আজকের দেশব্রতী : অনলাইন সংখ্যা (২৩ জুলাই ২০২০)
issue

যে কোনো লেখা এককভাবে খুলতে এখানে অথবা লেখার হেডিং-এ ক্লিক করুন

28 Jul28

২৮ জুলাই ২০২০ সিপিআই(এমএল)-র প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক কমরেড চারু মজুমদারের শহীদ হওয়ার ৪৮তম বার্ষিকী এবং ১৯৭০-এর গোড়ার দিকে আমাদের আন্দোলন ও পার্টির প্রাথমিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ার পর পার্টিকে পুনর্গঠিত করার ৪৬তম বার্ষিকীও এই দিনটি। এই ঐতিহাসিক দিবস উপলক্ষ্যে আমরা কমরেড চারু মজুমদারকে এবং আমাদের পার্টি ও কমিউনিস্ট আন্দোলনের অন্যান্য সমস্ত শহীদ ও প্রয়াত কমরেডকে শ্রদ্ধা জানাব। আমরা তাঁদের অসমাপ্ত কাজ, ভারতকে সত্যিকারের মুক্ত ও গণতান্ত্রিক এক দেশ হিসেবে গড়ে তোলার তাঁদের স্বপ্ন পূরণ করার শপথ নেব।

পার্টির প্রতি তাঁর শেষতম বার্তায় কমরেড চারু মজুমদার পার্টিকে জীবন্ত রাখার ও জনগণের স্বার্থকেই পার্টির একমাত্র স্বার্থ হিসেবে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়েছিলেন। আজকের সংকটময় পরিস্থিতিতে ভারতের জনগণকে যখন কোভিড-১৯ মহামারী এবং মোদি সরকারের চাপিয়ে দেওয়া নিপীড়ক ও বিপর্যয়কর লকডাউনের যুগপৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে তখন জনগণের স্বার্থের সেবা করার আহ্বান বিশেষ প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে। আমরা আমাদের সমস্ত শক্তি ও সাহস নিয়ে জনগণের সেবা করব ও এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করব।

ভারতের জনগণ এবং ভারতের সংবিধান ও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে এক সর্বাত্মক যুদ্ধ নামিয়ে এনেছে এই মোদি সরকার। আমাদের সমস্ত সম্পদ-উৎস কর্পোরেট কোম্পানির অবাধ লুন্ঠনের জন্য উন্মুক্ত করে দিচ্ছে আর একটার পর একটা অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। যতভাবে সম্ভব আমাদের দেশকে ভেতর থেকে দুর্বল করে দিচ্ছে। সর্বোপরি, জনসাধারণকে অপরিহার্য সামগ্রী ও পরিষেবা জোগান দেওয়ার ন্যূনতম দায়িত্বটুকুও এড়িয়ে গিয়ে, নিজের সমস্যা নিজেই বুঝে নেওয়ার দায় জনতার কাঁধে চাপিয়ে, ধূর্তের মতো তার নাম দিয়েছে আত্মনির্ভরতা। জনসাধারণের মাঝে বিদ্বেষ ও বিভাজন ছড়িয়ে দেশকে দুর্বল করার আর দেশের সংবিধান ও গণতন্ত্র ধ্বংস করার ফ্যাসিস্ট ছক পরাস্ত করতে শপথ নেব আমরা।

ntr

 

কোভিড-১৯ সংক্রমণের মাঝে জীবনের ঝুঁকি নিয়েও সাহসের সাথে দেশের শ্রমজীবী জনতা, বিশেষত জনস্বাস্থ্য ও অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবার কর্মীরা, তাঁদের কর্তব্য পালন করে চলেছেন। আমরা তাঁদের আত্মনিয়োগ ও আত্মত্যাগকে কুর্ণিশ জানাই। আমাদের অনেক বুদ্ধিজীবি ও অ্যাক্টিভিস্ট মিথ্যা মামলায় পীড়নমূলক আইনে কারাগারের অন্ধকারে দিনাতিপাত করছেন। আমরা এই সমস্ত রাজনৈতিক বন্দীদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করি।

মোদি সরকারের ধূর্ত পরিকল্পনা অগ্রাহ্য করে ভারতীয় জনতার নতুন নতুন অংশ লড়াইয়ে সামিল হচ্ছেন মানবিক মর্যাদা ও গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে বাঁচতে। তাঁদের এই সমস্ত ন্যায্য সংগ্রামকে আমরা সমর্থন করি এবং তাঁদের চারপাশে আরও ব্যাপক বিস্তৃত সংহতি গড়ে তুলে জনতার ঐক্য, গণতান্ত্রিক জাগরণ ও উত্থান উন্নত স্তরে নিয়ে যাওয়ার শপথ নেব আমরা। জাগ্রত ঐক্যবদ্ধ জনতা কখনোই হেরে যেতে পারে না। জনতার ঐক্য ও উত্থানকে ভিত্তি করে আমরা ফ্যাসিবাদী বিপদকে পরাজিত করার ও অধিকার অর্জন করে সামনের দিকে এগিয়ে চলার শপথ নেব।

যখন ভারতের অধিকাংশ বিরোধী দল দোদুল্যমান, ফ্যাসিস্টদের সাথে সাঁটগাট করে নিচ্ছে আর আত্মসমর্পণ করছে, তখন গণতান্ত্রিক প্রতিরোধের সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে সিপিআই(এমএল) সাহসের সাথে নিরন্তর নিজের ভূমিকা রেখে চলেছে। আমাদের বিপ্লবী ঐতিহ্য ও পরিচিতির এটাই বৈশিষ্ট্য। এই কমিউনিস্ট বিপ্লবী ঐতিহ্য আমাদের গর্ব। সর্বশক্তি নিয়ে কষ্টসাধ্য প্রচেষ্টা ও আমাদের প্রাণবন্ত সংগঠনের ক্ষমতা দিয়ে এই ঐতিহ্যকে আরও মজবুত করার শপথ নেব আমরা।

জনসাধারণের আরও উন্নত সেবা করতে সিপিআই(এমএল)-কে শক্তিশালী করুন।
জনগণের আন্দোলন আরও জোরদার করতে সিপিআই(এমএল)-কে শক্তিশালী করুন।

vadee

জানাই ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টিএমসির এবারের ২১ স্মরণে এক বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে শরণাপন্ন হবেন বাংলার জনগণের, কারণ ভাগ্য নির্ধারণের ’২১-এর বিধানসভা নির্বাচন আর বেশি দূরে নয়। ক্ষমতায় ফেরার জন্য টক্কর দিতে তৃণমূল নেত্রী বিজেপিকে বানিয়েছেন প্রধান প্রতিপক্ষ। ভীষণ বাস্তব প্রয়োজনবাদীর মতো। কারণ সারা দেশের মতোই বাংলার বর্তমান বিরাজমান পরিস্থিতিতেও বিপজ্জনক বিজেপি হয়ে উঠছে ক্রমবর্দ্ধমান এক শক্তি। যা কিনা শাসকশ্রেণীর পার্টিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রতিক্রিয়াশীল, এক ফ্যাসিস্ট প্রতিনিধি। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের যা কিছু ঐতিহ্য, পরম্পরা, উত্তরাধিকার ঊর্দ্ধে তুলে ধরার, বহন করে চলার; সাংবিধানিক গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, যুক্তরাষ্ট্রীয়তা ও বহুত্বের যত যা প্রবাহ রয়েছে, তার সবকিছু ধ্বংস করতে বিজেপি উন্মত্ত তাদের গন্তব্য কর্পোরেট পুঁজির দালালি করা হিন্দুত্বের স্বর্গরাজ্য কায়েম করার পথ সুগম করতে। এরাজ্যে তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির কামড়াকামড়ির সম্পর্ক ক্ষমতার স্বার্থকে কেন্দ্র করে, শাসকশ্রেণীর বিভিন্ন অনেক দল রয়েছে যাদের বিজেপির বিরোধ করার ক্ষেত্রে রয়েছে নানা সমীকরণ। একমাত্র সংগ্রামী বামপন্থা ও প্রগতিপন্থার ধারাগুলোই বিজেপির মোকাবিলায় সবচেয়ে স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গীর অধিকারী ও সবথেকে দৃঢ় শক্তির চাবিকাঠি। এইসব অবিচল শক্তিকে আরও সামনে আসতে হবে, তীব্র গতিতে জায়গা নিতে হবে, শক্তি বাড়াতে হবে, নির্দ্ধারক শক্তি হয়ে ওঠার চ্যালেঞ্জ নিতে হবে।শান দিতে হবে দুদিক ধারওয়ালা হাতিয়ারে, রাজ্যের শাসক টিএমসি এবং কেন্দ্রের শাসক বিজেপির বিরুদ্ধে।

দলনেত্রী তাঁর ভার্চুয়াল সমাবেশ থেকে বিজেপির আগাপাশতলা তুলোধনা করে মাস্টার স্ট্রোক দেওয়ার চেষ্টা করেছেন এই বলে যে, গুজরাট থেকে বাংলাকে চালানো যাবে না, বাংলার জনগণই বাংলাকে চালাবে। এইভাবে বিজেপিকে বহিরাগত বলে হিসাবের বাইরে পতিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। কথা হল, বিজেপির শুধু বাংলা কেন, গুজরাট, উত্তরপ্রদেশ, কোনও রাজ্যকেই, কেন্দ্রের ক্ষমতায় থেকে দেশ চালানোর কোনও নৈতিক অধিকার নেই। বিজেপি যাবতীয় অসাধু উপায়ে কিভাবে রাজ্যে রাজ্যে ক্ষমতা দখল করছে, কত ছড়ি ঘুরিয়ে কেন্দ্র চালাচ্ছে, তা নিয়ে সমালোচনা-বিতর্ক-বিরোধিতাও উঠছে দেশজুড়ে। কিন্তু বাংলায় বিজেপির বাড়বৃদ্ধি হচ্ছে কী করে? তার বিস্তারের জমি তৈরি করে দিচ্ছে তৃণমূল রাজত্বের অপশাসন। তৃণমূলী দুর্নীতি-দলতন্ত্র-দমনতন্ত্রই কারণ। করোনার কামড় বসানো অবস্থায়ও এইসমস্ত অন্যায় রীতিনীতির কোনও পরিবর্তন নেই। টিএমসি সরকার বিনামূল্যে রেশন দিচ্ছে, আমপান ত্রাণ খাতে অর্থ বরাদ্দ করেছে, ভালো। কিন্তু সেসব নিয়ে দুর্নীতিও হয়েছে। দুর্নীতির হাত ছড়িয়ে গেছে জমি রক্ষার আন্দোলনের দেড় দশক আগের দুই দূর্গস্থান সিঙ্গুরে ও নন্দীগ্রামে পর্যন্ত, পঞ্চায়েত ক্ষমতার কারসাজিতে।

এইসব অভিযোগ অনেক দেরীতে হলেও মুখ্যমন্ত্রীকে স্বীকার করতে হয়েছে। কিন্তু পরক্ষণেই আবার অপচেষ্টা চলে তিলকে তাল করা হয়েছে বলে নস্যাৎ করার। দুর্নীতির অভিযোগে বাম গণতান্ত্রিক শক্তি বিহিত চেয়ে পথে নামতে চাইলে ‘স্বাস্থ্য বিধি'র অজুহাত দেখিয়ে পুলিশ-প্রশাসন অনুমতি দেয়নি, সরকারের আচরণ উপেক্ষা করে স্বাস্থ্য বিধি মেনে সীমিত সংখ্যায় সমাবেশিত হয়ে কর্মসূচী সংগঠিত করতে গেলে কোথাও করা হয়েছে গ্রেপ্তার, কোথাও লাঠিপেটা, জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে মিথ্যা মামলায়। অথচ শাসকদল তৃণমূল দিব্যি রাজ্যজুড়ে বুথওয়ারী জমায়েত করে ভার্চুয়াল সভা করল। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে অব্যবস্থা এতো চরমে পৌঁছেছে, তবু তার কণামাত্র সমালোচনা ও পরিবর্তনের পরামর্শ কোনোকিছুই মুখ্যমন্ত্রী শুনতে নারাজ। ডেপুটেশান, পিটিশান যায়, তার কোনও প্রতিকার মেলে না। তৃণমূল বাংলার যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা কেন্দ্রের মোদী জমানার হাতে কর্তনের অভিযোগ তোলে, শাসকের অংশবিশেষের স্বাধিকার নিয়ে সরব, কিন্তু জনগণের গণতন্ত্রকে, সমালোচনা ও বিরোধিতার অধিকারকে গ্রাহ্য করে না। এইসব দ্বিচারিতার বিরুদ্ধে বাম গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর জোরদার ভূমিকা নেওয়ার ওপর নির্ভর করছে বিজেপির তৎপরতাকে প্রতিহত করতে পারার কার্যকারিতা।

kisdaer

৯ই আগস্ট ১৯৪২-এর ডাক ছিল : “ব্রিটিশ ভারত ছাড়ো”
৯ই আগস্ট ২০২০-এর ডাক হোক : “কর্পোরেটরা কৃষি থেকে দূর হঠো”

৯ আগস্ট সারা দেশের কৃষকরা কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে নিম্নলিখিত ৯টি দাবিতে দেশব্যাপী বিক্ষোভ প্রদর্শন করবে।

১। চাই ঋণমুক্তি

প্রাথমিকভাবে, এই বছর করোনা সংক্রমণ জনিত কারনে সমস্ত কৃষকের রবি ফসলের ঋণ মকুব করতে হবে এবং খরিফ ফসলের জন্য কেসিসি (কিষাণ ক্রেডিট কার্ড) দিতে হবে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির ঋণের সুদ মকুব করতে হবে। এই সময়কালে ঋণ আদায় বন্ধ রাখতে হবে। এরপর সমস্ত কৃষকের সম্পূর্ণ ঋণমুক্তির জন্য সরকারকে আইন পাস করতে হবে।

২। ফসলের পুরো দাম দাও

সমস্ত ফসল, সবজি, ফলমূল এবং দুধের এমএসপি (ন্যূনতম সহায়ক মূল্য) কমপক্ষে সি-২ খরচের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি ঘোষণা করতে হবে। এই দামে ফসল কেনার নিশ্চয়তা সরকারকে দিতে হবে। এমএসপির চেয়ে কম দামে ফসল ক্রয়কে ফৌজদারি অপরাধ হিসাবে ঘোষণা করতে হবে।

৩। ০৩-০৬-২০২০ তারিখে জারি করা কৃষক বিরোধী তিনটি অধ্যাদেশ বাতিল করো
ক) কৃষিপণ্য ব্যবসা বাণিজ্য উৎসাহ ও সহায়তা প্রদান অধ্যাদেশ
খ) কৃষকের (ক্ষমতায়ন ও সুরক্ষা) মূল্য সুনিশ্চিতকরণ ও কৃষি কাজের চুক্তি সংক্রান্ত অধ্যাদেশ
গ) অত্যাবশ্যক পণ্য অধিনিয়ম (সংশোধনী) ২০২০

far

 

এই তিনটি অধ্যাদেশ সরকারকে ফিরিয়ে নিতে হবে। এগুলো কৃষক-বিরোধী। এগুলোর জন্য ফসলের দাম কমে যাবে। চাষের খরচ বেড়ে যাবে। এবং বীজ সুরক্ষা শেষ হয়ে যাবে। খাদ্য সুরক্ষা এবং সরকারী হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা শেষ হয়ে যাবে। এইগুলো পুরোদমে কর্পোরেট কোম্পানিগুলিকে উৎসাহ দেবে, এবং এগুলো খাদ্য সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ, মজুতদারী ও কালোবাজারি বাড়িয়ে দেবে। কৃষকরা “এক দেশ এক বাজার” চায় না। তারা চায় “এক দেশ এক ন্যূনতম সহায়ক মূল্য”।

৪। ডিজেলের দাম কমাও
ডিজেলের দাম অর্ধেক করতে হবে। কেননা ২০১৪ সাল থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম ৬০% কমেছে, কিন্তু ভারত সরকারের কর দ্বিগুণ বেড়েছে।

৫। ২০২০ সালের বিদ্যুৎ বিল প্রত্যাহার করো
করোনা সংক্রমণের কারণে কৃষক, ছোট দোকানদার, ক্ষুদ্র এবং প্রান্তিক উদ্যোগী এবং সাধারণ মানুষের বিদ্যুৎ বিল মুকুব করতে হবে। ডিবিটি প্রকল্প অনুমোদন করা চলবে না (ডিবিটি-ডাইরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার – অর্থাৎ ভর্তুকি সরাসরি ব্যাংক এ্যাকাউন্টে পাঠানো)।

৬। এই বছর কৃষকদের ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারী-মার্চ মাসে শিলাবৃষ্টি, অসময়ের বৃষ্টিপাত এবং লকডাউনের কারণে সবজি, ফলমূল, ফসল এবং দুধের ক্ষয়ক্ষতির জন্য সরকারকে কৃষকদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

mon

 

৭। মনরেগার আওতাধীন কাজের গ্যারান্টি বাড়াও
এ বছর মনরেগার কাজ ২০০ দিন করতে হবে এবং ন্যূনতম মজুরির হারে মজুরি দিতে হবে যাতে ক্ষেতমজুর, ছোট কৃষক, কাজ ছেড়ে গ্রামে ফিরে আসা মজুর এবং অনাবাসী কৃষকরা এই সংকটের সময় কাজ পেতে পারে।

৮। সকলের জন্য পূর্ণ রেশন চাই
করোনা সংক্রমণের পুরো সময়কালে, সরকারকে প্রত্যেক ব্যক্তিকে পূর্ণ রেশন দিতে হবে যাতে কৃষকের কঠোর পরিশ্রমের ফলে তৈরি দেশের খাদ্যভাণ্ডার মানুষের প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়। রেশনে প্রতি মাসে ইউনিট পিছু ১৫ কেজি চাল/গম, ১ কেজি তেল, ১ কেজি ডাল, ১ কেজি চিনি দিতে হবে।

for

 

৯। কৃষিক্ষেত্র ও আদিবাসীদের জমি কোম্পানিদের হাতে তুলে দেওয়া চলবে না
ক্যাম্পা (CAMPA) আইনের নামে বনের জমিতে জোর করে বৃক্ষ রোপণ বন্ধ করতে হবে (CAMPA কম্পেনসেটরি অ্যাফরেস্টেশন ফাণ্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাণ্ড প্ল্যানিং অথরিটি অ্যাক্ট। বিভিন্ন প্রকল্পে ধ্বংস হওয়া অরণ্যের ক্ষতি পূরণ করার জন্য বিকল্প জমিতে বনসৃজন করার কথা এই আইন অনুযায়ী। কিন্তু ‘বিকল্প’ জমির বদলে অরণ্যের অধিকার আইনে আদিবাসীদের প্রাপ্য জমি জবর দখল করে এই ক্ষতিপূরণমূলক বনসৃজন চলে)।

- জয়তু দেশমুখ 

grada

বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন স্তরে চলা ঋণমুক্তি আন্দোলনের বিষয়ে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে একটি অনলাইন মিটিং সংগঠিত করে সমগ্র বিষয়টি পর্যালোচনা করা হয় এবং কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

দেশ জুড়েই ঋণের ফাঁদে জড়িয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষের খুবই বড় একটা অংশ। বন্ধনের মতো মাইক্রো ফাইনান্স কোম্পানিগুলি চড়া সুদ নিচ্ছে এবং আদায়ে যথেচ্ছাচার চালাচ্ছে। অবিলম্বে এ প্রশ্নে সরকারি নিয়ন্ত্রণ জরুরি। স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির মহিলাদের ঋণফাঁদ কেটে বার হতে কাজ ও নিয়মিত উপার্জনের ব্যবস্থা দরকার। স্বনির্ভরতার এই প্রশ্নে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। এই বিষয়গুলিকে কেন্দ্রে রেখে বৃহত্তর আন্দোলন সংগঠিত করতে গ্রামাঞ্চলে একযোগে সর্বত্র উদ্যোগ নিতে হবে পার্টিকে।

সরকার বারবার শিল্পপতিদের ঋণমুক্ত (রাইট-অফ) করে, বেল আউট দেয়, ছাড় দেয়। বিজয় মাল্যদের ব্যাঙ্কের টাকা মেরে বিদেশ পালাতে সাহায্য করে। উল্টো পরিস্থিতিতে আছে আমজনতা। স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির মহিলারা জড়িয়ে পড়েন ঋণফাঁদে; ইএমআই দিতে না পারায় সরকারি/বেসরকারী ব্যাঙ্ক, মাইক্রো ফাইনান্সের মহাজনদের বেলাগাম চাপের মুখে দিশেহারা দরিদ্র গ্রামবাসী; কৃষক থেকে গ্রাম-শহরের নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত, কাজ হারিয়ে নিয়মিত উপার্জনহারা শ্রমিক, কর্মচারী, বহুজাতিক কোম্পানির দ্রুত প্রসারমান ছাঁটাই কর্মীরা। এই বৈপরীত্যে ঋণমুক্তি আন্দোলন প্রাসঙ্গিক ও সম্ভাবনাময়।

প্যানডেমিক পরিস্থিতিতে গ্রাম-শহর নির্বিশেষে প্রতিদিন মানুষ কাজ হারাচ্ছেন, কর্মী-ছাঁটাই চলছে। এমতাবস্থায়, হাউস বিল্ডিং লোন, অন্যান্য ফাইনান্সের ইএমআই মেটাতে দিশেহারা গ্রাম-শহরের মধ্যবিত্তদেরও বিরাট অংশ। শহরাঞ্চলেও মাইক্রো ফাইনান্সের চড়া মহাজনী কারবার নিম্নবিত্তদের মধ্যে জাল বিস্তার করেছে। উপরিউক্ত দাবিগুলিতে শহরাঞ্চলও আমাদের উদ্যোগের অপেক্ষায়।

সাধারণভাবে, ঋণমুক্তি কমিটির নামে আমরা এই আন্দোলন কর্মসূচী সংগঠিত করতে পারি। কোথাও ‘কৃষি ও গ্রামীণ মজুর সমিতি’ ও কোথাও বা ‘প্রগতিশীল মহিলা সমিতি’ এই আন্দোলন সংগঠিত করছে।

pun

 

এই আন্দোলনের কয়েকটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হল –

(১) অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আন্দোলন সংগঠিত হচ্ছে স্বতস্ফূর্তভাবে, নিচুতলার চাপে।

(২) আন্দোলনকারীদের অধিকাংশই মহিলা। আন্দোলনের ধারাবাহিকতা, বিস্তার ও গতিময়তার লক্ষ্যে আন্দোলনরত মহিলাদের নেতৃত্বের সামনে আনার কাজটি গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক।

(৩) পঞ্জাবের অধিকাংশ জেলায় এই আন্দোলন আয়ারলা সংগঠকদের উদ্যোগে ছড়িয়েছে। আসামেও কয়েকটি জেলায় পার্টি কর্মীরা সামনে আছেন। সেখানে ১২টি সংগঠনকে (অন্যরা এনজিও) নিয়ে গড়ে উঠেছে যৌথ মঞ্চ। তামিলনাড়ুতে আমাদের আন্দোলনের চাপে একাধিক জেলাশাসক মাইক্রো ফাইনান্সের জুলুমবাজির বিরুদ্ধে মাইক-প্রচার সহ খবরের কাগজে নোটিশ দিতে বাধ্য হয়েছেন। বিহারের চলমান আন্দোলনকে বৃহত্তর আকার দিতে উদ্যোগ চলছে।

এই পরিস্থিতিতে আগামী ১৩ আগস্ট, স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে, দেশজুড়ে সর্বত্র যথেষ্ট উদ্যোগ, প্রস্তুতি ও গুরুত্ব সহকারে “ঋণ মুক্তি দিবস” পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে। একই সাথে গ্রাম ও এলাকা স্তরে বৈঠক, বিডিও ও জেলা শাসকের কাছে ডেপুটেশন ইত্যাদি উদ্যোগ এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্য, যেখানে জনগণের মধ্যে দুটি প্রধান শিবিরে বিভক্ত হয়ে থাকার দীর্ঘ প্রবণতা, সেখানে ঋণ মুক্তি কমিটির মতো বৃহত্তর অ্যাপ্রোচ নিয়ে মানুষকে সংগঠিত করার প্রচেষ্টা উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জন করছে।

ra

 

ইতিমধ্যে হুগলির বেশ কয়েকটি ব্লক ও বর্ধমানের জামালপুর, মেমারী, মন্তেশ্বর ব্লকেও উদ্যোগ বিকাশ লাভ করেছে। নতুন এই ব্লকগুলিতে বিডিও ডেপুটেশনের প্রচেষ্টা চলছে। উত্তরবঙ্গের জেলাগুলি সহ এরাজ্যে আমাদের পার্টি কাজের গুরুত্বপূর্ণ জেলাগুলিতে দ্রুতই ঋণ মুক্তি কমিটি গঠন করে উদ্যোগ শুরু করার বিষয়টি আলোচিত হয়েছে।

ফিনান্স পুঁজির এই দৌরাত্ম্য, আধুনিক কোম্পানির আড়ালে মহাজনী কারবারের ফিরে আসা – এসব নিয়ে তত্ত্বগতভাবে আরো সমৃদ্ধ হওয়াও এসময় গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ বলে কেন্দ্রীয় বৈঠক থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। কমরেড শংকর, সজল অধিকারী সহ অন্যান্য কমরেডরা ধারাবাহিক আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে এই কাজটি এগিয়ে নিয়ে যাবেন।

কেন্দ্রীয় কমিটির এই বৈঠকে সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য, পলিটব্যুরো সদস্য কবিতা কৃষ্ণান, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদক পার্থ ঘোষ সহ বিভিন্ন রাজ্যের গ্রামাঞ্চলে কর্মরত নেতৃত্ব উপস্থিত ছিলেন এবং পরবর্তীতে এরকম বৈঠক আবার সংগঠিত করা হবে বলে জানিয়েছেন সাধারণ সম্পাদক।

- সজল অধিকারী  

kolkdar

১৬ জুলাই সিপিআই(এম) রাজ্য দপ্তরে বাম ও সহযোগী দলগুলির এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি দলের পক্ষে একজন করে প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের মূল আলোচ্য ছিল দেশ ও রাজ্যে যেভাবে কোভিড-১৯ সংক্রমণ বাড়ছে, মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, এমনকি বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর খবর আসছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে কী কী উদ্যোগ নেওয়া যায়। আলোচনার দুটি অংশ ছিল। প্রথমত জনগণের সক্রিয়তা বৃদ্ধির জন্য গণসচেতনতা প্রচার অভিযান সংগঠিত করা। দ্বিতীয়ত বেহাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া। ১৮-১৯ জুলাই কলকাতায় বিভিন্ন বসতি অঞ্চলে, বাজার-হাটের সামনে ছোট ছোট প্রচার সভা, পোস্টার প্রদর্শনী ইত্যাদির মাধ্যমে এই গণসচেতনতা বৃদ্ধির প্রচার চালাতে হবে। অন্যান্য জেলাগুলিতে পারস্পরিক আলোচনার ভিত্তিতে এই সচেতনতা কর্মসূচী কিভাবে রূপায়িত করা যায় দেখতে হবে। নিছক নির্দেশাত্বক ঢঙে নয়, কোভিড১৯ রোগটি সম্পর্কে এবং সংক্রমণ কিভাবে ছড়ায় সে সম্পর্কে একটা বৈজ্ঞানিক ধারণা মানুষের মধ্যে নিয়ে যেতে হবে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে বিকল্প ধারণাগুলো এবং কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের ব্যর্থতা, দায়হীনতা তুলে ধরতে হবে। একটা প্রচেষ্টা চালাতে হবে এলাকার চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মী, বিভিন্ন বিজ্ঞানমঞ্চের কর্মীদের এই প্রচারে সামিল করানোর। পরিচিত বিভিন্ন প্যাথ ল্যাবের সাথে কথা বলে অল্প খরচে টেষ্ট করানোর একটা উদ্যোগ নেওয়ার জন্য প্রচেষ্টা চালানো হবে। কোথায় গেলে টেষ্ট হবে, সংক্রামিত হলে কী করবেন, সেসম্পর্কে মানুষকে একটা ধারণা দিতে হবে। আতঙ্ক মুক্ত করার পাশাপাশি কুসংস্কার মুক্ত করতে হবে – বোঝাতে হবে রোগকে প্রতিরোধ কর, রোগীকে সারিয়ে তোল। কোভিড সংক্রমণের সঙ্গে ডেঙ্গি প্রতিরোধের কথাও তুলে ধরতে হবে। এই অভিযান এক-দুদিনে শেষ হবে না। একটা বড় সময় ধরে চালাতে হবে। জুলাই মাসের শেষ দিকে কলকাতায় গণঅবস্থানের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের ব্যর্থতার বিরুদ্ধে প্রচার চালোনোর পাশাপাশি আমাদের দাবিগুলি তুলে ধরা হবে। জেলাগুলিও এই ধরনের কর্মসূচী নিলে ভাল হয়।

- পার্থ ঘোষ, রাজ্য সম্পাদক, সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন 

locdde

কেন্দ্রের সরকার কোভিড১৯ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। এ বছরের জানুয়ারী মাসের শুরুতে ভারতে কেরলে প্রথম কোভিড১৯ সংক্রমণের খবর মেলে। জানুয়ারী থেকে মার্চ মাস সরকার ব্যস্ত থাকল এনআরসি, সিএএ নিয়ে। দেশের নাগরিকদের নতুন করে নাগরিকত্বের প্রমাণ নিয়ে। তারপর ব্যস্ত হলো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্বর্ধনা নিয়ে। দিল্লীতে সুপরিকল্পিত ও নির্দিষ্ট লক্ষ্যে দাঙ্গা করতে। তারপর মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেস মন্ত্রীসভা ফেলার কাজে। তখনও এদেশে কোভিড১৯ সংক্রামিত রোগীর সংখ্যা ১০০ ছাড়ায়নি। ১৪ মার্চ বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (হু) গোটা বিশ্বকে যখন কোভিড প্যান্ডেমিকের বিপদ সংকেত দিচ্ছে, তখন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক কোনো চিন্তার কারণ নেই বলে বিবৃতি দিচ্ছে।

তখনও অবাধে বিদেশী উড়ানে লক্ষ লক্ষ মানুষ মুম্বাই, দিল্লি, চেন্নাই, কলকাতা বিমানবন্দরে নেমে জনসমুদ্রে মিশছে। কোনো পরীক্ষা নিরীক্ষা বা কোয়ারান্টাইনের ব্যবস্থা হল না। বিদেশ থেকে রোগ এলো, ছড়িয়ে পড়লো গোটা দেশে।

তারপর চারঘন্টার নোটিশে অপরিকল্পিত লকডাউন, প্রথমে ২১ দিন, আজ চার মাস হতে চললো।

কাজহারা পরিযায়ী শ্রমিকদের লং মার্চ - দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত – দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়লো, ক্ষুধার যন্ত্রণায় রাতের ঘুম চলে গেল ....

না, দেশজুড়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতির জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া হল না, স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধিও হলো না। চললো জনগণকে দিয়ে কখনো থালা পেটানো, কখনো বা দীপ জ্বালানোর বুজরুকি ! সংখ্যালঘুদের মিথ্যে দায়ী করে ছড়ানো হলো ঘৃণার রাজনীতি। লকডাউনের নামে আপৎকালীন আইন অপব্যবহার করে চললো বিরোধীদের কন্ঠরোধ, গণতন্ত্র হরণ আর পুলিশী হুকুমদারী।

দেশের মানুষ যখন দাবি জানাচ্ছে রেশনের মাধ্যমে সাবান, মাস্ক, স্যানিটাইজার বন্টন করতে হবে, তখন এই জনবিরোধী সরকার আজকের দিনে এই অত্যাবশকীয় পণ্যের উপর ১৮ শতাংশ জিএসটি চাপিয়ে দিলো!

দেশজুড়ে সরকারী স্বাস্থ্য ব্যবস্থার এই ভঙ্গুর দশার পূর্ণ সুযোগ নিয়ে লুঠ চালাচ্ছে বেসরকারী হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলো। অবিলম্বে সরকারকে এদের উপর নিয়ন্ত্রণ জারী করা জরুরি। যখন এই দাবিতে সমাজ সচেতন মানুষ সোচ্চার তখন সুপ্রীম কোর্টের এই লুঠেরা স্বাস্থ্য কারবারীদের হয়ে রায় প্রদান দেশের পক্ষে অশনি সংকেত! বামপন্থী দল ও বিভিন্ন গণসংগঠনগুলির চাপে কিছু চাল-ডালের ব্যবস্থা হলেও মানুষের হাতে ন্যূনতম কোনো অর্থের (লকডাউন সময়কালে মাসে ৭,৫০০ টাকা করে ভাতা) জোগান দেওয়া হলো না। গোটা অর্থনীতি গভীরতম মন্দায় আক্রান্ত। অথচ এই সময়ে কর্পোরেট পুঁজিপতিদের ৬৮,০০০ হাজার কোটি টাকা ছাড় দেওয়া হলো। এদিকে চলছে কাজহারা গ্রামীণ গরিব মানুষের কাছ থেকে ঋণের টাকা উদ্ধারের নামে হুমকি ও হেনস্তা! আর্থিক সংকটের কারণে যদি বড় লোকের ঋণ মকুব হয় তবে লকডাউন আবহে গরিব মানুষদের কেন ঋণমুক্ত করা হবে না?

এখন চলছে তাক লাগিয়ে, চিকিৎসা বিজ্ঞানের নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কত কম সময়ে বাজারে ভ্যাকসিন আনা যায়! বিজ্ঞানমনস্ক মানুষের সম্মেলিত প্রতিবাদে তা আজ প্রশ্নের মুখে।

hos

দিশাহীন রাজ্য সরকার ও বেহাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা

কোভিড১৯ নিয়ন্ত্রণের মূল চালিকা শক্তি টেষ্ট-আরও টেস্ট-রোগ নির্ণয়-আইসোলেশন-চিকিৎসা। অথচ রাজ্য সরকার শুরু থেকেই একে অমান্য করা, মিথ্যাচার করা, তথ্য গোপন করা এবং এমনকি মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে পর্যন্ত !

কোথায় টেষ্ট হবে, কোথায় ভর্তি হবে, আদৌ ভর্তি হতে হবে কিনা কেউ বলার নেই।

কোথায় গেলে বেড মিলবে, কিভাবে হাসপাতালে পৌঁছবে সব কিছুই অব্যবস্থার শিকার। কতসব সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল হলো, কত কোভিড বেড হলো – এখন কোনো কিছুরই দেখা নাই।

মুখ্যমন্ত্রী রাস্তায় খড়ির গণ্ডি কাটছেন। ফটো উঠছে ক্লিক ক্লিক। তিনিই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, তিনিই মুখ্যমন্ত্রী, তিনিই আমপান দুর্নীতি দেখছেন, আইন শৃঙ্খলার সমস্যা দেখছেন। আরও কত কী। অবসরে স্বাস্থ্যও দেখছেন। যা হবার তাই হচ্ছে। এই মহামারীর দিনে দলেরই অন্য কাউকে পূর্ণ সময়ের স্বাস্থ্য মন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া যেত না?

চিকিৎসা হওয়া বা না হওয়ার পর মৃতদেহের কি হবে, তা নিয়েও চলছে আর একপ্রস্ত নাটক! রাস্তায়, দোকানে, রেফ্রিজারেটরে দেহ পড়ে থাকবে। মৃত্যুর পরও শান্তি নেই।

ননকোভিড চিকিৎসা ব্যবস্থাও তথৈবচ। নবান্ন থেকে সরকার জানাচ্ছে যে তারা নাকি কোভিডের চেয়ে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে, অথচ জনগণের চিন্তায় রাতের ঘুম চলে গেছে।

kkj

রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের দাবি

  • হাসপাতাল থেকে রোগী ফেরানো ও হয়রানি বন্ধ কর।
  • তরুণ শুভ্রজিতের মতো যারা এই সময়ে বিনা চিকিৎসায় মারা গেলেন সেই সব মৃত্যুর বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাই।
  • বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
  • কোভিড-ননকোভিড চিকিৎসার স্পষ্ট নির্দেশিকা রাজ্য সরকারকে জানাতে হবে।
  • কোভিড-ননকোভিড সমস্ত রোগীকে জরুরি পরিষেবা দিতে হবে।
  • জরুরিভিত্তিতে ননকোভিড চিকিৎসার জন্য মেক-শিফট হাসপাতাল চালু কর।
  • রাজ্য সরকারের অধীন ইএসআই হাসপাতালে দ্রুত কোভিড চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
  • সমস্ত কোভিড হাসপাতালে যথেষ্ট বেড, ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, অক্সিজেন এবং ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • কোভিড হাসপাতালে ক্ষমতাশালীদের “বেড বুক” করা বন্ধ কর।
  • কোয়ারান্টিন সেন্টারে সর্বক্ষণের ডাক্তার নিয়োগ করে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
  • মহিলা কোয়ারান্টিন সেন্টারে মহিলাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।

পৌরসভা ও পঞ্চায়েতের কাছে আমাদের দাবি

  • করোনা মোকাবিলায় পৌরসভা/পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে শুধুমাত্র লকডাউন চাপিয়ে দেওয়া নয়, জনগণকে সচেতন ও আস্বস্ত করতে প্রচার করা।
  • প্রতিটি ওয়ার্ড/গ্রামে হেল্প ডেস্ক চালু করা।
  • প্রতিটি অঞ্চলে আইসোলেশন সেন্টার ও সেফ হোম গঠন।
  • পৌরসভা/পঞ্চায়েতকে ঐ অঞ্চলের বসবাসকারী ডাক্তারদের নিয়ে বিশেষ পরামর্শ/তদারকি কমিটি গঠন ও ঐ অঞ্চলে যে সমস্ত স্বল্প সংক্রমিত রোগী বাড়িতে বা সেফ হোমে আছেন তাদের নিয়মিত মনিটরিং করার দায়িত্ব দেওয়া।
  • পৌরসভা/পঞ্চায়েতকে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করে স্বল্পমূল্যে/বিনামূল্যে জনগনের মধ্যে বিতরণ করতে হবে।
dss

প্রতিটি অঞ্চলে প্রচারে আরো যে বিষয়গুলো নির্দিষ্ট করে মানুষের কাছে নিয়ে যেতে হবে

  • ১। প্রতিটি পৌরসভা ও ব্লকে যে নোডাল অফিসার বা এই ব্যাপারে দায়িত্বে আছেন তাদের নাম, ফোন নম্বর ও তার দায়িত্ব সম্পর্কে জনগনকে অবহিত করা।
  • ২। জেলা CMOH-এর ফোন ও WhatsApp নম্বর (যাতে করোনা রোগী ভর্তির ক্ষেত্রে সাহায্য চেয়ে লিখিত আবেদন করতে পারেন) জানানো।
  • ৩। অঞ্চলে কোথায় সরকারী ও বেসরকারী কোভিড টেস্ট কেন্দ্র আছে তার ঠিকানা, ফোন নং, খরচ ও পদ্ধতি জানানো।
  • ৪। করোনার সংক্রমণ থেকে বাঁচতে অঞ্চলের মানুষকে কোন কোন স্বাস্থ্যবিধি (মাস্ক, হাত ধোওয়া, দূরত্ব, বাজার-দোকানে ভিড় এড়ানো ...) মেনে চলা উচিত সে সম্পর্কে সচেতন করা।
  • ৫। কোনো ব্যক্তি করোনা রোগ জানতে পারলে তার করণীয় পদক্ষেপগুলো কী, বিস্তৃত ভাবে তাকে জানানো।
  • ৬। ঐ অঞ্চলের ননকোভিড চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোর বা হাসপাতালের নাম জানানো।
  • ৭। অঞ্চলে এ্যাম্বুলেন্স ও অক্সিজেন কোথায় পাওয়া যায় তার ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর জানিয়ে দেওয়া।
  • ৮। অঞ্চলের যে সমস্ত ডাক্তাররা চেম্বার খুলছেন তাদের নাম ঠিকানা ফোন নং। যারা খুলছেন না অঞ্চলের মানুষদের পক্ষ থেকে তাদের কাছে বিনীত আবেদন করে চাপ সৃষ্টি করার আহ্বান জানানো।
  • ৯। এই সময় পাড়ায় কোনো ব্যক্তি করোনা বা অন্য রোগাক্রান্ত হলে সেই পরিবারের পাশে দাঁড়াতে সহ নাগরিকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য তুলে ধরা। এই লক্ষ্যে পাড়ায় পাড়ায় স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গড়ে তোলার আবেদন করা।
  • ১০। অঞ্চলের বিশিষ্ট নাগরিক ও সামাজিক কর্মীদের নিয়ে এ ব্যাপারে জনগনকে সহযোগিতা করতে হেল্প ডেস্ক গঠন ও তার যোগাযোগ নম্বর অঞ্চলের মানুষকে জানানো।
  • ১১। উপরোক্ত বিষয়গুলো নিয়ে অঞ্চলে মাইকিং, প্রচারপত্র বিলি বা পোস্টারিং করা।

এই ব্যাপারে আঞ্চলিক প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের দায়বদ্ধ করা, চাপ বাড়ানো ও তাদের সহযোগিতা নেওয়া।

- পার্থ ঘোষ  

saddae

বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া : রাজ্যের বেহাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পরিকাঠামোর উন্নতির দাবিতে গত ১৫ জুলাই রাজ্যজুড়ে অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিবাদ কর্মসূচী ছিলো। বাঁকুড়া জেলার কয়েকটি জায়গার (শালবেদিয়া, বেলিয়াতোড়, বিষ্ণুপুর) ছাত্রছাত্রীরা এই কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করে। মূলত, বিষ্ণুপুরে এইদিন সারাদিন জুড়ে কর্মসূচী পালিত হয়। প্রথমে বাড়িতে থেকে পোস্টারে প্রতিবাদ করা হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। পরে বেলা ১২টা নাগাদ বিষ্ণুপুর আইসা’র পক্ষ থেকে মহকুমাশাসককে একটি প্রতিনিধি ডেপুটেশন দেওয়া হয় “কোভিড সংক্রমণ রোধের জন্য ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে”।

কোভিড-১৯ অতিমারীর সংকটকালে বিভিন্ন শহর ও গ্রামগুলিতে গুজব, অন্ধবিশ্বাস, যুক্তিহীন ধ্যান-ধারণা ফুটে উঠছে এবং বর্তমান স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বেহাল দশা দেখে জনগণ স্তম্ভিত। তাই যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নতি ও সচেতনতা বৃদ্ধি আমাদের একান্ত কাম্য বলে আমরা মহকুমাশাসককে জানাই। তাছাড়া সম্পূর্ণ বাঁকুড়া জেলার মধ্যে আপাতত একটি হাসপাতালকে (ওন্দা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল) কোভিড১৯-এর চিকিৎসার জন্য ধার্য্য করা হয়েছে। আমরা দাবি করেছি, আাগামীতে জেলা জুড়ে সংক্রমণ বাড়লে শুধুমাত্র একটি হাসপাতালে হবে না, সেই ক্ষেত্রে বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালেও কোভিড চিকিৎসা করতে হবে, কারণ তাতে এখানকার এলাকার মানুষও উপকৃত হবে। মহকুমাশাসক জানিয়েছেন এই ব্যাপারে তাঁদের পরিকল্পনা আছে, আরও গুরুত্ব সহকারে ভেবে দেখবেন।

সম্প্রতি, বিষ্ণুপুর শহরে যে মহিলার প্রথম কোভিড১৯ পজিটিভ হয়, তাকে নিয়ে বিভিন্ন নারীবিদ্বেষী পোস্ট এবং অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ চলতে থাকে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এই ধরনের কু-মন্তব্যের বিরুদ্ধেও যেন প্রশাসন কড়া পদক্ষেপ নেয়, তা নিয়েও মহকুমাশাসকের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথোপকথন চলে। তাছাড়া প্রশাসনিক উদ্যোগে ছাত্রসমাজ ও শিক্ষকদের পাশে নিয়ে ব্যাপক জনসচেতনতা গড়ার দাবিও তোলা হয়। এই জনপ্রচার অভিযানে আমরা আইসা’র পক্ষ থেকে সর্বতভাবে প্রশাসনকে সাহায্য করতে বদ্ধ পরিকর ও দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত বলে প্রশাসনকে জানানো হয়।

মহকুমাশাসক অনুপ দত্ত মহাশয় আমাদের প্রত্যেকটি দাবিকেই সমর্থন জানিয়েছেন এবং আগামীতে এই দাবির ভিত্তিতে কী কী করা যায় তা নিয়ে জেলাশাসকের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন। সবশেষে বিকেলের দিকে বিষ্ণুপুর শহর জুড়ে পোস্টারিংয়ের মাধ্যমে প্রতিবাদ কর্মসূচী সম্পন্ন হয়।

- তিতাস গুপ্ত

nab

করোনা-প্রতিষেধক আবিষ্কারের পর ব্যাপক মানুষের ওপর তা প্রয়োগ করে ভয় দূর করা এখনও অনেক দেরী। এই প্রেক্ষিতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম চিকিৎসা পদ্ধতি পরীক্ষামূলক ভাবে নানা দেশে কার্যকর হতে দেখা যাচ্ছে। ইউরোপ, এশিয়া, দক্ষিণ আমেরিকার কিছু দেশে, বিশেষত আমাদের দেশে এই চিকিৎসা পরীক্ষামূলক ভাবে ভালো ফল দিচ্ছে, যদিও তা নামমাত্র প্রচার পেয়েছে।

জন্মলগ্ন থেকে আজ অবধি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা মহামারীগুলোর ক্ষেত্রে অসাধারণ ফল প্রদান করেছে। পৃথিবী জুড়ে মহামারীর ফ্লু যেমন ছড়িয়েছে, আলোচ্য চিকিৎসা পদ্ধতিটিও তেমনই সাফল্যের ডিঙিতে চড়ে তত বিস্তার লাভ করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছে। এই পদ্ধতির সাধারণ প্রকরণ ব্যক্তিকেন্দ্রিক হলেও মহামারীর ক্ষেত্রে রোগের বাহ্যিক লক্ষণগুলির সাধারণ বৈশিষ্ট্য মাথায় রেখে বিশ্বের এক এক অঞ্চলের সাধারণ প্রতিষেধক (প্রোফিল্যাক্সিস) ঠিক করা হয়। এই পদ্ধতির আবিষ্কর্তা সামুয়েল হ্যানিম্যান যেমন তৎকালীন স্কারলেট ফিভার (1801)-এর সময় এই প্রতিষেধক চালু করেছিলেন 'বেলেডোনা' নামক ওষুধ ব্যবহার করে শতকরা একশো ভাগ সাফল্য পেয়ে।

১৯১৮-২০ সালের বহু আলোচিত স্প্যানিশ ফ্লুয়ের সময় ইনফ্লুয়েঞ্জা ও নিউমোনিয়ার যৌথ মহামারীতে ৫ থেকে ১০ কোটি মানুষের মৃত্যুর সময় প্রচলিত আধুনিক বৈজ্ঞানিক চিকিৎসার অধীনে থাকা রোগিদের ৩০ শতাংশের মৃত্যু হয়ে থাকলেও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাধীনদের মৃত্যুর হার ছিল মাত্র ১ থেকে ২ শতাংশ। বসন্ত, কলেরা, হাম, টাইফাস, চিকেনগুনিয়া প্রভৃতি নানান মহামারীতেই উল্লেখযোগ্য ভুমিকা পালন করে এই চিকিৎসা পদ্ধতি।

আজও সেই ধারাবাহিকতায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। প্রচারহীন অবস্থাতেই হোমিও চিকিৎসকগণ নিজেদের সুস্থ রেখেই কোভিড১৯ রোগীদের চিকিৎসা চালিয়ে গিয়ে সফল হচ্ছেন। অন্য দিকে আয়ুর্বেদ চিকিৎসকগণও সফলতা পাচ্ছেন। সার্বজনীন প্রতিষেধক চালু না হওয়া পর্যন্ত এই সমস্ত সমান্তরাল ধারার চিকিৎসা বস্তুগতভাবেই গুরুত্ব বহন করছে। জনপ্রিয়তাও পাচ্ছে। বিতর্কিত হলেও "আর্সেনিক এলবাম" নামক হোমিওপ্যাথিক ওষুধ যা "আয়ুশ" মন্ত্রক ঘোষণা করেছে, ইতিমধ্যেই তা এতটাই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে যে বাজারে তা সাময়িক ভাবে দুষ্প্রাপ্য হয়ে যায়।

সমাজতান্ত্রিক কিউবা কিম্বা ভারতের বামশাসিত কেরলেও বিভিন্ন সময়ে বিকল্প চিকিৎসি পদ্ধতির সাফল্য উল্লেখযোগ্য। ভারতবর্ষের মতো গরিব দেশে আধুনিক চিকিৎসা একটি মারাত্মক খরচবহুল বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমতাবস্থায় সস্তায় বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো একটা আশার আলোকবর্তিকা হিসাবে পথ দেখাচ্ছে যার আরও বেশি বেশি স্বীকৃতি ও অনুশীলন প্রয়োজন। প্রাচীন আধুনিকোত্তর চিকিৎসা পদ্ধতি- হোমিওপ্যাথি, গরিবের হাতিয়ার হবার সম্ভাবনা নিয়ে হাজির।

- নবকুমার বিশ্বাস   

vasddw

দিল্লির বসন্তবিহার এলাকার একটি সরকারী রাস্তা দিয়ে দলিত ও শ্রমজীবী মানুষের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করার উদ্দেশ্যে দেওয়াল তুলে দেওয়া হয়েছে গত ২৮ জুন। একটি ফাটক বানানো হয়েছে। বলাই বাহুল্য এ কাজ সম্পূর্ণ বেআইনি, অবৈধ। এর বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলছেন এলাকার দলিত ও শ্রমজীবী বাসিন্দারা।

সিপিআই(এমএল) লিবারেশন দিল্লি রাজ্য কমিটির এক সংবাদ বিবৃতিতে এই ঘটনাকে “দলিত বস্তিবাসীদের বিরুদ্ধে বর্ণবাদী লাঞ্ছনার সুস্পষ্ট নিদর্শন” হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়, সমস্ত রকম কর্তৃপক্ষের কাছে দেওয়াল নির্মাণের বিরুদ্ধে বস্তিবাসীরা অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও এখনও কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। দলিত এবং দরিদ্র মানুষের প্রতি কি সরকারের কোনো দায়িত্ব নেই? দুটি বসতির বাসিন্দারা অভিযোগ জানায় বসন্ত বিহার থানায়, দিল্লি সরকারের এসসি/এসটি/ওবিসি কল্যাণ দপ্তরে এবং জাতীয় এসসি কমিশনে। অথচ কোনো জায়গা থেকেই কোনো ব্যবস্থা এখনও অবধি নেওয়া হয়নি। বসন্তবিহার পুলিশের চোখের সামনেই এই অবৈধ নির্মাণ কাজটি চলতে থাকে, কিন্তু তারা কোনও পদক্ষেপ নেয় না। এবং, বাসিন্দারা যে অভিযোগ জানিয়েছিলেন সেকথাই এখন অস্বীকার করছে তারা! সিপিআই(এমএল) সদস্যরা বর্তমান স্থিতি সম্পর্কে জতীয় এসসি কমিশনে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গেলে কমিশন থেকে জানানো হয় যে কমিশনের চেয়ারপার্সন পদটি এখন শূন্য থাকায় কোনও অভিযোগকে মান্যতা দেওয়া যাচ্ছে না! চেয়ারপার্সন পদ শূন্য বলে কোনোরকম আইনি ব্যবস্থা গ্রহন করতেই অস্বীকার করে দেয় জাতীয় তফসিলি কমিশন।

সারা দেশ জুড়ে মহামারী এবং লকডাউন চলাকালীন আমরা দলিতদের ওপর নৃশংসতার বহু ঘটনা দেখেছি এবং খুব স্পষ্টভাবেই অভিযোগ অস্বীকার করার মধ্য দিয়ে অত্যাচারীর প্রতি প্রশাসনিক পক্ষপাতিত্ব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

আমরা দাবি জানাই,

পুলিশ, জাতীয় এসসি কমিশন এবং দিল্লি রাজ্য কল্যাণ দপ্তরকে এই অবৈধ ও জাতবাদী দেওয়াল ও ফাটক নির্মাণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। কোনও অজুহাতে বর্ণবাদ চলবে না!
মহামারীকে বাহানা বানিয়ে ন্যায়বিচার জলাঞ্জলি দেওয়া চলবে না।
জাতবর্ণবাদের দেওয়াল ভেঙ্গে ফেল।

- সুমন ঘোষ 

sec

দেশব্যাপী আশা কর্মীদের বঞ্চনা, করোনা আক্রান্ত এমনকি মৃত্যু সত্বেও ক্ষতিপূরণ না পাওয়া, এছাড়া অঙ্গনওয়ারীদের করোনা পরিস্থিতিতে কাজ চালিয়ে যাওয়া, আক্রান্ত হওয়া, মিড-ডে-মিল কর্মীদের অনিয়মিত সাম্মানিক পাওয়া প্রভৃতি বৈষম্যমূলক ও বেদনাদায়ক খবর আসছে। এই পরিস্থিতিতে স্কীম ওয়ার্কার্স ফেডারেশানের জাতীয় কমিটি ১৮ জুলাই জুম মাধ্যমে এক বৈঠক থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ১০টি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের পক্ষ থেকে আগামী ৭-৯ আগস্ট স্কীম ওয়ার্কার্সদের দেশব্যাপী যে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে তাকে সফল করতে পরিকল্পনা নিতে হবে। রাজ্যগুলি তাদের অবস্থা অনুযায়ী কর্মসূচী ঠিক করবে। ধর্মঘটের দাবিসনদ দ্রুত প্রস্তুত হচ্ছে।

ratdea

উত্তর-পূর্ব দিল্লীর সাম্প্রদায়িক হিংসা, যাকে বিজেপি দাঙ্গা নাম দিতে বদ্ধপরিকর, তা শুরু হয় এই বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারী। বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র দিল্লী পুলিশের কাছে জাফরাবাদ-মৌজপুর-সীলামপুর সংলগ্ন রাস্তায় নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদসভা ভঙ্গ করার আবেদন জানায়, এবং তা না হলে তার দলের কর্মীদের সাহায্যে বলপূর্বক এই প্রতিবাদ ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি জানায়। এই ঘটনার সামান্য পরে এই এলাকা জুড়ে যে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতার সৃষ্টি হয় তা পরের দশ দিন ধরে চলতে থাকে। ৫৩ জন নিহত মানুষের মধ্যে ৩৬ জনই মুসলিম। মুসলিম-প্রধান এলাকাগুলিতে দোকান, বাড়ি কিছুকেই রেহাই দেওয়া হয় না। তৎসত্ত্বেও বিজেপির শীর্ষ-নেতৃত্ব এই ঘটনার দায় নেওয়া থেকে বিরত থাকে।

এই পুরো ঘটনার অসামঞ্জস্যের কথা মাথায় রেখে দিল্লীর সংখ্যালঘু কমিশন সুপ্রিম কোর্টের উকিল এম আর শামসাদের নেতৃত্বে মার্চ মাসে যে অনুসন্ধানকারী দল গঠন করে, তারা গত ১৭ জুলাই তাদের রিপোর্ট পেশ করেছে। এই কমিটিতে শামসাদ ছাড়াও ছিলেন শিরোমণি গুরুদ্দ্বারা কমিটির সদস্য গুরমিন্দর সিং মাতারু, সমাজকর্মী তানবীর কাজী, মানবাধিকার কর্মী আবু বকর সাব্বাক এবং অদিতি দত্ত, জামিয়া মিলিয়ার অধ্যাপক হাসিনা হাশিয়া এবং মানবাধিকার আইন বিশেষজ্ঞ তহমিনা অরোরা।

রিপোর্টটিতে খুব পরিষ্কারভাবে এই ঘটনাকে “পূর্বপরিকল্পিত এবং উদ্দ্যেশ্যপ্রণোদিত” বলা হয়েছে। এই কথাও সাফ সাফ লেখা হয়েছে কীভাবে বিজেপি প্রার্থী ও নেতারা ডিসেম্বর ২০১৯ থেকে ফেব্রুয়ারী ২০২০ পর্যন্ত দিল্লী বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে বারবার হিংসার উস্কানি দিয়েছে। এই সময়ের প্রচারের বহু বক্তৃতাই সাম্প্রদায়িক হিংসার বাইরে অন্য কোনো কথাই বলেনি।

jami

 

এই রিপোর্টে বলা হয়েছে কীভাবে জামিয়া মিলিয়ায় আক্রমণের ঘটনা থেকে এই একমুখী হিংসার ঘটনার পরিকল্পনা শানানো শুরু হয়। অভিনব ঠাকুর, কপিল মিশ্রর মতো বিজেপির যুব নেতারা বহুবার জামিয়া মিলিয়ার ছাত্র-বিদ্রোহীদের প্রকাশ্যে দেশদ্রোহী আখ্যা দেয়। দিল্লী এবং দেশের অন্যান্য ছোট বড় শহরে নাগরিকতা-আইন বিরোধী বিক্ষোভমঞ্চগুলিকে “মিনি পাকিস্তান” বলা থেকেও এরা পিছু হটেনি। এমনকি ডিসেম্বর মাসে উগ্র-হিন্দুবাদীদের জামিয়া-মিলিয়ার লাইব্রেরীতে, হস্টেলে ঢুকে তাণ্ডবের ঘটনায় বাস পোড়ানোর ঘটনা ছাত্রছাত্রীরাই করেছে, এরকম দাবি করে প্রচারসভায়। শাহিন-বাগের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক গণবিদ্বেষ তৈরির চেষ্টায় হিংসার উস্কানি দেওয়া থেকে শুরু করে নাগরিকত্ব আইন বিরোধীদের পাকিস্তানি বা রাষ্ট্রদ্রোহী বলা পর্যন্ত সবরকম কথা বলেছে এই নেতারা। কপিল মিশ্র যে ভাষণে “বলপূর্বক” জাফরাবাদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদসভায় ঢুকে তাকে ভেঙ্গে দেওয়ার উস্কানি দেয়, রিপোর্টটিতে পরিষ্কারভাবে সেই ভাষণকে দিল্লি গণহত্যার অন্যতম কারণ বলা হয়েছে।

দিল্লী-পুলিশের মিডিয়া মুখপাত্র অনিল মিত্তল জানিয়েছেন, “এই রিপোর্ট এখনো আমাদের হাতে পৌঁছায়নি। পেলেই মন্তব্য করতে পারবো। আমরা সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করছি যাতে তারা তাদের অভিযোগ নিয়ে সামনে আসে। ইতিমধ্যে আমরা হেল্পলাইন-নাম্বার তৈরি করেছি শুধু এই ঘটনার কথা মাথায় রেখে। ৭৫২টি অভিযোগের ভিত্তিতে ২০০টি চার্জশীট নথিভুক্ত হয়েছে, যা এই ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে সর্বাধিক। সর্বোপরি আমরা নিশ্চিত করেছি এই তদন্ত যাতে নিরপেক্ষ ও বলিষ্ঠ হয়।”

riao

 

দিল্লী পুলিশ নিজেই নিজেকে শ্রেষ্ঠ বলে দাবি করলেও, এই রিপোর্ট ঠিক উলটো কথাই বলছে।

দিল্লী প্রশাসন এবং পুলিশকে অযোগ্য এবং পক্ষপাতদুষ্ট বলা হয়েছে রিপোর্টে। এতে বলা হয়েছে, ঘটনার চার মাস পরেও ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন দিতে পারেনি দিল্লী প্রশাসন। এই ঘটনায় ৫৩ জন নিহত এবং ৪০০ জন আহত হলেও বহু মানুষ বাস্তুচ্যুত হন, বা তাদের জীবিকার অভাবনীয় ক্ষতি হয়। রিপোর্টে বলা হয়েছে হতাহত ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রক্রিয়া বহু-বিলম্বিত এবং সামঞ্জস্যহীন। ঘটনার চার মাস পরেও বহু ক্ষেত্রে ক্ষয়ক্ষতি, লুঠ, অগ্নিসংযোগের পুরো ঘটনা যথাযথভাবে নথিভুক্ত করা হয়নি। মৌজপুর, ভজনপুরা, শিব-বিহার, করাওয়াল নগর এবং আরও বহু হিংসা-কবলিত জায়গায় যে সামান্য সংখ্যক ঘটনার সম্পূর্ণ বিবরণ নিতে পেরেছে পুলিশ, তারও অন্তর্বর্তী ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি। যে কয়টি ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে তা নামমাত্র।

আক্রান্তদের সাথে কথোপকথনের ভিত্তিতে রিপোর্টে লেখা হয়েছে, বহুক্ষেত্রে এফআইআর নেওয়ায় দেরী করা হয়েছে, বা নেওয়ার পরেও উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অনেক ক্ষেত্রে আক্রান্তদের পুলিশের তরফে চাপ দেওয়া হয়েছে অভিযুক্তদের সাথে সমঝোতা করার জন্য। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে আক্রান্তদেরই গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

saf

 

শাহীন-বাগ এবং অন্যান্য ‘নাগরিকতা সংশোধনী আইন’-বিরোধী প্রতিবাদ মূলত মুসলিম মহিলারাই চালনা করছিলেন, এবং সেই কারণে তাদের বিরুদ্ধে বিরূপ মনোভাব প্রতিফলিত হওয়ায় বহুক্ষেত্রে তারা থানায় যেতে ভয় পাচ্ছেন। এই ভীতিকে বাস্তবে বহুগুণ বাড়িয়ে তুলেছে দিল্লী পুলিশের পক্ষপাতমূলক দৃষ্টিভঙ্গি।

এই ‘দাঙ্গায়’ কোনো হিন্দু মন্দিরের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। কিন্তু মাদ্রাসা বা কবরস্থান ছাড়া শুধুমাত্র মসজিদই জ্বালানো হয়েছে ২২টি। সংখ্যালঘুদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য তৈরি হওয়া ক্যাম্পগুলি থেকেই হিংসা-বিধ্বস্ত মানুষগুলিকে উৎখাত করা হয়েছে দু-দুবার। বর্তমান করোনা পরিস্থিতির মধ্যে কোনো পরিকল্পনা ছাড়া স্থানান্তরিত করা হয়েছে তাদের।

এই সব তথ্যের ভিত্তিতে একটি দু-পাতার চিঠিতে ১১ জুন জবাব চেয়ে পাঠিয়েছে কমিশন। কিন্তু দিল্লী পুলিশ এখনো তার কোনও উত্তর দিয়ে উঠতে পারেনি।

রিপোর্টে এও বলা হয়েছে, পরিকল্পনামাফিক ঘনবসতিযুক্ত এলাকায় হামলাকারীরা দল বেঁধে লুকিয়ে থেকেছে, সাধারণ দাঙ্গায় যা হয় না। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের পরিচয়পত্র দেখে হামলা করার ঘটনা হয়েছে বহু ক্ষেত্রে।

rrr

 

কেন্দ্র সরকার নিয়ন্ত্রিত দিল্লি পুলিশ দাবি করেছে যে, এই হিংসার ঘটনা প্রথম শুরু করেছে নাগরিকতা-আইন বিরোধী আন্দোলনকারীরা। চন্দ্রশেখর আজাদের ভীম আর্মীর ডাকে আয়োজিত জাফরাবাদের মেট্রো স্টেশনের সামনের বিক্ষোভসভা থেকেই এই ঘটনার শুরু বলে দাবি করেছে পুলিশ। কিন্তু কমিশনের এই রিপোর্ট খুব জোরের সাথে দেখিয়েছে যে বিজেপি নেতা কপিল মিশ্রের উস্কানিমূলক বক্তৃতা আর বলপূর্বক বিক্ষোভকারীদের হঠানোর হুমকির পরেই এই একমুখী সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনার সূত্রপাত হয়।

ক্ষতিপূরণের রকমেও আকাশপাতাল তফাত লক্ষ্য করেছে কমিটি। পুলিশ এবং অন্যান্য সরকারী চাকুরিজীবীদের বাকিদের তুলনায় অনেক বেশি ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে, যা সরকারী নিয়ম নয়।

- কৌশিকী ভট্টাচার্য 

vicasssa

উত্তরাখণ্ডের চাম্পাওয়াত জেলার সিএমও (চিফ মেডিক্যাল অফিসার) ২৬৪ জন আশা কর্মীকে পুনরায় নিয়োগ করতে বাধ্য হলেন। প্রসঙ্গত, তাঁরা যা কাজ করেন তার জন্য ন্যায্য বেতন দাবি করার কারণেই এই ২৬৪ জন আশা কর্মীকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে এআইসিসিটিইউ অনুমোদিত উত্তরাখণ্ড আশা স্বাস্থ্যকর্মী ইউনিয়ন রাজ্যব্যাপী আন্দোলন শুরু করে।

ওই ইউনিয়নের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ডঃ কৈলাশ পাণ্ডে ৮ জুলাইয়ের বিবৃতিতে জানিয়েছেন, আশা কর্মীদের আন্দোলনের চাপেই জেলা স্বাস্থ্য প্রশাসনকে পুনর্নিয়োগের সরকারি নির্দেশিকা বার করতে হয়েছে। আশা কর্মীরা দৃঢ় ঐক্যের স্বাক্ষর রেখে যে জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলেন তার জন্য তাদের আন্তরিক অভিনন্দন জানাতে হবে। তিনি বিবৃতিতে আরও দাবি করেছেন, করোনা মোকাবিলায় আশা কর্মীরা সামনের সারিতে থাকায় সরকারকে তাদের জন্য অবিলম্বে ১০,০০০ টাকা করে লকডাউন ভাতা ঘোষণা করতে হবে, এবং যে আশা কর্মীরা বেতন ব্যবস্থার বাইরে তাদের জন্য বেতনের ব্যবস্থা করতে হবে।

স্বাভাবিক সময়েই হোক বা মহামারী চলাকালীনই হোক, আশা কর্মীদের যে কাজ দেওয়া হয়েছে তা করতে তাঁরা কখনই অস্বীকার করেননি। তাঁদের কাজের জন্য তাঁরা ন্যায্য বেতনই দাবি করছেন, আর সরকার সেটাই দিতে চাইছে না। ডঃ পাণ্ডে তাঁর বিবৃতিতে প্রশ্ন তুলেছেন, আশা কর্মীরা বেতন ছাড়া কতদিন আর বাঁধা মজুরের মতো কাজ করবেন? সরকারকে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। আশা কর্মীদের দাবি – তাঁদের মাসিক বেতন দিতে হবে, অন্যান্য প্রকল্প কর্মীদের মতো প্রতি মাসে সাম্মানিক ভাতা দিতে হবে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সমস্ত আশা কর্মীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১০,০০০ টাকা করে লকডাউন ভাতা পাঠাতে হবে, অন্যথায় তাঁরা তীব্র আন্দোলনের পথে যেতে বাধ্য হবেন।

raa

গত ১৭ জুলাই ২০২০ রেল বেসরকারীকরণের প্রতিবাদে হাওড়া রেল স্টেশন সংলগ্ন অঞ্চলে এআইসিসিটিইউ-সহ ১০টি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন ও ফেডারেশন সমূহের ডাকে বিক্ষোভ সভা অনুষ্ঠিত হয়, বিক্ষোভ সভা থেকে ৫ জনের প্রতিনিধি দল হাওড়া ডিভিশনাল ম্যানেজারের প্রতিনিধির সঙ্গে দেখা করে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্য স্মারক লিপি দেওয়া হয়। সভায় বক্তব্য রাখেন এআইসিসিটিইউ-র দেবব্রত ভক্ত, সিটুর ওঙ্কার ব্যানার্জ্জী, ইষ্টার্ন রেলওয়ে এমপ্লোয়িজ ইউনিয়নের পার্থ ব্যানার্জ্জী ও ইষ্টার্ন রেলওয়ে মেন্স ইউনিয়নের বিকাশ পাল।

bkbank

বাঁকুড়া ব্লক-২-এর অন্তর্গত কোষ্ঠিয়া অঞ্চলের খেমুয়া গ্রামসভার সিধু-কানু পল্লীর ২৩ ঘর আদিবাসী পরিবার। এরা এখানে ৫০-৬০ বছর ধরে বনের জমিতে ঘর তৈরি করে, জমি চাষযোগ্য করে তুলে, চাষাবাদ করে বসবাস করে আসছেন। এদের বাড়িতে বিদ্যুৎ লাইন আছে। জমিতে সেচের জন্য শ্যালো মেশিন আছে। বনের জমিতে বসতকারী-আবাদকারী আদিবাসী ও বনবাসীদের পাট্টা দিতে ২০০৬ সালে অরণ্যের অধিকার আইন তৈরি হয়েছিল। সেই আইন অনুসারে এদের ১৮ ঘর পাট্টা পেয়েছিল। যদিও দখলিকৃত জমির তুলনায় পাট্টা পাওয়ার পরিমাণ ছিল অনেক কম। আর, কোনো এক অজানা কারণে দখল থাকা সত্ত্বেও ৭টি ঘর কোন পাট্টা পায়নি। দীর্ঘ ৯-১০ বছর আগে যারা পাট্টা পেয়েছেন তাদেরও ঐ সমস্ত জমির আজ পর্যন্ত পরচা হয়নি। ফলে কাগজে কলমে জমিগুলো বনের নামে রয়ে গেছে। শ্যালোর মাধ্যমে জল সেচ করে অনেক দিন ধরে চাষ করে আসা হচ্ছে। ফলে সরল বিশ্বাসে এরা পরচার জন্য আর কিছুই করেনি।

কিন্তু এবছর করোনা ভাইরাসের কারণে যখন অফিসগুলোতে কোনো কাজই হচ্ছে না তখন বনের অফিসারের (রেঞ্জার) প্রত্যক্ষ মদতে উচ্চবর্ণের প্রাধান্যকারী বন-কমিটি এতদিনের আদিবাসীদের ভোগদখলকারী জমিতে লাগানো পটল-কুন্দরী মাচা ভেঙে, ফলন্ত লাউগাছ কেটে তছনছ করে দিয়ে বনের জন্য গাছ লাগিয়ে দেয়। অপরদিকে একই গ্রামের বাউরি পাড়ার বাড়ির সামনে নালা কেটে তাদের লাগানো বাঁশ-আম-কাঁঠাল গাছের দখল নিয়ে নিয়ে নেয় বন-কমিটি। শুধু তাই নয়, নিত্যদিন বাড়ি ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিয়ে চলেছে। কিন্তু এলাকার উচ্চবর্ণের দখলিকৃত জমিতে একটি গাছও লাগানো হয়নি।

adi

 

এখন আক্রান্ত আদিবাসীরা যাবে কোথায়? খাবে কী? করোনার বিপদকে উপেক্ষা করে ডিস্ট্রিক্ট ফরেস্ট অফিসে আবেদন জানাতে গেলে অফিস থেকে বলা হয়, জমির ভোগদখল করার কাগজপত্র দেখাও। গত জানুয়ারী মাসে এই কাগজের জন্য আয়ারলার নেতৃত্বে দল বেঁধে বাঁকুড়া জেলা শাসকের কাছে গেলে জেলাশাসক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, এখনই কাগজ দেওয়া না গেলেও কাউকে দখলিকৃত জমি থেকে উচ্ছেদ করা হবে না। সহজ সরল মানুষগুলো জেলাশাসকের কথায় বিশ্বাস করেছিল। ঠিক যেমন, ৩৪ বছর ধরে বামফ্রন্ট সরকারকে বিশ্বাস করেছিল, কিন্তু সেই আমলেও কাগজ মেলেনি। নয় বছরের তৃণমূল রাজত্বও কাগজ করে দেয়নি। এখন এই কাগজের অভাবে এই গরিব এসসি-এসটি পরিবারগুলো তাঁদের জমি হারাতে বসেছেন। শুধু এই গ্রামেই নয়, সারা বাঁকুড়া জেলার ব্যাপক এসসি-এসটি পরিবার এই কাগজের অভাবে জমি থেকে আজ উচ্ছেদের মুখে।

ওন্দা ব্লকের কল্যাণী অঞ্চলের জরকাতড়ার ১৮টি আদিবাসী পরিবার বনের জমি পাট্টা পেয়েছে, কিন্তু পরচা পায়নি। জমির আইল সম্পর্কে অ-সচেতন সরলমতি আদিবাসীরা পাট্টাকেই যথেষ্ট ধরে নিয়ে চাষ করে আসছিলেন। এরা সবাই এখন উচ্চবর্ণের বন কমিটির দ্বারা উচ্ছেদের মুখে পড়েছেন। ওন্দার বিএলআরও অফিসে পরচা করতে গেলে উনি তাচ্ছিল্যভরে বলেন, এসব অনেক পুরানো, বাতিল হয়ে গেছে। জোর করলে বলেন, এখন করোনা চলছে। নতুন করে দরখাস্ত নিয়ে পরে আসুন। এতো পাট্টা রয়েছে, তবু বলে কিনা বাতিল।

একইরকমভাবে ব্লক-১ জুনবেদিয়া অঞ্চলের পেঞ্জা গ্রামের বাউরিদের বসত বাড়ির কোনো পাট্টা নেই। গোটা বাঁকুড়াতেই এই অবস্থা। এঁদের পাশে আজ আর শাসক দলগুলির কোনো নেতা নেই, ওদের ভাষায় এসসি-এসটি পরিবারের ছাগল-মুরগিতে ফিষ্টি খাওয়া ভোটবাজ নেতারা সব ফুড়ুৎ। সিপিআই(এমএল) লিবারেশন প্রভাবিত গ্রামীণ শ্রমিকদের সংগঠন আয়ারলা এদের বৈধ কাগজের জন্য গত নভেম্বর মাস থেকে প্রত্যক্ষ লড়াই চালিয়ে আসছে। সমস্ত বাম-গণতান্ত্রিক মানুষের কাছে আবেদন, এই আন্দোলনের পাশে দাঁড়িয়ে ব্যাপক মানুষকে উচ্ছেদের হাত থেকে বাঁচাতে এগিয়ে আসুন।

- বাবলু ব্যানার্জী 

bddloan

গত ১৯ জুলাই পুর্ব বর্ধমান জেলার মন্তেশ্বর ব্লকের মামুদপুর ২নং গ্রাম পঞ্চায়েতের কাজ গ্রামে শতাধিক গ্রামীণ গরিব মেহনতী মহিলা বৈঠকে সামিল হন। এই বৈঠকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মহিলাদের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। এই পরিবারগুলো বন্ধন সহ আরও কিছু মহাজনী সংস্থার ঋণের দায়ে জর্জরিত। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদেরও অংশগ্রহণ ছিল। বৈঠকে ১৭ জনের একটি ঋণ মুক্তি কমিটি তৈরি হল। অন্যান্য গ্রামে সংগঠন বিস্তার করার পরিকল্পনা হয়। আগামী ৩১ মার্চ ২০২১ সাল পর্যন্ত ঋণের কিস্তির টাকা শোধ না করার আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিস্তির টাকা জোর করে আদায় করতে এলে সমস্ত মহিলারা জমায়েত হয়ে প্রতিবাদ সংগঠিত করার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। ঋণমুক্তির দাবিপত্র প্রচার করার সিদ্ধান্ত হয়। এলাকার মানুষের মধ্যে ভাল উৎসাহ দেখা যাচ্ছে। বৈঠকের পরিচালনা করেন আয়ারলার জেলা সম্পাদক আনসারুল আমন মন্ডল। উপস্থিত ছিলেন সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের জেলা সম্পাদক কমরেড সলিল দত্ত।

২০ জুলাই বর্ধমান সদর ১নং ব্লকের বন্ডুল গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার কামারকিতা গ্রামে ৫০ জন মহিলা বৈঠকে আসেন। মূলত বন্ধন ও আরও দু-একটি মহাজনী সংস্থার ঋণগ্রস্ত মানুষের সংখ্যাই বেশি ছিল। কমরেড চাঁপা হাজরার উদ্যোগে মহিলাদের এই জমায়েত। লকডাউন পরিস্থিতিতে মানুষের কাজ নেই। চরম অর্থনৈতিক সংকট, তার উপর ঋণের দায়ে গরিব মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত। কিস্তির দায়ে অনেককে ১২০% সুদে নতুন ঋণ করতে হচ্ছে। সাধারণভাবেই এই ধরনের ঋণ প্রদানকারী সংস্থাগুলো যেভাবে ২৪% সুদে ঋণ দিয়ে থাকেন। ঋণ দেওয়ার পরের সপ্তাহ থেকেই কিস্তির টাকা শোধ করতে হয়। তাতে সাধারণ ভাবেই একসময় ঋণ ফাঁদে পড়ে যাওয়ার অনিবার্যতা আছে। কর্পোরেটদের পুঁজি মুনাফার স্বার্থেই গ্রামের গরিব মানুষের শ্রমের অংশই সুদ হিসাবে নিংড়ে নিচ্ছে। এই সরকারেরও কোন মাথা ব্যথা নেই। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক প্রতিনিয়ত সুদ কমাচ্ছে। কিন্ত এদের সুদ আদায়ের ক্ষেত্রে সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। বন্ধনকে দেখলেই বোঝা যায় কিভাবে ২০ বছরে ফুলে ফেঁপে উঠে ডানা বিস্তার করেছে। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে গ্রামের গরিব মেহনতীদের স্বনির্ভর করার কথা বললেও কার্যত সরকারের এই ব্যাপারে সেই রকম কোনো উদ্যোগ নেই। ১০/১৫ জনের একটা গোষ্ঠীর জন্য কয়েক লক্ষ টাকার ঋণ দিয়ে এবং একবার কিছু অনুদান দিয়েই দায়িত্ব পালন করেছেন বলে প্রচার করেন। আবার এই অনুদানের টাকার ক্ষেত্রেও চলে কাটমানি আদায়।

গত বছর পুর্বস্থলী ১নং ব্লকের নাদনঘাট গ্রাম পঞ্চায়েতের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর চার শত মহিলা বিডিও অফিসে বিক্ষোভ ডেপুটেশনে যায়। সেখানে তাঁদের প্রধান দাবি ছিল অনুদানের টাকা থেকে টিএমসি নেতাদের কাটমানি আদায়ের বিরুদ্ধে। এই আন্দোলনকে দমন করার জন্য টিএমসি নেতারা গ্রামে সন্ত্রাস তৈরি করেন। মহিলাদের বাড়ির লোককে মারধর হুমকি এমনকি নেতৃত্বে থাকা একজন মহিলার শ্বশুর ও বাড়ীর লোককে চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে মহিলাকে ঘরে আটকে রাখতে বাধ্য করেন। বর্তমানেও ভয় দেখানোর চেষ্টা চলছে। কিন্ত বর্তমান লকডাউনের পরিস্থিতির কারনে মানুষের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। ভয় এবং টোপের সীমানা ছাড়িয়ে গিয়েছে। তাই মানুষ প্রতিবাদ আন্দোলন সংগঠিত করার জন্য অনেক ক্ষেত্রেই নিজেরা উদ্যোগ নিচ্ছেন। এখানে আয়ারলার জেলা কমিটির সদস্য কমরেড সমীর হাজরা ও পার্টির জেলা সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন।

হুগলি জেলার আন্দোলনের প্রভাবে পূর্ব বর্ধমান জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেকে ফোনে যোগাযোগ করেন। সেই সূত্রে ২১ জুলাই প্রবল বর্ষণের মধ্যে জামালপুর ব্লকের কয়েকটি গ্রামে বৈঠক করা হল। আয়রলার রাজ্য সম্পাদক সজল অধিকারী, পুর্ব বর্ধমান সিপিআই(এমএল) লিবারেশনের জেলা কমিটির সদস্য কুনাল বক্সী ও জেলা সম্পাদক সলিল দত্ত এই বৈঠকগুলোতে উপস্থিত ছিলেন। জৌগ্রামে ৫০ জন মতো মহিলা জমায়েত হয়েছিলেন। ঋণ থেকে মুক্তি লাভের আন্দোলনে ভালো আগ্রহ দেখা গেল। নিজেদের মধ্যেই গ্রামে প্রচার করার উদ্যোগ নেবেন তাঁরা। কিছুদিনের মধ্যেই ব্লকের বিডিও অফিসে গণডেপুটেশনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। নবগ্রাম গ্রামেও বৈঠক হয়। এখানেও ভালো সংখ্যক মহিলাদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য। এই ধরনের আরও ২টি জায়গায় আলোচনা হয়েছে। জামালপুর ব্লকের বিভিন্ন এলাকাতেই এই আন্দোলনের প্রভাব পড়েছে। নতুন নতুন যোগাযোগ আসছে, হুগলির কমরেডদের সহযোগিতায় এই ব্লক জুড়ে আন্দোলন ছড়িয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।

-- সজল পাল  

basbas

রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে বেসরকারী কর্পোরেট সংস্থার স্বার্থ রক্ষার সরকারের তাগিদ আজ আর কোনো গোপন ব্যাপার নয়। আর তাই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হলেও সরকার বিএসএনএল-এর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার আচরণই করেছে। বলা ভালো, লাগাম লাগিয়ে এই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার রাশ টেনে রাখতেই সরকার প্রয়াসী হয়েছে। বিএসএনএল-এর কর্মীদের দীর্ঘ আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে সরকার অবশেষে সংস্থাটির পুনরুজ্জীবনে সায় দেয়, এবং ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর বিএসএনএল-এর সঙ্গে অন্য আর এক রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা এমটিএনএল-এর পুনরুজ্জীবনের জন্য ৬৯,০০০ কোটি টাকার এক প্যাকেজ ঘোষণা করে। ওই প্যাকেজের অঙ্গ হিসাবে বিএসএনএল-কে ৪জি স্পেক্ট্রাম দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়, বিএসএনএল-এর নিজস্ব জমি বিক্রি করে অর্থ জোগাড়ে অনুমতি দেওয়া হয়, বণ্ড বিক্রি করে বাজার থেকে টাকা তোলার প্রস্তাব সম্মতি পায়, অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে ভালো সংখ্যক কর্মীর ভিআরএস বা স্বেচ্ছাবসর গ্রহণের শর্তও থাকে। কিন্তু ওই প্যাকেজ ঘোষণার পর আট মাসেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও কর্মীদের স্বেচ্ছাবসর গ্ৰহণ ছাড়া প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত অন্য কোনো বিষয়কে এগিয়ে নিয়ে যেতে সরকারের দিক থেকে কোনো আন্তরিকতা বা তৎপরতা দেখা যায়নি, নেওয়া হয়নি পুনরুজ্জীবনকে সার্থক করতে পারার মতো কোনো পদক্ষেপ। বিএসএনএল থেকে ৭৯,০০০ কর্মী স্বেচ্ছাবসর নেওয়ার পরও যে ৭০,০০০ কর্মী এখনও রয়েছেন, তাঁরা ঠিক সময়ে বেতন পান না। সংস্থাটিতে কাজ করা ঠিকা কর্মীদের অবস্থাও সঙ্গিন, বেশ কিছু ঠিকা কর্মী আত্মহত্যা করেছেন বলেও জানা গেছে। পরিস্থিতি এরকম হলেও বিএসএনএল-এর পুনরিজ্জীবনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিতেই যেন সরকার ব্যগ্ৰ এবং কিভাবে সেদিকে তাকানো যাক।

বিএসএনএল-কে ঘুরে দাঁড়াতে গেলে ৪জি পরিষেবা প্রদানের সামর্থ্য অবশ্যই অর্জন করতে হবে। রিলায়েন্স, এয়ারটেল-এর মতো বেসরকারি সংস্থা যেখানে চার বছর আগে থেকে এই পরিষেবা প্রদান করে যাচ্ছে, বিএসএনএল-কে আজ সেখানে ২জি ও ৩জি পরিষেবা প্রদানের মধ্যেই আটকে রাখা হয়েছে। ৪জি পরিষেবা দিতে পারলে বিএসএনএল-এর গ্ৰাহক ভিত্তি অনেক বাড়বে, তার সঙ্গে ভালো পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে তার আয়। পুনরুজ্জীবনের সবুজ সংকেত পেয়ে বিএসএনএল তার ব্রডব্যন্ড নেটওয়ার্কের সম্প্রসারণ ঘটাতে এ বছরের ২৩ মার্চ দরপত্র ডাকল, যার পরিমাণ ৯,০০০ কোটি টাকা। এই দরপত্র ডাকা হয়েছিল সারা দেশে ৫০,০০০ নতুন স্থলের আধুনিকিকরণ ঘটানো, বর্তমানে যে টাওয়ারগুলো রয়েছে সেগুলোকে উন্নত করে তোলা, অনেক নতুন টাওয়ার বসানো ইত্যাদির জন্য। অর্থাৎ, ৪জি পরিষেবা প্রদানের নেটওয়ার্ক জোগানো ও সেগুলির রক্ষণাবেক্ষণের লক্ষ্যেই দরপত্র। কিন্তু বিএসএনএল দরপত্র ডাকার পরই টেলিকম যন্ত্র নির্মাতাদের দেশীয় সংস্থাগুলোর সমিতি টিইপিসি (টেলিকম ইকুইপমেন্ট এণ্ড সার্ভিস এক্সপোর্ট প্রোমোশন কাউন্সিল) বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে চিঠি দিয়ে অভিযোগ জানাল যে বিএসএনএল-এর দরপত্রে দেশীয় সংস্থাগুলোর অংশগ্ৰহণকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে, দরপত্র এমনভাবে বানানো হয়েছে যাতে বহুজাতিক সংস্থাগুলিই অংশগ্ৰহণ করতে পারে, ওই দরপত্রে মোদী সরকারের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ নীতিকে অবজ্ঞা করা হয়েছে। এই চিঠি পাওয়ার পরপরই সরকারের পক্ষে কি ভয়ঙ্কর তৎপরতাই না দেখানো হল। প্রোমোশন অব ইন্ডাস্ট্রিজ এন্ড ইন্টারনাল ট্রেড দপ্তর ২২ এপ্রিল টেলিকম দপ্তরের সচিবকে চিঠি দিয়ে বলল “আসাধু উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে”  বিএসএনএল-এর যে সমস্ত অফিসার “দেশীয় নির্মাতাদের ওপর নিয়ন্ত্রণমূলক শর্ত চাপিয়েছে” তাদের বিরুদ্ধে “শাস্তিমূলক ব্যবস্থা” গ্ৰহণের কথা বিবেচনা করা যেতে পারে। এছাড়া, ভারত-চীন সীমান্ত সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে চীনা পণ্য বয়কটের জিগিরের পথ ধরে বিএসএনএল-এর ওপর চাপানো হল নিষেধাজ্ঞা – চীনা কোম্পানিগুলোর তৈরি টেলিকম যন্ত্রপাতি কেনা যাবে না। আর যায় কোথা, বিএসএনএল-কে তাদের দরপত্র বাতিল করতে হল, ৪জি পরিষেবা দেওয়ার পরিকল্পনা পড়ে গেল বিশ বাঁও জলে। এই প্রতিকূলতা থেকে বিএসএনএল আর কোনোদিন ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কিনা, পারলেও কত দেরিতে পারবে, তা আজ আর কারুর পক্ষেই বলা সম্ভব নয়।

set

 

বিএসএনএল-এর দরপত্রে বলা ছিল যে, যারা এই দরপত্রে অংশ নিতে চায় তাদের গত দু-বছরের বাৎসরিক আয় ৮,০০০ কোটি টাকা হতে হবে, আর ২০ মিলিয়ন ৪জি লাইন জোগানোর অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এই শর্তই নাকি দেশীয় নির্মাতাদের অংশগ্ৰহণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিএসএনএল-এর পক্ষে বলা হয়েছে এই দুটো শর্ত এই কারণেই রাখা হয়েছিল যে – যারা এই বিপুল পরিমাণ যন্ত্রপাতির জোগান দেবে তাদের যথাযথ আর্থিক সঙ্গতি আছে কিনা তা দেখে নেওয়া, এবং ৪জি পরিষেবা প্রদানের বিপুল নেটওয়ার্ক রক্ষণাবেক্ষণের অভিজ্ঞতা আছে কিনা তা যাচাই করা। যে সমস্ত শর্তের তথাকথিত লঙ্ঘনের জন্য বিএসএনএল-কে তার দরপত্র বাতিল করতে হল, সেই সব শর্ত মানার দায় কিন্তু রিলায়েন্স, এয়ারটেল, ভোডাফোন-আইডিয়ার মতো বেসরকারী কর্পোরেট সংস্থার নেই। তারা নোকিয়া, এরিকসন, স্যামসাং-এর মতো বহুজাতিকদের কাছ থেকে যন্ত্রপাতি কেনার সাথে হুয়েই ওজেডটিই-র মতো চীনা সংস্থার কাছ থেকে যন্ত্রপাতি কিনছে এবং কিনতে পারবে। বিশ্বমানের উৎকৃষ্ট যন্ত্রপাতি নির্মাণের নজির যারা এখনও প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি, সেই ‘দেশীয় নির্মাতাদের’ কাছ থেকে যন্ত্রপাতি কেনা তথা ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ নীতিকে সার্থক করে তোলার দায় বিএসএনএল-এর থাকলেও বেসরকারী সংস্থাগুলোর নেই, আর চীনা পণ্য বয়কটের মতো মহান জাতীয়তাবাদী আবেগে শামিল হওয়ার পরীক্ষায় তাদের পাশ না করলেও চলবে!

বিএসএনএল-এর কর্মীরা জানিয়েছেন, এর আগে ২০০৬ ও ২০০৭ সালে ২জি পরিষেবার যন্ত্রপাতি কেনার সময়ও ভারতের বহু হাইকোর্টেই বিএসএনএল-এর বিরদ্ধে মামলা করা হয়েছিল এবং সেই সমস্ত মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে বিএসএনএল-এর প্রায় দেড় বছর লেগে গিয়েছিল। বিএসএনএল-কে অবিলম্বে ৪জি পরিষেবা প্রদানের অধিকার দেওয়া এবং পুনরুজ্জীবন প্যাকেজের রূপায়ণের দাবিতে বিএসএনএল-এর কর্মীরা ২৬ জুন সারা দেশে ধর্ণা সংগঠিত করেন। মাস্ক পরে ও দূরত্ব বিধি মেনে বড় শহরে ১০ জন ও ছোট শহরে ৫ জন করে ধর্ণায় অংশ নেন। আজও বিএসএনএল-কে আটকানোর পিছনে শুধুই কি ‘দেশীয় নির্মাতাদের’ স্বার্থ রক্ষার আকাঙ্খা ও জাতীয়তাবাদী আবেগই কাজ করছে? বিএসএনএল-এর কর্মী ইউনিয়ন ও সমিতিগুলোর (এইউএবি) সম্পাদক অভিমন্যু বলেছেন এর পিছনে রয়েছে ‘কায়েমি স্বার্থরা’। কারা এই কায়েমি স্বার্থ? এরা হল “জিও, এয়ারটেল, ভোডাফোন-আইডিয়ার” মতো বেসরকারী কর্পোরেট সংস্থা, যারা বিএসএনএল-এর ৪জি পরিষেবা প্রদানের সম্ভাবনায় আতঙ্কিত। আর অভিযোগকারী টিইপিসি-ভুক্ত দেশীয় নির্মাতাদের চরিত্রই বা কেমন? অভিমন্যুর কথায় এরা এমন “অকিঞ্চিৎকর সংগঠন” যাদের সহজেই “কিনে নেওয়া যায়”। অভিমন্যুর স্পষ্ট কথায়, “আমি বলছি যে, টিইপিসি-র করা অভিযোগের পিছনে বেসরকারী অপারেটরদের হাত আছে। … আমি সোজাসুজি বলছি, নরেন্দ্র মোদী চাননা যে বিএসএনএল পুনরুজ্জীবিত হয়ে উঠুক, কেননা সেটা তাঁর বন্ধু মুকেশ আম্বানিকে আঘাত করবে।” নীতি মানার দায় যখন সবার জন্য প্রযোজ্য না হয়ে বেছে নেওয়া কোন সংস্থার ওপরই চাপানো হয়, দেশীয় নির্মাতাদের স্বার্থ রক্ষা এবং ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ নীতিকে পালন করার কর্তব্য থেকে বেসরকারী সংস্থাগুলোকে রেহাই দিয়ে সেই দায়িত্ব পালনে যখন শুধু বিএসএনএল-কেই দায়বদ্ধ করা হয়, তখন সেই নীতির প্রতি সরকারের আন্তরিকতা অন্তঃসারশূন্য হয়েই দেখা দিতে বাধ্য। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিপর্যয় ঘটিয়ে পেটোয়া বেসরকারী ও বহুজাতিক সংস্থাগুলোর স্বার্থের প্রতি অনুগত হওয়াটা ‘আত্মনির্ভরতার’ অভিলাষকে কপট বলেই প্রতিপন্ন করছে।

def

জাতীয় প্রতিরক্ষা শিল্পকে নিগমীকরণের কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শ্রমিক কর্মচারিদের লড়াই চলছে। ইতিমধ্যে অনির্দিষ্টকালীন ধর্মঘটে যাওয়ার সিদ্ধান্তকে ব্যালট ভোটের মাধ্যমে ব্যাপক সমর্থন জানিয়েছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর কাছে মেমোরেন্ডাম প্রদান করা হয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে রিজিওনাল লেবার কমিশনরের উদ্যোগে কাশীপুর গান এন্ড শেল ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষ এবং জিএসএফ ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের যৌথ বৈঠক সংগঠিত হয় বলে জানিয়েছেন ইউনিয়নের সভাপতি জয়দেব দে। তিনি নিজে বৈঠকে ইউনিয়নের প্রতিনিধিত্ব করেন। বৈঠকে কেন্দ্রীয় সরকারের এই অনঅভিপ্রেত, একতরফা, অযৌক্তিক ও অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্তের জোরালো বিরোধিতা করেন এবং প্রতিরক্ষা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত ফেডারেশন ও এ্যাসোসিয়েশনগুলো এই নিগমিকরণের তীব্র বিরোধিতা করছে বলে জানান। আগামী ২৫ আগষ্ট ২০২০ পরবর্তি বৈঠকের দিন ধার্য হয়েছে। জাতীয় প্রতিরক্ষাকে বেসরকারী হাতে তুলে দেওয়ার এই প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই চলবে।

big

 

com

১৯৭১-৭২-এ আমাদের প্রিয় রাজ্যটা আক্ষরিক অর্থেই ‘মৃত্যু উপত্যকা’ হয়ে উঠেছিল। ১৯৭৭ সালে বিখ্যাত নাট্য ব্যক্তিত্ব উৎপল দত্ত একটি সাক্ষাৎকারে বলেন যে জরুরি অবস্থা আসলে জারি হয়েছিল ১৯৭১ সালেই, তখনই শুরু হয়েছিল গণতন্ত্র হরণ ও প্রতিবাদী কন্ঠস্বর রুদ্ধ করার ফ্যাসিস্ত প্রক্রিয়া।

তৃতীয় ধারার সাংস্কৃতিক আন্দোলনের শুরু ১৯৭২ সালে, এপিসেন্টার ছিল কলকাতার কার্জন পার্ক, প্রশিক্ষণ ছাড়াই গণসঙ্গীত, নাটক, কবির লড়াই ইত্যাদির মাধ্যমে। সমসাময়িক রাজনৈতিক ঘটনাবলী শিল্পের আঙ্গিকে সোজাসাপটা মানুষের কাছে তুলে ধরা ও তাদের সাথে আন্তঃক্রিয়ার মাধ্যমে উদ্দিষ্ট বার্তা এক বড় পরিসরে পৌঁছে দেওয়ার তাগিদে প্রথিতযশা কবি, বামপন্থী বুদ্ধিজীবী, লিটল ম্যাগাজিন সংগঠনগুলি এই কর্মকাণ্ডে সামিল হন। আমাদের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ধারাটি বিপ্লবী বামপন্থা বা নকশালপন্থী আন্দোলনের দিশায় গড়ে উঠেছিল। ১৯৭২-৭৩ সালে কার্জন পার্কে নিয়মিত সাংস্কৃতিক কার্যক্রম চালানোর পর একই সঙ্গে বেশ কিছু ছোট সাংস্কৃতিক দল কোলকাতা ও শহরতলির বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠান করতে শুরু করে। আমাদের সাংস্কৃতিক হাতিয়ার ছিল রণপায়ে হেঁটে যাওয়ার কবিতা, রক্তে তুফান তোলা গণসঙ্গীত, পথ নাটিকা, লিটল ম্যাগাজিনের স্বৈরতন্ত্র বিরোধী প্রবন্ধ, ছোট গল্পের সম্ভার। চোখে দিন বদলের স্বপ্নের সাথে দগদগে ক্ষতের মতো ছিল সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সরোজ দত্তের প্রশাসনিক হত্যার ঘটনা।

তখন কোলকাতার মঞ্চগুলো কাঁপিয়ে চলছে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ব্যারিকেড গড়ে তোলার একাধিক নাটক। কার্জন পার্কে বাদল সরকারের হাত ধরে এল বামপন্থী নাট্য আন্দোলনের নতুন ন্যারেটিভ, অঙ্গন মঞ্চের নাটক। এই সবকিছু মিলে নির্মাণ হল স্বৈরাচারের যথার্থ সাংস্কৃতিক প্রত্যুত্তর।

বিপ্লবী বামপন্থী ধারার সাংস্কৃতিক কর্মীরা নিজেদের ঐক্যকে আরও প্রসারিত করতে ২০ জুলাই ১৯৭৪ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী দিবসে একটি সাংস্কৃতিক পরিক্রমার আয়োজন করেন। এই পরিক্রমার আয়োজকরা ছিলেন বিভিন্ন নাট্য গোষ্ঠী, প্রস্তুতি পত্রিকা, অমিতেশ সরকার, অমিত রায়, শিবাজি (দেবাশিস্) ভট্টাচার্য, কল্লোল দাশগুপ্ত, সাগর চক্রবর্তী ছাড়াও আরও অনেক ছোট পত্রিকা, গণসঙ্গীতের দল। মিছিলের জমায়েতের জায়গা ছিল কার্জন পার্ক সংলগ্ন সিদো-কানহু ডহর। কিন্তু কার্জন পার্কে ঢোকার মুখে পুলিশ বেপরোয়া লাঠি চার্জ শুরু করে। ঘটনাক্রমে ওই দিনটি ছিল শনিবার, কার্জন পার্কে যথারীতি নাটক চলছিল, মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের একাংশ ছত্রভঙ্গ হয়ে নাটকের দর্শকের ভিড়ে মিশে যায়। দুঃখজনকভাবে পুলিশের লাঠির নিশানায় চলে আসেন নাটকের দর্শকরাও, বন্দুকের কুঁদোর আঘাতে লুটিয়ে পড়েন নাট্যামোদি দর্শক প্রবীর দত্ত। না, উনি পালানোর চেষ্টাও করেননি।

karjanpark

পরের ঘটনা, কিছু প্রশ্ন আজও অমীমাংসিত

গুরুতর ভাবে জখম প্রবীর দত্তকে প্রায় কোলে তুলে অনেকটা দূর নিয়ে যান দীপা দি (লিগাল এইড কমিটি)। ততক্ষণে প্রবীরের মৃত্যু হয়েছে। মেডিক্যাল কলেজের মর্গে সন্ধে থেকে সারারাত প্রবীরের মৃতদেহের সামনে বসে থাকেন এপিডিআর-এর সহ সম্পাদক শ্রী সঞ্জয় মিত্র।

ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতার হন ৩২ জন সাংস্কৃতিক কর্মী। যে মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল তার টাইটেল ছিল "রুদ্রদেব মিত্র অ্যান্ড আদার্স ভার্সাস স্টেট অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল”। উল্লেখ্য, মিছিলে অংশগ্রহন করেছিলেন কবি বীরেন চট্টোপাধ্যায়।

প্রবীর হত্যার তদন্ত দাবি করে মেমোরাণ্ডাম তৈরি হয়, স্বাক্ষর করেন হেমাঙ্গ বিশ্বাস, ঋত্বিক ঘটক, মৃণাল সেন, তাপস সেন, উৎপল দত্ত, অসিত বসু প্রমুখ।

ইউনিভার্সিটি ইন্সটিটিউট হলে গণকনভেনশনে এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা করা হয়। তবে ৩২ জন সাংস্কৃতিক কর্মী গ্রেফতার হলেও কনভেনশন আয়োজকদের পক্ষ থেকে মাত্র তিন জনের মুক্তির দাবি করা হয়!

ঘটনার এক মাস পরে কার্জন পার্কে বাদল সরকারের নির্দেশনায় 'মিছিল' নাটকটির সফল অভিনয় হয়। বিভিন্ন গ্রুপ থেকে অভিনেতারা অংশ গ্রহণ করেন, দর্শকের ঢল নামে।

কার্জন পার্কে পুলিশের হিংস্রতার কারণটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। মিছিলে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে স্লোগানের সাথে সাথে ‘সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ’ বিরোধী স্লোগানও দেওয়া হয়। একটি ইংরাজি দৈনিকে মিছিলের আয়োজকদের নক্সাল বলে দেগে দেওয়া হয়।

প্রবীর হত্যার তদন্ত রিপোর্ট দিনের আলো দেখেনি। ৩২ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা উক্ত মামলাটি ১৯৭৭ সালে বামফ্রন্ট সরকার ঘোষিত জেনারেল অ্যামনেস্টির আওতায় আসে ও তুলে নেওয়া হয়।

লাঠি চার্জের নেতৃত্বে ছিলেন হেয়ার স্ট্রিট থানার ওসি। নেপথ্য মস্তিষ্ক ছিলেন গোয়েন্দা বিভাগের অশোক খাসনবিস।

পরিশিষ্ট

কার্জন পার্কে সাংস্কৃতিক কর্মীদের সংগঠিত হওয়ার প্রাথমিক প্রচেষ্টা জোর ধাক্কা খাওয়ার পর স্বভাবতই মনে হয়েছিল যে তার আগের তিন বছর ধরে গড়ে ওঠা সাংস্কৃতিক আন্দোলনে নেমে আসবে স্থিতাবস্থা। বাস্তবে কার্জন পার্কের ঘটনা সাংস্কৃতিক আন্দোলনে নিয়ে এল নতুন জোয়ার। কোলকাতা ও মফস্বল শহরগুলিতে নতুন নতুন সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে উঠতে শুরু করলো। গানের দল অরণির জন্ম হলো ২১ জুলাই। ঢাকুরিয়ায় গড়ে উঠলো ‘সমতান সাংস্কৃতিক সংস্থা’। হাজরা পার্কে তৈরি হলো ‘উন্মুক্ত সাংস্কৃতিক মঞ্চ’। তৃতীয় ধারার অঙ্গন মঞ্চের নাটকের দলগুলিতে নতুন জোয়ার এলো। এর ১১ মাস পরে জারি হয় এমারজেন্সি।

বর্তমান পরিস্থিতিতে গোটা দেশে সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিস্ত শক্তি জাঁকিয়ে বসেছে। ১৯৭৫-এর জরুরি অবস্থার প্রাক্কালে যে অবস্থা ছিল, আজ তা আরও ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। গণতন্ত্র, সংবিধান সবই আক্রান্ত। মেধার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে এই সরকার। কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের হাতে ধারাবাহিকভাবে খুন হয়েছেন দাভোলকার, পানসারে, কালবর্গী, গৌরী লঙ্কেশ। প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ, বামপন্থী বুদ্ধিজীবী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সহ প্রতিবাদীরা জেলে বন্দি। সর্বত্র চলছে নিশ্চুপ করিয়ে দেওয়ার ফ্যাসিস্ত রাজনীতি। বেলাগাম কর্পোরেট শোষন লুন্ঠনে কোটি কোটি দেশবাসীর প্রিয় স্বদেশ আজ পরিণত হয়েছে নবারুণ বর্ণিত সেই ‘জহ্লাদের উল্লাস মঞ্চে’, ছদ্ম দেশপ্রেমে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের দেশ ছাড়া করার এবং হাজার হাজার জনজাতি ও উৎপীড়িত গোষ্ঠীর মানুষকে জমি ও জীবিকা থেকে উচ্ছেদ করতে বদ্ধপরিকর এই সরকার। দেশব্যাপী উত্তাল গণজাগরণই পারে এই ফ্যাসিস্তদের সবক শেখাতে। এই গণজোয়ারে সাংস্কৃতিক কর্মীরা অতীতের মতোই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারেন। প্রবীর দত্তকে স্মরণ করে আসুন আমরা সেই শপথই নিই।

- তথ্য সূত্র : কল্লোল দাশগুপ্ত, অমিত রায়, স্বপন চক্রবর্তী, বিমল দে ও অপূর্ব মুক্তিকামী

- শান্তনু ভট্টাচার্য  
২০/০৭/২০  

খণ্ড-27
সংখ্যা-25