ভারতের জনগণনায় ছয়টি ধর্মবিশ্বাসকে জায়গা দেওয়া আছে। ২০০১ সাল থেকে ছয়টি কোড দ্বারা সেগুলিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তার বাইরে অন্য বিশ্বাসের অস্তিত্বকে সমান গুরুত্ব বা স্বীকৃতি দিয়ে নথিভুক্ত করা হয় না। ১৯৮০ সাল থেকে ভারতের প্রায় সব রাজ্যের আদিবাসী জনগণ তাঁদের সমাজের নিজস্ব ধর্মবিশ্বাসের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি আদায় করার জন্য লড়ছেন। ব্রিটিশ আমলের জনগণনায় “অ্যাবরিজিনাল” হিসেবে নথিভূক্ত করানো যেত। স্বাধীন ভারতের প্রথম জনগণনা হয় ১৯৫১ সালে। সেখানে ধর্ম নথিভূক্ত করার জায়গায় “ট্রাইব” কলাম ছিল। কিন্তু তারপর তা তুলে দেওয়া হয়। ২০১১-র আগে “অন্যান্য” কলাম ছিল। এখন তা-ও তুলে দেওয়া হয়েছে। ১৮ জানুয়ারী ২০২০ ঊনিশটি রাজ্য থেকে আদিবাসী সমাজের মানুষেরা দিল্লীতে সংসদের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন এবং জনগণনায় আদিবাসীদের জন্য আলাদা কলাম রাখার দাবি তোলেন। তাঁরা বলেন, আদিবাসীরা হিন্দু নয়, তবু তাঁদের হিন্দু হিসেবে নথিভুক্ত হতে হচ্ছে। এতে আদিবাসী সমাজ সংস্কৃতি গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
গত ফেব্রুয়ারী মাসে ভোপালে একটি কোঅর্ডিনেশন মিটিং থেকে আরএসএসের জনসংযোগ দপ্তরের প্রধান অরুণ কুমার জানান যে, গত জনগণনাগুলিতে আদিবাসীদের একটা বড়ো অংশ নিজেদের হিন্দু হিসেবে নথিভূক্ত করেনি তাই এবার আরএসএস আদিবাসীদের মধ্যে ব্যাপক প্রচার চালাবে যাতে তারা হিন্দু হিসেবে নিজেদের নথিভূক্ত করে। মোহন ভাগবত আরও বলেন যে আদিবাসীদের মধ্যে এনপিআর নিয়ে প্রচার চালেবেন তাঁরা। অবশ্য “আদিবাসী” শব্দটি ব্যবহার করেননি। আরএসএস-বিজেপি কখনও “আদিবাসী” বলে না, বলে “বনবাসী”। আদিবাসী শব্দের মধ্যে যে আদি বাসিন্দার ধারণা আছে তাকেই আসলে অস্বীকার করতে চায় আরএসএস-বিজেপি। আদিবাসীদের হিন্দুত্বকরণ তাঁদের অন্যতম প্রধান এজেন্ডা। বিজেপির এনআরসি অভিযানে যে ব্যাপক বিপদের মুখে পড়তে চলেছে তা আদিবাসীরা বুঝতে পারছেন। মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগঢ় বা ঝাড়খণ্ডের মতো আদিবাসী প্রধান রাজ্যগুলি বিজেপির এনআরসি-সিএএ-এনপিআর অভিযানের বিরোধিতা করেছে। তাই আদিবাসী ও দলিতদের মধ্যে প্রচার চালানোর কৌশল ঠিক করতেই ভোপালে আরএসের কো-অর্ডিনেশন মিটিংটি আহুত হয়েছিল। এবছর জনগণনা ও এনপিআর একসাথে জড়িয়ে আছে। বলা ভালো, এনপিআর হবে জনগণনার আড়ালেই। ফলত এনপিআর বয়কট করার কার্যকরী অর্থ দাঁড়াবে জনগণনাকেও বয়কট করা। জনগণনায় আদিবাসীদের নিজস্ব ধর্মবিশ্বাস স্বীকৃতির দাবি এই বয়কট আন্দোলনকে আরও ব্যাপক করে তুলতে পারে।