চলে গেলেন পার্টির সংগ্রামী নেতা, মার্কসবাদী শিক্ষক কমরেড রামযতন শর্মা
Comrade Ramyatan Sharma

সিপিআই(এমএল)-এর সংগ্রামী নেতা ও প্রাক্তন পলিটব্যুরো সদস্য, ভূতপূর্ব বিহার রাজ্য সম্পাদক কমরেড রামরতন শর্মা গত ৬ জুন পাটনায় ইন্দিরা গান্ধী হার্ট ইন্সটিটিউটে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন।

এই মর্মান্তিক ঘটনার জন্য প্রত্যক্ষত দায়ী বিহার জেলা হাসপাতালগুলির গাফিলতি এবং স্বাস্থ্য পরিষেবা পরিকাঠামোর বেহাল অবস্থা। কমরেড অসুস্থ বোধ করলে তাঁকে জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় যেখানে তাঁর একটা ইসিজি পর্যন্ত করা হয়নি। চিকিৎসকরা তাঁকে পাটনায় স্থানান্তরিত করার পর মাঝরাতে ইসিজি করার পর বোঝা যায়, সকালেই তিনি হৃদরোগে গুরুতর আক্রান্ত হয়েছিলেন। এরপর পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু হয়, কিন্তু বৃথাই। চরম মূল্যবান সময় অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ায়, তাঁকে আর বাঁচানো যায়নি।

কমরেড রামযতন শর্মা ছিলেন সত্তরের দশকের সেই বিপ্লবী যোদ্ধাদের একজন, যাঁদের গোটা জীবনটাই কেটেছে পার্টি গঠন, গ্রামীণ বিহারে মার্কসবাদী শিক্ষাকে ছড়িয়ে দেওয়া এবং পার্টির তরুণ সদস্যদের দৃঢ়সংকল্প পার্টিকর্মী ও সংগঠক হিসাবে গড়ে তোলার কাজে।

আগামী মাসে তাঁর ৭৯ বছর পূর্ণ হত। জীবনের পাঁচটি দশক তিনি সর্বক্ষণের পার্টি সংগঠক হিসাবে অতিবাহিত করেছেন, বহু উত্থান-পতন ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যেও শক্ত হাতে সংগঠনের হাল ধরে থেকেছেন, কখনও নিরুৎসাহ বা হতোদ্যম তো হনইনি, বরং অক্লান্ত প্রয়াসে অদম্য চেতনায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে কমরেডদের মনোবল যুগিয়েছেন। এখন দায়িত্ব সেই তরুণ প্রজন্মের হাতে যাদের কাছে কমরেড রামযতন শর্মা এক অনন্য পথপ্রদর্শক শিক্ষক।

সত্তরের দশকে নকশালবাড়ি আন্দোলন এবং গ্রামীণ বিহারে শুরু হওয়া গরিব-দলিত শ্রেণীর রাজনৈতিক-সামাজিক আন্দোলনে অনুপ্রাণিত হয়ে কমরেড রামযতন সরকারি চাকরি ছেড়ে আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। আশির দশকে তৎকালীন মধ্য বিহারে বিপ্লবী কৃষক আন্দোলনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। শুধু বিহারেই নয়, দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও পার্টি প্রতিষ্ঠায় তিনি অবদান রেখেছেন। তিনি ঝাড়খণ্ড, উত্তর প্রদেশ এবং বিশেষ করে বিহারে নব্বইয়ের দশকে দীর্ঘ সময় রাজ্য সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ছত্তিশগড়ে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বশীল ছিলেন। কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্বেও ছিলেন। দীর্ঘদিন তিনি পার্টি মুখপত্র সমকালীন লোকযুদ্ধ সম্পাদনা করেছেন। পার্টির শিক্ষা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত ছিলেন। ছাত্র ও তরুণ সমাজকে বিপ্লবী মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ করা ও রাজনৈতিক কর্মী হিসাবে তাদের গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তাঁর অনন্য ভূমিকা কখনও ভোলা যাবে না।

কমরেড রামরতন শর্মার প্রয়াণে গভীর শোক জ্ঞাপন করেন পার্টির সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য, পার্টির বর্ষীয়ান নেতা স্বদেশ ভট্টাচার্য সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং গণসংগঠনের নেতৃত্বও অন্তিম শ্রদ্ধা জানান। মৃত্যু সংবাদ পাওয়া মাত্র সমস্ত পার্টি অফিসে পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়।

৭ জুন তাঁর শেষ যাত্রায় পা মিলিয়েছিলেন শোকার্ত কয়েকশো নেতা কর্মী সংগঠক। পাটনার দিঘা ঘাটে তাঁরা সজল চোখে কমরেডকে শেষ বিদায় জানান।

কমরেড শর্মাজী! আপনার ভালোবাসার পার্টি আপনার শিক্ষা ও ব্রতকে এগিয়ে নিয়ে যাবে!

খণ্ড-28
সংখ্যা-22