিত ও চরম ঝুঁকিপূর্ণ কাজ, ইউনিয়ন গঠন করতে না দেওয়া, প্রতিবাদের পথে বাধা, বিশেষ করে ধর্মঘটের অধিকারের উপর নেমে আসা হামলা এখন এক সাধারণ ব্যাপার হয়ে উঠেছে, সমস্ত ধরনের বেআইনি পদক্ষেপেই আজ শ্রমকোড আইনি জামা পরিয়েছে। করোনা যোদ্ধা নামে সরকার যাদের গৌরবান্বিত করছে, তাঁরা আজ চরম উপেক্ষিত। মারণ কোভিডের মুখে দাঁড়িয়ে জীবন বিপন্ন করে লড়াই করলেও এই করোনা যোদ্ধাদের উপযুক্ত পারিশ্রমিক ও সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
এখন চলছে অঘোষিত জরুরি অবস্থা। এটাই মোদী-শাহ জমানায় নতুন স্বাভাবিক। এই জমানায় ভিন্ন স্বর ও প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করতে শ’য়ে শ’য়ে কর্মীকে দমনমূলক আইনে কারারুদ্ধ করা হচ্ছে। ফাদার স্ট্যান স্বামী এই মোদীরাজের দমনমূলক আইনের বলি হলেন, তাঁর মৃত্যু এই জমানায় হেফাজত হত্যা। আর এখন, গণতন্ত্রের সমস্ত শাখা-প্রশাখাকে নিজের হাতের মুঠোয় রাখতে মোদী জমানা বিভিন্ন রাজনৈতিক বিরোধী দলের নেতা সহ সাংবাদিক, নাগরিক সহ অনেককে পেগাসাস স্পাই ওয়্যারের মাধ্যমে নজরদারি শুরু করেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ, নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি ওঠার সাথে সাথে টিভি ও সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে হানা দিতে লাগলো আয়কর দপ্তর, যে সংবাদমাধ্যমগুলো কোভিড মৃত্যু ও নজরদারির ঘটনা নিয়ে শোরগোল তুলেছে।
আমরা নিদারুণ এক সময়ের মধ্য দিয়ে চলেছি, যখন আম জনতার রুটি-রুজি, গণতন্ত্র, সংবিধানকে মোদী-শাহ দুমড়ে মুচড়ে দিচ্ছে। স্বাধীনোত্তর ভারতবর্ষে শ্রমিক শ্রেণী, সাধারণ মানুষের সামনে এই জমানা-সৃষ্ট বিপদটা সবচেয়ে মারাত্মক — আগে যা কখনও সামনে আসেনি। কিন্তু, মানুষ হাল ছেড়ে দেয়নি। মোদীর কর্পোরেটরাজের বিরুদ্ধে মেহনতী জনতা আজ সম্মুখ সমরে। শ্রমজীবী মানুষের সমস্ত স্তর ও অংশ এই জমানার ধ্বংসাত্মক নীতিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে প্রতিরোধের রাস্তা বেছে নিয়েছেন। এরমধ্যে সবচেয়ে নজর কাড়া প্রতিরোধ হল দীর্ঘ আট মাস ধরে চলমান দৃঢ় প্রতিজ্ঞ কৃষক আন্দোলন। এখন সময় এসেছে, মোদীর কোম্পানিরাজকে উৎখাত করতে শ্রমিক-কৃষকের ঐক্যের মজবুত ভিত্তির উপরে নির্ণায়ক লড়াই গড়ে তোলা।
ঐতিহাসিক ভারত ছাড়ো আন্দোলনে দেশের স্বাধীনতার লক্ষ্যে ব্রিটিশ বিরোধী সুমহান ঐতিহ্যকে সামনে রেখে, আসুন, আমরা সেই সংগ্রামী পরম্পরাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে মোদী-শাহ জমানার বিরুদ্ধে গড়ে তুলি দুর্বার আন্দোলন।
দাবি সনদ