আজকের দেশব্রতী : ১৫ অক্টোবর ২০২০ (অনলাইন সংখ্যা)
issuecorocovid

মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
মুখ্যমন্ত্রী, পশ্চিমবঙ্গ সরকার
নবান্ন, হাওড়া।

মাননীয়া,
এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতিতে এই জরুরি বার্তা ও আবেদন আপনার কাছে পৌঁছে দিতে চাই। গত ৮-৯ মাসেরও বেশি সময় ধরে গোটা বিশ্ব এবং আমাদের দেশের জনগণ কোভিড১৯ অতিমারীর বিরুদ্ধে মরণপণ লড়াই চালাচ্ছেন। আমাদের দেশের কেন্দ্রীয় সরকার ও বিভিন্ন রাজ্যের সরকারগুলির দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ এবং  দেশজুড়ে স্বাস্থ্যব্যবস্থার কঙ্কালসার অবস্থার ফলে দেশবাসী হারাচ্ছেন তাঁদের প্রিয়জনকে, পরিচিতজন ও প্রতিবেশিকে। কেন্দ্রের সরকার (এবং রাজ্যগুলিরও) শুরু থেকেই তাদের অজ্ঞতা ও আহাম্মকি ঢাকতে ১৮ দিনেই করোনা অতিমারী জয় করে ফেলার ঘোষণা করে দিয়েছিল। স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি, জরুরি ভিত্তিতে আরও আরও চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ, রোগ নিয়ে গভীর গবেষণার ব্যবস্থা করা, সর্বোপরি আরও আরও হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ব্যবস্থা করা, সমগ্র স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে সরকারী নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার (বিশেষত চরম মুনাফালোভী বেসরকারী স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা) বিন্দুমাত্র চেষ্টা না করে সর্বরোগহর দাওয়াই হিসাবে অপরিকল্পিত ও জবরদস্তি মূলক লকডাউন চাপিয়ে দিয়েছে। তার ফলাফল কি হয়েছে তা খোলা চোখে আন্দাজ করা যায় পরিযায়ী শ্রমিক ও কাজহারা মানুষ ও তাদের পরিবারবর্গের দিকে তাকালে। সরকারের (রাজ্য ও কেন্দ্রের) দায়িত্বজ্ঞানহীনতা ও  উদাসীনতা থেকে মানুষ তো সেই শিক্ষাই পেয়েছে যে অতিমারী নিয়ে ছেলেখেলা করা যায়, উদাসীন থাকা যায়, দায়িত্বজ্ঞানহীন থাকা যায়। পুলিশের লাঠি, কাঁদানে গ্যাস আর প্যান্ডেমিক আইনের অগণতান্ত্রিক ধারাগুলির প্রয়োগ করে বা ভয় দেখিয়ে সমাজকে দায়িত্বশীল ও সচেতন করা যায় না। একটি শিশুও তা বোঝে। শুধু সরকার বোঝে না। আর এই দায়হীনতা ও কতিপয় বিশেষজ্ঞ নির্ভর সরকারী উদ্যোগ ও তৎপরতা সমাজকে শুধু নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছে তাই নয়, যত রকমের অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার সমাজে শাখা প্রশাখা বিস্তার করতে সুযোগ করে দিয়েছে। আর সরকারগুলি আড়চোখে তা দেখে গেছে, কোনো পদক্ষেপ করেনি।

উৎসব মানুষের জীবনের অঙ্গ। বছরভর দুঃখ কষ্ট মানুষ ভুলতে চায়। বস্তুত যে কোনো উৎসব আসলে মানুষে মানুষে মিলনোৎসব। কিন্তু উৎসব অনুষ্ঠানের নামে উন্মাদনা, জলের মতো অর্থব্যয়, সমাজে নতুন করে আরও বিভাজন তৈরি করা ও তাকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করার নির্লজ্জ প্রতিযোগিতা আমাদের খাদের দিকে নিয়ে যায় ও যাচ্ছে। তা শুধু এই অতিমারীর দিনেই নয়, বলতে গেলে “সাধারণ সময়েও”। মূল্যবোধগুলি চুরমার হতে থাকে। একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশে (সংবিধানে এখনও আছে) শাসক রাজনৈতিক দল ঘোষণা করে পূজা করে, (রাষ্ট্রের নিরাপত্তা রক্ষীদের ঘেরাটোপে রাষ্ট্রপতি একটি বিশেষ ধর্মের দেব-দেবী বন্দনা ও মন্ত্রোচ্চারণ করেন), রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সরকারের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক ভবন থেকে অনলাইন ৬৯টি পূজা উদঘাটন করেন। আমরা আশ্চর্য হয়ে দেখলাম, রাজ্যের মুখ্যসচিব তার পরিচালনা ও ঘোষকের কাজ করেন। স্বরাষ্ট্র সচিব থেকে গোটা আমলাকুল প্রশাসনিক ভবনে দুর্গা মন্ডপে পরিণত করার কাজে তৎপর হয়ে পড়েন। অতিমারী কি আমাদের সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতাকে ও আক্রান্ত এবং রোগগ্রস্ত করে ফেললো? জবাব দেবার জন্য কেউ দায়বদ্ধ নেই।

জনগণই শেষ ভরসা। নিজেকে, নিজের পরিবার পরিজনকে, সর্বোপরি সমাজকে রক্ষার দায় সাধারণ মানুষকেই নিতে হবে। স্বেচ্ছা আরোপিত শৃঙ্খলা ও দায়িত্ববোধ থেকেই মানুষকে উদ্যোগী হতে হবে।

চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞ বন্ধুরা জানাচ্ছেন, কোভিড সংক্রমণ-২ এবং পুনর্সংক্রমণের সম্ভাবনা ভীষণভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শুধু নতুন সংক্রমণ হু হু করে বাড়বে তাই নয়, করোনা সংক্রমণের পর সুস্থ হয়ে যারা বাড়ি ফিরেছেন, তাঁদেরও আক্রান্ত হওয়ার সংবাদ আসছে। হংকং থেকে এই পুনর্সংক্রমণের সংবাদের পাশাপাশি নেদারল্যান্ডস থেকে পুনরায় সংক্রমণে মৃত্যু সংবাদও আসছে। খোদ আমেরিকা থেকেও পুনর্সংক্রমণের তথ্য আসছে। আক্রান্ত মানুষের শরীরে যে এন্টিবডি তৈরি হয়, তা ১০০ দিনের বেশি স্থায়ীত্ব পাচ্ছে না।

এমনই এক পরিস্থিতিতে মূলত এরাজ্যে শারদ উৎসবের সূচনা হতে যাচ্ছে, এবং মাসখানেক ধরে তা চলবে। এই প্রেক্ষাপটে আপনার কাছে এবং রাজ্যের মন্ত্রীপরিষদের কাছে জরুরি ভিত্তিতে কোভিড সংক্রমণ-২ দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ার আগে সমস্ত ধরনের কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করার আবেদন জানাচ্ছি :

১) সরকার ও মন্ত্রীপরিষদের সদস্যদের পৃষ্ঠপোষকতায় পূজা উদঘাটন ও উৎসব পালন বন্ধ করুন।
২) পূজা প্রাঙ্গণে কঠোর ভাবে দর্শনার্থী নিয়ন্ত্রণ করা হোক। মুখে মাস্ক, হাত ধোয়ার সাবান, হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা পূজা কমিটিকে করতে হবে।
৩) সার্বজনীন উৎসবের পরিবর্তে পারিবারিক উৎসব অনুষ্ঠানে জোর দেওয়া হোক।
৪) যে পাড়ার উৎসব সে পাড়ার জনগণের জন্য নিয়ন্ত্রিত হোক।
৫) উৎসব প্রাঙ্গণে প্রবেশের আগে প্রাথমিক পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হোক।
৬) প্রত্যেকটি সার্বজনীন পূজা কমিটিকে অন্তত ১০-১৫ জন কোভিড রোগীর চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে হবে।
৭) সর্বোপরি রাজ্য সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে কোভিড চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী নতুন করে নিয়োগ করতে হবে। বহু প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বহুদিন ধরে কোন চিকিৎসক নেই। চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরাই চিকিৎসা পরিষেবা চালাচ্ছেন।
৮) চিকিৎসকদের কাছে বার্তা দিতে হবে বিনা কারণে প্রাইভেট চেম্বার বন্ধ রাখা যাবে না।
৯) কোনো বেসরকারী হাসপাতাল অন্যায়ভাবে রোগী ফেরালে এবং লাগামহীন অর্থ নিলে লাইসেন্স বাতিল করতে হবে। 
১০) উৎসবের দিনগুলিতে স্কেলিটন স্টাফ দিয়ে হাসপাতাল চালানো বন্ধ করতে হবে।
১১) পূজা কমিটিকে উৎসাহ ভাতা দেয়ার পরিবর্তে ফ্রন্ট লাইন স্বাস্থ্যকর্মীদের উৎসাহ ভাতা দেয়া হোক।

আশা করি অতিরিক্ত ব্যস্ততার মাঝেও আমাদের আবেদন আপনি ভেবে দেখার সময় পাবেন।

ধন্যবাদান্তে      
সিপিআই(এমএল) লিবারেশন     
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির পক্ষে    
পার্থ ঘোষ রাজ্য সম্পাদক,     
১৫/১০/২০২০     

buharbhr


বিহার বিধানসভা নির্বাচনের ঘোষণা হয়েছে। বিহারের ভোটাররা ভোট দেওয়ার জন্য সাগ্ৰহে অপেক্ষা করছেন। রাজ্যের গণতান্ত্রিক রূপান্তর সাধনের জন্য শাসন ক্ষমতায় পরিবর্তন অত্যন্ত জরুরি হয়ে উঠেছে। ২০১৫-র নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে নির্ধারক গণরায় আসার পরও সেই রায়কে হাতিয়ে নিয়েছিল বিজেপি। বিহারের নির্বাচকদের এভাবে অপমানিত করার জন্য বিহারের জনগণ এবার জেডিইউ ও বিজেপিকে শিক্ষা দেওয়ার অপেক্ষায় আছেন। শিক্ষা দেওয়ার অপেক্ষায় আছেন – ‘সুশাসন’-এর শূন্যগর্ভ ও ছলনাপূর্ণ প্রতিশ্রুতি দেওয়ার জন্য, লকডাউন পর্বে বিহারের পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রতি অমানবিকতা দেখানোর জন্য, বিহারের যুবকদের যেভাবে শিক্ষা ও কাজ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে তার জন্য, যেভাবে নারী-বিরোধী হিংসা চলেছে আর মহিলা প্রকল্প কর্মীদের শ্রম শোষণ করা হচ্ছে তার জন্য, এবং সাম্প্রদায়িক ও সামন্ততান্ত্রিক ঘৃণা ও হিংসা ছড়িয়ে বিহারের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিমণ্ডলকে বিষিয়ে তোলার জন্য।

বিরোধী পক্ষের এক বৃহত্তর জোটের শরিক হিসাবে সিপিআই(এম-এল) সম্মিলিতভাবে ১৯টা আসনে লড়াই করছে। এই আসনগুলো সেই সমস্ত এলাকার মধ্যেই পড়ে যেখানে সিপিআই(এমএল)-এর নেতৃত্বে ভূমিহীন দরিদ্র ও নিপীড়িত সম্প্রদায়গুলোর দীর্ঘ ও গৌরবজনক লড়াইয়ের ঐতিহ্য রয়েছে : ভোট দিতে পারার অধিকার আদায়ের জন্য, মজুরির জন্য, জমি ও মর্যাদার জন্য লড়াই। সহিংস সামন্ততান্ত্রিক প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে এই লড়াইগুলো চালানো ও সেগুলোতে বিজয়ী হওয়া গিয়েছিল যা বিহারের সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে চিরদিনের জন্য পাল্টে দিয়েছিল।

নারীর স্বাধীনতা ও অধিকারের আত্মপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্দোলন চালানোর জন্য সিপিআই(এমএল)-কে সবাই চেনে। বিহারে সাম্প্রদায়িক লক্ষ্যে চালানো সমস্ত ধরনের অভিসন্ধি ও হিংসার বিরুদ্ধে নির্ভীকভাবে রুখে দাঁড়ানোর ধারাবাহিক ঐতিহ্য সিপিআই(এমএল) বিধায়ক ও কর্মীদের রয়েছে; সন্ত্রাস-বিরোধী তদন্তের নামে মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে চালানো ধরপাকড়ের ঘটনাগুলোর বিরুদ্ধে ন্যায়বিচার লাভের আন্দোলনও পরিচালনা করে থাকেন তাঁরা; আর এই কারণেই তাঁদের একটা স্বতন্ত্র পরিচিতি রয়েছে।

আমাদের সমস্ত প্রার্থীই ওপরে উল্লিখিত আন্দোলনগুলোর কর্মী ও সংগঠক। সিপিআই(এমএল) সর্বদাই “জনতা”র দেওয়া টাকায় চলেছে : সিপিআই(এমএল)-কে অর্থ জনগণই জুগিয়েছে, কর্পোরেটরা নয়। এমনসমস্ত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়তে হচ্ছে যাদের রয়েছে সন্দেহজনক ইলেক্টোরাল বণ্ড প্রকল্পের পথ ধরে আসা থলে ভর্তি কলুষিত টাকা। আপনারা জানেন, সিপিআই(এমএল) বিধায়করা সর্বদাই কি বিধানসভার ভেতরে কী তার বাইরে জনগণের অধিকারের আত্মপ্রতিষ্ঠায় এবং সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ও কৌশলবাজির প্রতিরোধে সবচেয়ে দৃঢ় শক্তি হয়ে দেখা দিয়েছে এবং ভবিষ্যতেও তা করে চলবে। বিহার বিধানসভায় সিপিআই(এমএল) বিধায়কদের শক্তিশালী একটা গোষ্ঠীর উপস্থিতি আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি জরুরি হয়ে দেখা দিয়েছে।

সিপিআই(এমএল)-এর নির্বাচনী প্রচারে মুক্তহস্তে যথাসাধ্য অনুদান দেওয়ার আবেদন আমরা আপনাদের কাছে রাখছি।

The bank/payment details are:
Bank transfers (by Indian citizens)
Account Name: CPI(ML)
Account No.: 90502010057518
IFSC Code. : SYNB0009050
MICR No. : 110025038
Bank. : Syndicate Bank
Nirman Vihar, Delhi – 110092

Cheque, Demand Draft, Pay OrderDrawn in favour of ‘CPI(ML)’
Address: CPI(ML) Central Office
Charu Bhawan, U-90 Shakarpur
Delhi—110092

Phone Contact/Inquiry: 91-7042877713 (Prabhat Kumar)
91-9560756628 (Kavita Krishnan)
Or E-mail us at contribution@cpiml.org
In hope of your solidarity,
CPIML Central Committee

deearssa

নব মনোনীত প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির নেতৃত্বে কলকাতায় কংগ্রেস মিছিল করল, বার্তা ছুড়ে দিল বামেদের নিয়ে জোট সরকার গঠন করার। ইনিই সেই প্রদেশ সভাপতি, যাঁকে কংগ্রেস হাইকমান্ড ইতিপূর্বে একবার সরিয়ে দিয়েছিল। তাঁর জায়গায় প্রতিস্থাপিত করা হয়েছিল সদ্য প্রয়াত সভাপতিকে। ফের পুনর্বাসিত করা হল পূর্বতন অপসারিত নেতাকেই। এই সভাপতি আবার বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হওয়ার দৌলতে লোকসভায়ও কংগ্রেসের দলনেতা। বিষয়গুলো এজন্যই পুনরাত্থপন করা যে, কেন্দ্রে এবং রাজ্যে রাজ্যে ব্যক্তিনেতার মহিমার ওপর নির্ভরতা সর্বস্ব কংগ্রেস কালচার আজও একইভাবে বিরাজমান, একইসাথে তা নেতৃত্বের আকাল ঘনিয়ে আসার পরিণামও দেখিয়ে দেয়। পশ্চিমবাংলায় কংগ্রেস সংগঠন অন্যান্য আরও বহু রাজ্যের মতোই অন্তর্দ্বন্দ্বে জর্জরিত বিভাজিত একাধিক গোষ্ঠীতে। ২০১৬-র বাম-কংগ্রেস নির্বাচনী আঁতাতের ফায়দা তুলে রাজ্য বিধানসভায় কংগ্রেস যদিও দখল পেয়েছে প্রধান বিরোধীদলের, তবু বিগত চার-সাড়ে চার বছরে সামাজিক শক্তির নতুন কোনও বিশেষ পুনরুজ্জীবন ঘটাতে পারেনি। উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেওয়া বলতে গণতন্ত্রের প্রশ্নে কিছু কিছু সরব হয়, সমাবেশ করে। যেমন, এনআরসি-এনপিআর-সিএএ বিরোধী ইস্যুতে। কিন্তু তার বেশি নয়, মাঠে ময়দানে রাস্তার আন্দোলনে সাধারণত নয়। টিএমসি-বিজেপি-র বিপ্রতীপে ‘বিকল্প কংগ্রেস-বাম জোটে’র সরকার গড়ার হাঁকডাকের প্রকৃত উদ্দেশ্য হল, কংগ্রেসের বিভিন্ন গোষ্ঠীগুলোকে এক জায়গায় নিয়ে আসার মহড়া দেওয়া। কিন্তু টিএমসি-বিজেপিকে সমান প্রতিপক্ষ চিত্রিত ও বিরোধিতার অবস্থান কার্যত দেশের সামনে বিজেপির সবচেয়ে আগ্রাসী বিপদকে লঘু করে দিচ্ছে। কথায় কথায় রাজ্যপালের দ্বারস্থ হওয়াও একই পরিণাম ডেকে আনছে।

টিএমসি-র রাজত্বে ‘আইনের শাসনে’র নামে গণতন্ত্র দমন আর দলতন্ত্র চলার অভিযোগ সত্য। কিন্তু যে রাজ্যপাল কেবলমাত্র রাজ্যের যাবতীয় অনাচার নিয়ে দিনরাত অতি সক্রিয়, আর রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিকদের অর্থ সাহায্য, আমফান ঝড়ে বিপর্যস্তদের অর্থ সাহায্য, জিএসটি ইত্যাদি বিষয়ে কেন্দ্রের বঞ্চনার প্রশ্নে মুখ বন্ধ থাকেন; রাজ্য বিজেপির বিদ্বেষ-বিভাজন-ঘৃণা-হিংসা ছড়ানোর সন্ত্রাসমূলক আচরণ আর মাফিয়া কার্যকলাপের ব্যাপক বাড়বৃদ্ধি দেখেও ধৃতরাষ্ট্রের ভূমিকা পালন করে চলেন, উপরন্তু বিজেপির রামমন্দির শিলান্যাস পূজনে মেতে ওঠেন এবং সেটা সরকারী জায়গায় রাজভবনের ভিতরেই, এরকম এক রাজ্যপালের কাছে রাজ্যের শাসকের বিরুদ্ধে নালিশ ঠোকা, দয়া-দাক্ষিণ্য চাইতে যাওয়া একদিকে দেখিয়ে দিচ্ছে রাজ্যপালের স্বরূপ উন্মোচনের প্রশ্নে দেউলিয়াপনা, অন্যদিকে সুবিধা করে দিচ্ছে কেন্দ্রের মোদী জমানার এবং রাজ্যের বিজেপিরই। এইসব কারণে বামপন্থী শক্তিগুলোর সাথে কংগ্রেসের ‘বিকল্প’ জোট সরকার গঠনের ভিত্তিহীন রাজনীতির বাজার জমানোর কসরত ব্যর্থ হতে বাধ্য। কংগ্রেস যদি বিরোধী বৃহত্তর বাম গণতান্ত্রিক উদ্যোগে সামিল হতে চায় তাহলে কংগ্রেসকেও কাজে লাগানোর দরজা খোলা রাখা যায়, কিন্তু তার প্রধান বর্শামুখ থাকবে সারা দেশের ক্ষেত্রে প্রধান শত্রু বিজেপির বিরুদ্ধে। তৃণমূলী শাসন অবশ্যই এক স্বৈরশাসন, তবু মতাদর্শ ও রাজনীতির বিচারে, আম্বানী-আদানীদের মতো কর্পোরেটশ্রেণীর হাতে সমস্ত সম্পদ হস্তান্তর, শাসন ক্ষমতায় থাকার স্তর-জোর-ব্যাপ্তি, রাষ্ট্রক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করা ও শাসন চালানোর তুলনাতেও বিজেপি-টিএমসি সমার্থক নয়।

বিজেপি আজ সংবিধানের গণতান্ত্রিক-ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র, যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা, বহুত্বের পরম্পরা, জাতিয়তাবাদের সংজ্ঞা, সংখ্যালঘু জাতিসত্তা ও সম্প্রদায়গুলোর স্বায়ত্ততা, নারীর অধিকার, নাগরিকত্ব নির্ণয়ের মানদন্ড ইত্যাদি সবকিছুকেই পাল্টে দিতে চায় তার গন্তব্য হিন্দুত্ব-হিন্দুরাষ্ট্র কায়েমের স্বার্থে। বিগত দু’দশকে বিজেপি ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটিয়েছে বিশেষত উত্তর ও পশ্চিম ভারতে, ক্ষমতার দখল পেয়েছে রাজ্যে রাজ্যে, যদিও কোনো কোনো রাজ্যে উল্টেছে তার রাজপাট, কোনো কোনো রাজ্যে আবার ঘোড়া কিনে গরিষ্ঠতার ঘট উল্টিয়ে দখল নিয়েছে ক্ষমতার, এখনাবধি সবচেয়ে কম সুবিধা করতে পেরেছে দক্ষিণ ভারতে। তবে শুরু করেছে পূর্ব ভারত দখলের অভিযান। দখল করেছে আসাম, ত্রিপুরা। তার রাজ্য শাসনের নমুনায় রয়েছে গুজরাট-আসাম-উত্তরপ্রদেশ মডেল। এবার মরীয়া হচ্ছে বিহারের দখল পেতে, নীতীশ কুমারের জেডি(ইউ)-র সাথে জোট পাকিয়ে। কিন্তু এবার বিহার থেকেই পাল্টা শুরু হচ্ছে বিজেপিকে মোকাবিলার সংকল্প, আর সেই ঝড়ে নীতীশ রাজত্বের অবসানও নিশ্চিত করার চ্যালেঞ্জ। বিহারে সংগ্রামী বামশক্তিসমূহ রয়েছে সংগ্রাম-সমাবেশে, নির্বাচনী রণনীতি-রণকৌশল প্রণয়ন ও প্রয়োগে কার্যকরী হয়ে উঠছে বাম শক্তিগুলোর প্রভাব। বিহারের পাশাপাশি তাই সংগ্রাম-সমাবেশ চালিয়ে যেতে হবে পশ্চিমবঙ্গেও। প্রস্তুত হতে হবে বিশেষ করে বাম শক্তিগুলোকে। রণধ্বনি তুলতে হবে বিজেপি হটাও দেশ বাঁচাও, বাংলা বাঁচাও!! এই দিশায়-লক্ষ্যে টিএমসিকেও সমুচিত জবাব দেওয়া সম্ভব। আওয়াজ তুলতে হবে, তৃণমূলের অপশাসনের জবাব চাই, জবাব দাও!

deaaadeaa


দিল্লীতে ফেব্রুয়ারী মাসের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা তদন্ত করার জন্যে একটি নাগরিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই নাগরিক কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট এবং হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারকেরা।

এই কমিটির মূল তদন্তের বিষয় হল দিল্লী দাঙ্গায় রাষ্ট্রযন্ত্র কি ভূমিকা পালন করেছে তা খতিয়ে দেখা এবং সংবাদ মাধ্যম কিভাবে বিভিন্ন ভুল খবরের মাধ্যমে দাঙ্গায় উসকানি দিয়েছে তার তদন্ত করা।

নাগরিক কমিটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘Citizens Committee on the Delhi Riots of February 2020: Context, Events and Aftermath’। এই তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কনস্টিটিউশনাল কন্ডাক্ট গ্রুপ (Constitutional Conduct Group) নামক একটি সংস্থা। এই সংস্থা প্রাক্তন সরকারী আমলাদের নিয়ে তৈরি। তারা দিল্লী দাঙ্গায় একটি নিরপেক্ষ তদন্ত চায়। তদন্ত কমিটির সদস্য হিসেবে আছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারক, জাস্টিস মদন লোকুর, দিল্লী হাই কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারক এবং ভারতের ল কমিশনের সভাপতি জাস্টিস এ পি শাহ, জাস্টিস আর এস সোধি, দিল্লী হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারক, জাস্টিস অঞ্জনা প্রকাশ, পাটনা হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারক, জি কে পিল্লাই, গৃহমন্ত্রকের প্রাক্তন সচিব, এবং মিরান চাধা বোরওয়াঙ্কার, ডিরেক্টার, ব্যুরো অফ পুলিশ রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট। কমিটি তিন মাসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা করবে। কন্সটিটিউশনাল কন্দাক্ট গ্রুপের পক্ষ থেকে জানান হয়েছে, “২০২০ সালের ফেব্রুয়ারীতে উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে দাঙ্গার ভয়াবহ হিংসা এবং তার ফলে প্রাণহানির ঘটনা এবং সমাজের মধ্যে দীর্ঘ মেয়াদী সাম্প্রদায়িক বিভেদের কথা বিবেচনা করে, আমরা অনুভব করেছি যে দাঙ্গার সময়, আগে, এবং পরে কী ঘটেছিল তার বিশদ পরীক্ষা হওয়া উচিত। দিল্লী পুলিশের তদন্ত নিয়ে সাম্প্রতিক কালে সমালোচনার ঝড় ওঠায় এই তদন্ত আরও প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে।” কমিটির সঙ্গে যারা কথা বলবেন তাদের মর্যাদার কথা মাথায় রাখা হবে। তাদের পরিচয় গোপন রাখা হবে। যারা কমিটির সাথে যোগাযোগ করতে চান তাদের এই ইমেল-এ যোগাযোগ করতে হবে : ccgenquiry10@gmail.com

– প্রত্যুষ নন্দী           

punpiu


পাঞ্জাবে মোট ১৩,০০০ গ্রাম পঞ্চায়েত আছে। সব ক’টি গ্রাম পঞ্চায়েত মোদি সরকারের নয়া কৃষি আইনের বিরুদ্ধে অফিসিয়াল প্রস্তাব পাশ করার উদ্যোগ নিচ্ছে। হিন্দুস্তান টাইমসে রিপোর্ট অনুযায়ি ৫ অক্টোবর পর্যন্ত ৩২০টি পঞ্চায়েতে প্রস্তাব পাস হয়ে গেছে। বাকিগুলিতেও হতে চলেছে। ১৯৯৪ সালের পাঞ্জাব পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী পঞ্চায়েতগুলির হাতে এই স্বায়ত্ত ক্ষমতা আছে। পঞ্চায়েতকে সরকারে তৃতীয় স্তর হিসেবে সাংবিধানিক ক্ষমতা দেওয়া হয় যেখানে ২৯টি বিষয়ে তার অধিকার স্বীকৃত হয়। এই অধিকারগুলির মধ্যে অন্যতম হল “কৃষি ও কৃষির প্রসার সম্পর্কিত” বিষয়। সাত দিনের নোটিসে সভা ডেকে সিদ্ধান্ত পাস করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে পঞ্চায়েতগুলিকে। সেই আইন প্রয়োগ করে গ্রামসভা ডেকে নয়া কৃষি আইনগুলির বিরুদ্ধে প্রস্তাব পাস হচ্ছে তের হাজার পঞ্চায়েতে। দ্য ওয়ার এরকম একটি সিদ্ধান্ত উদ্ধৃত করেছে :

“গ্রাম সভার মত হল, প্রস্তাবিত আইনগুলি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে দুর্বল করছে। শস্যের সহযোগ মূল্য তুলে নেওয়া এবং কর্পোরেট হাউসগুলোকে মজুতদারি করার ঢালাও ছাড় দেওয়া চূড়ান্ত জনবিরোধী পদক্ষেপ — কৃষক, শ্রমিক ও ব্যবসায়ী— সকলের বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ। তাই গ্রামসভা সর্বসম্মতিক্রমে এই বিলগুলিকে প্রত্যাখ্যান করছে এবং এগুলি প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য কেন্দ্র সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছে।”

bba

 

সারা ভারত কিসান সংঘর্ষ সমিতির ছাতার তলায় এসে দেশের প্রায় আড়াই’শর ওপর কৃষক সংগঠন মোদি সরকারের কৃষি-বিরোধী কৃষক-বিরোধী নীতির বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছে। এই লড়াই পাঞ্জাবে সবচেয়ে তীব্র প্রতিরোধের চেহারা নিয়েছে। সেখানকার ৩০টির ওপর কৃষক সংগঠন জোট বেঁধে কর্পোরেট হাউসের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ প্রতিরোধ শুরু করেছে। ৩৩টি জায়গায় একটানা রেল অবরোধ চলছে আজ এক সপ্তাহের ওপর। ৩৩টি স্থানে রোড ব্লকেড, ৭টি বড় শপিং মলের সামনে, একটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সামনে এবং বেশ কিছু বিজেপি নেতার বাড়ির সামনে ব্লকেড ও বিক্ষোভ চলছে। এছাড়া নির্দিষ্ট দিবসে বড় বড় জমায়েতগুলি চলছে। তার সাথে এবার একদম গ্রামীণ স্তরে সমস্ত পঞ্চায়েত থেকে এই আইনানুগ বিরোধিতার সিদ্ধান্ত কৃষক প্রতিরোধকে ব্যাপক বিস্তৃত ও গভীর করে দিচ্ছে। এমনিতে এই পঞ্চায়েতগুলি তেমন সক্রিয় নয়। কিন্তু মোদি সরকারের নয়া কৃষিনীতির বিরুদ্ধে এইভাবে পঞ্চায়েতগুলির রুখে দাঁড়ানো থেকে বোঝা যায় যে কৃষক ছাড়াও গ্রামের অন্যান্য শ্রেণী ও স্তরের মানুষদেরও বড় অংশ এই আইনগুলির সর্বনাশা চরিত্র বুঝতে পারছে। এই প্রতিরোধ অন্য রাজ্যগুলিতেও ছড়িয়ে দিয়ে দেশের সমস্ত পঞ্চায়েতে (৩ লক্ষ ৫০ হাজার) এরকম সিদ্ধান্ত পাস করানোর জন্য এআইকেএসসিসির কাছে আবেদন জানিয়েছেন পাঞ্জাবের কৃষকেরা, বাস্তবায়িত হলে তা হবে “তৃণমূল স্তরে গণতন্ত্রের এক অনন্য নজির, এবং কেন্দ্র সরকারেরও ক্ষমতা হবে না সবকিছু কর্পোরেটদের কাছে বিক্রি করে দেওয়ার”।

sardear

হাথরাসে মনীষা বাল্মিকীকে নৃশংস ধর্ষণ-হত্যা ও অতঃপর উচ্চবর্ণ ঠাকুর সম্প্রদায়ের ধর্ষকদের পক্ষ নিয়ে যোগি প্রশাসনের ঝাঁপিয়ে পড়ার বিরুদ্ধে সারা দেশের মানুষ ক্ষুব্ধ। দেশ জুড়ে যোগি আদিত্যনাথের পদত্যাগের দাবি উঠেছে। এইসব বিক্ষোভের মধ্যে সাফাই কর্মচারিদের প্রতিবাদের খবর তেমন প্রচার পায়নি। মনীষার সুবিচার প্রাপ্তির দাবিতে উত্তরপ্রদেশ সহ কয়েকটি রাজ্যে কয়েক লক্ষ সাফাই কর্মচারি অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে ধর্মঘট করেন। এইসব রাজ্যের বিভিন্ন সহরে আবর্জনার স্তুপ জমা হয়ে থাকার খবর আসে। আগ্রা শহরে তাজমহলে যাওয়ার রাস্তা বরাবর বিপুল আবর্জনার স্তুপ বিশেষ খবর হয়। কিছু কিছু এলাকায় ধর্মঘটি সাফাই কর্মচারিরা পৌরসভা/কর্পোরেশনের ওয়ার্কশপে পাথর ছোঁড়ে, গাড়ি ভাঙচুর করে। বলাই বাহুল্য, সাফাই কর্মচারিদের প্রায় সমগ্রটাই দলিত শ্রেণীর। বাল্মিকি নেতা হরিবাবু বাল্মিকি বলেন, “সমগ্র সম্প্রদায় অপমানিত ও ক্রুদ্ধ। আক্রান্তের পরিবারের সাথে পুলিশ ও প্রশাসন কেমন ব্যবহার করছে লক্ষ্য করুন … জঘন্য অপরাধীরাও এর থেকে অনেক বেশি সম্মান পায়”। সাফাই কর্মচারি আন্দোলনের নেতা বেজওয়াড়া উইলসন বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের কথা বলছে … মেয়েদের ধর্ষণ করার পেছনে কি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র কাজ করছে? অবিচারের বিরুদ্ধে মানুষ আওয়াজ তুললেই এদের আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র মনে পড়ে? … এরা হল গণতন্ত্র বিরোধী, সংবিধান বিরোধী শক্তি”।

teacpp

সিপিআই(এমএল)-র একটি প্রতিনিধিদল গত ৭ অক্টোবর হাথরাস পরিদর্শনে যায় এবং গণধর্ষণ ও খুনের শিকার মনীষা বাল্মিকির পরিবারের সাথে দেখা করে। প্রতিনিধিদল পরিবারকে সান্ত্বনা জ্ঞাপন করে এবং সুবিচার পেতে সমগ্র ঘটনাটিকে সুপ্রিম কোর্টের কোনও বিচারক দ্বারা তদন্ত করানোর দাবিকে সমর্থন জানায়। সিপিআই(এমএল) উত্তরপ্রদেশ রাজ্য সম্পাদক সুধাকর যাদব জানিয়েছেন যে পার্টির রাজ্য কমিটির সদস্য ও পশ্চিম ইউপি পার্টির দায়িত্বশীল নাশির শাহের নেত্রিইত্বে প্রতিনিধি দল মনীষার মা রামা দেবি, বাবা ওম প্রকাশ, ভাই সত্যেন্দ্র, কাকা রামবীর সহ পারা প্রতিবেশিদের সাথে দেখা করে কথাবার্তা চালায়। পরিবারটি খুব গরিব। দারিদ্র্য ও জাতবাদী আধিপত্যের কারণেই প্রশাসনের এই অবজ্ঞা তথা প্রমাণ লোপাট করে ধামাচাপা দেওয়ার মরিয়া প্রচেষ্টা। সঠিক সময়ে এফআইআর নেওয়া হয়নি, চিকিৎসাও হয়নি। এতদসত্বেও আলিগড় মেডিক্যাল অফিসার ভিক্টিমের শরীরে ধর্ষণজনিত ক্ষতের কথা বলেছেন।

তাছাড়া, প্রশাসন গভীর রাতে মরদেহ পুড়িয়ে ফেলেছে পরিবারকে অন্ধকারে রেখে। ডিএম কেবল পরিবারকে হুমকি দিয়েই থেমে থাকেনি, পরিবারের লোকেদের লাথিও মেরেছে। ঘটনাটিকে ধামাচাপা দেওয়ার অভিসন্ধিতে প্রথম দিকে বিরোধী নেতা ও মিডিয়াকে পরিবারের সাথে দেখা করতে বাধা দেওয়া হয়। পুরো গ্রামটিকেই একটি পুলিশ পস্টে পর্যবসিত করা হয়েছে, কিন্তু অভিযুক্তের পরিবার ও সমর্থকেরা অবাধে জমায়েত করছে ও নির্যাতিতার পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে। বিজেপি নেতারা অভিযুক্তের পক্ষে দাঁরাচ্ছে। এসবই সরকারের ইশারাতে ঘটছে।

রাজ্য সম্পাদক সুধাকর যাদব বলেন যে যোগি সরকার তথাকথিত ‘আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র’র কথা বলছে সরকারের ন্বক্কারজনক ভুমিকা থেকে দৃষ্টি সরাতে, তারা একের পর এক এফআইআর করে চলেছে এবং সাংবাদিকদের নিশানা বানাচ্ছে। এসবই চরম দমন ও নজর ঘোরানোর কৌশল। সুধাকর আবেদন জানান যে লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত না হয়ে সুবিচারের লরাইকে আরও তীব্র করে তুলতে হবে।

প্রতিনিধিদলের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে উত্তরপ্রদেশ রাজ্য পার্টি নিম্নলিখিত দাবিসমূহ উত্থাপন করেছে : ডিএম ও এসপি-র (এখন সাসপেণ্ডেড) বিরুদ্ধে এফআইআর ও শাস্তি, দোষিদের কঠোর শাস্তি, নির্যাতিতার পরিবারের যথাযথ সুরক্ষার বন্দোবস্ত, অভিযুক্তের পরিবার দ্বারা জমায়েত ও হুমকি প্রদান অবিলম্বে বন্ধ করা, প্রতিবাদকারী রাজনৈতিক নেতাদের ওপর চাপানো মামলা প্রত্যাহার, সাংবাদিকদের ওপর নিপীড়ন বন্ধ করা, হাথরাস, বলরামপুর, ভাদোরি, মুখ্যমন্ত্রী যোগি আদিত্যনাথের পদত্যাগ — আজমগড় সহ রাজ্যের একের পর এক ঘটনা থেকে স্পষ্ট যে নারীর ওপর অত্যাচার বন্ধ করতে তিনি সম্পূর্ণ ব্যর্থ।

সিপি আই(এমএল)-র এই প্রতিনিধিদলে ছিলেন রাজ্য কমিটির সদস্য নাশির সাহ, এআইকেএম রাজ্য ভাইস প্রেসিডেন্ট নাথিলাল পাঠক, তারা সিং, রাকেশ চৌধুরি, মনোজ কুমার, সালিম খান, আর ওয়াই এ নেতা আমন ও বিষ্ণু শর্মা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই টিমের গতিরোধ করা হয় নির্যাতিতার বাড়ির এক কিলোমিতার দূরে এবং শেষ পর্যন্ত পাঁচজন প্রতিনিধিকে পরিবারের সাথে দেখা করতে দেওয়া হয়।

cvdar

সেন্ট্রাল ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো(সিবিআই) হাথরস গণধর্ষণ-হত্যা মামলার তদন্তভার পেয়েছে। কিন্তু তদন্তের শুরুতেই সিবিআই-এর কার্যকলাপ তার বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। মামলা হাতে নিয়ে গত রবিবার সকালে সিবিআই ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৭ (খুনের চেষ্টা), ৩৭৬(ডি)(গ্যাং রেপ) ও ৩০২ (খুন) ধারা ও এসসি/এসটি (নিপীড়ন নিবারণ) আইনের ৩(২)(v) ধারায় এফআইআর নথিভুক্ত করে। এই এফআইআর ও একটি সংবাদ বিবৃতি তাদের ওয়েবসাইটে তুলে দেয়। বিবৃতিতে সম্ভাব্য অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, “ধর্ষণ, খুনের চেষ্টা, গণধর্ষণ ও খুন (অন্যান্য)”। কিন্তু ওয়েবসাইটে এগুলি প্রকাশিত হওয়ার দুয়েক ঘন্টা পেরোতে না পেরোতেই এগুলি মুছে ফেলে নতুন প্রেস বিবৃতি জারি করে সিবিআই জানায় যে, উত্তরপ্রদেশ রাজ্য সরকার ও তদুপরি কেন্দ্র সরকারের নির্দেশে তারা এই তদন্ত করছে এবং ১৪ সেপ্টেম্বর হাথরাস জেলার চান্দপা থানায় লেখা এফআইআর অনুযায়ী গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যার প্রচেষ্টার অভিযোগ নথিভুক্ত করা হচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে যে, সিবিআই-এর এই পশ্চাদপসরণ কি নিছক টেকনিক্যাল?

jdvaeas

সারা দেশে ১০ ও ১৩ অক্টোবর প্রতিবাদের ডাক দিয়েছিল বিভিন্ন আম্বেদকরবাদী সংগঠনগুলি। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে ১০ অক্টোবর আইসা কলকাতায় যাদবপুর ও বাগবাজারে এবং বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে এবং ১৩ অক্টোবর হাওড়ার বালিতে প্রতিবাদী কর্মসূচী সংগঠিত করে।

বাগবাজার বাটার মোড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচীতে বক্তব্য রাখেন কমরেড অন্বেষা, কমরেড শুভাশীষ, আইসার রাজ্য সভাপতি কমরেড নীলাশিস এবং সিপিআই(এমএল) লিবারেশন-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড জয়তু দেশমুখ। গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন কমরেড শায়ন। সভা সঞ্চালনা করেন কমরেড ত্রিয়াশা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ৪নং গেট থেকে মিছিল করে যাদবপুর ৮বি-তে বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করা হয়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় আর্টস ফ্যাকাল্টি ইউনিট সভাপতি কমরেড রুদ্র তাঁর বক্তব্যে বলেন যে, রাতের অন্ধকারে পুলিশ প্রশাসন মনীষার মরদেহ জ্বালিয়ে দিয়ে আসলে দলিত মানুষের অধিকারকেই পুড়িয়ে শেষ করে দিতে চেয়েছে। খেটে খাওয়া মানুষকে নীচু চোখে দেখার বিরুদ্ধে সর্বস্তরে লড়াই করার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে কমরেড রুদ্র প্রভাকর সকলকে নিজের বাড়ির পরিচারিকা বা অন্য কাজের মানুষদের প্রতি নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গী ও ব্যবহারকে আত্মসমীক্ষার চোখে দেখার কথা বলেন। কমরেড সায়নী চাঁচাছোলা ভাষায় মোদি-যোগিকে আক্রমণ করে বলেন যে নারীসমাজ যে কোনও মূল্যে হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিবাদকে পর্যুদস্ত করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আইসা কলকাতা জেলা কমিটির সদস্য কমরেড অতনু এবং আইসা কলকাতা জেলা সভাপতি কমরেড অভিজিৎ তাঁদের বক্তব্যে বিজেপি আরএসএসের বিরুদ্ধে সার্বিক লড়াই গড়ে তোলার কথা বলেন। সিপিআই(এম এল) লিবারেশনের রাজ্য কমিটির সদস্য কমরেড মলয় তেওয়ারী বলেন যে, হাথরাসের ঘটনায় বিজেপি ও তার সরকারের ভূমিকা আসলে তাদের হিন্দুত্ববাদী এজেণ্ডারই অঙ্গ, বাবা সাহেব আম্বেদকরের নেতৃত্বে রচিত গণতান্ত্রিক সংবিধান সরিয়ে বিজেপি-আরএসএস যে মনুসংহিতা কায়েম করতে চায় তার স্বরূপ কী হতে পারে তাই প্রকাশিত হয়েছে হাতরাসে। তিনি আরও বলেন যে জন্মলগ্ন থেকেই আইসা হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়ছে, নব্বই দশকের শুরুতে উত্তরভারত জুড়ে হিন্দুত্ববাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়ায়ের মধ্যে দিয়ে আইসার উত্থান ঘটেছিল, আইসা এই লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। সমগ্র সভাটি পরিচালনা করেন কমরেড বর্ষা বড়াল। প্রতিবাদ সভার শেষে যাদবপুর ৮বি মোড় অবরোধ করে, যোগী আদিত্যনাথের কুশপুতুল পোড়ানো হয়। ১৩ অক্টোবর বেলুড় নেতাজি পার্কের সামনে আইসার পক্ষ থেকে পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বক্তব্য রাখেন আইসা রাজ্য সভাপতি কমরেড নীলাশিস বসু, হাওড়া জেলা সম্পাদক কমরেড অঙ্কিত মজুমদার এবং বালি ইউনিটের সম্পাদক কমরেড সৌত্রিক গোস্বামী।

aiksaa

দঃ ২৪ পরগণা জেলার মগরাহাট ১ নং ব্লকে দীর্ঘদিন পরে খুবই উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে এআইকেএম কর্মীরা কৃষকদের জরুরি প্রশ্নগুলিকে তুলে ধরলেন। গত ৭ অক্টোবর উস্থি অঞ্চলের কৃষক কর্মীরা ব্লকের কৃষি উন্নয়ন আধিকারিকের কাছে এক ডেপুটেশন কর্মসূচী সংগঠিত করেন। ডেপুটেশনে কেন্দ্রীয় নয়া কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাহি জানালে উপ কৃষি আধিকারিক সেটা উপরে পাঠিয়ে দেবেন বলে জানান। সার-বীজ প্রভৃতি কৃষি সহায়তাগুলি প্রকৃত দরিদ্র কৃষকদের কাছে পৌছাচ্ছে না কেন,এ নিয়ে প্রতিনিধিরা তীব্র ক্ষোভ জানায়। কম সূদে কৃষিঋণ, কৃষি যন্ত্রপাতি এগুলিও যাতে ক্ষুদ্র – মাঝারি চাষিরা পায় সেই প্রসঙ্গে ব্লক থেকে সহায়তা করার আশ্বাস পাওয়া যায়। যারা মৌখিক চুক্তি বা ভাগে চাষ করে থাকেন পঞ্চায়েতের শংসা পত্র নিয়ে এলে তারাও ঐ সহায়তাগুলি পাবেন বলে জানা যায়। এলাকায় এলাকায় দলবাজি তথা শাসক দলের আধিপত্য কায়েম করে গরিব কৃষকদের বিভিন্ন প্রকল্প থেকে বঞ্চনা করা হচ্ছে, পাশাপাশি দেখা যাচ্ছে ঋণ প্রদানে ব্যাংকের প্রবল অনীহা। এসবের বিরুদ্ধে এবং কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কৃষক বিরোধী নীতির প্রতিবাদে কৃষকদের সমাবেশিত করা এবং ব্যপক প্রচারের মধ্য দিয়ে আগামীতে আরও বড় আকারে বিক্ষোভ সংগঠিত করার পরিকল্পনা এলাকার কৃষক সংগঠন গ্রহণ করেছে। এই কর্মসূচীতে উপস্থিত ছিলেন এআইকেএম এর জেলা ও রাজ্য নেতা দিলীপ পাল, আয়ারলা ও এলাকার সংগঠক নবকুমার বিশ্বাস, উস্থি এলাকার নেতা জয়দেব নস্কর, জগদীশ মন্ডল প্রমূখ।

middeiid

“মিডডেমিল রন্ধনকর্মীদের যদি এই ভাবে বছরের পর বছর অবহেলা করা হয়, সান্মানিকের নামে গালভরা কথা বলে তাঁদের নামমাত্র ভাতা দেওয়া হয়, তারা যদি বারো মাসের বদলে দশ মাসের ভাতা পায়, তাহলে আগামীদিনে রন্ধনকর্মীদের আন্দোলন চরম আকার ধারণ করবে, প্রয়োজনে অনির্দিষ্টকালের জন্য পথ অবরোধ করা হবে” এভাবেই প্রবল ক্ষোভে ফেটে পড়লেন নদীয়া জেলা মিডডেমিল রন্ধনকর্মী ইউনিয়ন (এআইসিসিটিইউ  অনুমোদিত) সম্পাদক কৃষ্ণগোপাল দাস। গত ১৩ অক্টোবর কৃষ্ণনগরে জেলা শাসকের দপ্তরে বিক্ষোভ ডেপুটেশন কর্মসূচীতে শতাধিক মিড-ডে-মিল কর্মীরা উপস্থিত হন। এছাড়া এআইসিসিটিইউ পরিচালিত অসংগঠিত শ্রমজীবী ইউনিয়নের কর্মীরাও তাঁদের নিজ নিজ ক্ষেত্রের দাবিগুলিকে জেলা শাসকের কাছে তুলে ধরার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে এই কর্মসূচীতে সমাবেশিত হয়েছিলেন। শুরুতে এক মিছিল এলাকা পরিক্রমা করে এবং তারপর অনুষ্ঠিত হয় বিক্ষোভসভা। সভায় রন্ধন কর্মী ইউনিয়নের নেত্রী চায়না সেখ বলেন, লকডাউনে প্রচন্ড ঝুঁকি নিয়ে তারা বাড়ি বাড়ি খাবার বিলির কাজ করছেন, কিন্তু সে জন্য বাড়তি কিছুই পাচ্ছেন না। আগে রান্নার দুমুঠো খাবার পাওয়া যেতো, এখন সেটাও বন্ধ হয়ে গেছে। উৎসব ভাতার দাবি দীর্ঘদিন ধরে জানানো স্বত্বেও সরকারের কোনো হেলদোল নেই।

জেলা শাসকের কাছে ডেপুটেশনে জানানো হয়, বর্তমান লকডাউনের পরিস্থিতিতে গ্রাম ও শহরের মেহনতী মানুষেরা চরম সংকটের মধ্যে রয়েছেন। কাজ, মজুরি ও খাদ্য সংকটে তাঁদের জীবনধারণ খুবই কষ্টকর হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে রন্ধনকর্মী, বিড়ি শ্রমিক, কৃষি শ্রমিক, হকার, নির্মাণ কর্মী সহ অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমজীবী মানুষদের কয়েকটি জরুরি দাবি তুলে ধরা হচ্ছে। দাবিগুলির মধ্যে ছিলো –

  • রন্ধন কর্মীদের কর্মচারি স্বীকৃতি, ভাতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং উৎসব বোনাস দিতে হবে। এদের ১২ মাসের বেতন ও মাসের বেতন মাসেই দিতে হবে। সকলকে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দিতে হবে।
  • লকডাউন পর্যায়ে সমস্ত অসংগঠিত শ্রমিক সহ পরিযায়ী শ্রমিকদের ন্যূনতম ৬ মাসের জন্য মাসিক ১০,০০০ টাকা ভাতা ও বিনামূল্যে রেশন দিতে হবে।
  • বিড়ি শ্রমিকদের সরকার নির্ধারিত মজুরি দিতে হবে। অবিলম্বে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকতে হবে।
  • রেল হকারদের ট্রেনে হকারী করার অধিকার বন্ধ করা চলবে না। সরকার-প্রশাসনকে এই মানবিক দাবি রেল কর্তৃপক্ষর কাছে জানাতে হবে।
  • নির্মাণ শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষার বিভিন্ন সুযোগ পেতে দীর্ঘসূত্রিতা বন্ধ করতে হবে। সেগুলি দ্রুত প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • গ্রামীণ তফশিলী জাতি উপজাতিদের শংসাপত্র প্রদানের কাজ দ্রুত এবং জরুরি ভিত্তিতে করতে হবে।
  • বন্ধন সহ মাইক্রোফাইনান্স সংস্থাগুলোর ঋণের সূদ মুকুব করতে হবে। লকডাউনের এক বছর কিস্তি আদায় বন্ধ রাখতে হবে।

বিক্ষোভ সভায় বক্তব্য রাখেন এআইসিসিটিইউ জেলা সম্পাদক জীবন কবিরাজ, সভাপতি অমল তরফদার, সহ সম্পাদক বিজয় সাহা। এছাড়া নবদ্বীপের ট্রেড ইউনিয়ন কর্মী গোকুল হালদার, আয়ারলার কাজল দত্তগুপ্ত, এআইকেএম-এর জয়তু দেশমুখ প্রমূখ। বিভিন্ন গণসংগঠনের পক্ষ থেকে ছয় জনের এক প্রতিনিধিদল জেলা শাসকের দপ্তরে স্মারক লিপি জমা দেয়, তাতে উপরোক্ত নেতৃবৃন্দ ছাড়াও ছিলেন নবদ্বীপের হকার ইউনিয়নের দেবাশীষ সিংহ, মিড-ডে-মিল কর্মী তামিল সেখ।

fassddde

১৩ অক্টোবর শিলিগুড়ির কাওয়াখালি, কলম জোত এলাকা থেকে ঋণ মুক্তি কমিটির ব্যানারে ফাঁসিদেওয়া বন্ধন ব্যাঙ্কের সামনে বেশ কিছু সময় ধরে বিক্ষোভ অবস্থান চলে। ব্যাঙ্ক ম্যানেজার স্মারকলিপি নিতে অস্বীকার করায় বেশ কিছুক্ষণ ধরে বাদানুবাদ চলার পরে অবশেষে তিনি তা নিতে রাজি হন, অবস্থান চলাকালীন বক্তব্য রাখেন মামণী বর্মণ? বাসুদেব বোস, মোজাম্মেল হক, অভিজিত মজুমদার। আজকের কর্মসূচীতে শক্তিগড় ব্রাঞ্চের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। ঋণগ্রস্ত পরিবারের মহিলাদের উপস্থিতি ছিলো উল্লেখযোগ্য।

samsadd

লকডাউনে বেশিরভাগ পরিবার কাজ হারিয়েছে, কারও আবার ছোটো থেকেই লকডাউনের সঙ্গে দীর্ঘ চোখাচোখি –! কেউ রেশন তুলে সেই চাল বিক্রি করে তবেই পড়াশোনা করার ন্যূনতম রসদটুকু জোগাড় করে –! শক্তিগড়, শীতলা পাড়া, নতুন পাড়ার এরকম বারোজন ছেলে মেয়েকে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সংবর্ধিত করা হলো বিপ্লবী যুব অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে। মীরা চতুর্বেদীর রবীন্দ্রসংগীতের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। আজকের সময়কে ছাত্র-যুবরা কীভাবে দেখবে এ নিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন পার্টি দার্জিলিং জেলা সম্পাদক কমরেড অভিজিত মজুমদার। বক্তব্যে নিজের অনুভূতির কথা লড়াইয়ের কথা তুলে ধরে ছাত্রী প্রীতি পাশোয়ান। বক্তব্য রাখেন পার্টির রাজ্য কমিটির সদস্য বাসুদেব বোস, কবি গৌতম চক্রবর্তী, লোকাল কমিটির সম্পাদক মোজাম্মেল হক। উপস্থিত ছিলেন আরওয়াই-এর পক্ষ থেকে তাপস বর্মণ, মামণী বর্মণ, প্রতিমা রায়, তৃষা চ্যাটার্জি। এআইপিডব্লিউ-এর পক্ষে রুবী সেনগুপ্ত সহ শক্তিগড় ব্রাঞ্চের সদস্য এবং এলাকার সহ নাগরিকেরা। ছিলেন ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকেরা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন শাশ্বতী সেনগুপ্ত।

hatdww

গত সোমবার ১২ অক্টোবর এলাহাবাদ হাইকোর্টের লক্ষ্মৌ বেঞ্চের বিচারপতিরা হাথরসের মনীষা বাল্মিকীর পরিবারের সদস্যদের কথা শোনার জন্য তাঁদের আদালতে উপস্থিত হতে বলেছিলেন। সেখানে হাথরসের পুলিশ কর্তাও হাজির হয়েছিলেন। দলিত মেয়ে মনীষা বাল্মিকীকে ধর্ষণ করা হয়নি বলে পুলিশ কর্তা মন্তব্য করলে বিচারপতি তাঁর উদ্দেশে প্রশ্ন রাখেন – “কী করে বলছেন ধর্ষণ হয়নি, তদন্ত কি শেষ হয়ে গিয়েছে? আপনার বা কোনো ধনী পরিবারের মেয়ে হলে পারতেন তার দেহ এভাবে পুড়িয়ে দিতে?” বিচারপতির এই প্রশ্নের মধ্যেই ধরা পড়েছে হাথরসের নির্যাতিতা সম্পর্কে উত্তরপ্রদেশ সরকার ও প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গির নির্যাস। একদিকে নৃশংস নিপীড়নের শিকার দলিত কন্যাকে ন্যায়বিচার প্রদানে চরম উপেক্ষা ও অবহেলা, অন্যদিকে ধর্ষকদের অপরাধী সাব্যস্ত হওয়া থেকে রেহাই দেওয়ার জোরদার প্রচেষ্টা – এই লক্ষ্যেই চালিত হয়েছে উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনের যাবতীয় সক্রিয়তা। পরিবারের তরফে এফআইআর-এ গণধর্ষণের অভিযোগ, ২২ সেপ্টেম্বর আলিগড় হাসপাতালে তদন্তকারী অফিসারের কাছে দেওয়া বয়ানে মনীষা চারজন মিলে তাকে ধর্ষণ ও গলায় ফাঁস লাগিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টার কথা জানায়, মৃত্যুর আগে সফদরজং হাসপাতালে দেওয়া বয়ানে মনীষা আরও একবার ধর্ষণের কথা জানান — এ সব সত্ত্বেও পুলিশ প্রথম থেকেই এফআইআর-এ ধর্ষণের অভিযোগ ঢোকাতে অস্বীকার করেছে। এবং তার জন্য ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে ফরেন্সিক ল্যাবের রিপোর্টকে, যে ল্যাবে নমুনা পাঠানো হয়েছিল ধর্ষণকাণ্ডের ১১ দিন পর। পুরুষের বীর্য দু-দিনের বেশি বাঁচে না, ফলে এতদিন পর যোনিতে বীর্যের সন্ধান মেলা সম্ভব নয়, এ কথা জানার পরও পুলিশ ফরেন্সিক ল্যাব-এর রিপোর্টকে ধর্ষণ না হওয়ার অকট্য তথ্যপ্রমাণ হিসাবে জাহির করছে। ফরেন্সিক ল্যাব-এর রিপোর্টে বীর্যের সন্ধান মেলেনি বলে পুলিশ দাবি করলেও ওই রিপোর্টে যে নির্যাতিতার যোনিতে দুটো গভীর ক্ষতের কথা বলা আছে তা তারা পুরোপুরি এড়িয়ে গেছে।

তবে ঠাকুর সম্প্রদায়ের অভিযুক্তদের অপরাধকে ধামাচাপা দিতে প্রশাসন এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ফরেন্সিক ল্যাব-এর রিপোর্টের ওপর ভর করাকেই একমাত্র কৌশল করেননি। প্রমাণ লোপাট করতে নির্যাতিতার দেহকে রাতের অন্ধকারে পুড়িয়ে দিয়েছে। নির্যাতিতার বাবা জানিয়েছেন, “তারপর কয়েকজন পুলিশ বাইরে থেকে আমাদের দরজায় তালা দিয়ে দিল এবং মেয়ের দেহকে চাষের মাঠে নিয়ে গিয়ে রাজপুতদের বাড়ি থেকে জোগাড় করা ঘুঁটে ও কাঠ দিয়ে তড়িঘড়ি পুড়িয়ে দিল।” মেয়েকে শেষ দেখা, রীতিসম্মত অন্ত্যেষ্টির কোন অধিকার বাবা-মায়ের নেই, নিহত দলিত কন্যার দেহের ওপর দখল শুধু পুলিশের!

এরপর মেয়েটির চরিত্র নিয়ে কটাক্ষ করা, ফোন কলের তথাকথিত রেকর্ড হাজির করে নির্যাতিতা ও মূল অভিযুক্তর মধ্যে সম্পর্ক থাকার কথা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা হল। তবে অভিযুক্তদের রক্ষায় আশ্রয় নেওয়া সবচেয়ে বিস্ময়কর কৌশলটা হল “সম্মান হত্যার” অভিযোগ। জেল থেকে লেখা চিঠিতে পুলিশ সুপারের কাছে এই অভিযোগটি জানিয়েছে অভিযুক্তরা। চিঠিতে তারা জানায় যে মনীষা বাল্মিকী তাদের পরিচিত ছিল। সেদিন মাঠে তারা মনীষার সঙ্গে কথা বলছিল। পরে সেখানে মনীষার মা ও অন্যরা চলে আসে। সন্দীপ (মূল অভিযুক্ত) বাড়ি চলে যায়। পরে শুনতে পায় মনীষার বাড়ির লোকজন তাকে মারধর করছে। তারাই মনীষাকে মেরে ফেলে অভিযুক্তদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়েছে। মনীষার বৌদি জানিয়েছেন, এই অভিনব কৌশলটার উদ্যোক্তা বিজেপির দলিত সাংসদ রাজবীর দিলার। তিনি জেলে অভিযুক্তদের সঙ্গে দেখা করে তাদের দিয়ে চিঠিটা লেখান। সাংসদ অবশ্য বলেছেন, সেদিন তিনি জেলে গিয়েছিলেন কারণ জেলার তাঁকে “চা খাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।” জেলে গিয়ে অভিযুক্তদের সঙ্গে দেখা করে চিঠি লেখানোর কথা তিনি অস্বীকার করেন। এতদিন “সম্মান হত্যার” ব্যাপারটা উচ্চ বর্ণের ক্ষেত্রেই ঘটতে দেখা গেছে। উঁচু জাতের মেয়ে বা ছেলে দলিত বা পশ্চাদপদ জাতের ছেলে-মেয়েকে বিয়ে করলে পরিবারের “সম্মান” রক্ষায় তাদের হত্যা করা হত। ঠাকুর জাতের অভিযুক্তদের রক্ষার চেষ্টায় উচ্চবর্ণের নিজস্ব ও একচেটিয়া ব্যাপারটার ভাগও তবে দলিতদের দেওয়া হচ্ছে!

সংবিধানে সাম্যের কথা, সৌভ্রাতৃত্বের কথা লেখা থাকলেও সেই লক্ষ্যের বাস্তবায়নে রাষ্ট্রকে কোনোদিনই চালিত করা হয়নি। একদেশদর্শিতা, উচ্চবর্ণের আধিপত্য বরাবরেরই ব্যাপার ছিল। কিন্তু গত ছ-বছরে ব্রাহ্মণ্যবাদী মতাদর্শের আরও তীব্র হওয়া, তার আধিপত্য বেড়ে চলার সাথে উচ্চবর্ণের দাপটে এক মাত্রাগত পরিবর্তন এসেছে। দলিতদের দমিয়ে রাখার তাদের স্পৃহা আগের তুলনায় অনেক বেশি উজ্জীবিত হয়েছে, ফলে দলিত-বিরোধী উৎপীড়নের সংখ্যারও বৃদ্ধি ঘটেছে। পরিসংখ্যান বলছে উত্তরপ্রদেশে দলিত নারীদের বিরুদ্ধে সংঘটিত হিংসার সংখ্যা ২০১৪-র ১১৮৮ থেকে বেড়ে ২০১৬-য় দাঁড়ায় ২০২৬, এবং ২০১৯-এ তা ১৫৩৮ বলে দেখা যাচ্ছে। এগুলো কিন্তু নথিভুক্ত হওয়া সংখ্যা আর হিংসাঘটিত সব অপরাধই যে নথিভুক্ত হয় না তার উল্লেখ বোধকরি না করলেও চলবে। কেন্দ্রীয় ক্ষমতায় ব্রাহ্মণ্যবাদী মতাদর্শের শক্তিগুলোর অধিষ্ঠানে উচ্চবর্ণের প্রতাপ অনেক বেড়ে যাওয়ায় পেশিশক্তির প্রয়োগকে তারা অবাধ করে তুলেছে এবং রাষ্ট্রও কুণ্ঠাহীনভাবে তাদের মদত করে যাচ্ছে। সৌজন্য ও আপাত-ন্যায়ের যে হাবভাব শাসক রাজনৈতিক দলগুলো অন্তত দেখানোর চেষ্টা করত, বিজেপি তাকে ভেঙ্গেচুরে দিয়েছে। তার আধিপত্যের পথে ন্যায়নীতির কোন বাধাকে সে মানে না। কাঠুয়ায় ৮ বছরের নাবালিকাকে মাদক খাইয়ে বেহুঁশ করে তার ওপর গণধর্ষণ চালানোর পর হত্যা করা হয়। আর ধর্ষকদের সমর্থনে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন সংগঠিত জনসমাবেশে রাজ্য মন্ত্রীসভার দুই বিজেপি মন্ত্রী ভাষণ দিয়ে ধর্ষণকাণ্ডে পুলিশি তদন্তকে ‘জঙ্গলরাজ’ বলে অভিহিত করেন। উত্তরপ্রদেশের উন্নাওতে বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সিং সেঙ্গার অপ্রাপ্তবয়স্ককে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। অভিযোগ জানালেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয় না। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বাড়ির সামনে নির্যাতিতা প্রতিবাদে গায়ে আগুন দিলে তবেই প্রশাসন সক্রিয়তা দেখায়। যোগী জমানায় উচ্চবর্ণের বিশেষভাবে ঠাকুর সম্প্রদায়ের হাতে দলিতদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া, তাদের ওপর গুলি চালনা, তাদের জেলে পোরার মতো নিপীড়নের অনেক ঘটনাই ঘটেছে। দেশে লক্ষ-লক্ষ কন্যাভ্রূণ হত্যা হলেও সরকার-প্রশাসন মুখ ঘুরিয়ে থাকে। আর নির্মম বাস্তব প্রতিদিনই “বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও”-এর আহ্বানকে বিদ্রুপ করে চলে।

এখানে হাথরসের উচ্চবর্ণ শাসিত পঞ্চায়েত গণধর্ষণে অভিযুক্তদের নির্দোষ প্রতিপন্ন করার মহান উদ্যোগে নিজেদের শামিল করে। হাথরসের প্রাক্তন বিজেপি বিধায়ক রাজবীর সিং পালোয়ান অভিযুক্তদের সমর্থনে ঠাকুরদের সমাবেশ ঘটিয়ে দলিতদের ও দলিত নেতা চন্দ্রশেখর আজাদকে হুমকি দেন। যোগী আদিত্যনাথের পুলিশ বাহিনী তাদের স্পর্ধাকে চরম মাত্রায় তুলে দলিত পাড়াকে ঘিরে রেখে, নির্যাতিতার পরিবারের সদস্যদের ঘরে আবদ্ধ করে সাংবাদিক সহ বাইরের অন্য কারো সাথে তাদের কথা বলতে দেয় না। এখানে বাহুবলীদের মুখ নিঃসৃত রক্ত হিম করা হুমকি দেওয়ার দায়িত্বটা নিজের কাঁধে তুলে নেন জেলা শাসক — ‘বয়ান কি বদলাবে না? সাংবাদিকরা চিরদিন থাকবে না, দু-দিন পরে চলে যাবে। আমরা কিন্তু চিরদিন থাকব!’ মনে পড়ে যায় ‘আতঙ্ক’ ছবির সমাজবিরোধীর মুখ থেকে বেরোনো সেই সংলাপ – মাস্টারমশাই আপনি কিন্তু কিছুই দেখেননি! অযোধ্যা জমি মালিকানা মামলায় সুপ্রিম কোর্টের এবং বাবরি ধ্বংস মামলায় সিবিআই বিশেষ আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে হাথরসের ঠাকুর সম্প্রদায় এবং যোগী প্রশাসনের মধ্যে বোধকরি এই আত্মপ্রত্যয় জেগে থাকবে যে, হাথরস গণধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডে তারা অভিযুক্ত ঠাকুর যুবকদের নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার রায় বার করে আনতে পারবে! এটাই আজ রাষ্ট্রের মার্কামারা মূর্তি! এটাই আজ ভারতের ‘নিউ নর্মাল’!

– জয়দীপ মিত্র     

daardddar

প্রযুক্তির কল্যাণে দৃশ্যটি এখন ‘ভাইরাল’। অভিযোগ, কংগ্রেসের এক নেত্রী উপনির্বাচনে ধর্ষণে অভিযুক্তকে টিকিট দেওয়ার  বিরোধিতা করেছিলেন। তার যুক্তি গ্রাহ্য না হওয়ায় তিনি নাকি ক্ষোভে দলীয় নেতার উদ্দেশে ফুলের তোড়া ছুঁড়ে মারেন এবং তাতে মূর্চ্ছা না গিয়ে উল্টে তেড়িয়া হয়ে কয়েকজন নেতা-কর্মী তাকে যথেচ্ছ কিল চড় লাথি ঘুঁষি মারেন। – নিঃসন্দেহে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় নিন্দনীয়। এর জেরে দলটিকে তড়িঘড়ি সেই বীরপুঙ্গবদের (মহিলা নিগ্রহে অভিযুক্তদের) বহিষ্কার করে মুখরক্ষা করতে হয়।

ব্যাপারটা ঘটেছে উত্তর প্রদেশের দেওরিয়ায়। তাতে একটা বাড়তি মাত্রা যোগ হয়েছে। কারণ উত্তর প্রদেশ নারীনির্যাতনে শীর্ষে। কারণ উত্তর প্রদেশ মনুবাদের ঘোষিত চর্চাভূমি। অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মুখের হাসি চওড়া হয়েছে। বিশেষ করে শাসকদল বিজেপি’র। কেউ মুচকি-হাসিত। কিন্তু ব্যাপারটা ‘ঘুঁটে পোড়ে, গোবর হাসে’-র মতো! হ্যাঁ অত্যন্ত লজ্জা ও দুঃখের সঙ্গেই কথাটা বলতে হচ্ছে। ভারতীয় রাজনীতির আজ এমনই বাহুবলীগ্রস্ত বেহাল অবস্থা।

নিগৃহীতা নেত্রীর ক্ষোভ সঙ্গত। একজন ধর্ষণ- অভিযুক্তকে টিকিট দিতে হয় কেন? তিনি বাহুবল পেশীবল ধনবল লোকবলের অধিকারী বলে! হ্যাঁ এগুলো তাৎক্ষণিক ভাবে ভোটবৈতরণী পারে মোক্ষম অস্ত্র তো বটেই! বিশেষ করে দুর্বৃত্তকবলিত রাজনীতির চৌহদ্দিতে। নাকি, ‘ঠক বাছতে গাঁ  উজাড়’? সব সম্ভাব্য প্রার্থীই ধর্ষণ-অভিযুক্ত? হতেও পারে! ধর্ষণ সংস্কৃতি তো কোনো একটি দলের একচেটিয়া দখলদারিতে থাকতে পারে না। অনুকূল পরিস্থিতিতে তার সংক্রমণ ব্যাপকভাবেই ঘটছে, ঘটবে-দলের সীমানা পেরিয়ে। স্থানমাহাত্ম্যে তা স্বাভাবিক অনুমোদনও পেয়ে যাচ্ছে!

রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থতায় লুঠতরাজ হত্যা অগ্নিসংযোগের সঙ্গে ‘ধর্ষণ’ তো একটা অঘোষিত আবশ্যিক কর্মসূচী বাহুবলী রাজনীতির কাছে, রাষ্ট্রের কাছেও; দলীয় কর্মী তথা ভাড়াটে বাহিনীর দ্বারা, কখনও রাষ্ট্রীয় বাহিনী-পুলিশ মিলিটারির দ্বারা। যেমনটি আমরা দেখেছি বিহারে, বস্তারে, কাশ্মীরে, মণিপুরে, গুজরাটে। রাষ্ট্রের অনুমোদিত এবং অনুশীলিত এই ধর্ষণ-সংস্কৃতির ছায়া তো সমাজেও পড়ে। জাত-পাত ভিত্তিক লিঙ্গ-বৈষম্যের সমাজের নিজস্ব একটা পরম্পরা তো আছেই। তথাকথিত রাজনীতিক নেতা-কর্মীরা তো অন্তঃরীক্ষ-নিক্ষিপ্ত সুবর্ণ গোলক নন। জনবিরোধী কলুষিত রাজনৈতিক পরিমণ্ডলের আবিলতার মধ্যে বেড়ে ওঠা জীবমাত্র। তাই ধর্ষণ সংস্কৃতিতে আক্রান্ত, সংক্রমিত হওয়াটা কোনো অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়। হ্যাঁ, বামপন্থী রাজনীতিতে অবশ্যই সেটা অস্বাভাবিক, গর্হিত এবং বিরলদৃষ্ট। কারণ তারা জাত-পাত, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সমস্ত মানুষের সমানাধিকারের সঙ্গে নারী-পুরুষের সমানাধিকারেও বিশ্বাসী। রাজনৈতিক অনুশীলনেও সাধারণভাবে তার সর্বজনগ্রাহ্য মান্যতা আছে। ভারতের জাতীয় বা আঞ্চলিক দলগুলির ক্ষেত্রে, দলের ইশতেহারে যা-ই থাক না কেন, একজন সম্ভাব্য জনপ্রতিনিধি বাছাইয়ের সময় এটা বিচার্য নয় যে তিনি কতটা পরিশ্রমী, সৎ, সত্যিই সধারণ মানুষের কতটা কাছের এবং কাজের মানুষ, যেটা সাধারণভাবে বামপন্থী রাজনীতির ক্ষেত্রে মূল এবং আবশ্যিক শর্ত। বরং এটাই দেখার যে তিনি কতটা পেশী আস্ফালনের মাধ্যমে যেন তেন প্রকারে দলের জন্য জয়কে ছিনিয়ে আনতে পারবেন। সেটাই হয়েছিল আর কি!

ভারতীয় রাজনীতিতে মহিলাদের অংশগ্রহণ নিয়ে একটু ভাবা যাক। সাধারণভাবে ভারতীয় সংসদে নির্বাচিত মহিলা সদস্যের অনুপাত গড়ে ১০%। বিগত লোকসভা নির্বাচনে একমাত্র আঞ্চলিক দল তৃণমূল কংগ্রেস (যদিও সেখানে তৃণমূল স্তর থেকে গড়ে পিটে উঠে আসা নেত্রীর থেকে টলিউড অভিনেত্রীদেরই ভীড় বেশি) এবং নবীন পট্টনায়কের বিজেডি ৩৫% এর উপরে মহিলা – মনোনয়ন দিয়েছিল। সেক্ষেত্রে জাতীয় দলগুলোর মনোনয়নের অনুপাত ছিল ১০-১২%। মহিলা সংরক্ষণ বিল রাজ্য সভায় পাস হলেও লোকসভায় তা পেশই হতে পারল না। অথচ এই অতিমারীর মধ্যেই দেখা গেল চরম অগণতান্ত্রিকভাবে কত জনবিরোধী বিল পাস হয়ে গেল! কারণ নিঃসংশয়ে, সমাজে রাজনীতিতে বহমান পিতৃতন্ত্র, পুরুষ আধিপত্য। পুরুষ-শাসিত রাজনীতি মহিলা-সংরক্ষণ আসলে চায়ই না। কিন্তু মতাদর্শগত ভাবে লিঙ্গ সাম্যে বিশ্বাসী হলেও বাম দলগুলোর অবস্থা এ ক্ষেত্রে করুণতর। কেন? মহিলা নেত্রীর অনুপাতও তুলনামূলকভাবে অনেক কম। কেন? তাহলে এখানেও সেই পুরুষ আধিপত্য? লিঙ্গ বৈষম্য?

এই পরিস্থিতিতে নিগৃহীতা কংগ্রেস নেত্রী তারা দেবী যাদব – অন্ধকারে এক রূপোলি আলোকরেখা। প্রবল বিরোধিতার মধ্যেও তিনি ধর্ষকের প্রার্থীপদের প্রতিবাদ করেছেন। এভাবে যদি সমস্ত দলের মধ্যেই নারীকণ্ঠ ধর্ষক বিরোধিতায় সরব হয় তাহলে দলগুলি কিছুটা হলেও নিজেদের সংশোধন করতে বাধ্য হবে। কিন্তু সেই জোরের জায়গাটা নারীকে অর্জন করতে হবে।

নারীর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ক্ষমতায়ন ছাড়া সেই ‘জোর’ সম্ভব নয়। লিঙ্গসাম্যও অসম্ভব। পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে  লড়াইয়ে তাই নারীদের দল মত শ্রেণী বর্ণ সম্প্রদায় নির্বিশেষে একজোট হওয়া আজ অত্যন্ত জরুরি। আন্দোলনে পথে নামাটা অত্যন্ত জরুরি। যেমনটি দেখিয়েছে শাহিনবাগ!

– জয়ন্তী দাশগুপ্ত      

laokcc

কৃষকদের ঋণমুক্তির দাবি ২০১৭-র মধ্যভাগে দেশজোড়া আলোড়ণ সৃষ্টি করে এবং দিল্লীতে ‘কৃষকদের জাতীয় পার্লামেন্টে’ এবিষয়ে একটি বেসরকারী বিলও পাশ হয়।

এর পরপরই, রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনে কৃষিঋণ মুক্তি এক নম্বর অ্যাজেন্ডা হয়ে ওঠে। পশ্চিমবঙ্গেও বারে বারে বিষয়টি উঠে এলেও বড় কোন আন্দোলন গড়ে ওঠেনি। কিন্তু বর্তমানে মহিলাদের ক্ষুদ্র ঋণমুক্তির জোরদার আন্দোলনের আবহে কৃষিঋণ মকুবের প্রশ্নটি বিভিন্ন রূপে আবার সামনে আসছে। সাথে সাথে দাবি উঠেছে গরিব ঠিকা বা চুক্তি চাষিদেরও কিষাণ ক্রেডিট কার্ড (কেসিসি) দিতে হবে এবং সাম্প্রতিক আমফান ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কেসিসি ঋণ মকুব করতে হবে।

কিন্তু কেসিসি ঋণ কোন ধরনের কৃষকেরা পেয়ে থাকেন, তার কোনো বিস্তারিত তথ্য বা সমীক্ষা তেমন নজরে পড়ে না। সেই অভাব দূর করতে, প্রারম্ভিক প্রয়াস হিসেবে হুগলী জেলার পান্ডুয়া ব্লকের ৩টি সমবায় সমিতিতে অনুসন্ধান চালানো হয়েছে।

প্রাথমিক তথ্য : একটি সমবায়ের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, সমিতির মোট সদস্য সংখ্যা ২৮৯২, কেসিসি পেয়েছেন ৫২২ জন (১৮%)। অপর একটি সমবায়ে, সদস্য সংখ্যা ২২৫৯, কেসিসি পেয়েছেন ৭০০ জন (৩১%)। তৃতীয় সমবায়টিতে, সদস্য সংখ্যা ৩৩০০, কেসিসি হোল্ডার হলেন ২০২ জন (৬%)।

কেসিসি অধিকাংশ সদস্যদেরই নেই। কেন নেই? প্রথম কারণ, এদের বেশিরভাগেরই নিজস্ব কোনো জমি নেই। সমবায়ের এক কর্তা তো পরিষ্কার বলে দিলেন, “কিষাণ ক্রেডিট কার্ড, যারা কিষাণ তারাই কেবল পেতে পারে। মজুররা কোনো কেসিসি পেতে পারেনা।” তিনি সরকারী ভষ্যটাই শুনিয়ে দিয়েছেন এবং হেসে বলেছেন, “সরকার যতই বিজ্ঞাপন দিক, বাস্তবে অপরের জমি ঠিকে নিয়ে চাষ করছেন এমন কৃষক সরকারী হিসেবে মজুর মাত্র। কেসিসি পাওয়ার মাণদণ্ডে তিনি অচল।”

সমবায়ের সদস্য এবং যার জমি আছে এমন কৃষকও বিশেষ কোনো কোনো ক্ষেত্রে কেসিসি পাচ্ছেন না। যেমন কোনো ক্ষেত্রে, পরিবারের প্রধান মারা যাওয়ার পর এখনও পর্যন্ত তাঁর নামেই জমির ‘রেকর্ড’ রয়ে গিয়েছে। জমি হয়ত ছেলেরা বা উত্তরাধিকরীরা চাষ করছেন কিন্ত ওয়ারিশনদের মধ্যে মনোমালিন্য থাকায় বা অন্য কোনো জটিলতার কারণে ওয়ারিশন সার্টিফিকেট জোগার হচ্ছে না। ফলে কেসিসি তাঁরা পাচ্ছেন না। এছাড়া ছোট চাষিদের অনেকে ‘সমবায় ঋণে কাগজ-পত্রের যা ঝক্কি, তার থেকে মহাজনের কাছে দাদন নিয়েই তো বেশ চলে যাচ্ছে’ – এই ভাবেই চলছিলেন। কেসিসির কথা তেমন ভাবতেন না। এখন এই প্রবণতা হ্রাস পাচ্ছে। ভবিষ্যতে সরকার যদি ঋণ মকুব করে বা নগদ অর্থ সাহায্য দেয় – এই আশায় তাঁরাও ধীরে ধীরে কেসিসির জন্য আবেদন করছেন এবং কেসিসি পাচ্ছেন।

loan

 

প্রসঙ্গত বলা যায়, সমবায়ের অধিকাংশ সাধারণ সদস্য গরিব এবং তাদের জমি নেই। তাদের সমবায়ের সদস্য হওয়ার নিজস্ব কোনো গরজ নেই। রাজনৈতিক দলের মাতব্বররাই, সমবায়ের বোর্ড নির্বাচনে এদের ভোট ব্যাঙ্ক হিসেবে ব্যবহারের জন্য সদস্য করে থাকে। সুযোগ বলতে, কোনো কোনো বছর বার্ষিক সাধারণ সভায় অন্য সদস্যদের মতো এরাও টিফিনের প্যাকেট, একটা প্লাস্টিকের বালতি কিম্বা স্টিলের থালা পেয়ে থাকেন। আর একটা সুবিধা, সমবায়ে টাকা জমা রাখলে, সন্ধ্যে বেলায় টাকা জমা দেওয়া বা তোলা যায়। কাজ কামাই করে ব্যাঙ্কে লাইন দিতে হয় না।

সে যাক। আমরা আবার বরং কেসিসি তথা কৃষি ঋণের কথায় আসি।

কেসিসিতে লাভবান হচ্ছেন কারা?

প্রথমে যে সমবায় সমিতিটির উল্লেখ করা হয়েছে (কেসিসি হোল্ডার ৫২২ জন), সেখানে কেসিসি ঋণ নিয়েছেন ৭৭% কৃষক (৪০২ জন)। বোঝা যাচ্ছে, এখানে কেসিসি রয়েছে এমন কৃষকদের অধিকাংশই ঋণ নিতে আগ্রহী এবং ঋণ পেয়েও যাচ্ছেন। ঋণ যারা পেয়েছেন তাদের মধ্যেও (ক) গরিব ও (খ) নিম্ন মধ্যকৃষকের সংখ্যাই বেশি। যথাক্রমে ১৮৫ জন এবং ১২৭ জন। (ক) শ্রেণীভুক্তরা এক একর পর্যন্ত জমির মালিক এবং (খ) শ্রেণীভুক্তরা এক একরের উর্দ্ধে ২ একর পর্যন্ত জমির মালিক। এরপরেই রয়েছেন মধ্য থেকে স্বচ্ছল মধ্যকৃষকরা। এমন মোট ৭৫ জন কৃষক ঋণ নিয়েছেন (এদের জমির পরিমাণ ২ থেকো ৩ একর পর্যন্ত)। ধনী কৃষকদের (যাদের জমির পরিমাণ ৩ একরের বেশি) মধ্যে ঋণ নিয়েছেন ১৫ জন।  

বলা বাহুল্য, জমি যার বেশি সেই বেশি অঙ্কের ঋণ পাবে। এই সমবায়টিতে দেখা যাচ্ছে আলু চাষের জন্য সর্বাধিক ঋণ (৮৫০০০ টাকা) পেয়েছেন একজন ধনী কৃষক। বাকি ১৪ জন, ৪০ হাজার টাকা থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ পেয়েছেন। এখানে উল্লেখ করা দরকার, রবি মরশুমে (মুখ্যত আলু চাষে ৬৪০ টাকা শতক হিসেবে লোন দেওয়া হয়। এথেকে বুঝে নেওয়া সহজ, গরিব কৃষকরা ৭-৮ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ পেয়েছেন। নিম্ন মধ্যকৃষকরা ২০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত এবং মধ্য ও স্বচ্ছল মধ্য কৃষকরা ৪০ হাজার থেকে ৬৩ হাজার টাকা পর্যন্ত লোন পেয়েছেন।

প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থার অন্যান্য ক্ষেত্রের মত সমবায় ব্যবস্থায়ও যে সঙ্গতি-সম্পন্নরাই বেশি সুযোগ পাবেন সেটা স্বাভাবিক। কিন্ত নির্দিষ্ট এই সমবায় সমিতির কার্যকলাপে এটা স্পষ্ট, সমবায় থেকে গরিব ও নিম্ন মধ্যকৃষকরাও কৃষিঋণ পাচ্ছেন।      

তবে আর একটি তথ্য নিঃসন্দেহে বেশ আকর্ষণীয়। দেখা যাচ্ছে, সমবায়টি থেকে আলু চাষে যেখানে ১৮৫ জন কৃষক ঋণ নিয়েছেন সেখানে বোরো ধান চাষের জন্য ঋণ নিয়েছেন মাত্র ১১২ জন কৃষক। এটা দেখিয়ে দেয়, জমি আছে এমন কৃষকদের অনেকেই নিজেরা বোরো চাষ করেন না। তাঁরা খেতমজুরদের বোরো চাষের জন্য জমি লিজ বা ঠিকে দিয়ে দেন। আর এই খেতমজুররা কোনো ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ পাওয়ার অধিকার ভোগ করেন না।

অপর সমবায়টিতে (যার কেসিসি হোল্ডার ৭০০ জন) আলু চাষের জন্য ঋণ নিয়েছেন ৩৮০ জন (অর্থাৎ কেসিসিধারীদের ৫৪%), বোরোতে ঋণ নিয়েছেন কার্ডধারীদের ১৯% (১৩৩ জন) এবং আমনে ঋণ নিয়েছেন ২৮% (১৯৬ জন)।

এখানে আলু চাষের জন্য ১০ হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ পেয়েছেন এমন চাষি ৫০ জন (আলু চাষে মোট ঋণ প্রাপকের ১৩%)। ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ পেয়েছেন ১৩০ জন (৩৪%) এবং ৪৫ হাজার টাকার বেশি ঋণ পেয়েছেন ২০০ জন (৫৩%)। এরমধ্যে একজন আবার একাই দেড় লক্ষ টাকা ঋণ পেয়েছেন। সর্বমোট এই সমবায় সমিতি আলু চাষের জন্য গত মরশুমে দেড় কোটি টাকা ঋণ বরাদ্দ করেছিল।

স্পষ্টতই দেখা যাচ্ছে, এই সমবায় সমিতির অন্তর্ভুক্ত কেসিসি কার্ডধারীদের মধ্যে ধনীকৃষকরাই অধিকতর সংখ্যায় কৃষিঋণ পেয়েছেন। ধনীকৃষক ঋণগ্রাহকের সংখ্যা ক্ষুদ্র ও মধ্যকৃষক ঋণগ্রাহকদের মিলিত সংখ্যাকেও ছাপিয়ে গেছে। তবুও মানতে হয়, ক্ষুদ্র ও মধ্যকৃষকরাও কৃষিঋণ গ্রহণের আংশিক সুবিধা ভোগ করছেন।

kkk

ঋণখেলাপী কারা হচ্ছেন-কেন হচ্ছেন?

ঋণ পাওয়ার পর ঋণ পরিশোধের ছবিটাও এক ঝলকে দেখে নেওয়া যেতে পারে।

প্রথম সমবায়টিতে, ঋণপ্রাপকদের ৩৪ শতাংশই যথাসময়ে ঋণ শোধ করতে পারেননি। এক বছরে, তিনটি ফসল মরশুমে (Crop Season) তিন দফায় ঋণ দেওয়া হয়। কেউ যদি পরপর দুটি ফসল মরশুমে নেওয়া ঋণের অন্তত একটিও শোধ করতে না পারেন তাহলে পরবর্তী ফসলের জন্য ঋণ পাবেন না। উদাহরণ হিসেবে, আমন ও রবিতে নেওয়া ঋণের মধ্যে অন্তত একটি ফসলের জন্য নেওয়া ঋণ তাকে শোধ করতেই হবে। নাহলে তিনি ঋণখেলাপী হয়ে যাবেন। দেখা যাচ্ছে, এই সমবায়ের অন্তর্ভুক্ত চাষিদের অনেকেরই ঋণ পরিশোদের সামর্থ্য নেই। ৪০২ জন ঋণগ্রহিতার মধ্যে ১৩৭ জনই যথাসময়ে ঋণ শোধ করেননি এবং এদের মধ্যে ১৩৩ জনই গরিব বা মধ্যচাষি। ঋণখেলাপীদের মধ্যে ৪ জন ধনী কৃষকও রয়েছেন। আঋণখেলাপী গরিব চাষিদের একটা অংশের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ঋণগ্রহণকারী কৃষক মারা গেছেন। ঋণখেলাপীদের তালিকায় তাঁদের নাম থেকে যাওয়াটা স্বাভাবিক। বলা বাহুল্য, ঋণের দায় না নেওয়ায় মৃত কৃষকদের সন্তানরাও কেসিসি পাচ্ছেন না। আর্থিক অবস্থা খারাপ হতে থাকায় এখানে গরিব ও মধ্যকৃষকদের অনেকেই সময়ে ঋণ মেটাতে ব্যর্থ হয়েছেন।

দ্বিতীয় সমবায়টিতে, ঋণখেলাপীর সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম। খুব জোর ৮ শতাংশ ঋণগ্রহিতা এখানে সময়মত ঋণ মেটাতে না পেরে ঋণখেলাপী হয়েছেন। ৩০ জন ঋণখেলাপীর মধ্যে ২০ জনই হলেন গরিব ও ক্ষুদ্র চাষি। পরিবারের প্রধান মারা যাওয়ার পর কেউ আর ঋণ শোধের দায় নিচ্ছে না। কিছু ক্ষেত্রে ঋণখেলাপের কারণ এটাই। কয়েকজন আবার নিতান্ত আর্থিক অনটনের জন্যই ঋণ শোধ করতে পারছেন না। ধনী কৃষক ঋণখেলাপীদের মধ্যে কেউ কেউ ব্যবসায় লোকসান বা চিকিৎসা সংক্রান্ত সংকটে পড়ে ঋণ মেটাননি। ধনী অথচ অভ্যাসগত কারণে ৫-৭ বছর ধরে ঋণ মেটাচ্ছেন না, এমন চাষিরও দৃষ্টান্ত মিলেছে।

এক কথায় বলা চলে, কেসিসি লোনের ক্ষেত্রে ঋণখেলাপীর সংখ্যা নিতান্ত কম নয় এবং ক্ষুদ্র ও গরিব কৃষকদের একাংশ ঋণ পরিশোধ করতে হিমসিম খাচ্ছে। ধনী কৃষকদের বড় অংশই, অন্তত কেসিসি ঋণের ক্ষেত্রে, ঋণের টাকা মিটিয়ে দিতে সক্ষম এবং তাদের ক্ষুদ্র একটা অংশ ছাড়া, বাকিরা ঋণ পরিশোধ করছে।

নিঃসন্দেহে এই সমীক্ষা অত্যন্ত প্রাথমিক স্তরের, যা চালানো হয়েছে মাত্র দু তিনটি ‘সোসাইটিকে’ ধরে। আর বলতে গেলে, প্রায় কেসিসির মতো একটিমাত্র বিষয়কে ঘিরেই সমীক্ষা করা হয়েছে। ফলে এর মধ্য দিয়ে গ্রামের কৃষকদের প্রকৃত অবস্থার অতি সামান্য অংশই ধরা পড়বে। তবুও সমবায়ের মাধ্যমে কৃষিঋণের গতিবিধির একটা সাধরণ প্রবণতার (Trend) হদিশ এই সমীক্ষা থেকে পাওয়া যায়।

হুগলী জেলার সমৃদ্ধ কৃষি এলাকায় অনেক বড় বড় সমবায় সমিতি আছে। সমবায়ের মাধ্যমে ‘হিমঘর’ গড়ে তুলে বার্ষিক কোটি কোটি টাকার ব্যবসা চালানো হয় এবং ধনীকৃষক, কুলাক লবি থেকে শুরু করে বড় ব্যবসাদারদের মাতব্বরি সেখানে প্রশ্নাতীত। সমবায় নিয়ে আশা করি, অনেকেই আরো বহু বিষয়ে সমীক্ষা চালাবেন। কিন্তু আপাতত সমবায়ের যে বৈশিষ্ট্যগুলি সর্বত্র একই ধরনের সেগুলিকে নিয়েই – যেমন সেচের বন্দোবস্ত, সার-বীজ-কৃষি সরঞ্জাম সরবরাহ, কৃষি উন্নয়ন, বীজ উৎপাদন ইত্যাদি-সমীক্ষা চালানো উচিত। একটি একটি বিষয় ধরে সমীক্ষা, আর তার মধ্যেই ধরা পড়বে যে ছো‌ট ছোট দুর্নীতি ও অনিয়ম, তার বিরুদ্ধে প্রচার আন্দোলন চালিয়েই আমরা গ্রাম জীবনে ‘পঞ্চায়েতের’ পরই যে গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা, সেই সমবায় সংগঠনে হস্থক্ষেপ করে গ্রামীণ গরিবদের আরো ঐক্যবদ্ধ করতে পারি।

– মুকুল কুমার     

saagae

(৮ অক্টোবর বৃহস্পতিবার ৮৩ বছর বয়সী ফাদার স্ট্যান স্বামীকে এনআইএ গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারির দু’দিন আগে একটি ভিডিও বার্তা স্ট্যান স্বামী আমাদের সকলের উদ্দেশে রেকর্ড করেন যা তাঁর সাথিরা প্রকাশ করেছেন। ইংরেজিতে বলা কথাগুলি বাংলা অনুবাদে আমরা তুলে দিচ্ছি।)

এই মুহূর্তে কীরকম পরিস্থিতির মধ্যে আছি সেকথা বলে আমি এই ভিডিওটা শুরু করতে চাই। এই সময়ে এনআইএ আমাকে জেরা করছে। ইতিমধ্যেই ওরা আমাকে ১৫ ঘন্টা জেরা করে ফেলেছে। তারপরও ওরা আমাকে মুম্বাই যেতে বলছে। আমি বলেছি যে আমি মুম্বাই যাব না, কেন যাব না সে কারণ পরে জানাব।

এবারে ঝাড়খণ্ড রাজ্য গঠিত হওয়ার পশ্চাদপটে ঝাড়খণ্ডে আমার সক্রিয়তার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে দু’একটি কথা। হ্যাঁ, সকলেই ঝাড়খণ্ড চেয়েছিল, কিন্তু আরও কিছু বিষয় তো ছিল। বিশেষ করে উচ্ছেদের প্রশ্ন। খনি খনন, দুর্ঘটনা, শহর গড়া বা জলাধার নির্মাণে ভূমিহারা হওয়ার প্রশ্ন। জনসাধারণের ভরসা জাগানোর কোনও রকম উদ্যোগই ছিল না। ক্বচিৎ কদাচিৎ … সামান্য কিছু ক্ষতিপূরণ তাদের দেওয়া হত। তাই আমরা এই প্রশ্নগুলোকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিলাম এবং বললাম যে তরুণ প্রজন্ম এগুলিকে জীবন-মরণ সংগ্রাম হিসেবে দেখে লড়াই চালিয়ে সমাধা করতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় ভারতের সংসদে অত্যন্ত কার্যকরী কিছু বিধি-বিধান পাস হয়। বিশেষ করে PESA আইন, যে আইনে গ্রাম সভাগুলির হাতে বিশেষ ক্ষমতা অর্পন করা হয়, গ্রামে যে কোনও কিছু করতেই গ্রামসভার সাথে আলোচনা ও সম্মতি বাধ্যতামূলক করা হয়। অন্যটি হল জমি অধিগ্রহণ আইন। এই আইনে প্রথমবার মানুষের, জমির মালিকদের সম্মতি নেওয়া ও ন্যায্য ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রয়োজনীয়তাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তো, এইসবের মধ্যে দিয়ে আমাদের জন্য কিছু রাস্তা খুলে যায় এবং সাধারণ মানুষ তাদের অধিকার দাবি করতে শুরু করে। কিন্তু যেই তারা দাবি জানানো শুরু করে ওমনি তাদের কারাগারে নিক্ষেপ করা হতে থাকে।

সুতরাং, ২০১৭ সালে, যাকে যাকেই আমি চিনি তাদের সকলকে, কেবল ঝাড়খণ্ডে নয়, বরং মধ্য ভারতের সব আদিবাসী রাজ্যগুলিতেই — মধ্য প্রদেশ, ছত্তিশগঢ়, ঝাড়খণ্ড, উড়িষ্যা ও বাংলা — আমি আহ্বান জানাই। এভাবে আমরা একত্রিত হই। পার্সেকিউটেড প্রিজনার্স সলিডারিটি কমিটি নামে একটি সংস্থা গঠন করি আমরা, এবং তার মাধ্যমে আমরা পরিকল্পনা করি — প্রথমে এই সবক’টি রাজ্যের বিচারাধীন বন্দীদের সম্পর্কে তথ্যানুসন্ধান চালানো ও তারপর সুবিচার পেতে আইনী পদক্ষেপ নেওয়া। এই প্রক্রিয়ায় আমি, জেলে পচতে থাকা ৩০০০ আদিবাসী যুবর পক্ষ থেকে, ঝাড়খণ্ড রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ঝাড়খণ্ড হাই কোর্টে মামলা করি। রাষ্ট্রের সাথে এই আমার সংঘাত, এবং ওরা আমাকে রাস্তা থেকে সরাতে চাইল। তা করার একটা উপায় হল কোনও সিরিয়াস কেসে আমাকে জড়িয়ে দেওয়া। এবং অতঃপর এই মামলা, এরকমই হল — ভীমা কোরেগাঁও, যে জায়গায় আমি জীবনে কখনও যাইইনি — আমাকে সেখানে অভিযুক্ত করা হল, আমার বাড়িতে দু’বার রেইড করা হল। প্রথমবার করেছিল পুণে পুলিশ, তারপর এনআইএ মামলাটি জোর করে নিজের হাতে নিল। ওরা আমাকে জুলাই মাসে ৫ দিনে ১৫ ঘন্টা জেরা করেছে। আমার বায়োডেটা ছাড়াও পিপিএসসি সম্পর্কে কিছু তথ্য, পাথালগাঢ়ি আন্দোলন সম্পর্কে, ভীমা কোরেগাঁও আন্দোলন ইত্যাদি সম্পর্কে তাঁরা যা জানতে চেয়েছে তা জানিয়েছি। এই জেরার প্রক্রিয়ায় যাদের সাথে পরিচয় হয় তাদের মধ্যে কেউ কেউ আমাকে কিছু জিনিস দেখাতে শুরু করে যেগুলো নাকি তারা আমার কম্পিউটার থেকে খুঁজে বের করেছে। এমন কিছু জিনিস যেগুলিতে, আপনারা জানেন, মাওবাদীরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করছে এবং সেখানে কিছুক্ষেত্রে আমার নাম উল্লিখিত হয়েছে। সুতরাং তারা বলল, “কোথায় তোমরা মিট করেছিলে?” আমার প্রথম প্রশ্ন ছিল, “কে এটা লিখেছে? কাকে লিখেছে? কত তারিখে লিখেছে? লেখার নীচে কি কোনও স্বাক্ষর আছে?” এসব কিছুই সেখানে ছিল না। সুতরাং আমার সামনে যা রাখা হয়েছিল সেগুলির প্রত্যেকটিকে আমি অস্বীকার করি, কেবল একটি ছাড়া, যেখানে সুধা ভরদ্বাজ ও আমার কথোপকথন আছে যেখানে — আমরা দু’জন পিপিএসসি’র যুগ্ম আহ্বায়ক — আমরা ভারতের সব মানবাধিকার সংগঠনগুলির কাছে পিপিএসসি সম্পর্কে বুঝিয়ে ব’লে হাতে হাত মেলানোর আহ্বান জানিয়েছিলাম যাতে এই কাজে যৌথ উদ্যোগ তৈরি হয়। তো, ওইসব খুঁজে বের করা জিনিসগুলি আসলে আমার কম্পিউটারে প্রক্ষিপ্ত হিসেবে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে, তাই আমি সে বিষয়ে স্পষ্টত সঠিক অবস্থান নিয়েছিলাম।

পরিশেষে, ওরা আমাকে আরও জেরা করার জন্য এখন মুম্বাই যেতে বলছে যা আমি প্রত্যাখ্যান করেছি। কারণ … আমার এই বয়স, আমার নির্দিষ্ট কিছু অসুস্থতা আছে, মহামারীতে দেশ আক্রান্ত, এবং ঝাড়খণ্ড সরকার স্বয়ং নির্দেশ দিয়েছে বয়ঃবৃদ্ধরা যেন জনসমাগমে না যান বা বাইরে ভ্রমণ না করেন। আমি নিজেও কোনও ঝুঁকি নিতে চায় না, অন্যদিকে এনআইএ চাইলে আমি আরও জেরার জন্য প্রস্তুত আছি, কিন্তু তা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে। এটা আমি ওদেরকে জানানোর জন্যই বলছি এবং আশা করছি সামান্য মানবিক বোধ বজায় থাকবে, যদি তা না থাকে তাহলে আমি প্রস্তুত, এবং আমি আশা করি যারা আমাকে চেনে জানে বা আমার সম্পর্কে ভাবিত তারা সকলেই প্রস্তুত, যা হবে তার মুখোমুখি হতে।

এই কথা বলে আমি শেষ করব যে আমার সাথে যা ঘটছে তা কেবল আমার সাথেই ঘটছে তা নয়, এটা আরও বড় একটি প্রক্রিয়া যা দেশ জুড়ে ঘটছে। আমরা সকলেই জানি কীভাবে বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীদের, আইনজীবীদের, লেখক ও কবিদের, আন্দোলনকর্মী আর ছাত্রছাত্রী নেতাদের – সকলকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হচ্ছে কারণ তাঁরা ভারতের ক্ষমতাসীনদের প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন বা বিরুদ্ধতা ব্যক্ত করেছেন। সুতরাং আমরা এই প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি। ফলত এক অর্থে আমি খুশিই যে আমিও এই প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি কারণ আমি মোটেই নীরব দর্শক নই, বরং আমিও অংশীদার, এই খেলার অংশ। যে কোনও মূল্যই চোকাতে হোক না কেন, আমি প্রস্তুত।

মনযোগ দেওয়ার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ।

bddkand

গত ১১ অক্টোবর কমরেড বিমান বিশ্বাসের প্রথম মৃত্যু বার্ষিকীতে এক স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হলো তাঁর জন্মভূমি তথা কর্মক্ষেত্র ন’পাড়া অঞ্চলের কালীনগর গ্রামে। ভাবগম্ভীর পরিবেশে অনুষ্ঠিত এই স্মরণসভায় উপস্থিত ছিলেন এই এলাকার পার্টি ও আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত কর্মী সমর্থক দরদী মানুষেরা, বিমান বিশ্বাসের সাথে যাদের ছিলো আত্মিক সম্পর্ক। তিনি ছিলেন অত্যন্ত বড় মাপের একজন মানুষ। আজকের জাতপাত ও সাম্প্রদায়িক বিভাজনের এই পরিবেশে তাঁর দৃঢ় মানসিকতা আমাদের পাথেয় হয়ে থাকবে। বললেন তাঁর দীর্ঘদিনের সহকর্মী পার্টির নদীয়া জেলা কমিটি সদস্য ধনঞ্জয় গাঙ্গুলী। তিনি আরও বললেন, বিমানের সাথে জনগণের নিবিড় যোগাযোগ ছিলো, সে বলতো ছোটখাটো গ্রামীণ দ্বন্দ্বের বিষয়গুলি উপরিস্তরে এ্যাজেন্ডা না বানিয়ে নীচুতলাতেই সমাধান করে নিতে হবে। যারা একসময় আমাদের বিরোধিতা করেছে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তারা স্বপক্ষেও আসতে পারে। সেই মানসিকতা নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। নদীয়া জেলা ও রাজ্য কমিটি সদস্য কাজল দত্তগুপ্ত বলেন, এখন চারিদিকে অনুপ্রেরণার কথা শুনতে পাওয়া যায়। আমাদের পার্টি ও বিস্তৃর্ণ এই এলাকায় সাধারণ মানুষের কাছে বিমানদাই ছিলো অনুপ্রেরণা। গরিব মানুষকে রাজনীতির একেবারে কেন্দ্রে নিয়ে আসার দক্ষতা তার ছিলো। গ্রামীণ পরিস্থিতির সমস্ত দিকগুলির উপর নিখুঁত খোঁজখবর রাখতেন, অদ্ভূত এক দূরদর্শিতা তাঁর ছিলো। তিনি আমাদের এই সমস্ত শিক্ষা দিয়ে গেছেন।শুরুতে লাল পতাকা উত্তোলন করা হয়।  বিমানদার প্রতিকৃতি ও শহীদ বেদীতে মাল্যদান করেন কালীনগর গ্রামের বিমানদার সহকর্মী ইরাবুল মন্ডল, কালো হোসেন, সোনাতলা গ্রামের নজরুল ঘরামি, গিয়াসুদ্দিন সেখ, ধুবুলিয়া এরিয়া কমিটি সম্পাদক শঙ্কর রায়, মুড়াগাছা লোকাল কমিটি সম্পাদক হবিবুর রহমান প্রমুখ। বক্তব্য রাখেন হাবুল বিশ্বাস, আসান মন্ডল, ঠান্ডু সেখ, কলম বিশ্বাস সহ অন্যান্যরা। বিমানদা কীভাবে একনিষ্ঠভাবে পার্টি করে গেছেন, আপামর মানুষের সাথে যোগাযোগ রেখে চলতেন সেই সমস্ত দিকগুলি তারা তুলে ধরে বলেন, সারাটা জীবন ধরে তিনি শিখিয়ে দিয়ে গেছেন সংগ্রাম কাকে বলে। স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন সহিদুল মোল্লা। এছাড়াও আজকের পরিস্থিতি ও পার্টির সামনে যে চ্যালেঞ্জগুলি রয়েছে সেই বিষয় তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন রাজ্য কমিটি সদস্য জয়তু দেশমুখ। সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিবাদী শক্তি এবং এ রাজ্যে তৃণমূলের অপশাসনের বিরুদ্ধে পার্টির স্বাধীন গণভিত্তি গড়ে তোলার বিষয়টি আলোচনায় গুরুত্ব সহকারে উঠে আসে।

– জয়তু দেশমুখ     

varsa

গত ১২ অক্টোবর সোমবার বারাসাত কলোনি মোড়ের সন্নিকট সুভাষ ইনস্টিটিউটে সদ্য প্রয়াত গণশিল্পী প্রবীর বল স্মরণ এবং অশীতিপর কারাবন্দি বিপ্লবী কবি ভারভারা রাওয়ের কবিতার বাংলায় অনূদিত সঙ্কলন ‘সংকলিত কবিতা’ গ্রন্থপ্রকাশের এক মহতী অনুষ্টানের আয়োজন করা হয়েছিল ‘সম্প্রীতি মনন’ পত্রিকার তরফ থেকে। প্রথাগতভাবে প্রয়াত গণশিল্পীর স্মৃতির উদ্দেশে এক মিনিট নীরবতা পালন এবং প্রয়াত গণশিল্পীর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করা হয়। এদিন ‘সম্প্রীতি মনন’ পত্রিকার প্রয়াত প্রবীর বল স্মরণ সংখ্যাও প্রকাশিত হয়। এদিন ‘সম্প্রীতি মনন’ পত্রিকার এই প্রয়োজনীয় সংখ্যাটির আবরণ উন্মোচন করেন সিপিআই(এমএল) লিবারেশের-এর অন্যতম বরিষ্ঠ নেতা কার্তিক পাল। বিপ্লবী কবি ভারভারা রাও-এর ‘সংকলিত কবিতা’ গ্রন্থটির আবরণ উন্মোচন করেন একালের অন্যতম জনপ্রিয় গণশিল্পী ও কবি বিপুল চক্রবর্তী।

গত ২ অক্টোবর দীর্ঘ রোগভোগের পর প্রয়াত হন প্রবীর বল। তাঁর স্মরণে তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রবীর বল বিশেষ স্মরণ প্রকাশের উদ্যোগ নেন ‘সম্প্রীতি মনন’ পত্রিকার যুগ্মসম্পাদকের অন্যতম দীপক মিত্র। তেত্রিশ জনের লেখায় সমৃদ্ধ ‘সম্প্রীতি মনন’ প্রকাশের পাশাপাশি প্রকাশিত হয়েছে অন্ধ্রের বিপ্লবী কবি ভারভারা রাওয়ের ছাব্বিশটি কবিতার বাংলা অনুবাদের একটি মূল্যবান সংকলন। এই সংকলনের ভূমিকা লিখেছেন আর এক প্রবীণ ও যশস্বী কবি সব্যসাচী দেব। কারাবন্দি কবির উদ্দেশে নিবেদিত কবিতাটি লিখেছেন ডাবলিনের অধিবাসী কবি গ্যাব্রিয়েল রোজেনস্টক। এই ছাব্বিশটি কবিতার অনুবাদকদের মধ্যে রয়েছেন কবি শঙ্খ ঘোষ, বীতশোক ভট্টাচার্য, সুজিত ঘোষ (কিছুকাল আগে প্রয়াত), কাঞ্চনকুমার, আশা সেন, অলকানন্দা, প্রতীক, সুদীপ বসু প্রমুখ। বিপ্লবী এবং জনপ্রিয় কবি ভারভারা রাওয়ের একসঙ্গে এতগুলো কবিতা গ্রন্থবদ্ধ হয়ে বাংলায় বোধহয় এই প্রথম প্রকাশিত হলো।

এই অনুষ্ঠানে উপস্থিতির হার ছিল উল্লেখযোগ্য। কলকাতা এবং উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বিভিন্ন অংশ থেকে প্রচুর কবি, গায়ক, চিত্রশিল্পীরা উপস্থিত হয়ে এই অনুষ্ঠানটিকে সাফল্যমণ্ডিত করে তোলেন। দুটো বইয়ের স্টলও এই অনুষ্ঠানের উল্লেখযোগ্য সংযোজন। দুটি স্টল থেকেই উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বই-পত্রিকা বিক্রি হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

এই অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেষণ করেন বিপুল চক্রবর্তী-অনুশ্রী চক্রবর্তী, হালিশহর সাংস্কৃতিক সংস্থা, স্বপন চক্রবর্তী প্রমুখ। কবিতাপাঠে ছিলেন শোভনা নাথ, মুকুলদেব ঠাকুর, স্বপন চক্রবর্তী প্রমুখ। প্রবীর বলের দীর্ঘ গণসঙ্গীত জীবনের নানাদিক তুলে ধরে স্মৃতিচারণ করেন কার্তিক পাল ও আরও অনেকে।

সমগ্র অনুষ্ঠানটি সুচারুভাবে পরিচালনা ও সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন ‘সম্প্রীতি মনন’ পত্রিকার অন্যতম সম্পাদক অমিত দাশগুপ্ত।

– অশোক চট্টোপাধ্যায়     

mamhali

৮ অক্টোবর সন্ধ্যায় হালিসহর সাংস্কৃতিক সংস্থা-র আয়োজনে গণসংস্কৃতি আন্দোলনে অবিচল সৈনিক, পশ্চিমবঙ্গ গণসংস্কৃতি পরিষদ-এর প্রাক্তন সভাপতি প্রয়াত প্রবীর (মনাদা) বল স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রয়াত সাথীর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান ও তাঁর স্মৃতির প্রতি নীরবে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের পর সঙ্গীত-ভাষ্য ও কবিতা পাঠ এবং বক্তব্য ইত্যাদির মধ্য দিয়ে স্মরণ অনুষ্ঠান ভাবগম্ভীর হয়ে ওঠে। অনুষ্ঠানের শুরুতে ও শেষে হালিসহর সাংস্কৃতিক সংস্থা লেখা ও সুরকার মনাদার কিছু গান পরিবেশন করে। বক্তব্য পেশ করেন সাগর চ্যাটার্জী। পথসেনা সমবেত প্রয়াসে  মনাদার গান উদাত্ত কণ্ঠে সুন্দরভাবে পরিবেশন করে। সিতাংশু চক্রবর্তীর মনাদাকে স্মরণ করে যে লেখা পাঠান তা পাঠ করা হয়। সুদীপ দস্তিদার ও বান্ধবী মজুমদার এক গভীর আবেগে-আবেশে রবীন্দ্র সঙ্গীত পরিবেশন করেন। সরিৎ (বাবলি) চক্রবর্তী মনাদার পাশে থেকে পারর্ফম করার অভিজ্ঞতার কথা বলেন আর সুন্দরভাবে মনাদার গান গেয়ে শোনান। অভিজিত (রাণা) সেনগুপ্ত আজকের পরিপ্রেক্ষিতে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন। রবি সেন ও সুব্রত (বাপি) সেনগুপ্ত মনাদার স্মরণে বিভিন্ন না-জানা দিক এবং সাংস্কৃতিক কর্মী ও সংগঠন সম্পর্কে স্বচ্ছ ইতিবাচক বক্তব্য পেশ করেন। সমগ্র অনুষ্ঠানটি যথাযথভাবে সঞ্চালনা করেন অর্ণব চক্রবর্তী। বেশ কিছু দর্শক উপস্থিত হয়ে অনুষ্ঠানটিকে সার্থক করতে সাহায্য করেন। শব্দপ্রেক্ষণে সাহায্য করেছেন শান্তনু। সবশেষে, সবাইকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে স্মরণ অনুষ্ঠান শেষ হয়।

nil

 

com nilu

আচমকা বিনা মেঘে বজ্রপাত ঘটিয়ে অকালেই চলে গেলেন নীলাঞ্জন ভট্টাচার্য, নীলু হিসাবেই যিনি সর্বাধিক পরিচিত। লকডাউন ঘোষিত হওয়ার কিছুদিন আগে তিনি তাঁর উত্তর ২৪ পরগনার বাড়িতে এসেছিলেন, কিন্তু  নিজ কর্মক্ষেত্রে তার আর ফিরে যাওয়া হল না। উচ্চ ডায়বেটিস তার কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্থ করে। পাশাপাশি শ্বাসকষ্ট জনিত রোগেও তিনি ভুগছিলেন। উত্তর ২৪ পরগনার জেলা পার্টি কমিটির তরফ থেকে তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সংক্রান্ত সাহায্য করা হয়। মাত্র ৪৭ বছর বয়সে, হাবরা হাসপাতালে ১১ অক্টোবর, রাত ১০.৫৫ মিনিটে তার জীবনাবসান হলো। পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য নীলু রেখে গেলেন তার স্ত্রী ও ভাই বোনদের। ওড়িশা রাজ্য কমিটির সদস্য, সারা ভারত কৃষি ও গ্রামীণ শ্রমিক সমিতির জাতীয় কার্যকরী কমিটির সদস্য নীলাঞ্জন বিগত কয়েক দশক ধরে পার্টির সর্বক্ষণের কর্মী ও সংগঠক হিসাবে ওড়িশা রাজ্যে কাজ করে আসছেন। কালাহান্ডিতে জমি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকায় নীলু গ্রেপ্তার হন এবং মানসায় পার্টি কংগ্রেসে যোগ দিতে পারেননি। প্রচন্ড পরিশ্রমী, একনিষ্ঠ, নীরবে কাজ করে যাওয়া এক কর্মী হিসাবে নীলাঞ্জনের পরিচিতি ছিল। ভূবনেশ্বর পার্টি অফিসের রক্ষাণাবেক্ষণে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এরকম এক পার্টি কর্মীর অকাল প্রয়াণে গোটা পার্টির অপূরণীয় ক্ষতি হলো।

কমঃ নীলাঞ্জন ভট্টাচার্য অমর রহে।

– অতনু চক্রবর্তী    

bidsarre

সারা বাংলা আদিবাসী অধিকার ও বিকাশ মঞ্চ প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম, এই মঞ্চের হুগলি জেলা কমিটির সহ সভাপতি এবং সিপিআই(এমএল) লিবারেশন-এর ধনেখালি, পোলবা-দাদপুর এরিয়া কমিটির অন্যতম সদস্য কমরেড বিশ্বনাথ সরেন গত ১৪ অক্টোবর ভোররাতে কলকাতার পিজি সংলগ্ন রামরিক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। গত ২ অক্টোবর দুপুরে মাঠে কাজ করতে করতে কমরেড বিশ্বনাথদা গুরুতর অসুস্থ হয়ে যান, অসচেতন অবস্হায় মস্তিষ্কে প্রবল রক্তক্ষরণ সহ তাঁকে প্রথমে চুঁচুড়া সদর হাসপাতালে এবং পরে রামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৬ বছর।

২০০৯ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ পার্টির সদস্যপদ লাভ করেছিলেন কমরেড বিশ্বনাথদা। এর আগে তিনি সিপিআই(এম)-এর কৃষক সভার সংগঠকরূপে কাজ করতেন। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম ঘটনা পরবর্তীতে তিনি সিপিআই(এম)-এর সঙ্গ ত্যাগ করেন। 

আদিবাসী সমাজের ইতিহাস, জীবনচর্চা-জীবনবোধ নিয়ে তাঁর প্রখর জ্ঞান ছিল। কমরেড বিশ্বনাথ সরেন শুধুমাত্র একজন সুবক্তা ছিলেন না তিনি সাঁওতালিতে গান  গাইতেন চমৎকার। অত্যন্ত বিনয়ী ছিলেন।

আদিবাসী মঞ্চ গঠন করতে কমরেড সরেন কঠিন কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন। সমাজের অধিকার আদায়ের কোনো লড়াই হোক কিংবা আদিবাসী সংস্কৃতির কোনো সামাজিক বহিঃপ্রকাশ; বিশ্বনাথদা সর্বদা থাকতেন সামনের সারিতে। বিগত লোকসভা নির্বাচনে বিশেষত আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সঙ্গে পার্টির সংযোগ স্থাপনে কমরেড পাগান মুর্মুর পাশাপাশি সাথী বিশ্বনাথদাও সমান অবদান রেখেছিলেন।

তাঁর শেষকৃত্যে শেষ পর্যন্ত উপস্থিত ছিলেন অসংখ্য মানুষ। ব্যাণ্ডেল চার্চের কবরস্থানে তার মরদেহ কফিনবন্দী রইল! 

কমরেড বিশ্বনাথ সরেন অমর রহে।

- সজল অধিকারী      

sredde

শিলিগুড়ি লোকাল কমিটির সদস্য, শিলিগুড়ি সাংস্কৃতিক মহলের পরিচিত মুখ কমরেড সুরজিত অধিকারীর স্মরণসভা ১০ অক্টোবর দার্জিলিং জেলা পার্টি অফিসে অনুষ্ঠিত হয়। একদিনে স্মরণ করা হয় সদ্য প্রয়াত গণ সঙ্গীত শিল্পী প্রবীর বলকে। কমরেড সুরজিত অধিকারীকে স্মরণ করতে গিয়ে জেলা সম্পাদক অভিজিত মজুমদার, শিলিগুড়ি লোকাল কমিটির সদস্য কবি গৌতম চক্রবর্তী, জেলা সদস্যা মীরা চতুর্বদী, রাজ্য কমিটির সদস্য বাসুদেব বোস সকলেই তাঁর সৃজনশীলতার কথা, বিভিন্ন নাগরিক উদ্যোগে কথা, পার্টি সংগঠক হিসেবে তার যে অবদান সেগুলি তুলে ধরেন। বর্তমান সময়ে ফ্যাসিস্ট আগ্রাসনকে প্রতিহত করতে বিভিন্ন পার্টি কর্মসূচীর পাশাপাশি বিভিন্ন নাগরিক উদ্যোগের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিরোধের সংস্কৃতি, গণ মানুষের সংস্কৃতির বিকল্প ভাবনার যে স্বপ্ন কমরেড সুরজিত অধিকারী আমৃত্যু দেখে গেছেন, সেই গণ সংস্কৃতি পরিষদের একটি জেলা কাঠামো তৈরির প্রস্তাবও জেলা সম্পাদক উপস্থিত কমরেডের সামনে রাখেন।

sreeasusa

বজবজ গ্রাম লোকাল কমিটির কর্মী কমরেড সুশান্ত রায় প্রয়াত হন গত ২৮ জুলাই। কমরেড সুশান্ত রায়কে মনে রেখে গত ১০ অক্টোবর তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে স্মরণ সভা হয় দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা অফিসে। উপস্থিত ছিলেন পাটির জেলা সম্পাদক কমরেড কিশোর সরকার, বজবজ গ্ৰাম লোকালের সম্পাদক কমরেড ইন্দ্রজিৎ দত্ত, জেলা নেত্রী কমরেড দেবযানী গোস্বামী, কমরেড কাজল দত্ত সহ গ্রাম লোকাল কমিটির কর্মীরা।

ddeee

উস্থি-ডায়মন্ড লোকাল কমিটির সদস্য কমরেড হরেন মন্ডল প্রয়াত হন গত ২০ এপ্রিল। কমরেডকে মনে রেখে গত ২ অক্টোবর তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে স্মরণ সভা হয় উস্থিতে। উপস্থিত ছিলেন পার্টির জেলা সদস্য কমরেড দিলীপ পাল, কমরেড নবকুমার বিশ্বাস, কমরেড জগদীশ মন্ডল সহ উস্থি-ডায়মন্ড লোকাল কমিটির কর্মীরা।

gaakut

চিৎকার করে গালাগালি করছিলো বুড়ো মানুষটা-হাড়জিরজিরে চেহারায় পাঁজর কাঁপিয়ে একের পর এক অভিসম্পাত আছড়ে পড়ছিলো গঙ্গা আর গঙ্গার ভাঙন দেখতে আসা মানুষগুলোর উপর। অনেকটা দূরত্বে থেকেও ভিতরে ভিতরে কুঁকড়ে যাচ্ছিলো ঋষি আর সিদ্ধার্থ। এবারের সঙ্গী অসীমদা তাদেরকে বলে, “কান দিও না, আবার উত্তর করতেও যেও না... হাওয়া এখনো গরম আছে”। চতুর্দিকের আমবাগানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ঘরকন্নার উপকরণ, বিচালির আঁটি, ভাঙা ইঁটপাথরের টুকরো – জায়গাটা কালিয়াচক ব্লক৩-এর অন্তর্গত বীরনগর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন দুর্গারামটোলা আর চিনাবাজার গ্রাম। আসলে, গঙ্গার ধারে ধরে এগোতে থাকলে তিনটি গ্রাম পরপর চোখে পড়ে – ভীমাগ্রাম, দুর্গারামটোলা আর চিনাবাজার। প্রথমটি কোনমতে রক্ষা পেলেও দ্বিতীয় আর তৃতীয় গ্রামদুটি মানচিত্র থেকে প্রায় মুছে যাওয়ার পথে। ৩০ আগস্ট রবিবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা আর ৩ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুর ২টো থেকে ৪টে পর্যন্ত ভয়াবহ গঙ্গা ভাঙন এই দুই গ্রামের প্রায় ২০০ পরিবারকে আক্ষরিক অর্থেই পথে বসিয়ে দিয়েছে – এই সময়কালের মধ্যেই প্রায় ২৫০টি বাড়ি হারিয়ে গেছে গঙ্গাগর্ভে।

বৈষ্ণবনগরের ষোলো মাইল আর আঠারো মাইলের মাঝে অপেক্ষাকৃত অখ্যাত স্টপেজ সতেরো মাইল-সেখানেই দাঁড়াতে বলেছিলেন অসীমদা। এই দলে তিনি সকলের থেকে বয়সে বড়ো, অভিজ্ঞতাতেও – স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ার সুবাদে জীবন তাঁকে ঘাড় ধরে শিখিয়ে দিয়েছে অনেককিছু ... শিকড়ের টান এড়াতে না-পারা অসীমদা যে কোনো বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নেশা এই মধ্য চল্লিশেও এড়াতে পারেন না। গাড়িতে উঠেই তিনি সরাসরি বলে দেন – সতেরো মাইলের রাস্তা ভাঙাচোরা বটে, কিন্তু এই রাস্তা ধরে এগোলে পুরো এলাকাটা দেখা যাবে ... আর গাড়ি বেশিদূর এগোবেও না, সামনের একটা বড়ো বটগাছের নিচে গাড়ি রেখে হেঁটেই যেতে হবে, রাস্তা গঙ্গা কেটে দিয়েছে। ঋষি জানতে চায়, মালদা জেলার ভাঙন মানচিত্রে এই এলাকা তো নতুন সংযোজন, এখানে শেষবার ভাঙন কবে হয়েছে? অসীমদা তৎক্ষণাৎ বলেন, ২০১৬-১৭ সালে পুজোর আগে আগে চিনাবাজার সংলগ্ন সরকারটোলা আর দুর্গারামটোলা গ্রামদুটির প্রায় দুশো বাড়ি রাতারাতি তলিয়ে গিয়েছিল গঙ্গাগর্ভে। এনটিপিসি-সেচ দপ্তর (পড়ুন, ‘কেন্দ্র-রাজ্য’) বিস্তর চাপান উতোরের পর সরকারটোলা গ্রামের ভাঙনবিধ্বস্ত অংশটি ভরাট করা হয়েছিল ফারাক্কা এনটিপিসি’র ফ্লাই অ্যাশ দিয়ে। এর সঙ্গে পরিকল্পনা করা হয় ঐ অংশে একটি মার্জিনাল বাঁধ তৈরি করতে হবে। কোনোমতে অস্থায়ী বাঁধের স্ট্রাকচার খাড়া করা হলেও কাজ যে তিমিরে সেই তিমিরেই থেকে গেছে আজও। আর ঐ অস্থায়ী মার্জিনাল বাঁধের দুর্বল অংশ দিয়ে ৩০ আগস্ট প্রথম দফায় হু-হু করে জল ঢুকতে থাকে চিনাবাজার এলাকায়। কয়েকঘন্টার মধ্যে চল্লিশটি বাড়ি চলে যায় গঙ্গাগর্ভে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে সতর্কতামূলক প্রচার শুরু হয়। পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কে নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে শতাধিক পাকা বাড়ি ভেঙে শেষ সম্বল বাঁচানোর চেষ্টা শুরু করেন। সেই বিবরণ স্তব্ধ হয়ে শুনছিলো ঋষি আর সিদ্ধার্থ। তারা হিংস্র নদী দেখেছে, কিন্তু হিংস্রতর জীবনসংগ্রামের এই ছবি তাদের কাছে অচেনা। বৃদ্ধ চিৎকার করে বলতে থাকেন, গ্রামের মানুষ ছাড়া যারা এখানে আসছে, তাদের প্রত্যেকের থেকে একটা করে জিনিস কেড়ে নিলেই নিজেদের ঘর সেজে উঠবে, আর অন্যান্যদের মজা দেখাও বন্ধ হয়ে যাবে!

অসীমদা এলাকার মানুষদের সঙ্গে কথা বলে ঋষিকে বোঝান, ২০১৬-১৭ থেকে ফারাক্কা ব্যারেজ কতৃপক্ষ মার্জিনাল বাঁধটি তৈরি করার দায়িত্ব নিলেও সে কাজ একচুল এগোয়নি। কোনোমতে বালির বস্তা ফেলে জোড়াতালি না দিয়ে পাথর বা বোল্ডার ফেলে একটা স্থায়ী সমাধান করাই যেত ... কাটমানি-কমিশনের অচ্ছেদ্যচক্র বিষয়টাকে সেদিকে গড়াতে দেয়নি। অনেকে আবার এও বলেন, ফারাক্কা ব্যারেজের ১০৮ ও ১০৯ নম্বর গেট খুলে দেওয়ার ফলে এই ‘ম্যান মেড’ বন্যা পরিস্থিতির উদ্ভব ... ঋষির মাথায় এসব কিছু ঢোকে না। তার মনে পড়ে যায় মিহির সেনগুপ্তের অসামান্য উপন্যাস “সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম”-এর সেই শুরুর বিবরণের কথা, দুর্গাপুজোর পঞ্চমী থেকে গ্রামে বন্যার জল ঢুকছে, আর ফাঁকা দুর্গা মণ্ডপে দাঁড়িয়ে এক বৃদ্ধ একেবারে মা-বাপ তুলে গালাগাল করছেন মা দুর্গাকে ... কোন ক্রোধ ‘সংগত’, কোনটাই বা ‘অসংগত’-কে তার বিচার করবে? নানা দলীয়-উপদলীয় রাজনীতির ছক? আবহমান জনজীবনের লোকবিশ্বাস? নাকি ইতিহাসের সেই অধিদেবতা, যিনি ভূগোল নিয়েও লোফালুফি খেলেন তাঁর অনেকগুলো অদৃশ্য হাতে?

দ্বিতীয় দফায়, ৩ সেপ্টেম্বর দুপুরের দিকে একই জায়গায় আছড়ে পড়ে ভাঙনের দ্বিতীয় পর্যায়, আবারও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। এই প্রবল বিপর্যস্ত সময়ে ট্রাক্টরে করে জিনিসপত্র সরানোর কাজ করেছিলেন ফিরোজ শেখ, আনমনে একা একাই বসেছিলেন জলের ধারে। ছোটখাটো  শক্তপোক্ত চেহারা ... রং জ্বলা নীল গেঞ্জি আর কালো বারমুডা, তার উপর সাদা অক্ষরে লেখা : ‘আপনা টাইম আয়েগা’। নিজের মনে কথা বলার মতো করেই ওদের তিনজনকে বলতে থাকেন অনেক কথা ... প্রত্যেকবার এই সময়টাতেই ভাঙনটা হয়। সবাই জানে, তবু কেউ কিছু বলেও না, করেও না ... সব শেষ হয়ে যাওয়ার পর চাল ডালের প্যাকেট দিতে আসে ... এভাবেই চলছে, আর এভাবেই চলবে ... সমস্যা থেকে পালানো যেতে পারে বড়জোর, সমস্যা থেকে মুক্তি নেই।

সিদ্ধার্থ পরিস্থিতি একটু হালকা করার জন্য বারমুডার লেখাটার দিকে আঙুল দেখিয়ে বলে, “শুনেছ গানটা? আপনা টাইম আয়েগা ... সে-ই গান, না?” ফিরোজ হাসে না, তিনজনের দিকে স্থির চোখে তাকিয়ে বলে, “তোমরা শুনেছ ভালো করে? আমাদের কথাই তো বলা হয়েছে ও গানে, তু নাঙ্গা হি তো আয়া হ্যায় / ক্যা ঘন্টা লেকে জায়েগা?” গঙ্গার তেজি হাওয়া যেন মুহূর্তের জন্য থমকে যায় ফিরোজের উত্তরে ... অসীমদা ফিরোজের দিকে একটা সিগারেট এগিয়ে দেওয়ার পর এই গুমোট ছবিটা ভাঙে, সবাই স্বাভাবিক নিঃশ্বাস ফেলে! ঋষি সকলের অলক্ষ্যে সিদ্ধার্থের মাথার পিছনে একটা আলতো চাঁটি মারে, ঠিক হয়নি ... একেবারেই ঠিক হয়নি! মানুষের যন্ত্রণা নিয়ে শিল্প হতে পারে, কিন্তু যন্ত্রণাটাই যখন শিল্প হয়ে ওঠে – তখন চুপ করে থাকাটাই নিয়তি – আর সেটা মেনে নিতেই হয়। বৃদ্ধের ক্লান্ত চিৎকার থেমেছে ... কয়েক পুরুষের ভিটেমাটি ছেড়ে যাওয়ার আশঙ্কার মেঘ যখন সমবেত মুখগুলোয় অন্ধকারের ছায়া ফেলেছে, তখনই আবার গঙ্গার এলোমেলো হাওয়ার ঝাপটা সকলকে নাড়িয়ে দেয়। ত্রিপলটানা একটুকরো গেরস্থালির বাঁশের খুঁটি থেকে ঝোলানো বিবর্ণ খাঁচায় ময়না ক্রমাগত ডানা ঝাপটায় . মালকিনের গলা নকল করে তারস্বরে চেঁচিয়ে ওঠে : “কুটি যাচ্ছেন মা? ওম্মা, কুটি যাচ্ছেন?” হাওয়ায় হাওয়ায় সে ডাক একসময় হারিয়ে যায় ... ফিরতি পথে নওদা-যদুপুরের কাছে কায়স্থপাড়ার দুর্গামণ্ডপে অসীমদার আগ্রহে সামান্য সময় দাঁড়িয়েছিলো তারা। তখনই শ্রাবণ সংক্রান্তির মনসাপূজা উপলক্ষে নারী-পুরুষ দুই ভক্তা বিচিত্র অপরিচিত সুরে  মনসার গান আরম্ভ করে তাদের সামনে। সিদ্ধার্থ বাংলা সাহিত্যের ছাত্র ... সে বাকিদের বোঝায় : রাঢ়ের গ্রামাঞ্চলে নিম্নবর্গের মধ্যে প্রচলিত মনসা গানে কোনো অন্ত্যমিল নেই, একটিমাত্র ধ্রুবপদকে কেন্দ্র করে তাদের আকুল আকাঙ্ক্ষার বিস্তার ... তার কথায় মাথা নাড়তে নাড়তে ঋষি খেয়াল করে, “আরে বালি তোর বদন দেখিয়া প্রাণ যায় রে”র ধুয়াটুকু সম্বল করে তারা দুজন এক গভীর বিষাদাশ্রয়ী গান গাইতে গাইতে আশা আকাঙ্ক্ষার পূর্ণতা, রোগ শোক থেকে মুক্তি, পরমায়ু বৃদ্ধি ও মঙ্গলের অঙ্গীকার প্রার্থনা করছে ... অসীমদা খোঁজ নিয়ে জানান, সরকারটোলায় তাদের বাড়ি টেনে নিয়েছিল গঙ্গা! সেই ভাঙন থেকে, তার স্মৃতি থেকেও তো মুক্তি পেতে চায় তারা, হয়তো মুক্তি দিতেও চায়, ঋষি ভাবে।

চকিতে তার মনে পড়ে যায় নিজের অভিজ্ঞতার কথা-মালদা টাউন স্টেশন থেকে কলকাতাগামী ট্রেনে উঠে ফারাক্কা ব্রিজ এলেই বরাবর দরজার কাছে চলে যায় ঋষি। অভিজিৎ সেনের উপন্যাসে পড়া একটা দৃশ্যের কথা প্রত্যেকবার মনে পড়ে যায় তার, চল্লিশ হাজার কিউসেকের শব্দ আর স্রোতের মধ্যে কলার ভেলায় শোয়ানো এক আট-দশ বছরের বালকের মৃতদেহ। ঋষি স্পষ্ট দেখে, রঙিন কাগজ আর ফুল দিয়ে ভেলাটাকে একটা মঠের আকৃতি দেওয়া হয়েছে, আর তার মাথার উপরে একটা হলদে রঙের শোলার হাঁস। লকগেটের লোহার চাদরে ভেলাটি সেই মৃত বালকটিকে নিয়ে দোল খাচ্ছে, ঘুরছে, দেয়ালে ধাক্কা খাচ্ছে। কিন্তু ব্যারেজের প্রতিবন্ধকতা সেই বালককে তার মা-বাবা-জ্ঞাতিদের অভীপ্সা মতো নেতাধোপানির ঘাটে পৌঁছতে দেয়নি ... যে পরিকল্পনাহীন প্রতিবন্ধকতা বছরের পর বছর একই ভাঙনের ছবি তৈরি করে – তারও কি দিশা থাকে কিছু? ঋষি ভাবে, আমরা তো কেউ নেতাধোপানির ঘাট পর্যন্ত পৌঁছতে পারি না ... কেন পারি না আমরা? সুজাপুরের জ্যাম কাটিয়ে জাতীয় সড়কে পড়েছে গাড়ি ... ঋষি অ্যাকসেলারেটারে চাপ বাড়ায় ... লেখা এখন হু-হু করে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তাকে!

– তপোমন ঘোষ     

ggaddd
খণ্ড-27
সংখ্যা-37