৫ জুলাই রাষ্ট্রের নির্মম ষড়যন্ত্রের হাতে খুন হয়েছেন ফাদার স্ট্যান স্বামী। গৌরী লঙ্কেশ, মহাভির নারেওয়াল থেকে ফাদার স্ট্যান স্বামী সবাই নানা রূপে গেরুয়া মতাবলম্বী হত্যাকান্ডের শিকার। যারা নিহত হচ্ছেন তাদের আদর্শ — অধিকার বুঝে নেওয়ার, মানুষের জল জঙ্গল জমিন বুঝে নেওয়ার আদর্শ। জাতীয় নিরাপত্তা আইনে একজন চুরাশি বছরের লড়াকু ব্যক্তিত্ব, যার কোনও রকম কোনও অপরাধ রাষ্ট্র প্রমাণ করতে পারেনি, তাকে তিলে তিলে খুন করা হল। চশমা পরতে না দেওয়া, ন্যূনতম চিকিৎসা না দেওয়া, তরল খাবার খাওয়ার স্ট্রটুকুও না দেওয়া, কোনও প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও চারবার জামিনের আবেদন অগ্রাহ্য করা সহ খুনের প্রত্যেকটি পদক্ষেপ আমাদের মনে আছে, আমরা ভুলিনি। বরং ঐ চশমার আড়ালে জ্বলে থাকা স্পর্ধাকে খুঁজে নিয়ে রাস্তায় নেমেছে অসংখ্য গণসংগঠন, মানুষ।
সারা দেশ, রাজ্যের মতো একুশের ডাক, সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতি, অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস এ্যাসোসিয়েশন, পশ্চিমবঙ্গ গণসংস্কৃতি পরিষদ, এপিডিআর, পিউসিএল, পিডিএসএফ, জয় ভীম ইন্ডিয়া নেটওয়ার্ক, যাদবপুর কমিউন, অরিজিত মিত্র স্মারক কমিটি সহ আরও কয়েকটি সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে ফাদার স্ট্যান স্বামীর এই পরিকল্পনা মাফিক হেফাজতে হত্যার বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই বিকাল থেকে এক চলমান প্রচার ও ধারাবাহিক পথসভার আয়োজন করা হয়েছিল। বাঘাযতীন হাসপাতাল মোড়ে দীর্ঘক্ষণ ব্যাপী প্রতিবাদী সভা চলে। উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী ডাক্তার বিনায়ক সেন। নানান সংগঠনের সুসজ্জিত প্ল্যকার্ড ও পোস্টারে গোটা অনুষ্ঠানটি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। বক্তব্য রাখেন তমাল চক্রবর্তী, বর্ণালী মুখার্জী, আইসার অত্রি, সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির পক্ষে সম্প্রীতি, জয় ভীমের পক্ষে শরদিন্দু উদ্দীপন, দেবাশীষ চক্রবর্তী। প্রত্যেক বক্তার বক্তব্যেই উঠে আসে শোকস্তব্ধ ক্ষোভ। দিনের পর দিন সামাজিক কর্মীদের প্রতি ইউএপিএ’র মতো বীভৎস ঔপনিবেশিক আমলের আইন ব্যবহার করে কিভাবে পরিকল্পিতভাবে আঘাত নামানো হচ্ছে, খুন করা হচ্ছে, কিভাবে রাজনৈতিক বন্দীদের উপর দিনের পর দিন অকথ্য নির্যাতন চলছে থেকে রাজ্যেও রাজনৈতিক বন্দীদের বেহাল দশা সংক্রান্ত জ্বলন্ত তথ্যাদি ও দাবি সমূহ। এরপর মিছিল শুরু হয়। কমরেড শান্তনুর “এই তপ্ত অশ্রু দিক শক্তি” গান দিয়ে সভা শুরু হয়। শেষ হয় নীতীশ রায়-এর গান দিয়ে। গোটা অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন চন্দ্রাস্মিতা। মিছিল চলাকালীন কয়েকটি স্থানে ছোট ছোট সভায় কয়েকজন বক্তা বক্তব্য রাখেন। ফাদার স্ট্যান স্বামীই সেই মানুষ যিনি লাগাতার আদিবাসী ও মুলবাসী যুবকদের নির্বিচারে ‘আরবান নকশাল’ বলে তকমা দিয়ে জেলে পচিয়ে রাখার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছেন, আওয়াজ তুলেছেন অরণ্য আইন, আদিবাসীদের অধিকার সহ একাধিক প্রশ্নে। সেই লড়াইকে এভাবে শেষ করা যাবে না — মিছিলের অগণিত মানুষ আবারও যেন সেই বার্তাই দিলেন বারংবার।