যন্তর-মন্তরে ঐতিহাসিক কিষাণ সংসদের আজ ছিল চতুর্থ দিন। গতকাল মহিলা কিষাণ সংসদের উদ্যোগে শুরু হওয়া অত্যাবশ্যকীয় পণ্যদ্রব্য (সংশোধন) আইন ২০২০ নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত রেখে আজ একই বিষয়ে আলোচনা হয়। কিষাণ সংসদে এই বিষয়টি লক্ষ করা গেল যে সারা পৃথিবীর ক্ষুধা সূচকে (গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স) ভারতের অবস্থান অত্যন্ত নিচের দিকে এবং তার ক্রমাগত অবনতি হয়ে চলেছে। এটি নজরে এসেছে যে ১৯৫৫ সালের আইনে আনীত গত বছরের সংশোধনীগুলি খাদ্যদ্রব্যের মজুতদারী ও কালোবাজারিকে আইনি স্বীকৃতি দিয়েছে এবং এই সংশোধন সাধারণ উপভোক্তা ও কৃষকদের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করে কৃষিপণ্য ব্যবসায়ী এবং বড় ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য আনা হয়েছে। কিষাণ সংসদে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণহীন করে দেওয়ার ফলে, ব্যবস্থাটিতে বড় বড় কর্পোরেট ও বিশ্বব্যাপী খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং বিপণন সংস্থাগুলির আধিপত্য বাড়িয়ে তুলবে। গতকালও মহিলা কিষাণ সংসদে যেমন জোর দিয়ে বলা হয়েছিল এবং এই সংসদও তেমনি সাধ্যের মধ্যে দামে প্রত্যেকের জন্য খাদ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার গুরুত্বের কথা অনুভব করে, কিন্তু আইনের এই সংশোধনীগুলি শুধুমাত্র বাজারে “অস্বাভাবিক দাম বাড়লে তবেই সরকারকে মজুতের সীমা আরোপ করার ক্ষমতা দেয়”। আরও খারাপ বিষয় হল, এমনকি জরুরি পরিস্থিতিতেও অনেক সংস্থার ক্ষেত্রে মজুতের সীমাবদ্ধতা মেনে চলার দরকার নেই, আইনের সংশোধনীতে কিছু ব্যাতিক্রম রাখার জন্য এবং সরকারের নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা মারাত্মকভাবে সীমিত করে দেওয়ার জন্য এমন পরিস্থিতি হয়েছে। কিষাণ সংসদে প্রস্তাব নেওয়া হয় যে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যদ্রব্য (সংশোধন) আইন ২০২০ সংসদ দ্বারা বাতিল করা উচিত। আজ যে কিষাণ সদস্যরা বিতর্কে অংশ নিয়েছিলেন তাদের মধ্যে একজন হলেন বোম্বাই হাইকোর্টের মাননীয় প্রাক্তন বিচারক বি জি কোলসে পাতিল।
ক্রমবর্ধমান দাম নিয়ন্ত্রণের নামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ব্যতীত অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করা মসুর ডালের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে শূন্যে নামিয়ে আনা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উৎপন্ন মসুর আমদানি করা বা সেখান থেকে রফতানির জন্য শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ করে দেওয়া কৃষকের স্বার্থ রক্ষার্থে, এই বলে ভারত সরকার যে দাবিগুলি করছে তা সর্বৈব মিথ্যা। এছাড়াও, কৃষি পরিকাঠামো উন্নীত করার জন্য কৃষি পরিকাঠামো ও উন্নয়ন সেস (এআইডিসি) বর্তমান ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। সরকারের এই কৃষকবিরোধী পদক্ষেপের নিন্দা জানায় এসকেএম।
কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী কিষাণ সংসদকে ‘নিরর্থক’ বা ‘অর্থহীন’ বলেছেন। তিনি এই কথা বলতে পেরেছেন তার কারণ তিনি এবং তার সরকারের দৃষ্টিভঙ্গিই হল যে কৃষকদের বিশ্লেষণ এবং ব্যাখ্যা, কৃষকদের আট মাসেরও বেশি সময় ধরে রাস্তায় পড়ে থাকা এবং ৫৪০ জনেরও বেশি সহকর্মীকে হারানো সবটাই ‘নিরর্থক’। মন্ত্রী আজ বিরোধী সংসদ সদস্যদেরও বলেছেন যে “তারা যদি কৃষকদের নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন তবে তাদের উচিত এই সংসদকে কাজ করতে দেওয়া”। কৃষকরা ‘জনতার হুইপ’এর মাধ্যমে বিরোধী দলের সংসদদের যা করতে বলেছিল, তাই তারা করছেন, এই সত্যটি মন্ত্রী এড়িয়ে যেতে চাইছেন। সাধারণ নাগরিকদের যখন জীবন-মৃত্যুর লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে, তাও সেটা যখন মোদী সরকারেরই চাপিয়ে দেওয়া, তখন সরকার কখনোই ‘স্বাভাবিক কাজকর্ম’ আশা করতে পারে না!