আজকের দেশব্রতী : ১ অক্টোবর ২০২০ (অনলাইন সংখ্যা)
essbabvew

(বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলার ষড়যন্ত্র মামলার সকল আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়ার রায় সম্পর্কে সিপিআই(এমএল)-র সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য)

১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর অযোধ্যায় ষোড়শ শতাব্দীর বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে অভিযুক্ত সকলকেই সিবিআই আদালত বেকসুর খালাস করে দিয়েছে। এই রায়টি, বাবরি মসজিদের জমিকে রাম মন্দির ট্রাস্টের কাছে হস্তান্তর করা সুপ্রিম কোর্টের রায়কেও ছাপিয়ে গিয়ে ভারতে ঘৃণা ছড়ানোর অপরাধের দ্বারা আক্রান্তদের জন্য ন্যায়বিচারের কফিনে চূড়ান্ত পেরেক। এই রায়গুলি বিদ্বেষ সৃষ্টির অপরাধের অপরাধীদের জন্য উৎসাহজনক, রায়টা তাদেরকে আশ্বস্ত করে যে তারা এ জাতীয় অপরাধের রাজনৈতিক ও বৈষয়িক ফল পুরোপুরি দায়মুক্তির সাথে উপভোগ করতে পারে।

বিজেপির প্রবীণ নেতা এল কে আদবানি, যার নেতৃত্বে ঠিক বাবরি মসজিদের জায়গাতেই রাম মন্দির নির্মাণের উগ্র দাবি তুলে রথযাত্রা সংগঠিত হয়েছিল। তিনি সহ অন্যান্য অপরাধীদের এই দাবিটির গর্ভেই মসজিদের কাঠামোটিকে ধ্বংস করার উন্মাদনা ছিল এবং রথযাত্রার নামে হিন্দু আধিপত্যবাদী হিংসাত্মক কার্যকলাপ চালানো হয়েছিল মুসলমানদের বিরুদ্ধে, যা বহু মুসলমানের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল। আদবানি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছিলেন তাঁর সমর্থকরা কীভাবে অত্যাধুনিক সরঞ্জাম ব্যবহার করে মসজিদটি গুঁড়িয়ে দিচ্ছিল। তবুও, আদবানি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ থেকে বেকসুর খালাস হয়ে গেছে। বাস্তবে সিবিআই আদালত বিজেপির এই প্রকাশ্য মিথ্যাচারকে সমর্থন করেছে যে, ধ্বংসটি নাকি স্বতঃস্ফূর্ত ছিল, পরিকল্পনামাফিক ষড়যন্ত্রের ফলাফল নয়। মসজিদটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে দেখে উমা ভারতী ও মুরলি মনোহর জোশীর উল্লাস করার ছবি ক্যামেরায় ধরা পড়েছিল। এই ধ্বংসলীলায় তারা তাদের ভূমিকা নিয়ে গর্ব করেছিল। তবুও তারা বেকসুর খালাস পেয়েছে। মুসলমানদের গণহত্যা এবং অন্যান্য মসজিদগুলোকেও এইভাবে ধ্বংস করার আহ্বান জানিয়ে সাধ্বী ঋতম্ভরার বিষাক্ত বক্তব্যগুলি জনসাধারণের জ্ঞাতব্যে আছে। তবুও সে বেকসুর খালাস পেয়েছে।

বিজেপি এবং আরএসএস ক্যাডাররা বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলার সাথে সাথে চিৎকার করেছিল “এক ধাক্কা অউর দো” (আর একটি ধাক্কা মারো)। এই হামলাগুলি কেবল মসজিদেই নয়, ভারতের সংবিধান এবং ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ সামাজিক বিন্যাস এই ধাক্কার লক্ষ্য ছিল। এই রায় একই অভিমুখে “আরও একটি ধাক্কা”।

– দীপঙ্কর ভট্টাচার্য, সাধারণ সম্পাদক, সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন  

delrad

উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথ ক্ষমতায় এলে সবর্ণ হিন্দুরা উল্লসিত হয়েছিল এবং তারা তাদের সেই বিজয়োল্লাস প্রকাশ করেছিল সাহারানপুরে একটি দলিত গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়ে। পরবর্তীতে অসংখ্য ছোট বড় ঘটনায় দলিতদের ওপর সবর্ণ হিন্দুদের অত্যাচারের এই রূপ দেখা গেছে যেখানে এই সামন্তী ধর্ষক-ঘাতকেরা শাস্তি পাওয়ার বদলে বিজেপি নেতাদের বাহবা পেয়েছে, আর ধর্ষিতা ও তার পরিবারের কন্ঠ স্তব্ধ করাতে পুলিশ প্রশাসনও ঝাঁপিয়ে পড়েছে। হাথ্রাসের নৃশংস ঘটনা তারই ধারাবাহিকতা। বিজেপি’র ‘রামরাজ্যে’ দলিত ও নারীর পরিণতি কী হতে পারে তা হাথ্রাসের ঘটনায় বোঝা যায়।

চারজন মিলে দল বেঁধে ধর্ষণ। জিহ্বা কেটে দেওয়া হল। মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দেওয়া হল। উচ্চপদস্থ আমলা বললেন “ফেক নিউজ”। সময়ে এফ আই আর নেওয়া হল না। এক সপ্তাহ ফেলে রাখা হল এইমসে না নিয়ে। শেষপর্যন্ত মৃত্যু হল। পরিবারকে মরদেহ দেওয়া হল না। পরিবারের লোকেদের আটকে রেখে গোপনে রাতের অন্ধকারে পুলিশ প্রহরায় পুড়িয়ে দেওয়া হল দেহ, প্রমাণ লোপাট করতে। হাথরাসের মনীষার মৃতদেহ এভাবে লোপাট করে দেওয়ার মাঝেই আরও একটি নৃশংস ধর্ষণ ও হত্যার খবর আসে সেই উত্তরপ্রদেশ থেকেই। বলরামপুরে একইভাবে এক দলিত যুবতিকে দলবেঁধে ধর্ষণ করে হাত-পা ভেঙ্গে মেরে ফেলে উচ্চবর্ণের যুবকেরা।

kolkata

 

ন্যাশনাল ক্যাম্পেন অন দলিত হিউম্যান রাইটস (একটি এনজিও)-র সমীক্ষায় প্রকাশ : ২৩% দলিত নারী (নাবালিকা ও শিশু সহ) ধর্ষিতা এবং তারা অনেকেই বারবার ধর্ষিতা হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নির্যাতনকারীরা ছাড় পেয়ে যাবে, শাস্তি হবে না — এটা ধরে নিয়ে এত বেপরোয়া হয়ে ওঠে। বাস্তবে ঘটেও তাই। যেমন ঘটেছিল উন্নাওয়ের মেয়েটির ক্ষেত্রে। মুখ্যমন্ত্রী আদিত্য নাথের বাসভবনের সামনে মা-মেয়ে গায়ে আগুন দেওয়ার পর পুলিশ এফ আই আর করতে বাধ্য হয়েছিল। যেমন ঘটেছে  হাথরাসের মেয়েটির ক্ষেত্রে । পুলিশ প্রথমে গুরুত্বই দেয়নি। পরে প্রবল বিক্ষোভের মুখে পড়ে ডায়েরি নিয়েছে। তাও ‘ইভ টিজিং’ বলে চালানোর চেষ্টা করেছে। উচ্চ বর্ণের অপরাধীরা এই ভাবেই জঘন্য অপরাধ করে পার পেয়ে যাচ্ছে বা লঘুদণ্ড পাচ্ছে। প্রশাসনের হাত তাদের মাথায় আছে। আর অন্যদিকে দলিত নিম্নবর্গের হওয়ায় নির্যাতিতারা উপযুক্ত বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। উত্তরপ্রদেশে লাগাতার এই নির্যাতন ঘটে চলেছে। গত ১৪ আগস্ট সন্ধ্যায় লখিমপুর খেরীতে ১৩ বছরের এক বালিকাকে শুধু ধর্ষণ নয়, চোখ উপড়ে, জিভ কেটে, শ্বাসরোধ করে খুন করে দুষ্কৃতীরা আখ খেতে ফেলে রেখে গিয়েছিল। গোরক্ষপুরে ১৭ বছরের এক কিশোরীকে ঘর থেকে মাত্র কয়েক পা দূরে, রাস্তা থেকে অপহরণ করে এক মন্দিরে রাতভর গণধর্ষণ করে দুষ্কৃতীরা। তার সারা শরীরে সিগারেটের ছ্যাঁকায় পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ইভ টিজিং-এ অপমানিতা এক মেধাবী ছাত্রী আত্মঘাতী হয়।

সাম্প্রতিক অতীতে বিজেপি একাধিকবার ধর্ষকের পক্ষ নিয়ে রাস্তায় নেমেছে। বিজেপির নেতামন্ত্রীরা ধর্ষকের পক্ষে বয়ান দিয়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে সবর্ণ হিন্দুরা নিজেদের জাতের নামে সংগঠন বানিয়ে সরাসরি ধর্ষকের পক্ষে জমায়েত করছে, ধর্ণা দিচ্ছে। বিজেপির রামরাজ্য বাস্তবে ধর্ষকের স্বর্গরাজ্যে ও ব্রাহ্মণ্যবাদী নৃশংসতার রক্ষাকবচ।

সারা পৃথিবী জুড়ে নারীর প্রতি হিংসা বেড়েই চলেছে। প্রতিবাদে নারীরাও পথে নামছেন। উত্তাল হয়ে উঠছে রাজপথ স্বায়ত্ততা। 

wedew

সময়ের আঁকবাঁক বুঝে বাংলায় বিজেপি এবার ত্রিমুখী প্রচার কৌশলের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল। ইতিমধ্যে মোদী সরকার নিয়ে আসে বিশেষ করে কৃষি সম্পর্কিত একপ্রস্থ নয়া বিল। সেইসাথে শ্রম বিধি সংক্রান্ত ও অন্যান্য বেশ কিছু বিল। সেগুলো সংসদে নজিরবিহীনভাবে পাশও করিয়ে নিয়েছে। কোনও আলোচনার ধার-কাছ মাড়ায়নি। স্রেফ একতরফা সাংসদ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোর খাটিয়েছে, ভোটাভুটির ধার ধারেনি, উপরন্তু প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়াকে অজুহাত বানিয়ে বিরোধী সদস্যদের একাংশকে সংসদ কক্ষ থেকে বহিষ্কার ও বাকিদেরকে বয়কটে প্ররোচিত করেছে। এইভাবে বিলগুলো পাশ করিয়েছে। রাষ্ট্রপতিরও সম্মতি পেয়েছে, আইনে পরিণত করে নিয়েছে। বিরোধী দলগুলো আপত্তি জানিয়েছিল সরকারের কাছে, আবেদন করেছিল রাষ্ট্রপতির কাছে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হল না। হল না যখন, তখন বাঁধ ভেঙে গেল প্রতিবাদের প্রতিরোধের নতুন এক কিষাণ জোয়ারে। তা আছড়ে পড়ে এরাজ্যেও। এর প্রতিক্রিয়ায় গনগনে মাশুল গোনা অনিবার্য, আঁচ করছে বিজেপি। তাই পদক্ষেপ করল প্রচার কৌশলের ছাঁচ পরিবর্তনের। তার ত্রিশূল প্রচারের বিষয়-তিনটি হল, এক, মোদী-বিল কৃষকদের ওপর থেকে মধ্যস্বত্বভোগী প্রথার অবসান ঘটাবে! দুই, এরাজ্যে ইসলামিক সন্ত্রাসবাদের করালছায়া আইন শৃংখলা ও জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে এক ক্রমবর্দ্ধমান বিপদ! তিন, গণতন্ত্র এখানে অবরুদ্ধ। এই তিনটি বিষয়ের মধ্যে প্রথমোক্ত ও শেষোক্তটির বাস্তবতা রয়েছে অত্যন্ত রূঢ় প্রকৃতির। তার সাথে লেপ্টে নিজের তৈরি দুটো ভিত্তিহীন ভূয়ো বিষয়টি সাজিয়ে-গুছিয়ে বিজেপি প্রচারে নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তবে কেন্দ্রের নয়া কৃষি আইনের সপক্ষে হাওয়া তোলা অতো সহজ হওয়ার নয়। তার প্রথম মহড়ায় বিজেপি তা ভালোই মালুম পেল। কৃষি জমি রক্ষা আন্দোলনে অন্যতম প্রতীক হয়ে থাকা সিঙ্গুরে বিজেপির সাংসদ নেত্রীকে সদলবলে কৃষক জনতার কালো পতাকা দেখতে হয়েছে। ও মাটিতে প্রতিবাদ কিভাবে পুনরুজ্জীবিত হল, তার চেয়েও বড় কথা, কৃষকের চেতনায় বিজেপি প্রথমেই ধাক্কা খেল। প্রতিরোধের এই প্রয়াসকে লাগাতার ধারায় পরিণত করে তোলা প্রয়োজন। গ্রামে গ্রামে রব তোলা দরকার। কৃষক চেতনা, গ্রাম চেতনা জাগিয়ে তোলা প্রয়োজন। বিজেপি যেখানেই এই কৃষক বিরোধী কৃষি আইন নিয়ে মুখ খুলবে সেখানেই তার স্বরূপ উন্মোচনে পাল্টা প্রচারে ধাওয়া করতে হবে। বিজেপির প্রচার কৌশলের দ্বিতীয় ‘ইস্যু’ হল, এরাজ্য পরিণত হয়েছে ইসলামিক সন্ত্রাসবাদের ঘাঁটিতে! মাদ্রাসাগুলো তার আখড়া! এর সাথে অকস্মাৎ জুড়ে দেওয়া হল অন্য এক চিল চিৎকার! গরু-পাচার নিয়ে। মুর্শিদাবাদের ঘটনাবলীর ধারাভাষ্যে এখনাবধি আধিপত্য চলছে ‘নিয়া’-বিজেপি-র। মিডিয়ার প্রচারে থাকছে বিচিত্র সব ধোঁয়াশা। তা থেকে সাধারণ মানুষের মনে খোলসা হচ্ছে না কিছুই, বরং ছড়াচ্ছে বিভ্রান্তি বিস্ময় গুচ্ছের প্রশ্ন। তার জের টেনে বিজেপি সক্রিয় হচ্ছে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষে, ভয়-ভীতি সন্ত্রাসে পরিবেশ বিষিয়ে দিয়ে রাজনৈতিক প্রভাব প্রতিপত্তি বাড়াতে। রাজ্যের সীমান্ত জেলাগুলোর চোরা সমান্তরাল অর্থনীতিতে গরু পাচার অতি চেনা বস্তু। এর মধ্যে শাসকদল-পুলিশ-প্রশাসন-বিএসএফ সবেরই রয়েছে স্বার্থের হাত। তাই কেন্দ্র-রাজ্যের ক্ষমতার কোনও পক্ষেরই এপ্রশ্নে ‘সাধু’ সাজার উপায় নেই। তবু বিজেপি চায় এটাকেও ‘ইসলামিক সন্ত্রাস’-এর হৈচৈ তোলার সাথে জুড়ে দিয়ে ‘যুগল ইস্যু’ হিসেবে পাকিয়ে তোলার। এভাবে মরীয়া হবে নন-ইস্যুকে ‘ইস্যু’ তোলার দুরভিসন্ধিতে। তবে এর মুখোশ উন্মোচিত করতে বিএসএফ কার অধীন সেপ্রশ্ন তুলে যেমন চেপে ধরা যায়, তেমনি আরও অনেক ইস্যুও রয়েছে। যেমন, মোদীর বিদেশ থেকে কালো টাকা ফেরানোর প্রতিশ্রুতির প্রতারণা, পি এম কেয়ারস্ ফান্ডের টাকার হিসাব দিতে অস্বীকার করা! রাজ্যে বিজেপি-র প্রচার কৌশলের তৃতীয় উৎস ও অঙ্গ হল গণতন্ত্রের বিষয়। এক নির্মম বাস্তবতা হল এখানে সরকার ও শাসকদলের দলতন্ত্র-দমনতন্ত্রের যাঁতাকলে গণতন্ত্র আক্রান্ত হয় প্রতিনিয়ত। আর এই সূত্রেই এখানে বিজেপি বাড়াবাড়ির সুযোগ পাচ্ছে সবচেয়ে বেশি। দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে চেতনার প্রশ্নে পশ্চাৎপদতার কারণে যখন মোদীতন্ত্র-যোগীতন্ত্রের বিভীষিকা দূরের বিষয় হয়ে থাকে আর রাজ্যের টিএমসি শাসনে উৎপীড়নের জ্বলন প্রাণান্তকর করে তোলে, সেই দুঃসহ অবস্থার সুযোগ নিয়েই বিজেপি ‘গণতন্ত্রের পরিত্রাতা’ সেজে তৎপর হয় পরিসর বাড়ানোয়।  নেতাদের মুখে নিত্য লেগে থাকে অকথ্য ভাষা, মেরে লাশ বানিয়ে দেওয়ার হুঙ্কার।

এর মোকাবিলায় পাল্টা প্রচারে ধেয়ে যাওয়া প্রয়োজন। কেন্দ্রের মোদী জমানা, রাজ্যে রাজ্যে বিজেপি জমানা কেমন ফ্যাসিবাদী প্রকৃতির, দেশকে কিভাবে পরিণত করছে গণতন্ত্রের নিধনভূমিতে, মতপ্রকাশের নাগরিক স্বাধীনতাকে কিভাবে নানা রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের নাগপাশে রুদ্ধ করছে, সেইসব উন্মোচনে এগিয়ে যাওয়াই আজ সময়ের সবচেয়ে বড় দাবি।

kisvre

নরেন্দ্র মোদীর গালভরা বচন ‘আচ্ছে দিন’-এর মর্মোদ্ধারে ভারতের তবু কিছুটা সময় লেগেছিল, কিন্তু তাঁর সাম্প্রতিকতম জুমলা (শূন্যগর্ভ বচন) ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর স্বরূপ উন্মোচিত হয়ে পড়ছে অতি দ্রুত। মোদী সরকারের কাছে ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর একটাই অর্থ – ভারতের গোটা অর্থনীতিটাকে আদানি-আম্বানি উদ্যোগে পরিণত করা!

ভারতের পরিকাঠামোর গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোর বেসরকারিকরণের এক আক্রমণাত্মক অভিযান শুরু করার পর সরকার এখন যুদ্ধ শুরু করেছে ভারতের কৃষি ও কৃষকদের বিরুদ্ধে। ২০২০-২১ অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে (২০২০-র এপ্রিল থেকে জুন) অর্থনীতির সমস্ত ক্ষেত্রেই জিডিপি’র বিপুল পতনের মধ্যে কৃষিই ছিল একমাত্র ক্ষেত্র যাতে কিছু প্রকৃত বৃদ্ধি ঘটেছিল। সরকার সেই ভারতীয় কৃষির নিয়ন্ত্রণকেই এখন তুলে দিতে চাইছে কর্পোরেট চালিত কৃষি-ব্যবসার হাতে।

এই লক্ষ্যে গত ৫ জুন তিনটে কৃষি অধ্যাদেশ জারি হলে সারা দেশের কৃষকরাই এর তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু অনেক বিলম্বে সংসদের বাদল অধিবেশন শুরু হলে সরকার এই অধ্যাদেশগুলোকে বিলে পরিণত করল আর তারপর সংসদীয় গণতন্ত্রের চরম প্রহসন ঘটিয়ে কোনো ভোটাভুটি চলতে না দিয়ে সেগুলোকে পাশ করিয়ে নিল।

সমস্ত দিক থেকেই বোঝা গেছে যে রাজ্যসভায় সদস্য সংখ্যা সরকারের অনুকূলে ছিল না এবং বিরোধী সদস্যরা ভোটের দাবি জানালে সরাসরি সম্প্রচার স্তব্ধ করে দেওয়া হয় এবং রাজ্যসভার পরিচালক বিল পাশ হয়ে গেছে বলে ঘোষণা করে দেন। এরপর সংসদীয় রীতিকে আরও বিপর্যস্ত করে তুলে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান খারিজ করে দিলেন অসংসদীয় পথের আশ্রয় নেওয়া ডেপুটি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবকে এবং তিনি সাসপেন্ড করলেন প্রতিবাদকারী বিরোধী সাংসদদের। ভারতীয় কৃষকদের ভারতের নয়া কোম্পানিরাজের দাসত্বের অধীন করে তুলতে সরকার প্রকাশ্য দিবালোকে গণতন্ত্রকে নিধন করল।

এই বিলগুলোর উদ্দেশ্য ও তাৎপর্য সম্পর্কে সরকারের দাবি প্রতারণা ও মিথ্যায় পরিপূর্ণ। বিলগুলোর শিরোনামও চূড়ান্তরূপেই বিভ্রান্তিকর। একটা বিলের শিরোনাম হল কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ব্যবসা ও বাণিজ্য (সহায়তা ও সহজীকরণ) বিল ২০২০। অন্য আর একটা বিলের শিরোনাম হল কৃষকের (ক্ষমতায়ন ও সুরক্ষা) মূল্য লাভের সুনিশ্চয়তা ও কৃষি পরিষেবা সম্পর্কিত চুক্তি বিল ২০২০। সরকার দাবি করছে যে বিলগুলোর লক্ষ্য হল আমলাতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ থেকে কৃষকদের মুক্ত করা, উৎপাদিত পণ্যের বিক্রয় সম্পর্কে তাদের পছন্দকে সম্প্রসারিত করা এবং বেশি দাম পেতে তাদের সামর্থ্যকে বাড়িয়ে তোলা। সরকারের আরও দাবি – বিলগুলো কোনোভাবেই ন্যূনতম সহায়ক মূল্য লাভের এবং কৃষকরা এখন যেখানে তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করেন সেই মান্ডিগুলোর (কৃষিপণ্য বাজার কমিটি) বিদ্যমান ব্যবস্থার বিলোপ ঘটাচ্ছে না।

সরকার ফসল সংগ্ৰহের দায়িত্ব পরিত্যাগ করলে তার পরিণতি কী হতে পারে তা বোঝার জন্য আমরা বিহারের দিকে তাকাতে পারি। ওই রাজ্যে নীতীশ কুমার সরকার সেই ২০০৬ সালেই এপিএমসি আইন প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। তথ্যের অধিকার আইনের আশ্রয় নিয়ে ওয়েব পত্রিকা দ্য ওয়্যার যে তথ্য সংগ্ৰহ করে তাতে দেখা যাচ্ছে, ২০২০-২১ রবি মরশুমে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের সংস্থাগুলো বিহারে গম উৎপাদনের আনুমানিক পরিমাণের মাত্র ০.১ শতাংশ কৃষকদের কাছ থেকে সংগ্ৰহ করেছে। এবং এটা কোন ব্যতিক্রমী ঘটনা নয়, গত চার বছরে বিহারে সরকারের কেনা ফসলের পরিমাণ ২ শতাংশেরও কম হয়েছে। ধান সংগ্ৰহের ক্ষেত্রেও পরিসংখ্যানগুলো একই ধরনের জঘন্য বলে দেখা গেছে, এবং ভুট্টা সংগ্ৰহের ক্ষেত্রেও পরিসংখ্যান এর চেয়ে কোনো অংশে উৎকৃষ্ট নয়। সারা দেশের কৃষকরা যখন স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশ অনুসারে বর্ধিত সহায়ক মূল্য এবং যথাসময়ে ও সুনিশ্চিত সংগ্ৰহের জন্য লড়াই করছেন, সরকার তখন এই ব্যাপারে তাদের দায়িত্বকে সম্পূর্ণরূপে পরিহার করে কৃষি বাণিজ্যে যুক্ত বেসরকারী ক্ষেত্রের কোম্পানিগুলোর হাতে নিয়ন্ত্রণ তুলে দিতে চাইছে। বেসরকারী ক্ষেত্রের খেলোয়াড়রা যখন গোটা ব্যবস্থাটায় আধিপত্য করবে, তখন কাগজে-কলমে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য এবং এপিএমসি’র অস্তিত্ব থাকলেও তাতে সাধারণ কৃষকদের কোনো সুরাহা হবে না। কৃষিকাজে নিযুক্ত ভারতের ব্যাপক সংখ্যক জনগণের কাছে এর তাৎপর্য ভয়াবহই হতে পারে।

বিলে যখন ব্যবসা ও বাণিজ্যের পৃষ্ঠপোষকতা করা ও তাকে সহজসাধ্য করে তোলার কথা বলা হচ্ছে, তখন কৃষিপণ্যের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত বেসরকারী কোম্পানিগুলোর কথা মাথায় রেখেই তা বলা হয়েছে। এই সংস্থাগুলোই এখন যেখান থেকে খুশি কেনার এবং ইচ্ছেমত যতখুশি মজুত করার স্বাধীনতা পাবে। সরকার আমাদের এই কথাটা বিশ্বাস করতে বলছে যে, কৃষকরাও একই ধরনের স্বাধীনতা পাবেন, কিন্তু কৃষিপণ্যের ব্যবসায় যুক্ত সংস্থাগুলোর ক্ষমতার সঙ্গে পাল্লা দেওয়া কৃষকদের পক্ষে আদৌ সম্ভব হবে কি? কাজেই, পণ্যের মূল্য কি হবে তা নির্ধারণ করার সুবিধা সবসময় ব্যবসায়ীদের হাতেই থাকবে, এবং এরসাথে আন্তঃরাজ্য বাণিজ্য এবং যত ইচ্ছে মজুতের নবলব্ধ স্বাধীনতা যুক্ত হয়ে তা নিজেদের নিয়ন্ত্রণকে আরও শক্তিশালী করতেই ব্যবসায়ী সংস্থাগুলোকে মদত জোগাবে। কৃষিপণ্যের ব্যবসায় যুক্ত প্রভূত ক্ষমতাধর কোম্পানিগুলোর সঙ্গে লেনদেন চালানোর কৃষকদের ‘স্বাধীনতা’র নতুন রূপের এক দাসত্বে পরিণত হতে বেশি সময় লাগবে না, যেখানে কোম্পানিগুলোর হাতেই থাকবে নিয়ন্ত্রণের লাগাম। ক্ষুদ্র কৃষকদের এবং জমি ভাগে নিয়ে চাষ করা ভাগচাষিদের ক্ষতিগ্ৰস্ত করা ছাড়াও খাদ্যশস্য উৎপাদনে ভারতের স্বয়ম্ভরতায় এবং খাদ্য নিরাপত্তা ও গণবন্টনের গোটা ব্যবস্থাটায় এক ভয়ঙ্কর ধাক্কা দেওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা নতুন এই ব্যবস্থার রয়েছে। চুক্তি চাষ কৃষি উৎপাদনের প্রধান ধারা হয়ে উঠলে কৃষি ব্যবসায় নিযুক্ত কোম্পানিগুলোই তখন নিজেদের স্বার্থ এবং মুনাফার লালসা চরিতার্থ করার হিসাব-নিকাশের ভিত্তিতে চাষের ধরনকে নির্ধারিত করবে, ভারতের শতাধিক কোটি জনগণকে খাদ্য জোগানের প্রয়োজন তাদের কাছে আদৌ আমল পাবে না। রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রের সুবিশাল নেটওয়ার্ক বিএসএনএল-এর ক্ষতির মূল্যে যেমন মুকেশ আম্বানির জিও’র বাড়বাড়ন্ত ঘটানো হয়েছে, একইভাবে কৃষিপণ্যের ব্যবসায় নিয়োজিত বড়-বড় বেসরকারী খেলোয়াড়দের বেদীমূলে ফুড কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়াকেও বলি দেওয়া হবে।

ভারতের যে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে ইতিমধ্যেই অনেকটা দুর্বল করে তোলা হয়েছে, নতুন ব্যবস্থা তাতে আরও প্রতিকূল প্রভাব ফেলবে। কৃষিপণ্য চলাচল এবং বিক্রয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণের কোনো ক্ষমতা রাজ্যগুলোর থাকবে না এবং কৃষিপণ্য বিপণন কমিটি (এপিএমসি) নেটওয়ার্কের মধ্যে দিয়ে যেটুকু রাজস্ব তারা অর্জন করত সেটুকুও তারা হারাবে। অন্যদিকে, সমস্ত ক্ষমতাই কুক্ষিগত করবে কেন্দ্রীয় সরকার এবং বড়-বড় কর্পোরেট সংস্থাগুলো। সরকার এই বিলগুলোকে ভারতীয় কৃষির রূপান্তরণের অগ্ৰদূত বলে শোরগোল তুলছে এবং এটাকে ভারতীয় কৃষকদের স্বাধীনতার এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত রূপে অভিহিত করে এই মারণ আঘাতকে আড়াল করতে চাইছে। বিমুদ্রাকরণ এবং জিএসটি চালু করার পর যে ধরনের আত্মস্তুতির ঘটা আমরা দেখেছিলাম, এটা অনেকটা সেই ধরনের। প্রাপ্ত সমস্ত ইঙ্গিত থেকেই বোঝা যাচ্ছে যে, নতুন এই ‘সাহসী সংস্কার’গুলোর পরিণাম বিমুদ্রাকরণ এবং জিএসটি পরবর্তী পর্যায়ে ঘটা বিপর্যয়ের মতোই হবে। সরকারের প্রতারণামূলক প্রচারে বিভ্রান্ত না হয়ে পড়ে নির্ভিক প্রতিরোধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য ভারতীয় কৃষকদের আমাদের অবশ্যই অভিনন্দন জানাতে হবে। কৃষকদের প্রতিবাদের প্রতাপ ইতিমধ্যেই আকালি দলের মন্ত্রীকে মোদীর মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগে এবং কয়েকটি রাজ্য সরকারকে বিলগুলোর প্রতি বিরোধিতা প্রকাশে বাধ্য করেছে। ছ’বছর আগে কৃষকদের এবং বিরোধী দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদের মুখে মোদী সরকার তার জমি অধিগ্রহণ অধ্যাদেশ প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়েছিল। কৃষক সংগঠনগুলোর ঐক্যবদ্ধ মঞ্চের দৃঢ় প্রতিরোধের মুখে মোদী সরকার যাতে আবারও পিছু হটতে বাধ্য হয় আমাদের তা সুনিশ্চিত করতে হবে। এই লড়াইয়ে জয়ী হতে গণতন্ত্রের পক্ষে দাঁড়ানো প্রতিটি নাগরিককেই কৃষকদের সাথে হাত মেলাতে হবে।

(এম-এল আপডেট সম্পাদকীয়,   
২২ সেপ্টেম্বর ২০২০)   

deedell

এআইকেএসসিসি (অখিল ভারত কিষাণ সংঘর্ষ সমন্বয় কমিটি) গত ২৯ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লী থেকে এক প্রেস বিবৃতি দিয়েছে। ঐ প্রচারিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২৫ সেপ্টেম্বর দেশের কৃষক, কৃষি মজুর এবং সাধারণ মানুষ যে ঐতিহাসিক ভারত বনধ্ ও প্রতিরোধ কর্মসূচী পালন করেছে, তার জন্য এআইকেএসসিসি তাদের অভিনন্দন জানাচ্ছে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষকবিরোধী, জনবিরোধী আইন ও নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধ কর্মসূচী সমন্বয় সাধনের জন্য সকল সংগঠনকে সাধুবাদ জানাচ্ছে। ইতিহাসে এই প্রথমবার কোনো কেন্দ্রীয় আইন পাশ হওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যেই দেশজুড়ে কৃষকরা প্রতিবাদ করল। এই তীব্র প্রতিবাদ, যা কৃষকদের জীবন ও জীবিকার উপর হামলার বিরুদ্ধে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ, ২০টি রাজ্য জুড়ে দেখা গিয়েছে। দশ হাজারেরও বেশি জায়গায় প্রায় দেড় কোটি কৃষক ‘চাক্কা জ্যাম’, ‘ধর্না’ বা বিল পোড়ানো ইত্যাদির মাধ্যমে প্রতিবাদ করেছে। যদিও কেন্দ্রীয় সরকার মিথ্যা প্রচার করছে যে কৃষক বিক্ষোভ শুধুমাত্র উত্তর ভারতে সীমাবদ্ধ ছিল, কিন্তু এই বনধ্ এবং বিক্ষোভের সর্বভারতীয় চরিত্রটা পরিস্কারভাবে বোঝা গেছে যখন দেশের দক্ষিণতম রাজ্য তামিলনাড়ুতে ৩০০-রও বেশি জায়গায় প্রতিবাদ হয়েছে, ৩৫,০০০ এরও বেশি কৃষক রাস্তায় নেমেছে এবং ১১,০০০ এর বেশি কৃষককে রাজ্যের বিজেপি’র বন্ধু সরকার গ্রেপ্তার করেছে!! এমনকি অন্যান্য সংগঠন এবং কোনও সংগঠনের সাথে জড়িত না থাকা কৃষকরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই বনধ্ পালন করেছে। এই বনধ্ দেখিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের এই তিনটি কালা আইনকে দেশের কৃষকরা প্রত্যাখ্যান করেছে।

এটি মনে রাখতে হবে যে এআইকেএসসিসি ৯ আগস্টের আগে থেকেই বিক্ষোভ শুরু করেছিল এবং তিনটি আইন প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত প্রতিবাদ অব্যাহত রাখার ঘোষণা করেছিল। কেন্দ্রীয় সরকার যেহেতু কৃষকবিরোধী এই আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে এবং এমএসপি/ফসল কেনা সম্পর্কিত ভুল তথ্য ছড়িয়ে যাচ্ছে, এআইকেএসসিসি কৃষকদের এই লড়াই এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং এই আইনগুলিকে কার্যকর করতে দেবে না।

এআইকেএসসিসি কৃষকদের দাবিগুলোর প্রতি মনোযোগ দিতে এবং এই আইনগুলো কার্যকর করা থেকে বিরত থাকার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছে। বিরোধী দলগুলোর যে রাজ্য সরকারগুলো রয়েছে, যারা কৃষকদের এই অবস্থানের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে, তাদের রাজ্যে এই আইনগুলো যাতে কার্যকর না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য আইনি উপায় বার করার জন্য এআইকেএসসিসি আহ্বান জানাচ্ছে। অধিকন্তু, এআইকেএসসিসি এই রাজ্যগুলোর বিধানসভায় আইনগুলো কার্যকর না করার জন্য প্রস্তাব গ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছে কারণ এই আইনগুলো যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ক্ষুন্নকারী এবং কৃষকের অধিকারের উপর মারাত্মক আক্রমণকারী।

এআইকেএসসিসি কৃষক বিরোধী এই কালা আইনগুলোর বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাবে এবং ক্রমশ তা জোরালো করবে। কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক কৃষকদের এভাবে প্রতারণাকে উন্মোচিত করার জন্য এআইকেএসসিসি-র বেশ কয়েকটি রাজ্য ইউনিট ইতিমধ্যে গ্রামাঞ্চলে এবং ব্লক স্তরে বা ম্যান্ডি স্তরে সভা, সেমিনার, স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ, রিলে অনশন, অনশন ইত্যাদির মাধ্যমে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে। এআইকেএসসিসি পাঞ্জাব, হরিয়ানা, পশ্চিম উত্তর প্রদেশ এবং কর্ণাটক, তামিলনাড়ু ও তেলঙ্গানার আন্দোলনসহ সমস্ত সংস্থা এবং তার নিজস্ব রাজ্য ইউনিটগুলির সাথে নিবিড়ভাবে সমন্বয় রাখছে এবং এদের নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আরও কর্মসূচী ঘোষণা করতে চলেছে এবং এরই মধ্যে এআইকেএসসিসি-র জাতীয় কার্যনির্বাহী সমিতি সমস্ত রাজ্য পর্যায়ের কর্মসূচীকে সমর্থন দিয়েছে, যথা –
    • পাঞ্জাব কৃষক সংস্থার ডাকা রেল রোকো।
    • হরিয়ানার উপ-মুখ্যমন্ত্রী দুষ্মন্ত চৌতলার পদত্যাগের দাবীতে তার বাড়ির বাইরে ৬ অক্টোবর বিক্ষোভের ডাক।
    • কর্ণাটক কৃষক সংগঠনগুলোর আহ্বানে কৃষক বিরোধী কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য আইন প্রয়োগ করার বিরুদ্ধে বনধ্, প্রতিরোধ সভা ইত্যাদি।

এই স্থানীয় বিক্ষোভের সাথে জাতীয় স্তরের কর্মসূচি যুক্ত হবে, যার কয়েকটি নিম্নরূপ :

২ অক্টোবর, ভারতের কৃষকরা সেই রাজনৈতিক নেতা ও প্রতিনিধিদের ‘সামাজিক বয়কট’ করার প্রতিশ্রুতি নেবে, যাদের দলগুলো এই কৃষক বিরোধী আইনগুলোর বিরোধিতা করেনি। এছাড়া, কেন্দ্রীয় কৃষক বিরোধী আইনের বিরুদ্ধে প্রস্তাব গ্রহণের জন্য গ্রামে গ্রামে সভা করবে।

১৪ অক্টোবর ভারতের কৃষকরা ‘এমএসপি অধিকার দিবস’ হিসাবে পালন করবে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের মিথ্যা প্রচার “যে কৃষকরা স্বামীনাথন কমিশন প্রস্তাবিত এমএসপি পাচ্ছে”, তার পর্দা ফাঁস করবে।

সমস্ত প্রতিবাদ কর্মসূচী শেষ হবে ২৬ ও ২৭ নভেম্বর দিল্লিতে এক জাতীয় প্রতিবাদের মাধ্যমে। এআইকেএসসিসি দেশের সমস্ত কৃষকদের ‘দিল্লি চলো’ আহ্বান জানাচ্ছে যাতে এই কৃষকবিরোধী কেন্দ্রীয় সরকার, কৃষকদের ভবিষ্যত এবং জীবিকার উপর তার অমানবিক আক্রমণ বন্ধ করতে বাধ্য হয়। ভারতের কৃষকরা বিজয় না পাওয়া পর্যন্ত এআইকেএসসিসি বিশ্রাম নেবে না – আমরা লড়ব, আমরা জিতব!!

ssreddw

কৃষকদের কর্পোরেটদের গোলামে পরিণত করার এই আইন নিয়ে আসার মাত্র পাঁচ দিনের মাথায় লক্ষ লক্ষ কৃষক পথে নেমে এসেছে। স্বাধীনতার পর এই প্রথম দেশে এতবড় কৃষক বিক্ষোভ দেখা গেলো। ২৬৫টি সংগঠনের যুক্ত মঞ্চ সারা ভারত কৃষক সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির পক্ষ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ দেশব্যাপী প্রতিরোধ দিবসের আহ্বানে গোটা দেশ জুড়ে গড়ে উঠলো উত্তাল কৃষক সংগ্রাম। কয়েকটি রাজ্যে বন্ধ এবং সর্বত্র ‘প্রতিরোধ আন্দোলন’ দেখিয়ে দিল কেন্দ্রীয় সরকারের এই তিনটি কালো আইনকে দেশের কৃষকরা প্রত্যাখ্যান করেছে। বিজেপি সরকার গায়ের জোরে সংসদীয় ব্যবস্থাকে হত্যা করে তড়িঘড়ি যতই আইন প্রণয়ন করুক না কেন, দিকে দিকে দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ রাস্তার লড়াইয়ের মাধ্যমে এই কৃষি সংস্কার আইনকে সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করেছেন। কৃষি ও কৃষকদের কোম্পানিরাজের অধীনস্ত করার বিরুদ্ধে গড়ে উঠছে এক নতুন স্বাধীনতার লড়াই।

পঃ বঙ্গের বিভিন্ন জেলার প্রায় ২০০টি স্থানে জাতীয় সড়ক ও রাজ্য সড়ক অবরোধ হয়েছে। কোথাও কোথাও কয়েক হাজার সংখ্যায় কৃষকরা অবরোধে সমাবেশিত হয়েছিলেন। বেশিরভাগ জায়গায় সকাল ১১টা থেকে ১২টা, পরবর্তিতে বেলা ২টা থেকে ৩টা – এক ঘন্টা বা তারও বেশি সময়ব্যাপী চলা এই অবরোধে ব্যপক মানুষ সমর্থন ও সহমর্মীতা জানিয়েছেন। কৃষকের পাশাপাশি সর্বস্তরের শ্রমজীবী মানুষও পথে নেমেছেন। শ্রমিক, ছাত্র, যুব, মহিলা সহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক শক্তি অন্নদাতাদের সমর্থনে সোচ্চার হয়েছেন। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি স্থান হলো – বাঁকুড়া জেলায় কেরানিবাঁধে সকাল ৯টা থেকে এক ঘন্টারও বেশি সময় ধরে অবরোধ ও মোদীর কুশপুতুল দাহ করা হয়। নেতৃত্বে ছিলেন আয়ারলার নেতা বাবলু ব্যানার্জী, রাম নিবাস বাস্কে প্রমুখ। এই জেলার বিষ্ণুপুরে সবজি বাজারে অবরোধে ছিলেন ফারহান খান, মঙ্গল মুর্মু। এখানে নয়া শিক্ষানীতি ও শ্রমআইন তুলে দেওয়ার বিরুদ্ধে ছাত্র ও শ্রমিক সংগঠনের কর্মীরা সোচ্চার হয়ে ওঠেন। এ ছাড়াও জেলায় সুপুর মোড়, ছাতনা সহ বিভিন্ন স্থানে অবরোধ হয়। দঃ ২৪ পরগণার আমতলায় ডায়মন্ডহারবার রোডে সড়ক অবরোধে ছিলেন এআইকেএম-এর সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি কার্তিক পাল, রাজ্য নেতা দিলীপ পাল, এআইকেএসসিসি’র সর্বভারতীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অভীক সাহা, এআইকেএস-এর তুষার ঘোষ, আয়ারলা’র নবকুমার বিশ্বাস প্রমুখ। দার্জিলিং জেলায় ফাঁসিদেওয়ার ঘোযপুকুরে অবরোধে ছিলেন এআইকেএম নেতা পবিত্র সিং, শ্রমিক নেতা অভিজিৎ মজুমদার, বাসুদেব বসু প্রমুখ। মালদা জেলার কালিয়াচকে স্থানীয় থানার পুলিশ অবরোধের একদিন আগে থেকেই কৃষক সংগঠকদের হুমকি দিতে থাকে। কিন্তু অবরোধের দিনে ব্যপক মানুষের উপস্থিতির কারণে প্রশাসন তেমন কিছু করতে পারে না।

dad

 

নদীয়া জেলার ধুবুলিয়াতে জাতীয় সড়কে সবজি ফেলে দিয়ে অবরোধে নেতৃত্ব দেন এআইকেএম নেতা সুবিমল সেনগুপ্ত। বেথুয়াডহরীতে অংশ নেন আয়ারলা’র কাজল দত্তগুপ্ত, চাপড়ায় কৃষক নেতা ধনঞ্জয় গাঙ্গুলী, ইনসান সেখ প্রমুখ। তাহেরপুরে নেতৃত্ব দেন জীবন কবিরাজ।

হুগলী জেলার পোলবা-দাদপুরের আলিনগর মোড়ে অবরোধ হয়। অংশগ্রহণ করেন আয়ারলা ও ঋণমুক্তি আন্দোলনের নেতা সজল অধিকারী। ব্যপক মহিলারা মাইক্রোফিনান্স কোম্পানির অন্যায় সুদের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া ও ঋণ আদায়ের নামে জুলুমবাজির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। বলাগড়ের মহিপালপুরের ইটাগড় মোড়ে অনুরূপ কর্মসূচী সংগঠিত হয়। একতারপুর মোড়ে কৃষি বিলের কপি পোড়ানো হয়। গুপ্তিপাড়া বড়বাজারে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই কর্মসূচীগুলিতে উপস্থিত ছিলেন ঋণমুক্তি আন্দোলন ও আয়ারলার নেতা সজল দে, আনারুল সেখ, নিরঞ্জন বাগ প্রমুখ। পান্ডুয়ার দে পাড়া মোড়ে প্রতিবাদী সভায় বক্তব্য রাখেন এআইকেএম নেতা দেবাশীষ কুমার। কোন্নগর থেকে হিন্দমোটর এক দৃপ্ত মিছিল পথ পরিক্রমা করে কৃষকদের দাবিগুলি তুলে ধরে। শেষে বিপিনভিলা মোড়ে বিলের কপি পোড়ানো হয় ও প্রতীকী অবরোধ করা হয়। ব্যান্ডেল জিটি রোডে অবরোধে নেতৃত্ব দেন ভিয়েত ব্যানার্জী। হাওড়া জেলার উলুবেড়িয়াতে ৬নং জাতীয় সড়কে অবরোধে বাগনান এলাকার ঋণ মুক্তি আন্দোলনের সাথে যুক্ত মহিলাদের অংশগ্রহণ ছিলো উল্লেখযোগ্য। নেতৃত্বে ছিলেন শ্রমিক নেতা দেবব্রত ভক্ত, কিষাণ মহাসভার নবীন সামন্ত। বালী দুর্গাপুরের হেলথ সেন্টারের সামনে প্রতিবাদী সভা সংগঠিত হয়। বক্তব্য রাখেন ছাত্র নেতা নীলাশীষ বসু, দীপক চক্রবর্তী প্রমুখ। বালী জোড়া অশ্বত্থতলা মোড়ে বিলের কপি পুড়িয়ে বিক্ষোভ ও অবরোধ সংগঠিত হয়।

basir

 

উঃ ২৪ পরগণার আওয়ালসিদ্ধি মোড়ে জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হয়, নেতৃত্ব দেন নারায়ন রায়, স্নেহাশীষ চক্রবর্তী। এরপর নৈহাটিতে বরোদা ব্রীজের মুখে অবরোধ হয়। অংশগ্রহণ করেন শ্রমিক নেতা সুব্রত সেনগুপ্ত, দেবজ্যোতি মজুমদার প্রমুখ। বেলঘড়িয়া শহরে পাওয়ার হাউজ মোড় থেকে বিটি রোড পর্যন্ত মিছিল করা হয়, তারপর রথতলা মোড়ে বিক্ষোভ অবরোধ সংগঠিত হয়। নেতৃত্বে ছিলেন নব্যেন্দু দাশগুপ্ত, শিবশংকর গুহ রায়। অশোকনগর গ্রামীণ এলাকার নুরপুর হাটে প্রচারসভা করা হয়, শহরের বিল্ডিং মোড়ে ৩৫নং জাতীয় সড়কে অবরোধ করা হয়। এই কর্মসূচীগুলিতে অংশ নেন অজয় বসাক, বাবুনি মজুমদার, জয়শ্রী দাস প্রমুখ। বসিরহাটে ত্রিমোহিনী মোড়ে অবরোধ করা হয়। এখানে অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমজীবী মানুষের উপস্থিতি ছিল লক্ষনীয়। নেতৃত্বে ছিলেন দেবব্রত বিশ্বাস।

বনগাঁ পাবলিক লাইব্রেরী থেকে মিছিল করে বাটা মোড়ে গিয়ে অবরোধ হয়। নেতৃত্ব দেন এআইকেএম নেতা কৃষ্ণ প্রামানিক। বারাসাতে হেলা বটতলা মোড়ে অবরোধ হয়। অনুরূপ  কর্মসূচী সংগঠিত হয় মধ্যমগ্রামে। নেতৃত্ব দেন সুজিত ঘোষ, দিলীপ দত্ত প্রমুখ। পঃ বর্ধমানের বার্ণপুর বাসস্ট্যান্ডে প্রতিবাদী সভা ও কাজোরা মোড়ে অবরোধ হয়। নেতৃত্বে ছিলেন, শ্রমিক নেতা সুরিন্দর কুমার, রেল শ্রমিক নেতা প্রদীপ ব্যানার্জী, স্বদেশ চ্যাটার্জী।

- জয়তু দেশমুখ   

pbsdwee

পুর্ব বর্ধমান জেলার এআইকেএসসিসি’র জেলা যৌথ বৈঠকে পরিকল্পনা হয় জেলার গুরুত্বপূর্ণ ৭টি জায়গায় জাতীয় ও রাজ্য সড়ক অবরোধ করা হবে। মুলত সময় সকাল ১১টা থেকে ১২টা ঠিক হলেও এলাকার পরিস্থিতি অনুযায়ী সময় কিছুটা পরিবর্তন করে নবদ্বীপ-বর্ধমান ও কালনা কাটোয়া রাজ্য সড়কের সংযোগ স্থল পুর্বস্থলী ১নং ব্লকের হেমতপুর মোড়ে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে জমায়েত হতে শুরু হয়ে অবস্থান বিক্ষোভ চলতে থাকে। ১১টার সময় তিন দিকের রাস্তা অবরোধ করে দেওয়া হয়। ফলে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন দাঁড়িয়ে পরে। এআইকেএম ও আয়ারলার পক্ষ থেকে কেন্দ্রের কৃষক বিরোধী কৃষি-বাণিজ্য-আইন অত্যাবশ্যকীয়-পণ্য-আইনের সংশোধনী বিল ও কর্পোরেট স্বার্থবাহী চুক্তিচাষের আইনের কপি পোড়ানো হয়। নরেন্দ্র মোদীর কুশপুত্তলিকা দাহ করার মাধ্যমে ১২টার পর অবরোধ সমাপ্ত করা হয়।

২নং জাতীয় সড়কের সদর ২নং ব্লক-এর পালসীট মোড়ে জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ অবরোধ সংগঠিত হয়। ব্যাপক মানুষের অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিক্ষোভ প্রদর্শনে জাতীয় সড়ক অচল হয়ে যায়। সমস্ত যানবাহন দাঁড়িয়ে পড়ে। বক্তব্য রাখেন বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। কৃষকদের জঙ্গী বিক্ষোভের সামনে পুলিশ পিছু হঠে। ১২টার সময় আগামীদিনে আরও বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দিয়ে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।

ভাতার থানার আমারুন বাসস্যান্ডে বর্ধমান-কাটোয়া রাজ্য সড়কের উপর সকাল ১১টার সময় প্রচুর মানুষের উপস্থিতিতে অবরোধ আন্দোলন শুরু হয়। শ্লোগান বক্তব্য মানুষের মধ্যে সাড়া জাগিয়ে তোলে। দীর্ঘ সময় অবরোধের পর কৃষক বিরোধী আইন বাতিল হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহবান জানিয়ে অবরোধ সমাপ্ত হয়।

বিকাল ৩টার সময় কালনা-বর্ধমান ও কুসুমগ্রাম-মেমারী রোডের সংযোগস্থল মন্তেশ্বর বিধানসভার অন্তর্গত মেমারী ২নং ব্লক-এর সাতগাছিয়া বাজারে ব্যাপক সমাবেশের মধ্যে দিয়েই বিক্ষোভ ও অবরোধ শুরু হয়। চৌরাস্তায় অবরোধের ফলে সমস্ত বাজার অচল হয়ে যায়। বাজারের উপস্থিত কৃষকরা উৎসাহ নিয়ে আন্দোলনকারী নেতৃবৃন্দের বক্তব্য শোনেন। বিক্ষোভ ও বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে অবরোধ চলার পর ৪টার সময় কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষক বিরোধী আইন বাতিল না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহবান জানিয়ে অবরোধ সমাপ্ত হয়।

বিকাল ৪টার সময় কালনা-বৈঁচি রোড ও কালনা-গুপ্তীপাড়াগামী রাস্তার সংযোগ স্থল কালনা শহরের বৈদ্যিপুর মোড়ে বিশাল সমাবেশের মাধ্যমে বিক্ষোভ অবরোধ শুরু হয়। চলতে থাকে বক্তাদের ভাষন ও শ্লোগান। শহরের মানুষ বক্তব্য শোনার জন্য দাঁড়িয়ে পরে। ৫টা পর্যন্ত অবরোধ চলতে থাকে। আন্দোলন বৃহত্তর পরিধিতে এগিয়ে নেওয়ার আহবান জানিয়ে কর্মসূচীর সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।তাছাড়া বর্ধমান-আরামবাগ রোডের সগরাই মোড় ও কাটোয়া-সালার রোডের সিপাই দীঘির মোড়ে অবরোধ সংগঠিত হয়।

সমস্ত জায়গা এআইকেএম, আয়ারলা, আরওয়াইএ, এআইসিসিটিইউ, এআইপিডব্লিউএ ও সিপিআই(এম)-এর কৃষক সংগঠন ও বিভিন্ন গণসংগঠনের ব্যানার, পতাকা ও চাইনিজ ব্যানারে সুসজ্জিত ছিল। সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের লোকজনও উপস্থিত ছিলেন এবং বক্তব্য রাখেন। তিনটি কৃষক বিরোধী আইন বাতিল ও বিদ্যুৎ বিল ২০২০ বাতিলের শ্লোগানের সাথে সাথেই “মোদী হঠাও, দেশ বাঁচাও, কর্পোরেট হঠাও, কৃষক বাঁচাও” শ্লোগান ওঠে। বিধানসভায় এই আইন বিরোধী প্রস্তাব পাশ করার দাবি ওঠানো হয়।

dardare

২৫ সেপ্টেম্বর দার্জিলিং জেলার এনএইচ-৩১ জাতীয় সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়। ঘোষপুকুরে ৪৫ মিনিট অবরোধ চলে। সারা ভারত কিসান মহাসভা ও সারা ভারত কিসান সভার কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। অবরোধস্থলে সারা ভারত কিসান মহাসভার পক্ষে পবিত্র সিংহ, সারা ভারত কিসান সভার পক্ষে ঝরেন রায় এবং সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বাসুদেব বসু। অবরোধে থাকেন পার্টির জেলা সম্পাদক অভিজিৎ মজুমদার, কৃষিমজুর সমিতির শরৎ সিংহ, পৈসাঞ্জু সিংহ, কান্দ্রা মুর্মু, বন্ধু বেক প্রভৃতি জেলা নেতা। সিআইটিইউ নেতা সমন পাঠক ও সুদীপ দত্ত সহ ২৫০ জন মানুষ অবরোধে অংশ নেন। আলিপুরদুয়ারের কোর্ট মোড় থেকে লিচুতলা পর্যন্ত বামপন্থী দলগুলির যৌথ মিছিল হয়। পার্টির পক্ষে চঞ্চল দাস মিছিলে অংশ নেন।

ssedsse

মুর্শিদাবাদ জেলায় এই প্রথম এআইকেএসসিসি যৌথ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ২২ সেপ্টেম্বর। বৈঠকে ঠিক হয় ব্লকে ব্লকে বিক্ষোভ প্রতিবাদ ও অবরোধ সংগঠিত করা হবে। ব্লকগুলোতে পরষ্পরের যোগাযোগের ভিত্তিতে কর্মসূচী সফল করা হবে। বহরমপুর, কান্দী, ভরতপুর ও রানীনগরে সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের পক্ষ থেকে অংশগ্রহণ করা হয়। খড়গ্রাম ব্লকের আয়ারলা ও এআইকেএম-এর পক্ষ থেকে কর্মীরা বেলা ১১টার সময় উপস্থিত হয়ে জানতে পারেন সিপিআই(এম)-এর পক্ষ থেকে সময় পাল্টানো হয়েছে। তাই ফিরে যেতে হয়। সমস্ত ক্ষেত্রেই বিক্ষোভ, মিছিল ও পথসভা সংগঠিত হয়।

midmid

খোলা চিঠিতে বলা হয় যে ‘পশ্চিমবঙ্গ সংগ্রামী রন্ধনকর্মী (মিড ডে মিল) ইউনিয়ন (রেজিস্ট্রেশন নং ২৬৪২৭)’ রন্ধনকর্মীদের পুজো অনুদানের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে একাধিকবার আবেদন করেছে, কিন্তু কোনো সাড়া পায়নি।

আশাকর্মীদের ভাতাবৃদ্ধি ও হকারদের  আর্থিক অনুদানের যে ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রী করেছেন তাকে স্বাগত জানিয়ে এই চিঠিতে বলা হয়, মিড ডে মিল কর্মীরা ভাতাবৃদ্ধি বা পুজোর অনুদান থেকে কেন বঞ্চিত হলেন? মিড ডে মিল কর্মী যারা স্কুলে স্কুলে রান্নার কাজ করেন, তাঁরা অধিকাংশই অন্ত্যজ শ্রেণী বা সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে আসা অভাবী মহিলা। এরা দীর্ঘদিন মাসিক ১,৫০০ টাকা সাম্মানিক ভাতা নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করে চলেছেন। এরাও তো করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামনের সারির সৈনিক। লকডাউনের সময় যখন বেশিরভাগ মানুষ গৃহবন্দী, তখন এরাই, শিশুরা যাতে অভুক্ত না থাকে, তাই বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাল, আলু পৌঁছে দিয়েছেন। আপনার এই দুঃস্থ মহিলাদের প্রতি বিমাতৃসুলভ আচরণ কেন? মিড ডে মিল কর্মী সংগঠন থেকে রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে বহুবার ভাতা বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু কাকস্য পরিবেদনা! অবস্থার কোনো পরিবর্তন হল না। আমরা উদ্বেগের সাথে দেখছি ক্লাবগুলোকে পুজো অনুদানে সরকারের কোষাগারে কোনো সঙ্কট থাকে না। অর্থাভাব থাকে শুধুমাত্র মিড ডে মিল কর্মীদের সাম্মানিক ভাতা বাড়ানো বা পুজোর অনুদান দেওয়ার প্রশ্নে। আপনার কাছে আমাদের বিনীত আবেদন পুজোর সময় অন্যদের মতো মিড ডে মিল কর্মীদেরও অনুদান দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। এই অভাবী মহিলাদের সাহায্য করুন, পাশে দাঁড়ান।

deeecad

২৮ সেপ্টেম্বর, কলকাতায় ডালহৌসিতে ‘বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্স’ (আইজেএমএ), ‘ইন্ডিয়ান জুট মিলস এ্যাসোসিয়েশন’ দপ্তরে চটকলের ২১টি ইউনিয়ন মিলিতভাবে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত করে। এই সমাবেশ থেকে ১০ জনের প্রতিনিধি দল কর্তৃপক্ষকে ডেপুটেশন দেয়। এআইসিসিটিইউ অন্তর্ভুক্ত বেঙ্গল চটকল মজদুর ফোরাম (বিসিএমএফ)-এর পক্ষ থেকে সভায় সভাপতিমন্ডলীতে ছিলেন বিসিএমএফ-এর রাজ্য সম্পাদক অতনু চক্রবর্তী। বক্তব্য রাখেন রাজ্য নেতা মাজাহার খাঁন ও ডেপুটেশনে প্রতিনিধিত্ব করেন বিসিএমএফ-এর রাজ্য সভাপতি নবেন্দু দাশগুপ্ত। বিক্ষোভসভা পরিচালনা করেন বিসিএমইউ নেতা দীপক দাশগুপ্ত।

মূলত লকডাউন পর্যায়ে মজুরি প্রদান, অবিলম্বে ২০ শতাংশ হারে বোনাস, গ্রাচ্যুইটি সহ বিধিবদ্ধ বকেয়া মেটানো, প্রভৃতি দাবির উপর আইজেএমএ’কে এই স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

reeeadder

সাড়ে তিন মাস ধরে টিভি-র চ্যানেলে চ্যানেলে (অল্প ক’টি প্রশংসনীয় ব্যতিক্রম ছাড়া) চলছে একই সিরিয়ালের রকমারি উপস্থাপনা। শুরুটা হয়েছিল সুশান্ত সিং রাজপুতের আত্মহত্যা/হত্যা/প্ররোচনা-জনিত আত্মহত্যার দুঃখজনক ঘটনা থেকে। তারপর, যেমনটা হয়েই থাকে, সিরিয়ালে এসেছে নতুন নতুন মোড়। যেমন, রিয়া চক্রবর্তী এপিসোডে আমরা দেখেছি কীভাবে স্রেফ কিছু অভিযোগ ও অনুমানের ভিত্তিতে তাঁকে কালিমালিপ্ত করা হল। এখন (সেপ্টেম্বরের চতুর্থ সপ্তাহে) সিরিয়াল যে এপিসোডে পৌঁছেছে তার সঙ্গে মূল কাহিনীর যোগসূত্র নেই বললেই চলে। এখানে আমরা দেখছি এবং শুনছি কয়েকজন উদীয়মান অভিনেত্রীর মাদক-সংযোগ আছে কি নেই, তাই নিয়ে নোংরা কেচ্ছা। এঁদের মধ্যে আছেন দীপিকা পাডুকন, যিনি মাঝরাতে জেএনইউ’তে নির্যাতিত ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতিবাদ সভায় হাজির হয়ে সংহতি জানিয়ে এসেছিলেন।

নারকোটিকস কন্ট্রোল ব্যুরো (এনসিবি) অভিনেত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা মাত্র, আদালতে মামলা শুরু হওয়ার অনেক আগেই, চালু হয়ে গেল মিডিয়া ট্রায়াল। বিভিন্ন সিনেমা ও স্টেজ শো থেকে এমন সব বাছাই করা ভিডিও ক্লিপ চালানো হতে লাগলো যাতে তাঁদের ব্যক্তিত্ব বা অভিনয়-ক্ষমতা নয়, যৌন আবেদনটুকুই ফুটে ওঠে। এতে অবশ্য দুটো লাভ হল। এক, চ্যানেলের আকর্ষণ এবং টিআরপি বাড়ল। দুই, দর্শকদের একাংশের মনে বিষাক্ত ধারণাটি গেঁথে দেওয়া গেল যে, ‘এই ধরনের’ মেয়েরা ড্রাগ নেবে, তাতে আর আশ্চর্য্য কি!

চরিত্র হননের এই অভিযানে সংবাদ মাধ্যমের প্রধান অবলম্বন হচ্ছে এনসিবি থেকে বে-আইনী ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ‘লিক’ করে দেওয়া ‘খবর’। যেমন, একান্ত ব্যক্তিগত হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট। ২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্ট ব্যক্তিগত পরিসরের অধিকারকে স্বীকৃতি ও সম্মান জানিয়ে যে রায় দিয়েছিল, তাকে গ্রাহ্যই করছে না এই সংস্থা। এইসব খবরের সত্যাসত্য জানার কোনো উপায় নেই, কারণ তথ্যের অধিকার আইন এই সংস্থায় প্রযোজ্য নয়। এবং এর দায়িত্বে আছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, যাঁর নারীবিদ্বেষী মানসিকতা অতীতে পরিষ্কার দেখা গেছে। এখন প্রশ্ন উঠছে, ফরদিন খান, সঞ্জয় দত্ত প্রমুখ অনেক অভিনেতাই তো মাদকাসক্তির কথা নিজেরা সংবাদ মাধ্যমে জানিয়েছেন বা এজন্য ধরা পড়েছেন। তাহলে এনসিবি কেন শুধুমাত্র মহিলাদের টার্গেট করছে? তার চেয়েও বড় কথা, এই সংস্থার কাজ তো দেশ জুড়ে এবং সীমান্ত পেরিয়ে মাদক চোরাচালান বন্ধ করা এবং এ ব্যাপারে শুল্ক দপ্তর ও রাজ্য পুলিশকে সাহায্য করা। এই মূল দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েই কি এনসিবি বিশিষ্ট অভিনেত্রীদের টার্গেট করে কাজ দেখাতে চাইছে? সংস্থাটির প্রথম ডিরেক্টর জেনারেল বি ভি কুমার সম্প্রতি রাজদীপ সারদেশাই-এর সঙ্গে এক প্যানেল-চর্চায় বলেছেন, এনসিবি তার আসল লক্ষ্য থেকে সরে যাচ্ছে।

তবে এসব কেবল এনসিবি আর মিডিয়ার ব্যাপার নয়। কুনাট্যের নাট্যকার খোদ শাসক দল। সব দেশের ফ্যাসিস্টদের মতো আরএসএস-বিজেপিও অস্থি-মজ্জায় নারীবিদ্বেষী। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বেঁধে দেওয়া নৈতিকতা ও ‘ভারতীয় নারী’সুলভ আচরণবিধির গণ্ডি পেরিয়ে গিয়ে যাঁরা স্বাধীনভাবে চলেন (দীপিকার “মাই চয়েস” ভিডিও-টির কথা এখানে মনে পড়বে) এবং যাঁরা সোচ্চার হন পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে (মনে পড়বে রিয়া চক্রবর্তীর কথা, যিনি এনসিবি’র দপ্তরে হাজির হয়েছিলেন পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে শ্লোগান লেখা শার্ট পরে) বিশেষত তাঁদের শায়েস্তা করার কোনো সুযোগ ছাড়তে রাজি নয় মোদী সরকার।

এছাড়াও, পুরো ঘটনাক্রমের পিছনে আছে তাদের এক গুচ্ছ রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা। বিহার নির্বাচনের আগে বিহারের ছেলে সুশান্তের নামে আবেগ উস্কে দিতে চাইছে, বিরোধী জোটের শাসনাধীন মহারাষ্ট্র সরকারকে সুশান্ত-তদন্তে অবহেলার জন্য দায়ী করে ভোট কুড়োতে চাইছে বিজেপি ও তার জোট সঙ্গী জেডি(ইউ)। তিন তিনটি কেন্দ্রীয় সংস্থাকে (সিবিআই, ইডি, এনসিবি) এই তদন্তে নামিয়ে দিয়ে বিহারবাসীদের বিজেপি বলতে চাইছে, দেখ আমরা সুশান্তের ব্যাপারে কত আন্তরিক। একই সঙ্গে চাইছে আকাশচুম্বী করোনাগ্রাফ আর পাতালমুখী জিডিপিগ্রাফ রুখতে কেন্দ্রীয় সরকারের চরম ব্যর্থতা থেকে মানুষের দৃষ্টি অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিতে। তারা চায় না, সংসদে যে রকম হিটলারি কায়দায় কৃষি বিলগুলো জবরদস্তি পাশ করানো হল তা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে বিস্তারিত চর্চা হোক বা কৃষকদের ও অন্যদের প্রতিবাদী কর্মসূচী টিভি’র পর্দায় ঝলসে উঠুক। পাকিস্তান-চীন নিয়ে হল্লা পুরনো হয়ে এসেছে, তাদের এখন প্রয়োজন একটু অন্য স্বাদের মশলা। তাই শাসকের ইঙ্গিতে জো-হুজুর মিডিয়া এক অশ্লীল কুনাট্য রঙ্গে মানুষকে মশগুল করে রাখতে চাইছে।

আর এই শোরগোলে হারিয়ে যাচ্ছেন আসল সুশান্ত। টিভি’র পর্দায় আমরা তাঁর পেশীবহুল শরীরটাকে কসরত করতে দেখছি, জানছি না আসল মানুষটিকে। যিনি ২০১৮ সালে পরপর দুবার কেরালা ও নাগাল্যান্ডে বন্যা ত্রাণে এক কোটি ও সোয়া কোটি টাকা দান করেছিলেন। যিনি ‘পদ্মাবত’ সিনেমাটি নিয়ে করণি সেনার (যারা নিজেদের রাজপুত জাতির চ্যাম্পিয়ন বলে দাবি করে) তাণ্ডবের  প্রতিবাদে নিজের টুইটার হ্যান্ডেল থেকে রাজপুত শব্দটি ছেঁটে দিয়েছিলেন। এজন্য তাঁকে ট্রোলড হতে হয়েছিল। তিনি ট্যুইট করেছিলেন, মানবতার চাইতে বড় আর কোনো ধর্ম বা জাত নেই। ভালোবাসা আর সমবেদনাই আমাদের প্রকৃত মানুষ করে তোলে, বাকি সব ভেদাভেদ করা হয় কেবল সংকীর্ণ স্বার্থের খাতিরে।

এমন একজন মানুষের  মর্মান্তিক বিদায়কে যারা সংকীর্ণ রাজনীতির স্বার্থে এবং মনোরঞ্জন ব্যবসার স্বার্থে কাজে লাগায়, তাদের বিরুদ্ধে আমরা অবশ্যই প্রতিবাদে সোচ্চার হব। কিন্তু সেই সঙ্গে লড়তে হবে আমাদেরই অবচেতনে লুকিয়ে থাকা শতাব্দী-প্রাচীন পশ্চাদমুখী ধ্যানধারণাগুলোর বিরুদ্ধেও, যার মধ্যে একটি হল নারীবিদ্বেষী পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতা। এদিকে ইঙ্গিত করে সমাজ সচেতন অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু টুইট করেছিলেন, “সতীদাহ ঘিরে উল্লাসের যে বর্ণনা পড়েছি, রিয়া চক্রবর্তীর গায়ে গণহারে অপরাধী তকমা দেগে দেওয়া দেখে তার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে।” তাঁকে সমর্থন জানিয়ে সমাজতত্ববিদ অভিজিৎ মিত্র নিজের টুইটে লেখেন, “নারী নরকের দ্বার-মার্কা মান্ধাতার আমলের ধ্যানধারণা এখনও রয়েছে। আজকের মেয়েরা নানা দিকে এগিয়ে গেলেও সুযোগ পেয়ে তাঁদের ধস্ত করার মনটা বিলক্ষণ রয়েছে।” কথাটা অনস্বীকার্য। তাই গণচেতনার পরিসরে এবং রাষ্ট্র ও পথভ্রষ্ট মিডিয়ার বিরুদ্ধে – দুটি ক্ষেত্রে দু’ধরণের সংগ্রামই আমাদের একসঙ্গে চালিয়ে যেতে হবে।

- চৈতালি সেন   

deeeaaseddd

ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (NIA) কর্তৃক মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে ৬ জনকে তুলে নিয়ে যাওয়ার খবর যেভাবে সামনে আসে তা সাধারণ মানুষের মাঝে অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। অল ইন্ডিয়া পিপলস ফোরাম, অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্যা প্রটেকশন অব ডেমোক্র্যাটিক রাইটস, এনআরসি বিরোধী সংহতি মঞ্চ, আজাদ হিন্দ ফেডারেশন, পিপলস রিভিউ ও অল ইণ্ডিয়া স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে একটি যৌথ প্রতিনিধিদল গত ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ এই সম্পর্কিত তথ্যানুসন্ধান চালায়। রানীনগর-২ অঞ্চলের কালিনগর গ্রামের আবু সুফিয়ান ও মুর্শিদ হাসান, ডোমকল থানার হিতানপুরের নাজমুস সাকিব ও ডোমকল পুরনো বিডিও অফিস মোড়ের লিউ ইয়েন আহম্মেদের বাড়ি ও পাড়ার সাধারণ মানুষের সাথে কথাবার্তা বলে তথ্যানুসন্ধানী দল। তার ভিত্তিতে আমরা বলতে পারি,

১) ধরপাকড় অভিযান চলে গভীর রাতে। অভিযানে বহু সংখ্যক বিএসএফ জওয়ান, স্থানীয় থানার দুজন করে অফিসার এবং কয়েকজন সিভিক পুলিশ ও এনআইএ অফিসার – সব মিলিয়ে প্রায় ৪০-৫০ জনের মতো বাহিনী ছিল বলে জানান গ্রামবাসীরা। দুজন পুলিশ অফিসার ছাড়া বাকি সকলেই সাধারণ পোষাকে ছিল এবং কারও পোশাকেই নাম পরিচয় বা পদমর্যাদাসূচক কিছু দেখেননি গ্রামবাসীরা।

২) কোথাও দরজা ভেঙ্গে, কোথাও পাঁচিল টপকে বাড়িতে ঢোকে বাহিনী।

৩) গ্রেপ্তারের সময় মারধোর করা হয়। আবু সুফিয়ানকে কোদালের বাঁট খুলে তা দিয়ে হাত ও পায়ের আঙ্গুলে পেটানো হয়। আবু সুফিয়ানের ১৫ বছর বয়সী নাবালক ছেলে ওয়াসিম আক্রমকে চড়-থাপ্পড় ও ঘুষি মারা হয়। ওয়াসিমের আরেক ভাইকে, যার বয়স দশ বছর, চুলের মুঠি ধরে ঝাঁকানো হয়। আবু সুফিয়ানের মেজ দাদা জিন্নাতুল ইস্লামকে প্রথমেই দুটো থাপ্পড় মেরে তারপর তার ভাইএর সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। লিউ ইয়েন আহম্মেদকে গালে থাপ্পড় ও চোখে ঘুষি মারা হয়।

৪) ধৃত ও তাঁদের পরিবার সম্পর্কে ইঙ্গিতপূর্ণ কটূক্তি করা হয়। নাজমুস সাকিবের দাড়ি সম্পর্কে মন্তব্য করা হয়।

৫) পরিবারের হাতে গ্রেপ্তার সংক্রান্ত কোনও রকম কাগজপত্র দেওয়া হয়নি। বারবার জানতে চাওয়া সত্বেও গ্রেপ্তারের কোনও কারণ মৌখিকভাবেও জানানো হয়নি। নাজমুস সাকিবের ক্ষেত্রে বলা হয় যে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

৬) কি কি জিনিস বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে তাও জানানো হয়নি পরিবারের মানুষদের।

৭) পূরণ না করা একাধিক ফর্ম/কাগজে আত্মীয়দের স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়া হয়েছে। নাজমুস সাকিবের ক্ষেত্রে বাজেয়াপ্ত করা ল্যাপটপ ইত্যাদির তিনটি পিপি (পলি প্যাক, যার মধ্যে বাজেয়াপ্ত করা জিনিস রাখা হয়) ছাড়াও আরও তিনটি ফাঁকা পিপি সই করিয়ে নিয়েছে তার দাদা রিজওয়ান আলিকে দিয়ে।

৮) একটি ক্ষেত্রে (আবু সুফিয়ানের ক্ষেত্রে) ধৃতকে স্থানীয় থানার বদলে জলঙ্গীর বিএসএফ ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়।

৯) মিডিয়া ‘সুড়ঙ্গ’ বলে প্রচার করেছে যে চৌকো গর্তটিকে তা গোসলখানার চেম্বার। এরকম চেম্বার ঐ গ্রামে আরও অনেক আছে। পৈতৃক বাড়ির লাগোয়া ছোট্ট জায়গায় নতুন নির্মীয়মান বাড়িতে স্ত্রী নুরুন্নেসা ও চার নাবালক ছেলেকে নিয়ে গরিব দর্জি তথা প্রান্তিক কৃষক আবু সুফিয়ানের সংসার। বাড়ির মধ্যেই গোসলখানার চেম্বার বানানো এই এলাকার স্বাভাবিক পদ্ধতি।

১০) এই গ্রামেরই মুর্শিদ হাসান নামে ২২-২৩ বছরের যে যুবককে কেরালার এরনাকুলাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে এনআইএ তার বাড়ি বলতে ছোট্ট খুপরি মতো পাটকাঠির বেড়া দেওয়া ঘর, যেখানে তাঁর বাবা ও মা থাকেন। বাবা কোনো কায়িক শ্রম করতে পারেন না। ছেলে কেরলে কাজ করে টাকা পাঠালে তাঁরা বেঁচে থাকার সাহারা পান। মুর্শিদের মা জানান যে তাঁর নিজের ও মুর্শিদের নার্ভের সমস্যা আছে। বহরমপুরে ডাক্তার দেখাতেন। বড় ছেলে মুর্শিদের আয়ের ওপর পরিবার চলে। বর্তমানে পাড়া প্রতিবেশির দানে খাবার খাচ্ছেন।

১১) ডোমকল কলেজে কম্পিউটার সায়েন্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র নাজমুস সাকিব ছোটোবেলা থেকেই রুগ্ন ও দুর্বল প্রকৃতির এবং মেধাবী। বর্তমানে থায়রয়েড, গলব্লাডারে পাথর ও জণ্ডিসে ভোগেন। পড়ুয়া ধরণের। সারাক্ষণ বইপত্রে মজে থাকেন, বাড়ির বাইরে যাওয়া বলতে একমাত্র কলেজ আর নামাজ পড়তে মসজিদ। তাঁর সমস্ত কাগজপত্র তছনছ করে তল্লাশি চালিয়ে শেষ পর্যন্ত স্কুল কলেজের সার্টিফিকেট ও একটি নামাজ শিক্ষার বই বাজেয়াপ্ত করে এনআইএ – একেই বোধ হয় “জিহাদি লিটরেচার” বলে উল্লেখ করা হয়েছে এনআইএ’র বিবৃতিতে।

১২) সাকিবের একাউন্টে টেররিস্ট নেটোয়ার্কের টাকা আসার খবর প্রচারিত হয়েছে। এ বিষয়ে জানা যায় যে তাঁর আব্বার সঙ্গে ব্যাঙ্ক অফ ইণ্ডিয়ায় একটা যুগ্ম সেভিংস আমানত আছে সাকিবের। এটিই সাকিবের একমাত্র ব্যাঙ্ক একাউন্ট। বড় ভাই রিজওয়ান সেই পাসবই দেখান, যেখানে কোনো অস্বাভাবিক লেনদেন চোখে পড়েনি তথ্যানুসন্ধানী দলের। যুবশ্রীর ১৫০০ টাকা করে তাঁর ওই আমানতে ঢুকত।

ree

 

১৩) ডোমকল পুরাতন বিডিও মোড়ের বাসিন্দা লিউ ইয়েন আহম্মেদ, বয়স ৩৬ বছর, অবিবাহিত। শৈশবে পিতৃহারা, এইচএস পাস করে এলেক্ট্রিকের কাজ শেখেন। ডোমকল কলেজে ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রির ক্যাজুয়াল কাজ ও ডোমকলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ইলেক্ট্রিকের কাজ করা তাঁর পেশা। বৃদ্ধা মা, স্বামীর ঘর ছেড়ে আসা দিদি ও দিদির মেয়েকে নিয়ে ভাঙাচোরা টালির চাল দেওয়া কুঁড়েঘরে চরম দারিদ্র্যের মধ্যে লিউ ইয়েনের বাস। তাঁর পেশার কাজে ব্যবহৃত ইলেক্ট্রিক টুলস ছাড়া আর কোনও কিছুই তাঁর কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত হয়নি।

১৪) গ্রামবাসীরা একইসাথে ক্রুদ্ধ ও আতঙ্কিত। ক্রুদ্ধ, কারণ টিভি মিডিয়াতে যে প্রচার তাঁরা শুনছেন তা তাঁদের কাছে সম্পূর্ণ অবমাননাকর অবাস্তব অপপ্রচার মনে হচ্ছে। আতঙ্কিত, কারণ তাঁরা কাউকেই তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে সত্য কথা বলতে শুনছেন না এবং ভয় পাচ্ছেন যে অনুরূপ অভিযান হয়তো আরও চলবে। আমাদের তথ্যানুসন্ধানী দলটি যে মিডিয়া থেকে আসেনি তা বুঝিয়ে বলার পরই একমাত্র সকলে তাঁদের কথা বলতে শুরু করেন। ধৃতরা সকলেই নিজের গ্রামে পরোপকারী ও আদর্শবান চরিত্রের মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। গ্রামবাসীরা সমস্বরে জানিয়েছেন যে এনআইএর এই তদন্তকে তাঁরা বিন্দুমাত্র বিশ্বাস করেন না।

১৫) ১৯-০৯-২০২০ তারিখে এনআইএ’র দেওয়া প্রেস বিবৃতিতে ধৃতদের সরাসরি “টেররিস্ট” বলে অভিহিত করা হয়েছে। অথচ কোনও অভিযুক্তই গ্রেপ্তারির সময় ন্যুনতম কোনও প্রতিরোধ করেননি। যেমন, নাজমুস সাকিব নিজেই বাড়ির মূল দরজা খুলে দিয়েছিল এবং অফিসাররা যখন তার দাদাকে জিজ্ঞাসা করছিল যে সাকিব কোথায়, তখন সাকিব সেই অফিসারের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। স্পষ্টতই বোঝা যায় নাজমুস সাকিব এনআইএ’র কাছে মোটেই চিহ্নিত ছিল না, এবং নাজমুসেরও কোনও ধারণা ছিল না যে তাঁকেই গ্রেপ্তার করতে এসেছে ওরা। লিউ ইয়েন বা আবু সুফিয়ান স্বাভাবিকভাবেই খুব ভয় পেয়ে গেছিলেন, কিন্তু গ্রেপ্তারির সময় কোনও প্রতিরোধ তাঁরা করেননি।

১৬) এনআইএ’র অভিযানের ধরনটি স্পষ্টত ষড়যন্ত্রমূলক এবং আতঙ্ক তৈরি করার মতো করে সাজানো। গভীর রাতে বিশাল বাহিনী নিয়ে গ্রামে ঢুকে বাড়ি ঘিরে ফেলা, দরজা ভেঙ্গে ঢোকা, মারধোর ও গালিগালাজ করা – এসবই এনআইএ’র বিদ্বেষপূর্ণ ও নিপীড়নমূলক মনোভাবকে দেখিয়ে দেয়। সেই সাথে, ধৃতদের পরিবারের কাছে কোনোরকম অ্যারেস্ট মেমো বা সিজার লিস্ট না দেওয়া এবং থানার বদলে বিএসএফ ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া থেকে বোঝা যায় যে দেশের এই সর্বোচ্চ তদন্তকারী সংস্থাটি ন্যূনতম আইনানুগ পদ্ধতি মেনে চলে না। সমগ্র অভিযানটিকে ‘অ্যারেস্ট’ না বলে বরং ‘অপহরণ’ বলা চলে। তুলে নিয়ে যাওয়ার পাঁচ দিন পর আমাদের তথ্যানুসন্ধানী দল যখন তাঁদের পরিবারের কাছে যায় তখনও পরিবারের কেউ জানেন না কোন অপরাধে কেন এবং কোথায় তাঁদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। লোকাল থানাতে গিয়েও কোনও জবাব পাননি তাঁরা, কেবল মিডিয়ার উগ্র প্রচার থেকে জানতে পেরেছেন যে ওরা নাকি ‘টেররিস্ট’। এবং, একাধিক ফাঁকা কাগজ ও ফাঁকা পলি প্যাকে বাড়ির লোকেদের সই করিয়ে নেওয়া থেকে এই অভিযানের ষড়যন্ত্রমূলক দিকটি স্পষ্ট হয়।

১৭) অভিযানে লোকাল থানার পুলিশ অফিসার ও সিভিক পুলিশের অংশ নেওয়া থেকে বোঝা যায় যে এই অভিযান রাজ্য পুলিশ প্রশাসনের অজ্ঞাতসারে হয়নি। কিন্তু থানাতে এ বিষয়ে খোঁজখবর নিতে গেলে কিছুই জানানো হচ্ছে না। বলা হচ্ছে, দিল্লির বিষয়ে কিছু বলা যাবে না। পরিবারের লোকেরা চাইছেন গ্রেপ্তার হওয়া প্রিয়জনদের সাথে একবার সাক্ষাৎ করতে, অন্ততপক্ষে জানতে যে তাঁরা কেমন আছে।

- তথ্যানুসন্ধানী দলের পক্ষে মলয় তেওয়ারী   

bhagdee

(২৮ সেপ্টেম্বর ভগত সিংএর জন্ম দিবস উপলক্ষ্যে একটি প্রাসঙ্গিক উদ্ধৃতি)

“একথা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে যে সুবিধাভোগী শ্রেণীর ব্যক্তিরা নিজেদের অধিকার ভোগ করার জন্য সংগ্রাম করবে, কিন্তু নীচুতলার মানুষকে দমিয়ে রাখতে তারা সব রকম প্রচেষ্টা চালায়, সমস্ত সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত মানুষগুলোকে তারা পায়ের তলায় রাখতে চায়। অর্থাৎ, জোর যার মুলুক তার নীতি চালায়। সুতরাং আর সময় নষ্ট না করে নিজের পায়ে উঠে দাঁড়াতে এক হও এবং এই সমাজ কাঠামোকে চ্যালেঞ্জ করো। তারপর দেখা যাক কারা তোমাদের প্রাপ্য অধিকার অস্বীকার করার সাহস দেখায়। অন্যের অনুকম্পা প্রত্যাশী হয়ে বসে থেকোনা, ওদের প্রতি কোনো মোহ রেখো না। সজাগ থাকো যাতে আধিকারিকবর্গের ফাঁদে না পড়ো, কারণ তোমাদের পক্ষপাতি হওয়া তো দূরের কথা ওরা ওদের তালেই তোমাদের নাচাতে চাইবে। প্রকৃতপক্ষে এই পুঁজিবাদী আমলাতান্ত্রিক জোটই তোমাদের দারিদ্র্য ও নিপীড়নের জন্য দায়ী। তাই সর্বদা একে পরিহার কর। এদের কূটকৌশল সম্বন্ধে সজাগ থাকো। এটাই রাস্তা। তোমরাই প্রকৃত শ্রমিক শ্রেণী। শ্রমিকেরা এক হও – শৃঙ্খল ছাড়া তোমাদের কিছু হারানোর নাই। উঠে দাঁড়াও, এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করো। ক্রমপরিবর্তনবাদ ও সংস্কারবাদ তোমাদের কোনও কাজে আসবে না। সামাজিক আলোড়নের মাধ্যমে বিপ্লব শুরু কর এবং রাজনৈতিক অর্থনৈতিক বিপ্লবের জন্য কোমর বাঁধো। তোমরা, একমাত্র তোমরাই জাতির স্তম্ভ ও মূল শক্তি। জেগে ওঠো ওহে সুপ্ত সিংহের দল! বিদ্রোহ কর, বিপ্লবের পতাকা উর্দ্ধে তুলে ধর।”

(জুন ১৯২৮ সালে ‘কীর্তি’ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘অচ্ছুৎ সমস্যা’ প্রবন্ধের শেষ অংশ)   

ser

দু’জনেরই বাড়ি একই গ্রামে, মহারাষ্ট্রের রাপার গ্রাম, কাজ করেন আলাদা আলাদা জায়গায়। একজন, ভারত রাভাল, ব্রাহ্মণ এবং একটি মুদিখানা দোকানের কর্মচারি। অন্যজন, দেবজী মাহেশ্বরী, শহরের আদালতে ওকালতি করেন এবং ‘বামসেফ’ (অল ইণ্ডিয়া ব্যাকওয়ার্ড অ্যাণ্ড মাইনরিটিস এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন)-এর প্রবীণ কর্মী। দেবজী মাহেশ্বরীকে খুন করার আগে মাসাধিক কাল ধরে ভারত রাভাল হুমকি দিয়েছে, সরাসরি বলেছে যে মাহেশ্বরী চুপ না করলে খুন হয়ে যাবে। এরপরও মাহেশ্বরীজী বামসেফের জাতীয় সভাপতির একটি ভাষণ শেয়ার করেন যেখানে ব্যাখ্যা করে বলা হয়েছে যে এসসি-এসটি-ওবিসি কমিউনিটির সদস্যরা হিন্দু নয়। এরপরই ভারত রাভাল মাহেশ্বরীজীর বাড়িতে এসে ঠান্ডা মাথায় তাকে হত্যা করে। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে।

এই ঘটনাটি থেকে কয়েকটি জিনিস বলা যায়। এসসি-এসটি-ওবিসিদের মধ্যে অগ্রণী একটি অংশ নিজেদের ‘হিন্দু’ ধর্ম ক্যাটেগরির অন্তর্ভুক্ত মনে করেনা। এই মতামত নিয়ে ব্রাহ্মণদের মধ্যে উৎকণ্ঠা আছে, তারা মনে করে এমনটা হলে শুদ্রদের ওপর অত্যাচার চালানোর জন্ম-জন্মান্তরের অধিকার তারা হারাবে। তাই তারা চায় না যে সাধারণ মানুষের মধ্যে এই মতামত পৌঁছে যাক। এদেশে এখনও এক ব্রাহ্মণ যুবক ‘নীচু জাতের’ কণ্ঠ স্তব্ধ করতে সরাসরি হত্যা করাকে স্বাভাবিক মনে করে। আর্থিক তথা পদমর্যাদার দিক থেকে এগিয়ে থাকা ব্যক্তিও কেবলমাত্র জাতপরিচয়ের কারণে দলিত অত্যাচারিত হতে পারে তুলনামূলকভাবে অনেক পিছিয়ে থাকা বর্ণহিন্দুর দ্বারা।

bhhhabhagat

২৮ সেপ্টেম্বর ভগত সিং-এর জন্মদিবসে বিপ্লবী যুব অ্যাসোসিয়েশন দেশব্যাপী রোজগার ও ন্যায়ের দাবিতে কর্মসূচী নেয়। এরাজ্যে আইসা আইপোয়া সহ বিভিন্ন গণসংগঠন ও পার্টি বিভিন্ন স্থানে কর্মসূচী নেয়। এআইসিসিটিইউ’র প্রচারাভিযানের সমাপ্তি দিনে কলকাতার লেক মার্কেট অঞ্চলে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। শহীদ ভগৎ সিংয়ের ১১৪তম জন্মদিবস ও শ্রমিক নেতা শংকর গুহ নিয়োগীর ২৯তম মৃত্যুদিবসকে এই সভায় স্মরণ করা হয়। দঃ ২৪ পরগণা জেলা পার্টি অফিসে সকালে শহীদ স্মরণ হয়। বাখরাহাটে বিষ্ণুপুর-সাতগাছিয়া লোকাল কমিটির অফিসে সংক্ষিপ্ত কর্মসূচীতে শ্রদ্ধা জানানো হয়। বজবজের ওরিয়েন্ট মোড় থেকে সুভাষ উদ্যান পর্যন্ত শ্রমজীবী জনতা-ছাত্র-যুবদের এক দৃপ্ত মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। স্লোগান ওঠে “কর্পোরেট দালাল মোদী হঠাও, ভগৎ সিংয়ের স্বপ্নের ভারত গড়ে তুলতে ঐক্যবদ্ধ হও।” মিছিল শেষে সুভাষ উদ্যানে নরেন্দ্র মোদীর কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়। পুর্বস্থলী ২ব্লক-এর ফলেয়া সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের এরিয়া কমিটির অফিসে বিপ্লবী ভগত সিং-এর ১১৪তম জন্মদিবস স্মরণ করা হয়। কালনা ২ ব্লক-এর অকালপোষ অঞ্চলের আগ্রাদহ বাস স্ট্যাণ্ডে কর্মসূচী সংগঠিত হয়। এছাড়া কোন্নগরে ভগত সিং-এর শহিদ বেদির সামনে সভা চলে। কলকাতায় এআইকেএসসিসির ডাকে ভগত সিং স্মরণে তীব্র কৃষক সংগ্রাম গড়ে তোলার শপথ নিয়ে কর্মসূচী সংগঠিত হয়।

kkakag

২৯ সেপ্টেম্বর ১০৬তম কোমাগাতামারু শহীদ দিবস। ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী লড়াইয়ের উজ্বল একটি নাম “গদর আন্দোলন ও কোমাগাতামারু”। বজবজে কোমাগাতামারু শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে সিপিআই(এমএল) লিবারেশন, চলার পথে সাংস্কৃতিক সংস্থা, স্ফুলিঙ্গ সাংস্কৃতিক সংস্থার পক্ষ থেকে কোমাগাতামারু শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হয়। সমগ্র শ্রদ্ধাজ্ঞাপন অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন বজবজ চলার পথে সাংস্কৃতিক সংস্থার সভাপতি দেবাশিস মিত্র। শহীদ বেদীতে মাল্যদান ও নিরবতা পালন করার পর কবিতা পাঠ করেন স্ফুলিঙ্গ সাংস্কৃতিক সংস্থার পক্ষে সুবির দত্ত, গণসংগীত পরিবেশন করেন চলার পথের পক্ষে অভিজিৎ মন্ডল ও বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের জেলা সম্পাদক কিশোর সরকার। উপস্থিত ছিলেন জেলা নেতা দিলীপ পাল, সেখ সাবির (রাজা) সহ ছাত্র-যুব কমরেডরা।

sew

গত ২৯ সেপ্টেম্বর এক সংবাদ বিবৃতিতে সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের রাজ্য সম্পাদক পার্থ ঘোষ মাদ্রাসা শিক্ষকদের ওপর পুলিশী দমনকে ধিক্কার জানিয়ে বলেন, মমতা ব্যানার্জির শাসনাধীনে পশ্চিমবাংলার গণতন্ত্রের স্বরূপ আজ আরও একবার স্পষ্ট হল। পশ্চিমবঙ্গ অনুমোদিত এবং আন-এডেড টিচার্স সংগঠনের পক্ষ থেকে ধর্মতলায় গান্ধী মূর্তির পাদদেশে মাদ্রাসা শিক্ষকদের শান্তিপূর্ণ অবস্থান প্রতিবাদের উপর বেপরোয়া লাঠিচার্জ করল মা-মাটি-মানুস সরকারের পুলিশ। কয়েকজন শিক্ষককে বে-আইনিভাবে গ্রেফতার করে লালবাজারে নিয়ে যায় পুলিশ। অথচ মাদ্রাসা শিক্ষক সংগঠনের পক্ষ থেকে ফোর্ট উইলিয়াম থেকে অনুমতি নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু লালবাজার সেই অনুমতি অগ্রাহ্য করে।

শিক্ষকদের ন্যায়সংগত দাবিগুলো হল
১) সরকার অনুমোদিত ২৩৫টি মাদ্রাসার প্রায় ৪০,০০০ ছাত্র ছাত্রী ৯ বছর ধরে মিড ডে মিলের খাবার পাচ্ছে না। কোনো সরকারী সুযোগ-সুবিধাও পাচ্ছে না। দ্রুত তার সমাধান করা হোক।

২) অনুমোদিত মাদ্রাসা শিক্ষকরা ৯ বছর ধরে বেতন পাচ্ছেন না। বেতনের ব্যবস্থা করা হোক।

৩) সরকার যে ১০,০০০ মাদ্রাসা বিদ্যালয়ের অনুমোদন দেবার ঘোষণা করেছিল, তা দ্রুত কার্যকরী করা হোক।

সরকার শিশুদের শিক্ষা নিয়ে ততো চিন্তিত নয়, যতটা ব্যস্ত পূজা কমিটিকে ৫০,০০০ টাকা অনুদান দিতে। পুরোহিতদের ভাতা প্রদানে। শিক্ষা স্বাস্থ্যর পরিবর্তে মেলা-খেলা-উৎসব অনুষ্ঠানে ব্যস্ত সরকার পুলিশ দিয়ে ন্যায়সংগত দাবি দাওয়ার মোকাবিলা করবে এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।

সিপিআই(এমএল) লিবারেশন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি তীব্র ভাষায় মাদ্রাসা শিক্ষকদের উপর পুলিশী এ্যাকশনের নিন্দা করে এবং দোষী পুলিশ অফিসারদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছে।

aaxxxsese

“একটা অত্যাচারের প্রতীক, একটা ঘৃণার বস্তু, এবং বৈষম্য ও জুলুমবাজি চালানোর একটা হাতিয়ার” – আফস্পা অর্থাৎ ‘সেনাবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন’ সম্পর্কে এটা ছিল জীবন রেড্ডি কমিটির পর্যবেক্ষণ। আর সেনাবাহিনী কাশ্মীরে প্রতিদিনই এই অভিমতের যথার্থতার প্রমাণ দিয়ে চলেছে। সেনাবাহিনীর হাতে কাশ্মীরের তিন নিরপরাধ যুবকের হত্যার ঘটনা দু’মাসেরও বেশি সময় আগে ঘটলেও সেনাবাহিনীর নিজের স্বীকারোক্তির সূত্রে ঘটনাটা নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে কিছুটা নাড়াচাড়া হয়েছে অতি সম্প্রতি। রাজৌরির তিন যুবক – ইবরার আহমেদ, মহম্মদ ইমতিয়াজ, মহম্মদ ইমরান (এরা সম্পর্কে তুতো ভাই এবং সবচেয়ে ছোটটির বয়স ১৬ বছর) – কাজের খোঁজে গিয়েছিল সোপিয়ান। সেখানেই সেনারা ১৮ জুলাই তাদের হত্যা করে। ছেলেগুলোর সঙ্গে বাড়ির লোকজনের দীর্ঘদিন যোগাযোগ না হওয়ায় অবশেষে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া নিহত তিন “জঙ্গি”র ছবি দেখে পরিবারের লোকজন জানতে পারে যে তাদের বাড়ির ছেলেরা সেনাদের হাতে নিহত হয়েছে। ভুরি-ভুরি ঘটনায় যেমন হয়ে থাকে, এই ঘটনাটার ওপর থেকেও হয়ত সেনাদের নির্মমতার পর্দাটা সরত না। কিন্তু ঘটনাটা নিয়ে পরিবারের তরফে ভুয়ো সংঘর্ষের অভিযোগ জানানো, সোশ্যাল মিডিয়ায় শোরগোল ওঠা, কিংবা নিহত যুবকদের জ্ঞাতিদের সেনাবাহিনীতে কাজ করার সূত্রে বাহিনীতে যোগাযোগ থাকা, যে কোনো কারণেই হোক সেনাবাহিনীর কর্তারা ১১ আগস্ট ঘটনাটার তদন্তের নির্দেশ দেন। এবং তদন্তের নির্দেশের এক মাসেরও কিছু বেশি সময় পর সেনাবাহিনী জানায় – “আপাতদৃষ্টির তথ্যপ্রমাণের” ভিত্তিতে তাদের মনে হয়েছে যে আফস্পার অপব্যবহার করে ওই যুবকদের মেরে ফেলা হয়েছে।

ভারতীয় রাষ্ট্র দেশের নাগরিকদের “পাকিস্তান মদতপুষ্ট সন্ত্রাস”এর চশমা পরেই কাশ্মীরকে দেখতে অভ্যস্ত করিয়েছে। মানবতার বিরুদ্ধে চালানো সেনাদের সমস্ত অপরাধের ঢাল হয়ে ওঠে “সন্ত্রাস” এবং শাস্তিহীনতার রক্ষাকবচে মোড়া আফস্পা। এই ঘটনাটার ক্ষেত্রেও সেই প্রচেষ্টাই হয়েছিল। তিন যুবককে হত্যার পর তাদের “সন্ত্রাসে” যুক্ত জঙ্গি অভিহিত করে পুলিশের পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয় – “তল্লাশি চালানোর সময় জঙ্গিরা সেনাদের ওপর গুলি চালায় এবং সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে পুলিশ ও সিআরপিএফ যোগ দেয়। সংঘর্ষে তিন অজ্ঞাত পরিচয় জঙ্গি নিহত হয়। সংঘর্ষ স্থল থেকে তিন জঙ্গির মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। জঙ্গিদের সনাক্ত করা এবং কোনো জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে তারা যুক্ত তা জানার চেষ্টা হচ্ছে।” কাজের খোঁজে যাওয়া নিরীহ তিন শ্রমিককে হত্যা করে পুলিশের বয়ানে এইভাবে জোড়া হল সংঘর্ষের, সেনা ও জঙ্গিদের মধ্যে গুলি চালাচালির রেডিমেড গল্প। সেনারা তাদের তদন্ত রিপোর্টে কিন্তু বলেনি যে, নিহত তিন শ্রমিক ছিল নিরপরাধ যুবক। এখনও ওরা বলে চলেছে তিন যুবক ছিল “অজ্ঞাত পরিচয় সন্ত্রাসবাদী” এবং “সন্ত্রাসবাদে ওদের যোগ নিয়ে” পুলিশ তদন্ত চালাচ্ছে। ঘটনাটার প্রকৃত উন্মোচন না ঘটলে সাধারণ ভারতবাসীর মনেও কাজের খোঁজে যাওয়া নিরপরাধ তিন যুবকের সন্ত্রাসবাদী পরিচয়ই গেঁথে যেত এবং তাদের হত্যা করার সেনাদের ‘পবিত্র অধিকার’ও অনুমোদন পেত। যারা নিষ্পাপ কৈশোর-যৌবনকে এভাবে অবলীলায় নিকেশ করে দেয় তাদের কি শাস্তি হবে না? জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল এস পি বৈদও বলেছেন, “নিরপরাধদের হত্যা করা এবং তাদের সন্ত্রাসবাদী বলে চালানোটা সবচেয়ে বর্বরোচিত অপরাধ এবং যারা একাজে জড়িত তাদের হত্যা করার অভিযোগে অভিযুক্ত করতে হবে।”

সেনাদের হাতে নিরপরাধ তিন যুবকের হত্যার এই ঘটনার উন্মোচন কি সেনাদের বন্দুকবাজি তথা আফস্পার নির্বিচার প্রয়োগকে একটুও নিয়ন্ত্রিত করতে পারবে? কাশ্মীরের ‘নয়া স্বাভাবিক অবস্থা’র আগে অর্থাৎ ২০১৯-এর ৫ আগস্টের পূর্ববর্তী পর্যায়ে যেমন এ কথা ভাবা যেত না, কাশ্মীরের রাজ্য মর্যাদা হরণ এবং তাকে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল করে তুলে সেনা ও আধা-সেনার ঘেড়াটোপে মুড়ে দেওয়ার বর্তমান পরিস্থিতিতে সে কথা ভাবা তো এখন বাতুলতা। এই কদিন আগেই, ১৭ সেপ্টেম্বর এরকম নিরীহ আর এক মহিলার হত্যা সামনে এল। আকিব সফি মাকে নিয়ে প্রতিদিনের মত সেদিনও গাড়ি চালিয়ে সকালে তাদের বেকারিতে যাচ্ছিল। দোকানের কাছাকাছি পৌঁছে সে একটা সেনা কর্ডন দেখতে পেল এবং গোলমালের আঁচ পেয়ে গাড়ি ঘোরাচ্ছিল। আর সঙ্গে-সঙ্গে গাড়ির পেছনের কাচ ভেদ করে গুলি লাগল আকিবের মায়ের মাথার পিছনে, আর নিমেষেই গাড়ির মধ্যে তাঁর দেহ নিথর হয়ে গেল। এরপরও সেনা-পুলিশের অমানবিকতা একটুও থামল না। আকিবের কথায় – “আমাদের নিয়ে যাওয়া হল কাছের একটা কন্ট্রোল রুমে এবং পরে বাটামালু থানায়, যেখানে আমায় রক্তভেজা জামাকাপড়ে শায়িত মায়ের মৃতদেহ নিয়ে কয়েক ঘন্টা অপেক্ষা করতে হল।” পুলিশ বলছে তার মায়ের মৃত্যু নাকি জঙ্গিদের গুলিতে হয়েছে। কিন্তু আকিবদের বিশ্বাস সেনাদের গুলিতেই তার মা নিহত হয়েছে – “তারা সেনা হতে পারে, সিআরপিএফ বা এসওজি হতে পারে, আমরা জানি না।” জঙ্গিদের গুলিতেই আকিবের মায়ের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করার পরও পুলিশের কিন্তু ভয় হয়েছিল যে ওই মৃত্যুকে কেন্দ্র করে তাদের প্রতিবাদের মুখে পড়তে হবে – “ওরা আমাদের বলল যে আমরা যেন কাগজে লিখে এই প্রতিশ্রুতি দিই যে কোনো প্রতিবাদ করা হবে না।” তার পরও প্রতিবাদ কিন্তু হয়েছিল। ভারতীয় রাষ্ট্রের কাছে, সেনা-পুলিশের চোখে কাশ্মীরের নাগরিক কি এমনই যাদের জীবন যখন-তখন হরণ করা যায়? নিহত হওয়ার পর সামান্য সম্মানটুকুও তাদের প্রাপ্য নয়? আকিবের হৃদয় নিংড়ানো প্রশ্ন – “আমার মা কী দোষ করেছিল? কেন তাকে এভাবে মরতে হল? একজন কাশ্মীরির জীবন কি এতই সস্তা যে যখন ইচ্ছে হবে তুমি তা ছিনিয়ে নিতে পারবে?”

কাশ্মীরে আফস্পা কতদিন বলবৎ থাকবে? কাশ্মীরের জনগণ কোনোদিনই কি আফস্পার কবল থেকে মুক্ত হতে পারবেন না? এ প্রশ্নের উত্তর এখন বোধকরি কেউই দিতে পারবেন না এবং কাশ্মীরও সেনা-পুলিশের বুটের তলায় নিস্পেষিত হতে থাকবে। সুপ্রিম কোর্ট কিন্তু একাধিক মামলায় বলেছে যে, অসামরিক এলাকায় বিক্ষোভ দমনে দীর্ঘকাল সেনাবাহিনীর ব্যবহার গণতন্ত্রকে প্রহসনে পর্যবসিত করে। মনিপুরে ১৯৫৮ সালে নাগা বিদ্রোহ দমনে সেনাবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন চালু হওয়ার ছয় দশক পর আজও সেখানে আফস্পা চালু রয়েছে। আফস্পা কালক্রমে ভারতীয় রাষ্ট্রের কাছে বিভিন্ন জাতিসত্ত্বার আকাঙ্খা ও ক্ষোভ দমনের হাতিয়ার হয়ে উঠে নানান রাজ্যেই বলবৎ হয়। কাশ্মীরেও ১৯৯০ সালে চালু হয়ে তিন দশকেরও বেশি সময়কাল ধরে আফস্পা বলবৎ রয়েছে এবং সেনা বাহিনীর হাতে অসংখ্য নির্মমতা সংঘটনের মাধ্যম রূপে দেখা দিয়েছে। ২০১৬ সালে এক মামলার রায়ে (যে মামলাটা দায়ের করেছিল মনিপুরে সেনাদের হাতে বিচারবহির্ভূত ধারায় নিহত পরিবারগুলোর সমিতি) সুপ্রিম কোর্ট বলে যে, অসামরিক অঞ্চলের বিক্ষোভ দমনে অনন্তকাল ধরে আফস্পার মতো আইনের ব্যবহার গণতন্ত্রে কখনো চলতে পারে না। বিচারপতি মদন বি লকুর এবং ঊমেশ ললিত তাঁদের রায়ে জানান, অশান্তি দমনে সেনা বাহিনীর ব্যবহার হতে পারে অসামরিক প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করার জন্যে, এবং একটা যুক্তিযুক্ত নির্দিষ্ট সময়কালের মধ্যে তার সমাধান হবে এটা ধরে নিয়ে। রায়ে তাঁরা বললেন, “যদি দীর্ঘকাল অথবা অনির্দিষ্ট কালের মধ্যে স্বাভাবিক অবস্থা না ফেরে সে ক্ষেত্রে তার ফলাফল কী হবে? আমাদের মতে এটা স্বাভাবিক অবস্থার পুনরুদ্ধারে সেনাবাহিনীর কাছ থেকে ফলপ্রসূ সহায়তা নিতে অসামরিক প্রশাসনের ব্যর্থতাকেই বোঝাবে, অথবা বোঝাবে স্বাভাবিক অবস্থা পুনরুদ্ধারে অসামরিক প্রশাসনকে কার্যকরী সহায়তা দিতে সেনাবাহিনীর ব্যর্থতাকে অথবা উভয়কেই। ঘটনা যাই হোক না কেন, স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে না আসাকে অছিলা করে দীর্ঘকাল, স্থায়ী বা অনির্দিষ্টকাল ধরে সেনাবাহিনীকে নিয়োগ করা যেতে পারে না … কেননা তা আমাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকেই বিদ্রুপ করবে। …” ওই রায়ে আরও বলা হয়, “তারা ‘শত্রু’ শুধুমাত্র এই অভিযোগে বা সন্দেহে আমাদের দেশের নাগরিকদের হত্যা করতে যদি সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিয়োজিত করা বা কাজে লাগানো হয় তবে শুধু আইনের শাসনই নয় আমাদের গণতন্ত্রও গুরুতর বিপদে পড়বে। …” কাশ্মীরে জঙ্গি সমস্যার কথা কেউই অস্বীকার করবেন না। কিন্তু জঙ্গি আছে বলেই আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার বঞ্চিত কাশ্মীরের সমগ্ৰ জনগণকেই সন্দেহের চোখে দেখা, তাদের সন্ত্রাসবাদী জ্ঞান করাটা কাশ্মীরকে ভারতীয় রাষ্ট্রের হাতে উপনিবেশেই পর্যবসিত করে। সুপ্রিম কোর্টের ওই পর্যবেক্ষণ ভারত রাষ্ট্রের আজকের পরিচালকদের কাছে কোনো গুরুত্ব বহন করে বলে তো মনে হয় না। কাশ্মীরকে চির অশান্ত রাখতেই শাসকদের ফায়দা। সাম্প্রদায়িকতা, ইসলামোফোবিয়া ও জাতীয়তাবাদের যে পাঁচনকে তারা ভারতীয় জনগণের মতাদর্শগত খোরাক করতে উঠেপড়ে লেগেছেন, কাশ্মীর হয়ে উঠেছে তার বড় পাকশালা। কিন্তু রাজনৈতিক সমস্যার সামরিক সমাধানের এই উদ্যোগ কি অনন্তকাল ধরে ইতিহাসের প্রশ্রয় পেয়ে যাবে? বিচারবুদ্ধি কি এই কথাটাও বলে না যে, কাশ্মীরকে যথার্থ অর্থে ভারতীয় রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ করতে হলে শুধু তার ভৌগলিক ভূখণ্ডই নয়, তার জনগণকেও ভারতের নাগরিক বলে জ্ঞান করতে হবে এবং কাশ্মীরের জনগণের বুক থেকে সেনা ও আফস্পার ভারের অপসারণ ছাড়া তা সম্ভব হতে পারে না? গণতন্ত্রই কি একাত্মতার যথার্থ বনিয়াদ নয়?

accceam

বিশ্বের অন্যতম প্রধান মানবাধিকার সংগঠন ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশানাল’ ভারতে তাদের কাজকর্ম বন্ধ করে দিতে একপ্রকার বাধ্যই হচ্ছে পরিস্থিতির চাপে। অ্যামনেস্টি ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে জারি করা এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারত সরকার তাদের সব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে লেনদেন বন্ধ করে দেওয়ার পর সেখানে তাদের পক্ষে আর কোনও ক্যাম্পেইন বা গবেষণা চালানো সম্ভব নয়।

ভারতে মানবাধিকার তথা সিভিল লিবার্টিজ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই বলছেন, ভারতে যখন সমাজের নিপীড়িত শ্রেণী ও সংখ্যালঘুরা বারবার আক্রান্ত হচ্ছেন এবং কাশ্মীরের মতো দেশের নানা প্রান্তেই মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে – তখন এভাবে ভারতে অ্যামনেস্টির কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যাওয়াটা বিরাট এক আঘাত।

ভারতে অ্যামনেস্টির কার্যক্রমকে বারবার সরকারের বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। ভারতে বিভিন্ন সরকারী সংস্থা বহুদিন ধরেই তাদের আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে।

বস্তুত ভারত-শাসিত কাশ্মীরের মানবাধিকার পরিস্থিতিই হোক বা কিংবা মুসলিমদের পিটিয়ে মারার ঘটনা – সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যে সব সংগঠন সরকারের সমালোচনায় সবচেয়ে সরব, অ্যামনেস্টি ইন্ডিয়া ছিল তার প্রথম সারিতেই।

ভারতের সরকারী কর্মকর্তারা অবশ্য দাবি করছেন, অ্যামনেস্টি ইন্ডিয়া বহুদিন ধরেই বিদেশ থেকে অবৈধভাবে অর্থ গ্রহণ করছে এবং তার মাধ্যমে ‘ফরেন কন্ট্রিবিউশন (রেগুলেশন) অ্যাক্ট’ বা এফসিআরএ লঙ্ঘন করে আসছে। দিল্লিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে বলা হয়েছে, অ্যামেনেস্টির ভারতীয় কার্যালয় ‘প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ’এর (এফডিআই) রুট ব্যবহার করে ব্রিটেন থেকে বিপুল পরিমাণ অনুদান পেয়েছে – যেটা তারা করতে পারে না।

বস্তুত ২০১৮ সালেই ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টোরেট (ইডি) ভারতে অ্যামনেস্টির সব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট জব্দ করে দিয়েছিল। সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে গিয়ে অ্যামনেস্টি সাময়িক অব্যাহতি পেলেও পরে তাদের বিরুদ্ধে ইডি আবার একই ধরনের পদক্ষেপ নেয়।

অ্যামনেস্টি ইন্ডিয়া জানিয়েছে, সেপ্টেম্বর মাসের ১০ তারিখে তারা জানতে পারে যে তাদের কোনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেই তারা লেনদেন করতে পারবে না, কারণ সরকারের পক্ষ থেকে ইডি তার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এরপর কর্মীদের মাইনে দেওয়া, চলমান ক্যাম্পেইন, গবেষণা বা ফিল্ড রিপোর্টগুলোর খরচ চালানো অ্যামনেস্টির পক্ষে একেবারে অসম্ভব হয়ে পড়ে – যার ফলশ্রুতিতে এদেশে কার্যালয় বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

অ্যামনেস্টি ইন্ডিয়ার নির্বাহী পরিচালক অবিনাশ কুমার বলেছেন, “গত দুবছর ধরে আমাদের বিরুদ্ধে সরকার একনাগাড়ে যে ক্র্যাকডাউন চালাচ্ছে আর এই যে আমাদের অ্যাকাউন্টগুলো সব জব্দ করা হল, এটা কোনও কাকতালীয় ঘটনা নয়।”… “সরকার আমাদের লাগাতার যেভাবে হেনস্থা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, এটা সেই পরিকল্পনারই অংশ”, দাবি করেছেন তিনি।

সাম্প্রতিককালে দিল্লির সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় দিল্লি পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা এবং কাশ্মীরের সরকারের মানবাধিকার রেকর্ডের সমালোচনা করার সঙ্গেও এই পদক্ষেপের সম্পর্ক থাকতে পারে বলে অ্যামনেস্টি মনে করছে। এবছরের ফেব্রুয়ারী মাসে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছিল, তাতে সেখানকার পুলিশও সামিল হয়েছিল, অগস্টে প্রকাশিত এক রিপোর্টে অ্যামনেস্টি এই অভিযোগ করেছিল।

সেই রিপোর্টে তারা আরও অভিযোগ করেছিল যে দাঙ্গা আটকানোর জন্য যেমন পুলিশের সক্রিয় ভূমিকা অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়নি, তেমনই দাঙ্গা পীড়িত মানুষ যখন ফোন করে পুলিশের সাহায্য চেয়েছেন, তখনও তাদের একাংশকে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি।

এইসব রিপোর্ট সরকারের অস্বস্তি বাড়াচ্ছিল আর সে কারণেই যে সরকার এই সংস্থার কাজকর্ম বন্ধ করে দিতে উদগ্রীব তা স্পষ্ট।

sangujha

“সমাজ ব্যবস্থা পরিবর্তনের জন্য ও অধিকার অর্জনের জন্য সংগ্রাম আর ছোট ছোট নির্মাণ। যা বিকল্প গড়ার ক্ষেত্রে নতুন দিক খুলে দেবে।” প্রায় তিন দশক আগে ছত্তীশগড়ে দাঁড়িয়ে এই কথাগুলো বলেছিলেন শ্রমিক নেতা শঙ্কর গুহনিয়োগী। ছত্তিসগড় খনি শ্রমিক সঙ্ঘের এই নেতার আন্দোলন থেকে এই কথাগুলোর ভিত্তিতে তৈরি হয়েছিল সংঘর্ষ ও নির্মাণের তত্ত্ব।

১৯৮৩ সালে ছত্তীসগড়ের দল্লি-রাজহরায় গড়ে উঠেছিল শহিদ হাসপাতাল। শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য একদিকে সংগ্রাম অন্যদিকে শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও নৈতিক মানের উন্নতিতে ছোট ছোট নির্মাণ। শঙ্কর গুহ নিয়োগী ভেবেছিলেন শ্রমিক ও তাদের পরিবারের জন্য স্কুল, হাসপাতালের মতো ছোট ছোট নির্মাণ যা বৃহত্তর সংগ্রামকে পুষ্ট করবে।

১৯৭৭ সালে ছত্তীশগড় শ্রমিক সঙ্ঘের আন্দোলনরত শ্রমিকদের উপর তৎকালীন জনতা সরকারের পুলিশ গুলি চালিয়েছিল। পুলিশের গুলিতে ১১জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। তাঁদের নামেই গড়ে উঠেছিল এই শহিদ হাসপাতাল। শ্রমিকদের স্বেচ্ছাশ্রম ও অর্থেই এই হাসপাতালের পথ চলা শুরু হয়। এর পাশাপাশি শ্রমিক মহল্লায় স্কুল তৈরি করা এবং মদ্যপান বিরোধী আন্দোলনে শ্রমিক পরিবারের নারীদেরও সংগঠিত করে সংঘর্ষ ও নির্মাণের কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন গুহনিয়োগী।

নয়ের দশকে আততায়ীদের গুলিতে নিহত হন শঙ্কর। নিহত শ্রমিক নেতার সমর্থকদের অভিযোগ ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের একাংশের রোষে পড়েই খুন হয়েছিলেন শঙ্কর গুহনিয়োগী। তাঁর সংঘর্ষ ও নির্মাণের অভিজ্ঞতা দেশের বিপ্লবী শ্রমিক আন্দোলনের অভ্যন্তরে এক আলোকবর্তিকা হিসেবে বহমান।

radd

বাঁকুড়া জেলার খেমুয়ার স্কুল মাঠে প্রয়াত রাধাবল্লভ মুখার্জির স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয় গত ২৭ সেপ্টেম্বর। সভায় উপস্থিত ছিলেন সিপিআই(এমএল) জেলা সম্পাদক বাবলু ব্যানার্জি সহ জেলা কমিটি সদস্য বৈদ্যনাথ চীনা, আদিত্য ধবল এবং আশেপাশের গ্রামের ৪০-৪৫ জন কৃষি মজুর সদস্য, যাদের নিয়ে প্রয়াত কমরেড রাজনীতি শুরু করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে  ছিলেন প্রথম দিকের সাথী গাজু বাউরি, গোপাল বাউরি, শ্যাম বাউরি। প্রয়াত কমরেডের স্মৃতির সরণী বেয়ে জেলা সম্পাদক বলেন, ১৯৮০র দশকের শুরুতেই পাটির নেতৃত্বে যখন মহাজনদের ঘর থেকে বন্ধকী মাল-জমির দলিল উদ্ধার আন্দোলন শুরু হয়েছিল তখন একেবারে সামনের সারিতে ছিলেন রাধাবল্লভ ওরফে হনু ঠাকুর। আজ যখন আবার দেশজুড়ে ঋণমুক্তির আন্দোলন শুরু হয়েছে তা হনু ঠাকুরদের সেই পুরোনো আন্দোলনকে মনে করিয়ে দিচ্ছে। ১৯৮৭ সালে পার্টি যখন প্রথম বিধানসভা নির্বাচনে অংশ নেয় তখন সারা ওন্দা কেন্দ্রে নাওয়া-খাওয়া ভুলে একটিমাত্র সাইকেল অবলম্বন করে ছুটে বেড়িয়েছেন। ১৯৮৮ সালের প্রথম দিকে পার্টির আজকের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জয়তু দেশমুখের নেতৃত্বে রতনপুর অঞ্চলের তখনকার এক ত্রাসসৃষ্টিকারী নেতার বাড়ি অভিযানের মিছিল হয়েছিল, সেই মিছিলের একেবারে সামনের সারিতে ছিলেন এই হনু ঠাকুর। যদিও ওই ত্রাসসৃষ্টিকারী ওই নেতা ঐ সময় গ্রামের বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। ১৯৮৮ সালেই তখনকার বামফ্রন্টের সমস্ত সন্ত্রাস-ভয়-ভ্রান্তি উপেক্ষা করে আইপিএফ-এর হয়ে পঞ্চায়েত ভোটে লড়াই করেছিলেন। আজকে যে পাড়ার বস্তির মানুষদের বাস্তু পাট্টার জন্য আন্দোলন হচ্ছে পার্টির নেতৃত্বে সেই বস্তি স্থাপনেও বড় ভুমিকা নিয়েছিলেন এই হনু ঠাকুর। এইরকম কমরেডকে স্মরণ করা মানে কৃষক-কৃষি মজুরদের মজুরি আদায় ও তাকে রক্ষা করার নতুন করে শপথ নেওয়ার।

খণ্ড-27
সংখ্যা-35