কমরেড ব্রিজবিহারী পাণ্ডে আর নেই
Brijbihari Pandey

২৬ আগস্ট ২০২১

পাটনা শহরে আমাদের সকলের প্রিয় কমরেড ব্রিজবিহারী পাণ্ডের অপ্রত্যাশিত মৃত্যুতে সিপিআই(এমএল) স্তম্ভিত। কমরেড পাণ্ডেজি কোলন অপারেশন থেকে সদ্য সেরে উঠেছিলেন। কিন্তু সার্জারির পর থেকে বুকে সংক্রমণ সহ কিছু জটিলতায় ভুগছিলেন। ২৬ আগস্ট ২০২১ হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হল।

“পাণ্ডেজি” নামেই পার্টিতে বিশেষ পরিচিত ছিলেন তিনি। তিনি ছিলেন কানপুরে কমরেড বিনোদ মিশ্রের ছোটবেলার বন্ধু। দুই তরুণ একসাথে দুর্গাপুর রিজিওনাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে এসেছিলেন ১৯৬৬ সালে। এখানেই তাঁদের দেখা হয়ে যায় ধূর্জটি প্রসাদ বক্সী ও গৌতম সেনের সাথে। নকশালবাড়ি অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলিতে ক্যাম্পাসে বয়ে যাওয়া বিপ্লবের ঝোড়ো হাওয়ায় এইসব তরুণেরা আর ই কলেজ ক্যাম্পাসের কঠোর অনুশাসনের পরিবেশকে উড়িয়ে দিয়ে যুব বিদ্রোহের সূচনা করেছিলেন এবং শ্রমিক ও কৃষকের সংগ্রামের সংহতিতে ছাত্রছাত্রীদের একাত্ম করেছিলেন। পাণ্ডেজি'র প্রয়াণের সাথে সাথে দূর্গাপুর আর ই কলেজের এই চতুষ্টয়েরও অন্তিম অবসান হল।

কমরেড ভিএম ও ডিপি বক্সির সাথে পার্টির সর্বক্ষণের সংগঠক কর্মী হয়ে পাণ্ডেজি বিভিন্ন অঞ্চলে ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের ভূমিকা পালন করেছেন। ১৯৭৪ সাল থেকে তিনি কাজ করেছেন দিল্লি, পাঞ্জাব, বাংলা ও ঝাড়খণ্ডে (যেখানে কিছু দিন গিরিডি সেক্রেটরি হিসেবে ছিলেন) এবং পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতে ও পার্টির বিভিন্ন মুখপত্রে যার মধ্যে আছে কেন্দ্রীয় মুখপত্র লোকযুদ্ধ ও লিবারেশন। বর্তমানে তিনি পার্টির কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল কমিশনের চেয়ারপার্সন হিসেবে কাজ করছিলেন।

বহু বিচিত্র বিষয়ে ব্যাপক বিস্তৃত জ্ঞান ও বিশ্বকোষের মতো পাণ্ডিত্যের অধিকারি পাণ্ডেজি ছিলেন বহুভাষী। ইংরেজি, হিন্দি, বাংলা ছাড়াও ভালো পাঞ্জাবি বলতেন এবং এমনকি তামিল বুঝতেন। বিজ্ঞান হোক বা সাহিত্য ও সংস্কৃতি, রাজনীতি হোক বা ইতিহাস — সবেতেই পাণ্ডেজির অসীম অনুরাগ ও বিচরণ ছিল। এবং যে বিষয়েই ঢুকতেন অচিরেই সে বিষয়ে বিশেষ দখল অর্জন করে ফেলতেন। তাঁর বৌদ্ধিক অর্জনের সহযোগি ছিল বিরল প্রকৃতির ধৈর্য যা তাঁকে এক আদর্শ শিক্ষক ও পথপ্রদর্শক করে তুলেছিল। অসংখ্য তরুণ কমরেড – পার্টি প্রকাশনার সম্পাদকদের থেকে শুরু করে বিভিন্ন গণসংগঠনের নেতাকর্মী – তাঁর সহৃদয় প্রণোদনা পেয়েছেন। সম্পূর্ণ আনপড় ব্যক্তিকে কম্পিউটার শেখানো হোক বা পদার্থবিদ্যার ছাত্রের সাথে কোয়ান্টাম মেকানিক্স আলোচনা, অথবা জনসংস্কৃতি মঞ্চের কমরেডদের সাথে সদ্য প্রকাশিত কোনও উপন্যাস বা কাব্যগ্রন্থ নিয়ে আলোচনা — সবই অত্যন্ত আনন্দের সাথে করতেন তিনি, ঠিক যেমন পার্টি সংগঠকের দৈনন্দিন ঝুটঝামেলার আলোচনাও কমরেডদের সাথে করতেন আনন্দের সাথে।

পাণ্ডেজির জীবনসঙ্গী কমরেড বিভা গুপ্তা (অধিকাংশ কমরেডদের কাছে যিনি ঝুমা নামে পরিচিত) ও তাঁদের মেয়ে অদিতি ও রিয়াকে এই অপার দুঃখের কালে সমগ্র পার্টি ভালোবাসা ও সহযোগিতা জানাচ্ছে।

কমরেড বি বি পাণ্ডে লাল সেলাম।

খণ্ড-28
সংখ্যা-32