লকডাউন কিংবা বিধিনিষেধ, যে নামেই বলা হোক না কেন, মেহনতি মানুষ আজ বড় অসহায়। কাজ নেই, হাতে পয়সা নেই, ওদিকে প্রতিটি জিনিসের দাম আগুন! বিগত একবছরে লকডাইনের সময়কালে পেট্রোলের দাম বেড়েছে ২৮ টাকা, ডিজেল ২৬ টাকা! ফলে মূল্যবৃদ্ধি কোমরভাঙা। এর বিরুদ্ধে রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ দিবসের অঙ্গ হিসাবে গত ২২ জুন নদীয়া জেলার বিভিন্ন এলাকায় মিছিল ও সভা করা হয়। রেল সহ বিভিন্ন গণপরিবহন চালু করা, গরিবদেরকে ঘরে ঘরে রেশন পৌছে দেওয়ার দাবি গুরুত্বের সাথে তুলে ধরে সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের পক্ষ থেকে নবদ্বীপের রাধাবাজারে প্রতিবাদসভা পথ চলতি ব্যাপক মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বক্তব্য রাখেন জেলা কমিটি সদস্য পরিক্ষিৎ পাল, স্থানীয় সংগঠক তপন ভট্টাচার্য, দেবাশীষ সিংহ প্রমুখ। চাকদা শহরের বাজার এলাকায় হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে শ্লোগান সহকারে প্রতিবাদী কর্মসূচি হয়। এই এলাকায় মাইক্রোফিনান্স কোম্পানির ঋণগ্রস্ত গরিব মহিলাদের উপর জুলুমবাজির বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনের দাবিগুলিও সামনে উঠে আসে। উপস্থিত ছিলেন জেলা কমিটির সদস্য বিজয় সাহা, লিটন কর্মকার, মল্লার মৈত্র প্রমুখ।
ধুবুলিয়া বাজারে মিছিল ও প্রচারসভা সংগঠিত হয়। পার্টির দলীয় কার্যালয় থেকে শুরু হয়ে এক দৃপ্ত মিছিল গোটা বাজার এলাকা পরিক্রমা করে, যা ব্যাপক মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। শ্লোগান ওঠে, পেট্রোল ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি কার স্বার্থে, আম্বানিদের দালাল মোদী সরকার জবাব দাও, সকল মানুষকে করোনা টিকাকরণের সময় বেঁধে দিতে হবে, কোভিড চিকিৎসার সমস্ত উপকরণের উপর থেকে জিএসটি প্রত্যাহার করতে হবে, চাষিদের দুয়ারে দুয়ারে সরকারি দরে ধান কেনা, ১০০ দিনের কাজ চালু করা, চাষিদের ভর্তুকি দিয়ে সার ডিজেল সরবরাহের দাবি তুলে ধরা হয়। পরিশেষে, নেতাজী পার্কে নেতৃবৃন্দ সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন পার্টির জেলা সম্পাদক জয়তু দেশমুখ, জেলা কমিটি সদস্য সন্তু ভট্টাচার্য, বেলা দে, এলাকা সম্পাদক শংকর রায়, স্থানীয় নেতা বাবুলাল দাস, বাবর আলি সেখ, যুব সংগঠক অমিত মন্ডল প্রমুখ। নাকাশীপাড়া ব্লকের গাছা বাজারে মিছিল করে প্রচার করা হয়, বাসস্ট্যান্ডে বক্তব্য রাখা হয়। বক্তব্য রাখেন কৃষ্ণপদ প্রামানিক ও কাজল দত্তগুপ্ত।
এই প্রচার কর্মসূচিগুলিতে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, লকডাউনে গরিব মানুষের সংকটের বিপরীতে দেখা যাচ্ছে বিদেশী সুইস ব্যাংকের তথ্য অনুসারে ভারতীয় ধনকুবেরদের সঞ্চিত অর্থ গত ১৩ বছরের রেকর্ড ছাড়িয়েছে। বিগত এক বছরে জমার অঙ্ক বেড়েছে ২৮৬%। ব্যাক্তিগতভাবে জমা দেওয়া টাকার অংক বেড়েছে ৩৯%। অর্থাৎ একদিকে ধনীরা মুনাফার পাহাড় গড়ছে, আর সাধারণ জনগণের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে সংকটের বোঝা। কৃষিকাজ খুবই সংকটের মধ্য দিয়ে চলছে। অসম্ভব শ্রমে ঘামে কোনোক্রমে দিন গুজরান করে চলেছে আমাদের অন্নদাতা চাষিরা। কিন্তু গ্রামে-গঞ্জে শ্রমজীবীদের কোনো কাজ নেই। কর্মনিশ্চয়তা প্রকল্পের বড় বড় সরকারি ঘোষণা শূন্যগর্ভ। কাগজে কলমে চুরি হয়ে যাচ্ছে মজুরের প্রাপ্য টাকা। লকডাউনের নীরবতা ভেঙে সজোরে আওয়াজ তুলে ধরতে হবে।