মাত্র পঁয়তাল্লিশ বছরে প্রয়াত হলেন সিপিআই(এমএল) রেড স্টার দলের পলিটব্যুরো সদস্য ও এরাজ্যের ভাঙর গণআন্দোলনের অন্যতম সংগঠক শর্মিষ্ঠা চৌধুরী।
গত শতকের নব্বইয়ের দশকের প্রথম দিকে শর্মিষ্ঠা দর্শন নিয়ে প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়তে আসেন এবং সেখানেই সংগ্রামী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। এরপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা নিয়ে পড়াশুনো করেন তিনি ও টেলিগ্রাফ কাগজে সাংবাদিক হিসেবে যোগ দেন।
তবে কিছুদিন সাংবাদিকতা করার পরেই তিনি পেশাগত জীবন পরিত্যাগ করে কমিউনিস্ট বিপ্লবী আন্দোলনের সর্বক্ষণের কর্মী হিসেবে শ্রমিকদের মধ্যে কাজ শুরু করেন। মূলত খড়দহের লুমটেক্স জুটমিলের শ্রমিকদের আন্দোলন সংগঠনে তিনি সেই পর্বে সক্রিয় ছিলেন।
পরবর্তীকালে ভাঙরে পাওয়ার গ্রিডের বিরুদ্ধে যে শক্তিশালী গণআন্দোলন শুরু হয় তাঁর অন্যতম সংগঠক ও নেত্রী ছিলেন তিনি। এই আন্দোলনের সূত্রে তাঁকে বেশ কিছুদিন কারাবাসও করতে হয়। রাজ্যের মানুষের কাছে এই সময় পরিচিত রাজনৈতিক মুখ হয়ে ওঠেন তিনি। বিজেপিকে পরাস্ত করার জন্য সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনের আগে যে “নো ভোট টু বিজেপি” প্রচার আন্দোলন তৈরি হয়, সেখানেও ছিল তাঁর সক্রিয় ভূমিকা।
ছাত্র আন্দোলন, শ্রমিক আন্দোলন, কৃষক আন্দোলন, নারী আন্দোলনের মতো নানা ক্ষেত্রে সাফল্যের সাথে কাজ করার বিরল দক্ষতা দেখিয়েছেন শর্মিষ্ঠা। একদিকে তিনি যেমন ছিলেন শক্তিশালী সংগঠক, অন্যদিকে তাঁর লেখনিও ছিল চমৎকার। নারী আন্দোলন ও কমিউনিস্ট আন্দোলনের নানা ব্যবহারিক ও তাত্ত্বিক বিষয় নিয়ে তিনি নিয়মিত লেখালেখি করতেন।
শর্মিষ্ঠা গত কয়েকমাস ধরেই অসুস্থ ছিলেন। কিছুদিন আগে তিনি কোভিডেও আক্রান্ত হন। এরপরই হৃদযন্ত্র সহ নানা শারীরিক সমস্যা প্রবল হয়ে ওঠে। এসএসকেএম হাসপাতালের চিকিৎসকরা অনেক চেষ্টা করেও শেষপর্যন্ত তাঁকে বাঁচাতে ব্যর্থ হন।
শর্মিষ্ঠার মৃত্যুর খবর পাবার পরই সিপিআই(এমএল) লিবারেশান সহ বিভিন্ন বাম ও গণতান্ত্রিক মহলের সাথীরা পৌঁছে যান হাসপাতালে। পরদিন এসএসকেএম হাসপাতালেই চিকিৎসা বিজ্ঞানের স্বার্থে তাঁর দেহ দান করার আগে যে সংক্ষিপ্ত শ্রদ্ধাজ্ঞাপণ অনুষ্ঠান হয় তাতে লিবারেশানের পলিটব্যুরো সদস্য কার্তিক পাল সহ অন্যান্য কমরেডরা উপস্থিত ছিলেন। পার্টির সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য শর্মিষ্ঠার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন ও শর্মিষ্ঠার আন্দোলন, সংগ্রাম ও জীবনের সাথী অলীক চক্রবর্তী সহ তাঁর পরিবার বন্ধু কমরেডদের প্রতি সহমর্মিতা ব্যক্ত করেন। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদক পার্থ ঘোষ টেলিফোনে অলীক চক্রবর্তীর সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলে তাঁর শোক ও সমবেদনা ব্যক্ত করেন।
শর্মিষ্ঠা চৌধুরীর অকাল মৃত্যুতে বাংলার বাম ও কমিউনিস্ট আন্দোলন বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হল। আন্দোলন সংগ্রামের সাথীদের স্মৃতিতে শর্মিষ্ঠা অম্লান থাকবেন।
কমরেড শর্মিষ্ঠা চৌধুরী লাল সেলাম।