কোভিড কাল যত দীর্ঘায়িত হচ্ছে দেশজুড়ে বিধিনিষেধ, লকডাউন তত বাড়ছে। গরীব মেহনতি মানুষের রুটি-রুজি প্রায় বন্ধ। এই অবস্থায় রেশন, উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং মানুষের হাতে নগদ টাকা খুব জরুরী। প্রধানমন্ত্রীর বিনামূল্যে অন্ন যোজনা প্রকল্প বড় বড় হোর্ডিংএ যে মাত্রায় প্রচারের বহর দেখা যাচ্ছে সে তুলনায় মানুষ রেশন পাচ্ছে অপ্রতুল, তাও আবার শুধু চাল, গম, সাথে তেল, চিনি, ডাল দেওয়া যে প্রয়োজন তা উনি ভাবতে পারছেন না। গরিব মানুষের হাতে ৭,৫০০ টাকা দেওয়ার দাবিও মানছেন না! এই অবস্থায় রাজ্য সরকারের ‘দুয়ারে রেশন’ ব্যবস্থাও খাদ্য সুরক্ষা কার্ডের সাথে আধার সংযুক্তির গেরোয় আরও জটিলতার মধ্যে পড়েছে। বহু মানুষ এই রেশন থেকেও বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এই সুযোগে কিছু অসাধু লোক আধার কার্ড করিয়ে দেওয়ার জন্য গরিব মানুষের কাছ থেকে ৫০০, ৭০০ বা তারও বেশি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এই সংকটময় পরিস্থিতিতে মানুষের একগুচ্ছ দাবিতে গত ১৯ জুলাই আইপোয়ার হুগলির পক্ষ থেকে চৈতালি সেনের নেতৃত্বে জেলা শাসকের কাছে ডেপুটেশন দেওয়া হয়। দাবি ছিল --
১) সমস্ত নাগরিককে অবিলম্বে বিনামূল্যে টিকা দিতে হবে।
২) টিকা নেওয়া ও কোভিড বিধি পালনে যাঁরা অনীহা দেখাচ্ছেন তাঁদের সচেতন করতে পঞ্চায়েত ও পৌরসভার মাধ্যমে জোরদার গণপ্রচার চালাতে হবে।
৩) খাদ্য সুরক্ষা কার্ড ও আধার কার্ডের সংযুক্তি বাধ্যতামূলক করে গরীব মানুষকে রেশন থেকে বঞ্চিত করা চলবে না।
৪) সমস্ত নাগরিককে আধার ছাড়াই রেশন দিতে হবে।
৫) রেশনে শুধুমাত্র চাল-গম নয়, ডাল-তেল-চিনি-সাবান ইত্যাদি দিতে হবে ।
৬) রাজ্য সরকারের ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্প যা থেকে প্রতি মাসে ৫০০/১০০০ টাকা দেওয়ার কথা, তা দ্রুত চালু করতে হবে এবং এসসি-এসটি সার্টিফিকেট দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
৭) সার্বিক স্বাস্থ্য পরিষেবা ও পরিকাঠামোর উন্নয়ন করতে হবে।
৮) গরীব মেহনতি মানুষের রুটি-রুজির স্বার্থে বেশি সংখ্যায় লোকাল ট্রেন অবিলম্বে চালু করতে হবে।
৯) পেট্রোল-ডিজেল-রান্নার গ্যাস সহ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি রোধ করতে হবে।
১০) কোভিড কালে বিপর্যস্ত সমস্ত গরীব মানুষের ঋণ মকুব করতে হবে এবং মাইক্রোফিনান্স কোম্পানিগুলো ঋণ আদায়ের নামে যে মানসিক অত্যাচার চালাচ্ছে তা বন্ধ করার ব্যবস্থা সরকারকে করতে হবে।
এই দাবিগুলো নিয়ে এডিএম-এর সাথে আলোচনা হয়। তিনি বলেন, টিকার সাপ্লাই কম, আমারা প্রত্যেক নাগরিককে পরিকল্পনামাফিক অবশ্যই দেব। রন্ধন কর্মীদের প্রাধান্য দেওয়ার দাবি রাখি। এবিষয়ে তিনি রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা করবেন। আধারের বাধ্যতা জটিলতা রেশন প্রশ্নে আলোচনায় তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প তাই আমাদের করতে হচ্ছে। তবে আধার সংযুক্তি না হলে গরিব মানুষ রেশন পাবে না, এরকম ভাবনা রাজ্য সরকারের নেই। এসসি-এসটি সার্টিফিকেটের ব্যাপারেও গুরুত্ব দেন।
ধনিয়াখালিতে ‘সজল ধারা’ প্রকল্পের অচলাবস্থা কাটানোর ব্যবস্থা নেবেন। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়ে দুর্নীতির প্রসঙ্গ নিয়েও আলোচনা হয়। যে মাইক্রোফিনান্স কোম্পানিগুলো ঋণ শোধের জন্যে চাপ সৃষ্টি করছে, ভীতি প্রদর্শন করছে, সেই কোম্পানিগুলোর নাম লিখিতভাবে সেই ব্লকে বিডিও-র কাছে জানাতে বলেছেন। সেই প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।