খবরা-খবর
২২ জুন পেট্রোপণ্যসহ সার্বিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ
Protest against the overall price hike

হুগলি

পেট্রোপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের দায় থেকে কেন্দ্রীয় সরকার সরে আসায় মোদী জমানায় রিলায়েন্স সহ তেল কোম্পানিগুলির আয় বেড়েছে বিদ্যুৎ গতিতে। মোদী জমানায় পেট্রোলের দাম বেড়েছে ২৪০ শতাংশ আর ডিজেলের দাম বেড়েছে ৭৯৪ শতাংশ। বিশ্ব বাজারে তেলের দাম যখন নিম্নমুখী তখন এ দেশে শুধু মে-জুন মাসেই তেল কোম্পানিগুলি ২৫ বার দাম বাড়িয়েছে। করোনা অতিমারিতে লকডাউনে বন্দি দেশবাসীর যখন সর্বনাশ তখন আম্বানি-আদানিদের পোষ মাস। মূল্যবৃদ্ধির সামান্যতম সুরাহা করার পরিবর্তে মোদী সরকার তেলের উৎপাদন শুল্ক ক্রমাগত বাড়িয়েই চলেছে। মূল্যবৃদ্ধির এই চরম জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে পার্টির আহ্বানে ২২ জুন রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি হুগলী জেলাতেও যথেষ্ট সফলতার সঙ্গে পালিত হয়।

সবচেয়ে প্রাণবন্ত ও আকর্ষণীয় কর্মসূচিটি অনুষ্ঠিত হয় জেলার সদর শহর চুঁচুড়ার কেন্দ্রস্থল আখনবাজারে। বেলা সাড়ে দশটায় শুরু হওয়া ব্যানার, পোস্টার, লাল ঝান্ডায় সুসজ্জিত এই কর্মসূচি শহরবাসীকে যথেষ্ট আকৃষ্ট করে। লকডাউনে নানা অসুবিধা সত্বেও ভালো সংখ্যক কর্মী-সমর্থক করোনা বিধি মেনে কর্মসূচিতে সামিল হন। চটকল ও নির্মাণ শ্রমিকদের সাথে সাথে সদ্যগঠিত বাস শ্রমিক সংগঠনের কর্মীরাও মূল্যবৃদ্ধি রোধের দাবিতে শ্লোগানে গলা মেলান। আখনবাজারের মূল বিক্ষোভ সভায় বক্তব্য রাখেন জেলা কমিটি সদস্য ভিয়েৎ ব্যানার্জী, গণ নেতা সনৎ রায়চৌধুরী, সুদর্শন বসু ও বাস শ্রমিক সংগঠক আকবর হোসেন। বিক্ষোভ সভা শেষে এক মিছিল ঘড়ি মোড় হয়ে বাস টার্মিনাসে শেষ হয়। বাস টার্মিনাসে সংক্ষিপ্ত সভায় বক্তব্য রাখেন পার্টির রাজ্য সদস্য চৈতালি সেন, শ্রমিক নেতা সুদর্শন প্রসাদ সিং ও বর্ষীয়ান পার্টি নেতা কল্যাণ সেন। সমগ্র অনুষ্ঠানটিতে জেলা সম্পাদক প্রবীর হালদার ও অন্যতম জেলা নেতা বটকৃষ্ণ দাস উপস্থিত ছিলেন।

Protest on June 22

 

জেলার শহরাঞ্চলের দ্বিতীয় বিক্ষোভ সভাটি অনুষ্ঠিত হয় বেলা পৌনে এগারটায় হিন্দমোটর বিপিন ভিলা মোড়ে। ‘তেলের দাম লাগামছাড়া, নরেন্দ্র মোদী হতচ্ছাড়া’, ‘মন কি বাতের ভাঁওতা ছাড়ো,মূল্যবৃদ্ধি রোধ কর’ – ইত্যাদি শ্লোগান তুলে পার্টির যুব কর্মীরা সভাস্থল মাতিয়ে তোলেন। সভায় মুখ্য বক্তা ছিলেন পার্টির তরুণ জেলা কমিটি সদস্য সৌরভ রায়। তিনি তাঁর বক্তব্যে বপেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির জন্য মোদী সরকারকে দায়ী করার সাথে সাথে মোদী সরকারের কর্পোরেট তোষণ নীতির তীব্র সমালোচনা করেন এবং করোনা কালে সমস্ত অসংগঠিত শ্রমিকদের নগদ অর্থ প্রদান ও শ্রমিক বিরোধী ৪টি শ্রম কোড প্রত্যাহারের দাবি জানান।বিক্ষোভ সভায় উপস্থিত নেতৃত্বের মধ্যে প্রদীপ সরকার, সুজয় দে, স্বপন মজুমদার প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য।

গ্রামাঞ্চলে দুটি জায়গা যথাক্রমে পান্ডুয়া ও ধনেখালিতেও বিক্ষোভ কর্মসূচি যথেষ্ট সাড়া ফেলে। পান্ডুয়ায় বেলা পৌনে বারটায় মেলাতলার পার্শবর্তী ইন্ডিয়ান অয়েলের পেট্রোল পাম্পের সামনে প্রতীকী বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়। ব্যানার ও পোস্টারে সজ্জিত এই কর্মসূচিতে বেশ কয়েকজন মেহনতী ঘরের তরুণ ছাত্রদের উপস্থিতি কর্মসূচিকে উজ্জ্বল করে তোলে। ডিজেলসহ পোট্রোপণ্যের ওপর কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের চাপানো সমস্ত কর প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে এখানে বক্তব্য রাখেন পার্টির পান্ডুয়া ব্লক সম্পাদক মুকুল কুমার। তিনি ২০০০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বিলাস বহুল সেন্ট্রাল ভিস্টা প্রকল্প বাতিল করে সেই অর্থ করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নতিতে খরচ করা এবং লকডাউন পর্বে ভুখা মানুষকে অনাহারের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য মাসিক ৩০০০ টাকা নগদ অর্থ প্রদানের দাবিকেও তুলে ধরেন।

ধনেখালি গঞ্জে এই দিন সকালে মদন মোহন তলা থেকে সিনেমাতলা পর্যন্ত এক মিছিল সংগঠিত করা হয়। এর পর নিকটবর্তী পেট্রোল পাম্পের সামনে এক প্রতীকী বিক্ষোভ প্রদর্শিত হয়। পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ জানানোর সাথে সাথে এখানে করোনা চিকিৎসার সুবন্দোবস্ত করা ও দ্রুত সর্বজনীন টিকাকরণেরও দাবি জানানো হয়।কর্মসূচিটির নেতৃত্বে ছিলেন সজল অধিকারী, সজল দে, পাগান মুর্মু, গোপাল রায়, শৈলেন মাঝি, রুমা আহিরি প্রমুখ নেতা-নেত্রীরা।

– মুকুল কুমার

Protest on June 22 Belghoria

বেলঘরিয়া-কামারহাটি

সিপিআই(এমএল) লিবারেশন, বেলঘরিয়া আঞ্চলিক কমিটির পক্ষ থেকে লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি, দুয়ারে রেশনের জন্য আধার ও রেশন কার্ড লিঙ্ক বাধ্যতামূলক করার বিরুদ্ধে, সবার জন্য রেশনের দাবিতে কামারহাটি পৌরসভার সামনে বিক্ষোভ অবস্থান হয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে কর্মসূচি পালন করা হয়। এছাড়াও কামারহাটি পৌর প্রশাসককে নিম্নলিখিত দাবি সহ স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

১) কামারহাটি পৌরসভার বিস্তীর্ণ অঞ্চল বৃষ্টিতে জল জমছে। নিকাশি ড্রেনের অব্যাবস্থাই এরজন্য দায়ী।

২) জমা জলে মশা থেকে ডেঙ্গি হওয়ার সম্ভবনা আছে। মশা মারার দ্রুত ব্যবস্থা করলে ভালো হয়।

৩) আমরা জানি কেন্দ্রীয় সরকারের অসহযোগিতার জন্য কোভিড ভ্যাকসিনের অভাব আছে, তা সত্ত্বেও আপনার কাছে অনুরোধ বরিষ্ঠ নাগরিকদের বাড়িতে গিয়ে টিকাকরণের ব্যবস্থা করা।

৪) প্রবর্তক জুট মিল বন্ধ, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে হোশিয়ারি, ব্যাগ, অটো, টোটো, রিক্সা চালক সহ অসংগঠিত ক্ষেত্রের বিড়াট সংখ্যক মানুষ অর্ধাহার, অনাহারে আছেন, তাদের জন্য যদি কিছু সাহায্য করা যায়।

৫) কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষি আইন, নতুন শিক্ষানীতি, শ্রমকোড, সেইল অফিস তুলে দেওয়ার আমরা প্রতিবাদ করছি।
আশাকরি আপনি বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবেন।

Protest on June 22_Budgebudge

দঃ ২৪ পরগণার

পেট্রোল ডিজেল সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে রাজ্যব্যাপী কর্মসূচির অঙ্গ হিসাবে দঃ ২৪ পরগণার বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ কর্মসূচি সংগঠিত হয়। দঃ ২৪ পরগণা জেলা অফিসের সামনে সংগঠিত কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন জেলা সম্পাদক কমরেড কিশোর সরকার। উপস্থিত ছিলেন কমরেড অঞ্জন ঘোষ, কমরেড দেবাশীষ মিত্র, যুবনেতা কমরেড সেখ সাবির (রাজা) সহ আরো অনেকে। বজবজ গ্রামাঞ্চলে দু-জায়গায় কর্মসূচি সংগঠিত হন। উপস্থিত ছিলেন গ্রাম লোকাল কমিটির সম্পাদক কমরেড ইন্দ্রজিৎ দত্ত, জেলা নেত্রী কমরেড দেবযানী গোস্বামী সহ আরো অনেকে। দুটি স্থানেই মহিলা কমরেডদের নজরকাড়া উপস্থিতি চোখে পড়ে। পূজালী অঞ্চলে যুবনেতা কমরেড আশুতোষ মালিকের নেতৃত্বে কর্মসূচি সংগঠিত হয়। উপস্থিত ছিলেন জেলানেত্রী কমরেড অঞ্জনা মাল। বাখরাহাটে বিবিরহাট পেট্রোল পাম্পে কর্মসূচি সংগঠিত হয়। উপস্থিত ছিলেন জেলা নেতা কমরেড দিলীপ পাল, কমরেড নিখিলেশ পাল সহ আরো অনেকে।

শিলিগুড়ি

২২ জুন রাজ্যের অন্যান্য জায়গার সাথে শিলিগুড়ি শহরের হাশমিচকে পেট্রোপণ্যের ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি, কোভিড চিকিৎসা সরঞ্জামের ওপর জিএসটি লাগু করা, সেইল সংস্থার আর.এম অফিস রাজ্য থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এবং বিনামূল্যে সর্বজনীন টিকাকরণ, আয়কর বহির্ভূত শ্রমজীবি পরিবারগুলিকে মাসিক ৭,৫০০ টাকা কোভিড ভাতা প্রদানের দাবিতে বিক্ষোভ দেখানো হয়। বিক্ষোভ কর্মসূচির নেতৃত্বে ছিলেন জেলা সম্পাদক অভিজিৎ মজুমদার, রাজ্য কমিটির সদস্য বাসুদেব বোস, মোজাম্মেল হক, গৌতম চক্রবর্তী, মীরা চতুর্বেদী, দীনবন্ধু দাস, অর্ধেন্দু চতুর্বেদী, শাশ্বতী সেনগুপ্ত প্রমুখ। বিক্ষোভে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন বাসুদেব বোস। বিক্ষোভ চলাকালীন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জেলা সম্পাদক বলেন কোভিড মহামারী দ্বিতীয় পর্যায়ে মানুষের যখন না খেতে পেয়ে কাজ না পেয়ে দিশেহারা অবস্থান মধ্যে আছে, তখন কেন্দ্রীয় সরকারের এ ধরনের জনবিরোধী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে। এবং উত্তরবঙ্গকে পৃথক রাজ্যের স্বীকৃতি দেওয়ার যে দাবি রাজ্য বিজেপির একাংশ করে চলেছে, সেই বিভেদকামী সিদ্ধান্তর বিরুদ্ধে জনগণকে সামিল করে শেষ পর্যন্ত লড়াই চালানো হবে।

Protest against the overall price hike_Burdwan

পূর্ব বর্ধমান

২২ জুন পেট্রল ডিজেল ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অস্বাভাবিক মুল্য বৃদ্ধি ও অন্যান্য দাবিতে সিপিআই(এমএল) লিবারেশন এর রাজ্য কমিটির আহ্বানে রাজ্য জুড়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ কর্মসূচি সংগঠিত হয় ।

পূর্ব বর্ধমান জেলার মন্তেশ্বর ব্লকের কুসুমগ্রাম বাজারে সকাল ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত করোনা বিধিনিষেধ মেনেই  বিক্ষোভ সংগঠিত করা হল। প্লাকার্ড পতাকা হাতে শ্লোগান ও বক্তব্য রাখার মাধ্যমে জনগণের সামনে দাবি গুলো তুলে ধরা হয়। বক্তব্য রাখেন রাজ্য কমিটির সদস্য কমরেড আনসারুল আমন মন্ডল। মানুষ উৎসাহ নিয়ে বক্তব্য শোনেন। কুসুমগ্রাম বাজারে ভালো প্রভাব পড়ে। দাবি ছিল পেট্রোল ডিজেল এর দাম বাড়ানো হচ্ছে কেন কেন্দ্রীয় সরকার জবাব দাও। অবিলম্বে গামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্র গুলিতে বিনা মুল্যে প্রতিটি মানুষের ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে ।মাথাপিছু রেশনে ১০কেজি চাল/গম সহ ডাল তেল আলু সব্জি দিতে হবে। বছরে ২০০ দিন কাজ ও দৈনিক ৬০০ টাকা মজুরি দিতে হবে। পরিবার পিছু মাসিক ৭৫০০টাকা করোনা ভাতা দিতে হবে। প্রতিটি জবকার্ডধারীকে ৫০ দিনের মজুরি অনুদান হিসেবে দিতে হবে । মোট ১৬টি দাবি তুলে ধরা হয়।

কালনা ২ নং ব্লকের শিরিষ তলা বাস স্ট্যান্ডে সিপিআই(এমএল) লিবারেশন এর কালনা লোকাল কমিটির পক্ষ থেকে বিক্ষোভ সংগঠিত করা হল। বিক্ষোভে বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এমএল) লিবারেশন-এর কালনা লোকাল কমিটির সম্পাদক কমরেড রফিকুল ইসলাম ।

পূর্বস্থলী ২নং ব্লক এর ফলেয়া স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় পুর্বস্থলী এরিয়া কমিটির পক্ষ থেকে বিক্ষোভ সংগঠিত করা হয়। বিক্ষোভে বক্তব্য রাখেন এরিয়া কমিটির সম্পাদক কমরেড শিবু সাঁতরা। প্রতিবাদ বিক্ষোভ হয় মেমারী ১নং ব্লকের নিমো বটতলা, সদর ১নং ব্লকের বন্ডুল বাজার, পূর্বস্থলী ১নং ব্লকের ইসলামপুর গ্রামে ও কাটোয়া ২নং ব্লক-এর সাহাপুর গ্রামে।

খণ্ড-28
সংখ্যা-23