দোহাতে মার্কিন-তালিবান শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর : ১৮ বছর পর যুদ্ধ থামার আশায় আফগানিস্তান

তালিবানদের সঙ্গে অবশেষে শান্তিচুক্তি সই করল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এই চুক্তির ফলে ধাপে ধাপে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশগুলি। ১৮ বছর ধরে আফগানিস্তানে যে যুদ্ধ হচ্ছে, তার অবসানের দিকে প্রথম পদক্ষেপ এটি।

এদিন কাতারের রাজধানী দোহাতে চুক্তি সই করেন মার্কিন বিশেষ দূত জালমায় খালিজাদ ও তালিবানের রাজনৈতিক প্রধান আবদুল ঘানি বারাদার। মার্কিন বিদেশসচিব মাইক পম্পেও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব মার্ক এসপার যদিও বলেছেন এটা ভালো পদক্ষেপ হলেও সামনের পথটি সোজা নয়। আফগানিস্তানে চিরস্থায়ী শান্তির জন্য সবপক্ষকেই একটু সমঝোতা করতে হবে বলে সতর্ক করেছেন তিনি।

তালিবানরা যদি নিজেদের দেওয়া প্রতিশ্রতি মানে তাহলে ধাপে ধাপে সেনা প্রত্যাহার করবে আমেরিকা। বর্তমানে ১৩ হাজার মার্কিনী সেনা আছে আফগানিস্তানে। আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসরফ ঘানি বলেছেন যে তিনি আশা করছেন এই দোহা চুক্তি চিরস্থায়ী শান্তি আনবে দেশে।

অন্যদিকে ন্যাটো জানিয়েছে যে ধীরে ধীরে সেনা কমানো হবে, কিন্তু তারা সম্পূর্ণ সেনা তখনই প্রত্যাহার করবেন যখন পরিস্থিতি অনুকুল হবে। এদিন চুক্তি সই হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে তালিবানরা নিজেদের সৈন্যদের নির্দেশ দেয় দেশের খুশির জন্য কোনও আক্রমণ করা থেকে বিরত থাকতে। তালিবানদের মুখপাত্র বলেছে যে তাদের আশা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করবে।

নভেম্বরে আমেরিকায় ভোট। যদি এই চুক্তি সফল হয়, তাহলে এটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে পুনর্নিবাচনে সাহায্য করবে বলে মনে করা হচ্ছে। ট্রাম্প আগেই বলেছিলেন যে মার্কিন সৈন্যদের তিনি আফগানিস্তান থেকে বাড়ি ফিরিয়ে আনবেন। সেই প্রতিশ্রুতি রাখতে সক্ষম হবেন তিনি তবে এই চুক্তি আদৌ সফল হবে কিনা, এই নিয়ে প্রশ্ন অনেকের মনে। একই সঙ্গে জঙ্গি গোষ্ঠী তালিবানদের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়ে গেল কী, এই কথাও জিজ্ঞেস করছেন অনেকে।

তবে এই চুক্তি কতটা শান্তি ফেরাবে তাই নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল আফগান সেনার ওপর সন্ত্রাসবাদী হামলা। শান্তিচুক্তির পর কাটেনি ৭২ ঘণ্টাও। তার আগেই আংশিক যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করল তালিবান। আফগানিস্তানের দক্ষিণ দিকের কান্দাহার প্রদেশের কমপক্ষে দুটি জেলায় আক্রমণ চালায় তালিবান। যে অঞ্চলটিকে এখনও তালিবানদের দুর্গ হিসেবে গণ্য করা হয়। সংবাদসংস্থা এএফপিকে স্থানীয় পুলিশ প্রধান সুলতান মহম্মদ হাকিমি বলেন, ‘পাঞ্জওয়াহি ও মাইওয়ান্দের আমাদের পাঁচটি পোস্টে হামলা চালায় ওরা (তালিবান)।

’আমেরিকা-তালিবান শান্তিচুক্তি অনুযায়ী, সাময়িকভাবে হিংসা কমানোর বিষয়ে একমত হয়েছে দু’পক্ষই। এছাড়াও মার্কিন, তালিবান ও আফগান বাহিনীর মধ্যে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিয়েও আলোচনা হবে বলে জানানো হয়। চুক্তি স্বাক্ষরের সপ্তাহেও হিংসা কমানোর (রিডাকশন ইন ভায়োলেন্স) নীতি মেনে চলেছিল তালিবান। কিন্তু চুক্তি স্বাক্ষরের পরই নিজেদের পুরনো অবস্থানে ফিরে গিয়েছে। আফগান সেনা ও পুলিশের উপর হামলা চালানোর নির্দেশে দিয়েছে চরমপন্থী ইসলামিক সংগঠনটি। সেই সংক্রান্ত নথিও হাতে এসেছে এএফপির।

এএফপিকে তালিবানের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেন, ‘হিংসা কমানোর (পর্ব) শেষ হয়ে গিয়েছে। আগের মতোই অভিযান চলবে। (আমেরিকা-তালিবান) চুক্তি অনুযায়ী আমাদের মুজাহিদিন কোনও বিদেশি বাহিনীকে আক্রমণ করবে না। তবে কাবুল প্রশাসনিক বাহিনীর বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান জারি থাকবে।’

শুধু কান্দাহারে নয়, উত্তর-পশ্চিম বাদঘিস প্রদেশেও তালিবান হামলা চালিয়েছে বলে জানান আফগান সেনার এক কম্যান্ডার। সেই ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে একজনের। পূর্ব আফগানিস্তানের খোস্তের একটি ফুটবল মাঠে বোমা বিস্ফোরণে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। সে ঘটনায় অবশ্য তাদের হাত নেই বলে জানিয়েছে তালিবান।

গত রবিবার আফগান রাষ্ট্রপতি আসরাফ ঘানি জানিয়েছেন, তাদের সঙ্গে তালিবানদের আলোচনা শুরু না হওয়া পর্যন্ত অন্তত আংশিক যুদ্ধবিরতি মেনে চলবে কাবুল। আগামী ১০ মার্চ সেই আলোচনা শুরু হওয়ার কথা। যদিও চুক্তিতে বন্দী প্রত্যর্পণের অংশটি অন্তর্ভুক্ত না করায় ক্ষুব্ধ হয় তালিবান। সোমবার উগ্রপন্থী সংগঠনের মুখপাত্র হুঁশিয়ারি দেন, প্রশাসন যদি না ৫,০০০ তালিবান বন্দীকে না ছাড়ে তাহলে আলোচনা চালানো হবে না।

যদিও তালিবানের এই পদক্ষেপে অবাক নয় ওয়াশিংটন। আমেরিকার তরফে বলা হয়, ‘তালিবান একমাত্র গোষ্ঠী নয়, সেখানে একাধিক সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী সক্রিয় আছে। এখনই (হিংসা) শূন্যতে নেমে যাবে, সেটা হয়তো হবে না।’

(হিন্দুস্থান টাইমস এর প্রতিবেদন)

খণ্ড-27
সংখ্যা-7