ইয়াস সাইক্লোনে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী অঞ্চল ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর রাজ্য সরকার ‘দুয়ারে ত্রাণ’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল। প্রচার করা হয়েছিল যে আমফান ঘূর্ণিঝড়ের পরে ক্ষতিপূরণের নামে যে অরাজকতা এবং লুটপাট চালানো হয়েছিল এবার তা হবে না। এবার নাকি ‘নিখুঁত যাচাই-ব্যবস্থা’র মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ বণ্টন হবে। সেই ক্ষতিপূরণের প্রাথমিক তথ্য আজ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। কতটা নিখুঁতভাবে চলছে ইয়াস ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতিপূরণ বণ্টন?
ঘূর্ণিঝড়ের পর মুখ্যমন্ত্রী হিসেব দিয়েছিলেন ২.২১ হেক্টর চাষের জমি ক্ষতিগ্রস্ত, ৩ লক্ষ বাড়িঘর ভেঙেছে। ক্ষতির পরিমাণ ২০ হাজার কোটি টাকা। এদিকে ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তির সরকারি তথ্য বলছে, ১৬.৮ লক্ষ আবেদনকারীকে চাষের জমি নষ্ট হওয়ার কারণে ২৪০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ কৃষকরা মাথাপিছু পেয়েছেন ১,৪২৮ টাকা মাত্র!
আর সর্বসাকুল্যে ২.২১ হেক্টর চাষের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকলে ১৬.৮ লক্ষ কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার মানে ১ বিঘা জমি প্রতি মাত্র একজন করে কৃষককে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। এরথেকে স্পষ্ট যে ভাগচাষিরা কোনো ক্ষতিপূরণ পায়নি, শুধু জমির মালিকরাই পেয়েছে। তদুপরি, জমিতে ফসল নষ্ট হয়ে থাকলে প্রতি বিঘায় চাষের ক্ষতির পরিমাণ ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার কম নয়। জমিতে নোনা জল ঢুকে থাকলে সেটা বার করে জমি চাষযোগ্য করতে আরও ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ হবে, আবার ফসল ফলাতে এক বছর বা তারও বেশি সময় লাগতে পারে। এতদসত্ত্বেও মাথাপিছু ক্ষতিপূরণ মাত্র ১,৪২৮ টাকা। এটা কি মেনে নেওয়া যায়?
‘দুয়ারে ত্রাণ’ কর্মসূচিতে চাষের ক্ষতিপূরণের নামে যেটা হয়েছে সেটা একরকম প্রহসন। এছাড়াও ৫ লক্ষ আবেদনে মাত্র ১.৮ লক্ষকে ঘরবাড়ি ভাঙা এবং অন্যান্য ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে। বাকি আবেদন বাতিল। সরকারের বক্তব্য মোট ক্ষতিপূরণের পরিমাণ হবে ৪০০ কোটি টাকা মাত্র। অথচ মুখ্যমন্ত্রী নিজে প্রধানমন্ত্রীকে ২৯ মে ২০২১ জানিয়েছিলেন যে ২০ হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
২০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতির জন্য ৪০০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ — এই হচ্ছে ‘দুয়ারে ত্রাণ’ কর্মসূচির স্বরূপ। আসলে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার দুজনেই কৃষক এবং গরিব মানুষের জীবন-জীবিকা নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে।
- প্রসেনজিৎ বসু