২০২১’র ২৮ জুলাই কমরেড চারু মজুমদারের হেফাজত হত্যার ৪৯তম বার্ষিকী আর সিপিআই(এমএল) পুনর্গঠনের ৪৭তম বার্ষিকী। ১৯৭০ দশকের প্রথমভাগের সেই ঝোড়ো দিনগুলি ১৯৭৫’র কুখ্যাত জরুরি অবস্থায় গিয়ে চূড়ান্ত রূপ নেয়। তখন থেকে প্রায় পাঁচ দশক অতিবাহিত হয়ে গেছে। এখন ভারতীয় রাষ্ট্র জরুরি অবস্থার সেই নিপীড়নের পালা নিয়ে আবার মঞ্চে হাজির হয়েছে। এবারের পালার নিষ্ঠুরতা ও নিপীড়নের মাত্রা অবশ্য ব্রিটিশ যুগকে লজ্জা দিচ্ছে।
নিপীড়ন এতটাই বেআব্রু এততাই উচ্চকিত যে মোদী সরকারকে এমনকি আদালতকেও স্মরণ করিয়ে দিতে হচ্ছে যে তাদের নির্বিচার নিপীড়ন গণতন্ত্রের সাংবিধানিক কাঠামোর সাথে মোটেই খাপ খাচ্ছে না। বিরুদ্ধতা ও প্রতিবাদ করার অধিকার যে গণতন্ত্রের মূল স্বীকৃতি তা দিল্লী হাইকোর্ট তুলে ধরল। সুপ্রিম কোর্ট সরকারকে প্রশ্ন করল কেন স্বাধীনতার সাত দশক পরেও ঔপনিবেশিক যুগের রাজদ্রোহ আইন দরকার পড়ছে।
রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তির দাবি এবং ঔপনিবেশিক যুগের রাজদ্রোহ আইন ও স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের ইউএপিএ’র মতো আইনগুলি বাতিল করার দাবি আরও একবার জনগণের চিন্তাচর্চাকে উদ্দীপিত করতে শুরু করেছে। এই দাবিগুলি, এই মুহূর্তের অন্যান্য বুনিয়াদি দাবি — বৈষম্যমূলক নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন, বিপর্যয়কর কৃষি আইন ও নয়া শ্রমকোড বাতিল করা এবং শ্রমিকের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা, বেসরকারিকরণ ও মূল্যবৃদ্ধি থামানো, কর্মসংস্থান ও মজুরি বাড়ানো, প্রতিটি কোভিড-মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ ও সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার সুযোগ — এইসব দাবিগুলির সাথে একত্রে বর্তমান সময়ের মূল গণতান্ত্রিক এজেণ্ডা নির্ধারণ করে দিচ্ছে।
মোদী সরকার এবার যখন তার পুনর্বিন্যস্ত বিশালাকার মন্ত্রীসভা নিয়ে সংসদের বাদল অধিবেশনে নয়া নয়া বিল আনার লক্ষ্যে প্রস্তুত তখন দেশে বিরোধী পক্ষকেও, তা সে রাস্তার আন্দোলনই হোক বা সংসদের ভেতরের বিরোধী দল, আরও নির্ধারক প্রতিরোধ গড়তে কোমর বাঁধতে হবে।
এই নতুন পরিস্থিতির যথাযোগ্য উদ্যোগে পার্টির সব কমিটি ও সমস্ত সদস্যকে পূর্ণ প্রাণশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। পরপর দু’বছর আমরা কোভিড১৯ মহামারি ও তার আনুষঙ্গিক প্রতিকুলতার সম্মুখীন রয়েছি, বিশেষত রয়েছে বিভিন্ন মাত্রার লকডাউন ও বিধিনিষেধ। এই পর্বে আমরা বেশ কিছু সাথীকে হারিয়েছি। অনেক কমরেড এখনও কোভিড সংক্রমণ পরবর্তী জটিলতায় ভুগছেন। এই পরিস্থিতি আমাদের চিরাচরিত কার্যধারায় এবং আন্দোলন ও সমাবেশের পন্থায় ছেদ এনেছে। তথাপি আমরা অনেকগুলি কার্যকরি অভিযান চালাতে সক্ষম হয়েছি ডিজিটাল ও ফিজিকাল উভয় উদ্যোগের সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে। মহামারীর কালপর্ব দীর্ঘায়িত হচ্ছে এবং ‘স্বাভাবিক অবস্থা ফেরা’ নিয়ে অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। এই অবস্থায় আরও সৃজনশীল পথে আমাদের উদ্যোগ ও সক্রিয়তা এবং আন্দোলনের প্রভাব পরিধি বাড়িয়ে চলতে হবে।
কমরেড চারু মজুমদারের শেষ কথা “জনগণের স্বার্থকে ঊর্দ্ধে তুলে ধরা ও যে কোনও মূল্যে পার্টিকে বাঁচিয়ে রাখা” ১৯৭০’র ধাক্কার দিনগুলিতে আমাদের অনুপ্রাণিত করেছিল, পথ দেখিয়েছিল। আজকের দিনে মোদী ২.০ ও কোভিড ২.০ এই সর্বনাশা যুগলবন্দীর মোকাবিলা করতেও আমাদের সেই একই মূলনীতি ও মেজাজ নিয়ে এগোতে হবে। পরিস্থিতির দাবি অনুযায়ী বিভিন্ন ফ্রন্টে লড়াই আন্দোলন ও পার্টিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, এখানে নিষ্ক্রিয়তা ও উদ্যোগহীনতার কোনো অবকাশ নেই।
- কেন্দ্রীয় কমিটি, ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী লেনিনবাদী)