বর্তমান কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক কর্তৃক গত মার্চ মাসে রাজ্য সরকারগুলোর প্রতি একটি এ্যডভাইজারী বা নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, জাতীয় গ্রামীণ কর্মনিশ্চয়তা আইনে বিভিন্ন বর্গ বিশেষ করে তপশীল জাতি ও উপজাতিদের কাজের হিসাব আলাদা করে রাখতে হবে এবং তাদের জাতিগত শংসাপত্র দেখাতে হবে। এই এ্যডভাইজারী কার্যকরী না করলে কাজের বরাদ্দ পাওয়া যাবে না। মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রথমে এই প্রকল্প বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের অজুহাত তুলেছিলেন। কিন্ত গ্রামীণ কর্মসংস্থানের একমাত্র প্রকল্প বন্ধের চক্রান্তের বিরুদ্ধে মানুষের বিক্ষোভের ফলে তা বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। তবে বারবার বিভিন্ন ধরনের ফরমান জারীর মাধ্যমে এই প্রকল্পের কাজ সংকুচিত করার চেষ্টা চলেছে। ২০০৫ সালে তৈরি এই আইনে গ্রামীণ জনগণের চাহিদা-ভিত্তিক সমস্ত পরিবারের জবকার্ড ও কাজ পাওয়ার অধিকার আছে। সেখানে কোন জাতি/উপজাতির প্রশ্ন নেই। এক্ষেত্রেও কৃষি আইন, শ্রমকোর্ড ও অন্যান্য সরকারি সম্পত্তির বিলগ্নীকরণ করার মত সংসদকে এড়িয়ে করা হয়েছে। এই এডভাইজারী কার্যকরি হলে কাজ ও মজুরি পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হবে। তাই দেশের ৮টি কৃষিমজুর সংগঠন দিল্লীতে বৈঠক করে এই এ্যডভাইজারী প্রত্যাহারের দাবিতে ২৬ জুলাই জেলাশাসকের দপ্তর ও ব্লকে ডেপুটেশন সংগঠিত করার কর্মসূচি নেয়। জেলাশাসক ও বিডিও মারফত রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকপত্র পাঠানোর কর্মসূচি ঘোষণা করে। সেই কর্মসূচির অংশ হিসেবে পুর্ব বর্ধমান জেলাশাসকের কাছে সারা ভারত কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সমিতির জেলা কমিটির পক্ষ থেকে ডেপুটেশন দেওয়া হয় এবং জেলাশাসক মারফত রাষ্ট্রপ্রতির কাছে স্মারক পত্র পাঠানো হয়। দাবি ছিল, (১) কেন্দ্রীয় সরকারের এমএনআরইজিএ প্রকল্প হত্যার চক্রান্তকারী এসসি-এসটি শংসাপত্র দেওয়া ও আলাদা হিসাব রাখার এ্যডভাইজারী তুলে নিতে হবে। রাজ্য সরকারকে এই এ্যডভাইজারীর বিরুদ্ধে কেন্দ্রে প্রতিবাদ জানাতে হবে। (২) এমএনআরইজিএ প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়িয়ে বছরে ২০০ দিনের কাজ ও ৬০০ টাকা মজুরি পাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
বর্তমানে রাজ্য জুড়েই রেশন কার্ডের সাথে আধার কার্ড লিংক করা হচ্ছে। ডিলাররা প্রচার করছে আধার কার্ড লিংক না হলে রেশন পাবে না। অনেক ক্ষেত্রেই আধার কার্ড সবাই পায়নি। অন্যদিকে আধার কার্ডে ভুল থাকার জন্যেও আধার লিংক হওয়ার সমস্যা হচ্ছে। তাই দাবি তোলা হয়েছে আধার কার্ড লিংক বাধ্যতামূলক করে গরিব মানুষকে রেশন থেকে বঞ্চিত করা চলবেনা। রেশনে ডাল, তেল, আলু ও সব্জি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচিতে গ্রামীণ জনগণের থেকে বিভিন্ন প্রকল্পের সুযোগ পাওয়ার জন্য আবেদন নেওয়া হয়েছিল। কিন্ত সেইসব আবেদনের এখনও পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থাই হল না। তাই দাবি করা হয়েছে সমস্ত আবেদনকারীদের প্রকল্পের সুযোগ পাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। সুযোগ পাওয়ার অযোগ্য হলে কারণ জানাতে হবে। ‘আবাস প্লাস’ প্রকল্পের তালিকা জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে এবং প্রকৃত প্রাপকদের ঘর পাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে সমস্ত মানুষকে বিনামূল্যে অবিলম্বে ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
অতিরিক্ত জেলাশাসক ডেপুটেশন গ্রহণ করেন, রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকপত্র পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন বলেন। অন্যান্য দাবিগুলো নির্দিষ্ট দপ্তরে পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন জানান। তবে তিনি বলেন আধার লিংকের সাথে বর্তমান রেশন বন্টনের কোন সম্পর্ক বা বিধিনিষেধ নেই। ডেপুটেশনে প্রতিনিধিত্ব করেন আয়ারলার জেলা সম্পাদক আনসারুল আমান মন্ডল ও সজল পাল। ডেপুটেশনের শুরুতে বিভিন্ন দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড, ব্যানার ও পতাকা হাতে বর্ধমান শহরের কার্জন গেট থেকে মিছিল করে গিয়ে জেলাশাসকের অফিসের সামনে বিক্ষোভ সংগঠিত করা হয়।
আয়ারলার রাজ্য কমিটি ও পুর্ব বর্ধমান জেলা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পূর্ব বর্ধমান জেলার পূর্বস্থলী ২নং ব্লক, পূর্বস্থলী ১নং ব্লক, কালনা ২নং ব্লক, মন্তেশ্বর ও বর্ধমান সদর ১নং ব্লকে গত ২২ জুলাই বিডিও ডেপুটেশন সংগঠিত করা হয়। দাবি ছিল,
১) গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে সমস্ত গরিব মানুষের অবিলম্বে ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
২) গ্রামীণ ‘আবাস প্লাস’ যোজনায় ঘরের তালিকা জনসাধারণের মধ্যে প্রকাশ করতে হবে। ঘর নিয়ে দলবাজি দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। প্রকৃত প্রাপকদের অবিলম্বে ঘর পাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
৩) রেশন কার্ডের সাথে আধার কার্ড লিংক বাধ্যতামূলক করা চলবেনা। আধার লিংকের অজুহাতে গরিব মানুষকে রেশন থেকে বঞ্চিত করা চলবে না। রেশনে ডাল, তেল, আলু ও সব্জি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
৪) সমস্ত গরিবদের ১০০ দিনের কাজ দিতে হবে, মজুরি কম দেওয়া চলবে না। ১০০ দিনের কাজ নিয়ে দুর্নীতি-দলবাজী বন্ধ করতে হবে।
৫) মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী সমস্ত অনথিভুক্ত ভাগ, লিজ ও চরের খাস জমিতে গরিব কৃষকদের ‘কৃষক বন্ধু’ প্রকল্পের সুযোগ দিতে হবে।
৬) মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতিমত সমস্ত গরিব পরিবারের মহিলাদের ৫০০/১০০০ টাকার মাসিক ভাতা দিতে হবে।
৭) শস্যবিমার ক্ষতিপূরণ সমস্ত কৃষকদের দিতে হবে। সব্জি চাষিদের শস্যবীমার আওতাধীন করতে হবে।