আজকের দেশব্রতী : ২৮ জানুয়ারী ২০২১ (অনলাইন সংখ্যা)
issuetrackkki

আধুনিক গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসাবে স্বাধীন ভারতের যাত্রা শুরু হয়েছিল ২৬ জানুয়ারী, ১৯৫০-এ, যেদিন ভারতের সংবিধান বলবৎ হয়েছিল। সেই সংবিধান যা ‘আমরা, ভারতের জনগণ’ দ্বারা, ভারতকে একটি সার্বভৌম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসাবে গড়ে তোলার এবং তার সমস্ত নাগরিকদের জন্য সার্বিক ন্যায়, স্বাধীনতা, সমতা ও সৌভ্রাতৃত্বকে সুনিশ্চিত করার দৃঢ় অঙ্গীকার সহ গৃহীত হয়েছিল। ভারতের ৭১তম প্রজাতন্ত্র দিবস, জনগণের একতা, দৃঢ়সংকল্প আর শক্তির অভূতপূর্ব প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে প্রত্যক্ষ করল, ভারতীয় সংবিধানের সেই প্রজাতান্ত্রিক চেতনাকে কীভাবে নতুন করে জ্বালিয়ে তুললেন ভারতীয় কৃষক সমাজ ও সাধারণ নাগরিক মানুষজন!

প্রসঙ্গত, সর্বনাশা কৃষি-আইন বাতিলের দাবিতে কৃষক আন্দোলনের বর্তমান পর্যায়টি শুরু হয়েছিল ২৬ নভেম্বর, যেদিন ভারতের সংবিধান গৃহীত হয়েছিল। যখন সরকার কৃষি আইনের নামে কর্পোরেট স্বার্থের ভজনায় সংবিধানের সেই চেতনা ও স্বপ্নের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল, সেই সময়ে এই ফ্যাসিস্ট কর্পোরেট আক্রমণের বিরুদ্ধে কৃষকদের দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ প্রতিরোধ, শুধু ভারতের কৃষক ও অন্যান্য কৃষিজীবী মানুষের নয়, ন্যায় ও গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামরত সমস্ত ভারতবাসীর স্বার্থ ও অধিকার রক্ষার জন্য দেশব্যাপী জনগণের একটি মঞ্চ গড়ে তুলেছে। ২৬ নভেম্বর ২০২০ থেকে ২৬ জানুয়ারী ২০২১-এর মধ্যে, মোদী সরকার, ভারত রাষ্ট্র এবং সঙ্ঘ-বিজেপি বাহিনী প্রতিবাদী কৃষকদের বিচ্ছিন্ন, বিভ্রান্ত, বিভক্ত এবং অসম্মানিত করার সম্ভবপর কোনো চেষ্টাই যখন বাকি রাখেনি, এই আন্দোলন তখন চারিদিকে আশা ও শুভেচ্ছার বিপুল তরঙ্গ জাগিয়ে এবং প্রবল উদ্দীপনার সঙ্গে ক্রমশ আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।

কৃষক আন্দোলন, হাড় হিম করা শীতের নিষ্ঠুর কামড়ের মধ্যে সরকারের বহুমুখী আক্রমণের রণকৌশলের মোকাবিলায় যথেষ্ট ধৈর্য, বিচক্ষণতা এবং হিম্মতের পরিচয় দিয়েছে। প্রজাতন্ত্র দিবসের আগেই আন্দোলনকে শেষ করে দেওয়ার সরকারের সমস্ত অপচেষ্টাকে বানচাল করে, প্রতিবাদী কৃষকরা আন্দোলনকে নিয়ে গেছেন এক নতুন উচ্চতায়। বল প্রয়োগে আন্দোলনকে চূর্ণ করতে বা শঠতার দ্বারা কৃষকদের পর্যুদস্ত করতে ব্যর্থ হয়ে, মোদী সরকার এখন কৃষকদের বিরুদ্ধে নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলাকে প্রশ্রয় দেওয়ার এবং জাতীয় প্রতীক ও স্তম্ভগুলিকে অসম্মান করার অভিযোগ তুলে, দিল্লিতে প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানের একটি বিকৃত ও বিভ্রান্তিকর বিবরণ দিয়ে আন্দোলনকে অবৈধ ঘোষণা করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।

এর থেকে বড় আর নির্লজ্জ ধৃষ্টতাপূর্ণ মিথ্যাভাষণ আর হয় না। দিল্লীর কোনো কোনো অঞ্চলে প্রতিবাদী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ এবং লালকেল্লা চত্বরে কিছু মানুষের নিশান সাহিব তোলার দৃশ্য সম্পর্কে এখনও বিশদভাবে জানা যায়নি, কিন্তু দুটো বিষয় একেবারে দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। এই দিনের ঘটনায় এই কৃষকরাই তাদের এক সাথীকে হারিয়েছেন এবং এই মৃত্যুতে তাদের মতো করেই শোকপ্রকাশ করেছেন, কোনো প্ররোচনার ফাঁদে পা দেননি। লালকেল্লার ঘটনায় এটাও নজরে রাখা উচিত, যে পতাকা ঘিরে এত প্রশ্ন, সেটি কিন্তু তেরঙ্গার কোন অসম্মান না করেই, একটি শূন্য পতাকাদণ্ড থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। সত্যি বলতে কি, দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের শেষের বছরগুলিতে ধর্ষণ-বিরোধী এবং দুর্নীতি-বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক কালের গণ আন্দোলনগুলির মতোই, তেরঙ্গাই চলমান কৃষক আন্দোলনের সবচেয়ে নজরকাড়া নিশান হয়ে উঠেছে, সঙ্গে রয়েছে কৃষক সংগঠনগুলির লাল ও সবুজ নিশান।

gggge

 

প্রতিবাদী জনগণের আবেগস্পন্দিত স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ, সংগ্রামী চেতনা এবং সৃজনশীল উদ্দীপনার নিরীখে চলমান কৃষক আন্দোলন ভারতের ইতিহাসে বৃহত্তম আন্দোলনগুলির একটি হয়ে উঠেছে। বিগত দশকে, দীর্ঘদিন ধরে চলা বেশ কয়েকটি গণসংগ্রামের সাক্ষী থেকেছে দিল্লী। ধর্ষণ-বিরোধী এবং দুর্নীতি- বিরোধী সংগ্রামগুলি দিল্লীতে কংগ্রেস সরকারকে সরিয়ে ‘আপ’কে এবং কেন্দ্রে ইউপিএ সরকারকে সরিয়ে মোদী-নেতৃত্বাধীন এনডিএ-কে এনে, সরকার-পরিবর্তনে একটা বড় ভূমিকা রেখেছে। এই লড়াইগুলির ক্ষেত্রেও আন্দোলনকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটেছে, অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলার ছবিও দেখা গেছে। কিন্তু সে সময়ে, এইসব লড়াই-আন্দোলনকে মিডিয়া ও সরকারের তরফে নৈরাজ্যবাদী বা দেশদ্রোহী বিশৃঙ্খলা বলে খারিজ করার চেষ্টা দেখা যায়নি।

গণতান্ত্রিক গণআন্দোলন ও গণপ্রতিবাদগুলিকে নৈরাজ্য সৃষ্টির দেশদ্রোহী কার্যকলাপ বলে অপবাদ দেওয়া ও ‘জনবিরোধী’ হিসেবে চিহ্নিত করার সংস্কৃতিটা খুব সুস্পষ্টভাবেই ২০১৪ পরবর্তী সময়কালের একটি প্রবণতা। রোহিত ভেমুলার প্রাতিষ্ঠানিক হত্যার পর জ্বলে ওঠা ছাত্র আন্দোলনকে দমন করার উদ্দেশ্যে মোদী সরকারের এই অপচেষ্টা আমরা দেখেছি। এটা গতবছর আবারও আমরা দেখলাম, জামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী এবং শাহিনবাগের প্রতিবাদী মহিলাদের শুরু করা সমান নাগরিকত্বের আন্দোলনের ক্ষেত্রে। এমন কি, শাহিনবাগের প্রতিবাদীদের হুমকি ও অপবাদ দেওয়ার চেষ্টাটা এক সংগঠিত মুসলিম-বিরোধী হিংসা প্রচারের রূপ নিয়েছিল। আর ঠিক তার পরেই প্রতিবাদীদের দানবীয় আইনে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে নেমে এসেছিল নির্যাতন। সরকার গোটা পৃথিবীকে বিশ্বাস করাতে চায় যে শাহিনবাগ আন্দোলন ছিল সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ঘটানোর জন্য একটা ষড়যন্ত্র।

সেই একই ছককে কাজে লাগাতে দেখা গেল দিল্লীতে প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানের পর। মানুষের উপলব্ধিতে আন্দোলনের কালিমালিপ্ত চেহারা গেঁথে দেওয়ার জন্য শুরু হয়ে গেছে এক কদর্য, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত জোটবদ্ধ মিথ্যা প্রচার। কৃষক আন্দোলন, যা উল্লেখযোগ্যভাবে আজ পর্যন্ত তার লক্ষ্যে অবিচল এবং ঐক্যবদ্ধ আছে, নিশ্চয়ই এই চ্যালেঞ্জকে অতিক্রম করতে সক্ষম হবে। কৃষক আন্দোলনের মধ্যে, সর্বনাশা কৃষি-আইন সম্পূর্ণ বাতিলের দাবি অর্জনের সমস্ত শক্তি নিহিত আছে। এই মহান সংগ্রামে, কর্পোরেট-বিরোধী ফ্যাসিস্ট-বিরোধী প্রতিরোধের সমস্ত শক্তিকে কৃষকদের পাশে অবিচলিত দৃঢ়তায় থাকতে হবে। সংগ্রামী অন্নদাতারা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠুন, জনতার প্রতিবাদ আরও দৃপ্ত হোক!

(এম এল আপডেট, খণ্ড-২৪ সংখ্যা-৫ (২৬ জানুয়ারী - ১ ফেব্রুয়ারী)   

pregge

২৮ জানুয়ারী পার্টির রাজ্য অফিসে এক সাংবাদিক বৈঠকে পার্টির সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য, পলিটব্যুরো সদস্য কার্তিক পাল ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জয়তু দেশমুখ সংবাদ সম্মেলন করেন। বিবৃতিতে প্রথমেই কৃষক আন্দোলন সম্পর্কে কেন্দ্র সরকারের কুৎসা প্রচারকে ধিক্কার জানিয়ে বলা হয়:

“লাল কেল্লা ঘটনায় যারা নেতৃত্ব দিয়েছে তাদের রাজনৈতিক সাংগঠনিক সম্পর্ক জড়িয়ে রয়েছে বিজেপির সঙ্গে, কৃষক আন্দোলন পরিচালনাকারী নেতৃত্বের সঙ্গে নয়। আর এই ঘটনার প্রশাসনিক দায়িত্ব বর্তায় কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্র বিভাগের উপর। অথচ এর দায় চাপিয়ে কৃষক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে পুলিশী অভিযোগ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা অবিলম্বে এই অভিযোগ প্রত্যাহারের দাবি জানাই।”

বিবৃতির দ্বিতীয় অংশে রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে পার্টির কর্মকৌশলের দিশা প্রসঙ্গে বলা হয়,

“রাজ্যে ক্ষমতা দখলের জন্য বিজেপি মরিয়া হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন অবিজেপি দলে ভাঙন ধরিয়ে, মিথ্যা প্রচার চালিয়ে এবং বাংলার মহান ঐতিহ্যকে জবরদখল করে বিজেপি তার ক্ষমতালিপ্সাকে যে কোনো মূল্যে চরিতার্থ করতে চায়। বিদ্যাসাগর, বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ, নেতাজী সুভাষ কেউই এই জবরদখল ও বিকৃতির কুৎসিত অভিযান থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। নিজেদের সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গী ও সর্বনাশা অ্যাজেন্ডাকে পশ্চিমবঙ্গের উপর চাপিয়ে দেওয়ার জন্য আরএসএস-বিজেপি বাহিনীর এই বেপরোয়া বিধ্বংসী অভিযানকে রুখে দেওয়া এবারের নির্বাচনে সমস্ত বামপন্থী ও গণতন্ত্রপ্রেমী শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের সবচেয়ে প্রাথমিক দায়িত্ব বলে আমরা মনে করি।

করোনাকালে লকডাউনের তিক্ত অভিজ্ঞতার মধ্যে এবারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে বাংলার বিভিন্ন শ্রেণী ও স্তরের জনগণের দৈনন্দিন জীবনের এবং গণতন্ত্র ও উন্নয়নের মূল প্রশ্নগুলো যাতে নির্বাচনের মূল অ্যাজেন্ডা হিসেবে উঠে আসতে পারে সেই উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা ধারাবাহিকভাবে আলাপ আলোচনা চালাচ্ছি। ‘জনগণের কথা, জনগণের দাবি’ অভিযানের পরবর্তী পর্যায়ে আগামী আট ফেব্রুয়ারী নাগরিক কনভেনশনের মাধ্যমে জনগণের দাবিসনদ প্রকাশিত হবে। এই দাবিসনদের ভিত্তিতে রাজ্য জুড়ে চলবে ব্যাপক গণসংযোগ অভিযান।

বিজেপির সর্বনাশা অ্যাজেন্ডাকে রুখতে চাই বামপন্থী আদর্শ ও আন্দোলনের শক্তিশালী উপস্থিতি এবং সুস্থ, গণতান্ত্রিক পরিবেশ। সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা স্পষ্ট দেখিয়ে দিচ্ছে শুধুমাত্র সরকারী ক্ষমতার রাজনীতি দিয়ে বিজেপিকে রোখা সম্ভব নয়। রাজ্যে বামপন্থী আন্দোলন ও গণতান্ত্রিক পরিবেশকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে আমরা প্রাথমিকভাবে বাছাই করা বারোটি আসনে প্রার্থী দেওয়ার কথা বিবেচনা করেছি। এই বারোটি আসনের তালিকা: ফাঁসিদেওয়া (দার্জিলিং), ময়নাগুড়ি (জলপাইগুড়ি), মোথাবাড়ি (মালদা), খড়গ্রাম (মুর্শিদাবাদ), মন্তেশ্বর, জামালপুর (বর্ধমান), ওন্দা, রাণীবাঁধ (বাঁকুড়া), কৃষ্ণনগর দক্ষিণ, নাকাশিপাড়া (নদীয়া), ধনেখালি, উত্তরপাড়া (হুগলি)। অন্য কিছু বাছাই করা আসনে অন্যান্য বামপন্থী ও গণআন্দোলনের প্রার্থীদের সমর্থন করার সাথে সাথে রাজ্য জুড়ে বিজেপিকে পরাজিত করতে আমরা সর্বাত্মক উদ্যোগ নেব।”

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে পার্টির অবস্থান ব্যাখ্যা করে সাধারণ সম্পাদক কমরেড দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, সারা দেশের সর্বত্রই বিজেপি মানুষের প্রধান শত্রু। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি এক জবরদখলকারী পার্টি হয়ে উঠছে, ছলে বলে অন্য দল ভেঙ্গে, বাংলার মনিষীদের সংকীর্ণ দলীয় সম্পদে পর্যবসিত করে বাংলাকে গ্রাস করতে চাইছে। কিন্তু বাংলায় বিজেপির বিরুদ্ধে একটি মাত্র জোটে সব বিরোধী দলের চলে আসার বাস্তবতা নেই। টিএমসির উগ্র বাম-বিরোধিতা ও গণতান্ত্রিক পরিসর সংকুচিত করা বাংলার রাজনীতিকে আরও দক্ষিণপন্থী দিকে ঠেলে দিয়েছে এবং বিজেপি সুযোগ পেয়েছে। অন্যদিকে বিজেপিকে মূল শত্রু হিসেবে বুঝে উঠতে পারছে না সিপিএম, বিজেপি ও টিএমসিকে একাসনে বসিয়ে বিজেপিকে আড়াল করে ফেলছে। নীতিগত অভিমুখ মিলছে না বলে সিপিএমের সাথে নির্বাচনী জোট গড়ে তোলা সিপিআই(এমএল)-এর পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। পার্টি স্বাধীনভাবে অল্প কয়েকটি বাছাই করা আসনে লড়ছে। বিজেপির শক্তিবৃদ্ধি প্রতিরোধ করে বাংলাকে বিপর্যয় থেকে রক্ষা করা ও বাংলায় বামপন্থী পুনরুজ্জীবন ঘটানোর লক্ষ্যে পার্টি এই নির্বাচনী কর্মকৌশল গ্রহণ করেছে।

naemmtt

পশ্চিমবঙ্গে আবার আসছেন বিজেপির দু’নম্বর নেতা অমিত শাহ। বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত আসতে থাকবেনই। কিছু না কিছু জিগির তোলা তাঁর পরিকল্পনায় থাকবে। বিগত সফরের রাজনীতিতে ছিল এক ডাকসাইটে তৃণমূল দলত্যাগীর বিজেপিতে অন্তর্ভুক্তি করানো এবং দু’জেলায় দুটি জমকালো রোড শো। এবারের সফরেও সেরকম চমক কিছু থাকতে পারে, তবে অন্যতম কর্মসূচী থাকছে মতুয়া সমাজের ভোটের দখল পেতে আসা। সকলের নজর থাকবে সিএএ তাসটি তিনি কেমন খেলেন। ২০২০-র জানুয়ারীতে দেশজুড়ে যেমন, তেমনই এই বঙ্গভূমিতে, বিশেষত কলকাতায় উত্তাল হয়েছিল ‘এনআরসি-এনপিআর-সিএএ’ বিরোধী আন্দোলন। ইস্যুটা তারপরে দীর্ঘ একবছর যাবত ভাসমান ছিল নিস্তরঙ্গে। কারণ জনজীবন স্তব্ধ হয়ে যায় অতিমারী আর লকডাউনে। এখন আবার জনজীবন সচল হচ্ছে যখন এবং বিধানসভা নির্বাচন নিকটে, তখন সিএএ বিষয়টা সামনে না এসে চাপা থাকবে না। বিজেপি লকডাউনকালীন প্রসঙ্গটাকে মাঝেমধ্যেই নাড়াচাড়া করে এসেছে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের এজেন্ডায়ও ইস্যুটা রয়েছে খুবই নজরের মধ্যে। কেন্দ্র ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন’-এর হুমকি-হামলা ফের কিভাবে নামায় বুঝতে হবে। মতুয়া সমাজের ভেতর থেকে বিজেপির এক সাংসদ ক্রমাগত চাপ দেখিয়ে আসছেন। এটা নিছক নিচের তলাকার স্বতঃস্ফূর্ত চাপ নয়। এ চাপের পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে সুপরিকল্পিতভাবে নাগরিক নিরাপত্তাহীনতার ভয়াতঙ্ক ঢুকিয়ে, নাগরিকতার নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হতে পারে একমাত্র সিএএ রূপায়ণ হলে, তার জন্য এরাজ্যে কেন্দ্রের অনুরূপ বিজেপি সরকার কায়েম হতে পারলে, সম্প্রদায় জনতার জানাবোঝায় পশ্চাদপদতার সুযোগ নিয়ে এসব উল্টোপাল্টা বুঝিয়ে। এই নীলনকশা বিজেপির ওপরতলার। সেইমতোই দলের বনগাঁ লোকসভা সাংসদকে দিয়ে গত মাস দুয়েক ধরে নতুন করে মতুয়া চাপ তোলানো হচ্ছে। মতুয়া জনতার বসবাস বাংলাদেশ লাগোয়া প্রায় সমস্ত জেলাতেই কমবেশি। সর্বত্র নীচেরতলায় উসকে তোলার ক্ষমতা নেই। উত্তর চব্বিশ পরগণা ও নদীয়া জেলাতেই যত জমায়েত সংঘটিত করানো হচ্ছে, যাতে জ্বালামুখ তৈরি করা যায়, যাতে ওজনদার নেতা উড়ে এসে দলের ভোট কৌশল হাসিল করার ‘অভয়বাণী’ জুড়ে দিতে পারেন।

বিজেপির এই নোংরা খেলায় নামার নীচতার উৎস রয়েছে নাগরিকতার প্রশ্নে তার ধর্মভিত্তিক বৈষম্যের দৃষ্টিভঙ্গীর মধ্যে। আর, আসামের মতোই বাংলায়ও ছুতো বানিয়েছে ‘বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী’ তত্ত্বকে। এটা ঘটনা, দেশভাগ, পূর্ববঙ্গ ও বাংলাদেশ সৃষ্টির ফলস্বরূপ হিন্দু উদ্বাস্তু জনতার স্রোত সবচেয়ে এসেছে পশ্চিমবঙ্গেই। সেই সিন্ধুতে হয়ত বিন্দুর মতো কিছু মুসলিমও এসে থাকবেন, হয় ধর্মনিরপেক্ষ ভারতে থাকা শ্রেয় মনে করে, নয়তো অপেক্ষাকৃত অর্থকড়ি নিশ্চয়তার আশায়। জন্মভূমি মনে করে বা জোতজমি, চলতি রুজি-রোজগারের ভাবনায় বহু হিন্দুও থেকে গেছেন ওপার বাংলায়, পাকিস্তানে। এপার বাংলায় উদ্বাস্তু আসাকে কেন্দ্র করে কখনও কোনো সংঘাত হয়নি, মিলমিশ হয়ে গেছে। বিজেপি নিজের সাম্প্রদায়িক ও ক্ষমতার রাজনীতির স্বার্থে অহেতুক সিএএ প্রণয়ন করেছে। গোড়ার বিষ বপন করা হয়েছিল বিগত বাজপেয়ী জমানায়, ২০০৩ সালে প্রথম নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন এনে। সেই ধারারই উত্তরোত্তর কোপ নামিয়ে আনা হচ্ছে ‘সিএএএনআরসি-এনপিআর, বিদ্বেষ-বিভাজন-দলবাজীর পরিবেশ তৈরি করছে বিজেপি। মতুয়া জনগণের উল্লেখযোগ্য অংশের ভোটার তালিকায় নাম আছে। যাদের নেই তাদের নাম তুলে দিলেই সহজে বাকি সমাধান হয়ে যায়। তার জন্য প্রতিবেশি বা পরদেশ থেকে ‘পীড়িত হয়ে চলে আসা’, ‘স্বেচ্ছায় নিজেদের বে-নাগরিক ঘোষণা করে’ সিএএ-র বিধানে নতুন করে আবার নাগরিকত্বের জন্য হত্যে দিয়ে থাকা; এসব চলতে দেওয়া হবে কেন?

বিজেপির এসব ঘোট পাকানো কৌশল প্রয়োগের জমি পাওয়ার পেছনে তৃণমূল কংগ্রেসও দায়ী। তৃণমূল এখন সিএএ-এনআরসি-এনপিআর-এর বিরোধিতা করছে বটে। কিন্তু বামফ্রন্ট আমলে তৃণমূল নেত্রী প্রায়শ ফেরী করতেন ভোটার তালিকায় ‘বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী’ থাকার অপপ্রচার, যার কোনও বাস্তব ভিত্তি সেদিনও ছিল না, আজও নেই। সেদিন ফায়দা তুলতে চেয়েছিল তৃণমূল, আজ লুঠের লঙ্কাকান্ড ঘটাতে চাইছে বিজেপি। তাছাড়া, মতুয়াদের বাস্তুজমির পাট্টা দেওয়া থেকে শুরু করে নাগরিক জীবনের শিক্ষা-স্বাস্থ্য-খাওয়া-পরার ন্যূনতম প্রয়োজনগুলো গুরুতর আকারে অবহেলিত হয়ে রয়েছে। এসবও ক্ষোভ জমে ওঠার কারণ। একদা বিরোধী দল থাকাকালীন উদ্দেশ্য প্রণোদনা, অধুনা শাসক হিসেবে অপদার্থতা-ব্যর্থতা তৃণমূল অস্বীকার করতে পারবে না।

তবে, বিজেপিকে কিছুতেই কোনও অজুহাতে বদ মতলব চরিতার্থ করতে দেওয়া যায় না। আসামে এনআরসি-র যাঁতাকলে হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে লক্ষ লক্ষ নিরীহ মানুষ ঘর-পরিবার ছাড়া হয়ে ছিন্নমূল, ভোগ করছে কারাগার-জীবনের বিভীষিকা। তাদের ব্যাপক অংশ হিন্দু জনগণ, ১৯ লক্ষের বেশি। তাই আসামের পরিণতি দেখে বুঝে নিতে হবে বাংলায় সিএএ নামানোর মধ্যে বিজেপির সুপ্ত উদ্দেশ্যটা কি!

আওয়াজ তুলে চলতে হবে সিএএ-এনআরসি-এনপিআর হটাও! বিজেপিকে ভোট নয়! বিজেপিকে হারাও — বিজেপিকে ভাগাও!!

gggggtttt

বাঁকুড়া

২৩ জানুয়ারী নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোসের ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে বিষ্ণুপুরে সকাল থেকেই বিভিন্ন স্থানে ‘আজাদ হিন্দ কিষাণ দিবস’ পালন করা হয়। সকালবেলা বিষ্ণুপুর পৌরসভার ‘সংগ্রামী শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন’ ও আইসা-র যৌথ উদ্যোগে মিউনিসিপ্যালিটিতে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোসকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানানো হয় ও মাল্যদান করা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ১৫০-এর অধিক সাফাই কর্মী। ঐ স্মরণসভাতে উপস্থিত ছিলেন ইউনিয়ন ও AICCTU’র নেতা ফারহান খান, দিলীপ বাউরী, বিল্টু ক্ষেত্রপাল, দিলবার খান ও সংগঠনের অন্যান্য কর্মীরা। চকবাজারে পোকাবাঁধের পাড়ে পুরনো রিক্সা ইউনিয়নের স্থাপন করা নেতাজীর মূর্তিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। সেখানেও স্থানীয় ৯নং ওয়ার্ড, ৬নং ওয়ার্ড ও শহর কমিটির পার্টি সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীতে মনোহরতলা-বোষ্টমপাড়াতে ডিওয়াইএফআই পরিচালিত ‘মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের পুরস্কার বিতরণ’ অনুষ্ঠানেও আইসা অংশগ্রহণ করে প্রগতিশীল কাজে ও লড়াইয়ে একতার বার্তা দেয়। উপস্থিত ছিলেন আইসা কেন্দ্রীয় এক্সজিকিউটিভ কমিটির সদস্য মঙ্গল মুর্ম্মু, রাজ্য কাউন্সিল সদস্য গৌরব, সাভাপ্রমস নেত্রী তিতাস গুপ্ত এবং উদ্বৃত্ত-র চাকা ফোরামের প্রান্তিক দাশগুপ্ত।

ওন্দা বিধানসভার নিকুঞ্জপুর স্কুল মোড়ে আজাদ হিন্দ কিষাণ দিবসের বার্তা জনতার সামনে তুলে ধরা হয়। সুভাষ চন্দ্র বোসের ছবিতে মালা দেওয়ার পর সভায় বক্তব্য রাখেন ফারহান, তিতাস ও মঙ্গল মুর্ম্মু। এরপর শ্লোগানের সাথে মিছিল করে নিকুঞ্জপুর বাজারে যাওয়া হয়। মিছিল থেকে তিনটি কৃষি আইন বাতিলের দাবি ওঠে এবং একই সাথে ভূমিহীন মানুষের পাট্টা ও বনের তপশীল মানুষদের অধিকারকে সুনিশ্চিত করার দাবি ওঠে। বাজারে পৌঁছেও একটি ছোটো সভা করা হয়। সেখানে বক্তব্য রাখেন আয়ারলা-র নেতা আদিত্য ধবল, আদিবাসী অধিকার ও বিকাশ মঞ্চের নেতা রবিদাস মুর্ম্মু ও সিপিআই(এমএল)-এর জেলা সম্পাদক বাবলু ব্যানার্জী।

ggg

কৃষক প্রজাতন্ত্র দিবস বাঁকুড়ায়

দিল্লীতে চলমান কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে ও কৃষি-কৃষকবিরোধী নয়া কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে প্রজাতন্ত্র দিবসে ওন্দা বাজারে সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের পক্ষ থেকে প্রতীকীভাবে গণঅবস্থান শুরু হয় সকাল ৯টা থেকে। শুরুতে শতাধিক মানুষের মিছিল হয় সারা ভারত কিষান মহাসভার জেলা নেতা বৈদ্যনাথ চীনার নেতৃত্বে। অবস্থান শুরু করা হয় কৃষক আন্দোলনের যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের স্মরণ করে। এই অবস্থান বিক্ষোভে কৃষকদের আন্দোলনের সমর্থনে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন সিপিআই-এর জেলা নেতা কল্যাণ সিং এবং আরএসপি-র জেলা নেতা সুনীল পাত্র। অবস্থান মঞ্চে বক্তা হিসেবে আইপোয়ার জেলা নেত্রী তিতাস জনতার মনযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হন। বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এমএল)’র জেলা কমিটির সদস্য ফারহান ও জেলা সম্পাদক বাবলু ব্যানার্জী। পরবর্তীতে বক্তব্য রাখেন আদিবাসী অধিকার ও বিকাশ মঞ্চের নেতা রবিদাস মুর্ম্মু, বিষ্ণুপুর পৌরভার AICCTU’র নেতা বিল্টু ক্ষেত্রপাল, আইসা’র নেতা গৌরব ব্যানার্জী, ক্ষেতমজুর নেতা আদিত্য ধবল। কৃষক প্রজাতন্ত্র দিবস ডাক দেওয়ার কারণ ও আজকের দিনে কৃষক বিদ্রোহের ঢেউ উত্তাল হওয়ার কি ভীষণ প্রয়োজনীয় তা ব্যাখ্যা করেন সিপিআই(এমএল) বাঁকুড়া জেলা কমিটির সদস্য ফারহান। জেলা সম্পাদক বাবলু ব্যানার্জী বলেন, সর্বোপরি বিজেপি মানে বিপর্যয় আর এই বিপর্যয়কে একদিকে আটকাতে হবে এবং অন্যদিকে পরাস্তও করতে হবে কৃষক-ভূমিহীন- মজদুরের লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে, ঐক্যবদ্ধ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে।

অন্যদিকে রাণিবাঁধ বিধানসভায় সকাল থেকে সারা দিনব্যাপী প্রচার চালানো হয় হীড়বাঁধ, খাতড়া ও রাণিবাঁধ ব্লক জুড়ে প্রত্যন্ত গ্রামে গ্রামে পৌঁছোয়, ছোট ছোট সভা আকারে। সেখানে পথসভাগুলিতে বক্তব্য রাখেন পার্টির জেলা কমিটির যুবনেতা রামনিবাস বাস্কে এবং প্রান্তিক দাশগুপ্ত, আইসা কেন্দ্রীয় কমিটির সদাস্য মঙ্গল মুর্ম্মু এবং আদিবাসী অধিকার ও বিকাশ মঞ্চ ও পার্টির রাজ্য নেতা সুধীর মুর্ম্মু।

ggg

দক্ষিণ ২৪ পরগণা

গত ২৩ জানুয়ারী সিপিআই(এমএল) দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা অফিস এবং বজবজ রণজিৎ মাঠে নেতাজী জন্মজয়ন্তী ও আজাদ হিন্দ কিষাণ দিবস পালিত হয় আইসা এবং আরওয়াইএ বজবজ জোনালের পক্ষ থেকে। উপস্থিত ছিলেন আইসা নেত্রী অনিন্দিতা মালিক, আরওয়াইএ নেতা সেখ সাবির, আশুতোষ মালিক সহ আরো অনেকে। পার্টির জেলা অফিসের সামনে কর্মসূচীতে ছিলেন জেলা সম্পাদক কিশোর সরকার সহ জেলা নেতৃবৃন্দ অঞ্জন ঘোষ, দেবাশীষ মিত্র লক্ষীকান্ত অধিকারী সহ আরো অনেকে। বজবজ গ্রামে ২৫ জানুয়ারী আয়ারলার নেতৃত্বে মশাল মিছিল হয়। উপস্থিত ছিলেন আয়ারলা জাতীয় কাউন্সিল সদস্যা দেবযানী গোস্বামী, সিপিআই(এমএল) লিবারেশন বজবজ গ্রাম লোকাল কমিটির সম্পাদক ইন্দ্রজিৎ দত্ত, শ্যামসুন্দর গোস্বামী সহ আরো অনেকে।

২৬ জানুয়ারী বজবজে অবস্থান কর্মসূচী পালন হয়। বক্তব্য রাখেন জেলা সম্পাদক কিশোর সরকার, বজবজ শহর লোকাল কমিটির সম্পাদক অঞ্জন ঘোষ, গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন রাজা (সেখ সাবির)। উপস্থিত ছিলেন জেলা আইপোয়া নেত্রী কাজল দত্ত, আয়ারলা’র নেত্রী দেবযানী গোস্বামী, এআইসিসিটিইউ নেতা শিবন ধর, লক্ষীকান্ত অধিকারী, অঞ্জনা মাল, যুবনেতা আশুতোষ মালিক, ‘চলার পথে’ সাংস্কৃতিক সংস্থার সভাপতি দেবাশিস মিত্র এবং আরো অনেকে। ঐদিন বিকালে বাখরাহাটে সারা ভারত কিষাণ মহাসভা ও এআইকেএস’র নেতৃত্বে বাখরাহাট নতুন রাস্তা মোড় থেকে রায়পুর মোড় অবধি মিছিল হয় কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে। উপস্থিত ছিলেন এআইকেএম দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা সম্পাদক দিলীপ পাল সহ আরো অনেকে।

vdee

কৃষক প্রজাতন্ত্র দিবস পালন পূর্ব বর্ধমান জেলার বিভিন্ন ব্লকে

দিল্লীর কৃষক প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপন, ট্রাক্টর নিয়ে লক্ষ লক্ষ কৃষকদের কুচকাওয়াজের সংহতিমুলক সমর্থনে সারা দেশের সাথে সাথে পূর্ব বর্ধমান জেলার বিভিন্ন বিধানসভার গ্রাম-গ্রামান্তরে ট্রাক্টর নিয়ে পরিক্রমা করা হয়।

কালনা বিধানসভার অকালপোষ, বৈদ্যিপুর ও বাদলা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার সমস্ত গ্রামাঞ্চলে ৪টি টাক্টর, ১টি ছোট লরি ও ১৮টি মোটর বাইক নিয়ে পরিক্রমা করা হয়। আদিবাসী মহিলা সহ ৭০ জন কর্মীর অংশগ্রহণে প্রচার অভিযান সফল হয়। নেতৃত্ব দেন সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের কালনা লোকাল কমিটির সম্পাদক রফিকুল ইসলাম। সামিল হয়েছিলেন পীযুষ কুমার সাহানা, জেলা কমিটির সদস্য প্রদ্যুত ঘোষ, সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির জেলা সম্পাদিকা সুমি মজুমদার ঘোষ ও হাফিজুর রহমান সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। মিছিল পতাকা ব্যানারে সুসজ্জিত ছিল।

মন্তেশ্বর বিধানসভায় ১১টার সময় কুসুমগ্রাম বাজার থেকে শুরু করে ইছু ভাগড়া, পিপলন, মধ্যমগ্রাম, দেওয়ানীয়া মোড়, সাতগাছিয়া বাজার, পাহাড়হাটী, বীজপুর, মন্ডল গ্রাম, মালম্বা, ভাদুই, উজানিয়ার মোড় হয়ে ৩টার সময় কুলুট গ্রামে এসে দুপুরের খাওয়ার বিরতি করা হয়। আবার সাড়ে তিনটের সময় আরম্ভ করে মন্তেশ্বর বিডিও অফিস থানার বাজার ও মালডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড বাজার পরিক্রমা করে কুসুমগ্রাম বাজারে সমাপ্ত করা হয়। ২টি টাক্টর ব্যানার ফেস্টুনে সুসজ্জিত ছিল। ৩০ জন লোক ২টি ট্রাক্টর ছিল। ছিলেন রাজ্য কমিটির সদস্য আনসারুল আমন মন্ডল ও সজল পাল, জেলা কমিটির সদস্য শিবু সাঁতরা, সমীর বসাক ও জিয়াদুল সেখ। ছিলেন অশোক চৌধুরী ও মনসুর মন্ডল। বিভিন্ন গঞ্জে দাঁড়িয়ে বক্তব্য রাখা হয়। লিফলেট বিলি করা হয়।

দাবি ছিল
১) নয়া কৃষি আইন ও বিদ্যুত বিল ২০২০ বাতিল করতে হবে।
২) বাস্তুহীনদের বাস্তু, আবাস যোজনায় সমস্ত গরিব মানুষের ঘর ও শৌচাগারের ব্যবস্থা করতে হবে। দখলে থাকা বাস্তু জমি গরিব মানুষের জন্য বাস্তু আইন কার্যকরী করার মাধ্যমে রেকর্ড করতে হবে।
৩) কর্মনিশ্চয়তা আইনে বছরে ২০০ দিন কাজ ও ৫০০ টাকা মজুরি দিতে হবে। ব্যক্তিগত জবকার্ড চালু করতে হবে। কাজের নিশ্চয়তার মাধ্যমে পরিযায়ী শ্রমিকদের জীবনে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে।
৪) বড় বড় কোম্পানিদের ঋণ ছাড় নয়, গরিবদের ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সমস্ত ধরনের ঋণ মুকুব করতে হবে। কিস্তি আদায়ের নামে গরিব মহিলাদের অসম্মান অপমান ও হেনস্থা বন্ধ করতে হবে।
৫) ফসলের দেড়গুণ দাম নিশ্চিত করতে হবে। ১,২০০ টাকা কুইন্টাল দামে সরকারকে কৃষকদের থেকে আলু ক্রয় করতে হবে। প্রতিটি ব্লকে বহুমুখী হিমঘর করতে হবে। হিমঘরে আলু সংরক্ষণের ক্ষেত্রে গরিব ও প্রান্তিক চাষিদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। অনতিভুক্ত ভাগচাষী ও পাট্টাহীন গরিব কৃষকদের শস্যবীমা, কৃষক বন্ধু প্রকল্প ও অন্যান্য সরকারী প্রকল্পের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা চলবে না। সার, ডিজেল কীটনাশক ও বিদ্যুত কৃষকদের মধ্যে সুলভ মুল্যে সরবরাহ করতে হবে।

এই এলাকার মানুষের মধ্যে ভালো উৎসাহ সৃষ্টি করেছে অনেক জায়গাতেই মানুষ হাত তুলে অভিনন্দন জানিয়েছেন ও যাত্রীদের চা-পানের অনুরোধ করেছেন।

জামালপুর বিধানসভার ৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় টাক্টরে করে ৩৫ জন ঋণগ্রস্ত মহিলাদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে ঋণমুক্তি কমিটি, এআইকেএম এবং আয়ারলা’র ব্যানারে কৃষক প্রজাতন্ত্র দিবস পালনের সংহতিতে প্রচার পরিক্রমা করা হয়। বেলা ১১টা থেকে বিকাল সাড়ে তিনটে পর্যন্ত কর্মসূচী চলে। নেতৃত্ব দেন কুনাল বক্সী।

aaare

শিলিগুড়ি

শিলিগুড়ি শহরে ২৫ জানুয়ারী এআইসিসিটিইউ সহ কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন ও ফেডারেশন সমূহের আহ্বানে দুপুর ২টো থেকে ধর্ণা অবস্থান শুরু হয়। এআইসিসিটিইউ, সিটু, আইএনটিইউসি, ইউটিইউসি, এআইটিইউসি সহ অন্যান্য ফেডারেশন অংশগ্রহণ করে। ধর্ণা অবস্থান সারারাতব্যাপী চলে। ধর্ণা অবস্থানে বক্তব্য রাখেন এআইসিসিটিইউ-র রাজ্য সম্পাদক বাসুদেব বসু, সভাপতিমন্ডলীতে ছিলেন মোজাম্মেল হক। সাংস্কৃতিক কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়। পশ্চিমবঙ্গ গণসংস্কৃতি পরিষদের পক্ষ থেকে মীরা চতুর্বেদী ও গৌতম সঙ্গীত ও কবিতা পাঠ করেন। রাত্রি ১২টায় শপথ বাক্য পাঠ করা হয়।

২৬ জানুয়ারী সকালে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। তারপরে ক্ষুদিরাম বসুর মূর্তির পাদদেশ থেকে কৃষকদের সমর্থনে বড় ট্রাক্টর মিছিল শহর পরিক্রমা করে। এই ট্র্যাক্টর র্যাবলিতে অংশগ্রহণ করেন সিপিআই(এমএল) দার্জিলিং জেলা সম্পাদক অভিজিৎ মজুমদার, জেলা কমিটি সদস্য পবিত্র সিংহ, শরৎ সিংহ, নেমু সিং, অপু চতুর্বেদী, মোজাম্মেল হক, পৈসাঞ্জুসিং এবং ফাঁসীদেওয়া বিধানসভা কেন্দ্রের সম্ভাব্য প্রার্থী সুমন্তি এক্কা।

bee

উত্তর ২৪ পরগণা

২৬ জানুয়ারী সকাল ১০টায় নৈহাটিতে ট্রাক্টর সহ টোটো, সাইকেল ও মোটরসাইকেল নিয়ে কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে শতাধিক শ্রমিক-ছাত্র-সাংস্কৃতিক সংগঠনের মিছিল হয়। ট্রাক্টরের উপরে ঝান্ডা প্ল্যাকার্ড সহ ছিলেন কৃষক সহ নৈহাটি গ্রামীণ নেতৃবৃন্দ। সামিল হন নৈহাটির নাগরিক সমাজেরও বিশিষ্ট মানুষজন। হাজিনগর-গৌরীপুর-নৈহাটি শহর-গরিফা-গরুরফাঁড়ি অঞ্চল জুড়ে প্রায় ১২ কিমি এই সুসজ্জিত মিছিল পরিক্রমা করে। দুধারে অগণিত মানুষ উৎসাহ ভরে এই মিছিল দেখেন এবং কেউ কেউ জানজট ছাড়িয়ে মিছিলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সহযোগিতাও করেন।

সংহতি মিছিল বেলঘরিয়ায়

বেলঘরিয়া কৃষক আন্দোলনের পক্ষে যৌথ সংহতি মিছিল বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করে প্রবর্তক জুটমিল গেটে সভা হয়। বক্তা ছিলেন সিপিআই(এম)-এর প্রদীপ মজুমদার, সিপিআই(এমএল)-এর শিবশঙ্কর গুহরায়, জাতীয় কংগ্রেস-এর দিব্যেন্দুমিত্র, সিপিআই-এর বরুণ চক্রবর্তী, পিডিএস-এর প্রসেনজিৎ সেনগুপ্ত এবং সিপিবি-এর সন্দীপ পাল। সভা পরিচালনা করেন নবেন্দু দাশগুপ্ত।

gvvvv

 

২৩ জানুয়ারী বেলঘরিয়ায় আইসা’র আয়োজনে রক্তদান শিবির

শুধুমাত্র নিজেদের ফসলের উপযুক্ত সহায়ক মূল্য বুঝে নেওয়া নয়, কৃষি ও কৃষক স্বার্থ বিরোধী তিন নয়া কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে, বিশেষ করে কৃষিতে কোম্পানিরাজ কায়েমের বিরুদ্ধে লড়ছেন অন্নদাতারা। তাদের দেশপ্রেম, সাহস, আত্মত্যাগ ছাত্রদের উদ্বুদ্ধ করেছে। অন্যদিকে দেশনায়ক সুভাষচন্দ্রের মতো মজ্জায় মজ্জায় অসাম্প্রদায়িক মানুষটিকে বিদ্বেষ ছড়ানোর কারবারি বিজেপি-আরএসএস নিজেদের ঘৃণ্য স্বার্থে প্রচারে ব্যবহার করার চক্রান্ত ছাত্রদের ক্ষুব্ধ, ক্রুদ্ধ করেছে। তাই আইসার বেলঘরিয়া জোনাল কমিটি ২৩ জানুয়ারী সুভাষ চন্দ্র বোসের ১২৫তম জন্মদিনে দেশব্যাপী চলমান কৃষক আন্দোলনে সংহতি জানাতে এবং ধর্মে ধর্মে বিভেদের বিরুদ্ধে সম্প্রীতির বার্তা তুলে ধরতে এক রক্তদান শিবিরের আয়োজন করে। এই শিবির চলে বেলঘরিয়া দেশপ্রিয়নগরে ‘সোনার বাংলা’ ভবনে সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কার্যালয় চত্বরে। ভারতবর্ষের বুকে ফ্যাসিবাদের ক্রমপ্রকাশ্য ভয়ঙ্কর রূপের বার্তা তুলে ধরে, এই দিন যখন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোসের স্মৃতিতে আয়োজিত একটি সরকারি অনুষ্ঠানে ‘জয় শ্রী রাম’ সাম্প্রদায়িক শ্লোগান ওঠে, তখন এই রক্তদান শিবিরের মিলন মঞ্চ থেকে ভেসে আসে, হিন্দু-মুসলিম ঐক্য, সম্প্রীতির বার্তা। স্থানীয় মানুষরা দেখলেন ছাত্রছাত্রী, যুবক যুবতী, চটকলের শ্রমিক, হিন্দু-মুসলমান ও মহিলারা পাশাপাশি রক্ত দিলেন। রক্ত সংগ্রহ করে শ্রীরামপুরের বেলুড় শ্রমজীবী স্বাস্থ্য প্রকল্প সমিতি।

এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন আইসা’র রাজ্য সভাপতি নীলাশিস বসু, উপস্থিত ছিলেন রাজ্য সম্পাদক স্বর্ণেন্দু মিত্র, আইসা রাজ্য নেত্রী অন্বেষা সহ উৎসাহী ছাত্রীছাত্র বন্ধুরা। বক্তব্য রাখেন ‘কামারহাটি আইডিয়াল এডুকেশন সোসাইটি’র সেরাজ নোমানি। তিনি বলেন “একটি দল রক্তেরও সাম্প্রদায়িকীকরণ করছে, এখানে আপনারা ঐক্যের বার্তা তুলে ধরেছেন”। বিশিষ্ট নাট্যকার ‘শৌভিক সাংস্কৃতিক চক্র’র গৌতম মুখার্জি সাবলীল বক্তৃতায় বলেন, “আমাদের অতীত ইতিহাসকে আমরা ভুলে যাইনি, তেমনই তোমরা ছাত্ররাই ভবিষ্যৎ, আর আছে সিপিআই(এমএল) লিবারেশন”। রক্ত দেন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ডাঃ শান্ত সবুজ দাস ও ডাঃ দেবাশিস মুখার্জি। ছাত্রদের উৎসাহ দিতে উপস্থিত ছিলেন ডাঃ শুভজিৎ ভট্টাচার্য, সমাজসেবী বিদ্যুৎ দেবনাথ, দেবজ্যোতি মজুমদার, মনোবিদ গোপাল শেঠিয়ার, সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতির জেলা সম্পাদিকা অর্চনা ঘটক। বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এমএল) লিবারেশন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কমিটির সম্পাদক সুব্রত সেনগুপ্ত, এআইসিসিটিইউ-র রাজ্য কমিটির সভাপতি অতনু চক্রবর্তী এবং বিসিএমএফ নেতা মাজাহার খান। এ ছাড়াও বক্তব্য রাখেন বরুণ চক্রবর্তী (সিপিআই), কমরেড ঝন্টু মজুমদার (সিপিএম), শান্তনু চ্যাটার্জি (পিডিএস) এবং ঝুমন পাল (সিপিবি)।

শারীরিক কারণে এবং সময় অতিক্রান্ত হওয়ার জন্য আরও বেশ কয়েক জনের রক্ত দেওয়া হয়ে ওঠেনি। শেষ পর্যন্ত মোট ৩৫ জন রক্ত দিয়েছেন। আইসা বেলঘরিয়া জোনাল কমিটির সকল সদস্য, সিপিআই(এমএল) লিবারেশন বেলঘরিয়া আঞ্চলিক কমিটি, স্থানীয় পার্টি সদস্য, সমর্থক এবং স্থানীয় মানুষের সহযোগিতায় রক্তদান অনুষ্ঠান সফল হয়। রক্তদান শিবিরকে সাফল্যমন্ডিত করে তোলার জন্য আইসা বেলঘরিয়া জোনাল কমিটির পক্ষ থেকে এলাকার সমস্ত গণতন্ত্রপ্রিয়-ধর্মনিরপেক্ষ-শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে রক্তিম অভিনন্দন জানানো হয়।

- রিপোর্ট দীপায়ন

gaeee

নদীয়া জেলায় প্রচার পরিক্রমা ও ট্রাক্টর মিছিল

২৬ জানুয়ারী নদীয়া জেলায় ‘কৃষক প্রজাতন্ত্র দিবস’ নানাবিধ কর্মসূচীর মাধ্যমে পালন করা হয়। কোম্পানিরাজের হাত থেকে কৃষি-কৃষক-খাদ্য সুরক্ষা ও রেশন ব্যবস্থাকে রক্ষা করতে, মোদীরাজের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের পক্ষে কৃষক আন্দোলনে সামিল হওয়ার আহ্বান তুলে ধরে বড় এলাকা জুড়ে প্রচার করা হয়।

সকাল ১০টা থেকে শুরু করে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এক প্রচারগাড়ি ধুবুলিয়া ব্লকের বেলপুকুর অঞ্চল সহ বিভিন্ন গ্রাম পরিক্রমা করে। দিল্লীর কৃষক আন্দোলনের বার্তা পৌছে দেওয়া এবং এইরাজ্যে কৃষকদের বিভিন্ন দাবিগুলিকে তুলে ধরার মধ্য দিয়ে গ্রামে গ্রামে কৃষকদের মধ্যে প্রচার করা হয়। গ্রামে ক্যাম্প করে সরকারী দরে কৃষকদের অবিক্রিত ধান কেনা, কাজের আকালের এই সময়ে বন্ধ হয়ে থাকা ১০০ দিনের কাজ চালু করা প্রভৃতি দাবিগুলি প্রচারে গুরুত্ব পায়। অংশগ্রহণ করেন পার্টির জেলা সম্পাদক সুবিমল সেনগুপ্ত, যুব সংগঠনের সন্তু ভট্টাচার্য, পার্টির এরিয়া সম্পাদক শংকর রায় প্রমূখ।

নাকাশীপাড়া ব্লকে বেথুয়াডহরী থেকে সকাল সাড়ে দশটায় প্রচার পরিক্রমা শুরু হয়। তারপর বিল্বগ্রাম, ধর্মদা, মুড়াগাছা অঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামে প্রচার গাড়ি যায়। ছোট ছোট পথসভা ও লিফলেট বিলি করা হয়। বেলা ৩টায় গাছা বাজার থেকে প্রচার পরিক্রমা ট্রাক্টর মিছিলে পরিণত হয়। লাল পতাকায় সুসজ্জিত ট্রাক্টর মিছিল গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন পথ দিয়ে চলার সময়কালে ব্যাপক মানুষ রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে সহমর্মিতা জানায়। কৃষক প্রজাতন্ত্র পালন করার আহ্বানের সাথে শোভিত তেরঙা জাতীয় পতাকা মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পরিশেষে নতুন নওপাড়া গ্রামে এক পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। গ্রামের বহু মানুষ ভীড় করে দাঁড়িয়ে পথসভা শোনেন। দিল্লীর বুকে চলমান কৃষক বিক্ষোভ মিছিলের বার্তা বক্তব্যে তুলে ধরা হয়। অংশগ্রহণ করেন পার্টি, এআইকেএম, আয়ারলার নেতৃবৃন্দ জয়তু দেশমুখ, কাজল দত্তগুপ্ত, কৃষ্ণ প্রামানিক, হবিবুর রহমান, বাবর আলি সেখ।

কৃষ্ণনগর শহরে যৌথ ট্রাক্টর মিছিলের কর্মসূচীতে এআইসিসিটিইউ’র একটা প্রচার গাড়ি অংশগ্রহণ করে, তাতে ছিলেন শ্রমিক সংগঠনের অমল তরফদার, নীহার ব্যানার্জী, স্বপন দাস প্রমূখ।

dddg

ধনেখালিতে কৃষকদের ট্রাক্টর মিছিল

“কুয়াশার মেঘ দুহাতে সরিয়ে দূরে
পরাজিত করে শীতের ঠান্ডা হাওয়া
কিষাণ-কিষাণি শত মুষ্টিতে ধরে
লাল পতাকার দৃপ্ত মিছিলে চলে।”

সত্যিই ২৬ জানুয়ারী শীতের কুয়াশা ভেদ করে রাজধানী দিল্লীতে ‘কৃষক প্রজাতন্ত্রের প্যারেডে’ যখন সমুদ্রের মতো ট্রাক্টর মিছিল আছড়ে পড়ছে তখন হুগলীর ধনেখালি বাজারে লাল লহর তুলে প্রবেশ করছে ট্রাক্টরের কাফেলা। দিল্লীর ঐতিহাসিক ট্রাক্টর মিছিলকে অভিনন্দন জানিয়ে, কেন্দ্রের তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে ও মোদী-শাহ চক্রের কোম্পানিরাজ কায়েমের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আয়োজিত সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের ‘কৃষকদের ট্রাক্টর প্যারেড’ আক্ষরিক অর্থেই ধনেখালি ব্লকের এক বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে আলোড়িত করে। বেলা প্রায় বারটা। মেঘের চাদর সরিয়ে সবে যখন সূর্যের কিরণ আলতো করে দেখা দিচ্ছে তখন ধনেখালি হল্ট স্টেশন সংলগ্ন মল্লিকপুর থেকে ট্রাক্টর মিছিল যাত্রা শুরু করে। প্রথম ট্রাক্টরটিতে লাল পতাকার পাশাপাশি উড়েছে তেরঙ্গা জাতীয় পতাকা। হিন্দুত্ববাদীরা ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্রের আদর্শকে মুছে দিয়ে যখন মনুসংহিতাকে ভারতের সংবিধান হিসেবে তুলে ধরার ঘৃণ্য প্রয়াস চালাচ্ছে তখন জাতীয় পতাকার গোরব রক্ষার ভার তো কমিউনিস্টদের নিতেই হয়। প্রথম ট্রাক্টরটিকে ধরে এক-দুই করে মোট পাঁচটি ট্রাক্টর, একটি মোটর ভ্যানে ঠাসা গরিব কৃষক, খেতমজুর ও গ্রামীণ মেহনতিরা এই মিছিলে অংশ নিয়েছেন। মিছিলকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য লাল পতাকা গাঁথা পাঁচটি মোটর বাইক এগিয়ে চলে মিছিলের পুরোভাগে। ফিডার রোড ধরে মাজনান, শিবাইচন্ডী, ধনেখালি গঞ্জ হয়ে মিছিল প্রথম দফায় এগিয়ে চলে কানানদী বাজার অবধি। মিছিলের সঙ্গে থাকা প্রচার গাড়ি থেকে দেশ বিরোধী তিন কৃষি আইন ও বিদ্যুৎ বিল ২০২০ প্রত্যাহারের দাবির সাথে সাথে সার, বীজ, ডিজেল ইত্যাদি কৃষি সরঞ্জামে সরকারের পর্যাপ্ত ভরতুকি প্রদান, গ্রামীণ মজুরদের বছরে ২০০ দিন কাজ,বেকারদের কর্মসংস্থান, কৃষি ও মাইক্রো ফিনান্সের ঋণ মকুব কার্যকরী করার আহ্বান রাখা হয়। এনআরসি ও নয়া নাগরিকত্ব আইন বাতিলেরও দাবি জানানো হয়। গঞ্জ ও বাজার এলাকায় যখনই মিছিল পৌঁছেছে, জনগণের প্রতি পার্টির আহ্বানকে মানুষ উদগ্রীব হয়ে শুনেছেন। বিশেষ করে সজল অধিকারী ও খেতমজুর ঘর থেকে উঠে আসা শ্রাবণী মালিকের বক্তব্য সকলকে আকৃষ্ট করে। ফিরতি পথে জয়হরিপুর গ্রামে কিছুক্ষণ বিরতি ও দুপুরের আহারের পর মিছিল পুনরায় এগিয়ে চলে বেলমুড়ি স্টেশনের দিকে। বাগনান, গৌরীপুর হয়ে মিছিল ফিডার রোড ধরে ধনেখালি হল্টে এসে শেষ হয়।

কৃষকদের ট্রাক্টর প্যারেডের সমগ্র কর্মসূচীটি পরিচালনা করেন পার্টির যুব নেতা সজল দে। কর্মসূচীটিতে পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য কার্তিক পাল, জেলা সম্পাদক প্রবীর হালদার, এআইকেএম নেতা তপন বটব্যাল, আয়ারলা নেতা নিরঞ্জন বাগ, গোপাল রায়, বিনয় দাস, আইপোয়া কর্মী সোমা রায় (মালিক) প্রমুখ নেতা-নেত্রীরা উপস্থিত ছিলেন।

geee

উত্তরপাড়া বিধানসভা জুড়ে ট্রাক্টর ও বাইক মিছিল

জাতীয় রাজধানীর বুকে নজিরবিহীন ট্রাক্টর প্যারেডের মাধ্যমে যখন ভারতবর্ষের অন্নদাতারা ইতিহাস রচনা করছেন তখন হুগলির উত্তরপাড়া বিধানসভার একটা বড় অংশ প্রত্যক্ষ করলো সেই কৃষকদের সমর্থনে এক লাল ঝাণ্ডার উদ্দীপনাময় শোভাযাত্রা। সিপিআই(এমএল) লিবারেশন উত্তরপাড়া থানা এরিয়া কমিটির অফিস অর্থাৎ কোন্নগর ২নং কলোনি বাজার এলাকা থেকে সকাল ১০-৩০ টায় শুরু হয় ত্রিবর্ণরঞ্জিত জাতীয় পতাকা ও পতাকায় তিন তারা চিহ্নিত পার্টির লাল ঝাণ্ডায় সুসজ্জিত একটি ট্রাক্টর ও প্রায় ১৫টি বাইকের সুশৃঙ্খল মিছিল। এছাড়াও ট্রাক্টরটিকে চারদিকে ফ্লেক্স ও কমরেডদের নিজ হাতে লেখা কাপড়ের ব্যানারে মুড়ে ফেলা হয়। পার্টি অফিস থেকে মিছিল শুরু হয়ে জিটি রোড দিয়ে প্রবেশ করে কোন্নগর বাটা বাসস্টপেজ হয়ে ক্রাইপার রোডে। এই রাস্তা দিয়ে কোন্নগর স্টেশন পেরিয়ে পশ্চিমে নবগ্রাম ও নৈটি রোডের কিছুটা অংশ পরিক্রমা করে। এরপর পুনরায় স্টেশনের পূর্বদিকে এসে কোন্নগর চলচিত্রম মোড় দিয়ে জোড়পুকুর এলাকা হয়ে আবার জিটি রোডে উঠে সোজা উত্তরপাড়ার দিকে যায়। উত্তরপাড়া গণভবনের পাশ দিয়ে শহরের ভেতরের বিভিন্ন মহল্লা ঘুরে শালিমার কারখানা ও উত্তরপাড়া স্টেশন, কাঁঠালবাগান বাজার, অমরেন্দ্র বিদ্যাপীঠ স্কুল চত্বর হয়ে পুনরায় শখের বাজার বাসস্টপেজ দিয়ে জিটি রোডে এসে কোন্নগর ধাড়সা স্টপেজ হয়ে পার্টি অফিসে ফেরত আসে এই মিছিল। একঝাঁক ছাত্র-যুব কণ্ঠে অবিরাম স্লোগান ওঠে কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে ও সংগ্রামরত লাখো কৃষককে লাল সেলাম জানিয়ে। পথে এক জায়গায় বিজেপির জমায়েতের একেবারে মুখোমুখি হয় এই মিছিল। তারস্বরে “ফ্যাসিবাদী-আরএসএস-বিজেপি ভারত ছাড়ো” স্লোগান তুলে বিজেপির ধর্মীয় মৌলবাদী স্লোগানকে ছাপিয়ে যান কমরেডরা। গোটা বিধানসভার যতটা এলাকা পরিক্রমা করে মিছিল ততটাই সাধারণ মানুষ ঘর-বাড়ি, দোকানপাট থেকে বেরিয়ে এসে উৎসুক হয়ে মিছিলটি দেখেন এবং বেশ কিছু মানুষকে মুষ্টিবদ্ধ সমর্থনসূচক হাত ওঠাতে দেখা গেল মিছিলের উদ্দেশ্যে। বিভিন্ন জায়গায় অন্যান্য বাম দল ও অবিজেপি বিভিন্ন রাজনৈতিক মানুষকেও ইতিবাচক দৃষ্টি নিয়ে মিছিল ক্যামেরাবন্দী করতে দেখা গিয়েছে। সব মিলিয়ে বেশ ছাপ ফেলার মতো কর্মসূচী সংগঠিত হয়েছে বলেই মনে করছেন উদ্যোক্তা পার্টি কমিটির সাথীরা।

একই দিনে নয়া কৃষি আইন বিরোধী শ্রীরামপুর নাগরিক উদ্যোগের আহ্বানে উত্তরপাড়া গৌরী সিনেমার সামনে থেকে সকাল ৯টায় শুরু হয় এক বর্ণাঢ্য গাড়ি মিছিল। ট্রাক, মোটর, টোটো সহ এক লম্বা শোভাযাত্রা। এতে অংশ নেয় নবগঠিত ‘ফ্যাসিস্ট আরএসএস-বিজেপির বিরুদ্ধে বাংলা’ সহ আরো অনেক গণরাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন। জিটি রোড দিয়ে হিন্দমোটর, কোন্নগর, রিষড়া, শ্রীরামপুর, শেওড়াফুলি, বৈদ্যবাটি, চাঁপদানি, ভদ্রেশ্বর, মানকুন্ডু, চন্দননগর হয়ে মিছিল শেষ হয় চুঁচুড়া ঘড়ির মোড় অতিক্রম করে কোর্ট সংলগ্ন মাঠে। চাঁপদানি থেকে এঙ্গাস জুটমিলের এআইসিসিটিইউ ইউনিটের শ্রমিক কমরেডরা এবং চন্দননগর তালডাঙা মোড় থেকে এআইপিএফের সাথীরা এই পরিক্রমায় সামিল হন। গোঁদলপাড়া ও তেলিনিপাড়া এলাকা থেকে ছাত্র সংগঠন আইসার সাথীরা কয়েকজন মিছিলে যুক্ত হন। মিছিল শেষে বক্তব্য রাখেন কবি মৃদুল দাশগুপ্ত, এআইপিএফের তরফে ভিয়েত ব্যানার্জী, এপিডিআরের অমিতদ্যুতি কুমার সহ আরো অনেকে। পরিবেশিত হয় প্রতিরোধের সংস্কৃতির কিছু অনুষ্ঠান। ঐদিন সন্ধ্যাতেই কোন্নগর জোড়পুকুর সংলগ্ন ভগৎ সিং মূর্তির সামনে কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে পথসভা সংগঠিত করে গণ সংগঠন ভগৎ সিং যুব ব্রিগেড। ঐ সভায় কৃষক শহীদ ও শহীদ-এ-আজম ভগৎ সিংয়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের পরে এলাকার কিছু দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদের হাতে খাতা, পেন তুলে দেওয়া হয়। বক্তব্য রাখেন ছাত্র সংগঠন আইসার তরফে অসীম সরকার ও সৌরভ, আরওয়াইএসএফ-এর রৌণক মৌলিক ও উদ্যোক্তা সংগঠনের তরফে বরুণ গুহ। সভাটি সঞ্চালনা করেন যুব ব্রিগেডের আহ্বায়ক ব্রহ্মা মন্ডল। উপস্থিত ছিলেন যুব সংগঠন আরওয়াইএ এবং উদ্যোক্তা সংগঠনের অন্যতম আরো তিন দস্যু অতনু পাল, লক্ষ্মী গুহ ও দীপক দাস।

২৩ জানুয়ারী আজাদ হিন্দ কিষান দিবসে সকাল ১০টায় কোন্নগর পার্টি অফিসে কর্মীরা সমাবেশিত হয়ে ত্রিবর্ণরঞ্জিত জাতীয় পতাকা ও মেহনতি জনতার লাল ঝাণ্ডা উত্তোলন করেন। এরপরে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে তাঁর ও কৃষক আন্দোলনের সকল শহীদকে স্মরণ করে নীরবতা পালন করা হয়। পথচলতি কয়েকজন মানুষ ও এলাকার একঝাঁক শিশুও এই শহীদ স্মরণে অংশ নেন। নেতাজী লড়াইয়ের লক্ষ্য, কৃষক ও আম আদমির গণতন্ত্র এবং বিজেপি আরএসএস-এর সংবিধান ধ্বংসকারী ফ্যাসিবাদী ভূমিকা সম্পর্কে সংক্ষেপে বক্তব্য রাখেন এরিয়া কমিটির সদস্য সৌরভ। এই কর্মসূচীর আগে এদিন সকাল ৮টা থেকে এখানকার কমরেডরা উত্তরপাড়া ঘড়িবাড়ি মাঠ অসাধু ব্যবসায়ী চক্রের হাত থেকে রক্ষার নাগরিক মিছিলেও অংশ নেন।

gge

২৬ জানুয়ারী কলকাতার কর্মসূচী

২৬ জানুয়ারী কলকাতার বুকে ১৬ বাম দলের তরফ থেকে দু’টো মিছিল দু’টো অঞ্চল থেকে বেরোয়। একটা হাজরা মোড়, আরেকটা রাজাবাজার থেকে। দু’টো মিছিল বিকাল ৪টার সময় শুরু হয়ে পার্ক সার্কাসে মিলিত হয়। সেখানে এক সংক্ষিপ্ত সভা হয়, যেখানে বামপন্থী দলের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। পার্টির তরফ থেকে সেখানে বক্তব্য রাখেন রাজ্য নেত্রী ইন্দ্রাণী দত্ত। দু’টো মিছিলেই পার্টির ব্যানার নিয়ে কমরেডরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে, নো-এনআরসি ব্যানারে শিয়ালদহ বিগ বাজার থেকে এক বর্ণাঢ্য মিছিল বেরোয় যেখানে আইসা, আরওয়াইএ সামিল হয়। অমলেন্দু ভূষন চৌধুরী, অতনু চক্রবর্তী ও এই মিছিলে পা মেলান। মিছিল ধর্মতলায় কর্পোরেশনের কাছে এক সভায় পরিণত হয়। প্রসেনজিত বোস, সহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন, মতুয়া মহাসংঘ, জয় কিষানের পক্ষ থেকে অভিক সাহা সহ অন্যান্য ব্যক্তিবর্গসেখানে বক্তব্য রাখেন। আইসা, আরওয়াইএ-র পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন সৌমেন্দুমিত্র ও তমাল চক্রবর্তী।

বিকালে ৮বি বাস স্ট্যান্ডে ‘নো ভোট টু বিজেপি’ মঞ্চের পক্ষ থেকে এক সভা হয়। সেখানে বিভিন্ন বক্তা তাদের বক্তব্যে ব্যাখ্যা করেন, কেন আসন্ন নির্বাচনে নির্বাচকমন্ডলী বিজেপিকে ভোট দেবেন না। মৌসুমি ভৌমিক অসাধারণ সঙ্গীত পরিবেশন করে বলেন, কিভাবে আজ আমাদের ভারতীয় সত্ত্বা বিপন্ন হচ্ছে, মানবাধিকার আন্দোলনের সংগঠক সুজাত ভদ্র আরএসএস’র জন্মবৃত্তান্ত ব্যাখ্যা করে দেখান এই বিজেপি সংখ্যালঘুদের কিভাবে নিধন করছে। কুশল দেবনাথ বলেন, কোন প্রয়োজন থেকে এই মঞ্চ গড়ে উঠেছে। অতনু বলেন, এই বিজেপির আমলে সমস্ত ফ্রন্টে কিভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে আমাদের দেশ – অর্থনীতি, সংস্কৃতি, গণতন্ত্র, সমস্ত দিক থেকে। সভা শেষে সেখানে চিত্র প্রদর্শনী হয় চলমান কৃষক আন্দোলনের উপর।

হাওড়া

দেশনায়ক নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোসের ১২৫তম জন্মজয়ন্তীতে সকালে সিপিআই(এমএল) লিবারেশন হাওড়া জেলা কমিটির পক্ষ থেকে হাওড়া স্টেশনে নেতাজীর মূর্তিতে মাল্যদান এবং শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এই কর্মসূচীতে সিপিআই(এমএল) লিবারেশন ছাড়াও উপস্থিত ছিল হাওড়া জেলা ফরওয়ার্ড ব্লকের নেতৃত্ব ও সিপিআই(এম) সহ অন্যান্য বাম দলগুলোর নেতৃত্ব। পার্টির পক্ষ থেকে জেলা সম্পাদক দেবব্রত ভক্ত নেতাজির মূর্তিতে মাল্যদান করেন এবং এই দিনের বিশেষ তাৎপর্য তুলে ধরেন। ওই দিনেই পার্টির বালি-বেলুড় লোকাল কমিটির পক্ষ থেকে সকাল দশটায় বালি শান্তিরাম রাস্তায় নেতাজীর ১২৫তম জন্ম জয়ন্তী পালিত হয়। সেই সভায় বক্তব্য রাখেন বালি-বেলুড় লোকাল কমিটির সম্পাদক নিলাশিস বসু। ২৬ জানুয়ারী সারা ভারত কিষান মহাসভা এবং পশ্চিমবঙ্গ কৃষিমজুর সমিতির পক্ষ থেকে বাগনানে পথসভা সংঘটিত হয়। কিষান মহাসভার পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন দিলীপ দে এবং কৃষি মজুর সমিতির পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন নবীন সামন্ত এবং সনাতন মনি। ওইদিনই জেলার অপরপ্রান্ত বালিতে হপ্তা বাজার থেকে সন্ধ্যা সাতটায় মিছিল বের হয় এবং মিছিল শেষে চৈতল পাড়া সংখ্যালঘু এলাকায় পৌঁছে দিল্লীতে ঘটে চলা ঐতিহাসিক ট্রাক্টর প্যারেডএর সমর্থনে কৃষি আইন ২০২০ বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ সভা সংগঠিত হয়। সভা শেষে ৭২তম প্রজাতন্ত্র দিবসের শপথ হিসাবে সংবিধানের প্রস্তাবনা পাঠের মধ্যে দিয়ে কর্মসূচী শেষ হয়। এই কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন বালি-বেলুড় লোকাল কমিটির সম্পাদক নিলাশীস বসু।

grrttt

বিকল্প চাকুরির দাবিতে ৫১ দিন ধরে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনরত চাকুরিচ্যুত শিক্ষকদের সাথে কোনো কথা না বলে জোরপূর্বক আন্দোলন বন্ধ করে দেওয়া ও সারাদিন ধরে বিক্ষোভরত শিক্ষকদের উপর নিষ্ঠুর পুলিশী দমনপীড়নের তীব্র নিন্দা জানিয়ে একটি প্রেস বিবৃতিতে সিপিআই(এমএল) ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির পক্ষ থেকে সম্পাদক পার্থ কর্মকার বলেন, ৭ ডিসেম্বর, ২০২০ থেকে টানা ৫১ দিন ধরে বিকল্প চাকুরির দাবিতে শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আগরতলা সিটি সেন্টারে চাকুরিচ্যুত শিক্ষকরা আন্দোলন করে আসছেন। রাজ্য সরকার ও স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী তাঁর প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি রক্ষায় ব্যর্থ হয়। তখুনি চাকুরিচ্যুত শিক্ষকরা গণআন্দোলনে বসতে বাধ্য হন। কিন্তু সরকার এতটাই অমানবিক এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন যে, এই প্রচন্ড ঠাণ্ডা ও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে টানা ৫১ দিনের মধ্যে আন্দোলনরত শিক্ষকদের সাথে কথা বলার প্রয়োজন বোধ করেনি। সরকারের অমানবিক আচরণে চরম হতাশাগ্রস্ত হয়ে ইতিমধ্যে ৮৪ জন শিক্ষককের বিভিন্ন কারণে মৃত্যু হয়েছে। এই মৃত্যুগুলির জন্য সরকারই প্ররোক্ষভাবে দায়ী। তাই গতকাল আন্দোলনরত শিক্ষকদের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙে। তাঁরা মশাল মিছিল থেকে বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচী গ্রহণ করার ঘোষণা করে। আর তাতেই সুযোগ বুঝে আইন শৃঙ্খলা রক্ষার দোহাই দিয়ে সরকার দমনের পথ গ্রহণ করে।

আজ সকালে ঘুম ভাঙার আগেই ১৪৪ ধারা জারি করে সিটি সেন্টার পুলিশ দিয়ে অবরুদ্ধ করে তোলে। সেখান থেকে আন্দোলনরত শিক্ষকদের গ্রেপ্তার করে তল্পিতল্পা সহ উৎখাত করে নিয়ে যায়। যাতে এখানে তাঁরা আবার বসতে না পারে। ফলে সারা রাজ্য থেকে ক্ষুব্ধ শিক্ষকরা আগরতলায় জমা হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। সরকার দিনভর নিষ্ঠুরভাবে পুলিশ দিয়ে দমনপীড়ন চালায়। আগরতলা আজ রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে ৪১ জন শিক্ষক শিক্ষিকা আহত হন। পুরুষ পুলিশ দিয়ে মহিলা শিক্ষিকাদের পেটানো হয়। গ্রেপ্তার হওয়া শিক্ষকরা মুক্তি পায়নি। শিক্ষক নেতাদের বিরুদ্ধে অনেক এফআইআর নেওয়া হয়েছে। শিক্ষক নেতা বিজয় কৃষ্ণ সাহাকে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা সিপিআই(এমএল), ত্রিপুরা রাজ্য কমিটি সরকার কর্তৃক চাকুরিচ্যুত শিক্ষকদের প্রতি এই অমানবিক আচরণ ও নিষ্ঠুর পুলিশী দমনপীড়নের তীব্র নিন্দা জানাই। আহত শিক্ষক ও শিক্ষিকাদের জন্য দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করার দাবি করছি। গ্রেপ্তার হওয়া বিজয় কৃষ্ণ সাহা সহ অন্যান্য শিক্ষকদের নিঃশর্ত মুক্তি ও সমস্ত মিথ্যা ও সাজানো মামলা প্রত্যাহার করার দাবি করছি। আমরা দাবি করছি সরকার তাঁর প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি রক্ষায় এগিয়ে আসুক। চাকুরিচ্যুত শিক্ষকদের জন্য সরকার বিকল্প স্থায়ী চাকুরির ব্যবস্থা করুক। ১৩ হাজার শূণ্যপদ পুনরায় সৃষ্টি করে তাঁদের বিকল্প চাকুরির ব্যবস্থা করার জন্য সরকার আন্তরিক পদক্ষেপ গ্রহণ করুক। বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন ডেকে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুক। সরকার আগুন নিয়ে খেলা করা ও বিপর্যয় সৃষ্টি করা অবিলম্বে বন্ধ করুক। প্রজাতন্ত্রের ৭২ বছরে দেশে ও রাজ্যে সংবিধান, গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের এই গভীর সংকটে রাজ্যের সমস্ত গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই। আর একজন শিক্ষকেরও যাতে মৃত্যু না হয় এবং চাকুরিচ্যুত ও বিপর্যস্ত শিক্ষক, শিক্ষিকা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জীবন-জীবিকা রক্ষায় সরকারের অমানবিক আচরণের বিরুদ্ধে রাজ্যের সব মানুষকে প্রতিবাদে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।

ssssss

২০১৯-এর সেই ২৯ দিন টানা অনশনের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী বাধ্য হয়েছিলেন এসএসসি চাকরি প্রার্থীদের ওয়েটিং লিস্টে থাকা সকলকে নিয়োগপত্র দেওয়ার। কিন্তু আজ অবধি সে প্রতিশ্রুতি পূরণ হল না, বরং সামনে এলো আরো দুর্নীতি। এসবের প্রতিবাদেই আজ আরওয়াই-এর উদ্যোগে গড়ে ওঠা ‘এসএসসি যুব-ছাত্র অধিকার মঞ্চ’ কলকাতায় ধর্মতলার ওয়াই চ্যানেল থেকে গান্ধীমূর্তি পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ মিছিল করতে গেলে প্রথম থেকেই রাজ্য সরকারের পুলিশ নানা অছিলায় বাধা দিতে থাকে। অনেক বাকবিতন্ডার পরে মিছিল শুরু হয়, ইতিমধ্যে আন্দোলনকারীদের একটি প্রতিনিধিদল কলকাতা প্রেস ক্লাবে বিষয়টি নিয়ে পূর্বনির্ধারিত সাংবাদিক সম্মেলন করতে গেলে বাকিরা গান্ধীমূর্তির পাদদেশে শান্তিপূর্ণ অবস্থানে বসেন। তা সত্ত্বেও সেখান থেকে রাজ্যের পুলিশ তাদেরকে জোর করে ওঠানোর চেষ্টা করে এবং তারা উঠতে না চাইলে আরওয়াইএ-র রাজ্য নেতৃত্ব সজল দে, মেহবুব মণ্ডল, অপূর্ব ঘোষ ও আইসার রাজ্য সভাপতি নিলাশিস বসু সহ প্রায় ২০০ জন আন্দোলনকারীকে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করে ও পরে সন্ধ্যায় তাদের জামিনে মুক্তি দেয়। আন্দোলনকারীরা হবু শিক্ষক ও গণ আন্দোলনের সংগঠকদের প্রতি রাজ্য সরকারের এই অভব্য আচরণকে তীব্র ধিক্কার জানান এবং মুখ্যমন্ত্রীকে অবিলম্বে তাঁর দেওয়া প্রতিশ্রুতি মতো এসএসসি-র প্যানেলভুক্ত ওয়েটিং লিস্টে থাকা সকল চাকরি প্রার্থীদের দূর্নীতিমুক্ত পদ্ধতিতে নিয়োগ সুনিশ্চিত করার দাবি জানান অন্যথায় আগামীদিনে বৃহত্তর আন্দোলনের সতর্ক বার্তা দেওয়াও হয়।

darrkkk

১৭ জানুয়ারী পুর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া ২নং ব্লকের সাহাপুর গ্রামে কর্মী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের পুর্ব বর্ধমান জেলা সম্পাদক সলিল দত্ত ও জেলা কমিটির সদস্য সজল পাল ও সমীর বসাক উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের আগে এলাকার কৃষকদের সাথে নিয়ে দিল্লীর কৃষক আন্দোলনের প্রয়াত কৃষক শহীদদের শ্রদ্ধাঞ্জাপন অনুষ্ঠান সংগঠিত করা হয়। শহীদ বেদীতে মাল্যদান করেন জেলা সম্পাদক সহ সমস্ত কমরেড সমর্থক ও গ্রামের কৃষক বৃদ্ধা মহিলা। শহীদদের স্মরণে নীরবতা পালন করা হয়।

বৈঠকে প্রথমে উপস্থিত কর্মীদের সাথে এলাকার কৃষির অবস্থা ও নয়া কৃষি আইন নিয়ে মতামত বিনিময় করা হয়। উপস্থিত ২৫-৩০ জন কৃষক কর্মীদের মধ্যে মাত্র এক জন কৃষকবন্ধু প্রকল্পের সুযোগ পেয়েছেন এবং কৃষাণ মান্ডীতে ধান বিক্রির সুযোগ পেয়েছেন। এলাকার অর্থকরী ফসল পাট এখন ৪,০০০ থেকে ৪,৫০০ টাকা কুইন্টাল। যার উৎপাদন খরচ সবার উপস্থিতিতে হিসাব করে দেখা হল ৪,০০০ টাকার বেশি। ধান কৃষাণ মান্ডীতে ১,৮৬৫ টাকা কুইন্টাল, বাজারে এখন ভালো ধান হলেও ১,৪০০ টাকা কুইন্টালের বেশি বিক্রি হচ্ছে না। উৎপাদন খরচ ১,৪০০ টাকার বেশি। এলাকার ব্যাপক যুবক বিভিন্ন রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে কাজ করেন। সরকারী সেচের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। প্রচুর ইটভাটা থাকার ফলে মাটি মাফিয়াদের রমরমা কারবার। কয়েকজন জানতে চান নয়া কৃষি আইন নিয়ে খবর শুনেছেন কিন্ত আমাদের এলাকার কৃষকদের এই আইনে কি ক্ষতি করবে? সজল পাল দেশজুড়ে কৃষক আন্দোলনের পরিপেক্ষিত ও বর্তমান আন্দোলনের অবস্থানের সাথে সাথেই তিনটি আইন ব্যাখ্যার মাধ্যমে এখানকার কৃষক ও সাধারণ মানুষের উপর আইনের মারাত্মক ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরেন। এআইকেএসসিসি’র গঠনের ইতিহাস, বর্তমান বিভিন্ন কর্মসূচী ও আগামী ২৬ জানুয়ারীর বৃহত্তর লড়াইয়ে একদিকে ভারতবর্ষের কৃষক ও গণতান্ত্রিক জনগণ, অন্যদিকে আদানী-আম্বানী ও বিজেপি-আরএসএস নেতৃত্বাধীন মোদী সরকারের মুখোমুখী লড়াইয়ের প্রস্তুতির কথা তুলে ধরেন। এই এলাকাতে অতীতে সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের নেতৃত্বে চরের খাস জমি ও বেওয়ারিশ জমি দখল করে কৃষকদের মধ্যে বন্টন করা হয়। সেইসব জমি এখনও পাট্টা হয়নি। এখন কিছু ধান্ধাবাজ লোক ভুয়া কাগজ দেখিয়ে দখলচুত করতে চাইছে। সলিল দত্ত পার্টির সামগ্রিক অবস্থান ব্যাখ্যা করে পার্টিকে শক্তিশালী করার উপর জোর দেন। এই দখলীকৃত জমির পাট্টার দাবীতে আন্দোলন গড়ে তোলার উপর জোর দেন এবং ২০ জানুয়ারী কলকাতার এআইকেএসসিসি’র জমায়েত ও ২৬ জানুয়ারীর মন্তেশ্বর বিধানসভার টাক্টর মিছিলে অংশগ্রহণ করার আহ্বান রাখেন।

nna

দিল্লির বুকে চলমান কৃষক আন্দোলন এবং কিষাণ গণতন্ত্রের ট্রাক্টর প্যারেডের সমর্থনে ছাত্র সংগঠন আইসা, এআইপিএফ এবং বারাসাত এপিডিআর-এর উদ্যোগে ২৬ জানুয়ারী কলোনি মোড়ে এক গণঅবস্থান কর্মসূচী পালিত হল। সকাল ১১ টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত গানে কবিতায় এবং বক্তৃতায় অবস্থান মঞ্চ ছিল পরিপূর্ণ। কবি সৃজন সেন কৃষক আন্দোলনের উপর ধারাবাহিক পোস্টার প্রদর্শনী বিশেষ আকর্ষণ তৈরি করে। গান এবং কবিতা আবৃতি করেন ভারতী দি। আইসার পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন তপু সরকার। এআইপিএফএর তরফে বক্তব্য রাখেন অনিমেষ চক্রবর্তী, সুজিত ঘোষ। এপিডি আর এর প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক দেব প্রসাদ রায় সুজন দত্ত, জয়ন্ত সিনহা সহ অধিকার আন্দোলনের অনেক কর্মী অবস্থানে অংশ নেন এবং বক্তৃতা করেন। সমস্ত বক্তা কৃষক এবং কৃষি-বিরোধী কালা কানুনের তীব্র বিরোধিতা করেন এবং ২০২১ পশ্চিমবাংলায় নির্বাচনে যাতে কোনোভাবেই বিজেপি ক্ষমতায় আসতে না পারে সে কারণে ধারাবাহিক প্রচার গড়ে তোলার উপর জোর দেন। অবস্থানে বেহালায় গণসংগীত পরিবেশন করেন মল্লিনাথ ভট্টাচার্য। সমগ্র কর্মসূচী পরিচালনা করেন বাপ্পা।

ytyycccc

কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে ভবানীপুরের চক্রবেড়িয়া এলাকায় নেতাজী ভগৎ সিং ইউনাইটেড ফোরাম অ্যান্ড জাস্টিস ইউনিফাইং সোশ্যাল ট্রান্সফরমেশন (JUST) অনশন মঞ্চ চালায় ১৮ জানুয়ারী পর্যন্ত। প্রতিবাদ কর্মসূচীর ১২তম দিনে সারা ভারত প্রগতিশীল মহিলা সমিতি থেকে ৮ জন অংশ নেন। নয়া কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে সেখানে দীর্ঘক্ষণ পোস্টারিং, বক্তব্য, শ্লোগান, কবিতা পাঠ ও সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। বেলা ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলে অনশন। বেলা ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত প্রচার চলে প্রচার গাড়িতে করে। অনশন মঞ্চে নয়া কৃষি আইনকে বিরোধিতা করে কিছু কর্মসূচী নেওয়া হয় এবং ধর্মতলার ধর্ণা মঞ্চে ১৮ জানুয়ারী মহিলা কৃষক দিবসে সামিল হয়। ২৬ জানুয়ারী এই ফোরামের পক্ষ থেকে কৃষক প্রজাতন্ত্র দিবস পালন করা হয় মশাল মিছিলের মধ্যে দিয়ে।

- স্বপ্না চক্রবর্তী    

ggggarrrgar

“এক বারো বছরের কিশোরীর কামিজের উপর থেকে বুক টেপা আর সালওয়ার খোলার চেষ্টা করার পরে, এক ভারতীয় আদালত মাথা নেড়ে নেড়ে ভাবে, একে কি যৌন নিগ্রহ বলা যায়? বোম্বে হাইকোর্ট-এ এমনটাই ঘটেছে আর এ’খবর সংবাদপত্রে শোভা পেয়েছে জাতীয় কন্যাশিশু দিবসে। এরপর নিজের কন্যা ও আশেপাশে সমস্ত কন্যাশিশুর জন্য চিন্তিত হয়ে ওঠা ছাড়া উপায় কী?

অথচ আগেই পক্সোয় অপরাধীর শাস্তি ঘোষণা করেছিল নাগপুর কোর্ট। বস্তুত বোম্বে হাইকোর্ট নাগপুর হাইকোর্টের সেই রায়কে খারিজ করে পক্সো ছাড়া অন্যান্য ধারা বজায় রাখল। আয়রনি হল, বিচারপতি আবার এক মহিলা। তিনি যা বললেন, তার সার হল, পক্সোতে ‘টাচিং’ কথাটি লেখা আছে। স্তন, নিতম্ব, যোনি ‘টাচ’ করার কথা লেখা আছে। এবং জামা না সরালে ‘টাচ’ করা যায় না। জামার উপর থেকে টেপাটেপি তাই পক্সোর ৭ বা ৮ ধারা অনুযায়ী ‘যৌন নির্যাতন নয়’।

এটাকে আইনের ভাষায় সুচারুভাবে ‘narrowest interpretation’ বলতে হয়। মানে হল, ‘ছোঁয়াছুঁয়ির সংকীর্ণতম ব্যাখ্যা’। কিন্তু গোদা ভাষায় একে পাতি ‘মিথ্যাচার’ বলে৷ পক্সোর ৭, ৮ ধারায় কোথাও লেখা নেই, ‘স্কিন টু স্কিন কনট্যাক্ট’-কেই শুধু ‘টাচ’ বলা হবে৷ আর পক্সোর প্রাণ হল ২৯নং ধারা, যেখানে লেখাই আছে, পক্সোর ক্ষেত্রে অভিযুক্তকে অপরাধী ধরেই এগোতে হবে, কারণ পক্সো শিশুদের কল্যাণের সঙ্গে জড়িত৷ এখানে শিশুর স্বার্থ সবার আগে দেখা হবে। সাধারণ যৌন হেনস্থা, নির্যাতন বা ধর্ষণের ধারাগুলি আদালতে শিশুদের বাড়তি নির্যাতনের কারণ হয়ে উঠছে বলেই পস্কো এসেছিল কিন্তু। আবারও মনে করিয়ে দিই মেয়েটির বয়স বারো। নারীরা মনে করে দেখুন নিজের কিশোর বয়স। স্কুলে যাওয়া আসার পথে ট্রেনে বাসে যারা বুক-পাছা টিপেছিল, তারা জামা সরিয়ে টেপেনি, কারণ সে অবকাশ ছিল না৷ তার মানে সেগুলো যৌন নির্যাতন ছিল না?

অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বজায় আছে ৩৫৪র মতো ধোঁয়াশাযুক্ত আইন যা ‘মডেস্টি অফ উইমেন’ ধরনের প্রাগৈতিহাসিক ভাষা ব্যবহার করে। একটা বারো বছরের মেয়ে, যাকে পেয়ারার লোভ দেখিয়েই অন্তরালে যৌন উৎপীড়নের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সে ‘মডেস্টি’-র কী বোঝে? সে কেন এই বার্তা পেল না একটা উচ্চ আদালত থেকে যে টেপাটেপি দূরস্থান, তার বুকে হাত দেওয়াও জামিন-অযোগ্য অপরাধ? তাহলে আমরা যারা শিশু যৌন নির্যাতন সম্পর্কে শিশুদের সচেতন করছি, তাদের আশ্বাস দিচ্ছি, ‘এমন কিছু তোমার সঙ্গে হলে দেখে নেব’, তারা কি ভুল করছি?

মোদ্দা ব্যাপার হল, পক্সো জামিন-অযোগ্য। পক্সো নির্মম৷ ৩৫৪ অপেক্ষাকৃত অনেক সহজ ধারা৷ তাই অপরাধীকে বাঁচাতেই এই রায়, যা আইনের ‘স্পিরিট’-এর বিরুদ্ধে যায়। এবার তাহলে পক্সোকেও পিতৃতান্ত্রিক ছাঁচে ঢেলে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হল। নিজের কন্যাসন্তানের স্বার্থে এর প্রতিবাদ করা আশু দরকার।”

-- শতাব্দী দাস    

ggggssssa

সংসদে কৃষি আইন প্রণয়ন হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে পাঞ্জাবের কৃষক সংগঠনগুলি একত্রিত হয়। ২৫ সেপ্টেম্বর তাঁরা রাজ্যে বন্ধ ডাকে যা জনজীবন স্তব্ধ করে দেয়। মারণঘাতী এই আইনগুলি আসার আগে কৃষকরা ৩২টি সংগঠনে বিভক্ত ছিলেন। ন’টি স্বতন্ত্র সংগঠন ছিল এছাড়া বাকিরা ‘অল ইন্ডিয়া কিষান সংঘর্ষ কোঅর্ডিনেশন কমিটি’ এবং ‘ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়ান’-এর সদস্য ছিলেন। আজকে যখন আন্দোলন উচ্চ পর্যায়ে চলে গেছে তখন কেউ ভাবতেও পারবেন না এই সংগঠনগুলিকে একত্রিত করা কতো কঠিন ছিল। এঁদের মধ্যে ধনী কৃষকের সংগঠন যেমন ছিল তেমনি ছোট, প্রান্তিক কৃষক ও ক্ষেতমজুরদের সংগঠনও ছিল। গত ২৪ জানুয়ারী বিজয়গড় নিরঞ্জন সদনে ‘স্টুডেন্টস উইথ ফার্মারস’ আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে পাঞ্জাবের কৃষক নেতা রবিন্দার সিং পাতিয়ালা উপরোক্ত কথাগুলি বলেন। তিনি ছাড়াও এই অনুষ্ঠানে জগবির কৌর এবং সুখবিন্দার কৌর উপস্থিত ছিলেন। শ্রী রবিন্দার সিং আরও বলেন ১ অক্টোবর থেকেই তাঁরা দীর্ঘস্থায়ী আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন। তাঁরা তখন থেকেই জানতেন এই আন্দোলন লম্বা চলনে ওয়ালা হ্যায়। তিনি বলেন শুরুতে তাঁরা ভাবতেই পারেননি যে আন্দোলনে এই রকম সাড়া পাওয়া যাবে এবং বিভিন্ন মতাদর্শের এই সংগঠনগুলির মধ্যে ঐক্য এতো সুদৃঢ় হবে।

আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী সুখবিন্দার কৌর বলেন পাঞ্জাবে কৃষি যে গভীর সংকটে নিমজ্জিত হচ্ছে তা গত তিরিশ বছর ধরেই বোঝা যাচ্ছিল। তিনি নব্বই-এর দশকের শুরুতে ডাঙ্কেল প্রস্তাবের উল্লেখ করেন। প্রসঙ্গত আর্থার ডাঙ্কেল কৃষিতে বিশ্বায়ন সূচিত করার প্রধান প্রবক্তা। আমাদের দেশের চাষিরা এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ফেটে পড়েছিলেন। ব্যাঙ্গালোরে তাঁরা একটি বহুজাতিক বীজ কোম্পানির অফিস ভাঙচুর করেন এবং ১৯৯৩-এর ৩ মার্চ দিল্লীতে বিশাল মিছিল করে এই প্রস্তাব পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেন। তখন বিকেইউ’র মহেন্দ্র সিং টিকায়েত বলেছিলেন ডাঙ্কেল প্রস্তাব যদি মেনে নেওয়া হয় তাহলে বহুজাতিক কোম্পানিগুলি ভারতীয় কৃষি শাসন করবেন। বলাই বাহুল্য অত্যন্ত দূরদর্শী মন্তব্য! তাৎপর্যপূর্ণভাবে তখন ভুপিন্দার সিং মান, অশোক গুলাটি এবং শ্বেতকারী সংগঠনের শরদ জোশি এই প্রস্তাব সমর্থন করেছিলেন। উপরোক্ত দুই ব্যক্তি এবং শ্বেতকারী সংগঠনের অনিল ঘনোয়াট আজও কৃষক স্বার্থবিরোধী আইনগুলির পক্ষে এবং সুপ্রিম কোর্টের কমিটির সদস্য, যদিও মান পরে পদত্যাগ করেছেন।

শ্রীমতি কৌর বলেন এই সংকটের শুরু ষাটের দশকে সবুজ বিপ্লবের সময় থেকে। তখন সরকারি আধিকারিকরা চাষির ঘরে ঘরে গিয়ে এই নতুন চাষ শুরু করার জন্য প্রচার করেছিলেন। এই অভিনব চাষে দীক্ষিত করার জন্য পাঞ্জাবে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছিল। এই নতুন পদ্ধতিতে চাষ শুরু করার পর এতো আনাজ হতো যে সরকার পুরো কিনে উঠতে পারতো না। উচ্চফলনশীল বীজ ব্যবহার শুরু হল, আমরা আমাদের পরম্পরাগত সাবেকি চাষের রীতিনীতি ভুলে গেলাম। এই ধরনের বীজ ব্যবহারের কারণে নানা সমস্যা শুরু হল যেগুলো সমাধানের জন্য আবার জমিতে পোকামাকড়, কীটপতঙ্গ মারার বিভিন্ন ওষুধ প্রয়োগ করা শুরু হল। আমরা এই বীজ, পেস্টিসাইডস, ইন্সেক্টিসাইডস-এর ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে যে বহুজাতিক সংস্থাগুলি তাদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়লাম। তাদের ব্যবসায় জোয়ার এলো, চাষিদের দুর্গতি শুরু হল। বিভিন্ন ব্যাংক কম সুদে, সহজ কিস্তিতে ট্র্যাক্টর কেনার ঋণ দিল। পুরো পাঞ্জাব ট্র্যাক্টরে ভরে গেল। এখন বছরের অর্ধেক সময় এই ট্র্যাক্টরগুলি মাল বহন করার কাজে ব্যবহৃত হয়। ক্ষেতমজুরদের মজুরি কমে যাওয়া শুরু হল। আজকে পাঞ্জাবে কৃষক আত্মহত্যার ৫৩% হচ্ছে ক্ষেতমজুর। আমাদের উৎপাদিত ফসলের অর্ধেক সরকার কেনে বাকিটা ঘরে পরে থাকে। লকডাউনের সময় পাঞ্জাবে একজনও ক্ষুধার কারণে মারা যায়নি কারণ আমাদের ঘরে পর্যাপ্ত পরিমাণে চাল গম ছিল। আমরা বস্তা করে শস্য গুরুদোয়ার পাঠিয়ে দিতাম যা তাঁরা বিভিন্ন জায়গায় লঙ্গর খুলে দুঃস্থ মানুষদের ক্ষুধা নিবারণ করতেন। সরকার আজ কৃষকদের উপদেশ দিচ্ছেন এতো চাল গম উৎপাদন করে কী হবে, আলু, টমাটো, সূর্যমুখি করো? আমরা বলছি এইসব ফসলের জন্য আমাদের এমএসপি দাও, মান্ডি দাও, বিমা দাও, আমরা সানন্দে তা করব। সুখবিন্দার কৌর দৃপ্ত কন্ঠে বলেন আজ আমাদের সমস্যা গভীর রূপ ধারণ করেছে -- এসপার নয় উসপার! কিষাণ থাকলে এই কানুন থাকবে না, কানুন থাকলে আমরা কিষাণরা থাকব না।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন শ্রী ছন্দক চাটার্জি। তিনি বলেন অনেকেরই আক্ষেপ বাংলার চাষিরা কেন এই আন্দোলনে সেইভাবে শামিল হচ্ছেন না। তাঁদের সংগঠন ‘জল, জমিন, জঙ্গল’ কিছু গ্রামে গিয়ে দেখেছেন বেশির ভাগচাষি ঋণগ্রস্ত, ফসল বিমার জন্য আবেদন করতে না পারার দরুণ তাঁরা সেই ব্যবস্থার সুযোগও নিতে পারেন না। আরও গুরুত্বপূর্ণ প্রায় কেউই এই আইনগুলি সম্পর্কে অবহিত নন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে জগবির কৌর পাঞ্জাবি গান পরিবেশন করেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই মনোজ্ঞ আলোচনার সমাপ্তি ঘটে।

- সোমনাথ গুহ    

mmmmgggeeaaa

গত নভেম্বরে ভারতের শিল্পোৎপাদন ১.৯% কমেছে। শিল্পোৎপাদনের সূচক অনুসারে ওই মাসে ম্যানুফাকচারিং ক্ষেত্রের উৎপাদন ১.৭% কমেছে। খনিজ উৎপাদন কমেছে ৭.৩%, বিদ্যুত উৎপাদন বেড়েছে ৩.৫%। ২০১৯ সালের মভেম্বর মাসে শিল্পোৎপাদনের সূচক ২.১% বেড়েছিল। এমনটা যখন ঘটছে ও কোভিড অতিমারির ফলে যখন জিএসটি, আয়কর আদায় কমেছে। ঠিক তখনই এপ্রিল-নভেম্বর, ২০২০ সময়কালে উৎপাদন শুল্ক বা এক্সাইজ ডিউটি আদায় বেড়েছে ৪৮%, ২০১৯ সালের ওই সময়কালের ১.৩৩ লক্ষ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ১.৯৬ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। যদিও ওই ৮ মাসে ডিজেলের বিক্রি কমেছে ১ কোটি টনের থেকেও বেশি, পেট্রলের বিক্রিও কমেছে ৩০ লক্ষ টন। ডিজেলে ও পেট্রলের বিক্রি যথাক্রমে ৫.৫৪ কোটি টন ও ২.০৪ কোটি টন থেকে কমে ৪.৪৯ কোটি টন ও ১.৭৪ কোটি টনে পৌঁছেছে। কেন্দ্রীয় সরকার মূলত পেট্রল ডিজেলকে আয় বাড়ানোর অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে সেই ২০১৪ সাল থেকে। আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের মূল্য তলানিতে ঠেকলেও তেলের উপরে ক্রমাগত এক্সাইজ ডিউটি বাড়িয়ে এদেশে তেলের দামকে ক্রমাগত বাড়ানোই সরকারের কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। লকডাউনের প্রথম পর্যায়েই সরকার গত মার্চথেকে মে মাসের মধ্যে পেট্রল ও ডিজেলের উপর এক্সাইজ ডিউটি যথাক্রমে প্রতি লিটারে ১৩ টাকা ও ১৬ টাকা বাড়িয়েছিল। যার ফলে পেট্রল ও ডিজেলের উপরে এক্সাইজ ডিউটি বেড়ে ৩২.৯৮ টাকা ও ৩১.৮৩ টাকা প্রতি লিটারে দাঁড়িয়েছিল। মোদি সরকার যখন ক্ষমতায় এসেছিল তখন তা ছিল যথাক্রমে প্রতি লিটারে ৯.৪৮ টাকা ও ৩.৫৬ টাকা। নভেম্বর, ২০১৪ থেকে জানুয়ারী, ২০১৬ এই ১৫ মাসে ৯ বার এক্সাইজ ডিউটি বাড়ানো হয়। অক্টোবর, ২০১৭ ও তার একবছর পরে এক্সাইজ ডিউটি যথাক্রমে ২ টাকা ও ১.৫০ টাকা কমানো হয়েছিল। কিন্তু জুলাই, ২০১৯ এ আবার লিটারে ২ টাকা বাড়ানো হয়; মার্চ, ২০২০তে তা লিটারে ৩ টাকা ও গত মে মাসে এক ধাক্কায় পেট্রলে লিটারে ১০ ও ডিজেলে লিটারে ১৩ টাকা বাড়ানো হয়েছিল। কন্ট্রোলার অফ গভর্নমেন্ট একাউন্টসের তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ এর এপ্রিলনভেম্বর এই আট মাসে সরকারের কর রাজস্ব আদায় ৪৫.৫% কমে ৬.৮৮ লক্ষ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। ২০২০-২১ অর্থ বর্ষে সরকারের বাজেটে কর রাজস্বের পরিমাণ ১৬.৩৫ লক্ষ কোটি টাকা ধরা হয়েছিল। কোম্পানি আয় কর কমেছে ৩৫%, আয কর কমেছে ১২%।

বোঝাই যাচ্ছে, ভারতের অর্থনীতি বিরাট ধাক্কা খেয়েছে। সরকারি তথ্য বলছে যে ভারতের অর্থনৈতিক কাজকর্মবিপুল সঙ্কুচিত হয়েছে। যদিও বলা হচ্ছে যে, চতুর্থত্রৈমাসিকে ধনাত্মক বৃদ্ধি দেখা যাবে। কিন্তু পূর্বের এধরনের অর্থনৈতি কসঙ্কটকে যদি বিবেচনায় আনা যায় তাহলে দেশের অর্থনীতি দীর্ঘকালীন ক্ষতির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে রয়েছে। আমাদের জীবনযাত্রার সবদিকেই – সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক – একধরনের জটিলতা এসে উপস্থিত হচ্ছে। কিন্তু নীতিগত স্তরের আলোচনায় মনে হচ্ছে যেন কিছুই হয়নি। সব কয়েকদিনেই ঠিক হয়ে যাবে। সরকারী আমলা ও শাসক রাজনীতিবিদরা ভারতের V আকৃতির বৃদ্ধির কথা বলেই চলেছেন। লকডাউনের সময়কার প্রথম ত্রৈমাসিকে (২০২০-২১-এর প্রথম ত্রৈমাসিকে) অর্থনৈতিক কাজকর্মের হ্রাস তার আগের ত্রৈমাসিকের তুলনায় প্রায় ৩০% হয়েছিল। পরের ত্রৈমাসিকে যখন লকডাউনকে শিথিল করা হয়েছিল তখন আগের ত্রৈমাসিকের তুলনায় অর্থনৈতিক বৃদ্ধি ঘটেছে প্রায় ২১%। ফলে ছবি আঁকলে অমন আকৃতির কথা বলাই যেতে পারে।

কিন্তু বিষয়টা তেমন নয়। শাসক দল ও আলোচকরা মূলত ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রের সমস্যা, মুদ্রাস্ফীতি, কর্মসংস্থানে হ্রাস, দুর্বল বিনিয়োগের বৃদ্ধি ইত্যাদি নিয়েই কথা বলছে। এগুলি গুরুত্বপূর্ণবিষয় সন্দেহ নেই। কিন্তু এসব নিয়ে তো আমরা প্রতি বছরেই আলোচনা করি, কিন্তু প্রতি বছরে তো অতিমারি হয় না। বিশ্ব জোড়া তান্ডব তো দেখা যায় না যাতে সব মিলিয়ে ১০ লক্ষ কোটি ডলারের ক্ষতি হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে, যে অনুমানকেও ‘দি ইকোনোমিস্ট’ কমিয়ে দেখানো হযেছে বলেছে; কারণ কেবল আমেরিকাতেই এই অতিমারীর ফলে ১৬ লক্ষ কোটি টাকার ক্ষতি হবে বলে ‘দি ইকোনোমিস্টের’ অনুমান। এরকম একটা ঘটনাকে হজম করা সহজ নয় যা বেশ কয়েক গন্ডা নতুন অর্বুদপতি সৃষ্টি করে, এক হাজারের থেকেও কম সংখ্যক অতিধনীর হাতে অতিরিক্ত লক্ষ কোটি ডলার পৌঁছে দেয়, একইসাথে কোটি কোটি সাধারণ মানুষ নতুন করে গরিবে পরিণত হয়। ভারতে ৭ জন অর্বুদপতি তাদের সম্পদ সাড়ে চার লক্ষ কোটি টাকা বাড়িয়েছে এই অতিমারীতে। ওদিকে নভেম্বরে সরকার যখন নুতন করে অর্থনৈতিক উৎসাহের জন্য প্যাকেজ ঘোষণা করছে তখন ‘দি ইকোনোমিস্ট’ জানাচ্ছে সব মিলিয়ে নতুন খরচ হল ৩ লক্ষ কোটি টাকার কম। বাদ বাকি হল ঋণ। এটি দুর্ভাগ্যজনক যে ভারত সরকার ১৩৮ কোটি লোকের জন্য যে টাকা বরাদ্দ করছে তার থেকে দেড় গুণের বেশি টাকার সম্পত্তি বাড়ছে ৭ জন অর্বুদপতি ভারতীয়ের।

কোভিড-১৯ বেশিরভাগ অর্থনীতিতে গভীর ক্ষত তৈরি করবে। বিশ্বের ভবিষ্যৎ অনুমানের পরামর্শদাতা “অক্সফোর্ড ইকোনোমিকস”-এর অর্থনৈতিক ভাঙ্গন প্রবণতা নিয়ে বিশ্লেষণ অনুসারে ভারতের ক্ষত বিশ্বের মধ্যে সব থেকে গভীর হতে পারে। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য সীমিত রকারি সাহায্য, কাঠামোগত গোঁড়ামি, অর্থলগ্নি ক্ষেত্রে ভারসাম্যহীনতার ফলে অর্থনীতির অতিমারী পূর্ববর্তী অবস্থানে পৌঁছতে অনেক সময় লাগতে পারে।

কিন্তু দেশের সর্বজ্ঞানী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এসব কথা মানতে নারাজ। তার কথায় ভারত কোভিড মোকাবিলায় দারুণ কাজ করেছে। যার ফলে এদেশে কোভিড জনিত মৃত্যু হার সব থেকে কম মৃ্ত্যুহারের দেশগুলির মধ্যে অন্যতম এবং অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনের পথে তা দ্রুতই পৌছে গেছে। কিন্তু বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রাক্তন মুখ্য অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু আইএমএফ-এর ২০২০ সালের অনুমিত জিডিপি বৃদ্ধি ও প্রতি ১০ লক্ষ জনসংখ্যায় কোভিড থেকে মৃত্যুহার নিয়ে বেশ কয়েকটি তুলনাযোগ্য এশিয় দেশের মধ্যে প্রতি-তুলনা করেছেন। অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসুর সেই তথ্য, মোদিজির দাম্ভিক ঘোষণা যে ভারত কোভিড-১৯ অতিমারীর মোকাবিলায় অত্যন্ত সফল কারণ এদেশে মৃত্যু হার অন্য সব দেশের তুলনায় খুবই কম – এই দাবিকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। মনে রাখা দরকার এর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী মে মাসে বলেছিলেন যে ভারত বিশ্ব অর্থনীতির পুনরুজ্জীবনকে নেতৃত্ব দেবে তা তথ্যের আলোকে রসিকতায় পর্যবসিত হয়েছে।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী কোভিডের ফলে মৃত্যু হারের নিরীখে ভারত দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব ও পূর্ব এশিযার দেশগুলির মধ্যে সব থেকে খারাপ অবস্থানে রয়েছে, অর্থাৎ ভারতে দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব ও পূর্ব এশিযার দেশগুলির মধ্যে মৃত্যুহার সর্বোচ্চ। এবং ভারতের জিডিপি বৃদ্ধির আনুমানিক হার সর্বনিম্ন। উভয় ক্ষেত্রেই ভারতের ভূমিকা হতাশাব্যঞ্জক। আজ (২০ জানুয়ারী, ২০২১) প্রতি মিলিয়ন (দশ লক্ষ) জনসংখ্যা পিছু মৃত্যুহারগুলি দেখা যাক। ভারতে প্রতি মিলিয়নে ১১০ জন, ইন্দোনেশিয়ায় ৯৭, মালদ্বীপে ৯০, নেপালে ৬৭, আফগানিস্তানে ৬০, মায়ানমারে ৫৫, পাকিস্তানে ৫০, বাংলাদেশে ৪৮, জাপানে ৩৬, দক্ষিণ কোরিয়ায় ২৫, মালযেশিয়ায় ১৯, শ্রীলঙ্কায় ১৩, মরিশাসে ৮, সিঙ্গাপুরে ৫, চীনে ৩, ভূটানে ১, তাইওযানে ০.৮ ও ভিয়েতনামে ০.৪। অন্যদিকে বৃদ্ধির অনুমিত হারে ইন্ডিয়ার বার্ষিক জিডিপি হ্রাস ঘটবে ১০%-এর মতো, কিন্তু চীন, বাংলাদেশ বা ভিযেতনামের জিডিপির ধনাত্মক বৃদ্ধি ঘটবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

পরিসংখ্যান যাই বলুক না কেন, প্রধানমন্ত্রী ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা যতই অর্থনীতির দূরবস্থাকে উড়িয়ে দিক না কেন, সমস্ত ছবিটাই সাধারণ মানুষের কাছে দূর্বিসহ যাতনা হয়ে উঠছে।কোটি কোটি ছাত্র গত ১ বছর ধরে বিদ্যালয় শিক্ষার বাইরে থেকে গেল। রাস্তাঘাট, পরিবহণ, বাস, অটো, ট্রেন, চায়ের দোকান, অসংগঠিত ক্ষেত্রের সর্বত্র আর্থিক অসহায়তা প্রকট হচ্ছে। গত বছরের মার্চথেকে প্রায় বছর ঘুরতে চলল বহু মানুষ কাজের বাইরে চলে গেছে বা অর্ধেকেরও কম আয়ে নতুন কাজ খুঁজছে। সিএমআইই তথ্য অনুসারে বেকারির হার গত ডিসেম্বরে পুনরায় ৯% ছাড়িয়ে গিয়েছে। ফলে যে অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনের গল্প ফাঁদা হয়েছে তা যে ফাঁকা আওযাজ তা বোঝা যাচ্ছে।

- অমিত দাশগুপ্ত   

eeeeddeeq

(“ভারতের অর্থনীতি ভি অক্ষরের মতো আবার উঠে দাঁড়াচ্ছে, আর গোটা দুনিয়া তা দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছে” -- অমিত শাহ এই উক্তি করেছেন। বিপর্যস্ত জনতার প্রতি নির্মম পরিহাস, না কি, নির্লজ্জ বেহায়াপনা -- কী বলা যায় হোম মিনিস্টারের এই উক্তিকে? ‘ইন্ডিয়া স্পেন্ড’-এ প্রকাশিত ২২ জানুয়ারী ২০২১ তারিখের একটি লেখা এই নির্লজ্জ মিথ্যাচারকে আবার উন্মোচিত করেছে। আমরা এই লেখাটির কিছু মূল অংশ এখানে প্রকাশ করলাম। - সম্পাদকমন্ডলী)

ভারতের লাখ লাখ নিম্ন-আয় সম্পন্ন ও দরিদ্র পরিবার বর্তমানে তীব্র আর্থিক সংকটের জালে জর্জরিত। অতিমারী ভারতের অর্থনীতিকে ছারখার করে ব্যাপক বেকারত্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি মজুরির উপরও আঘাত নামিয়ে এনেছে। এখন এরসাথে যুক্ত হয়েছে খাদ্য সামগ্রির দীর্ঘমেয়াদি মূল্যস্ফীতি। এই সাড়াশি আক্রমণে নাভিশ্বাস ওঠা দরিদ্র পরিবারগুলো এখন খাদ্যের পেছনে তাদের ব্যয় সংকুচিত করতে শুরু করেছেন, যা ডেকে আনছে শিশুদের মধ্যে অপুষ্টি, দারিদ্রের কারণে খাদ্য সামগ্রির ক্ষেত্রে টানাটানি শুরু হয়েছে।

অর্থশাস্ত্রীরা বলছেন, সঞ্চিত টাকার উপর হাত পড়ায় দেশের মোট সঞ্চয় নিম্নগামী হচ্ছে, যা ভোগব্যয়ে প্রভাব ফেলছে, ফলে আর্থিক পুনরুদ্ধার আরও বিলম্বিত হবে। ভোগ্যপণ্যের বাজার চাঙ্গা না হলে, বিনিয়োগকারীরাও বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হচ্ছেন না। আন্তর্জাতিক লগ্নিকারীরাও এমন এক বাজারে পুঁজি ঢালবেন না, যেখানে ক্রেতাদের পণ্য খরিদ করার জন্য গ্যাঁটে টাকা নেই। এর প্রভাব পড়বে কর্মসংস্থানেও।

দারিদ্র ও ক্ষুধা ঊর্দ্ধমুখী। অক্টোবর মাসে খাদ্য সামগ্রির মূল্যস্ফীতি মাথাচাড়া দিয়ে ১১ শতাংশে ছুঁয়ে যায়, আর নভেম্বরে তা সামান্য নামে ৯.৪৩ শতাংশে। অতিমারীর আগে ভোগ্যপণ্য মূল্য রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সর্বোচ্চ সীমা ৬ শতাংশের আশেপাশে ঘোরাফেরা করছিল। অতিমারীর পর, আর প্রধানমন্ত্রী আচমকা দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণা করার পর কৃষিক্ষেত্রে সাপ্লাই চেন বিপর্যস্ত হয়ে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিগত কয়েক মাসে খাদ্য সামগ্রির মূল্যস্ফীতির পেছনে এটাই সবচেয়ে বড় কারণ। খাদ্য সামগ্রির ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধি গরিব মানুষদ্রের উপর নিদারুণ প্রভাব ফেলছে কারণ ইতিমধ্যেই তাঁদের বিরাট এক অংশই কর্মহীন, বা অনেক কম মজুরিতে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন।

বিশিষ্ট অর্থশাস্ত্রী জয়তী ঘোষ বলেছেন, “এমন একটা সময়ে মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে যখন কাজকর্ম খুইয়ে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবন নির্বাহ করাটাই দুরূহ হয়ে উঠেছে”। তিনি নানা তথ্য দিয়ে দেখিয়েছেন, “শুধু অতিমারীর সময়েই নয়, তারও আগে যখন দেশের অর্থনীতি তীব্র মন্থরতার মুখে পড়ে, তখন অনেকেই নতুন কাজ খুঁজে পাননি। আর, যাদের হাতে কাজ ছিল, তাঁরাও কম মজুরিতে কাজ করতে বাধ্য হন। বেশির ভাগ স্বনিযুক্ত কর্মীদের মজুরি আগের তুলনায় অনেক হ্রাসপ্রাপ্ত হয়। এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই যে, দেশে দারিদ্র ও ক্ষুধা এক লাফে অনেকটাই বেড়েছে।”

জ্বালানির উপর কর মূল্যস্ফীতিকে আরও বাড়িয়েছে। অর্থশাস্ত্রীদের অভিমত, জ্বালানির উপর ক্রমবর্ধমান মাশুল বৃদ্ধি এই মূল্যস্ফীতিকে বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। এরফলে ধাক্কা খেয়েছে লক্ষ লক্ষ স্বনিযুক্ত ভারতীয় ও ক্ষুদ্র ব্যবসা আর তার সাথে সম্পর্কযুক্ত লক্ষ কোটি ইনফর্মাল সেক্টরের শ্রমিকেরা, যারা এই আর্থিক সংকটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

মূল্যস্ফীতি, সংকোচন ও খাদ্য বন্টন। অর্থনীতির নজিরবিহীন সংকোচনের হাত ধরে বেড়েছে খাদ্যসামগ্রির মূল্য। লক্ষ কোটি দরিদ্র ভারতবাসী এবং নিম্ন-আয় সম্পন্ন পরিবারগুলোর হাতে নগদ টাকা তুলে না দেওয়ায় ইতিমধ্যেই বহু অর্থশাস্ত্রী মোদী সরকারকে সমালোচনা করেছেন। আর, সরকারের তরফ থেকে এই খরচ না করাটা বর্তমানে অর্থনীতির সংকোচনের পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ। একথা বলেছেন জেএনইউ’র অর্থনীতির অধ্যাপক ও প্ল্যানিং কমিশনের ডেভেলপমেন্ট পলিসির প্রাক্তন প্রধান সন্তোষ মেহরোত্রা। তিনি আরও বলেছেন, “জি-২০’র দেশগুলোর তুলনায় ভারতের আর্থিক সংকোচন সবচেয়ে বেশি। গোটা দুনিয়ার মধ্যে এখন আমাদের দেশেই রয়েছে সবচেয়ে বেশি গরিব মানুষের সংখ্যা। তাই এটা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে আমাদের সরকার একেবারেই ভুল পথে দেশের অর্থনীতিকে পরিচালিত করছে।”

লকডাউনের পর বেশ কয়েকমাস খাদ্য সামগ্রির মূল্যস্ফীতি ছিল অনেক বেশি। এরই সাথে যুক্ত হয় মারাত্মক কর্মহীনতা ও সংকুচিত গ্রামীণ মজুরি। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা প্রকল্পের অধীনে সরকার নভেম্বরের পর আর নিখরচায় খাদ্যশস্য সরবরাহ করেনি। অর্থশাস্ত্রীরা সতর্ক করে জানিয়েছেন যে এর ফলে দারিদ্র-জনিত অপুষ্টির শিকার হবেন বিপুল মানুষ, অর্থের অভাবে গরিব পরিবারগুলো খাদ্য সামগ্রির পেছনে খরচে রাশ টেনে ধরতে বাধ্য হচ্ছেন। জয়তী ঘোষ বলেছেন, “জনকল্যাণমূলক খাতে ও খাদ্য সরবরাহ প্রশ্নে সরকার যে কেন খরচ করছে না তা রীতিমতো এক রহস্য। এমনকি আইএমএফও ভারত সরকারকে আরও বেশি খরচ করার পরামর্শ দিয়েছে।” তিনি অবিলম্বে এফসিআই-র গুদাম থেকে উদ্বৃত্ত খাদ্যশস্য বিতরণ করার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “একদিকে দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ ক্ষুধার জ্বালায় দিন কাটাচ্ছেন, আর অন্যদিকে সরকারী গুদামে উপচে পড়া খাদ্যশস্য পচে নষ্ট হচ্ছে।” লকডাউনের সময়, এপ্রিল-জুনের মধ্যে প্রায় ১,৫০০ টন খাদ্য শস্য পচে নষ্ট হয়। তার সাপেক্ষে, ২০২০-র গোটা অর্থবর্ষে এফসিআই গুদামে নষ্ট হয় ২,০০০ টন খাদ্য শস্য।

বিত্তশালীদের উপর কর বসাও, আরও বেশি খরচ কর। জয়তী ঘোষের মতে, কেন্দ্রীয় সরকারকে অবিলম্বে রাজ্য সরকারের হাতে বেশি টাকা দিতে হবে, খরচ করতে হবে সেই সমস্ত কেন্দ্রীয় প্রকল্পে যেগুলোর মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থান হতে পারে, স্বাস্থ্য শিক্ষার উন্নতিকল্পেও তার প্রভাব পড়বে। বাড়তি খরচের সংস্থান জোটাতে কেন্দ্রীয় সরকার অর্বুদপতি বা অতি ধনীদের উপর সম্পদ কর বসাতে পারে, যারা অতিমারীর সময়ে ব্যাপক মুনাফা অর্জন করেছে (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে যেমনটা ভাবনা চিন্তা চলছে), করনীতির বদল ঘটিয়ে এমএনসি-গুলোকে সেই পরিমাণে কর দিতে বাধ্য করানো যা ঘরোয়া কোম্পানিগুলো দিয়ে থাকে, বা যে সমস্ত সংস্থাগুলোর আর্থিক কার্যকলাপ বেড়েছে, তাদের উপর নতুন কর বিন্যাস প্রভৃতি পদক্ষেপ নিতে পারে সরকার। পরিবারগুলো তাঁদের বহু কষ্টার্জিত সঞ্চয়কে যেভাবে খরচ করতে বাধ্য হচ্ছেন, তা ভারতের থমকে থাকা অর্থনীতির চাকা ঘোরাবে না। তাই সরকারকে তার আর্থিক নীতির গতিপথকে আমূল বদলাতে হবে, আর তার জন্য রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগের পথই এখন সংকট মুক্তির একমাত্র পথ।

dgggggggeee

আঠারো শতকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাত ধরে ইংরেজদের কাছে চলে গেলেও প্রথমদিকে ভারতীয় বা বাঙালি সমাজের শিক্ষা সাহিত্য সংস্কৃতিতে তার তেমন প্রভাব পড়েনি। এই প্রভাব পড়তে শুরু করে ঊনিশ শতকের দ্বিতীয় দশক থেকে। একদিকে রামমোহনের মতো ব্যক্তিত্বের কোলকাতায় প্রত্যাবর্তন (১৮১৫ সাল) ও অন্যদিকে হিন্দু স্কুলের মতো প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার (১৮১৭ সাল) সূত্র ধরে এই প্রভাব পড়া শুরু হয়। বাঙালি সমাজে পাশ্চাত্য শিক্ষা সংস্কৃতির প্রভাব প্রথমদিকে খুব অল্প লোকের মধ্যেই পড়েছিল কিন্তু সেই প্রভাবের অভিঘাত ছিল বেশ গভীর। ১৮৩০ সালের মধ্যেই হিন্দু কলেজের তরুণ শিক্ষক ডিরোজিও ও নব্য প্রচলিত পাশাচত্য শিক্ষার হাত ধরে আসা যুক্তিবাদকে ঘিরে ডিরোজিয়ানদের কার্যকলাপ সমাজে বেশ আলোড়ন তুলেছিল। রামমোহন যখন সতীদাহর মতো নির্মম প্রথা রদ করার আন্দোলনে নামলেন তখন হিন্দু সমাজের ভেতরের রক্ষণশীলদের প্রতিক্রিয়া ছিল তীব্র। এই প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল তার প্রমাণ পাওয়া যাবে ভবানীচরণ সম্পাদিত সম্বাদ কৌমুদী পত্রিকার লেখাগুলি পড়লে। কলিকাতা কমলাললয়, নববাবু বিলাস, নববিবি বিলাস ভবানীচরণের লেখা এই বইগুলিতেও ইয়ং বেঙ্গলদের বিরুদ্ধে শাণিত আক্রমণ রয়েছে।

পরিবর্তন ও রক্ষণশীলতার দ্বন্দ্বের এই প্রেক্ষাপটে বাবা ঠাকুরদাসের হাত ধরে বীরসিংহ গ্রাম থেকে কোলকাতায় হেঁটে আসেন ন’বছরের বালক ঈশ্বরচন্দ্র, পরবর্তীকালে সংস্কৃত কলেজে পড়াশুনো করে যিনি বিদ্যাসাগর উপাধি পাবেন। বিদ্যাসাগরকে তাঁর বাবা কোলকাতায় পড়াশুনোর জন্য নিয়ে এলেন ঠিকই কিন্তু ইয়ং বেঙ্গলদের নিয়ে তপ্ত হয়ে থাকা হিন্দু স্কুলের পরিবর্তেতাঁকে পড়ানো হল সংস্কৃত কলেজে। ঈশ্বরচন্দ্র সংস্কৃত কলেজের মেধাবী ছাত্র হিসেবে সংস্কৃত সাহিত্য কাব্য দর্শনে পণ্ডিত হয়ে উঠলেও পরবর্তীকালে শিক্ষানীতি নিয়ে কথা বলার সময় অদ্বৈত বেদান্ত বা নব্যন্যায় বা সাংখ্যকে পাঠ্য তালিকায় আর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে রাখতে চাননি। তাঁর কর্মজীবনের প্রথম পর্বে বাঙলার শিক্ষাজগৎ আলোড়িত ছিল প্রাচ্যবাদী ও পাশ্চাত্যবাদীদের দ্বন্দ্বে। অ্যাডামস রিপোর্ট, উডের ডেসপ্যাচ, মেকলের মিনিট ও অসংখ্য বিতর্ক পেরিয়ে যখন পাঠশালা বা মক্তবের বদলে শেষমেষ পাশ্চাত্য ধরনের স্কুল সিস্টেমকেই এদেশের শিক্ষার কাঠামো হিসেবে বেছে নিয়ে নতুন নতুন স্কুল স্থাপণ করা শুরু করল কোম্পানির শাসন, তখন শিক্ষা প্রশাসকেরা বিদ্যাসাগরকে এই কাজে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিলেন। বিদ্যাসাগরও তাঁর ঐকান্তিক আগ্রহ নিয়ে বাংলার নানা প্রান্তে নতুন নতুন স্কুল তৈরি ও তার মানোন্নয়নে নিজের প্রাণশক্তি উজাড় করে দিলেন। বিশেষ জোর দিলেন মেয়েদের জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠার দিকে। যে মেয়েরা এতদিন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরেই মূলত অবস্থান করত, তাদের বাংলার শিক্ষাঙ্গনে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে বেথুন, বিদ্যাসাগর প্রমুখের ভূমিকা অসামান্য। এই সময়ে মহারাষ্ট্রে একই ধরনের প্রগতিশীল ভূমিকা পালন করছিলেন জ্যোতিরাও ফুলে ও সাবিত্রী ফুলে।

(ফুলেদের শিক্ষা ও সংস্কার আন্দোলন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আগ্রহী পাঠকেরা পড়তে পারেন মলয় তেওয়ারির লেখা এই নিবন্ধটি https://www.itihasadda. in/savitribai-phule/)

কোম্পানির শিক্ষা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে বিদ্যাসাগরের শিক্ষা বিস্তারকের এই ভূমিকা বাঙালি সমাজে তাঁর সম্মানের চিরন্তন আসনের অন্যতম কারণ। আবার ঔপনিবেশিক শাসকের এই সহযোগী ভূমিকার জন্যই অনেকে তাঁর প্রতি খড়্গহস্ত হয়েছেন। অনেকে এও মনে করেছেন অ্যাডামস রিপোর্ট থেকে নাকি জানা যায় বাংলার তৃণমূলস্তরে পাঠশালা মক্তবের এক বিস্তৃত নেটওয়ার্ক ছিল, আর সেটাই নাকি ছিল বুনিয়াদী গণশিক্ষা ও দেশজ সংস্কৃতির জন্য যথার্থ। তাঁদের মতে বিদ্যাসাগর প্রমুখদের এই নয়া শিক্ষা কার্যক্রম আমাদের দেশীয় শিক্ষার ধারাকে অস্বীকার করেছে, তাকে সমাজের অল্প কিছু মানুষের জন্যই কেবল উন্মুক্ত করেছে এবং তার মূল লক্ষ্য থেকেছে কোম্পানির প্রশাসনের জন্য কেরানি তৈরি করা। বর্তমান প্রবন্ধে এই বিতর্কে প্রবেশ করার সুযোগ খুবই কম। কেবল এটুকু বলার উত্তর ঔপনিবেশিক অবস্থানভূমি থেকে এই সমালোচনা অনেক সময়েই তথ্যর আংশিকতা ও স্বকপোলকল্পিত যুক্তিবিন্যাস-এ আবদ্ধ। অন্যান্য সূত্র ভালো করে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে অ্যাডামস রিপোর্ট প্রথমে যে একলক্ষ পাঠশালা মক্তবের বিস্তারিত নেটওয়ার্ক এর কথা বলেছিল তা ছিল একটি আনুমানিক ও ভুল তথ্যসংগ্রহ। অ্যাডামের তৃতীয় রিপোর্টে তা সংশোধন করে নেওয়া হয়েছিল এবং দেখা গিয়েছিল প্রকৃতপক্ষে তার সংখ্যা ছিল অনেক অনেক কম। দ্বিতীয়ত এগুলিতে মেয়েদের পড়াশুনোর কোনও বালাই ছিলনা। তৃতীয়ত এখানে যা পড়ানো হত ও যেভাবে পড়ানো হত তা ‘কেরানি তৈরির পাশ্চাত্য শিক্ষা’র পাঠ্যক্রমের তুলনাতেও ছিল নিতান্ত সাদামাটা এবং তাতে মৌলিক জীবনভাবনার বিকাশ ও বিজ্ঞান বা সাহিত্যের আধুনিক বা ধ্রুপদী কোনও কিছুর সাথেই কোনওরকম পরিচয়ের কোনও ব্যবস্থা ছিল না। ধরমপাল প্রমুখরা অষ্টাদশ শতাব্দীর শিক্ষা নিয়ে যে কাজ করেছেন তা আমরা দেখেছি। সেখানেও রাজা-রাজড়াদের কিছু মানমন্দির স্থাপণের বাইরে উন্নত গণশিক্ষার কোনও হদিশ পাইনি।

(আগ্রহী পাঠকে বিস্তারিত আলোচনার জন্য দেখতে পারেন ধরম পালের লেখা “The Beautiful Tree: Indigenous Indian Education in the Eighteenth Century” বইটি)

ফলে কোম্পানি শাসনে বাংলার কৃষি কারিগরী ধ্বংস ও অর্থনৈতিক শোষণের সঙ্গে যারা দেশীয় শিক্ষার কাঠামো ধ্বংসের অভিযোগকে মিলিয়ে মিশিয়ে ফেলেন ও বিদ্যাসাগর প্রমুখকে অভিযুক্ত করেন – তাদের একদেশদর্শী তথ্য উপস্থাপণ ও যুক্তিবিন্যাসের সঙ্গে একমত হওয়ার কোনওরকম কারণ আমরা খুঁজে পাই না। এবার চলে আসা যাক শিক্ষা সংস্কারক বিদ্যাসাগরের পাঠ্য বই লেখার দিকটিতে। বিদ্যাসাগর যখন ছোটদের জন্য পাঠ্যবই লেখার কাজ শুরু করলেন তখনো বাংলা গদ্য সাহিত্য যথেষ্ট বিকশিত নয়। ঊনিশ শতকের আগে বাংলায় গদ্যের ব্যবহারের নিদর্শন বলতে ছিল কিছু চিঠিপত্র, কড়চা আর মানোএল দা আসসুম্পাসাঁও বা দোম আন্তোনিওদের মতো পর্তুগীজ উদ্যোগে রোমান হরফে লেখা বাংলা। ইংরেজ সিভিলিয়ান ছাত্রদের বাংলা শেখানোর জন্য যে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ তৈরি হয়েছিল তার লেখকেরা যেমন রামরাম বসু, মৃত্যঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার, উইলিয়াম কেরী যে ধরনের গদ্য লিখছিলেন তাতে বাংলা গদ্যের স্বাভাবিক অন্বয় অনেক সময়েই ঠিকমতো রক্ষিত হয়নি। রামমোহনের গদ্য এই সমস্যামুক্তির প্রথম সার্থক উদাহরণ, তবে গদ্যশিল্প বলতে যা বোঝায় তার বিকাশ বিদ্যাসাগরের হাত ধরেই হয়েছিল। বিদ্যাসাগর একদিকে সংস্কৃত, হিন্দি বা ইংরাজি সাহিত্য থেকে অনুবাদ ও অনুসৃজন করলেন, অন্যদিকে লিখলেন স্বাধীন মৌলিক গদ্য। বর্ণপরিচয়, কথামালা, বোধোদয়, বেতাল পঞ্চবিংশতির মতো বইগুলি দীর্ঘদিন ধরে বাঙালির শিশুশিক্ষার প্রধান অবলম্বন হয়ে থেকেছে।

এই সমস্ত গদ্যগ্রন্থগুলি বাংলা গদ্য সাহিত্যের বিকাশের ইতিহাসে যেমন স্মরণীয়, তেমনি এগুলির পেছনে বিদ্যাসাগরের যে চিন্তা-চেতনা কাজ করেছে, তা শিশুশিক্ষার সেক্যুলার দিকটিকে বিকশিত করার ক্ষেত্রে মূল্যবান ভূমিকা রেখেছে। এই সমস্ত বইগুলিতে নীতিশিক্ষা রয়েছে কিন্তু তা এসেছে ঈশ্বর বা দৈব বিবর্জিত সামাজিক অনুষঙ্গ হিসেবে। বিদ্যাসাগরের এই বইগুলিতে ঈশ্বরচিন্তার অনুপস্থিতির জন্যই জন মার্ডকের মতো অনেকে সেকালে তার সমালোচনা করেছিলেন এবং এগুলিকে মিশনারী স্কুলের পাঠ্য তালিকা থেকে বাদ দেবার জন্য রীতিমতো আন্দোলন সংগঠিত করেছিলেন। (এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার জন্য আগ্রহী পাঠক দেখতে পারেন স্বপন বসুর লেখা বই “সমকালে বিদ্যাসাগর” এবং রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের সংবর্তক প্রকাশিত বিদ্যাসাগর জন্ম দ্বিশতবর্ষ সংখ্যায় লেখা প্রবন্ধ “বিদ্যাসাগরের চূড়ান্ত বস্তুবাদ আর না ধর্মীয় ভাব”)

বিদ্যাসাগরের গদ্যের আরেকটি দিক বিকশিত হয়েছিল তার সামাজিক আন্দোলনের সূত্র ধরে। এক্ষেত্রে তাঁর মধ্যে আমরা রামমোহনের উত্তরাধিকার লক্ষ্য করি। রামমোহনের মতোই বিদ্যাসাগর হিন্দু শাস্ত্রকে তাঁর প্রগতিশীল সমাজ আন্দোলনের সাক্ষ্য হিসেবে ব্যবহার করেছেন। রামমোহন যেভাবে শাস্ত্র উদ্ধৃত করে সতীদাহর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন, বিদ্যাসাগরও তাই করেছেন বিধবা বিবাহের স্বপক্ষে বা বহুবিবাহ ও বাল্য বিধবার বিরুদ্ধে। তবে রামমোহন ব্রাহ্ম ধর্ম আন্দোলন নিয়ে যে রকম আগ্রহ বোধ করেছিলেন, ব্রাহ্ম সমাজের মুখপত্র তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় লেখালেখি করলেও বিদ্যাসাগর সারাজীবনে কখনোই কোনও ধর্ম প্রসঙ্গ নিয়ে আগ্রহ ব্যক্ত করেননি। বরং অক্ষয় দত্তের সম্পাদনায় তত্ত্ববোধিনী সামাজিক জাগতিক বিভিন্ন বিষয়ের দিকে মুখ ফিরিয়েছিল বলেই বিদ্যাসাগর এই পত্রিকাকে তাঁর লেখালেখির জায়গা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। বিদ্যাসাগরের এই সেক্যুলার মনন একালের ধর্মকেন্দ্রিক উন্মাদনার বাড়াবাড়ির যুগে আমাদের বিশেষভাবে মনে রাখার।

বিদ্যাসাগরের গদ্য সংস্কৃত ভাষার প্রতি বেশিমাত্রায় অনুগত – এমন অভিযোগ অনেকে তুলেছেন। এই সমালোচকদের মাথায় রাখা দরকার বাংলা গদ্যের কাঠামো বিকাশের সেই ঊষালগ্নে বিদ্যাসাগরকে একটি সুবিকশিত গদ্যভাষার আদলকে মাথায় রাখতে হচ্ছিল এবং সংস্কৃত ভাষা সাহিত্যে তাঁর স্বাভাবিক পারঙ্গমতার জন্য এই ভাষার আদলের ব্যবহারই তাঁর কাছে অনায়াস ও স্বাভাবিক ছিল। তিনি রামমোহনের মতো আরবী ফারসী জানতেন না। পরে বিদ্যাসাগর ইংরাজি ভাষা সাহিত্যে ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন এবং ইংরাজি গদ্যের ছেদ ও যতি চিহ্নকে নিয়ে আসেন বাংলা গদ্যের মধ্যে। বাংলার সমকালীন অন্যান্য গদ্যকারদের মতো সংস্কৃত যতিচিহ্নের অভ্যস্ত পথে আটকে থাকার কোনও লক্ষণই তিনি দেখাননি। বিদ্যাসাগর যখন পরিণত বয়েসে ছদ্মনামে লঘুচরিত্রের ব্যঙ্গাত্মক রচনাগুলি লিখেছিলেন, তখন সেখানে বিষয়ের স্বার্থেই সংস্কৃত অনুগ বাংলার পরিবর্তেতিনি অন্য ধরনের ভাষা ব্যবহার করেছেন। এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা গদ্যের স্টাইলিস্টিকস-এর বিশ্লেষণ নির্ভর স্বতন্ত্র এক অনুসন্ধানের জন্যই রাখা থাকল।

বিদ্যাসাগর যে সময়ে সমাজ সংস্কারের কাজে এগিয়েছিলেন সেই সময়ে তাঁকে ও অন্যান্যদের কাজ করতে হয়েছিল ঔপনিবেশিক কাঠামোর মধ্যে দাঁড়িয়ে। সেই ঔপনিবেশিক কাঠামো এদেশকে শাসন শোষণ করতেই বেশি ব্যস্ত ছিল। এদেশের পুরনো অর্থনৈতিক বনিয়াদকে ধ্বংস ও লুঠ করে তারা এদেশের সম্পদকে নিজেদের দেশে শিল্পায়নে কাজে লাগিয়েছিল, কিন্তু এদেশে কোনও শিল্পায়ন বা উন্নয়নের চেষ্টা করেনি। ফলে ইউরোপীয় ভূখণ্ডে যে রেনেসাঁ সম্ভব হয়েছিল রাজনৈতিক স্বাধীনতার কারণে, এদেশে সেই অর্থেতার কোনও সার্বিক সাফল্য সম্ভাবনা ছিল না। কিছু কিছু সামাজিক সংস্কার সে কালের বিশিষ্টরা সম্ভব করে তুলতে পারলেও বড় ধরনের কোনও সমাজ জোড়া আমূল পরিবর্তন ঊনিশ শতকের বাংলায় সম্ভব ছিল না। এই সীমাবদ্ধতা বিদ্যাসাগর বা তাঁর সমকালীন অন্যান্য বিশিষ্টদের ব্যক্তিগত কোনও সীমাবদ্ধতা নয়, বস্তুগত পরিস্থিতির বাধ্যবাধকতা। বিদ্যাসাগর সহ ঊনিশ শতকের বিশিষ্টদের মূল্যায়নের সময় এটা আমাদের বিশেষভাবে মনে রাখা দরকার।

(এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার জন্য পাঠক দেখতে পারেন অশোক সেনের লেখা প্রবন্ধ “আধুনিকের সীমানায় বিদ্যাসাগর”, আকাদেমি পত্রিকা ৬এর অন্তর্গত)

পরিশেষে আসা যাক বর্তমান ভারতে বিদ্যাসাগরের চিন্তা ও কাজের প্রাসঙ্গিকতা প্রসঙ্গে। কীভাবে এবং কেন বিদ্যাসাগর আজকের হিন্দু রক্ষণশীলদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইয়ের প্রেরণা?

২০১৯এর লোকসভা নির্বাচন চলাকালীন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহর রোড শো চলাকালীন বিদ্যাসাগর মূর্তি ভেঙে দেবার যে ঘটনা আলোড়ন তুলেছিল এবং মুখ বাঁচাতে শেষপর্যন্ত বিজেপি যাকে নিজেদের কাজ বলতে অস্বীকার করতে বাধ্য হয়, তার পেছনের কারণটা বোঝা কঠিন নয়। বিদ্যাসাগর সম্পর্কে হিন্দুত্ববাদীদের সমালোচনার জায়গা স্বাভাবিকভাবেই বেশ বিস্তৃত। বিজেপি যখন যেখানে ক্ষমতায় এসেছে সেখানেই তারা পাঠ্যক্রমে ভারতের অতীত গৌরবকে স্মরণ করার নামে বৈজ্ঞানিক চিন্তা-চেতনাকে অনেকাংশে কোতল করেছে এবং প্রাচীন ভারতের যথার্থ ইতিহাসকে পুরাণ ও কল্পকথা দিয়ে প্রতিস্থাপিত করতে চেয়েছে। অন্যদিকে বিদ্যাসাগর যখন পাঠ্যক্রম নিয়ে কথা বলেন সেখানে সংস্কৃতের কৃতবিদ্য পণ্ডিত হয়েও তিনি অদ্বৈত বেদান্ত বা নব্যন্যায়ের মতো ভাববাদী দর্শনকে বাদ দিয়ে বাস্তববাদী দর্শনকে পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে মত দেন। এই প্রসঙ্গে মনে রাখতে হবে বিদ্যাসাগর ঐতিহ্য থেকে সরে আসার কথা কখনো বলেননি। সাহিত্যে কালিদাস বা ভবভূতি অবলম্বনে অনুসৃজন করেন তিনি। শকুন্তলা বা সীতার বনবাস বাংলা গদ্য সাহিত্য বিকাশের দিক থেকে যেমন গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তেমনি প্রাচীন ভারতের শ্রেষ্ঠ সাহিত্যের সঙ্গে বাঙালি পাঠকের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রেও সেটি বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল। তবে এই ক্ষেত্রেও গ্রহণ বর্জনের ক্ষেত্রে বিদ্যাসাগরের মনন ছিল অত্যন্ত সতর্ক। রাম সীতার আখ্যান সেখানে আসে, কিন্তু কালিদাসের নাটকের ব্রাহ্মণ্য মহিমা কীর্তনের অংশটুকুকে বাদ দিতে বিদ্যাসাগর ভোলেন না। সংস্কৃত কলেজের দরজা অব্রাহ্মণদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া বা জীবনের উত্তরকাল কার্মাটাড়ে আদিবাসীদের এলাকায় কাটানো মানুষটি আসলে ঐতিহ্য আর আধুনিকতাকে উপযুক্ত বিন্যাসে মেলাতে জানতেন। ডিরোজিয়ানদের একপেশে বিদ্রোহ আর রক্ষণশীলদের অবস্থানের দ্বিতত্বের বাইরে নতুন গঠনমূলক সংস্কারক দৃষ্টিকোণই বিদ্যাসাগরের অবস্থানকে বিশিষ্টতা ও দীর্ঘস্থায়িত্ব দিয়েছে।

বিদ্যাসাগর শুধু নিরীশ্বরবাদীই ছিলেন না, বাংলার ইতিহাসে ভাববাদের বিরুদ্ধে বস্তুবাদকে বিকশিত করার লড়াইয়ে অন্যতম প্রথম যোদ্ধা ছিলেন। তাঁর দুটি মন্তব্য এই প্রসঙ্গে উদ্ধৃত করা যাক। “একথা অবশ্য মানতে হবে যে হিন্দু দর্শনের মধ্যে এমন অনেক অনুচ্ছেদ আছে যাকে সহজে ও যথেষ্ট বোধগম্যরূপে ইংরাজিতে অনুবাদ করা যায় না। তার একমাত্র কারণ, তাদের মধ্যে সারবস্তু কিছুই নেই।” বস্তুবাদের প্রসার ঘটানোর জন্য পাঠ্যক্রমে কেমন ধরনের বিন্যাস তিনি চেয়েছিলেন তা বোঝা যাবে পরবর্তী উদ্ধৃতিটি থেকে। “বেদান্ত আর সাংখ্য যে দার্শনিক মত হিসেবে ভ্রান্ত, তা নিয়ে এখন আর কোনও সংশয় নেই। তবে যত ভ্রান্তই হোক, এই মতগুলির প্রতি হিন্দুদের শ্রদ্ধা অপরিসীম। সংস্কৃত ক্লাসে এইসব দর্শন পড়াতেই হবে, তাই এর পাল্টা হিসেবে, এদের প্রভাব দূর করার উদ্দেশ্য নিয়ে আমাদের ইংরাজি ক্লাসে এমন দর্শন পড়ানো উচিত, যা যুক্তির দিক থেকে মজবুত।”

(এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার জন্য পাঠক দেখতে পারেন আশীষ লাহিড়ীর লেখা বই “অন্য কোনও সাধনার ফল: বিজ্ঞান ও বাঙালি সংস্কৃতি” এবং বিনয় ঘোষের লেখা বই “বিদ্যাসাগর ও বাঙালি সমাজ”)

আজকের ভারতে আমরা দেখি হিন্দুত্ববাদীরা ঐতিহ্য রক্ষার নামে তাদের কথাবার্তায় ও সাংগঠনিক আস্ফালনে যাবতীয় কুপ্রথা ও কুসংস্কারকে উর্ধ্বে তুলে ধরে। নারী পুরুষের স্বাভাবিক মেলামেশা ও নারীর স্বাধীন পছন্দর অধিকারকে কখনো তারা রোমিও স্কোয়াড আটকানোর নামে, কখনো লাভ জেহাদের নামে কোতল করে। বিদ্যাসাগর সেই রক্ষণশীলতার যুগে দাঁড়িয়ে যেভাবে প্রথার বিরুদ্ধে গিয়ে বিধবা বিবাহের প্রচলন করেছিলেন বা বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ বন্ধের চেষ্টা করেছিলেন – তাকে পুরুষতান্ত্রিক সামন্তী মানসিকতার হিন্দুত্ববাদিরা কিছুতেই খোলা মনে মেনে নিতে পারে না। বস্তুতপক্ষে শিক্ষা সংস্কারক ও ভাষা সংস্কারক বিদ্যাসাগরের পাশে উজ্জ্বল যে সমাজ সংস্কারক বিদ্যাসাগর, তাঁর গোটা সক্রিয়তাটাই প্রায় নারীর অধিকারের প্রশ্নকে কেন্দ্র করে। বিধবা বিবাহের সমর্থনে তাঁর অক্লান্ত লড়াই এবং এই সংক্রান্ত আইন পাশের ক্ষেত্রে তাঁর প্রবাদ প্রতিম ভূমিকা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। এমনকি সমকালে যে সমস্ত আন্দোলনকে আইনে রূপান্তরিত করতে সে সময় বিদ্যাসাগর রক্ষণশীলদের বাধায় সফল হননি, বহুবিবাহ প্রথার মতো সেই সমস্ত ব্যাপারেও তিনি নারী অধিকারের দিক থেকে অনেক প্রশ্ন তুলে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। মেয়েদের বিবাহের ন্যূনতম বয়েসকে বাড়ানোর পক্ষে যখন তিনি কথা বলছিলেন, তখনও প্রচলিত গর্ভাধান প্রথার প্রসঙ্গ তুলে রক্ষণশীলরা তার বিরোধিতা করেছিল। বিদ্যাসাগর কিন্তু নারী রজস্বলা হবার আগে তার বিবাহের বিরুদ্ধে আইন পাশ করার ব্যাপারে তাঁর মতে দৃঢ় ছিলেন। বিদ্যাসাগর ও তাঁর মূর্তি হিন্দুত্ববাদীদের কার্যকলাপ ও চিন্তা চেতনার বিরুদ্ধে এক জীবন্ত প্রতিবাদ হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকে। আমরা এই প্রতিবাদের উত্তরাধিকার বহন করি। বিদ্যাসাগর হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে বাংলা ও দেশজোড়া লড়াইয়ের আমাদের অন্যতম প্রধান প্রেরণা হয়ে থাকেন।

- সৌভিক ঘোষাল    

hhhhh

নকশালবাড়ি আন্দোলনের প্রথম শহীদ বাবুলাল বিশ্বকর্মকারের নিকট আত্মীয় কমরেড যদু বিশ্বকর্মকার ২৭ জানুয়ারী আকস্মিকভাবে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হয়েছেন। ফাঁসিদেওয়া নিবাসী যদু সিপিআই(এমএল) রেড স্টার-এর একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। সুগায়ক সাথী যদু ভাওয়াইয়া গানের সুরে গণসঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে সমস্ত অংশের বিপ্লবী কর্মীবাহিনীর কাছে জনপ্রিয় ছিলেন। তাঁর সংগ্রামী জীবনের প্রতি অন্তিম শ্রদ্ধা জানাতে সিপিআই(এমএল) লিবারেশানের পক্ষ থেকে রাজ্য কমিটি সদস্য পবিত্র সিংহ, জেলা কমিটি সদস্য শরৎ সিংহ সহ বিভাস বিশ্বকর্মকার, দীপক ঘোষ প্রয়াত কমরেডের বাসভবনে গিয়ে তাঁর মরদেহে মাল্যদান করেন। কমরেড যদু বিশ্বকর্মকার লাল সেলাম।

-END-

খণ্ড-28
সংখ্যা-4